আলবেনিয়ার ইতিহাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
UserNumber (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত
Nafiul adeeb (আলোচনা | অবদান)
UserNumber-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে ZI Jony-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
ট্যাগ: পূর্বাবস্থায় ফেরত
৩ নং লাইন:
[[File:Face of King Gentius on Ancient Illyrian coin.jpg|thumb|রাজা জেন্টিয়াসের সম্রাজ্যকালের মুদ্রা]]
[[File:Dyrrachium coin.jpg|thumb|প্রাচীন গ্রীক কয়েন]]
[[আলবেনিয়া]] দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে [[বলকান অঞ্চল|বলকান]] উপদ্বীপে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। আলবেনিয়ার ইতিহাস ইউরোপের ইতিহাসের একটি অংশ গঠন করে। ধ্রুপদী প্রাচীনকালে, আলবেনিয়া বেশ কয়েকটি ইলিরিয়ান উপজাতির বাসস্থান ছিল যেমন আর্দিয়াই, আলবানোই, আমানতিনি, এনচেলে, তাউলান্তিএবং আরও অনেকে, কিন্তু থ্রাকিয়ান এবং ইউনানীগ্রিক উপজাতি, সেইসাথে ইলিরিয়ান উপকূলে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি ইউনানীগ্রিক উপনিবেশ। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে, অঞ্চলটি রোম দ্বারা সংযুক্ত করা হয় এবং রোমান প্রদেশ ডালমাটিয়া, ম্যাসেডোনিয়া এবং মোসিয়া সুপিরিয়রের অংশ হয়ে ওঠে। এরপর, ৭ম শতাব্দীর স্লাভিক অভিবাসন পর্যন্ত অঞ্চলটি রোমান ও বাইজেন্টাইনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এটি নবম শতাব্দীতে বুলগেরিয়ান সাম্রাজ্যের সাথে একীভূত হয়েছিল।
 
মধ্যযুগে Arbër প্রিন্সিপালিটি এবং মধ্যযুগীয় আলবেনিয়া মুলুকরাজ্য নামে পরিচিত একটি সিসিলীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। কিছু অঞ্চল ভেনিসীয় এবং পরে সার্বিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে। চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ১৫শতকের শেষের দিকে, আধুনিক আলবেনিয়ার বেশিরভাগ অংশে আলবানীআলবেনীয় অধ্যক্ষদের আধিপত্য ছিল, যখন আলবানীআলবেনীয় অধ্যক্ষরা [[উসমানীয় সাম্রাজ্য|উসমানীয় সাম্রাজ্যের]] দ্রুত আক্রমণের শিকার হয়। আলবেনিয়া ১৯১২ সাল পর্যন্ত রুমেলিয়া প্রদেশের অংশ হিসেবে উসমানীয় দের নিয়ন্ত্রণে ছিল; ১৮ ও ১৯ শতকে স্বায়ত্তশাসন মনস্ক আলবানীআলবেনীয় প্রভু প্রতিষ্ঠার সাথে কিছু বাধা দিয়ে। প্রথম আজাদস্বাধীন আলবানীআলবেনীয় রাষ্ট্র সার্বিয়া রাজ্যের একটি সংক্ষিপ্ত দখলের পরে আজাদীরস্বাধীনতার আলবানীআলবেনীয় ঘোষণা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com.au/books?id=IzI0uOZ2j6gC&pg=PA66&redir_esc=y|শিরোনাম=The Albanians: A Modern History|শেষাংশ=Vickers|প্রথমাংশ=Miranda|তারিখ=1999|প্রকাশক=Bloomsbury Academic|পাতাসমূহ=৬৬|ভাষা=en|আইএসবিএন=978-1-86064-541-9}}</ref>
 
== প্রাচীন ইতিহাস ==
বর্তমান আলবানীরাআলবেনীয়রা সম্ভবত ইলিরীয় জাতির লোকদের বংশধর। দক্ষিণ বলকান অঞ্চলে ইউনানীগ্রিক, রোমান ও স্লাভ জাতির লোকেরা অভিবাসন করার অনেক আগে থেকেই ইলিরীয় জাতির লোকেরা বাস করত। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম ও ৬ষ্ঠ শতকে ইউনানীরাগ্রিকেরা আলবেনিয়ার উপকূলে অনেকগুলি বসতি স্থাপন করে; এগুলির মধ্যে ছিল এপিদামনুস (বর্তমান দুররেস) এবং আপোল্লোনিয়া (বর্তমান ভ্‌লোরে)। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতক নাগাদ এই বসতিগুলির পতন হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত এগুলি বিলীন হয়ে যায়। ইউনানীরাগ্রিকেরা চলে যাবার পর এই এলাকায় আদিকাল থেকে বসবাসকারী ইলিরীয় সমাজের বিবর্তন ঘটে এবং এতে জটিলতর রাজনৈতিক সংগঠন যেমন ফেডারেশন, রাজ্য, ইত্যাদির আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইলিরীয় রাজ্যটি খ্রিস্টপূর্ব ৫ম ও ২য় শতকের মধ্যবর্তী সময়ে টিকে ছিল।
 
একই সময়ে আড্রিয়াটিক সাগরের অপর তীরে ইতালীয় উপদ্বীপে রোমের বিস্তার ঘটছিল। রোমানরা ইলিরিয়াকে পূর্ব দিকের দেশগুলি বিজয়ের একটি আরম্ভকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করত। ২২৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দেই রোমানরা আড্রিয়াটিক সাগর পাড়ি দিয়ে ইলিরিয়া আক্রমণ করে। ১৬৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ ইলিরিয়াতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। তারা এটিকে রোম সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত করে এবং নাম দেয় ইলিরিকুম। রোমানরা এর পর প্রায় ৬ শতাব্দী ধরে এলাকাটি শাসন করে। কিন্তু ইলিরীয়রা রোমান তমদ্দুনেরসংস্কৃতির সাথে মিশে না গিয়ে নিজেদের স্বকীয় তমদ্দুনসংস্কৃতিজবানভাষা ধরে রাখে। তা সত্ত্বেও অনেক ইলিরীয় রোমান সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জনে সক্ষম হন। অনেক ইলিরীয় বংশোদ্ভূত পরবর্তীকালে [[রোমান সাম্রাজ্য|রোমান সাম্রাজ্যের]] সম্রাটও হন। এদের মধ্যে আছেন আউরেলিয়ান (২৭০-২৭৫ খ্রিষ্টাব্দ), দিওক্লেতিয়ান (২৮৪-৩০৫ খ্রিষ্টাব্দ), এবং মহান কন্সতান্তিন (৩০৬-৩৩৭ খ্রিষ্টাব্দ)। ১ম শতকের মাঝামাঝি নাগাদ ইলিরিকুমে [[খ্রিস্টধর্ম]] প্রভাব ফেলতে থাকে এবং ৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সাধু পল এপিদামনুস নগরের জন্য একজন যাজক নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে আপোল্লোনিয়া এবং স্কোদ্রা (বর্তমান শ্‌কোদার) শহরে বিশপদের কর্মস্থল নির্মাণ করা হয়।
 
== বাইজেন্টীয় শাসন ==
৩৯৫ সালে রোমান সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিমে দুইটি সাম্রাজ্যে ভাগ হয়ে যায়। আধুনিক আলবেনিয়া এলাকাটি পূর্ব অংশে তথা বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যে পড়ে। অনেক ইলিরীয় পরবর্তীতে বাইজেন্টীয় সম্রাট হন। এদের মধ্যে ১ম জুস্তিনিয়ান (৫২৭-৫৬৫) অন্যতম। ৫ম শতক নাগাদ এখানে খ্রিস্টধর্ম একটি প্রতিষ্ঠিত ধর্মে পরিণত হয়। আলেবেনিয়ার খ্রিস্টানেরা বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যের প্রজা হয়েও রোমান পোপের অধীনে ছিলেন। ৫ম শতকে ভিজিগথ, হুন এবং অস্ট্রোগথেরা অঞ্চলটি আক্রমণ করে এর অশেষ ক্ষতিসাধন করে। ৬ষ্ঠ ও ৮ম শতকের মধ্যবর্তী সময়ে ইলিরিয়া অঞ্চলটিতে স্লাভ জাতির লোকেরা বসতি স্থাপন করে। বহু ইলিরীয় স্লাভদের সাথে মিশে যায় এবং বর্তমান স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, সার্বিয়া এলাকাগুলির মানুষদের পূর্বপুরুষ গঠন করে। কিন্তু দক্ষিণ ইলিরীয় অঞ্চলের লোকেরা, যার মধ্যে আধুনিক আলবেনিয়াও পড়েছে, স্লাভদের সাথে মিশ্রণ রোধ করে। ৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টীয় সম্রাট ৩য় লিও আলবানীআলবেনীয় গির্জার সাথে রোমের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং একে কন্সতান্তিনোপলের (বর্তমান [[ইস্তাম্বুল|ইস্তানবুল]]) ধর্মগুরুর অধীনে আনেন।
 
৮ম থেকে ১১শ শতকের মধ্যে ইলিরিয়া ধীরে ধীরে আলবেনিয়া নামে পরিচিত হতে শুরু করে। নামটি এসেছে মধ্য আলবেনিয়াতে বসবাসকারী আলবানোস জাতির লোকদের নাম থেকে। বর্তমান আলবানীরাআলবেনীয়রা নিজেদের দেশকে শকিপারিয়া (ঈগলের দেশ) নামে ডাকে, কিন্তু এই নামটির উৎস নির্ধারণ করা যায়নি। তবে পণ্ডিতেরা একমত যে শকিপারিয়া নামটি ১৬শ শতকে আলবেনিয়া নামটিকে প্রতিস্থাপন করে। ৯ম শতকে বাইজেন্টীয় সম্রাটের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হতে শুরু করে। ফলে প্রথমে বুলগেরীয় স্লাভ, নর্মান ক্রুসেডার, ইতালীয় আঙ্গেভিন, সার্ব এবং ভেনিসীয় জাতির লোকেরা পর্যায়ক্রমে অঞ্চলটি আক্রমণ করে। ১০ম শতকের পরে এখানে একটি জমিদারী প্রথা গড়ে ওঠে। কৃষক সৈন্যরা যারা আগে সামরিক নেতাদের অধীনে যুদ্ধ করেছিল, তারা জমিদারদের খামারে কাজ করা শুরু করে। এসময় অঞ্চলটির কিছু প্রদেশ কন্সতানিনোপল থেকে প্রায় সম্পূর্ণ আজাদভাবেস্বাধীনভাবে চলতে থাকে।
 
১০৫৪ সালে যখন খ্রিস্টান গির্জা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পূর্ব ও পশ্চিম গির্জায় ভাগ হয়ে যায়, তখন দক্ষিণ আলবেনিয়া পূর্ব বা অর্থডক্স গির্জার সাথে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখে। অন্যদিকে উত্তর আলবেনিয়া রোমের [[ক্যাথলিক মণ্ডলী|রোমান ক্যাথলিক]] গির্জার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে। মধ্যযুগে (৫ম থেকে ১৫শ শতক) আলবেনিয়ার শহরগুলির প্রসার ঘটে এবং বাণিজ্যেরও উন্নতি হয়, বিশেষ করে আড্রিয়াটিক অঞ্চলে। শহরের উন্নতির সাথে সাথে শিল্পকলা, তমদ্দুনসংস্কৃতি, এবং শিক্ষারও উন্নতি ঘটে। আলবানীআলবেনীয় জবানভাষা বেঁচে থাকলেও গির্জা, সরকার ও তালিম-ব্যবস্থায়শিক্ষাব্যবস্থায় এটির এস্তেমালব্যবহার ছিল না। বরং ইউনানীগ্রিক ও লাতিন জবানইভাষাই সাহিত্য ও তমদ্দুনেরসংস্কৃতির সরকারি জবানভাষা হিসেবে থেকে যায়।
 
== উসমানীদের বিজয় ==
১৩৪৭ সালে স্তেফান দুসানের অধীনে সার্বীয়রা আলবেনিয়া দখল করলে আলবানীরা গণহারে [[গ্রিস|ইউনানে]]<nowiki/> পালিয়ে যায়। ১৪শ শতকের মাঝামাঝি সময়েই বাইজেন্টীয় শাসনের পতন ঘটে এবং বর্তমান তুরস্ক-অঞ্চলভিত্তিক উসমানীরাউসমানীয়রা ১৩৮৮ সালে আলবেনিয়া আক্রমণ করে। ১৪৩০ সালের মধ্যেই উসমানীরাউসমানীয়রা আলবেনিয়া বিজয়ে সক্ষম হয়। কিন্তু ১৪৪০-এর দশকে গিয়ের্গি কাস্ত্রিওতি দেশটির জমিদারদের একত্রিত ও সংগঠিত করে উসমানীদেরউসমানীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। রোম, নাপোলি, এবং ভেনিসের সামরিক সাহায্য নিয়ে কাস্ত্রিওতি প্রায় ২৫ বছর সফলভাবে উসমানীদেরউসমানীয়দের ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর আলেবেনিয়ার প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে এবং ১৫০৬ সালে উসমানীরাউসমানীয়রা আবারপুনরায় আলবেনিয়া দখলে সক্ষম হয়। দেশটির জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ লোক ইতালি, সিসিলি, এবং আড্রিয়াটিক সাগরের ডালমেশীয় উপকূলে পালিয়ে যায়। কাস্ত্রিওতি তথা স্কেন্দারবেগকে আজও আলবানীরা তাদের জাতীয় ঐক্য ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পরম শ্রদ্ধা করে।
 
[[File:Kara Mahmud Pasha (portret).jpg|thumb|ইস্কোদ্রা পাশালেকের প্রধান [[করা মাহমূদ পাশা]]র ছবি।]]
 
উসমানীরা চার শতাব্দী ধরে শাসন করলেও সম্পূর্ণ আলবেনিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে কখনোই সক্ষম হয়নি। উচ্চভূমি অঞ্চলে উসমানীদের নিয়ন্ত্রণ ছিল দুর্বল; সেখানকার আলবানীরা কর প্রদানে এবং সামরিক সেবায় অংশ নিতে অসম্মতি প্রকাশ করত। আলবানীরা অনেকগুলি বিদ্রোহে অংশ নেয়; খ্রিস্টধর্মের উপর বিশ্বাস রক্ষা করা এগুলির পেছনে আংশিক কারণ হিসেবে কাজ করেছিল। ১৬শ শতকের শেষে উসমানীরাউসমানীয়রা ভবিষ্যৎ বিদ্রোহ প্রতিরোধের লক্ষ্যে আলবানীদের ইসলামীকরণের নীতি গ্রহণ করে। ১৭শ শতকের মাঝামাঝি আলবানী জনগণের দুই-তৃতীয়াংশ ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়। অনেকেই খ্রিস্টানদের উপর ধার্য অতিরিক্ত করের বোঝা এড়াতেই এমনটি করে। উসমানীরাউসমানীয়রা একটি সামন্ত-সামরিক মিশ্র ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারিত করে; এই ব্যবস্থায় যেসব সামরিক নেতারা সাম্রাজ্যের অণুগত ছিলেন, তারা জমিদারি লাভ করতেন।
 
১৮শ শতকে উসমানীউসমানীয় তাকতেরক্ষমতার ক্ষয় ঘটতে শুরু করে এবং ফলে আলবেনিয়ার কিছু সামরিক নেতার তাকৎক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৭৫০ থেকে ১৮৩১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে উত্তর আলবেনিয়ার অধিকাংশ এলাকা ছিল বুশাতী খান্দানের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে আলী পাশা তেপেলিন ১৭৮৮ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আলবেনিয়া ও উত্তর ইউনানগ্রিস নিয়ন্ত্রণ করেন। এই স্থানীয় শাসকেরা নিজেদের আলাদা মুলুকরাজ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু উসমানীউসমানীয় সুলতান ২য় মাহমুদ তাদেরকে পরাজিত করেন। ১৮শ ও ১৯শ শতকে অনেক আলবানী উসমানীউসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রশাসনে উচ্চপর্যায়ে অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়। দুই ডজনেরও বেশি আলবানী বংশোদ্ভূত লোক উসমানীউসমানীয় সুলতানের উজিরে আজমপ্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন।
 
=== পাশাদের তালিকা ===
৪৪ নং লাইন:
#[[ইয়ানিনার আলী পাশা]] (১৭৮৭-১৮২২)
 
== আলবেনিয়ার আজাদীস্বাধীনতা ==
১৯শ শতকে বলকান অঞ্চলের অনেক পরাধীন মানুষ নিজেদের জন্য আজাদস্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ১৮৭৮ সালে
আলবানীআলবেনীয় নেতারা কসভোর প্রিজরেন শহরে মিলিত হন এবং প্রিজরেনের লিগ তথা আলবানীআলবেনীয় লিগ গঠন করেন। লিগের উদ্দেশ্য ছিল সমস্ত আলবানীআলবেনীয় অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একটি একত্রিত আলবেনিয়া গঠন। লিগ আলবানীআলবেনীয় জবানভাষা, তালিমশিক্ষাতমদ্দুনেরসংস্কৃতির উন্নয়নেরও লক্ষ্য হাতে নেয়। ১৯০৮ সালে আলবানীআলবেনীয় নেতারা লাতিন লিপির উপর ভিত্তি করে একটি জাতীয় বর্ণমালা প্রবর্তন করেন। ১৯১০ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আলবানীআলবেনীয় জাতীয়তাবাদীরা উসমানীদেরউসমানীয়দের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। [[প্রথম বলকান যুদ্ধ|পহেলা বলকান জঙ্গ]] নামে পরিচিত এই জঙ্গেযুদ্ধে সার্ব, ইউনানীগ্রিক ও বুলগেরীয় সেনারাও যোগ দেয় এবং উসমানীরাউসমানীয়রা এতে পরাজয় বরণ করে। জঙ্গযুদ্ধ শেষ হবার পর পরই আলবেনিয়া আজাদীস্বাধীনতা ঘোষণা করে। জঙ্গেরযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্য, [[জার্মানি|আলেমানিয়া]], [[রাশিয়া|রুশ]], অস্ট্রিয়া, [[ফ্রান্স|ফরাস]] ও ইতালি (মহাশক্তিসমূহ) একটি সম্মেলনে আলবেনিয়ার আজাদীস্বাধীনতা মেনে নেয়, কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলির প্রবল চাপের মুখে তারা আলবানীআলবেনীয় অধ্যুষিত কসোভো অঞ্চলটি সার্বিয়াকে এবং কামেরিয়া অঞ্চলটির অধিকাংশ ইউনানকেগ্রিসকে দিয়ে দেয়। এর ফলে আলবানীআলবেনীয় জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই সদ্যপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের সীমানার বাইরে পড়ে যায়। মহাশক্তি রাষ্ট্রগুলি একজন আলেমানীজার্মান শাহজাদারাজপুত্র ভিলহেল্ম ৎসু ভিডকে আলবেনিয়ার শাসক নিয়োগ করে, কিন্তু তিনি মাত্র ছয় মাস ক্ষমতায় ছিলেন। এর পরই [[প্রথম বিশ্বযুদ্ধ]] শুরু হয়ে যায়। এসময় অস্ট্রীয়, ফরাসি, ইতালীয়, ইউনানীগ্রিক, মন্টেনেগ্রীয় এবং সার্বীয় সেনারা আলবেনিয়া দখল করে। দেশটিতে রাজনৈতিক নেতৃত্বহীনতা দেখা দেয়। বিশ্বযুদ্ধের পরে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি [[উড্রো উইলসন]] আলবেনিয়াকে ভাগ করে তার প্রতিবেশিদের দিয়ে দিয়ে দেবার ব্রিটিশ-ফরাসি-ইতালীয় পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ভেটো দেন। ১৯২০ সালে আলবেনিয়াকে সদ্য সংগঠিত লিগ অফ নেশন্‌স-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, ফলে দেশটি আজাদস্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।
 
১৯২০-এর দশকে আলবেনিয়ার জনগণ দুইটি বিরুদ্ধ রাজনৈতিক শক্তির অধীনে গভীরভাবে দ্বিধাভক্ত ছিল। আহমেদ বেই জোগুর নেতৃত্বে জমিদার ও গোত্রপ্রধানদের একটি রক্ষণশীল শ্রেণী অতীতের সমাজকাঠামো ধরে রাখতে চাচ্ছিল। অন্যদিকে উদারপন্থী বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ও ব্যবসায়ীরা আলবেনিয়ার আধুনিকীকরণ চেয়েছিলেন। উদারপন্থীদের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাপ্রাপ্ত অর্থডক্স গির্জার [[বিশপ]] ফান নোলি। ১৯২৪ সালে রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে এক গণবিপ্লবের ফলে জোগু ইউগোস্লাভিয়াতে পালিয়ে যান। নোলি নয়ানতুন সরকারের উজিরে আজমেপ্রধানমন্ত্রী হন এবং পশ্চিমা ধাঁচের একটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মন দেন। কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায়, আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাবে ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার হয়ে নোলি ক্ষমতাচ্যুত হন ও জোগু ইউগোস্লাভিয়ার সহায়তায় আবার ক্ষমতায় আসেন। জোগু এরপর ১৪ বছর শাসন করেন। প্রথমে রাষ্ট্রপতি হিসেবে (১৯২৫-১৯২৮) এবং তারপর বাদশাহরাজা প্রথম জোগ হিসেবে (১৯২৮-১৯৩৯)। জোগের স্বৈরশাসনে আলবেনিয়ার অর্থনীতি ছিল স্থবির, তবে তিনি আলবেনিয়াতে একটি আধুনিক বিদ্যালয়স্কুল ব্যবস্থা দিয়ে যান এবং দেশটিতে স্থিতিশীলতা আনেন। কিন্তু ভূমি সংস্কারের সমস্যা সমাধানে তিনি ব্যর্থ হন এবং কৃষকেরা গরীবদরিদ্র থেকে যায়।
 
জোগের শাসনের সময় আলবেনিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ইতালির এতটাই প্রভাব ছিল যে এ সময় আলবেনিয়া দৃশ্যত ইতালির একটি প্রদেশে পরিণত হয়। ১৯৩৯ সালের এপ্রিলে ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার সামান্য আগে ইতালি আলবেনিয়া আক্রমণ ও দখল করে। জোগ পালিয়ে ইউনানেগ্রিসে চলে যান। ১৯৪১ সালে নাৎসি জার্মানি ইউগোস্লাভিয়া ও ইউনানকেগ্রিসকে পরাজিত করলে কসোভো ও কামেরিয়াকে ঐ দেশগুলি থেকে নিয়ে আলবেনিয়ার সাথে যুক্ত করা হয়। এই যুদ্ধকালীন আলবেনিয়া ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ইতালির অধীনে ছিল। এরপর জার্মান সেনারা এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৯৪৪ সালের নভেম্বরে জার্মানরা পিছু হটে গেলে এই যুদ্ধকালীন রাষ্ট্রের পতন ঘটে। কসোভোকে সার্বিয়ার কাছে এবং কামেরিয়াকে ইউনানেরগ্রিসের কাছে ফেরত দিয়ে দেয়া হয়।
 
== সাম্যবাদী শাসন ==
যুদ্ধের সময় জাতীয়তাবাদী, রাজতন্ত্রী ও সাম্যবাদীরা আলবেনিয়াতে সক্রিয়ভাবে ইতালীয়, জার্মান, ও আলেবেনীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। সাম্যবাদীরা শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়, এবং ১৯৪৪ সালের নভেম্বর মাসে তারা আলবেনিয়ার ক্ষমতা দখল করে। এ ব্যাপারে তারা ইউগোস্লাভিয়ার সাম্যবাদীদের সাহায্য নেয়। সাম্যবাদী দলের মহাসচিব এনভার হোক্সহা দেশের নয়ানতুন নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। দরিদ্র কৃষক এবং কিছু বুদ্ধিজীবীর সাহায্য নিয়ে সাম্যবাদী দল একটি আমূল সংস্কার প্রকল্প হাতে নেয় যা জমিদারদের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এবং শিল্প, ব্যাংক, এবং বাণিজ্যিক সম্পত্তি জাতীয়তাকরণ করা হয়। এভাবে সাম্যবাদীরা তাদের শাসন শক্ত করে এবং রাষ্ট্রশাসিত একটি সমাজবাদী সমাজ গঠন করে। সোভিয়েত রাশিয়াতে স্তালিনের শুরু করা মডেল অণুসরণে কৃষির সমবায়ীকরণ করা হয়, এবং ১৯৬৭ সাল নাগাদ প্রায় সব কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় আসে। হোক্সহার সরকার উত্তরের উচ্চভূমিতে শক্ত নিয়ন্ত্রণ স্থাপনে সক্ষম হয় এবং ঐতিহ্যবাহী পিতৃতান্ত্রিক বংশ ও গোত্রের প্রধানদের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। নয়ানতুন শাসনব্যবস্থায় আইনের চোখে নারীরা পুরুষদের সমমর্যাদা লাভ করে।
 
শুরুর দিকে আলবেনিয়া আর্থিক ও সামরিক সাহায্যের জন্য ইউগোস্লাভিয়ার উপর নির্ভর করত। কিন্তু দেশটি ইউগোস্লাভিয়ার রাজনৈতিক আগ্রাসনের ব্যাপারে ভীত ছিল। ১৯৪৮ সালে যখন স্তালিন ইউগোস্লাভিয়াকে সাম্যবাদী ব্লক থেকে আদর্শগত কারণে বহিস্কার করেন, আলবেনিয়া স্তালিনকে সমর্থন দেয়। হোক্সহা আলবেনিয়ার ইউগোস্লাভ-সমর্থক দলগুলিকে নিষিদ্ধ করেন। এই দলগুলির নেতৃত্বে ছিল কোসি খোখে, হোক্সহার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বী। তবে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন ১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকে বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্ব্বী ভূমিকায় লিপ্ত হয়, আলবেনিয়া চীনকে সমর্থন দেয়, কেননা হোহক্সা চীনের আদর্শকে বেশি খাঁটি বলে মনে করতেন। হোহক্সা অন্যান্য সাম্যবাদী বন্ধু দেশের প্রতিও আস্থা হারিয়ে ফেলেন। তিনি তাদেরকে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ত্যাগ করার পুঁজিবাদী পশ্চিমের সাথে হাত মেলানোর অভিযোগ করেন। ১৯৬১ সালে আলবেনিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। যে সোভিয়েত সাহায্য ও কারগরি সহায়তা নিয়ে আলবেনিয়াতে আধুনিক শিল্প ও কৃষির ভিত্তি গড়ে উঠেছিল এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বেড়ে গিয়েছিল, সেগুলি বন্ধ হয়ে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের জায়গায় চীন আলবেনিয়ার প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ও অর্থনৈতিক সাহায্যদাতায় পরিণত হয়।
৬১ নং লাইন:
হোক্সহার অধীনে রাজনৈতিক নিপীড়নের পরিমাণ ছিল ভয়াবহ। বিরুদ্ধ মত দূর করার জন্য সাম্যবাদী দল বাদে বাকী সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সাম্যবাদী দলের অভ্যন্তরীণ বিরুদ্ধবাদীদেরও পর্যায়ক্রমিকভাবে নিষ্ক্রিয় করা হয়। হাজার হাজার লোককে চাকুরিচ্যুত করা হয়, শ্রম ক্যাম্পে অন্তরীণ করা হয়, কিংবা মেরে ফেলা হয়। সমস্ত সরকারি সংস্থার উপর সেন্সরশিপ জারি করা হয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক সিগুরিমি সব লোকের উপর নজরদারি করত এবং যেকোন ধরনের বিদ্রোহ দেখলেই তা দমন করত। ১৯৬৭ সালে সমস্ত ধর্মীয় সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়, খ্রিস্টান ও মুসলিম ধর্মালয়গুলির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং দেশটিকে বিশ্বের প্রথম নাস্তিক রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়।
 
শাসক দলের মধ্যেই বিরোধিতার আভাস দেখা দেয়। ১৯৮১ সালে উজিরে আজমপ্রধানমন্ত্রী মেহমেট শেহু অজানা রহস্যময় কারণে মারা যান। ধারণা করা হয় তিনি হোক্সহাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পাঁয়তারা করছিলেন। ১৯৮৩ সালে সিগুরিমি বেশ কয়েকজন দলীয় কর্মকর্তাকে ফাঁসি দেন। ১৯৮৫ সালের এপ্রিলে হোক্সহা মারা গেলে দলের প্রথম সচিব রামিজ আলিয়া তার পদে আসেন। আলিয়া সাম্যবাদী ব্যবস্থা বজায় রেখে অবনতিশীল অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সংস্কারকাজ উপস্থাপন করেন।
 
== গণতন্ত্রের শুরু ==
১৯৮৯ সালে পূর্ব ইউরোপে যখন সাম্যবাদী শাসনের অবসান ঘটে, তখন কিছু কিছু আলবানীআলবেনীয় আরও সুদূরপ্রসারী সংস্কারের দাবী তোলেন। এদের মধ্যে ছিলেন বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক শ্রেণীর সদস্য, এবং অসন্তুষ্ট তরুণেরা। বর্ধমান অশান্তি ও গণবিক্ষোভের মুখে আলিয়া ধর্মীয় আজাদীস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেন, সিগুরিমির ক্ষমতা খর্ব করেন এবং কিছু বাজার সংস্কার ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ হাতে নেন। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সরকার আজাদস্বাধীন রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি বৈধ ঘোষণা করে, ফলে রাজনীতিতে সাম্যবাদী দলের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ শেষ হয়। বিচার ব্যবস্থা সংস্কার করে আইন মন্ত্রণালয় তৈরি করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ডের পরিমাণ হ্রাস করা হয়। আলবানীদেরআলবেনীয়দের বিদেশ গমনের অণুমতি দেয়া হয়। ১৯৯০ সালে হাজার হাজার আলবানীআলবেনীয় পশ্চিমা দেশগুলির দূতাবাসের মাধ্যমে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ৫০০০ আলবানীকেআলবেনীয়কে নিরাপদে সরিয়ে নিতে বহুদেশীয় ত্রাণ অপারেশন হাতে নেওয়া হয়। আরও ২০ হাজার আলবানীআলবেনীয় নৌকায় করে অবৈধভাবে ইতালিতে পাড়ি জমায়।
 
একই সময়ে আলবেনিয়াতে গণপ্রতিবাদ চলতে থাকে। ফলে সরকার ও সাম্যবাদী দল থেকে অনেক চরম সাম্যবাদী নেতাকে বহিস্কার করা হয়। ১৯৯১ সালের এক মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে অনেকে নিহত হয়। মার্চে সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। একই মাসে আইনসভার জন্য বহুদলীয় ইন্তেখাবনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাম্যবাদী দল ও তাদের মিত্ররা ২৫০টি আসনের মধ্যে ১৬৯টি আসন জেতে। অন্যদিকে নবগঠিত ডেমোক্র‌্যাট দল ৭৫টি আসন জেতে। সাম্যবাদীদের বিজয়ের পর আরেক দফা বিক্ষোভ শুরু হয়। এবার শকোডার শহরে পুলিশের গুলিতে চার জন মারা যায়।
 
১৯৯১ সালের এপ্রিলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান পাস করা হয় এবং দেশের নাম গণপ্রজাতন্ত্রী আলবেনিয়ার পরিবর্তে আলবেনিয়া প্রজাতন্ত্র রাখা হয়। আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সাম্যবাদীরা আলিয়াকে নব্যসৃষ্ট রাষ্ট্রপতি পদে বসায় এবং অর্থনীতিবিদ ফাতোস নানো উজিরে আজমপ্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু হাজার হাজার শ্রমিকের সাধারণ ধর্মঘটের মুখে এই সরকার পদত্যাগ করেন এবং জুনে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করা হয়। এতে সাম্যবাদী, গণতন্ত্রী, প্রজাতন্ত্রী এবং সামাজিক গণতন্ত্রীরা অন্তর্ভুক্ত হন। কিন্তু রাস্তায় মিছিল চলতে থাকে এবং প্রতিবাদকারীরা প্রাক্তন সাম্যবাদী নেতাদের গ্রেপ্তার ও গণমাধ্যমের পূর্ণ আজাদীস্বাধীনতা দাবী করতে থাকে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে কোয়ালিশন সরকারের পতন ঘটে এবং একটী অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
 
১৯৯২ সালের মার্চে নয়ানতুন ইন্তেখাবনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে গণতন্ত্রীরা আইনসভার ১৪০টি আসনের মধ্যে ৯২টিতে বিজয়ী হয়।
সমাজবাদীরা ৩৮টি, সমাজবাদী গণতন্ত্রীরা ৭টি এবং ইউনানীগ্রিক সংখ্যালঘু একতা দল ২টি আসন জেতে। আইনসভা গণতন্ত্রী দলের নেতা সালি বেরিশাকে রাষ্ট্রপতি বানায় এবং বেরিশা আলেক্সান্দর মেক্‌সিকে উজিরে আজমপ্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। বেরিশার অধীনে বেশ কিছু প্রাক্তন সাম্যবাদী কর্মকর্তাকে, যাদের মধ্যে আলিয়া ও নানো-ও ছিলেন, গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির দায়ে বিচার করা হয় এবং দীর্ঘমেয়াদের শাস্তি দেয়া হয়। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন এই বিচারগুলি ন্যায়বিচার ছিল না, বরং বেরিশা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্ব্বীদের সরিয়ে ফেলতে এগুলি এস্তেমালব্যবহার করেন। আলিয়া ও নানো উভয়েই কয়েক বছরের মধ্যেই ছাড়া পান। ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে গণতন্ত্রীরা একটি নয়ানতুন সংবিধান প্রস্তাব করে কিন্তু জনগণ একটি গণভোটে তা প্রত্যাখ্যান করেন। বিরোধীরা বলে যে এই প্রস্তাবটিতে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতির হাতে আরও ক্ষমতা কুক্ষিগত করত। রাষ্ট্রপতিকে স্বৈরাচারী আখ্যা দেয়া হয় এই বলে যে তিনি প্রেসের আজাদীতেস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, প্রাক্তন সাম্যবাদী নেতাদের জুলুম এবং আদালতসমূহ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সরকারের সমর্থকেরা পাল্টা দাবি করে যে সমাজবাদীরা দেশের নয়ানতুন গণতন্ত্র বানচাল করে দিতে চাচ্ছে।
 
প্রাক্তন ইউগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রগুলির সাথে সম্পর্কও খারাপের দিকে মোড় নেয়, বিশেষ করে সার্বীয় প্রদেশ কসোভোর সংখাগরিষ্ঠ আলবানীআলবেনীয় জনগণের উপর নিপীড়ন প্রসঙ্গে। ১৯৮৯ সালে সার্বিয়া কসভোর স্বায়ত্বশাসন রদ করে এবং ১৯৯১ সালে কসভোর আলবানীআলবেনীয় নেতারা প্রদেশটির আজাদীস্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে কসোভো স্বীকৃতি পায়নি, আলবেনিয়া কসোভোকে সমর্থন দেয় এবং জাতিসংঘকে প্রদেশটিতে পর্যবেক্ষক পাঠাতে আরজঅণুরোধ জানায়। কিন্তু জাতিসংঘ এই আরজেঅণুরোধে সাড়া দেয়নি। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি আলবেনিয়া ভয় করতে শুরু করে যে অশান্ত কসোভোতে সামরিক ধরপাকড় শুরু হবে এবং বহু লোক উদ্বাস্তু হয়ে গোটা বলকান অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। এছাড়া ম্যাকেডোনিয়াতেম্যাসিডোনিয়াতে আলবানীআলবেনীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারেও আলবেনিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে।
 
১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি আলবেনিয়াতে সাধারণ ইন্তেখাবনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু রাষ্ট্রপতি সালি বেরিশার গণতন্ত্রী দল বিজয় লাভ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়। বিরোধী দলগুলি সংসদ বর্জন করে। ১৯৯৭ সালে এই সংসদ বেরিশাকে আরও ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত করে। ১৯৯৭ সালের শুরুতে অনেকগুলি জাল বিনিয়োগ স্কিম ধরা পড়ে, যাতে হাজার হাজার আলবানীআলবেনীয় তাদের সঞ্চয় হারান। সরকার বহু বিনিয়গকারীকে আংশিক ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও অর্থনীতিতে বিপর্যয় ও রাজনৈতিক স্ক্যান্ডালের প্রেক্ষিতে আলবানীরাআলবেনীয়রা প্রথমে বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ শুরু করে ও পরে সেগুলি রায়টে রূপ নেয়। ১৯৯৭ সালের মার্চের মধ্যে দেহসব্যাপী বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশের অনেক অংশে প্রশাসন বিকল হয়ে যায়। দেশের দক্ষিণাংশ, বিশেষ করে ভলোরে এবং সারান্দে শহর, স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনী ও সশস্ত্র নাগরিকেরা লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা নিজেদের হাতে তুলে নেন।
 
দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয় এবং রাষ্ট্রপতি বেরিশা একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন সমাজবাদী বাশকিম ফানো। বেরিশা জুনের মধ্যে সাধারণ ইন্তেখাবেরনির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং তার দল হেরে গেলে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগের প্রতিশ্রুতি দেন। নয়ানতুন সরকার দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য কামনা করে। তবে ইতালীয় কমান্ডারের অধীনে আগত বহুজাতিক বাহিনীটিকে কেবল আলবেনিয়ার দুর্গম এলাকাগুলিতে ত্রাণ সরবরাহেই কাজে লাগানো হয়।
 
১৯৯৭ সালের জুনের ইন্তেখাবেনির্বাচনে সমাজবাদীরা ৬৫% ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসে। বেরিশা জুলাইয়ে পদত্যাগ করেন। কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত নেতা ফাতোস নানো উজিরে আজমপ্রধানমন্ত্রী হন। রেক্সহেপ মেজদানী নামের আরেকজন সমাজবাদী নেতাকে রাষ্ট্রপতি পদ দেওয়া হয়। গণতন্ত্রীরা ১৯৯৮ সালের মার্চ পর্যন্ত সংসদ বয়কট করেন। ১৯৯৭ সালের আগস্টে সরকার ঘোষণা দেন যে ভলোরে শহরে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সেই মাসেই বহুজাতিক বাহিনী আলবেনিয়া ত্যাগ করে। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে উজিরে আজমপ্রধানমন্ত্রী নানো কোয়ালিশন সরকারের সাথে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের ব্যাপারে মতভেদের কারণে পদত্যাগ করেন। পান্ডেলি মাজকো নামের একজন সমাজবাদী নেতাকে উজিরে আজমপ্রধানমন্ত্রী বানানো হয়। কসোভোতে জাতিগত আলবানীআলবেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বহু সার্বীয় পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করলে এর জের ধরে ১৯৯৮ সালের শুরুতে তৎকালীন ইউগোস্লাভিয়ার (বর্তমান সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রো) সাথে আলবেনিয়ার সম্পর্ক খারাপের দিকে মোড় নেয়। সার্বীয় পুলিশ ও ইউগোস্লাভ সেনাবাহিনীর দল কসোভোর সাধারণ জনগণের উপর হামলা করে এবং ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালের শুরুর অধিকাংশ সময় জুড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী কসভো মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে। ইউগোস্লাভিয়া কসোভোর ব্যাপারে শান্তিচুক্তিতে আসতে অসম্মতি জানালে ১৯৯৯ সালের মার্চে ন্যাটো ইউগোস্লাভ সামরিক স্থাপনাগুলিতে বিমান হামলা চালানো শুরু করে। এর জবাবে সার্বীয় সেনারা কসোভোর গ্রামগুলিতে আরও বেশি আক্রমণ শুরু করে, ফলে লাখ লাখ লোক নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে চলে যায়। ১৯৯৮ সাল থেকেই আলবেনিয়া কসোভো-আগত উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিয়ে আসছিল, কিন্তু ১৯৯৯- এর বিমান হামলার ফলে উদ্বাস্তুর ঢেউ সামলাতে আলবেনিয়া হিমশিম খেয়ে যায়। দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতিতে চাপের সৃষ্টি হয়। জুন মাসের মধ্যেই প্রায় সাড়ে চার লাখ কসোভোবাসী আলবেনিয়াতে আশ্রয় নেয়। ঐ মাসেই ইউগোস্লাভ সরকার একটি আন্তর্জাতিক শান্তি চুক্তিতে সম্মত হয়। চুক্তির শর্ত অনুসারে কসোভোতে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনী স্থাপন করা হয় যাতে উদ্বাস্তুরা নিরাপদে দেশে ফিরে আসতে পারে।
 
== সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ==
১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে মাজকো সাম্যবাদী দলের অভ্যন্তরীণ আস্থা হারিয়ে উজিরে আজমেরপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অবসর নেন। তার স্থানে আসেন ইলির মেতা, একজন তরুণ ও সংস্কারপন্থী নেতা। মেতা মাজকো সরকারের নীতি ধরে রাখার ব্যাপারে শপথ করেন; এই নীতিগুলির মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেটোতে আলবেনিয়ার সদস্যপদ প্রাপ্তির ব্যাপারে কাজ করা। ২০০১ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সংসদীয় ইন্তেখাবেনির্বাচনে সমাজতান্ত্রিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখে।
 
কিন্তু ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে ফাতোস নানোর সাথে তিক্ত বিবাদের জের ধরে মেতা হঠাৎ করে উজিরে আজমপ্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অবসর নেন। সমাজতান্ত্রিক দলও এতে দুই ভাগ হয়ে যায়। নানো মেতার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন এবং মন্ত্রিসভাতে আমূল পরিবর্তন আনতে বলেন। মেতার পদত্যাগের পর পরই গণতন্ত্রী দলের সদস্যরা সাত মাসের বয়কট শেষ করে সংসদে ফেরত আসেন।
 
২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সমাজতান্ত্রিক দলের নেতারা মাজকোকে মেতার উত্তরসূরী হিসেবে নির্বাচিত করেন এবং জুন মাসে সংসদ বিদায়ী রেক্সহেপ মেজদানির স্থলে আলফ্রেড মোইসিউ-কে রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দেয়। মোইসিউ একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তিনি জুলাই মাসে পদ গ্রহণ করেন। একই মাসে মাজকোকে সরিয়ে নানো উজিরে আজমপ্রধানমন্ত্রী হন। নয়ানতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয় এবং আশা করা হয় সেটি সমাজতান্ত্রিক দলের অন্তর্কোন্দল বন্ধ করবে।
 
== তথ্যসূত্র ==