কালাপাহাড়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Subratabd (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Subratabd (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
১ নং লাইন:
'''কালাপাহাড়'''(১৫৩৪-১৫৮০) history of kalapahar
'''কালাপাহাড়'''(১৫৩৪-১৫৮০) ছিলেন [[কররানী রাজবংশ]]র এক দুর্ধর্ষ সেনাপতি। তার বাড়ি ছিল অধুনা [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[নওগাঁ]] (নিয়ামতপুর ) বীরজাওন গ্রামে। তিনি বিদ্বান ও বুদ্ধিমান ছিলেন। [[সুলায়মান খান কররানী]] যখন গৌড়ের শাসক সেসময় তিনি গৌড়ের সেনানীতে যোগদান করেন এবং অতি অল্পকালের মধ্যে যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শিতার পরিচয় দিয়ে সুনজরে পতিত হন।
 
হিন্দু মন্দির ও দেবমূর্তি ধ্বংসের নায়ক হিসেবে যে নামটি ইতিহাসের পাতা থেকে প্রথম উঠে আসে, সে নামটি হলো “কালাপাহাড়।” “বাংলার সামাজিক ইতিহাস” -এর লেখক দুর্গাচরণ সান‍্যাল এই কালাপাহাড়কে হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত মুসলমান বানিয়ে তার হিন্দু মন্দির ধ্বংসের কারণ হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক ড: রমেশচন্দ্র মজুমদার বলছেন, দুর্গাচরণ সান‍্যালের কালাপাহাড়ের এই বিবরণ সম্পূর্ণ অমূলক ও কাল্পনিক। দুর্গাচরণের কলম থেকেই কালাপাহাড়ের জীবনে দুর্গাচরণায়ণ ঘটেছে বিভিন্ন উপন্যাস ও যাত্রাপালায়। সবটার বিষয়বস্তু এক, কালাপাহাড় হিন্দু ছিলেন, মুসলমান শাসক কন্যা দুলারীর প্রেমে পড়ে মুসলমান হোন। সমাজে ফিরতে না পেরে হয়ে ওঠেন হিন্দু মন্দির ও দেবমূর্তি ধ্বংসকারী। সব মিলে গড়ে ওঠে এক মিথ্যে মিথ।
।<ref name="ReferenceA">The Cult of Jagannātha By Kanhu Charan Mishra, Published 1971</ref><ref>{{বাংলাপিডিয়া উদ্ধৃতি|অধ্যায়=সুলায়মান কররানী|লেখক=এ.বি.এম শামসুদ্দীন আহমেদ}}</ref>
কিন্তু ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার এই পুরো বিষয়টিকেই অমূলক ও কাল্পনিক বলেছেন।
আসলে কালাপাহাড়ের ডাক নাম ছিল “রাজু।” এই নাম হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই প্রচলিত। আর এটিই যত গণ্ডগোলের কারণ। “রাজু” নাম দেখেই কালাপাহাড়কে হিন্দু থেকে মুসলমান বানিয়ে মন্দির ভাঙার গল্প সাজিয়েছেন বহু লেখক। দুর্গাচরণ সান‍্যালরাই তাঁদের পথ প্রদর্শক।
 
কিন্তু দুর্গাচরণ সান‍্যালের এই দুর্গাচরণী ব‍্যাখ‍্যা ইতিহাস স্বীকার করে না। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার কালাপাহাড়ের আসল পরিচয় তুলে ধরেছেন বহু আগেই তাঁর “বাংলাদেশের ইতিহাস”, ২য় খণ্ড, মধ্য যুগ, ফাল্গুন ১৩৭৩ বঙ্গাব্দে, গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের ১২৩ পাতায়।
রমেশচন্দ্র মজুমদার জানাচ্ছেন, সুলেমান কররাণীর সেনাপতি কালাপাহাড় প্রথমে হিন্দু, পরে মুসলমান হোন বলে কিংবদন্তী আছে। এর কোনো ভিত্তি নেই।
 
এরপর ড: মজুমদার কালাপাহাড়ের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরেছেন। আবুল ফজলের “আকবর-নামা”, বদায়ূনীর “মন্ত-খব-উৎ-তওয়ারিখ” এবং নিয়মাতুল্লাহর “মখজান-ই-আফগানী” থেকে প্রামানিকভাবে জানা যায়, কালাপাহাড় জন্মসূত্রেই আফগান মুসলমান ছিলেন।
 
সবচেয়ে আশ্চর্য তথ্য হলো, কালাপাহাড় ছিলেন সূরি বংশের বিখ্যাত শাসক শের শাহের বংশোদ্ভূত। এই সুরি বংশের শাসক সিকান্দার সূরের ভাই ছিলেন “রাজু” ওরফে কালাপাহাড়।
 
১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে শের খান গৌড়ের সিংহাসনে বসেন। তখন তাঁর নাম হয়— ফরিদউদ্দিন আবুল মুজফ্ফর শের শাহ, সংক্ষেপে শের শাহ।
শের শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র জালাল শাহ সিংহাসনে বসেন “ইসলাম শাহ “নাম নিয়ে‌। এই ইসলাম শাহের আমলেই কালাপাহাড়ের আক্রমণ হয় কামরূপে এবং ধ্বংস হয় কামাখ্যার মন্দিরগুলি।
 
ইসলাম শাহ থেকে শুরু করে দাউদ কররাণীর রাজত্বকাল পর্যন্ত কালাপাহাড়কে বাংলার সৈন্যদলের অধিনায়ক হিসেবেই দেখা যায়।
 
এই দাউদ কররাণীর মৃত্যুর ৭ বছর পর ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে কালাপাহাড়ের মৃত্যু হয়। সে মৃত্যুও হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রেই। ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে মোগলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন সে দলেরই মাসুম কাবুলী। কালাপাহাড় সে সময় মাসুম কাবুলীর সঙ্গে যোগ দেয় এবং মোগলদের গুলিতেই তার মৃত্যু হয়।
 
কালাপাহাড়ের মৃত্যুর পর শাসন ক্ষমতা আসে মোগল সম্রাট আকবরের হাতে।
“রিয়াজ-উস-সালাতীন” -এ কালাপাহাড়কে বাবরের বিশিষ্ট আমীর এবং আকবরের সেনাপতি হিসেবে উড়িষ্যা জয়ের কথা বলা হয়েছে। এটিও অমূলক।
 
 
১৫৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে শীতকালে আকবর যখন চিতোর দখলে ব‍্যস্ত, সেই সুযোগে বাংলার শাসক সুলেমান কররাণীর সেনাপতি কালাপাহাড় একদল দ্রুতগামী অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে উড়িষ্যার জাজপুর অঞ্চল থেকে পুরী দখল করে সেখানকার জগন্নাথ মন্দিরের ভেতরের ধন-সম্পত্তি লুঠ করে, আংশিকভাবে মন্দির ভেঙে, মূর্তিগুলি টুকরো টুকরো করে নোংরা জায়গায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তারপর বহু সোণার মূর্তিসহ অনেক মণ সোণা হাতিয়ে নেয়। এই প্রথম উড়িষ্যা যায় মুসলমান দখলে।
মন্দির ধ্বংসের নায়ক সুলেমান কররাণীর সেনাপতি এই “রাজু” ওরফে কালাপাহাড় ছাড়াও দ্বিতীয় আরেকজন কালাপাহাড়ের খোঁজ পাওয়া যায়। এই দ্বিতীয় কালাপাহাড় ছিলেন খ্রিস্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগের লোক। লোদী বংশের প্রতিষ্ঠাতা শাসক বহলুল লোদী (১৪৫১-১৪৮৯ খ্রি: ) এবং তাঁর পুত্র সিকন্দর লোদী (১৪৮৯-১৫১৭ খ্রি: )-র সমসাময়িক এই দ্বিতীয় কালাপাহাড় তাঁদের রাজত্বকালে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত ছিলেন।
তবে এই দু’ জনের নাম কেন “কালাপাহাড়”, সে বিষয়ে কিছু জানা যায় না।
 
দুর্গাচরণী গল্পের বাইরে এই হলো ইতিহাসের কালাপাহাড়।
 
==কালাপাহাড়ের সমরাভিযান==
৭ ⟶ ৩৩ নং লাইন:
 
==মন্দির ধ্বংসকারী কালাপাহাড়==
মুসলিম কন্যা বিবাহের কারণে কালাপাহাড় সমাজচ্যুত হন। মায়ের অনুরোধে কিছুদিন পর তিনি বাংলার হিন্দু ধর্মগুরুদের কাছে প্রায়শ্চিত্তের বিধান চাইলে তারা কোন বিধান দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তিনি পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরে গিয়ে প্রায়শ্চিত্তের সংকল্প করেন। কিন্তু পুরীর ধর্মগুরুরা তাকে ও তার স্ত্রীকে মন্দিরে প্রবেশ করতে বাধা দেন এবং তার কোন প্রায়শ্চিত্ত হবে না বলে জানিয়ে দেন। এতে কালাপাহাড় মর্মাহত হন এবং প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাই উড়িষ্যা অভিযানকালে তিনি উড়িষ্যার ধর্মগুরু ও ধর্মস্থানের উপর প্রতিশোধ নেবার সুযোগ পান। ১৫৬৭-৬৮ খ্রীষ্টাব্দে মুকুন্দ দেবের বিরুদ্ধে সুলাইমান কররাণীর পুত্র বায়েজিদ খান কররাণী ও সেনাপতি সিকান্দার উজবেকের যুদ্ধে মুকুন্দ দেবের পতন হলে কালাপাহাড় উড়িষ্যা ও তার নিকবর্তী অঞ্চলের হিন্দু মন্দিরগুলোতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালান। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেন এবং মন্দিরের সম্পদ লুণ্ঠন করেন। জানা যায়, কালাপাহাড় জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার কাঠের প্রতিমা উপড়ে নিয়ে [[হুগলী]] নদীর তীরে আগুনে পুড়িয়ে দেন।<ref name="ReferenceA">The Cult of Jagannātha By Kanhu Charan Mishra, Published 1971</ref>
 
কালাপাহাড় উড়িষ্যার বালেশ্বরের [[গোপীনাথ মন্দির]], ভুবনেশ্বরের কাছে [[কোনার্ক মন্দির]], [[মেদিনীপুর]], [[ময়ুরভঞ্জ]], [[কটক]] ও পুরীর আরো কিছু মন্দিরে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালান। কালাপাহাড়ের মন্দির আক্রমণের প্রক্রিয়াটি একটু অভিনব ছিল। তিনি গরুর চামড়ার বিশাল আকৃতির ঢোল আর পিতলের বড় বড় ঘণ্টা মন্দিরের ভেতরে ক্রমাগত বাজিয়ে তীব্র অনুরণন তৈরি করার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই অনুরণনের তীব্রতায় প্রতিমাদের হাতগুলো খসে পড়ত। এতে উপস্থিত লোকজন হতভম্ব হয়ে পড়লে প্রতিমা উপড়ে ফেলা হত। কালাপাহাড় মন্দির সমূলে ধ্বংস করার চেয়ে প্রতিমা ধ্বংস ও লুটপাটে বেশি আগ্রহী ছিলেন। মন্দির আক্রমণের শেষ পর্যায়ে কালাপাহাড় সম্বলপুরের মা সম্বলেশ্বরীর মন্দিরে আক্রমণ করতে সম্বলপুরের উপকণ্ঠে মহানদীর তীরে দুর্গাপালীতে উপস্থিত হন। একজন নারী গোয়ালিনীর ছদ্মবেশে কালাপাহাড়ের ছাউনিতে উপস্থিত হন। তিনি সৈন্যদের মধ্যে বিষ মিশ্রিত দুধ, দই, ছানা, বিক্রি করেন। পরদিন সকালে খাদ্যের বিষক্রিয়ায় কালাপাহাড়ের বেশির ভাগ সৈন্য আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তিনি অবশিষ্ট সৈন্যদের নিয়ে পালিয়ে যান,মনে করা হয় দেবী সম্বলেস্বরী গোয়ালিনি ছদ্মবেশ নিয়ে এসেছিলেন।<ref>K.S. Behera, "Gloom and Bloom: The Case of Jagannatha Temples in Midnapore District"</ref><ref name=":0" /> মন্দির ধ্বংসের ঘটনা উড়িষ্যা ও মেদিনীপুরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কররাণীদের [[কোচবিহার]] আক্রমণকালে কালাপাহাড় আসামের কামাখ্যা মন্দিরসহ আরো কিছু মন্দির ধ্বংস করেন। কালাপাহাড় কররাণীদের শেষ শাসক দাউদ খান কররাণীর আমল পর্যন্ত কররাণীদের সেনাপতি ছিলেন এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে অভিযানগুলোতে অংশগ্রহণ করেন। ১৫৭৬ খ্রীষ্টাব্দে কররাণীদের পতনের পর কালাপাহাড় সম্ভবত [[আফগানিস্তান|আফগান]] নেতা মাসুম কাবুলীর দলে যোগ দেন এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকেন। সম্ভবত ১৫৮৩ খ্রীষ্টাব্দে মুঘল সেনাপতি খান ই আজমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে [[মাসুম কাবুলী]] পরাস্ত হলে সেই যুদ্ধে কালাপাহাড়ও নিহত হন।<ref>ভারতকোষ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ , কলিকাতা, ১৯৬৬,পাতা-৩০২</ref>