সৌরজগতের জন্ম ও বিবর্তন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৯ নং লাইন:
মোটামুটি ৫০০ কোটি বছরের মধ্যে সূর্য শীতল হয়ে পড়বে এবং তার বর্তমান ব্যাসরেখা বহির্ভাগে বহুগুণ প্রসারিত হয়ে নক্ষত্রটি একটি [[লোহিত দানব|লোহিত দানবে]] পরিণত হবে। তারপর সূর্য তার বহিঃস্তরগুলি একটি [[গ্রহীয় নীহারিকা|গ্রহীয় নীহারিকার]] আকারে পরিত্যাগ করবে এবং পিছনে পড়ে থাকবে শুধু [[শ্বেত বামন]] নামে পরিচিত একটি নাক্ষত্রিক অবশেষ। সুদূর ভবিষ্যতে পরিক্রমণশীল নক্ষত্রগুলির মাধ্যাকর্ষণের ফলে সূর্যের সঙ্গে থাকা গ্রহগুলির সংখ্যা হ্রাস পাবে। কোনও কোনোও গ্রহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে; অন্যগুলি উৎক্ষিপ্ত হবে [[আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশ|আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে]]। শেষ পর্যন্ত [[সুদূর ভবিষ্যতের কালরেখা|কয়েকশো কোটি]] বছর পরে সম্ভবত সূর্য একাই পড়ে থাকবে; তার চারিদিকে প্রদক্ষিণরত মূল বস্তুগুলির একটিরও সম্ভবত কোনও অস্তিত্ব থাকবে না।<ref name=dyson />
 
== গবেষণার ইতিহাস ==
{{Main article|সৌরজগতের উদ্ভব ও বিবর্তন-সংক্রান্ত তত্ত্বগুলির ইতিহাস}}
[[চিত্রFile:Pierre-Simon Laplace.jpg|thumb|upright|right|[[পিয়ের সিমোঁ লাপ্লাস]], নীহারিকা অনুকল্পের অন্যতম প্রস্তাবকআদি প্রবক্তা]]
বিশ্বজগতের উদ্ভব এবং পরিণতি নিয়ে বহুকাল পূর্বের অনেক রচনাতেও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সেই আলোচনাগুলোকে সৌরজগতের একটি মডেলের সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা প্রাচীন কালে কখনোই করা হয়নি, কারণ বর্তমানে আমরা সৌরজগৎ বলতে যা বুঝি সেটির অস্তিত্বই তখন মানুষের জানা ছিল না। সৌরজগতের জন্ম ও বিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রে প্রথম বড় পদক্ষেপ ছিল [[সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ|সৌরকেন্দ্রিক মতবাদের]] প্রতিষ্ঠা যাতে বলা হয়েছিল, সূর্য মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত যাকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘোরে। গ্রিক দার্শনিক [[আরিস্তারকোস]] এ ধরনের একটি ধারণা আনুমানিক ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে উত্থাপন করলেও ধারণাটি গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করে মাত্র অষ্টাদশ শতকে। Solar System শব্দ দুটো প্রথম কোন রচনায় ব্যবহার করা হয়েছিল ১৭০৪ সালে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি | কর্ম=Merriam Webster Online Dictionary | শিরোনাম=Solar system | ইউআরএল = http://www.merriam-webster.com/dictionary/solar%20system | সংগ্রহের-তারিখ=2008-04-15 | বছর=2008 }}</ref>
বিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি-সংক্রান্ত ধ্যানধারণাগুলি প্রাচীনতম জ্ঞাত রচনাকর্মের যুগ থেকেই প্রচলিত ছিল। যদিও সেই যুগের প্রায় সমগ্র ইতিহাসেই এই ধরনের তত্ত্বগুলিকে একটি "সৌরজগৎ"-এর অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত করার কোনও প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। এর সহজ কারণটি হল, আজ আমরা সৌরজগৎ বলতে যা বুঝি তার অস্তিত্ব সম্পর্কে সাধারণভাবে কেউ চিন্তা করেননি। সৌরজগতের উদ্ভব ও বিবর্তনের কোনও তত্ত্বের প্রথম পদক্ষেপ ছিল [[সূর্যকেন্দ্রিকতাবাদ|সূর্যকেন্দ্রিকতাবাদের]] সাধারণ স্বীকৃতিটি। এই মতবাদেই বলা হয়েছে যে, [[সূর্য]] সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং [[পৃথিবী]] সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। সহস্রাব্দ পূর্বে উদ্ভূত এই মতবাদ ([[সামোসের অ্যারিস্টারকাস]] অন্ততপক্ষে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ অব্দ নাগাদ এই তত্ত্বটি উপস্থাপনা করেছিলেন) অবশ্য খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগের আগে বহুল স্বীকৃতি অর্জন করেনি। "সৌরজগৎ" (ইংরেজি: Solar System) শব্দটির প্রথম নথিবদ্ধ প্রয়োগের ঘটনাটি ঘটেছিল ১৭০৪ সালে।<ref>{{cite web | work=মেরিয়াম ওয়েবস্টার অনলাইন ডিকশনারি | title=সোলার সিস্টেম |অনূদিত-শিরোনাম=সৌরজগৎ | url = http://www.merriam-webster.com/dictionary/solar%20system | access-date=২০০৮-০৪-১৫ |year=২০০৮}}</ref>
 
সৌরজগতের উৎপত্তি-সংক্রান্ত প্রচলিত প্রামাণ্য তত্ত্বটি হল [[নীহারিকা অনুকল্প]]। অষ্টাদশ শতাব্দীতে [[ইমানুয়েল সুইডেনবার্গ]], [[ইমানুয়েল কান্ট]] ও [[পিয়ের সিমোঁ লাপ্লাস]] কর্তৃক সূত্রবদ্ধ হওয়ার পর প্রথমে স্বীকৃত হয় এবং পরে বিজ্ঞানীদের সমর্থন হারায়। এই [[অনুকল্প|অনুকল্পের]] সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনাটি ছিল গ্রহগুলির সঙ্গে তুলনায় সূর্যের [[কৌণিক ভরবেগ|কোণিক ভরবেগের]] আপেক্ষিক অভাবের বিষয়টি ব্যাখ্যায় সুস্পষ্ট অক্ষমতা।<ref>{{cite journal | author=মাইকেল মার্ক উলফসন | author-link=মাইকেল উলফসন | journal=ফিলোজফিক্যাল ট্রানজ্যাকশনস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি | volume=৩১৩ | title=রোটেশন ইন দ্য সোলার সিস্টেম |অনূদিত-শিরোনাম= সৌরজগতে আবর্তন | issue=১৫২৪ |year=১৯৮৪ | pages=৫–১৮ | bibcode=1984RSPTA.313....5W | doi=10.1098/rsta.1984.0078 | s2cid=120193937 }}</ref> যদিও ১৯৮০-এর দশকের গোড়া থেকে নবীন নক্ষত্র সম্পর্কে যে গবেষণা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে এগুলির চারিপাশে একাধিক ধুলো ও গ্যাসের শীতল চাকতি থাকে, ঠিক যেমনটি নীহারিকা অনুকল্পে পূর্বাভাষ করা হয়েছিল। এই কারণে এই মত পুনরায় স্বীকৃতি অর্জন করতে সক্ষম হয়।<ref>{{cite web | url = https://www.newscientist.com/channel/solar-system/comets-asteroids/mg13117837.100 | title=বার্থ অফ দ্য প্ল্যানেটস: দি আর্থ অ্যান্ড ইটস ফেলো প্ল্যানেটস মে বি সারভাইভরস ফ্রম আ টাইম হোয়েন প্ল্যানেটস রিকোচেটেড অ্যারাউন্ড দ্য সান লাইক বল বিয়ারিংস অন আ পিনবল টেবিল |অনূদিত-শিরোনাম= গ্রহসমূহের জন্ম: পৃথিবী ও তার সঙ্গী গ্রহগুলি সম্ভবত একটি পিনবল টেবিলে বল বিয়ারিংগুলির মতো সূর্যের চারিদিকে গ্রহগুলির উৎক্ষিপ্ত হওয়ার সময় থেকে টিকে রয়েছে | work=নিউ সায়েন্টিস্ট | author=নাইজেল হেনবেস্ট |year=১৯৯১ | access-date=২০০৮-০৪-১৮}}</ref>
সৌরজগতের উৎপত্তি বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব হচ্ছে [[নীহারিকা অনুকল্প]] যা ঊনবিংশ শতকে Emanuel Swedenborg, [[ইমানুয়েল কান্ট]] এবং [[পিয়ের সিমোঁ লাপ্লাস]] পরষ্পর স্বাধীনভাবে প্রস্তাব করেছিলেন। কখনো এটি বিপুল সমর্থন পেয়েছে, কখনো আবার হয়েছে তীব্র সমালোচিত। সবচেয়ে বড় সমালোচনা ছিল, গ্রহদের তুলনায় সূর্যের [[কৌণিক ভরবেগ]] এতো কম কেন তা অনুকল্পটি ব্যাখ্যা করতে পারে বলে মনে হতো না।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি | লেখক=M. M. Woolfson | সাময়িকী=Philosophical Transactions of the Royal Society of London | খণ্ড=313 | শিরোনাম=Rotation in the Solar System | সংখ্যা নং=1524 | বছর=1984 | পাতাসমূহ=5 | বিবকোড=1984RSPTA.313....5W | ডিওআই=10.1098/rsta.1984.0078 }}</ref> কিন্তু ১৯৮০-র দশকে এমন সব নবীন তারা পর্যবেক্ষণ করা গেছে যারা ঠিক নীহারিকা অনুকল্পের বর্ণনা মতোই ধূলো ও গ্যাসের একটি শীতল চাকতি দিয়ে ঘেরা। এতে অনুকল্পটির গ্রহণযোগ্যতা পুনরায় বৃদ্ধি পেয়েছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি | ইউআরএল = http://space.newscientist.com/channel/solar-system/comets-asteroids/mg13117837.100 | শিরোনাম=Birth of the planets: The Earth and its fellow planets may be survivors from a time when planets ricocheted around the Sun like ball bearings on a pinball table | প্রকাশক=New Scientist | লেখক=Nigel Henbest | বছর=1991 | সংগ্রহের-তারিখ=2008-04-18 }}</ref>
 
সূর্যের বিবর্তন কীভাবে অব্যাহত থাকতে পারে তা বুঝতে হলে সূর্যের শক্তির উৎসটিকে বোঝা প্রয়োজন। [[আর্থার স্ট্যানলি এডিংটন]] [[অ্যালবার্ট আইনস্টাইন|অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের]] [[আপেক্ষিকতার তত্ত্ব]] দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতেন। তা থেকেই তিনি উপলব্ধি করেন যে, সূর্যের শক্তির উৎস হল এর অন্তঃস্থলে সংঘটিত [[কেন্দ্রীণ সংযোজন]], যার ফলে হাইড্রোজেন বিগলিত হয়ে হিলিয়ামে পরিণত হয়।<ref>{{cite book | title=দ্য সান: আ বায়োগ্রাফি |অনূদিত-শিরোনাম= সূর্য: একটি জীবনী | author= ডেভিড হোয়াইটহাউস | date=২০০৫ | publisher=জন উইলি অ্যান্ড সনস | isbn=978-0-470-09297-2 }}</ref> ১৯৩৫ সালে এডিংটন আরও অগ্রসর হয়ে এই মত প্রকাশ করেন যে, নক্ষত্রগুলির মধ্যে অন্যান্য মৌলও সম্ভবত গঠিত হয়ে থাকে।<ref name=Hoyle2005>{{cite book | title=ফ্রেড হয়েল: আ লাইফ ইন সায়েন্স |অনূদিত-শিরোনাম=ফ্রেড হয়েল: বিজ্ঞানে নিবেদিত একটি জীবন | author=সাইমন মিটন | publisher=অরাম |date=২০০৫ |chapter=অরিজিন অফ দ্য কেমিক্যাল এলিমেন্টস [রাসায়নিক মৌলগুলির উৎস] |pages=১৯৭–২২২ | isbn=978-1-85410-961-3 }}</ref> [[ফ্রেড হয়েল]] এই ধারণাটিকে [[বি২এফএইচ পত্র|বিস্তারিত ব্যাখ্যা]] করেন। তিনি বলেন যে, [[লোহিত দানব]] নামে পরিচিত বিবর্তিত নক্ষত্রগুলি [[নাক্ষত্রিক আণবসংশ্লেষ|এমন অনেক মৌল সৃষ্টি করে]] যেগুলি সেই সব নক্ষত্রের অন্তঃস্থলের হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের চেয়েও ভারী। একটি লোহিত দানব শেষ পর্যন্ত যখন সেটির বহিঃস্থ স্তরগুলিকে পরিত্যাগ করে, তখন এই মৌলগুলি অন্যান্য নক্ষত্র জগৎ সৃষ্টির কাজে পুনঃব্যবহৃত হয়।<ref name=Hoyle2005/>
সূর্য ভবিষ্যতে কিভাবে বিবর্তিত হবে তা জানতে হলে তার শক্তির উৎস সম্পর্কে জানা প্রয়োজন ছিল। [[আর্থার স্ট্যানলি এডিংটন]] প্রথম ধারণা করতে পেরেছিলেন যে সূর্যের শক্তি [[কেন্দ্রীণ সংযোজন]] বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন হতে পারে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | শিরোনাম=The Sun: A Biography | ইউআরএল=https://archive.org/details/sunbiography0000whit | লেখক=David Whitehouse | বছর=2005 | প্রকাশক=John Wiley and Sons | আইএসবিএন=978-0-470-09297-2 }}</ref> ১৯৩৫ সালে তিনি আরও বলেন, অন্যান্য মৌলিক পদার্থগুলোও তারার অভ্যন্তরে উৎপন্ন হতে পারে।<ref name=Hoyle2005>{{বই উদ্ধৃতি | শিরোনাম=Fred Hoyle: A Life in Science | লেখক=Simon Mitton | প্রকাশক=Aurum|বছর=2005|অধ্যায়=Origin of the Chemical Elements|পাতাসমূহ=197–222 | আইএসবিএন=978-1-85410-961-3 }}</ref> [[ফ্রেড হয়েল]] এই গবেষণাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে বলেন, [[লোহিত দানব]] তারার অভ্যন্তরে [[হাইড্রোজেন]] এবং [[হিলিয়াম|হিলিয়ামের]] চেয়ে ভারী মৌল উৎপন্ন হয়। লোহিত দানব যখন তার বহিরাংশ ছুঁড়ে ফেলে তখন অভ্যন্তরের ভারী মৌলগুলো আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্যান্য তারা জগৎ গঠনে ভূমিকা রাখে।<ref name=Hoyle2005/>
 
== তথ্যসূত্র ও পাদটীকা ==