ডাভিড হিলবের্ট: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১০ নং লাইন:
| জাতীয়তা = [[জার্মানি|জার্মান]]
| পুরস্কার =
}}{{কাজ চলছে/২০২১}}'''ডাভিড হিলবের্ট'''<ref group="টীকা">এই জার্মান ব্যক্তি বা স্থাননামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে [[উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় জার্মান শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ]] শীর্ষক রচনাশৈলী নিদের্শিকাতে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।</ref> ({{lang-de|David Hilbert}} ''ডাভ়িট্‌ হিল্‌বেয়াট্‌'', [[জানুয়ারি ২৩]], ১৮৬২ - [[ফেব্রুয়ারি ১৪]], ১৯৪৩) একজন জার্মান গণিতবিদ এবং ১৯শে১৯শ ও ২০শ শতকের প্রথমভাগের সবথেকে প্রভাবশালী গণিতবিদদের অন্যতম। হিলবের্ট গণিতের অনেক শাখায় প্রচুর পরিমাণে মৌলিক ধারণার অবতারণা করেছেন এবং সেগুলোর উন্নতি করেছেন, যেমন ইনভ্যারিয়্যান্ট থিওরি, ক্যালকুলাস অফ ভ্যারিয়েশন, কম্যুটেটিভ অ্যালজেব্রা, অ্যালজেব্রিক নাম্বার থিওরি, জ্যামিতির ভিত্তি, স্পেক্ট্রাল থিওরি অফ অপারেটরস এবং ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসে এর প্রয়োগ, গাণিতিক পদার্থবিদ্যা এবং গণিতের ভিত্তিস্থাপন (বিশেষত [[প্রমাণ তত্ত্ব]])।
 
হিলবের্ট জর্জ ক্যান্টরের সেট থিওরি এবং ট্রান্সফাইনাইট নাম্বারসের তত্ত্বকে গ্রহণ করেছিলেন এবং তার স্বপক্ষে মতদান করেছিলেন। ১৯০০ সালে, তিনি সমস্যার সংকলন প্রস্তুত করেন যা ২০শ শতকের গাণিতিক গবেষণায় প্রভূত সাহায্য করেছিল।
 
হিলবের্ট এবং তাঁর ছাত্ররা আধুনিক গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতিসাধন করে এবং রিগর প্রতিষ্ঠা করে খুব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। হিলবের্ট [[প্রমাণ তত্ত্ব]] এবং [[গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান|গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞানের]] অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত।
 
== জীবন ==
 
=== প্রথম জীবন এবং শিক্ষা ===
অটো ও মারিয়া থেরেসা (এর্ডট্‌ম্যান) হিলবের্টের দুই সন্তানের প্রথম এবং একমাত্র পুত্র সন্তান হিসেবে হিলবের্ট জন্মগ্রহণ করেন; তাঁর জন্মস্থান প্রুশিয়া সাম্রাজ্যের, প্রুশিয়া প্রদেশের কনিস্‌বার্গে হতে পারে (হিলবের্টের নিজের বক্তব্য অনুসারে) অথবা কনিসবার্গের কাছে ওয়েলোতেও (১৯৪৬ সাল থেকে যা নামেনস্ক হিসেবে পরিচিত) হতে পারে যেখানে তাঁর বাবা তাঁর জন্মের সময়ে কাজ করতেন।
 
১৮৭২ সালের শেষের দিকে, হিলবের্ট ফ্রিডরিখকলেগ জিমনাসিয়ামে (কলেজিয়াম ফ্রিডেরিসিয়ানাম, ১৪০ বছর আগে ইমানুয়েল কান্ট একই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন) ভর্তি হন; কিন্তু একটা খারাপ অবস্থার পর, তিনি ঐ স্কুল ছেড়ে অধিকতর বিজ্ঞানমুখী উইলহেম জিমনাসিয়ামে ভর্তি হন (১৮৭৯র শেষে) এবং সেখান থেকেই স্নাতকবৃত্তি লাভ করেন (১৮৮০র শুরুতে)। স্নাতকপাঠ শেষ করে ১৮৮০ সালের শরৎ মাসে তিনি কনিংসবার্গ, “আলবার্টিনা”য় ভর্তি হন। ১৮৮২ সালের শুরুতে হেরমান মিংকফ্‌স্কি (হিলবের্টের থেকে দুবছরের ছোট এবং কনিংসবার্গের বাসিন্দা, কিন্তু দেড় বছরের জন্য বার্লিনে গেছিলেন) কনিংসবার্গে ফিরে আসেন এবং উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। হিলবের্ট লাজুক, প্রতিভাধর মিংকফ্‌স্কির সাথে আজীবন বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন।
 
=== কর্মজীবন ===
১৮৮৪ সালে, অ্যাডলফ হুরউইট্‌জ গটিনজেন থেকে একজন এক্সট্রাঅর্ডিনারিয়াস (অর্থাৎ একজন সহ-অধ্যাপক) হিসেবে আসেন। এই তিন ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটি নিবিড় এবং ফলদায়ী বৈজ্ঞানিক ধারণার বিনিময় শুরু হয় এবং মিংকফ্‌স্কি ও হিলবের্ট তাঁদের বৈজ্ঞানিক কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় পরস্পরের ওপর বিপরীত প্রভাব ফেলার চেষ্টা করতেন। হিলবের্ট ১৮৮৫ সালে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন; তিনি ফার্দিনান্দ ভন লিন্ডেম্যানের অধীনে গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছিলেন যার নাম ছিল উবের ইনভারিয়ান্তে আইজেন্সচ্যাফেন স্পেজিলার বাইনারার ফরমেন, ইন্সবেসোন্ডেরে ডার কুগেলফাঙ্কশনেন (“অন দি ইনভ্যারিয়ান্ট প্রপার্টিস অফ স্পেশাল বাইনারি ফর্মস, ইন পার্টিকুলার দি স্ফেরিকাল হার্মোনিক ফাংশানস্”)।
 
হিলবের্ট কনিংসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত প্রাইভাড্‌টোজেন্ট (বরিষ্ঠ লেকচারার) হিসেবে ছিলেন। ১৮৯৫ সালে ফেলিক্স ক্লেইন তাঁর জায়গায় আসার ফলে, তিনি গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপকের পদ লাভ করেন। ক্লেইন এবং হিলবের্টের সময়, গটিনজেন গণিতের দুনিয়ায় একটি প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তিনি সেখানে আজীবন কাজ করে যান।
 
=== গটিনজেন স্কুল ===
হিলবের্টের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছিলেন হেরমান ওয়েইল, দাবাড়ু ইমানুয়েল লাস্কার, আর্ন্সট জারমেলো, এবং কার্ল গুস্তাভ হেম্পেল, জন ভন নিউম্যান ছিলেন তাঁর সহকারী। গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, হিলবের্ট এমি নোয়েদার এবং আলোঞ্জো চার্চের মতো বিংশ শতকের সবচেয়ে বিখ্যাত গণিতবিদদের সাথে একটি সামাজিক বৃত্তে বেষ্টিত ছিলেন।
 
তাঁর ৬৯ জন পিএইচডি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যাঁরা পরবর্তীকালে বিখ্যাত গণিতবিদ হয়েছিলেন; যেমন (গবেষণাপত্রের সালের উল্লেখ রয়েছে) : অটো ব্লুমেন্থাল (১৮৯৮), ফেলিক্স বার্নস্টিন (১৯০১), হেরম্যান ওয়েইল (১৯০৮), রিচার্ড কোর‍্যান্ট (১৯১০), এরিক হেকে (১৯১০), হুগো স্টেইনহস (১৯১১) এবং উইলহেম আকারম্যান (১৯২৫)। ১৯০২ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত হিলবের্ট ম্যাথমেটিসচে আন্নালেন নামক তৎকালীন মুখ্য গণিত পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
 
{{quote|“ভাল, গণিতবিদ হওয়ার মত ওর যথেষ্ট কল্পনাশক্তি নেই”।|তাঁর ছাত্রদের একজন পাঠক্রম ছেড়ে কবিতা নিয়ে পড়তে গেছে শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া। <ref>{{cite book|url=https://books.google.com/books?id=nnpChqstvg0C&q=%22He+did+not+have+enough+imagination+to+become+a+mathematician%22&pg=PA151|title=The Universal Book of Mathematics|author=David J. Darling|page=151|publisher=[[John Wiley and Sons]] | isbn=978-0-471-27047-8|year=2004}}</ref>}}
 
=== ব্যক্তিগত জীবন ===
১৮৯২ সালে, হিলবের্ট ক্যাথি জেরস্ককে (১৮৬৪ – ১৯৪৫) বিয়ে করেন যিনি কনিংসবার্গের একজন ব্যবসায়ীর মেয়ে ছিলেন। স্বাধীনচেতা স্পষ্টবাদী এই মহিলার সাথে হিলবের্টের মিল ছিল। কনিংসবার্গে থাকাকালীন তাঁদের এক সন্তান হয়, ফ্রান্স হিলবের্ট (১৮৯৩ – ১৯৬৯)। ফ্রান্স সারাজীবন ধরে এক অনির্ণীত মানসিক রোগে ভুগতো। তার এই হীনবুদ্ধিতা তার বাবার কাছে একটা ভয়াবহ হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং এই দুর্ভাগ্য গটিনজেনের গণিতবিদ এবং ছাত্রছাত্রীদের এক প্রধান সমস্যা ছিল।
 
হিলবের্ট গণিতবিদ হেরমান মিংকফ্‌স্কিকে তাঁর “সবচেয়ে ভালো এবং সত্যিকারের বন্ধু” বলে গণ্য করতেন।
 
হিলবের্ট খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন এবং প্রুশিয়ান ইভাঞ্জেলিকাল চার্চে ক্যালভিনপন্থী হয়ে পড়েন। পরে তিনি চার্চ পরিত্যাগ করেন এবং একজন অজ্ঞেয়বাদী হয়ে যান। তিনি বলেন গণিতের সত্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব অথবা অন্য কোন কার্যকারণ ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হয় না। যখন সৌরকেন্দ্রিক মতবাদের ওপর তাঁর প্রতিষ্ঠিত সত্যের হয়ে দাঁড়াতে পারেননি বলে গ্যালিলিও গ্যালিলেইকে সমালোচনা করা হয়, হিলবের্ট তার প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, “কিন্তু [গ্যালিলিও] বোকা ছিলেন না। বোকারাই মনে করে বৈজ্ঞানিক সত্যের জন্য শহীদ হতে হয়; এটা ধর্মে প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক ফলাফল নিজেই একসময় প্রমাণিত হয়।”
 
=== পরবর্তী জীবন ===
১৯২৫ সাল নাগাদ, হিলবের্টের পার্নিসিয়াস অ্যানিমিয়া হয়, তৎকালীন সময়ে এটি ছিল একটি দুরারোগ্য ব্যাধি; ভিটামিনের অভাবে এই রোগ হয় যার প্রাথমিক লক্ষণ হল ক্লান্তি; তাঁর সহকারী ইউজিন উইগনার তাঁকে “প্রচণ্ড ক্লান্ত” এক ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং যেভাবে তাঁকে “বৃদ্ধ মনে হয়” এবং তাঁর রোগের নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরেও, তিনি “১৯২৫ সালের পর থেকে একজন নামমাত্র বিজ্ঞানী ছিলেন এবং অবশ্যই একজন হিলবের্ট নন।”
 
১৯৩৩ সালে হিলবের্ট দেখেছিলেন গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত সকল শিক্ষকদের নাৎসীরা বিতাড়িত করে দিচ্ছে। যাদের চলে যেতে বাধ্য হতে হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন হেরম্যান ওয়েইল (যিনি ১৯৩০ সালে যখন হিলবের্ট অবসর নেন তখন তাঁর পদ পান), এমি নোয়েদার এবং এডমন্ড ল্যান্ডো। পল বার্নেস নামে এক ব্যক্তি যিনি হিলবের্টের সাথে গাণিতিক যুক্তি নিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন এবং গ্রান্ডল্যাগেন ডার ম্যাথেমেটিক নামে বিখ্যাত বইটি (যেটি ১৯৩৪ এবং ১৯৩৯ সালে দুটি খণ্ডে বের হয়েছিল) দুজনে একসাথে লিখেছিলেন, তাঁকেও জার্মানি ছাড়তে হয়। উক্ত বইটি হিলবের্ট-আকারম্যানের লেখা বই প্রিন্সিপলস অফ ম্যাথেমেটিকাল লজিকের (১৯২৮) একটি সিক্যুয়েল। হেরম্যান ওয়েইলের পরে আসেন হেলমাট হেসে।
 
প্রায় একবছর পরে, হিলবের্ট একটি ভোজসভায় আমন্ত্রিত হয়ে আসেন এবং নতুন শিক্ষামন্ত্রী বার্নহার্ড রাস্টের পাশেই বসেন। রাস্ট জিগ্যেস করেছিলেন “ইহুদীদের চলে যাওয়ার ফলে কি গণিত প্রতিষ্ঠান কি সত্যিই খুব দুরবস্থার মুখে পড়েছে?” উত্তরে হিলবার্ট বলেছিলেন, “দুরবস্থা? এর তো আর কোন অস্তিত্বই নেই, আছে কি?”
 
=== মৃত্যু ===
১৯৪৩ সালে যখন হিলবের্ট মারা যান, নাৎসীরা সেসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদেরই বদলি হয়ে গেছিল, কারণ আগেকার প্রায় সমস্ত শিক্ষরাই হয় ছিলেন ইহুদী অথবা ইহুদীকে বিয়ে করেছিলেন। হিলবের্টের শেষযাত্রায় ডজনখানেকেরও কম লোক ছিল, তার মধ্যে কেবলমাত্র দুজন ছিল তাঁর বন্ধু সহকারী, তাঁদের একজন আর্নল্ড সমারফেল্ড, এক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এবং কনিংসবার্গের বাসিন্দাও। তাঁর মৃত্যুর ছ’মাস পরে সেই খবর বাইরের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
 
গটিনজেনে তাঁর স্মৃতিফলকে যে এপিটাফটি লেখা ছিল তা ছিল ১৯৩০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর তাঁর সোসাইটি অফ জার্মান সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড ফিজিশিয়ান্সে প্রদত্ত অবসরকালীন বক্তৃতার শেষ বিখ্যাত লাইন। ল্যাটিন প্রবাদ “ইগনোরামাস এট ইগনোরাবিমাস” অথবা “আমরা জানি না, আমরা জানব না”-এর উত্তরে বলেছিলেনঃ
 
উইর মুসেন উইসেন।
 
উইর ওয়ার্ডেন উইসেন।
 
বাংলায়                    
 
আমরা জানি
 
আমরা জানব।
 
১৯৩০ সালে সোসাইটি অফ জার্মান সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড ফিজিশিয়ান্সে বার্ষিক অধিবেশনে তাঁর উপরিউক্ত কথা বলার আগের দিন, কুর্ট গোডেল – জ্ঞানতত্ত্বের ওপরে সভা চলাকালীন গোলটেবিল বৈঠকে সোসাইটির সভার সাথে – পরীক্ষামূলকভাবে তাঁর অসম্পূর্ণ উপপাদ্যের প্রথম অভিব্যক্তি ঘোষণা করেছিলেন। গোডেলের অসম্পূর্ণ উপপাদ্য দেখায় যে মৌলিক স্বতঃসিদ্ধমূলক ব্যবস্থাগুলোও (যেমন পিয়ানো অ্যারিথমেটিক) হয় স্বতঃবিরোধী অথবা এমন যৌক্তিক পক্ষ মেনে চলে যা প্রমাণ অথবা অপ্রমাণ করা অসম্ভব।
 
== গণিত এবং পদার্থবিদ্যায় অবদান ==
 
=== হিলবের্টের গর্ডানের সমস্যার সমাধান ===
ইনভ্যারিয়ান্ট অপেক্ষকের ওপরে হিলবের্টের প্রথম কাজের ফলে ১৮৮৮ সালে তাঁর বিখ্যাত ফাইনাইটনেস থিওরেম প্রদর্শন করা সম্ভব হয়েছিল। কুড়ি বছর আগে, পল গর্ডান একটি জটিল গাণিতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে দ্বিমিক রূপের উৎপাদকের ফাইনাইটনেসের এই থিওরেমটি প্রদর্শন করেছিলেন। তাঁর পদ্ধতির সাধারণীকরণ করার সময় দুটি চলরাশির অধিক অপেক্ষক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন, কারণ গণনাটিতে একটি প্রকাণ্ড জটিল গণনাপদ্ধতির অবতারণা করা হয়েছিল। গর্ডান সমস্যা নামে পরিচিত এই বিষয়টির সমাধান করতে গিয়ে হিলবের্ট বুঝেছিলেন এর সমাধান করতে গেলে সম্পূর্ণ অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এর ফলে তিনি হিলবার্টের বেসিস থিওরেম প্রকাশ করলেন, যেখানে দেখালেন যেকোন সংখ্যক চলরাশিতে কোয়ান্টিক্সের ইনভ্যারিয়ান্টের জন্য জেনারেটরের নির্দিষ্ট সেটের অস্তিত্ব থাকে, কেবলমাত্র বিমূর্ত (অ্যাবস্ট্র্যাক্ট) রূপে। অর্থাৎ, এইধরনের সেটের অস্তিত্ব প্রদর্শনের ক্ষেত্রে, একটা গঠনমূলক প্রমাণ থাকতেই হবে এমন মানে নেই – এটি “একটা বস্তু” হিসেবে প্রদর্শিত হয় না – কিন্তু এর অস্তিত্বের প্রমাণ আছে এবং এক্ষত্রে হিলবের্ট একটি অসমাপ্ত এক্সটেনশনের ক্ষেত্রে ল অফ এক্সক্ল্যুডেড মিডল পদ্ধতির ওপর নির্ভর করেছিলেন।
 
হিলবের্ট তাঁর প্রাপ্ত ফল ম্যাথমেটিসচে আন্নালেনে পাঠিয়েছিলেন। গর্ডান ম্যাথমেটিসচে আন্নালেনের ইনভ্যারিয়ান্ট তত্ত্বের বিশেষজ্ঞ হিসেবে হিলবের্টের উপপাদ্যের বৈপ্লবিক বিষয়টির প্রশংসা করতে পারেননি এবং নিবন্ধটিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন এই তত্ত্বটি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিস্তৃত নয়। তাঁর মন্তব্যটি ছিলঃ
 
ডাস ইস্ট নিচ্‌ট মাথেমেটিক। ডাস ইস্ট থিওলজি।
 
(এটা গণিত নয়। এটা ধর্মতত্ত্ব।)
 
অন্যদিকে ক্লিন এই কাজটির গুরুত্ব সম্বন্ধে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এবং এই ব্যাপারে নিশ্চিত করেছিলেন যে এটি কোনরকম পরিবর্তন ছাড়াই প্রকাশিত হবে। ক্লিনের বক্তব্যে উৎসাহিত হয়ে, হিলবের্ট তাঁর পদ্ধতিটিকে আরো এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় একটি নিবন্ধ বের করেন যেখানে তিনি জেনারেটরের ন্যুনতম সেটের সর্বোচ্চ ঘাতের ধারণা দিয়েছিলেন এবং তিনি সেটিকে আরো একবার আন্নালেনে পাঠান। পাণ্ডুলিপিটি পড়ে, ক্লিন তাঁকে লিখেছিলেন,
 
''নিঃসন্দেহে এটি সাধারণ বীজগণিতের ওপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ যা আন্নালেনে প্রথমবার প্রকাশিত হল।''
 
পরে, হিলবের্টের পদ্ধতির উপযোগিতা বিশ্বের সর্বত্র স্বীকৃতি পেলে, গর্ডান নিজেই বলতেনঃ
 
               ''আমি নিজেকে এটা বিশ্বাস করিয়েছি যে ধর্মতত্ত্বের মধ্যেও প্রতিভা থাকে।''
 
তাঁর সমস্ত সাফল্যের পেছনে তাঁর প্রমাণের প্রকৃতি প্রভূত সমস্যা সৃষ্টি করেছিল যা হিলবের্টও কল্পনা করতে পারেননি। যদিও ক্রোনেকার প্রাথমিকভাবে হিলবের্টের তত্ত্ব মেনে নিয়েছিলেন, কিন্তু হিলবের্টকে পরবর্তীকালে অন্যান্যদের একই সমালোচনার প্রত্যুত্তর দিতে হয়েছিল এই বলে যে “ভিন্ন ভিন্ন অনেক গঠনগুলো (কনস্ট্রাকশন্স) একই মৌলিক ধারণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে” – অন্য কথায় (রিডের কথা উদ্ধৃত করলে): “অস্তিত্বের প্রমাণের মধ্যে দিয়ে, হিলবের্ট একটা গঠনকে (কনস্ট্রাকশন্) পেয়েছেন”; “প্রমাণ” (অর্থাৎ পাতায় ব্যবহৃত চিহ্ন) হল “বস্তু (অবজেক্ট)”। এতে সকলের বিশ্বাস উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। এর কয়েকদিন পরেই ক্রোনেকার মারা যান, কিন্তু তাঁর গঠনমূলক (কনস্ট্রাকটিভিস্ট) দর্শন যুবক ব্রোয়ার এবং তাঁর উন্নয়নশীল স্বজ্ঞা (ইন্ট্যুইশনিস্ট) ধারার ব্যক্তিবর্গ বহন করে যেতে লাগলেন যার ফলে হিলবের্টের পরবর্তী জীবনে প্রভূত পীড়নের শিকারে হতে হয়। প্রকৃতপক্ষে, হিলবের্ট তাঁর “প্রতিভাধর ছাত্র” ওয়েইলকে হারান যে স্বজ্ঞার (ইন্ট্যুইশনিজম) দিকে ঝুঁকে পড়ে – “প্রাক্তন ছাত্র ব্রোয়ারের ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ায় হিলবের্ট বিরক্ত হন, এর ফলে ক্রোনেকারের স্মৃতিও তাঁর ফিরে আসে।” স্বজ্ঞা ধারার ব্রোয়ার বিশেষ করে অসীম সেটের (ইনফাইনাইট সেট) ক্ষেত্রে ল্য অফ এক্সক্লুডেড মিডলের বিরোধীতা করেন (যা হিলবের্ট ব্যবহার করেছিলেন)। হিলবের্ট প্রত্যুত্তর দেনঃ
 
         ''গণিতবিদের থেকে প্রিন্সিপল অফ এক্সক্লুডেড মিডল কেড়ে নেওয়া….তার সাথে তুলনীয়….একজন বক্সারকে তার মুঠো ব্যবহার করতে নিষেধ করার মতো।''
 
=== জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধতা ===
গ্রুন্ডলাগেন ডার জিওমেট্রি (অনু. জ্যামিতির ভিত্তি) নামে বইটি হিলবের্ট ১৮৯৯ সালে হিলবের্ট প্রকাশ করেন যেখানে তিনি চিরাচরিত ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধতাকে পরিত্যাগ করে একটি ফর্ম্যাল সেটের অবতারণা করেন যাকে হিলবের্ট স্বতঃসিদ্ধতা (অ্যাক্সিওমস্‌) বলা হয়। এটি ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধতার দুর্বলতাগুলোর থেকে মুক্তি দিয়েছিল; যদিও ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধতা সেসময়কার পাঠ্যক্রমে তখনও পড়ানো হত। হিলবের্ট তাঁর স্বতঃসিদ্ধতাকে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন এবং সংশোধন করেছিলেন এবং সেই কারণে গ্রুন্ডলাগেনের ইতিহাসের পাঠ না করে হিলবের্টের স্বতঃসিদ্ধতা বোঝা খুবই দুরূহ। আসল মনোগ্রাফটির পরেই এর ফরাসী অনুবাদ বেরিয়ে যায় যেখানে হিলবের্ট V.2, দি কমপ্লিটনেস্‌ অ্যাক্সিওমস্‌ কথাটি যোগ করেন। হিলবের্টের অনুমোদনে ই.জে. টাউনসেন্ড এর একটি ইংরেজি অনুবাদ বের করেন যার স্বত্তাধিকার করা হয়েছিল ১৯০২ সালে। ফরাসী অনুবাদের পরিবর্তনগুলোকে এই অনুবাদে ঢোকানো হয় এবং তাই একে দ্বিতীয় সংস্করণ বলে গণ্য করা হয়। হিলবের্ট এর পরেও বইটির অদলবদল করেন এবং জার্মান ভাষায় এর আরো কয়েকটি সংস্করণ বেরিয়েছিল। হিলবের্টের জীবদ্দশায় এর ৭ম সংস্করণই শেষবারের মত বেরোয়। ৭ম সংস্করণের পরেও নতুন সংস্করণ বেরিয়েছিল, কিন্তু তার মূলপাঠের বিশেষ পরিবর্তন করা হয়নি।
 
হিলবের্টের অবলম্বিত পন্থা আধুনিক স্বতঃসিদ্ধমূলক পদ্ধতি (অ্যাক্সিওমেটিক মেথড) দিকে যেতে আমাদের সাহায্য করে। ১৮৮২ সালে মরিট্‌জ পাস্কের কাজ থেকে হিলবের্টের মধ্যে ধারণাটি আসে। স্বতঃসিদ্ধতাকে কখনোই স্ব-প্রমাণ সত্য বলে ধরা যায় না। জ্যামিতি এমন সকল বস্তুকে নিয়ে কাজ করতে পারে, যা সম্বন্ধে আমাদের শক্তিশালী স্বজ্ঞা রয়েছে, কিন্তু অসংজ্ঞায়িত ধারণার ওপর সুস্পষ্ট অর্থ চাপিয়ে দেওয়া যায় না। শোয়েনফ্লাইস এবং কোটারকে হিলবের্ট এইভাবে বলেছিলেন যে বিন্দু, রেখা, তল এবং অন্যান্য উপাদানগুলোকে টেবিল, চেয়ার, মদের গ্লাস এবং এইধরনের অন্যান্য বস্তু দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা যায়। কেবলমাত্র সংজ্ঞায়িত সম্পর্ক নিয়েই আমরা আলোচনা করতে পারি।
 
হিলবের্ট প্রথমে অসংজ্ঞায়িত ধারণার গণনা শুরু করেনঃ বিন্দু, রেখা, তল, উপরিপাতন (বিন্দু এবং রেখা, বিন্দু ও তল, রেখা ও তলের মধ্যেকার সম্পর্ক), মধ্যবর্তীতা, বিন্দুর (রেখাংশ) জোড়ার সঙ্গতি (কংগ্রুয়েন্স), এবং কোণের সঙ্গতি। স্বতঃসিদ্ধগুলো প্লেন জিওমেট্রি এবং ইউক্লিডের সলিড জিওমেট্রিকে একটি একক ব্যবস্থার মধ্যে একত্রিত করেছিল।
 
=== ২৩টি সমস্যা ===
১৯০০ সালে প্যারিস শহরে ইন্টারন্যাশানাল কংগ্রেস অফ ম্যাথমেটিসিয়ান্সে হিলবের্ট সবচেয়ে প্রভাবশালী ২৩টি অমীমাংসিত প্রশ্নের অবতারণা করেন। এটিকে একজন একক গণিতবিদ কর্তৃক উপস্থাপিত সবথেকে সফল এবং গভীরভাবে বিবেচিত মুক্ত সমস্যার সংকলন বলা হয়।
 
চিরাচরিত জ্যামিতির ভিত্তির ওপরে পুনরায় কাজ করে, হিলবের্ট গণিতের অন্যান্য দিক সম্বন্ধেও অবহিত হতে পেরেছিলেন। তাঁর অবলম্বিত পন্থাটি যদিও পরবর্তীকালে ‘ভিত্তিবাদী’ রাসেল হোয়াইটহেড অথবা ‘বিশ্বকোষবিদ্‌’ নিকোলাস বোরবাকি এবং তাঁর সমসাময়িক জিওসেপ্পি পিয়ানোর থেকে আলাদা ছিল। গোটা গণিতের দুনিয়াকেই এইসকল সমস্যার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারত, যে সমস্যাগুলোকে তিনি গণিতের বিভিন্ন শাখার গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং যার চাবিকাঠিটি ছিলেন তিনি নিজেই।
 
প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক গণিতবিদের সম্মেলন চলাকালীন “গণিতের সমস্যা” শীর্ষক বক্তৃতায় এই সমস্যা রাশিটির অবতারণা করা হয়। হিলবের্ট এর ভূমিকাতে যা বলেছিলেন তা হলঃ<blockquote>      যে পর্দার পেছনে ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে, তাকে উন্মোচিত করলে কে না খুশী হয়; কে না খুশী হয় আমাদের বিজ্ঞানের আসন্ন উন্নতির দিকে এবং আগামী শতাব্দীর উন্নতির গোপন রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে? গণিতজ্ঞদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে দিকে এগিয়ে চলতে চায় তার শেষ কোথায়? গাণিতিক চিন্তার বিস্তীর্ণ ও সমৃদ্ধ ভূমিতে কোন পদ্ধতি, নতুন কোন ঘটনা নতুন শতাব্দী এনে দেবে?</blockquote>সম্মেলনে তিনি অর্ধেকেরও কম সমস্যা উত্থাপন করেছিলেন, এবং সেগুলি সম্মেলনের কাজের তালিকায় পরে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী প্রকাশনে, তিনি ক্ষেত্রটিকে আরো বিস্তৃত করেন এবং বিখ্যাত সূত্র তৈরি করেন যা বর্তমানে হিলবের্টের ২৩টি সমস্যা নামে পরিচিত। আরো দেখুন হিলবের্টের চব্বিশতম সমস্যা। এর সম্পূর্ণ বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যখনই প্রশ্ন করা হয় কতগুলো প্রশ্নের সমাধান করা গেছে, তখনই প্রশ্নের ব্যাখ্যা করতে গেলে এটি অনিবার্য বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
 
এগুলোর কোন কোনটি স্বল্প সময়ে সমাধান করা হয়েছে। অন্যান্যগুলো ২০শ শতক জুড়ে বহু আলোচিত হয়েছে, যার মধ্যে কিছু এতোটাই উন্মুক্ত যে এখন সেগুলোকে নিয়ে আর চর্চা হয় না। কিছু প্রশ্ন আজও গণিতবিদদের কাছে রীতিমত চ্যালেঞ্জ।
 
=== ফর্ম্যালিজম ===
মধ্য-শতাব্দীতে এসে হিলবের্টের সমস্যার সেটটি একটি মানদণ্ডে পরিণত হয়েছিল এবং এটি একধরনের ঘোষণাপত্র হয়ে উঠেছিল যা গণিতে ফর্ম্যালিস্ট ধারার উন্নতির রাস্তা খুলে দেয় যে ধারা ছিল বিংশ শতকের অন্যতম সেরা তিনটির মধ্যে একটি। ফর্ম্যালিস্টদের মতে, গণিত হল নির্দিষ্ট করে দেওয়া নিয়মানুযায়ী কিছু চিহ্নের খেলা। এটি তাই একটি স্বয়ংশাসিত চিন্তাভাবনার কার্যকলাপ। যদিও এই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে যে হিলবের্টের নিজের ধারণাও কি এমনই সহজ ফর্ম্যালিস্টদের মত ছিল।
 
==== হিলবের্টের কর্মসূচী ====
১৯২০ সালে হিলবের্ট স্পষ্টভাবে একটি গবেষণামূলক প্রকল্পের (গণিতে, এটিকে এই নামেই তখন বলা হত) কথা বলেন যা হিলবের্টের কর্মসূচী নামে পরিচিত হয়। তিনি চাইতেন গণিত একটি শক্ত এবং সম্পূর্ণ যৌক্তিক ভিত্তির ওপর তৈরি হোক। তিনি বিশ্বাস করতেন যে নিয়মানুযায়ী এটা করা যেতে পারে; তিনি দেখালেনঃ
 
১. সঠিকভাবে নির্বাচিত সীমিত স্বতঃসিদ্ধতার ব্যবস্থা থেকেই সমস্ত গণিত অনুসৃত হয়; এবং
 
২. কিছু এইধরনের স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থা কিছু অর্থে তুলনীয় বলে প্রমাণ করা যায়, যেমন এপসিলন কলনবিদ্যা।
 
মনে হয়, তাঁর এই প্রস্তাবনাটিকে সূত্রায়িত করার পিছনে প্রায়োগিক এবং দার্শনিক কারণ ছিল। ইগনোরাবিমাস হিসেবে যা পরিচিত ছিল তা হিলবের্ট অপছন্দ করতেন যদিও এটি তাঁর সময়কালে জার্মানদের চিন্তাভাবনায় একটি সক্রিয় সমস্যা ছিল, এবং এই সূত্রটি এমিল ডু বোয়ে-রেমন্ডের সময় থেকে প্রচলিত ছিল।
 
এই প্রোগ্রামটি গণিতের দর্শনে সবথেকে জনপ্রিয় ফর্ম্যালিজম হিসেবে। উদাহরণস্বরূপ, বোরবাকি গোষ্ঠী তাদের প্রকল্পদ্বয়ের প্রয়োজনে এর একটি জলীয় ও নির্বাচিত সংস্করণ গ্রহণ করেছিলেন; তাদের প্রকল্পগুলো ছিল (অ) বিশ্বকোষীয় ভিত্তিমূলক কাজের লিখন, এবং (আ) গবেষণার বিষয় হিসেবে স্বতঃসিদ্ধ পদ্ধতিকে সহায়তা করা। এই পদ্ধতিটি সফল হয়েছিল এবং বীজগণিতে এবং অপেক্ষকের বিশ্লেষণে হিলবের্টের কাজকে আরো প্রভাবশালী করেছিল, কিন্তু পদার্থবিদ্যা এবং যুক্তিবিজ্ঞানের দুনিয়ায় একই পদ্ধতিতে তাঁর প্রভাব বৃদ্ধি করতে অসমর্থ হয়।
 
হিলবের্ট ১৯১৯ সালে লিখেছিলেনঃ<blockquote>আমরা কোন অর্থেই এখানে স্বেচ্ছাচারিতার কথা বলছি না। গণিত এমন কোন খেলা নয় যার কাজ কিছু নির্বিচারে নির্ধারিত নিয়ম দ্বারা স্থিরীকৃত হবে। বরং, এটি এমন একটি ধারণাগত ব্যবস্থা যার অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং যেটি কেবলমাত্র এমনই হতে পারে এবং কোন অর্থেই এর অন্যথা হয় না।</blockquote>গণিতের ভিত্তির ওপরে লেখা গ্রুন্ডলাগেন ডার ম্যাথমেটিক নামে দুই খণ্ডের বইয়ে হিলবের্ট তাঁর বক্তব্য প্রকাশ করেন।
 
==== গোডেলের কাজ ====
হিলবের্ট এবং অন্যান্য গণিতবিদরা যাঁরা তাঁর সাথে তাঁর এই উদ্যোগে কাজ করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই এই প্রকল্পটিতে নিজেদের নিয়োজিত করে দিয়েছেন। তিনি স্বতঃসিদ্ধ গণিতকে নির্দিষ্ট নীতির সাহায্যে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, যা যাবতীয় তাত্ত্বিক অনিশ্চয়তাকে নস্যাৎ করে দিতে পারতো, সেটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
 
গোডেল দেখিয়েছিলেন যে পরস্পরবিরোধী নয় এমন যেকোন ফর্ম্যাল ব্যবস্থা, যা অন্তত পাটিগণিতকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে যথেষ্ট বিস্তৃত, তা কিন্তু তার নিজের স্বতঃসিদ্ধতার দ্বারাই নিজের সম্পূর্ণতাকে প্রদর্শন করতে পারে না। ১৯৩১ সালে তিনি তাঁর অসম্পূর্ণতার উপপাদ্যে দেখিয়েছিলেন যে যে হিলবের্টের মহান পরিকল্পনা যেমনভাবে বলা হয়েছে সেভাবে হওয়া অসম্ভব। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বতঃসিদ্ধ ব্যবস্থাটি সত্যসত্যই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়, ততক্ষণ হিলবের্টের এই কাজটির প্রথম ক্ষেত্রটির সঙ্গে দ্বিতীয়টিকে কোনভাবেই যুক্তিযুক্তভাবে মেলানো যায় না।
 
তৎসত্ত্বেও, প্রমাণ তত্ত্ব পরবর্তীতে খুব সামান্য সঙ্গতি ব্যাখ্যা করতে পেরেছিল যা গণিতজ্ঞদের মুখ্য ভাবনাযুক্ত তত্ত্বের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। এই ব্যাখ্যাকালীন সময়ে হিলবের্টের কাজ যুক্তিপ্রয়োগ শুরু করে; গোডের কাজ বোঝার প্রয়োজনীয়তা এরপর থেকে পুনরাবৃত্তি তত্ত্বের বিকাশ ঘটাতে শুরু করে এবং ১৯৩০এর দশক থেকে গাণিতিক যুক্তি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শাখা হিসেবে গড়ে ওঠে। তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তিও এই ‘বিতর্ক’ থেকেই সরাসরি জন্ম নিয়েছিল যে কম্পিউটার বিজ্ঞান আলোঞ্জো চার্চ এবং অ্যালান ট্যুরিং শুরু করেন।
 
=== অপেক্ষকের বিশ্লেষণ ===
১৯০৯ সাল নাগাদ, হিলবের্ট ডিফারেনশিয়াল এবং ইন্টিগ্রাল সমীকরণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন; তাঁর কাজ আধুনিক অপেক্ষকের বিশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশে সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল। এইসকল কাজ করার সময়ে, হিলবের্ট অসীম মাত্রাযুক্ত ইউক্লিডিয় স্থানের ধারণার অবতারণা করেন যা পরে হিলবের্ট স্থান নামে পরিচিত হয়। বিশ্লেষণের এই অংশটিতে তাঁর কাজ পরবর্তী দুই দশক ধরে পদার্থবিদ্যার গণিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের ভিত্তিভূমি প্রস্তুত করেছিল, যদিও সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত দিক থেকে এমনটা সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তীকালে, স্টিফান বানাচ ধারণাটিকে আরো প্রসারিত করেন যার নাম দেন বানাচ স্থান। হিলবের্ট স্থান অপেক্ষকের বিশ্লেষণের কাজের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণীর বিষয় বলে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে ২০শ শতকে গড়ে ওঠা সেলফ-অ্যাডজয়েন্ট লিনিয়ার অপারেটরের স্পেক্ট্রাল তত্ত্বের ক্ষেত্রে।
 
=== পদার্থবিদ্যা ===
১৯১২ সাল পর্যন্ত হিলবের্ট প্রায় একান্তভাবে একজন “বিশুদ্ধ” গণিতজ্ঞ ছিলেন। বন শহরে হিলবের্টের সহকারী গণিতজ্ঞ ও বন্ধু হেরমান মিংকফ্‌স্কি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনায় মগ্ন ছিলেন; সেখান থেকে ফিরে আসবার পরিকল্পনা করার সময় তিনি মজা করে বলেছিলেন যে হিলবের্টের সঙ্গে দেখা করার আগে তাঁকে দশদিনের জন্য সঙ্গনিরোধ হয়ে থাকতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, ১৯১২ সালের আগে হিলবের্টের পদার্থবিদ্যা গবেষণার বেশিরভাগ অংশের জন্যই মিংকফ্‌স্কিকে দায়ী করা হয়; ১৯০৫ সালে তাঁরা দুজন এই বিষয়ের ওপর যৌথ সেমিনারেও অংশগ্রহণ করেন।
 
হিলবের্ট তাঁর বন্ধুর মৃত্যুর তিন বছর পরে ১৯১২ সালে পদার্থবিদ্যার প্রতি সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করেন। তিনি তাঁর জন্য “পদার্থবিদ্যার শিক্ষক” নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি গ্যাসের গতিতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন এবং সেখান থেকে প্রাথমিক বিকিরণ তত্ত্ব এবং পদার্থের আণবিক তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করে যান। এমনকি ১৯১৪ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে, তিনি তাঁর সেমিনার এবং ক্লাস চালিয়ে যান যেখানে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এবং অন্যান্যদের গবেষণামূলক কাজ খুব কাছ থেকে অনুসরণ করা হত।
 
১৯০৭ সালের মধ্যে আইনস্টাইন মৌলিক মহাকর্ষ তত্ত্বের অবতারণা করেন, কিন্তু একটি বিভ্রান্তিকর সমস্যার কারণে এরপর প্রায় ৮ বছর ধরে তাঁকে তত্ত্বটির সর্বশেষ রূপ প্রদান করার জন্য চেষ্টা করে যেতে হয়। ১৯১৫ সালের গ্রীষ্মের শুরুতে হিলবের্টের পদার্থবিদ্যার প্রতি আগ্রহ সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের প্রতি নিবিষ্ট হয়, এবং তিনি আইনস্টাইনকে গটিনজেনে এই বিষয়ের ওপর এক সপ্তাহের ভাষণ দেবার জন্য আমন্ত্রণ জানান। আইনস্টাইন এই আমন্ত্রণ খুবই উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। গ্রীষ্মের সময়, আইনস্টাইন জানতে পারেন যে হিলবের্টও ক্ষেত্র সমীকরণের ওপরে কাজ করছেন যার ফলে তিনি নিজের কাজে দ্বিগুণ শ্রম বাড়িয়ে দেন। ১৯১৫ সালের নভেম্বর মাসে, আইনস্টাইন ''মহাকর্ষের ক্ষেত্র সমীকরণের'' সর্বশেষ রূপদান করে কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন (আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণ দেখুন)। প্রায় একইসাথে, ডাভিড হিলবের্টও প্রকাশ করলেন “পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি”, যা ছিল ক্ষেত্র সমীকরণের একটি স্বতঃসিদ্ধ উদ্ভাবনা (দেখুন, আইনস্টাইন-হিলবের্ট কাজ)। হিলবের্ট তত্ত্বটির প্রবর্তক হিসেবে আইনস্টাইনকেই সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের জীবদ্দশায় ক্ষেত্র সমীকরণ নিয়ে এই দুটি মানুষের মধ্যে কখনোও কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি।
 
এছাড়াও, হিলবের্টের কাজ কোয়ান্টাম বলবিদ্যার গাণিতিক সূত্রায়নের ক্ষেত্রে কিছু পূর্বানুমান করেছিল এবং এর অগ্রগতিতে সহায়তা করেছিল। ওয়ার্নার হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যা এবং আরউইন শ্রয়েডিংগারের তরঙ্গ সমীকরণের গাণিতিক তুলনীয়তার ওপরে হেরমান ওয়েইল এবং জন ভন নিউম্যানের কাজের প্রধান একটি দিক ছিল হিলবের্টের কাজ; এছাড়াও তাঁর নামে নামাঙ্কিত হিলবের্ট স্থান কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে। ১৯২৬ সালে, ভন নিউম্যান দেখিয়েছিলেন যে যদি কোয়ান্টাম অবস্থাকে হিলবের্ট স্থানের ভেক্টরের সঙ্গে একইসাথে অনুধাবন করা হয়, তবে তারা শ্রয়েডিংগারের তরঙ্গ ফাংশান তত্ত্ব এবং হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্সের সাথে সঙ্গতি রেখে চলে।
 
পদার্থবিদ্যার চর্চায় এইভাবে ডুব দিয়ে, হিলবের্ট পদার্থবিদ্যার গণিতে কঠোরতা অবলম্বন করার ওপরে কাজ করেছিলেন। উচ্চতর গণিতের ওপরে নির্ভরশীল হওয়ার কারণে, পদার্থবিদরা এটির সম্বন্ধে “অযত্নশীল” ছিলেন। হিলবের্টের মত একজন “বিশুদ্ধ” গণিতবিদের কাছে এটি যেমন জঘন্য ছিল তেমনই এটি বোঝাও ছিল কঠিন। পদার্থবিদ্যা এবং কিভাবে পদার্থবিদরা গণিতকে ব্যবহার করে, তা তিনি একদিকে যেমন বুঝতে শুরু করেছিলেন, তেমনিভাবে অন্যদিকে তিনি একটি সুসঙ্গত গাণিতিক তত্ত্ব গড়ে তোলেন যার কারণে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে ইন্টিগ্রাল সমীকরণের ক্ষেত্রে উন্নতি করেন। যখন তাঁর সহকর্মী রিচার্ড কোরান্ট মেথোডেন ডার ম্যাথমেটিশ্চেন ফিজিক [গাণিতিক পদার্থবিদ্যার পদ্ধতি] নামক অধুনা ক্লাসিক বইটি লেখেন এবং হিলবের্টের ধারণাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেন, উক্ত বইটিতে তিনি লেখকের নাম হিসেবে হিলবের্টের নাম লেখেন যদিও বইটির রচনায় হিলবের্টের কোন প্রত্যক্ষ অবদান ছিল না। হিলবের্ট বলেছিলেন “পদার্থবিদ্যা পদার্থবিদদের কাছে অত্যন্ত কঠিন”, অর্থাৎ তিনি এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে প্রয়োজনীয় গণিতকে তাঁরা এখনও দূরে সরিয়ে রেখেছে; কোরান্ট-হিলবের্টের বই এই বিষয়টিকে তাঁদের কাছে সহজ করে দিয়েছে।
 
=== সংখ্যাতত্ত্ব ===
হিলবের্ট তাঁর ১৮৯৭ সালে লেখা জালবেরিখট্‌ (আক্ষরিক অর্থে “সংখ্যার ওপরে প্রতিবেদন”) নামক বইয়ে বীজগাণিতিক সংখ্যা তত্ত্বের ক্ষেত্রটিকে একত্রিত করেছিলেন। ১৭৭০ সালে ওয়েরিং দ্বারা কৃত গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাতত্ত্বের সমস্যার তিনি সমাধান করেছিলেন। ফাইনাইটনেস থিওরেম দ্বারা, তিনি অস্তিত্বের প্রমাণ ব্যবহার করেছিলেন যা দেখায় সমস্যার উত্তর পাওয়ার একটি পদ্ধতি না থাকলেও নির্দিষ্ট সমাধান থাকবেই। এই বিষয়ের ওপরে তাঁর সামান্যই বিষয় প্রকাশ করার ছিল; কিন্তু তাঁর একজন ছাত্র কর্তৃক প্রস্তুত গবেষণাপত্রে হিলবের্ট মডিউলার ফর্মের দাবী আসার সঙ্গে সঙ্গে হিলবের্টের নাম আরো বড়ো ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল।
 
ক্লাস ফিল্ড তত্ত্বের ওপর তিনি বেশ কিছু অনুমান প্রস্তুত করেন। ধারণাগুলো অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং তাঁর এই অবদান হিলবের্ট ক্লাস ফিল্ড এবং হিলবের্ট সিম্বল অফ লোকাল ক্লাস ফিল্ড থিওরি নামে পরিচিত হয়ে রয়েছে। এর ফলাফলগুলোর বেশিরভাগই তেজি তাকাগির কাজের পরে ১৯৩০ সালের মধ্যে প্রমাণিত হয়ে যায়।
 
হিলবের্ট বিশ্লেষণী সংখ্যাতত্ত্বের কেন্দ্রীয় ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করেননি, কিন্তু তাঁর নাম হিলবের্ট-পোলভা কনজেকচারের কারণে পরিচিত হয়ে আছে, যার কারণ অজানা।
 
=== কাজ ===
তাঁর সম্মিলিত কাজ (গেসাম্মেল্টে আভান্দলুনজেন) কয়েকবার প্রকাশিত হয়। তাঁর গবেষণাপত্রের প্রকৃত সংস্করণটায় “বিভিন্ন মাত্রার অনেক প্রায়োগিক ত্রুটি ছিল”; যখন এই সংকলনটি প্রথম প্রকাশিত হয়, এর ত্রুটিগুলো দূর করা হয় তখন এটা বোঝা যায় যে এর উপপাদ্যগুলোর বর্ণনায় কোন গুরুতর পরিবর্তন না এনেই তা করা যাবে; এর মধ্যে শুধু একটি ব্যতিক্রম ছিল – কন্টিন্যুয়াম হাইপোথিসিসের একটি প্রমাণের দাবী। তৎসত্ত্বেও, এর ত্রুটিগুলো সংখ্যায় এতোই বেশি ছিল এবং এতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে সেগুলোকে সংশোধন করতে ওলগা তৌস্কি-টডের তিন বছর সময় লেগেছিল।
 
==টীকা==