আবদুল মুত্তালিব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৭ নং লাইন:
বনু আবদে মান্নাফ এবং বনু আবদুদ দায়ের মধ্যে পদমর্যাদা বণ্টনের ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছিল। এই সমঝোতার প্রেক্ষিতে আবদে মান্নাফের বংশধররা হাজীদের পানি পান করানো এবং মেহমানদের আতিথেয়তার মেজবানি লাভ করেন। হাশেম বিশিষ্ট সম্মানিত এবং সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মক্কার হাজীদের সুরুয়া রুটি খাওয়ানের প্রথা চালু করেন। তার প্রকৃত নাম ছিল আমর কিন্তু রুটি ছিড়ে সুরুয়ায় ভেজানোর কারণে তাকে বলা হতো হাশেম। হাশেম অর্থ হচ্ছে যিনি ভাঙ্গেন। হাশেমেই প্রথম মানুষ যিনি কোরাইশদের গ্রীষ্ম এবং শীতে দুবার বাণিজ্যিক সফরের ব্যবস্থা করেন। তার প্রশংসা করে কবি লিখেছেন, তিনি সেই আমর যিনি দুর্ভিক্ষ পীড়িত দুর্বল স্বজাতিকে মক্কায় রুটি ভেঙ্গে ছিঁড়ে সুরুয়ায় ভিজিয়ে খাইয়েছিলেন এবং শীত ও গ্রীষ্মে সফরের ব্যবস্থা করেছেন।
 
হাশেম বা আমরেরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই যে, তিনি ব্যবসার জন্য সিরিয়া সফরে গিয়েছিলেন। যাওয়ার পথে মদিনায় পৌঁছে বনি নাজ্জার গোত্রের সালমা বিনতে আমরের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং কিছুদিন সেখানে অবস্থান করেন। গর্ভবতী হওয়ার পর স্ত্রীকে পিত্রালয়ে রেখে তিনি সিরিয়ায় রওয়ানা হন। ফিলিস্তিনের গাযা শহরে গিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে সালমার গর্ভ থেকে একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। এটা ৪৯৭ ঈসায়ী সালের ঘটনা। শিশুর মাথার চুলে ছিল শুভ্রতার ছাপ, এ কারণে সালমা তার নাম রাখেন শায়রাশায়বা (ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড. পৃ-১৩৭, রহমাতুললিল আলামিন, ১ম খন্ড, পৃ.২৬, ২য় খন্ড পৃ-২৪)। ইয়াসরেব বা মদিনায় সালমা তার পিত্রালয়েই সন্তানের প্রতিপালন করেন। পরবর্তীকালে এই শিশুই আব্দুল মোত্তালেব নামে পরিচিত হন। দীর্ঘকাল যাবত হাশেমী বংশের লোকেরা এ শিশুর সন্তান পায়নি। হাশেমের মোট চার পুত্র পাঁচ কন্যা ছিল। এদের নাম নিম্নরূপ : আসাদ, আবু সায়ফি, নাযলা, আবদুল মোত্তালেব। কন্যাদের নাম, শাফা, খালেদা, যঈফা, রোকাইয়া এবং যিন্নাত। (ঐ ১ম খন্ড, পৃ-১০৭)।
 
আব্দুল মোত্তালেব, হাজীদের পানি পান করানো এবং মেহমানদারী করার দায়িত্ব হাশেমের পর তার ভাই মোত্তালেব পেয়েছিলেন। তিনিও ছিলেন তার পরিবার ও কওমের অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন। তিনি কোন কথা বললে সে কথা কেউ উপেক্ষা করতো না। দানশীলতার কারণে কোরাইশরা তাকে ফাইয়ায উপাধি দিয়েছিলেন। শায়বা অর্থাৎ আব্দুল মোত্তালেব এর বয়স যখন দশ বারো বছর হয়েছিল তখন মোত্তালেব তার খবর পেয়েছিলেন। তিনি শায়বাকে নিয়ে আসার জন্য মদিনায় গিয়েছিলেন। মদিনায় অর্থাৎ ইয়াসরেবের কাছাকাছি পৌছার পর শায়বার প্রতি তাকালে তার দুচোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠলো। তিনি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এরপর নিজের উটের পেছনে বসিয়ে মক্কার পথে রওয়ানা হলেন। কিন্তু শায়বা তার মায়ের  অনুমতি না নিয়ে মক্কায় যেতে অস্বীকার করলেন। মোত্তালেব যখন শায়বার মায়ের কাছে অনুমতি চাইলেন তখন শায়বার মা সালমা অনুমতি দিতে অস্বীকার করলেন। মোত্তালেব বললেন  ওতো তার পিতার হুকুমত এবং আল্লাহর ঘরের দিকে যাচ্ছে। একথা বলার পর সালমা অনুমতি দিলেন। মোত্তালেব তাকে নিজের উটের পেছনে বসিয়ে মক্কায় নিয়ে এলেন। মক্কায় নিয়ে আসার পর প্রথমে যারা দেখলো তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলো ভ্রাতুষ্পুত্র, হাশেমের ছেলে। এরপর থেকে শায়বা মোত্তালেব কাছে বড় হতে থাকেন এবং এক সময় যুবক হন। পরবর্তীকালে মোত্তালেব ইয়েমেনে মারা যায়। তার পরিত্যক্ত পদমর্যাদা শায়বা লাভ করেন। আব্দুল মোত্তালেব তার স্বজাতীয়দের মধ্যে এতো বেশি সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছিলেন যে, ইতিপূর্বে অন্য কেউ এতোটা লাভে সক্ষম হয়নি। স্বজাতির লোকেরা তাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো এবং তাকে অভূতপূর্ব সম্মান দিতো। (ইবনে হিশাম ১ম খন্ড, পৃ-১৩৭-১৩৮)