আন্দীয় সভ্যতার সমুদ্রনির্ভরতা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অ বানান সংশোধন |
পরিষ্কারকরণ |
||
৬ নং লাইন:
তবে এই তত্ত্ব তাদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্কেরও জন্ম দেয়। কারণ সাধারণভাবে স্বীকৃত তত্ত্ব অনুযায়ী, কোনও জায়গায় সভ্যতার উত্থানের পিছনে সেখানকার মানুষের কৃষিনির্ভরতা, বিশেষ করে অন্তত একটি শস্যের ব্যাপক চাষের ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ উদ্বৃত্ত খাদ্য ব্যতীত জনঘনত্ব বৃদ্ধি ও কিছু সংখ্যক মানুষের সরাসরি খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়ার বাইরে থাকার সুযোগ তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। ফলে অপেক্ষাকৃত জটিল সমাজব্যবস্থার উদ্ভবের জন্য অন্তত একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত কৃষির উন্নতি খুবই প্রয়োজন। পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে যেখানেই স্বতন্ত্রভাবে সুপ্রাচীন সভ্যতাগুলির বিকাশ ঘটেছে, সেখানেই এই বিষয়টির সত্যতা লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু ''আন্দীয় সভ্যতার সমুদ্রনির্ভরতা''র তত্ত্ব এই স্বীকৃত তত্ত্বটিকেই একরকম চ্যালেঞ্জ করে বসে। ফলে তা ঐতিহাসিক মহলে তুমুল বিতর্কের জন্ম দেয়।
পরবর্তীকালে ঐ অঞ্চলের কাছাঁকাছি আরও বিভিন্ন স্থলে আরও অনেকগুলি খননস্থলে ঐ একই সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। এর মধ্যে বিখ্যাত পেরুভীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ [[রুথ শেডি সলিস|রুথ শেডি সলিসের]] নেতৃত্বে সমুদ্রোপকূল থেকে ২৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে [[কারাল]] নামক স্থানে যে খননকার্য চলে, তার ফলে ঐ অঞ্চলে খ্রিস্টপূর্ব ৯০০০<ref>[http://www.nature.com/nature/journal/v432/n7020/full/nature03146.html
== বিতর্ক ==
[[চিত্র:El Altar del Fuego Sagrado - Caral.jpg|thumb|250px|কারালে প্রাপ্ত চুল্লীর ধ্বংসাবশেষ]]
১৯৭০'এর দশকে যখন প্রথম এই তত্ত্বটির উদ্ভব ঘটে, তখন থেকেই তাকে ঘিরে তীব্র বিতর্কেরও জন্ম হয়। বহু প্রত্নতত্ত্ববিদই প্রশ্ন তোলেন, সামুদ্রিক ও সমুদ্রজাত খাদ্যর যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের উপর ভিত্তি করে এই তত্ত্বকে সামনে আনা হয়েছে, সেইসব খাদ্য মানুষকে কত ক্যালোরি শক্তি জোগাতে সক্ষম? সেই সব খাদ্যজাত পুষ্টির উপর নির্ভর করে একটি সভ্যতা গড়ে ওঠাই বা কতটা সম্ভব?<ref>Raymond, J. Scott (1981). "The Maritime Foundations of Andean Civilization: A Reconsideration of the Evidence". ''American Antiquity'' (Society for American Archaeology) 46 (4): 806–821. [http://www.jstor.org/stable/280107?origin=crossref&seq=1#page_scan_tab_contents doi:
# এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত এই সভ্যতার সর্ববৃহৎ এই কেন্দ্রটি সমুদ্র থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত। অর্থাৎ এতদিন ধরে যে ধারণা ছিল যে এই সভ্যতা ছিল মূলত সমুদ্রোপকূলবর্তী কিছু ছোট ছোট গ্রামেই সীমাবদ্ধ, তা ঠিক নয়।
# কারালে খননকার্যে সেইসময়ে ব্যবহৃত কিছু কিছু [[শস্য]] ও [[ফল]] উৎপাদনকারী ও কন্দজাতীয় উদ্ভিদের অস্তিত্বর প্রমাণ পাওয়া যায়। এগুলি হল [[স্কোয়াশ]], কয়েকরকমের [[বিনস]], [[পেয়ারা]], লুকুমা, মিষ্টি আলু, প্রভৃতি।<ref name="Science212">Shady Solis, Ruth; Jonathan Haas; Winifred Creamer (27 April 2001). "Dating Caral, a Preceramic Site in the Supe Valley on the Central Coast of Peru". ''Science'' 292 (5517): 723–726. [http://www.sciencemag.org/content/292/5517/723 doi:
# পেরুর এই উপকূলীয়় অঞ্চল যদিও প্রচণ্ড শুষ্ক একটি অঞ্চল, কিন্তু এই সঙ্কীর্ণ উপকূলীয় উপত্যকা অঞ্চলের মধ্য দিয়ে পূর্বের সুউচ্চ আন্দিজ পর্বতমালা থেকে নেমে আসা বরফ গলা জলে পুষ্ট অন্তত ৫০টি ছোট ছোট নদী বয়ে গেছে। এই সভ্যতার যেসব কেন্দ্রগুলির ধ্বংসাবশেষ সমুদ্র থেকে দূরে দেশাভ্যন্তরে খুঁজে পাওয়া গেছে, সেগুলি বেশিরভাগই এই সব নদীগুলি বা তার থেকে কাটা কিছু খালের পাশে অবস্থিত। এইসব খালের অস্তিত্ব স্বভাবতই একধরনের সেচব্যবস্থা ও কৃষির ইঙ্গিতবাহী; আর এই খালগুলির পাশে সভ্যতার কেন্দ্রগুলি গড়ে ওঠাই কৃষির উপর তাদের একধরনের নির্ভরতার প্রতি নির্দেশ করে।
২৩ নং লাইন:
# আরও একটি বিষয় সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে আজ ঐতিহাসিকরা অনেকটাই নিশ্চিত। তা হল এই সভ্যতা্র অন্যতম কৃষিজ উৎপাদন ছিল একধরনের তুলো (''Gossypium barbadense''; ''গসিপিয়াম বারবাডেন্স'' প্রজাতির)। এই তুলো থেকে তৈরি সুতো দিয়েই মাছ ধরার জাল তৈরি হত। এছাড়া একধরনের লম্বা ঘাসও এখানে উৎপন্ন হত, যার থেকে শক্ত থলি তৈরি করা হত। কারাল অঞ্চলের খননকার্যে এইধরনের তৃণনির্মিত থলির নিদর্শন পাওয়া গেছে।<ref>White, Nancy. "Archaic/Preceramic (6000-2000 B.C.): Emergence of Sedentism, Early Ceramics". ''MATRIX'' ( ''Making Archaeology Taching Relevant in the XXI Century''). Indiana University, Bloomington.</ref> অর্থাৎ, কৃষিজ উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যের জন্য এই সভ্যতার মানুষ মূলত সামুদ্রিক খাদ্যের উপরই নির্ভরশীল ছিল, যদিও সেই খাদ্য সংগ্রহের জন্য তাদের কৃষিজ ফসলের উপরই নির্ভর করতে হত।
== পারস্পরিক নির্ভরতার তত্ত্ব ==
এই কারণেই এই অঞ্চলে সুপ্রাচীন সভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে বর্তমানে একধরনের ''পারস্পরিক নির্ভরতার তত্ত্ব'' জোরদার হয়ে উঠেছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, দেশাভ্যন্তরের বিভিন্ন কেন্দ্রগুলির মূল ভিত্তি ছিল এই তুলো ও ঘাসের চাষ ও তার থেকে নানাধরনের প্রয়োজনীয় জাল, কাপড়, থলি, প্রভৃতির উৎপাদন বজায় রাখা। অন্যদিকে উপকূলীয় কেন্দ্রগুলির মূল উৎপাদন ছিল মাছ ও সমুদ্রজাত খাদ্য, যার উপর স্থলাভ্যন্তরের কেন্দ্রগুলিও নির্ভরশীল ছিল। বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের উপর নির্ভর করেই বর্তমানে উপকূল ও দেশাভ্যন্তরের কেন্দ্রগুলির এই পারস্পরিক নির্ভরতার তত্ত্বই জোরদার হয়ে উঠেছে।
== আরও দেখুন ==
* [[আন্দীয় সভ্যতা]]
== তথ্যসূত্র ==
{{সূত্র তালিকা|2}}
== বহিঃসংযোগ ==
* Sandweiss, D.H.; Solis, R.S.; Moseley, M.E.; Keeferd, D.K.; Ortloff, C.R. (2009). "Environmental change and economic development in coastal Peru between 5,800 and 3,600 years ago". Proceedings of the National Academy of Sciences USA 106: 1359–1363. [http://www.pnas.org/content/106/5/1359 doi: 10.1073/pnas.0812645106] সংগৃহীত ২৬ আগস্ট, ২০১৫।
* [http://www.unm.edu/~gbawden/324-Preceramic/324-Preceramic.htm "Pre-ceramic Origins of Andean Civilization".
[[বিষয়শ্রেণী:দক্ষিণ আমেরিকা]]
|