হ্যানা সেন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্প্রসারণ
লিঙ্ক যোগ+
১ নং লাইন:
{{কাজ চলছে/উইকি লাভস উইমেন ২০২১}}
'''হ্যানা সেন''' (১৮৯৪–১৯৫৭) একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং [[নারীবাদী]] [[নারী ভোটাধিকার আন্দোলন|ভোটাধিকার আন্দোলনকারী]] ছিলেন। তিনি ১৯৫২ থেকে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের প্রথম [[রাজ্যসভা]]র (ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ) সদস্য এবং ১৯৫১-৫২ খ্রিস্টাব্দে [[সর্বভারতীয় মহিলা সম্মেলন|সর্বভারতীয় মহিলা সম্মেলনের]] সভাপতি ছিলেন। তিনি [[দিল্লি|দিল্লির]] লেডি আরউইন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম পরিচালক ছিলেন। তিনি মহিলাদের অবস্থার বিষয়ে [[জাতিসংঘ|জাতিসংঘের]] এবং [[জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা|ইউনেস্কো কমিশনে]] ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এবং [[ভারত বিভাজন|ভারত বিভাজনের]] পরে নারী ও শিশু শরণার্থীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে [[ভারত সরকার|ভারত সরকারের]] একজন উপদেষ্টা ছিলেন।
 
==প্রথম জীবন==
হ্যানা সেন ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে হান্না গুহ নামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পেয়ারী মোহন গুহ ছিলেন একজন [[আইনজীবী]] এবং মা সিমচা গুব্বে ছিলেন একজন বাগদাদী [[ইহুদি]] মহিলা। পরবর্তীতে তার বাবা [[ইহুদি ধর্ম|ইহুদি ধর্মে]] ধর্মান্তরিত হলে হ্যানা ও তার তিন ভাইবোন ইহুদি বিশ্বাসে বেড়ে ওঠেন। হ্যানার বোন [[রেজিনা গুহ]]ও একজন আইনজীবী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং মহিলাদের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির অনুমতি দেওয়ার জন্য ভারতের প্রথম মামলাটি লড়েছিলেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে হ্যানা মুম্বাইয়ের রেডিওলজিস্ট সতীশচন্দ্র সেনকে বিয়ে করেন। তাদের শান্তা নামে এক কন্যা ছিল, যে ভারতে এবং পরবর্তীতে ব্রাইন মাওর কলেজে পড়াশোনা করে।
 
হ্যানা সেন [[কলকাতা|কলকাতার]] প্র্যাট মেমোরিয়াল স্কুল এবং ডায়োসেসন কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে ব্যাচেলর অফ আর্টস এবং আইন, উভয়েই প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
 
==কর্মজীবন==
স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর [[কলকাতা|কলকাতার]] ইহুদি গার্লস স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তার বোন রেজিনা গুহ সেই কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন, যিনি পরবর্তীতে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে মুম্বায়ের[[মুম্বই|মুম্বাইয়ের]] একটি গার্লস স্কুলের প্রিন্সিপাল হন।
 
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তার বিয়ের পর, তিনি তার স্বামীর সঙ্গে [[ইংল্যান্ড|ইংল্যান্ডে]] ভ্রমণ যান এবং উভয়েই সেখান থেকে স্নাতক শিক্ষা গ্রহণ করেন। সেন [[লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে শিক্ষকতার জন্য ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন এবং সেখানে রিসার্চ ফেলো হিসেবে [[মনোবিজ্ঞান|মনোবিজ্ঞানী]] এবং অধ্যাপক [[চার্লস স্পিয়ারম্যান|চার্লস স্পিয়ারম্যানের]] সঙ্গে কাজ করেন। লন্ডনে থাকাকালীন সেন প্রকাশ্যে নারীশিক্ষার পক্ষে আন্দোলন করেন এবং [[ব্রিটিশ পার্লামেন্ট|ব্রিটিশ পার্লামেন্টের]] সদস্যদের কাছে ভারতে মহিলাদের চ্যালেঞ্জ এবং অবস্থার উপর ভাষণ দেন। তিনি লন্ডনে [[ব্রিটিশ কমনওয়েলথ লিগ|ব্রিটিশ কমনওয়েলথ লিগের]] পাশাপাশি [[ইন্টারন্যাশনাল এলায়েন্স অফ উইমেন|ইন্টারন্যাশনাল এলায়েন্স অফ উইমেনের]] সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্দো-ব্রিটিশ মিউচুয়াল ওয়েলফেয়ার লিগের প্রতিষ্ঠা করেন। এই মহিলা সংগঠনটি ব্রিটিশ এবং ভারতীয় [[নারী ভোটাধিকার আন্দোলন|নারী ভোটাধিকার আন্দোলনকারীদের]] শিক্ষার প্রকল্প নিয়ে একটি সঙ্গবদ্ধ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সক্ষম হয়।
 
ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও কবি [[সরোজিনী নায়ডু|সরোজিনী নাইডু]] [[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন|ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের]] সময় হ্যানা সেনকে [[ভারত|ভারতে]] ফিরে এসে ভারতীয় নারীদের জন্য কাজ করতে বলেন। সেন ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে লেডি আরউইন কলেজ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণের আগে পর্যন্ত কলেজের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। লেডি আরউইন কলেজের মাঠে বিদ্যমান একটি ভবন হ্যানা সেনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। [[ভারত বিভাজন|ভারত বিভাজনের]] সময় দিল্লিতে দাঙ্গা বাধলে তিনি [[মুসলিম]][[শিখ]] ছাত্রদের [[হিন্দু]] জনতার দাঙ্গার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য লেডি আরউইন কলেজের মাঠ খুলে দিয়েছিলেন, যদিও এর জন্য তিনি হুমকির সম্মুখীন হন।
 
১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নতির বিষয়ে ভারত সরকারের উপদেষ্টা কমিটির অংশ ছিলেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভারতের প্রথম [[রাজ্যসভা]]র (ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ) সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনীতিবিদ রামেশ্বরী নাইডু এবং মনমোহিনী জুটশি সহগলের সঙ্গে তাকে স্বাধীন ভারত সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রকের উপদেষ্টা হিসেবেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি ভারত বিভাজনের পর নারী ও শিশু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের প্রচেষ্টায় মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করেছিলেন। তিনি সর্বভারতীয় মহিলা সম্মেলনেও সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯৫১-৫২ খ্রিস্টাব্দে সেখানকার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সেন ভারতীয়[[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন|ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের]] বেশ কয়েকজন নেতার সহযোগী ছিলেন। তিনি [[মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী|মহাত্মা গান্ধীর]] অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সংগঠন ও পরিকল্পনার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন, বিশেষ করে যখন [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র|আমেরিকান]] ফটোগ্রাফারচিত্রগ্রাহক [[মার্গারেট বোর্কে-হোয়াইট|মার্গারেট বোর্কে-হোয়াইটকে]] অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ছবি তুলতে বাধা দেওয়া হয়। সেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে বোর্কে-হোয়াইটকে জনতার রোষ থেকে বের করে আনেন এবং তাকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে ফ্ল্যাশ ফটোগ্রাফি ব্যবহার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। বোর্কে-হোয়াইট সেনের অনুরোধকে অমান্য করলে শেষ পর্যন্ত তাকে শেষকৃত্য থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল।
 
শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর, সেন আন্তর্জাতিক নারীবাদী সংগঠন এবং উদ্যোগেও অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে [[নিউ ইয়র্ক শহর|নিউইয়র্কের]] সমাজকর্ম সম্পর্কিত সর্বভারতীয় সম্মেলনের একজন পর্যবেক্ষক ছিলেন এবং
১৯৫০-৫১ খ্রিস্টাব্দে [[জাতিসংঘ|জাতিসংঘের]] নারীর অবস্থা সংক্রান্ত কমিশনে ভারতীয় নারীদের জন্য প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে অনুষ্ঠিত [[ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার|ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ারের]] ভারতীয় প্রতিনিধি দলের এবং ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে [[প্যারিস|প্যারিসে]] ইউনেস্কোর ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। সেন দিল্লির ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থেকে সেখানে একটি উপাসনালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তহবিল দান করেছিলেন।
 
==তথ্যসূত্র==