উইকিপিডিয়া:খেলাঘর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট: স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার করেছে
ট্যাগ: প্রতিস্থাপিত হাতদ্বারা প্রত্যাবর্তন
Tip-bd (আলোচনা | অবদান)
বটবৃক্ষ, সম্প্রসারণ, রচনাশৈলী, বিষয়শ্রেণী, বিষয়বস্তু যোগ, বানান সংশোধন, অনুবাদ
১ নং লাইন:
{{খেলাঘর}}<!-- অনুগ্রহপূর্বক এই লাইনটি অপসারণ করবেন না -->
[[চিত্র:বটবৃক্ষ.jpg|থাম্ব|বটবৃক্ষ]]
আদিতম গাছ হিসাবে বটবৃক্ষ বাঙালির জীবনে শত-সহস্র বছর ধরে সামাজিক, সংস্কৃতি, ধর্মীয় ও সাহিত্যের, অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখনো বোদ্ধা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, বাঙালি গর্বের সাথে বটবৃক্ষ নামটি ব্যবহার করে। বট গাছকে ঘিরে বাংলা অঞ্চলে রয়েছে নানান ঐতিহ্য, এখনো ছায়ানটের বাংলার পহেলা বৈশাখের নববর্ষ বরণ বটবৃক্ষের তলায় হয়। নানা উপকারিতা ও ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে বটগাছ ভারতের জাতীয় বৃক্ষ, এভাবেই বাংলার অনেক আদি বৃক্ষের প্যাটেন্ট রাইট হাতছাড়া হয়।
 
এক সময়কার শিশুদের মাঝে বটগাছ নিয়ে নানান অলিক ও ভৌতিক কল্প গল্প শিশুতোষ মনে সৃষ্টি হয় মনঃ ভয়! শিশুকালের বইতে, নাটক-সিনেমায় দেখা পন্ডিত স্যারের মতই, পোশাক-পরিচ্ছদ বেশভূষা হালচালের, একজন শিক্ষক বিদ্যালয় জীবনে কিছুদিনের জন্য আবির্ভাব হয়েছিল। অষ্টম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাসে গল্পের ছলে তিনি বলেছিলেন; 'পাঠ্য পুস্তকের জ্ঞান ঘরে বসে নেওয়া যায় কিন্তু আসল জ্ঞান সমাজ ও প্রকৃতি থেকে নিতে হয়। যার কারণে ঘর থেকে বাইরে বেরোতে হয়'
 
তিনি হিন্দু ধর্মীয় দৃষ্টিতে বটবৃক্ষের বিষয়ে বিস্তারিত করেছিলেন বয়ান। তারমধ্যে এশিয়ার উল্লেখযোগ্য ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের সুঁইতলা মল্লিকপুর ও জনপ্রিয় উপখ্যান ধণ্য গাজী কালু চম্পাবতীর মাজারের বটবৃক্ষের গল্পটি এখনও সমুজ্জ্বল। দেশ-বিদেশী পরিদর্শক প্রায় আসেন। তাই সেখানে নিয়মিত যাতায়াত, তবে শিশুকালের বিখ্যত বটবৃক্ষ দেখার চমক ভুলার নয়-
 
শিক্ষকের কোথায় উদ্বুদ্ধ দুরন্ত কৈশোরে সকলেই অবগত ছিল, সমাজ ও পরিবারিক শাসনের কঠিন বেড়াজাল ছিন্ন করে সহজ পথে বিখ্যাত বটগাছ দেখার সাধ মিটবে না। একদিন ঢিলেঢালা মর্নিং স্কুল, পন্ডিত স্যারের সম্মতি কিন্তু বাড়িকে ফাঁকি দিয়ে, এশিয়ার বৃহত্তম বট গাছ ও গাজী কালু চম্পাবতীর মাজার দেখার মোক্ষম সুযোগ। পরিকল্পনা দ্বিচক্রযানে যাত্রা। ২/১ জন সহপাঠীর বাইসাইকেল ছিল। অধিকাংশের বাপ-মামা-চাচাদের ব্রিটিশ আমলের রেলে বা হাম্বার নামের সাইকেল থাকলেও নানা ছলচাতুরিতে, মাঝে মধ্যে কিছু সময়ের জন্য সাইকেল ভাগ্যে মিললেও, গোটা দিনের জন্য পাওয়া দুরূহ, শেষ পর্যন্ত জোটে চারটি। সাইকেল মালিক চারজন ও টিম লিডার দুধ ভাত। অন্যদের মাঝে লটারির মাধ্যমে লাকি সেভেন নির্বাচিত। এক সাইকেলে তিনজন পালা করে সাতসকাল হতে চালিয়ে, সুইতলা মল্লিকপুর পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়ে যায়। মহিরুহ বটবৃক্ষের প্রকৃতির শীতল ছায়ায় মন জুড়িয়ে যায়। পাশের ছোট্ট একটি দোকান হতে ঝাল মুড়িতে মধ্যাহ্নের আহার। সরকারি চাপ কলের শীতল জল অমৃত-
 
অনেকেই ননীর পুতুল ক্লান্ত শরীর, আর কোথাও যেতে মন চায় না। স্থানীয়দের কাছে বটবৃক্ষের নানা পৌত্তলিক কিচ্ছা কাহিনী শিশুতোষ মনজগতে করে ভর। ভ্রমণকারীদের অধিকাংশই ক্যাডেট কোরের সদস্য ছিল। সঙ্গত কারণে ' ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু..' জয় করতে চায়, গাজী কালু চম্পাবতীর মাজারের রহস্যময় বটবৃক্ষ। একজন প্রবীণ মানুষের কাছে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করতেই তিনার 'চক্ষু চড়কগাছ' 'এখান থেকে তো অনেক পথ, এখনই রওনা হলে পৌছাতে রাত হবে'
 
সর্বনাশ! রাতের কথা মনে পরতেই, সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফেরার কঠিন আল্টিমেটাম, তৈরি হয় মনঃ ভয়। মুহূর্তে সবার খুশির মুখ বিষাদ। অনেকের জীবনের প্রথম অনুমতি ব্যতীত রাত করে বাড়ি ফেরা। এক মিথ্যা ঢাকতে, হাজারো মিথ্যা বলতে হয় বাস্তবে তার প্রমান-
 
লাঠি হাতে অগ্নিমূর্তি মায়ের সামনে, চোখে চোখ রেখে প্রথম মিথ্যা বলা; ‘মনি মিঞার জলপাই গাছের পরী আমাদের মল্লিকপুরের বট গাছের কাছে নিয়ে গিয়েছিল’ মায়ের চোখে মুখে বিস্ময়। বাবার মাতুল কুলের পৈতৃক নিবাস, ঐতিহাসিক বৃক্ষটির সন্নিকটে। সঙ্গত কারণে নিখুঁত বর্ণনা শুনে তিনি বলেছিলেন; 'সব মিলে যাচ্ছে, সত্যি বলছে ছেলে' ডাক্তার দাদার বইয়ের ভাণ্ডারে, জ্বীন-পরী তাড়ানোর কোন ওষুধ মিলল না। শেষ পর্যন্ত কবিরাজ, ফকির ও দরবেশদের নানা ধরনের কীর্তিকলাপ। প্রথম দিকে মনে মনে হাসি, পরবর্তীতে হাসি চেপে থাকা দায়। রহস্যময়ী হাসির কারণে সবাই নিশ্চিত, এইভাবে হাসছে ঘাড়ে ভর করা পরীদের শাহজাদী। একদিন সত্য সত্যই আগুনের গোল্লা ঘোরা দেখা শুরু হয়। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে, সেদিকে না যাই-
 
পরবর্তীতে অনেকবার বাঙালির জনপ্রিয় উপখ্যান ধন্য গাজী-কালু-চম্পাবতী মাজার ও বটবৃক্ষ দেখার সুযোগ হয়। গাছ পাগল গ্রুপের ক-খ’রা ঝিনেদার সব বিখ্যাত ‘গ’র সন্ধানে যাত্রা। অভিযাত্রায় মাজারের ভক্তদের কাছ থেকে জানা যায়; ‘মাজারে ছায়াদানকারী বটবৃক্ষের আদি অবস্থান ছিল মাজারের উত্তর দিকে। দুঃখজনক হলেও সত্য মধু আহরণকারীদের অসাবধানতায় গাছে আগুন লেগে যায়, ফলে মূল গাছটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ধীরে ধীরে মারা যায়। বর্তমানে যে গাছটি দক্ষিন দিকে রয়েছে সেটির উৎপত্তি মূল গাছের ঝুরি হতে’
 
 
স্পর্শকাতর বিষয় হলেও না বললেই নয়, বৃক্ষটির বংশবিস্তারের জন্য সৃষ্ট ঝুরিতে ভক্তদের মনবাসনা পূর্ণ করতে মাদুলীর চাপে পূর্বেরটির ন্যায় বৃক্ষটির অস্তিত্ব সংকটের সম্ভাবনা, অমূলক নয়। এমনিভাবে এশিয়ার প্রবীণ মহীরুহ মল্লিকপুরের বটবৃক্ষ অস্তিত্ব সংকটে! চাক্ষুষ দেখা; তখন একই ভাষাভাষী পশ্চিমবঙ্গর শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের বটগাছ টা সুরক্ষিত, পাতা স্পর্শ করার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে মল্লিকপুরের বিখ্যাত বট গাছে নাম লিখা, ডালে বসে দর্শনার্থীদের নাচানাচি ফটোসেশন। বটবৃক্ষের অভ্যন্তরে স্টাফ কোয়ার্টার ও শৌচাগার। জানা যায় মাঝে মাঝে ভিতরে জনসভা হয়-
 
 
গাছপাগল গ্রুপের ক-খ সদস্যরা প্রায়শ ‘গ’ বৃক্ষ কূলের হালচাল দেখার জন্য দলবেঁধে ভ্রমণে যায়। তেমন একটি অভিযানে; গাজী-কালু-চম্পাবতী মাজার দর্শনে দেখা মেলে, বহুদিনের পুরাতন একটি ষড়া গাছ! কথিত আছে, ঐ ষড়া গাছটি নাকি গাজী, কালু ও চম্পাবতীর হাতে লাগানো। মতান্তরে, অজ্ঞাত কারণে মূল গাছটি মারা যায়, এরপর ঐ গাছটির গোড়া থেকেই বর্তমান গাছটির পূনর্জন্ম। ষড়া গাছ যেন ‘ক-খ’দের পিছু ছাড়ে না। মুশলধারে ঝরা বৃষ্টির মধ্যেও ভর সন্ধ্যায় ষড়া গাছটিতে, ব্যতিক্রম শালিক পাখির মতই কিছু একটা রহস্য সৃষ্টি করে । এক ‘ক’ ফোঁড়ন কেটে ‘এ কি সত্যিই শালিক? নাকি তিঁনারা!’ আজমির শরিফ হতে আগত, শিকল বাধা নির্বাক সাধু বাবা মাথায় হাত দিয়ে কি যেন আশীর্বাদ করেন, তা শুধু তিনিই জানেন-
 
 
যেহেতু বটবৃক্ষ নিয়ে লিখতে বসা, বৃক্ষটি সম্পর্কে কিছুটা জানা যাক; একটি চিরহরিৎ সাইকাস বহুবর্ষজীবী গাছ। ইংরেজি নাম: Indian banyan, বৈজ্ঞানিক নাম : Ficus benghalensis, ফাইকাস বা ডুমুর জাতীয় গোত্রের ইউরোস্টিগ্মা উপগোত্রের সদস্য। এর আদি নিবাস বঙ্গভূমি। বট গাছ বৃহদাকার বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। অনেক জায়গা জুড়ে বটবৃক্ষ শাখা প্রশাখা বিস্তার করে, স্তম্ভমূলের উপর ভর দিয়ে টিকে থাকে। প্রথমে সরু সরু ঝুরি মাটির স্পর্শে স্তম্ভমূল হয়। মাটির সমান্তরালে বাড়তে থাকা ডাল পালার ঝুরি গুলো একসময় মাটিতে গেঁথে গিয়ে নিজেরাই কান্ডে পরিণত হয়-
 
বটের পাতা ডিম্বাকৃতি, মসৃণ ও উজ্জ্বল সবুজ। কচি পাতা তামাটে। বটের কুঁড়ি পাংশুটে হলুদ । এর দুটি স্বল্পায়ু উপপত্র গজানোর পরই ঝরে পড়ে। গাছের ঝুরি হতে বট গাছ ধীরে ধীরে চারপাশে বৃদ্ধি হয়ে, একসময় মহীরুহে পরিণত হয়। শরৎ ও বসন্তে বট গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীতে ফল ধরে। উষ্ণ আবহাওয়ায় বিশাল আয়তনের এই ছায়াবৃক্ষটি অনেক উপকারে আসে। অনেকেই বটবৃক্ষকে প্রকৃতির শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বলে থাকেন। দিনের গরমে, শীতল ছায়া। রাতে নাতিশীতোষ্ণ হাওয়া। প্রাচীনকাল থেকেই বটগাছের তলে হাট-বাজার বসে, মেলা হয়, লোকগানের আসর বসে, জনসভা হয়। কারণ, বাংলার গ্রামাঞ্চলে বড় বড় সুশীতল হল রুম নেই। আর তাই বড় বড় অনুষ্ঠান ও জনসভা গুলো ছায়াসুনিবিড় বটতলায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই গাছকে ভারতে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এই গাছের নিচে সাধারণত মন্দির হয়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ধর্মীয় কারণে বট গাছ কাটা নিষিদ্ধ।
 
বট ও বট জাতীয় গাছের বংশ বৃদ্ধির পদ্ধতি ও কৌশল প্রধানত অভিন্ন। মঞ্জরির গর্ভে ফুলগুলো লুকানো থাকে। ফুলগুলো খুব ছোট এবং ফলের মতোই গোল। একলিঙ্গ ফুলগুলো পরাগায়নের জন্য বিশেষ জাতের পতঙ্গের উপর নির্ভরশীল। পাখিরা ফল খেয়ে বীজ ছড়িয়ে দেয়। পাখিবাহিত বটের বীজ দালানের কার্নিশ, পুরানো ফাটল ও অন্য কোন গাছের কোটরে সহজেই অঙ্কুরিত হয় ও আশ্রয় কে গ্রাস করে। এ কারণে পরগাছা হিসেবেও বটের খ্যাতি আছে। উপযুক্ত পরিবেশে বট বৃক্ষ ৫-৬ শত বছর বেঁচে থাকতে পারে-
 
বট গাছের ফল কাক, শালিক ও বাদুড়ের প্রিয় খাদ্য এবং শকুন জাতীয় পাখিকূলের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বটের নানা রকম উপকারিতা; এর কষ থেকে নিম্নমানের রাবার তৈরি হয় এবং বাকলের আঁশ দড়ি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য। এর পাতা কুষ্ঠ রোগে উপকারী, বটের আঠা পা ফাটা সারায়। বটের ছাল দেহের মেদ কমায়। হাড় মচকে গেলে এর ছাল বাটা গরম মালিসে, আরাম পাওয়া যায়। এমন বৃহৎ আকার চিরহরিৎ বহু গুণে গুণান্বিত বাংলার আদি বটবৃক্ষকে, মহীরুহ হতে সহায়তা করি। পরিবেশ বাঁচায়। মানুষ ও পরিবেশ মিলেমিশে থাক, এই সুন্দর ধরণীতে…