একাদশী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
YOGAMAYEE (আলোচনা | অবদান)
একাদশী পাতাটি পরিবর্তন করা হয়েছে।
YOGAMAYEE (আলোচনা | অবদান)
পাতাটি পরিবর্তন করা হয়েছে।
১০৫ নং লাইন:
প্রাচীনকালে ব্রহ্ম বংশে তালজঙ্ঘা নামে এক অতি পরাক্রমশালী অসুর ছিল। তার পুত্র মুর ছিল ভীষন অত্যাচারী ও ত্রাসসৃষ্টিকারী। সে চন্দ্রাবতী নামে এক রাজ্যে বাস করত। সে তার শক্তি দিয়ে সমগ্র স্বর্গরাজ্য দখল করেছিল। দেবতাদের কেউই তাকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয় নি, এমনকি ইন্দ্রদেব, বায়ুদেব এবং অগ্নি দেবও তার কাছে পরাজিত হয়ে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। এভাবে একসময় দেবতারা স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে মর্ত্যে বিচরণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। অসহায় দেবতাগণক তখন কৈলাসে ভগবান শিবের কাছে গিয়ে নিজেদের সমস্ত দূর্দশা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। দেবতাদের সমস্যা শুনে ভগবান শিব দেবতাদের ভগবান বিষ্ণুর কাছে যেতে পরামর্শ দিলেন। সমস্ত দেবতাগণ ক্ষীরসাগরের তীরে পৌঁছে ভগবান বিষ্ণুকে তাঁদের দুঃখের কথা বললেন। ভগবান বিষ্ণু সবকিছু শুনে দেবদ্রোহী মুর অসুরের প্রতি ক্রোধে ফেটে পড়লেন। তিনি মুর অসুরকে শাস্তি দেয়ার জন্য দেবতাদের সঙ্গে চন্দ্রাবতী পুরীতে গেলেন। মুর অসুর ভগবান বিষ্ণুকে দেখে ক্রোধে গর্জন করতে লাগল। তখন দেবতা ও অসুরদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হল। পরাজিত হয়ে দেবতারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গেল। যুদ্ধক্ষেত্রে ভগবান বিষ্ণু একা রইলেন। ভগবান বিষ্ণুকে একা দেখে মুর অসুর তাঁর সাথে যুদ্ধ করতে চাইল। আবার যুদ্ধ শুরু হলো। ভগবান বিষ্ণু তখন অসুরসেনাদের তাঁর দিব্য অস্ত্রের আঘাতে ধরাশায়ী করতে লাগলেন। তখন তারা প্রানভয়ে নানা দিকে পালাতে লাগল। একসময় যুদ্ধক্ষেত্রে সমস্ত অসুরসেনা ধ্বংসপ্রাপ্ত হল। একমাত্র মুর অসুরই জীবিত ছিল। সে প্রাণপণে যুদ্ধ করে ভগবান বিষ্ণুকে পরাজিত করল। তখন ভগবান বিষ্ণু মুর অসুরের সাথে বাহু যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। এই ভাবে দেবতাদের হিসেবে এক হাজার বছর যুদ্ধ চলল কিন্তু ভগবান বিষ্ণু তাকে পরাজিত করতে পারলেন না। তখন বিষ্ণুদেব বিশেষ চিন্তান্বিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করলেন। তিনি বদ্রিকা আশ্রমে গমনপূর্বক এক-দ্বার বিশিষ্ট এবং বারো যোজন (ছিয়াশি মাইল) বিস্তৃত সিংহাবতী নামক এক গুহায় আশ্রয় নিলেন। নির্জন সেই গুহার মধ্যে তিনি শয়ন করলেন। তখন সেই ভয়ংকর মুর অসুরও তাঁর পিছু নিয়ে গুহার মধ্যে প্রবেশ করল। সে বিষ্ণুদেবকে নিদ্রিত অবস্থায় দেখে ভাবতে লাগল যে, ভগবান বিষ্ণু নিশ্চয়ই তার সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে এই গুহায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাই তাঁকে এখনই বধ করতে হবে। অসুর যখন এরূপ চিন্তা করতে শুরু করতে লাগলো তখন ভগবান বিষ্ণুর দেহ থেকে রূপবতী, সৌভাগ্যশালিনী ও দিব্য অস্ত্র-শস্ত্র ধারিনী এক কন্যার সৃষ্টি হলো। শ্রীবিষ্ণুর তেজসম্ভূতা বলে তিনি মহাপরাক্রমশালী ছিলেন। মুর অসুর সেই দেবীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ শুরু করল। কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর দেবীর দিব্য তেজে অসুর ভস্মীভূত হয়ে গেল। ভগবান বিষ্ণু জেগে উঠে সেই অসুরকে ভস্মীভূত অবস্থায় দেখে বিস্মিত হলেন। তিনি আরও দেখলেন যে, তাঁর পাশে এক দিব্য কন্যা করজোড়ে দাঁড়িয়ে। বিষ্ণুদেব তাঁর কাছে ভস্মীভূত অসুরের কথা জানতে চাইলে তিনি বললেন যে, শ্রী বিষ্ণু যখন নিদ্রারত ছিলেন, তখন অসুর তাঁকে (বিষ্ণু) বধ করতে চেয়েছিল। তা বুঝেই তিনি (দেবী) অসুরকে বধ করেছেন।
 
সবকিছু শুনে ভগবান বিষ্ণু তাঁর তেজসম্ভূতা কন্যার নাম দিলেন একাদশী এবং ত্রিভুবনের সর্বত্র দেবী একাদশী যেন সর্ববিঘ্ননাশিনী ও সর্বদায়িনী রূপে পরম পূজ্য হতে পারেন সেই বর দান করলেন তাঁকে। ভগবান বিষ্ণু দেবী একাদশীর ইচ্ছে পূরণার্থে বললেন, একাদশীতে জন্ম নেয়া 'উৎপন্না' নামে পরিচিত একাদশী ব্রত পালনকারীর সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হবে। দেবী একাদশী যেহেতু শ্রীবিষ্ণুর শক্তি, তাই একাদশী ব্রত পালনকারী সকলে ভগবান বিষ্ণুরই পূজা করবে। এর ফলে তারা মোক্ষ লাভ করবে। ভগবান বিষ্ণু এই ভাবে উৎপন্না একাদশীকে বরদান করে অন্তর্হিত হলেন। <ref>http://hindutempletalk.com/2020/12/07/utpanna-ekadashi-vrat-creation-and-significance/</ref><nowiki>~~~~</nowiki>
 
== মোক্ষদা একাদশী ==
মার্গশীর্ষ মাসের শুক্লাপক্ষের পূণ্যপ্রদায়ী একাদশীকে মোক্ষদা একাদশী বলে। মোক্ষদা একাদশীর পূণ্যতিথিতে গীতা জয়ন্তী পালন করা হয়। এই দিনেই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে গীতার জ্ঞান প্রদান করেন। ব্রহ্মান্ড পূরাণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও যুধিষ্ঠিরের কথোপকথনে মোক্ষদা একাদশীর কথা বর্ণিত হয়েছে। শাস্ত্রে এই একাদশী সম্পর্কে নিম্নরূপ কাহিনী পাওয়া যায়।
 
কোন এক সময় চম্পক নগরে বৈখানস নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি ছিলেন বৈষ্ণব গুণে গুণান্বিত। তাঁর রাজ্যে অনেক বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ বাস করতেন। রাজ্যের প্রজাদের তিনি সন্তানের মত ভালবাসতেন। তার প্রজারা ছিল সবাই সমৃদ্ধশালী। তিনি একদিন স্বপ্নে দেখলেন যে, তাঁর প্রয়াত পিতা নরকে পতিত হয়ে নরক যন্ত্রণা ভোগ করছেন। তিনি তাঁর স্বপ্নের কথা রাজ্যের ব্রাহ্মনদের জানালেন এবং বললেন যে পিতাকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে দেখে তিনি মানসিকভাবে ভীষণ কষ্টে আছেন। তখন রাজা রাজ্যের ব্রাহ্মণদের কাছে তার পুর্বপুরুষদের মুক্তির উপায় জানতে চাইলেন। তখন ব্রাহ্মনগণ রাজাকে পর্বথ মুনির আশ্রমে যেতে পরামর্শ দিলেন। ব্রাহ্মনগণ রাজাকে আরো বললেন যে, সেই ত্রিকালজ্ঞ মহর্ষিই শুধুমাত্র তাঁর পূর্বপুরুষদের মুক্তির উপায় বলতে পারবেন।
 
ব্রাহ্মণদের উপদেশ শ্রবণ করে রাজা বৈখানস তাদের সঙ্গে নিয়ে পর্বথ মুনির আশ্রমে গেলেন। তাঁরা মুনিবরকে দূর থেকে সস্টাঙ্গে প্রনাম করে তাঁর নিকটে গেলেন। মুনি তখন রাজাকে তাঁর কুশল জিজ্ঞেস করলেন। তখন রাজা মুনিকে তাঁর স্বপ্নের কথা বিস্তারিত বললেন এবং নরক যন্ত্রণা থেকে পিতার মুক্তির উপায় জানতে চাইলেন। মুনি তখন ধ্যানস্থ হয়ে রাজাকে বললেন, তাঁর পিতা পূর্বজন্মের পাপের ফলে নরক যন্ত্রণা ভোগ করছেন। মুনি রাজাকে আরও বললেন যে, তিনি যদি মার্গশীর্ষ মাসের শুক্লাপক্ষের পূণ্যপ্রদায়ী মোক্ষদা একাদশী পালন করে সেই পূণ্য পিতাকে অর্পন করেন তাহলে তাঁর পিতা নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।
 
মুনির কথা শোনার পর রাজা নিজ গৃহে ফিরে এলেন। এরপর মোক্ষদা একাদশীর পূণ্য তিথিতে তিনি স্ত্রী, পুত্রসহ একাদশী ব্রত পালন করলেন। ব্রতের পূণ্যফল তিনি পিতার উদ্দেশ্যে প্রদান করলেন। তখন রাজার পিতা নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বর্গে গমন করলেন।
 
শাস্ত্রে আছে, যে ব্যক্তি এই মঙ্গলদায়িনী মোক্ষদা একাদশী ব্রত পালন করেন তার সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয় এবং মৃত্যুর পরে তার মুক্তি লাভ হয়। তাছাড়া এই একাদশীর ব্রতকথা যিনি পাঠ করেন এবং যিনি শ্রবণ করেন, উভয়েই বাজপেয় যজ্ঞের ফল প্রাপ্ত হন।<ref>http://hindutempletalk.com/2020/12/24/mokshada-ekadashi-story-and-significance/</ref>
 
== একাদশীর পারন মন্ত্র ==