খাজা সলিমুল্লাহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা দ্ব্যর্থতা নিরসন পাতায় সংযোগ
৩০ নং লাইন:
 
== মুসলিম লীগ গঠন এবং পূর্ববঙ্গের শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা ==
ঢাকার নবাব আব্দুল গণির পুত্র নবাব আহসানউল্লাহর[[খাজা আহসানউল্লাহ]]র মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ৩০ বছর বয়সী খাজা সলিমুল্লাহ নবাব পদে অধিষ্ঠিত হন। বাস্তববাদী এই তরুণ নবাব উপলব্ধি করেছিলেন, পূর্ব বাংলার পশ্চাৎপদ ও দরিদ্র মুসলমানদের শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত করতে না পারলে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি আসবে না। ঢাকার নবাব হিসেবে তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল মহল্লায় মহল্লায় নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন।
 
১৯০৬ সালে স্যার সলিমুল্লাহ ‘মুসলিম অল ইন্ডিয়া কনফেডের‍্যাসি’ নামে একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার পরিকল্পনাটি বিবেচনার জন্য উপমহাদেশের বিভিন্ন নেতা ও সমিতির নিকট প্রেরণ এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে আলীগড় আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের অনুরোধ করে ‘নিখিল ভারত মুসলিম শিক্ষা সমিতি’-এর ২০তম অধিবেশন তিনি সম্পূর্ণ নিজ ব্যয়ে ঢাকায় আয়োজনের ব্যবস্থা করেন। ১৯০৬ সালের ২৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বর নবাবের শাহবাগস্থ পারিবারিক বাগান-বাড়িতে সর্বভারতীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দসহ প্রায় দুই হাজারের বেশি সুধী যোগ দেন। উক্ত অধিবেশনের শেষ দিন ৩০ ডিসেম্বর নওয়াব সলিমুল্লাহর প্রস্তাবনায় ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ’ গঠিত হয়। তিনি এর সহ-সভাপতি এবং গঠনতন্ত্র তৈরি কমিটির সদস্য মনোনীত হন। ১৯০৭ সালে নওয়াব সলিমুল্লাহ সংগঠনের শাখা স্থাপনের উদ্দেশ্যে [[ঢাকা]], [[রাজশাহী]], [[চট্টগ্রাম]], [[ময়মনসিংহ]], [[পাবনা]], [[কুমিল্লা]] প্রভৃতি স্থানে জনসভা করেন। ১৯০৭ সালের ৪ মার্চ কুমিল্লায়[[কুমিল্লা]]য় এ ধরনের একটি সভায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধীরা বাধা দেয়, তা সত্ত্বেও নওয়াব সলিমুল্লাহ তার কর্ম-তৎপরতা অব্যাহত রাখেন। একই বছর কলকাতায়[[কলকাতা]]য় উভয় বঙ্গের মুসলিম নেতৃবৃন্দের এক সভায় ‘নিখিল বঙ্গ মুসলিম লীগ’ গঠিত হয় এবং তিনি এর সভাপতি মনোনীত হন। ১৯০৮ সালের জুন মাসে তিনি ‘পূর্ববঙ্গ ও [[আসাম]] প্রাদেশিক মুসলিম লীগ’ গঠন করে এর সেক্রেটারি হন। একই বছর ২৭ ডিসেম্বর অমৃতসরে নওয়াব সলিমুল্লাহ’র সভাপতিত্বে ‘নিখিল ভারত মুসলিম শিক্ষা সমিতি’র ২২তম সভা হয়। সেখানে ৩০-৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের সভায় তিনি মুসলিমদের জন্য স্বতন্ত্র নির্বাচন দাবি করেন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে রাজনৈতিক আলোচনার সুযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। নতুন প্রদেশে হিন্দু-মুসলিমদের সুসম্পর্ক রক্ষার জন্য তিনি উভয় সম্প্রদায়ের সম্পদশালী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ১৯০৯ সালের ২১ মার্চ ‘ইম্পেরিয়া লীগ অব ইস্টার্ন বেঙ্গল এন্ড আসাম’ গঠন করেন। এ বছরেই তিনি প্রাদেশিক মুসলিম লীগ পুনর্গঠন এবং এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
 
১৯১২ সালের ২ মার্চ নওয়াব সলিমুল্লাহর সভাপতিত্বে কলকাতায় ডালহৌসি ইনস্টিটিউটে যুক্তবঙ্গের মুসলিম নেতৃবৃন্দের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় তার প্রস্তাবের ভিত্তিতে উভয় বাংলার স্বতন্ত্র দু’টি লীগকে একত্র করে ‘প্রেসিডেন্সি মুসলিম লীগ’ গঠিত হয় এবং তিনি এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই সভায় অনুরূপভাবে উভয়বঙ্গের মুসলিম সমিতি দু’টিকে একত্র করে গঠিত হয় ‘বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন’। তিনি এ সংগঠনেরও সভাপতি হন। ১৯১২ সালের ৩-৪ মার্চ কলকাতায় অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি পূর্ববঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতাকারীদের যুক্তি খণ্ডন করেন। তিনি মুসলিমদের জন্য স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন এবং সরকারি চাকরিতে তাদের সংখ্যানুপাতে কোটা ধার্যের দাবি জানান। ১৯১৪ সালের ১১-১২ এপ্রিল তিনি ঢাকায় যুক্তবঙ্গের মুসলিম শিক্ষা সমিতির অধিবেশন এবং ১৩ এপ্রিল প্রেসিডেন্সি মুসলিম লীগের অধিবেশন আহ্বান করেন। এরপরই তিনি কার্যত কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেন।
 
মুসলিম শিক্ষার প্রতি স্যার সলিমুল্লাহর বিশেষ আগ্রহ ছিল। স্বল্পকালের মধ্যেই তার উৎসাহে [[ঢাকা]], [[বরিশাল]], [[রাজশাহী]] ইত্যাদি শহরে মুসলিম ছাত্রদের জন্য ‘ফুলার হোস্টেল’ স্থাপিত হয়। [[আলীগড় কলেজ]]-বোর্ডিং হাউজের নমুনায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজের পাশে একটি ‘মোহামেডান হল’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল অন্যতম।
 
[[বঙ্গভঙ্গ]] রদ এবং নবগঠিত [[পূর্ব বাংলা]][[আসাম]] প্রদেশ বাতিলের ফলে এ অঞ্চলের মুসলমান জনসাধারণের মধ্যে যে হতাশা নেমে আসে, তাতে প্রলেপদানের জন্য ক্ষতিপূরণস্বরূপ ঢাকায় একটি [[বিশ্ববিদ্যালয়]] স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। বলা চলে [[বঙ্গভঙ্গ]] রদ না হলে যেমন পরিণতিতে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন অপরিহার্য ছিল, তেমনি আবার [[বঙ্গভঙ্গ]] রদের পরেও সে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন অনিবার্য হয়ে পড়ে। সুতরাং বলা যায়, প্রথমত বঙ্গভঙ্গ এবং তা রদের ফলেই ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। এ কথাও বলা যায়, বঙ্গভঙ্গ না হলে হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হতো না। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ‘বঙ্গভঙ্গ রদ’ পরবর্তী পর্যায়ে মুসলমান ঘনবসতিপূর্ণ পূর্ববঙ্গের মানুষের মধ্যে যে কয়েকটি দাবি জনপ্রিয়তা পায়, ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ছিল এর মধ্যে অন্যতম।
 
বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকায় ‘সর্বভারতীয় মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন’ এবং ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক শিক্ষা সমিতির’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সম্মেলন সাড়া জাগায়। পূর্ববঙ্গে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আওয়াজ তোলেন সর্বপ্রথম ‘মোহামেডান এডুকেশন্যাল কনফারেন্স’-এর অনারারি জয়েন্ট সেক্রেটারি ব্যারিস্টার সাহেবজাদা আফতাব আহমদ খাঁ। ১৯০৬ সালে ঢাকায় আয়োজিত সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মুসলিমপ্রধান পূর্ব বাংলার উচ্চশিক্ষার জন্য আমার প্রথম প্রস্তাব হলো—এ প্রদেশে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।
 
শিক্ষাই মুসলমানদের মুক্তির একমাত্র পথ—এ বিবেচনায় ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য নবাব সলিমুল্লাহ ভারত সচিবের কাছে সুপারিশ করেন। তদনুসারে ১৯১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এক ইশতেহারে ভারত সরকার কর্তৃক [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] প্রতিষ্ঠার সুপারিশ ঘোষণা করা হয়। ঢাকা ইউনিভার্সিটি কমিটির অধীনে ইউনিভার্সিটির পাঠ্যসূচি রচনার উদ্দেশ্যে ২৫টি সাব-কমিটি গঠিত হয়। ‘ইসলামিক স্টাডিজ’ বিষয়ের সাব-কমিটির সঙ্গে নবাব সলিমুল্লাহ ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
 
নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গকে অটুট রাখার যে আন্দোলন হয়েছিল তার প্রভাব সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী হয়েছিল। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষের [[রাজধানী]] [[কলকাতা]] থেকে দিল্লিতে[[দিল্লি]]তে স্থানান্তরিত হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গ রহিতকরণের ঘটনায় সলিমুল্লাহ খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন। কিন্তু শাসকদের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে আবেদন-অনুরোধের পথেই থাকেন তিনি। তিনি অবিভক্ত বাংলার ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য, ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য এবং [[পূর্ববঙ্গ]] ও আসামের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের পর ব্রিটিশ [[ভাইসরয়]] [[লর্ড হার্ডিঞ্জ]] বরাবর পূর্ববঙ্গ ও ঢাকার[[ঢাকা]]র অমর্যাদার কথা তুলে ধরে হতাশা ব্যক্ত করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী, [[এ কে ফজলুল হকসহহক]] সহ পূর্ববঙ্গের মুসলিম নেতাদের নিয়ে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোর দাবি তোলেন তিনি। সরকার এই দাবি ১৯১২ সালে মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে এর বিরুদ্ধেও যে প্রবল আন্দোলন হয়েছিল, সে কথা সুবিদিত। তবে শেষ পর্যন্ত [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] প্রতিষ্ঠিত হলেও তিনি নিজে এর প্রতিষ্ঠা দেখে যেতে পারেননি।
 
নওয়াব সলিমুল্লাহ ছিলেন একজন দানশীল ব্যক্তি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তিনি অকাতরে দান করতেন। ১৯০২ সালে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল (বর্তমানে [[বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়]]) প্রতিষ্ঠায় তিনি তার পিতার দেওয়া পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুসারে এক লাখ বারো হাজার টাকা মঞ্জুর করেন। এছাড়া কৃষি, শিল্প খাতে, মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল, ছাত্রাবাস নির্মাণে এবং অন্যান্য যে কোনো ধরনের সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।
 
ঢাকার কারুশিল্পের উন্নয়নে তিনি প্রদর্শনীর আয়োজন করতেন। তার প্রচেষ্টায় এ শিল্প নবরূপ পায়। কারুশিল্পের উন্নয়নে ১৯০৯ সালে [[পূর্ববঙ্গ সরকার]] গঠিত কমিটির তিনি একজন সদস্য ছিলেন। [[ব্রিটিশ সরকার]] তাকে ১৯০২ সালে সিএসআই, ১৯০৩ সালে নওয়াব বাহাদুর, ১৯০৯ সালে কেসিএসআই এবং ১৯১১ সালে জিসিএসআই উপাধি প্রদান করে।
 
==মৃত্যু==