মাহমুদুল হক: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
রিয়াদ (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Bellayet (আলোচনা | অবদান)
রিয়াদ (আলাপ)-এর সম্পাদিত 505123 সংশোধনটি বাতিল করো
১ নং লাইন:
{{orphan|date=ডিসেম্বর ২০০৮}}
বাংলাদেশের সমকালীন বিমূর্ত শিল্পকলার অন্যতম প্রধান প্রতিনিধি শিল্পী [[মাহমুদুল হক]] ষাট দশকের শেষার্ধে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি তাঁর চিত্রকলায় যেমন সমকালীন বৈশিষ্ট্যকে সার্থকভাবে ধারণ করেছেন যুগপৎ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর একটি শিল্প ভুবন নির্মাণেও সমর্থ হয়েছেন।
 
'''মাহমুদুল হক''' (বন্ধুমহল ও কনিষ্ঠ অনেকের কাছে তিনি '''বটু ভাই''' হিসেবে পরিচিত) ([[১৯৪০]] - [[জুলাই ২১]], [[২০০৮]]) বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশী]] কথাশিল্পী।
মাহমুদুল হক পেইন্টিং এবং ছাপচিত্র উভয় মাধ্যমে বিভুমূর্ত তকে সার্থকভাবে ব্যবহার করেছেন। তিনি তাঁর অধিকাংশ তেল রঙের ছবিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করেছেন নিপুণভাবে। এক্ষেত্রে জল রঙ, রেখা এবং কিছু কিছু ফর্ম তুলে এনেছেন বাংলার নিসর্গ থেকে। নিসর্গকে ব্যবহার করেছেন রƒপকল্প তৈরীতে। যেসব কাজ থেকে মনে হয় মাহমুদুল হক নিসর্গাশ্রয়ী শিল্পী। কেউ কেউ মনে করেন তাঁর পেইন্টিংয়ে উপর থেকে প্রত্যক্ষ ক্ষেত খামার, সামনাসামনি দৃশ্যমান গ্রাম, বৃক্ষের পরিপূর্ণ আকার-আকৃতি আধা-বিমূর্ত ফর্মে উপস্থাপিত। অনেকে এসব চিত্রকর্মে ফর্ম কিংবা রঙ দুটোকেই সহজ ও সংক্ষেপ করার প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন। এইসব চিত্রকর্মে তিনি মূলত ব্যবহার করেন হালকা নীল, হালকা বেগুনী হলুদ ও সাদায় মেশানো আভা, থাকে মেরম্নন-নীল-সবুজের কারম্নকাজ। চমৎকার এক ধরনের রোমান্টিক আবহে রঙের এইসব কারম্নকাজে, সমন্বয়ে তাঁর নিসর্গাশ্রয়ী চিত্রকর্মগুলো দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে।
 
মাহমুদুল হক ১৯৪০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে জন্ম গ্রহণ। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের সময় পর তার পরিবার [[পুরনো ঢাকা|পুরনো ঢাকার]] গেন্ডারিয়ায় বসবাস শুরু করেন। তার পিতা সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ছয় ভাই চার বোনের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন। তিনি পঞ্চাশের দশকে স্কুলে থাকাকালীনই লেখালেখি শুরু করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান [[জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]]) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।
মাহমুদুল হকের বড় পরিচয় তিনি একজন সার্থক ছাপচিত্রকর। এখানে উল্লেখ্য, [[১৯৮২]] থেকে ’৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি [[জাপানে]] ছাপচিত্রে উচ্চশিক্ষা নেন এবং [[সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে এমএফএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি জাপানের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেন এবং [[যুক্তরাষ্ট্রের]] প্রখ্যাত ছাপ চিত্রকর মাইকেল পন্স-দ্য-লিঁয় এবং জাপানের শিরাকিতাশিইউকির কাছে ছাপচিত্রের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিশ্চয়ই তাঁর ছাপচিত্রে দক্ষতা অর্জন ও সাফল্য লাভের পেছনে কাজ করেছে। ছাপাই কাজের বেশকিছু শক্ত ও দুর্লভ পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তিনি উল্লেখযোগ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছেন। এই মাধ্যমে তিনি সাদা-কালো রং নিয়ে কাজ করেছেন। এ ধরনের অনেক কাজ তিনি করেছেন জাপানে ছাপচিত্রের ওপর ডিগ্রী নেয়ার সময়। পরেও তিনি এ ধরনের কাজ করেছেন। কারো কারো বিশ্বাস, তাঁর চিত্রকর্মে পরিস্ফূটিত সূক্ষ্ম বুনন, বিন্যাস এবং একই রকম সুক্ষ্ম রেখার ব্যবহার জাপানের অভিজ্ঞতাপ্রসূত। তাঁর ছাপচিত্রে বিন্যস্ত রঙের অতল খুঁড়ে উপস্থাপিত অবয়ব ও অর্ধ বা প্রায় অবয়বগুলো বিশেষ দক্ষতার পরিচয়বাহী।
 
তিনি শিশুদের কাগজ ''আলাপনী'', ''শাহীন সেতারা'' প্রভৃতি পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। তার কিছু সাড়া জাগানো উপন্যাসের মধ্যে ''খেলাঘর, জীবন আমার বোন, নিরাপদ তন্দ্রা, কালো বরফ, অনুর পাঠশালা, মাটির জাহাজ, অশরীরী প্রভৃতি উল্লেখ্যযোগ্য। কিন্তু তিনি [[১৯৮২]] সালের পর আর লেখেননি।
এটি তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য দিক যে তাঁর কিছু চিত্রকর্মে জ্যামিতিক রেখার মধ্যে ফিগার আসে কিন্' রঙের ঔজ্জ্বল্য নেই। এই অন-উজ্জ্বল দশার মধ্যে রেখা ও ফিগার এক আশ্চর্য সমন্বয় ও সুষমা তৈরি করে। উদাহরণস্বরƒপ তাঁর ‘জানালা’ শীর্ষক ছাপচিত্রটির কথা উল্লেখ করা যায় (হশেম খান রচিত ‘চারম্নকলা পাঠ’ গ্রন্থে প্রকাশিত)। ছাপচিত্রটিতে সাদা-কালোর জানালা ঘিরে সাদা-কালোয় প্রকৃতিÐ আবার পুরো ছবি জুড়ে যেন বা ফিকে হলুদের আলো। মাহমুদুল হক অধিকাংশ বিমূর্ত রীতির ছবিতে পাথরের ফর্মকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করেছেন তাঁর ছাপাই কাজের কম্পোজিশন। এটিও তাঁর একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক। পশ্চাদভাগে সম্পূর্ণ কালো দেখিয়ে সাদা বা কালোরই হালকা কোনো ছায়ার মাধ্যমে ছবির কম্পোজিশন হয়েছে। পাথরের সঙ্গে পাথর কিংবা এর পাশে, তার নিচেও পাথর। এভাবেই শিল্পীর ব্যালান্স তৈরির প্রয়াস। এসব ছবিতে তিনি যেমন সাফল্য দেখিয়েছেন তেমনি তা দৃষ্টিনিন্দনও হয়ে উঠেছে।
 
২১শে জুলাই, ২০০৮ রোববার গভীর রাতে রাজধানীর লালবাগের তার শ্বশুরের বাসায় মারা যান নিভৃতচারী এ কৃতী লেখক।
মাহমুদুল হক কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন ভাস্কর্যধর্মী ফর্মকে ব্যবহার করে। প্রায় তিনশ’ বছরের প্রাচীন এই মাধ্যমটিতে যে এখনো কাজ হচ্ছে এবং আধুনিক ফর্মের চমৎকার শিল্প সৃষ্টি সম্ভব তার উজ্জ্বল উদাহরণ অধ্যাপক হকের এইসব ছবি। টোনালিটির এক বিস্ময়কর পরিবেশ রচনা করে মাধ্যমটির সদ্ব্যবহার করতে চেয়েছেন তিনি।
 
মাহমুদুল হক তাঁর অনেক ছাপচিত্রে শুধু সাদা-কালোয় বিস্ময়কর আবেদন তৈরি করেছেন। মাধ্যমটি অত্যন্ত টেকনিক্যাল হওয়ায় এর সঙ্গে বাস্তব পরিচয় নেই এমন কারো পক্ষে এই মাধ্যমে তাঁর সাফল্য নির্ণয় প্রায় অসম্ভব। তবে তাঁর সাদা-কালোর ছাপাই চিত্রের আবেদন যে প্রচণ্ড তার প্রমাণ এ নিয়ে অনেক শিল্প সমালোচকই প্রশংসা করেছেন এবং তা বহু আগে থেকেই (যেমন নজরম্নল ইসলাম, দৈনিক সংবাদ, ২২ আষাড় ১৩৯৫)। উদাহরণ স্বরƒপ তাঁর একটি ছোট মাপের ছাপচিত্র ‘ঝড়’ (৫৬ নাম্বার চিত্র) এর কথা উল্লেখ করা যায়। এর ৫৩ নাম্বার প্রিন্টটিও অত্যন্ত চমৎকার। মাহমুদুল হকের অাঁকা তিনটি উল্লেখযোগ্য বিমূর্ত ছবি Horizon, imege of a wall ও blue and black। দেয়ালকে উপজীব্য বা পটভূমি করে অনেকে ছবি এঁকেছেন কিন্' মাহমুদুল হকের অাঁকা [[Imege of a wall]] স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। তিনি দেয়ালকে এখানে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। এখানে হাজার বছরের ইতিহাস উজ্জ্বল ও সতেজ বর্ণের মধ্য দিয়ে কালোর হালকা টানে চিত্রিত। তাতে সংঘর্ষ, স্থিতাবস্থা, জীবন-বাঁকের পদচিহ্ণ মেলে। Horizon -এ মনে হয় শিল্পী প্রথাগত ভারসাম্য অাঁকার পক্ষপাতি নন। এর কোথাও কোথাও সুস্থিরতার ছাপ দেখা গেলেও গতির বিষয়টি মনে বিশেষ ছাপ ফেলে। Blue and Black -এ দেখা যায় সবুজ, সাদাসহ অনেক রঙের মিশেলে বর্ণের সমৃদ্ধি ও সমন্বয়। এভাবে মাহমুদুল হক রঙের যে নিপুণ লীলা দেখান তা অনন্য এবং বিশেষভাবে বিশ্লেষণের দাবিদার। আমরা তাঁর সবুজ বর্ণ পাই নিসর্গের অপার সৌন্দর্য, অসীম নীলে পাই আকাশ। যে আকাশ আসলে জীবনেরই অনিবার্য অংশ। তেমনি সাদায় সমুদ্রের ঢেউয়ের ফেনা বা পর্বত শিখরের বরফও জীবনের সৌন্দর্য পিপাসার গন্তব্য। এভাবে মূর্ততা থেকে দূরে বলে মাহমুদুল হক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন নন। বস্'ত তা জীবনেরই জয়গানে মুখর। এসব ছবির মধ্যে অনেক ছবিই তাঁর বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারার। ‘বৃষ্টি-২’ যার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এর নিবিড়, নিমগ্ন গতি মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। অনেকে মাহমুদুল হককে প্রধানত বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারার একজন শিল্পী হিসেবে চিহ্ণিত করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধোত্তর পাশ্চাত্য শিল্পকলার প্রধান ধারা হয়ে ওঠে বিমূর্ত প্রকাশবাদী। তার বিশেষ প্রভাব পরে এশীয় চিত্রকলায়। বাংলাদেশের অনেক প্রতিভাবান শিল্পী এই প্রভাব-বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারায় অজস্র সার্থক শিল্প সৃষ্টি করেন। তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল বাসেত, দেবদাস চক্রবর্তী, সৈয়দ জাহাঙ্গীর প্রমুখ অগ্রগণ্য ও বিশেষ উল্লেখের দাবিদার। পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে যাঁরা বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারায় দক্ষতা ও সাফল্য দেখান তাঁদের অন্যতম প্রধান প্রতিনিধি মাহমুদুল হক। অগ্রজ শিল্পীদের অভিজ্ঞতা তাঁর চিন্ত-চেতনার জগৎকে নিশ্চয়ই সমৃদ্ধ করেছে পাশাপাশি তিনি তাঁর পেন্টিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পাঠ নিয়েছেন বিশ্বখ্যাত শিল্পী ফ্রাঞ্জ ক্লাইন, মার্ক রথকো, আর্শিল গোর্কী, ফিলিপ গাস্টন, ক্ল্যাফোর্ড স্টিল, পল-ক্লির রীতি থেকে। তবে তিনি সুকৌশলে সে সব শিল্পীর প্রভাব মুক্ত একটি স্বতন্ত্র শিল্পভুবন নির্মাণ করেন। মাহমুদুল হকের বিমুর্ত প্রকাশবাদী রীতির। যেসব ছবি শিল্প সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয় তার মধ্যে ‘বৃষ্টি-২’, ‘গোধূলি’, ‘অনেক বৃষ্টির পরে’ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের ঝড়ো হাওয়ায় আন্দোলিত দিগন্ত আর বৃষ্টিস্নাত নিসর্গ থেকে যেন তিনি চিত্রকল্প ধার করে ব্যবহার করেন সুকৌশলে।; অর্ধবিমূর্ত যুগপৎ ইংগিতময় অবয়ব এ ক্ষেত্রে তিনি অর্থময় করেন অভিজ্ঞতার পুঁজি দিয়ে। তাঁর ‘গোধূলি’ একটি বড় আয়তনের পেইন্টিং। ছবিটিতে তিনি চমৎকার এক নৈসর্গিক আবহ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছেন। এখানে নিসর্গ থেকেই শিল্পী তুলে এনেছেন রঙ, রেখা আর ফর্ম। গোধূলির ধুলিধূসর পরিবেশ এখানে মূর্ত। কম্পোজিশনের ভারসাম্য সৃষ্টির জন্য ছবিটিতে আছে উল্লম্ব ও আনুভূমিক রঙের লম্বাটে বা আয়তাকার জমিন। সব মিলিয়ে শিল্পীর এক সার্থক সৃষ্টি এটি। তাঁর একই ঘরানার ‘অনেক বৃষ্টির পরে’ ছবিটি আরো বেশি বিমূর্ত। এর টেক্সচারও সুনির্মিত। তার ঘন মিশ্র সবুজ রং আর স্যঁাতস্যঁাতে পরিবেশ প্রাণ ছঁুয়ে যায়। ছবিটির শিরোনাম থেকেই বোঝা যায় এটি আরো বেশি আবেগ দিয়ে, দরদ দিয়ে অাঁকা। উল্লেখিত এসব বৈশিষ্ট্যের বিকাশের মধ্যে দিয়ে মাহমুদুল হক হয়ে উঠেন একজন সম্পন্ন বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদী বা এ্যাবস্টর্্যাক্ট এক্সপ্রেশনিস্ট শিল্পী।
 
মাহমুদুল হকের চিত্রকলা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তাঁর যেসব শিল্পকর্মের কথা বিশেষভাবে আসে সেগুলো হচ্ছেঃ একাকিত্ব (তেল রং, ৫৬ ৭১ সেমি, ২০০১); লাল ও কালো (এ্যাক্রিলিক ৫৬ ৭১), জানালা-১ (তেল রং, ৭৫ ১৫০), জানালা-২ (তেল রং ৭৫ ১৫০), তিন মহিলা (তেল রং-৬১ ৭৩), সাদা ও নীলের মাঝে (তেল রং, ৭৩ ৬১), বিমূর্ত চিন্তা (তেল রং ৯০ ৯০), কালো ও খয়েরী (তেল রং, ৭৫ ১৫০) বিস্তৃতি (এ্যাক্রিরিক, ৪৫ ৬১), সবুজ ও কালো (এ্যাক্রিরিক, ৪৫ ৬২), ফটক (তেল রং ৭৩ ৯২), নীল দিগন্ত (তেল রং ৮২ ৮২) স্মৃতি (তেল রং, ৭২ ৯২), স্বপ্ন (তেল রং ৬১ ৭৩), হলুদ পাহাড় (এ্যাক্রিলিক, ৪৮ ৬৩), লাল, নীল ও কালো (তেল রং ৪৫ ৩৭)। তাঁর এইসব চিত্রকর্ম থেকে বোজা যায় তিনি কেমন মুনসিয়ানার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন, রয়েছে রঙের উচ্চকিত উদ্ভাস। রং নিয়ে তাঁর এই দক্ষ অথচ স্বতস্ফূর্ততা খেলায় চমৎকার সব আকৃতি ও অবয়ব বের হয়ে আসে। রঙের এই কারম্নকাজে ক্যানভাসের উপর নির্মিত হয় মনোগ্রাহী গভীর দৃশ্যের অলংকরণ। নানা রঙ-এর আশ্চর্য খেলায় আলো ও অাঁধারের পরিমিত ব্যবহার এখানে এক অদ্ভূত লিরিক্যালু দ্যোতনা সৃষ্টি করে। তাঁর এই রং ও আলো-অাঁধারি লীলায় কোথাও সৃষ্টি হয়েছে স্ফটিক স্বচ্ছতা, সূক্ষ্ম অথচ কমনীয় মাধুর্য, কোথাও তা বিপরীতে পুরম্ন, বলিষ্ঠ দাগের প্রত্যয়, মনোগ্রাহী গভীর দৃশ্যের অলংকরণ। তিনি বলিষ্ঠতা, শক্তিমত্তা এবং প্রত্যয়ের সঙ্গে নীল ও সবুজ-এর কারম্নকাজ করেছেন। লাল, গৈরিক, হলুদের বিচিত্র আদলও দক্ষতার সঙ্গে উঠে এসেছে তাঁর তুলিতে। মাহমুদুল হক বিশ্বাস করেন, একজন শিল্পীর কাছে বস্'গত বাস্তবতা এবং বাস্তবতার ধারণা বা অনুভব সমানভাবেই বাস্তব। যেখানে বস্'গত বাস্তবতা ব্যর্থ, সেই সত্যের স্তর ছোঁয়া সম্ভব বাস্তবতার অনুভব দিয়ে।
 
এখন এমন একটি প্রশ্ন রাখা যেতে পারে, মাহমুদুল হকের শৈল্পিক সাফল্য কোথায়, ছাপচিত্রের বিমূর্ত আঙ্গিকে? নাকি তেল রঙের বিমূর্ত প্রকাশবাদিতায়? কারো কারো মতে দ্বিতীয়টিতেই। কারণ তাঁর পুরস্কার, স্বীকৃতি মূলত তেল রঙের বিমূর্ত প্রকাশবাদিতায়। এটা ঠিক পুরস্কার, স্বীকৃতির কারণে তাঁর তৈল রঙের বিষয়টি পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছে কিন্' ছাপচিত্রেও তিনি অনন্য সাফল্যের দাবিদার।
 
বাংলাদেশের সমকালীন চিত্রশিল্পের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক মাহমুদুল হকের জন্ম ১৯৪৫ সালে খুলনায়। ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলাদেশ চারম্নকলা কলেজ (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারম্নকলা ইনস্টিটিউট) থেকে স্নাতক হন। এরপর এই ইন্সটিটিউটে শিক্ষকতা করেন দীর্ঘ সময় এবং পর্যায়ক্রমে ইন্সটিটিউটের পরিচালক পদে নিয়োজিত হন। ১৯৮২ থেকে ’৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি জাপানে ছাপচিত্রে উচ্চশিক্ষা নেন এবং সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএফএ ডিগ্রী লাভ করেন। শিল্পী মাহমুদুল হক দেশে-বিদেশে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন এবং ৩০টিরও বেশি একক প্রদর্শনী করেছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক বিরল পুরস্কারে তিনি ভূষিত। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনীতে একাধারে তিনবার (৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, যথাক্রমে ১৯৯৩, ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ সালে) অর্জন করেছেন সম্মান পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ চিত্রকলা পুরস্কার, সুচিউরা সিটি, জাপান-১৯৮২, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার-১৯৯২, ১০ম জাতীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী, বাংলাদেশ-১৯৯২, পারচেজ পুরস্কার, ললিতকলা একাডেমী, ভারত-১৯৯৪, দ্বিতীয় পুরস্কার, ১২তম কুয়েত আন্তর্জাতিক বিয়েন্নাল-১৯৯৬ প্রভৃতি দেশী ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারও তিনি লাভ করেন। সম্মানঃ অতিথি অধ্যাপক, সুকুবা বিশ্ববিদ্যায়, জাপান ১৯৯৪-৯৫; নেবরাসকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএসএ ১৯৯৮; সিটি পেইন্টার অব ওয়ালট্রপ সিটি, জার্মানী-২০০০। জাতীয় আর্ট গ্যালারী, বাংলাদেশ শিল্পকল্প একাডেমী, ঢাকা, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউট, ওয়াসিংটন, ডিসি, এবং দেশ-বিদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে তাঁর সংগ্রহ স্থান পেয়েছে। শিল্প-সংস্কতির বহুমুখী ধারায় যোগসূত্র নির্মাণে, দেশী-বিদেশী শিল্পীদের মধ্যে যোগাযোগ ও রিনিময় প্রসারে তিনি বিশেষভাবে সক্রিয় আছেন। ইতোপূর্বে মাহমুদুল হক দুই দশক জাপান এবং পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
 
[[বিষয়শ্রেণী:১৯৪০-এ জন্ম]]