সুভাষচন্দ্র বসু: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
FreeWriter07 (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: হাতদ্বারা প্রত্যাবর্তন দৃশ্যমান সম্পাদনা
Dr. Bir (আলোচনা | অবদান)
সংশোধন
৫৩ নং লাইন:
'''সুভাষচন্দ্র বসু''' {{অডিও|Bn-নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু.oga|উচ্চারণ}} (২৩ জানুয়ারি ১৮৯৭ - ?)<!-- <টীকা></টীকা> --> [[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন|ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের]] এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি হলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র যিনি এই সংগ্রামে নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি '''নেতাজি''' নামে সমধিক পরিচিত। ২০২১ সালে [[ভারত সরকার|ভারত সরকারের]] প্রধানমন্ত্রী [[নরেন্দ্র মোদী]] তার জন্মবার্ষিকীকে জাতীয় পরাক্রম দিবস বলে ঘোষণা করেন।
সুভাষচন্দ্র পরপর দুইবার [[ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস|ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের]] সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু [[মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী|গান্ধীর]] সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত, কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা<ref group="টীকা>"১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে হরিপুরায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে সুভাষ প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রবর্তনের তীব্র সমালোচনা করেন এবং এই প্রচেষ্টা কার্যকর করা হলে তা সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করার আবেদন করেন। এছাড়া সুভাষ কংগ্রেসকে একটি ব্যাপক গণসংগঠনে পরিণত করে জাতীয় আন্দোলনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। কংগ্রেস সভাপতির পদে আসীন থাকার সময় সুভাষ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বর্জন ও আপোষহীন সংগ্রামের সপক্ষে বলিষ্ঠ মতামত প্রকাশ করেন। জুলাই মাসে (১৯৩৮ খ্রি.) এক বিবৃতিতে তিনি ঘোষণা করেন– "কংগ্রেসের অধিকাংশ সদস্য যদি ফেডারেশন সম্পর্কে কোনো আপোষরফায় রাজি হয় তাহলে কংগ্রেস দলে গৃহযুদ্ধের সূচনা হবে।"</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|আধুনিক ভারত (১৯২০–১৯৪৭)|খণ্ড= দ্বিতীয় খণ্ড|লেখক = প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় |প্রকাশক=পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ|অবস্থান=কলকাতা|সাল=১৯৯৯ |পাতা= ১৫২ }}</ref> এবং বিরুদ্ধ-মত প্রকাশ করার জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়। সুভাষচন্দ্র মনে করতেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর [[অসহযোগ আন্দোলন|অহিংসা]] এবং সত্যাগ্রহের নীতি ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। এই কারণে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র [[সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক|ফরওয়ার্ড ব্লক]] নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং<ref>''আধুনিক ভারত (১৯২০–১৯৪৭)'', দ্বিতীয় খণ্ড, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃ. ১৫৬</ref> ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের সত্বর ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে এগারো বার কারারুদ্ধ করে। তার বিখ্যাত উক্তি "''তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।''"
[[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ]] ঘোষিত হওয়ার পরেও তার মতাদর্শের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি; বরং এই যুদ্ধকে ব্রিটিশদের দুর্বলতারদুর্বলতাকে সুবিধা আদায়ের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেন। যুদ্ধের সূচনালগ্নে তিনি লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে [[সোভিয়েত ইউনিয়ন]], [[জার্মানি]] ও [[জাপান]] ভ্রমণ করেন ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে। জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি [[আজাদ হিন্দ ফৌজ]] পুনর্গঠন করেন এবং পরে তিনি নেতৃত্ব প্রদান করেন। এই বাহিনীর সৈনিকেরা ছিলেন মূলত ভারতীয় [[যুদ্ধবন্দি]] এবং ব্রিটিশ মালয়, [[সিঙ্গাপুর]]সহ [[দক্ষিণ এশিয়া]]র অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত মজুর। [[জাপান সাম্রাজ্য|জাপানের]] আর্থিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় তিনি নির্বাসিত [[আজাদ হিন্দ সরকার]] প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বদান করে ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে [[ইম্ফলের যুদ্ধ|ইম্ফল]] ও [[ব্রহ্মদেশ অভিযান|ব্রহ্মদেশে]] (বর্তমান মায়ানমার) যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে [[নাৎসি জার্মানি|নাৎসি]] ও অন্যান্য যুদ্ধবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষচন্দ্রের সমালোচনা করেছেন; এমনকি কেউ কেউ তাকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযুক্ত করেছেন। তবে ভারতে অন্যান্যরা তার ইস্তাহারকে [[রিয়েলপোলিটিক]] (নৈতিক বা আদর্শভিত্তিক রাজনীতির বদলে ব্যবহারিক রাজনীতি)-এর নিদর্শন বলে উল্লেখ করে তার পথপ্রদর্শক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করেছেন।
উল্লেখ্য, কংগ্রেস কমিটি যেখানে ভারতের অধিরাজ্য মর্যাদা বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের পক্ষে মত প্রদান করে, সেখানে সুভাষচন্দ্রই প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দেন। [[জওহরলাল নেহরু]]সহ অন্যান্য যুবনেতারা তাকে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে [[কংগ্রেস]] [[পূর্ণ স্বরাজ]] মতবাদ গ্রহণে বাধ্য হয়। [[ভগৎ সিং|ভগৎ সিংয়ের]] ফাঁসি ও তার জীবন রক্ষায় কংগ্রেস নেতাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ<ref group ="টীকা">"করাচি কংগ্রেস উদ্বোধনের ঠিক আগে ২৩ মার্চ ভগৎ সিং, শুকদেব ও রাজগুরুর ফাঁসির ঘটনায় তীব্র হয় র‌্যাডিকাল জাতীয়তাবাদীদের হতাশা ও ক্রোধ।" ''আধুনিক ভারত (১৮৮৫-১৯৪৭)'', সুমিত সরকার, কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি, কলকাতা, ২০০৪, পৃ.২৬৭</ref> সুভাষচন্দ্র [[গান্ধি-আরউইন চুক্তি|গান্ধী-আরউইন চুক্তি]] বিরোধী
৬২ নং লাইন:
[[চিত্র:Joppen1907BritishBengalBritishBurmaA.jpg|থাম্ব|বাম|'''মানচিত্র ১''': ১৭৫৭ থেকে ১৮০৩ সালের মধ্যে [[বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি|ব্রিটিশ বাংলার]] আয়তন বৃদ্ধি বাদামি রঙে প্রদর্শিত হয়েছে। [[কলকাতা]] থেকে [[কটক]] প্রায় ২২৫ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।]]
 
সুভাষচন্দ্র বসু [[দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা|দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার]] বিখ্যাত “মাহীনগরের বসু পরিবার"-এ জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা [[প্রভাবতী বসু (দত্ত)]] ছিলেন উত্তর কলকাতার হাটখোলা দত্ত বাড়ির কন্যা এবং পিতা [[জানকীনাথ বসু]]। সুভাষ ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি [[ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশসমূহ|ব্রিটিশ ভারতের]] অন্তর্গত [[বাংলা প্রেসিডেন্সি|বাংলা প্রদেশের উড়িষ্যা বিভাগের]] (অধুনা, ভারতের [[ওড়িশা|ওড়িশা রাজ্য]]) [[কটক|কটকে]] জন্মগ্রহণ করেন। সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন তার পিতা-মাতার চৌদ্দ সন্তানের নবম সন্তান তথা ষষ্ঠ পুত্র। তার বাবা জানকীনাথ বসু ছিলেন একজন সফল ও সরকারি আইনজীবী। {{sfn|Hayes|2011|p=1}} তিনি [[ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশসমূহ|ব্রিটিশ ভারতের]] সরকারের প্রতি অনুগত ছিলেন এবং ভাষা ও আইন সম্পর্কিত বিষয়ে কঠোরঅত্যন্ত সচেতন ছিলেন। প্রান্ত কলকাতার স্বপ্রতিষ্ঠিত এই মানুষটি নিজের শিকড়রের সঙ্গে সংযোগ অটুট রেখেছিলেন, প্রত্যেক দুর্গা পূজার ছুটিতে তিনি নিজের গ্রামে ফিরে যেতেন। তাদের পৈত্রিক নিবাস ছিল [[ভারত|ভারতের]] অধুনা [[পশ্চিমবঙ্গ]] রাজ্যের [[দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা]] জেলার [[কোদালিয়া]] (বর্তমানে [[সুভাষগ্রাম|সুভাষগ্রামের]] অন্তর্ভুক্ত)৷<ref>''Subhash Chandra Bose: A Biography'', Chattopadhyaya, Gautam, National Council of Educational Research and Training, New Delhi, 1997, p. 1</ref>
 
১৯০২ সালে তিনি তার পাঁচ বড় ভাইয়ের সাথে [[কটক|কটকের]] প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় স্কুলে (অধুনা, স্টুয়ার্ট স্কুল) ভর্তি হন। {{Sfn|Gordon|1990|p=32}} ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত সুভাষচন্দ্র বসু বিদ্যালয়টিতে পঠন-পাঠন করেন। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://onushilon.org/corita/suvash-chandra-boshu.htm|শিরোনাম=সুভাষ চন্দ্র বসু, নেতাজি|ওয়েবসাইট=onushilon.org|সংগ্রহের-তারিখ=2021-02-10}}</ref> বিদ্যালয়টিতে সমস্ত শিক্ষারদানেরশিক্ষাদানের মাধ্যম ছিল ইংরেজি, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ইউরোপীয় বা মিশ্রিত ব্রিটিশদের [[অ্যাংলো-ভারতীয়]] ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন। {{sfn|Lebra|2008a|pp=102—103}} পাঠ্যক্রমটিতে ইংরাজী—সঠিকভাবে লিখিত ও কথ্য—লাতিন, বাইবেল, ভালসহবত আচরণশিক্ষা, ব্রিটিশ ভূগোল এবং ব্রিটিশ ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত ছিল; কোনও ভারতীয় ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা ছিল না।{{sfn|Lebra|2008a|pp=102—103}}{{Sfn|Gordon|1990|p=32}} এই বিদ্যালয় তার পিতা জানকীনাথের পছন্দ ছিল, তিনি চেয়েছিলেন তার ছেলেরা যেন নির্দ্বিধায় ত্রুটিহীন ইংরেজীইংরেজি বলতে পারে। ভারতে ব্রিটিশদের মাঝে থাকার জন্য তিনি বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষাকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন। {{Sfn|Gordon|1990|p=11}} তারতাঁর বাড়িতে কেবলমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলা হত, ফলে বিদ্যালয়টি ছিল বাড়ির বিপরীত বৈশিষ্ট্যের। বাড়িতে, তার মা হিন্দু দেবী [[দুর্গা]] ও [[কালী]]র উপাসনা করতেন, [[মহাভারত]] ও [[রামায়ণ]] মহাকাব্য থেকে গল্প বলতেন এবং বাংলা ভক্তিগীতি গাইতেন। {{Sfn|Gordon|1990|p=32}} মায়ের কাছ থেকে, সুভাষ একটি যত্নশীলস্নেহশীল মনোভাবস্বভাব অর্জনলাভ করেন, তিনি দুর্দশাগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করতেন ও বাড়ির পাশে অন্যপ্রতিবেশী ছেলেদের সাথে খেলাধুলায়সঙ্গে যোগখেলাধুলা দেওয়াকরাউদ্যানপালনউদ্যানচর্চা পছন্দ করতেন। {{Sfn|Gordon|1990|p=33}}
 
[[চিত্র:1906 Subhas Chandra Bose as child.png|থাম্ব|১৯০৬ সালে শিশু সুভাষচন্দ্র]]
 
তার আর পাঁচ ভাইকে অনুসরণ করে সুভাষকে ১৯০৯ সালে ১২ বছর বয়সে কটকের [[রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুল|রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে]] ভর্তি করা হয়। এখানে, বাংলা ও সংস্কৃত শেখানো হত এবং পাশাপাশি বাড়িতে সাধারণত গৃহীত না হওয়া হিন্দু ধর্মগ্রন্থ যেমন— [[বেদ]] ও [[উপনিষদ]] সম্পর্কে পাঠদান কারাকরা হত। যদিও তার পাশ্চাত্য শিক্ষার তৎপরতা অব্যাহত ছিল, তবেতবুও তিনি ভারতীয় পোশাক পরতেন এবং ধর্মীয় ভাবনাচিন্তার সাথে জড়িত ছিলেন। ব্যস্ততা সত্ত্বেও, সুভাষচন্দ্র বসু পড়াশোনায় মনোযোগ , প্রতিযোগিতা ও পরীক্ষায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ১৯১২ সালে [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ম্যাট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।
 
সুভাষচন্দ্র বসু আবারও তার পাঁচ ভাইকে অনুসরণ করে ১৯১৩ সালে কলকাতার [[প্রেসিডেন্সী কলেজ, কলকাতা|প্রেসিডেন্সি কলেজে]] ভর্তি হন। তিনি দর্শনকে অধ্যয়ন বিষয় হিসাবে নির্বাচিত করেন, পাশাপাশি [[ইমানুয়েল কান্ট|ক্যান্ট]], [[গেয়র্গ ভিলহেল্ম ফ্রিডরিখ হেগেল|হেগেল]], [[অঁরি বের্গসন|বের্গসন]] ও অন্যান্য [[পাশ্চাত্য দর্শন|পাশ্চাত্য দার্শনিকদের]] সম্পর্কে পড়াশোনা করেন। এর এক বছর আগে, তিনি ধর্মীয় আকাঙ্ক্ষায় বিশ্বাসী ও অংশীদার [[হেমন্তকুমার সরকার|হেমন্ত কুমার সরকারের]] সাথে বন্ধুত্ব করেন।করেন, যিনি ছিলেন সুভাষের অত্যন্ত অন্তরঙ্গ ও আধ্যাত্মিক আকুলতার সঙ্গী।
 
সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে তিনি প্রায় নিয়োগপত্র পেয়ে যান। কিন্তু বিপ্লব-সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, "কোনো সরকারের সমাপ্তি ঘোষণা করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হল তা থেকে (নিজেকে) প্রত্যাহার করে নেওয়া"। এই সময় [[অমৃতসর হত্যাকাণ্ড]] ও ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দসালের দমনমূলক রাওলাট আইন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। ভারতে ফিরে সুভাষচন্দ্র 'স্বরাজ' নামক সংবাদপত্রে লেখালেখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচারের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন [[বঙ্গ|বাংলা]]য় মহান জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা দেশবন্ধু [[চিত্তরঞ্জন দাশ]]।<ref>"রাজনৈতিক গুরু হিসাবে সুভাষচন্দ্র গান্ধিজির তুলনায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকেই গণ্য করেছিলেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দেশবন্ধু নির্দেশিত পথই অনুসরণ করে গিয়েছেন।" - "সুভাষচন্দ্র একটি সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন", সুধী প্রধান, 'পশ্চিমবঙ্গ' পত্রিকা, ডিসেম্বর-জানুয়ারি ১৯৯৬-৯৭ সংখ্যা (নেতাজি সংখ্যা), পৃ. ১০৯</ref> ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দেসালে দেশবন্ধু যখন [[কলকাতা পৌরসংস্থা]]র [[মহানাগরিক|মেয়র]] নির্বাচিত হন, তখন সুভাষচন্দ্র তার অধীনে কর্মরত ছিলেন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দেসালে অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে তাকেও বন্দি করা হয় এবং [[মান্দালয়|মান্দালয়ে]] নির্বাসিত করা হয়। এখানে তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
 
সুভাষচন্দ্র ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ [[হিন্দু]]। কিন্তু [[আজাদ হিন্দ ফৌজ]] পরিচালনা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে তিনি ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবধারায় সকল ধর্মাবলম্বীদের ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ধ্যানে অনেক সময় অতিবাহিত করতেন। [[স্বামী বিবেকানন্দ|স্বামী বিবেকানন্দের]] ভাবাদর্শ তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।<ref>"বিবেকানন্দের আদর্শকে যে-সময়ে জীবনে গ্রহণ করেছিলাম তখন আমার বয়স বছর পনেরও হবে কিনা সন্দেহ। বিবেকানন্দের প্রভাব আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিল।" - "স্বামী বিবেকানন্দ: মনীষীদের চোখে (সুভাষচন্দ্র বসু)", 'পশ্চিমবঙ্গ' পত্রিকা জানুয়ারি ২০০৪ সংখ্যা (স্বামী বিবেকানন্দ বিশেষ সংখ্যা), পৃ. ৭১</ref> ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি তারতাঁর দেশপ্রেমিক সত্তার জন্য পরিচিত ছিলেন।
 
== কর্মজীবন ও রাজনীতিতে প্রবেশ ==