বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Hasan.zamil (আলোচনা | অবদান)
Hasan.zamil (আলোচনা | অবদান)
২৩ নং লাইন:
এই অরবিন্দ ঘোষ নরমপন্থীদের হাত থেকে কংগ্রেসের কর্তৃত্ব কেড়ে নিতে ছিলেন তৎপর। ইতিহাসবিদ অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে, 'প্রকাশ্যে কংগ্রেসের মাধ্যমে এবং গোপনে বিপ্লবীদের মাধ্যমে অরবিন্দ যুগপৎ আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন। তার অনুসারীরা পুরোপুরি সন্ত্রাসবাদে ঝুঁকে পড়ে।' ১৯০৭ সালে সুরাটে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস সম্মেলনে লাঠালাঠি, চেয়ার ভাঙ্গাভাঙ্গি, মাথা ফাটানোর ঘটনা ঘটে। বৃটিশ সাংবাদিক নেভিনসন এই ঘটনার নিখুঁত বর্ণনা রেখে গেছেন। অরবিন্দ ঘোষ পরবর্তীতে লিখেছেন, 'আমি তিলকের (কংগ্রেস নেতা বালগঙ্গাধর তিলক) সঙ্গে পরামর্শ না করেই হুকুম দিয়েছিলাম কংগ্রেস অধিবেশন ভেঙ্গে দিতে।'উনবিংশ শতকের শেষে ভারতবর্ষে বৃটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের মূল হাতিয়ার ছিল পিস্তল, রিভলবার। আর এসময় বোমার অনুপ্রবেশ ঘটায় বাঙ্গালিরা। নেতৃত্ব ছিলেন এই অরবিন্দ ঘোষ। বারীণ ঘোষ 'যুগান্তর' নামে একটি উপদল গঠন করেন ১৯০৫ সালে অনুশীলন সমিতির কলকাতা শাখা ভেঙে। এই সমিতি বোমা তৈরি শেখার জন্য হেমচন্দ্র কানুণগো নামে একজন বিপ্লবীকে প্যারিসে পাঠায়। এর আগে কলকাতার আত্মোন্নতি সমিতির সদস্য বিভূতি চক্রবর্তী বোমা বানানো শুরু করেন। কিন্তু এই বোমার ক্ষমতা তেমন মারাত্মক ছিল না। এই বোমায় রেললাইন বা সেতু উড়ানো যেতো না। অন্য বিপ্লবীরাও বোমা বানাতে শুরু করেছিল। সেসব বোমা ছোটলাট এন্ড্রু ফ্রেজারকে আঘাত এবং বড়লাট হার্ডিঞ্জকে রক্তাক্ত করেছিল। উন্নতমানের বিস্ফোরক তৈরি শিখতে হেমচন্দ্র সুইজারল্যান্ড ও প্যারিসে গিয়ে সুবিধা করতে না পেরে চলে যান লন্ডনে। কিন্তু সেখানেও সুযোগ না পেয়ে ফিরে যান প্যারিসে। ফরাসি সমাজতান্ত্রিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে এবং বিস্ফোরক রসায়ন ও বিস্ফোরক ঘটাবার কায়দা কানুন শিখে নেন। রুশ সন্ত্রাসবাদী দলের বিপ্লবী নিকোলাস সাফ্রানস্কির কাছে প্রশিক্ষিত হয়ে হেমচন্দ্র কলকাতায় ফিরে আসেন ১৯০৮ সালের জানুয়ারিতে। হেমচন্দ্র নির্মিত প্রথম বোমাটি কিংসফোর্ডকে ১০৭৫ পৃষ্ঠার বইয়ের ভেতরে করে পাঠানো হয়েছিল, যা বিস্ফোরিত হয়নি। মার্চ মাসে হেমচন্দ্র বোমা তৈরির স্কুল খোলেন পাঁচ ছাত্রকে নিয়ে। তার তৈরি বোমাটিই নিক্ষেপ করেছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। ক্ষুদিরামের এই ঘটনার পর পুলিশ বিভিন্নস্থানে হানা দিয়ে ৩৪ জন বিপ্লবীকে গ্রেফতার এবং বোমা বানানো বিষয়ক বইপত্র ও সরঞ্জাম আটক করে। এই বিপ্লবীদের ফাঁসি, দ্বীপান্তর হলেও বোমার শব্দ পরবর্তীতেও থামেনি। মাষ্টারদা সূর্যসেন হয়ে তা একুশ শতকে পাড়ি দিয়েছে। <ref>http://www.thedailysangbad.com/details.php?news=41&action=main&option=single&news_id=8919&pub_no=96</ref>
 
সে যুগে আচার্য প্রফল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মতো বিজ্ঞানীরা গোপনে বোমা তৈরির রসায়ন শেখাতেন ছাত্রদের। বিপ্লবী ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, '১৯০৩-০৪ সালে বাংলায় একটি প্রচার হয়েছিল, আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশে বিপ্লব হবে। অন্যসব প্রদেশ তৈরি কিন্তু 'কাপুরুষ' বাঙ্গালি কিছু করছে না। বাঙ্গালির মনে হয়েছিল, 'কাপুরুষ' এই অপবাদটি স্খলন করা দরকার। তাই ঝোঁক হলো লাঠি খেলা। রসায়ন চর্চার। ... বঙ্গদেশে বোমা আবির্ভাবের দুটো মূল কারণ-প্রথমত. বাঙ্গালি ভাবপ্রবণ ও কল্পনাপ্রিয় জাতি। সেই সময়ে বাঙ্গালি ছাত্রদের অনেকেই ম্যাটিসিনি, গ্যারিবল্ডির জীবনী পড়ে ফেলেছেন। রুশ নিহিলিস্টদের কাজকর্ম খেয়াল রাখছেন। এদের কাজকর্মের সঙ্গে বোমার সংযোগ ছিল। য়ুরোপীয় বিপ্লবীদের কাজকর্মের ধারা, সন্ত্রাসবাদী চিন্তা সেই সময়ের বাঙ্গালি বিপ্লবীদের নিশ্চয়ই প্রভাবিত করেছিল। ... ভারতে বোমার আবির্ভাব বাঙ্গালির মানসিক ক্রমবিকাশের ফল।... যদি বাঙ্গালার ধর্ম ও সামাজিক পরিবেশে চরমপন্থার অভ্যুদয় না হইত, তবে হয়তো বাঙ্গালায় বোমারও আবির্ভাব হইত না।' অরবিন্দ ঘোষের গ্রেফতারের পর চরমপন্থী ধারা অনেকটা শ্লথ হয়ে পড়ে। আর স্বদেশী আন্দোলন ও বিদেশী পণ্য বর্জনে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সমর্থন কোনভাবেই মেলেনি।
সে যুগে আচার্য প্রফল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মতো বিজ্ঞানীরা গোপনে বোমা তৈরির রসায়ন শেখাতেন ছাত্রদের
 
এই সকল রাজনৈতিক প্রতিবাদের ফলশ্রুতিতে ১৯১১ সালে বঙ্গ আবার একত্রিত হয়। ভাষাতাত্ত্বিক এক নতুন বিভক্তির মাধ্যমে হিন্দি, ওড়িয়া এবং অসমি অঞ্চলগুলো বঙ্গ হতে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় আনা হয়। এরই সাথে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে নয়া দিল্লীতে স্থানান্তর করা হয়।