ওহাইও নদী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
তথ্যছক সংযোজন
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
তথ্যসূত্র +
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৬৪ নং লাইন:
}}
 
'''ওহাইও নদী''' ({{lang-en|Ohio River}}) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ৯৮১ মাইল (১,৫৭৯ কিলোমিটার) এবং এটি দক্ষিণ ও মধ্য-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিদ্যমান। এরি হ্রদের দক্ষিণে অবিস্থত পশ্চিম পেনসিলভেনিয়া থেকে এ নদী দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে ইলিনইসের দক্ষিণ প্রান্তে [[মিসিসিপি নদীতেনদী]]তে গিয়ে মেশে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম নদী এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত মিসিসিপি নদীর বৃহত্তম শাখা নদী যা পশ্চিম আমেরিকা থেকে পূর্ব আমেরিকাকে বিভক্ত করে।<ref>{{cite web|url=https://pubs.usgs.gov/of/1987/ofr87-242/|title=Largest Rivers in the United States|publisher=[[United States Geological Survey]]|accessdate=13 December 2019}}</ref> এই নদীটি আমেরিকার ছয়টি রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এর শাখা-প্রশাখা মোট ১৪টি রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিদ্যমান। এর বৃহত্তম শাখা নদীর নাম [[টেনেসি নদী]] যা দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকার বেশ কয়েকটি প্রদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি তিন মিলিয়ন মানুষের [[পানীয় জল|পানীয় জলের]] যোগান দেয়।<ref>{{cite web|url=http://www.ohioriverfdn.org/education/ohio_river_facts/|title=Ohio River Facts}}</ref>
 
ওহাইও নদীর নিম্ন অঞ্চল লুইভাইল শহরের ঠিক নীচে অবস্থিত যেখানে বেশ কিছু জলপ্রপাত বিদ্যমান যাদের 'ফল অফ ওহাইও' বলা হয়। এখানে ২৬ ফিট উচ্চতাবিশিষ্ট ও প্রায় ২ মাইল জুড়ে ঝরণাধারা অবস্থিত এবং এই ধারাটি [[চুনাপাথর|চুনাপাথরের]] শক্ত আবরণ বিশিষ্ট ভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই এলাকায় নৌকা চালনা ও পথ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই ১৮২৫ থেকে ১৮৩০ সালের মধ্যে এখানে 'লুইভাইল অ্যান্ড পোর্টল্যান্ড ক্যানেল' নামের কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ করা হয় কিন্তু কিছু যান্ত্রিক সমস্যার কারণে এ বাঁধ দু'টি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা তৈরী হয়। একারণে ১৯৬০ সালে আমেরিকান সামরিক কর্প ইঞ্জিনিয়ার্স (The U.S. Army Corps of Engineers) এ বাঁধগুলোতে প্রচুর পরিমাণে উন্নতি সাধন করে বাঁধগুলোকে কয়েকটি আত্যাধুনিক ও আরো বেশি শক্তিশালী বাঁধে পরিণত করে যাদের বর্তমানে একত্রে 'দ্য ম্যাক-অ্যালপাইন লকস অ্যান্ড ড্যামস' নামে অভিহিত করা হয়। এর ফলে এ অঞ্চলটিতে বাণিজ্যিকভাবে নৌপরিবহন শুরু করা সম্ভব হয়েছে যার মাধ্যমে পিটসবার্গের 'ফর্ক অফ ওহাইও' থেকে মিসিসিপি নদীর নিউ ওরল্যান্ড বন্দর পর্যন্ত যাওয়া যায়। এ নদীটিকে ম্যাসন-ডিক্সন লাইনের (পেন্সিলভিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, পশ্চিম ভারজিনিয়া ও ডেলাওয়্যারের একটি সীমানাপ্রান্ত) পশ্চিম প্রান্তের একটি অংশ বলা ধারণা করা হয় কারণ এটি পেন্সিলভিনিয়া[[পেন্সিলভেনিয়া]]ম্যারিল্যান্ডকে[[ম্যারিল্যান্ড]]<nowiki/>কে বিভিক্ত করে। বন্দিজীবন থেকে মুক্তির জন্য একসময় অসংখ্য আমেরিকান দাস এ নদীটিকে পালিয়ে যাওয়ার পথ হিসেবে ব্যহার করতো।
 
ওহাইও নদী একটি রূপান্তরিত জলবায়ু অঞ্চল কারণ এর অববাহিকা আর্দ্র উষ্ণমণ্ডলীয় এবং আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখানে শীত ও গ্রীষ্মপ্রধান উভয় জলবায়ুর জীব বিদ্যমান। শীতকালে এখানকার [[পিটসবার্গ]] এলাকায় নিয়মিত তুষারপাত হয় যেখানে [[সিনসিনাটি]] এবং লুইভলে[[লুভল|লুভলে]] তুষারপাত খুব একটা হয়ই না। আবার দক্ষিণে মিসিসিপির নিকটবর্তী ওহাইও নদীর কেনটাকি বিভাগের প্যাডুকাহ এলাকা সারা বছর বরফমুক্ত থাকে, অর্থাৎ এখানে সারাবছর কোন তুষারপাত হয় না।
 
==নামের ব্যুৎপত্তি==
"ওহাইও" নামটি সেনেকা ভাষা থেকে এসেছে (দক্ষিণ আমেরিকায় প্রচলিত একটি ইরোকোয়ান ভাষা)। এ ভাষায় প্রচলিত ওহি-ইও-হ শব্দটি ভালো নদী (good river),<ref name="Bright">{{cite book |last=Bright |first= William |author-link=William Bright |year=2004 |url = https://books.google.com/books?id=5XfxzCm1qa4C&pg=PA344 |title=Native American Placenames of the United States |publisher=[[University of Oklahoma Press]] |page=344 |ISBN=978-0-8061-3598-4 |access-date=April 11, 2011 }}</ref><ref>{{cite web |url = http://americanindianstudies.osu.edu/ohio.cfm |title=Native Ohio |access-date=February 25, 2007 |website=American Indian Studies |publisher=[[Ohio State University]] |archiveurl = https://web.archive.org/web/20070202230727/http://americanindianstudies.osu.edu/ohio.cfm <!-- Bot retrieved archive --> |archivedate = February 2, 2007 |quote=Ohio comes from the Seneca (Iroquoian) ohiiyo' 'good river'}}</ref> দুর্দান্ত নদী (Great river) বা বৃহৎ খাঁড়ি (large creek) অর্থে ব্যবহৃত হয়।<ref>{{cite web |url = http://www.ohiohistorycentral.org/ohio_quick_facts.php |title=Quick Facts About the State of Ohio |publisher=Ohio History Central |access-date=July 2, 2010 |quote=From Iroquois word meaning 'great river'}}</ref><ref name="mithun312">{{cite book |first=Marianne |last=Mithun |year=1999 |chapter=Borrowing |chapter-url = https://books.google.com/books?id=ALnf3s2m7PkC&pg=PA311 |pages=311–3 |title=The Languages of Native North America |publisher=Cambridge University Press |location=Cambridge |ISBN = 978-0-521-29875-9 |quote=Ohio ('large creek')}}</ref> এ শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে ওহিই-ইও শব্দে পরিণত হয় এবং এটি পরিবর্তনের ধারায় বর্তমান সময়ে এসে ওহাইও নামধারণ করেছে।
 
আমেরিকার প্রাচীন মায়ামি-ইলিনইস ভাষায়ও ওহাইও নদীর আরেকটি নাম পাওয়া যায়-'মোসোপেলিয়াসিপি' যার অর্থ 'মোসোপেলিয়া উপজাতির নদী'। ওকলাহোমা এলাকার শনি ভাষায় এ নামটি সংক্ষিপ্ত হয়ে "পোলেসিপি", "পেলেসন", "পেলে সিপি" এবং "পেরে সিপি" এর মতো বিভিন্ন রূপধারণ করে যা শেষ পর্যন্ত পেলিসিপি নামে পরিণত হয় যা "Pelisipi", "Pelisippi" এবং "Pellissippi" এ তিনটি বানানে ব্যবহার করা হতো। ওহাইও নামটি আসার আগে ভার্জিনিয়া ও টেনেসির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ওহাইও নদী ও ক্লিঞ্চ নদীকে বিভিন্ন সময় পেলিসিপি নামে অভিহিত করা হতো। নদীটির প্রধান নকশায় ১৭৮৪ সালের ভূমি আদেশ অনুযায়ী থমাস জেফারসন ওহাইও নদীর দক্ষিণ অংশটিকে পেলিসিপিয়া নামক একটি রাজ্যে পরিণত করার প্রস্তাব দেন যেখানে পূর্ব কেনটাকি, ভার্জিনিয়া এবং পশ্চিম ভার্জিনিয়ার কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল, তবে এটি কখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
 
 
==ইতিহাস==
ওহাইও নদীর উপত্যকা বরাবর একসময় অসংখ্য সভ্যতা গঠিত হয়েছিল যে কারণে আদি আমেরিকার ইতিহাসে ওহাইও নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কয়েক হাজার বছর ধরে আদি আমেরিকান জাতি এ নদীটিকে একটি প্রধান পরিবহন এবং বাণিজ্য পথ হিসাবে ব্যবহার করতো। এর অববাহিকা অনেকগুলো সম্প্রদায়কে যুক্ত করেছিল। ইউরোপীয় দখলের পাঁচ শতক আগে মিসিসিপীয় সংস্কৃতির সমাজ বেশ কিছু আঞ্চলিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং কৃত্রিমভাবে পাথর ও মাটির স্তূপ দিয়ে অনেকগুলো সীমান্তবাঁধও নির্মাণ করে যাদের আর্থয়ার্ক মাউন্ডস() বলা হয়। এদের মধ্যে কিছু ঐতিহাসিক মাউন্ডস এখনো বিদ্যমান যেমন, এভান্সভিলের নকটবর্তী অ্যাঞ্জেল মাউন্ডস, ইন্ডিয়ানা, মিসিসিপি উপত্যকায় বিদ্যমান বেশ কয়েকটি মাউন্ডস, এলাকাটির দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত বিভিন্ন মাউন্ডস ইত্যাদি। ওহাইও উপত্যকায় বসবাসকারী ওমেজ,ওমাহা,পংকা ও কো নামের উপজাতি উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আগত ইরকোইস উপজাতির বসতির স্থাপনের কারণে উপত্যকার পশ্চিম অঞ্চলে ১৭ শতকের দিকে স্থানান্তরিত হয়ে নিজেদের গ্রাম স্থাপন করেছিল যা বর্তমানের মিসৌরি, আর্কান্সাস এবং ওকলাহোমা রাজ্যে পরিণত হয়েছে।
 
এ নদীটিতে বিভিন্ন সময়ে নানান অভিযাত্রী অভিযান চালিয়েছিল। এঁদের মধ্যে ১৬৫৪ ও ১৬৬৪ এর মাঝামাঝি সময়ে আগত ভার্জিনিয়ান ইংরেজ আব্রাহাম উড, ১৬৬৯ এ আগত ফরাসী অভিযাত্রী রবার্ট ডে লা স্যালে এবং ১৬৭১ সালের কর্নেল উডের পৃষ্ঠপোষকতায় ভার্জিনিয়ানদের দুটি অভিযান: ব্যাটস ও ফ্যালামের অভিযান উল্লেখযোগ্য। এ নদীটি দৈর্ঘ্য বরাবর সর্বপ্রথম অতিক্রম করেন আরনোট ভেইলি যিনি জাতিতে ডাচ ছিলেন এবং আলেগহেনি নদী থেকে মিসিসিপির শুরুর অংশ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ওহাইও নদী পার করেছিল।
৮৩ নং লাইন:
১৭৪৯ সালে গ্রেট বৃটেন এ এলাকায় বসতি ও ব্যাবসা করার উদ্দেশ্যে ওহাইও কোম্পানি স্থাপন করে। পর্যায়ক্রমে ইন্ডিয়ান বাণিজ্যের সময়ে পেনসিলভেনিয়া ও ভার্জিনিয়া থেকে দু'টি বৃহৎ বৃটিশ কলোনি এ অঞ্চলে বসতি স্থাপনের জন্য বিদ্রোহ শুরু করে। আলেগহেনি পর্বতে বসবাসকারী বৃটিশ এবং ওহাইও উপত্যকার ফরাসীদের মাঝে পিটসবার্গের এলাকাটি নিয়ে এ বিদ্রোহ চলতে থাকে যাকে ফ্রেঞ্চ ও ইন্ডিয়ান যুদ্ধ বলা হয় এবং এটি এভাবেই চলতে থাকলে বৃটেনে চলতি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যবর্তী ঐতিহাসিক সাত বছরের যুদ্ধের একটি অংশে পরিণত হয়ে যেত বলে ধারণা করা হয়। তবে তার আগেই ফ্রান্স আত্নসমর্পণ করে এলাকাটি পরিত্যাগ করে এবং স্থায়ীভাবে বৃটেন এখানে কলোনি স্থাপন করে। ১৭৬৮ সালে ফোর্ট স্ট্যানউইংক্সের চুক্তি অনুযায়ী কেনটাকি এলাকাকে একটি আলাদা রাজ্যে পরিণত করা হয় এবং ওহাইও নদীকে আমেরিকান ইন্ডিয়ান বা রেড ইন্ডিয়ান উপজাতির প্রদেশের সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বৃটেনের দখলকৃত উত্তর আমেরিকায় ১৭৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কুয়েবেক আইন অনুসারে কানাডার কুয়েবেক বিভাগ দ্বারা মিসিসিপি নদীর পূর্বাংশ ও ওহাইও নদীর উত্তরাংশ পুনরুদ্ধার করা হয় এবং ফলস্বরূপ, ওহাইও নদী কানাডার দক্ষিণ দিকের একটি সীমানায় পরিণত হয়। এরপর ওহাইও নদীর দক্ষিণে সংঘটিত লর্ড ডানমোরের যুদ্ধের কারণে কুয়েবেকের উত্তরাঞ্চল বৃটিশদের দখলে চলে যায়। তবে ১৭৮৩ সালের প্যারিস চুক্তির আদেশ অনুযায়ী সমগ্র ওহাইও উপত্যকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রদান করা হয়।
 
১৮১৮ সালে কাম্বারল্যান্ড, ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া (বর্তমান পশ্চিম ভার্জিনিয়া)-এর উপর দিয়ে নির্মিত রাস্তাটি ওহাইও নদীর এলাকাগুলোর অর্থনৈতিক সংযোগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দিয়েছিল কারণ এ রাস্তাটির জন্য পোটোম্যাক নদী থেকে ওহাইও পর্যন্ত যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে যায়। ১৮৪৭ থেকে ১৮৪৯ এর মধ্যে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার হুইলিং শহরে ওহাইও থেকে পশ্চিমাঞ্চলগুলোতে যাতায়াতের সুবিধার জন্য নদীটির উপর একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয় যা ১৮৫১ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাঁধ হিসেবে বিদ্যমান ছিল । আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় এই বাঁধটি সৌভাগ্যবশত অক্ষত থেকে যাওয়ায় বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন যানবাহন পরিবহনের বাঁধ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
 
ওহাইও নদীর প্রবাহ পশ্চিমমুখী হওয়ায়, পশ্চিমের পেন্সিলভেনিয়া থেকে আগত ভ্রমণকারীদের জন্য এটি যাতায়াতের একটি সুবিধাজনক মাধ্যমে পরিণত হয়। পর্যায়ক্রমে বসতি স্থাপনকারীরা এর উত্তরে মিসিসিপি থেকে সেইন্ট লুইস, মিসৌরী ইত্যাদি এলাকায় বসতি স্থাপন করে। ১৯ শতকের দিকে নদীপথের জলদস্যুদের আগমন শুরু হয়। জলদস্যু স্যামুয়েল মেসন, ইলিনইসের কেভ-ইন-রকের এলাকা থেকে বের হয়ে অভিযাত্রীদের উপর হামলা চালিয়ে তাদের উপর হত্যাকান্ড, খাবার চুরি এবং নৌকাগুলো ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে চলে যেত। এরপর আমেরিকা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় মাইক ফিঙ্ক নামক একজনের নৌচালকের মাধ্যমে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর তলদেশে কিল নামের এক ধরনের কাঠ ও লোহার পাতের ব্যবহার শুরু হয় যা নৌপরিবহনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে শুরু করে।
 
ওহাইও রাজ্য, ইন্ডিয়ানা, ইলিনইস এবং আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পূর্বে অবস্থিত মুক্ত রাজ্য ও দাস রাজ্যের সীমানাপ্রান্ত ছিল ওহাইও নদী। একসময় ওহাইও নদী ও মিসিসিপি নদীর মাধ্যমে দক্ষণাঞ্চলের বিশেষত কেনটাকি রাজ্যের অসংখ্য মানুষকে দাস হিসেবে তুলা ও চিনি আবাদের খাতে কাজ করার জন্য সুদূর দক্ষিণে বিক্রি করে দেয়া হতো এবং এই দাশদের একটি বিখ্যাত প্রলাপ ছিল "নদীর তীরে বিক্রিত" ("sold down the river")। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের আগে এবং যুদ্ধ চলাকালীন নদীটিকে এই দাসেরা 'জর্ডান নদী' নামে অভিহিত করতো এবং এর নীচে অবস্থিত রেলপথ অনেক দাস পালানোর রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করেছিল। প্রায় কয়েক হাজার দাস এভাবে বেড়িয়ে গিয়ে উত্তর-দক্ষিণের কোন সীমানাকে পালানোর জায়গা হিসেবে বিবেচনা না করে ওহাইও নদীর উপর দিয়ে এর উত্তর দিকের এলাকায় পাড়ি জমাতো। এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে হ্যারিট বিচার স্টো-এর বিশ্ববিখ্যাত দাসত্ববিরোধী উপন্যাস 'টম চাচার কুঁড়ে' (Uncle Tom's Cabin) রচিত হয়েছিল। নোবেল পুরষ্কারপ্রাপ্ত টম মরিসনের রচিত আরেকটি বিখ্যাত এরকম উপন্যাসের নাম 'প্রিয়জন' (Beloved) যা পরবর্তীতে চলচ্চিত্র হিসেবেও মুক্তি পায়।
 
ভার্জিনিয়া এর ঔপনিবেশিক দলিলে ওহাইও নদীটিকে নিজের মালিকানাধীন হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু কংগ্রেস ওহাইও নদীকে উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম ভার্জিনিয়া ও কেনটাকির অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে, ফলে ওহাইও নদীর বৃহত্তম আবাসিক দ্বীপ হুইলিং দ্বীপটি পশ্চিম ভার্জিনিয়ার অন্তর্গত হয়ে যায়। এরপর ১৯৮০ সালের সময় কেনটাকি ইন্ডিয়ানা রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে কারণ এর অসমাপ্ত 'মার্বেল হিল' পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হয়ে গেলে এর সকল আবর্জনা ওহাইও নদীতে মিশে এটিকে চরমভাবে দূষীত করতো। একইভাবে, ইলিনইসের পুরো নদী নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে রেখে মেট্রোপলিসে অবস্থিত একটি রিভারবোট ক্যাসিনোতে কর আদায় করার অধিকারের বিষয়ে কেনটাকি ইলিনইসের বিরুদ্ধেও ১৯৯০ এর সময়ে মামলা দায়ের করে। অন্যান্য কিছু রাজ্যের ব্যাপারেও কেনটাকি প্রতিবাদ জানানোর কারণে এক সময়ে নদীটির অনেকগুলো পথ সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন আইনে পরিবর্তন আনা হয় এবং ইলিনইসে ১৯৯৯ ও ইন্ডিয়ানাতেও ২০০২ সালের মধ্যে নতুন এবং যথাযথ আইন প্রবর্তন করা হয়।
 
১৫ই ডিসেম্বর, ১৯৬৭ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার প্লিস্যান্ট পয়েন্টে অবস্থিত সিলভার ব্রিজ ওহাইও নদীর উপর ভেঙ্গে পড়ে এবং ভাঙ্গনের সময় ৪৬জন মানুষের মৃত্যু ঘটে। এ ব্রিজটি ১৯২৯ সালে স্থাপিত হয় এবং এর ক্ষমতার অতিরিক্ত ভারের যান এর উপর দিয়ে যাতায়াতের কারণে এটি ১৯৬৭ সালে ভেঙ্গে যায়। তবে ১৯৬৯ সালে এ স্থান হতে এক মাইল দূরে এ ব্রিজটি আবার নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও রয়েছে ওহাইও জাতীয় বন্যজীবন সংরক্ষণ অঞ্চল বা Ohio National Wildlife Conservation Area যা ১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে ইন্ডিয়ানা প্রদেশের ক্লার্ক্সভাইলে স্থাপিত হয়।
৯৫ নং লাইন:
 
==ভূগোল==
ওহাইও ও আলেগহেনি নদীর সংযুক্ত অবস্থায় মোট দৈর্ঘ্য ১,৩১০ মাইল বা ২,১১০ কিলোমিটার এবং মিসিসিপি নদীর সকল শাখা নদীর মধ্যে এ নদীটি সর্বাধিক পরিমাণ পানি পরিবহন করে। প্রাচীনকালে এখানকার রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসী, প্রথমদিকে আগত অভিযাত্রী এবং বসতি স্থাপনকারীরা আলেগহানি নদীকে ওহাইও নদীর একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করতেন। পিটসবার্গে আলেগহেনি ও মনোঙ্গাহেলা নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত দ্য ফর্ক্স (The forks) একসময় একটি সশস্ত্র সামরিক অবস্থান ছিল যেখানে বর্তমানে পেন্সিলভেনিয়ার 'স্টেট পয়েন্ট পার্ক' তৈরী করা হয়েছে। এই স্টেট পয়েন্ট পার্কের অবস্থানটিতেই আলেগহেনি ও মনোঙ্গাহেলা নদীর মোহনা থেকে ওহাইও নদীর উৎপত্তি ঘটেছে। এ উৎপত্তিস্থল থেকে এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে আলেগহেনি ও বিভার প্রদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে পূর্ব লিভারপুল, ওহাইও প্রদেশ, চেস্টার, পশ্চিম ভার্জিনিয়া, ওহাইওভাইল ও পেন্সিলভেনিয়ার নিকটবর্তী পশ্চিম ভার্জিনিয়া–ওহাইও-পেন্সিলভেনিয়া রাজ্য তিনটির সংযুক্ত সীমান্তপ্রান্ত দিয়ে ওহাইও নদীর অববাহিকার একটি অংশ আলেগহেনি ও বিভার প্রদেশে প্রবেশ করা আগে দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিম দিকে বিভক্ত হয়ে গিয়ে প্রবাহিত হয়। এই সংযুক্ত সীমান্তপ্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার মাধ্যমে এ নদী পশ্চিম ভার্জিনিয়া এবং ওহাইও রাজ্যের মধ্যবর্তী সীমানা এবং পশ্চিম ভার্জিনিয়ার হুইলিং শহরের উজানের সীমান্ত তৈরি করে। এখান থেকে অববাহিকাটি দক্ষিণ-পশ্চিম এবং এরপরে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমের দিকে ওহাইও প্রদেশের সিনসিনাটি শহর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। এরপর এ অববাহিকার দৈর্ঘ্যের বেশিরভাগ অংশ পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে বেঁকে গিয়ে পশ্চিম ভার্জিনিয়া ও কেনটাকির উত্তর সীমানা, ওহাইও, ইন্ডিয়ানা এবং ইলিনইসের দক্ষিণ সীমানা গঠন করে। এ স্থান হতে অববাহিকাটি প্রবাহিত হয়ে ইলিনইসের কায়রো শহরে মিসিসিপি নদীর সাথে যুক্ত হয় এবং এদের সংযোগস্থলটি ইলিনইস প্রদেশের সর্বনিম্ন অঞ্চল যার উচ্চতা মাত্র ৩১৫ ফুট বা ৯৬ মিটার।
 
ওহাইও নদী মিসিসিপি নদীতে এসে মিলিত হয় যা মেক্সিকান উপসাগর হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে পড়ে। আমেরিকার যত নদীর পানি মহাসাগরে গিয়ে মুক্ত হয় তাদের মধ্যে ওহাইও-মিসিসিপির পানির পরিমাণ আমেরিকার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, দৈর্ঘ্যের দিক থেকে এরা একত্রে দশম অবস্থানে রয়েছে এবং জলপ্রপাত হতে মহাসাগরে গিয়ে পতিত নদীর মধ্যে ওহাইও অষ্টম বৃহত্তম নদী। এটি মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের হ্রদপ্রধান রাজ্যগুলিকে দক্ষিণের তুলনামূলক উঁচু অঞ্চলে রাজ্যগুলি থেকে পৃথক করে রেখেছিল এবং এ রাজ্য দু'টি আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় সীমান্ত রাজ্য নামে পরিচিত ছিল, যদিও এ রাজ্য দু'টি মূলত দাসরাজ্য ছিল।
১০৫ নং লাইন:
 
==ভূতত্ত্ব==
ভূতাত্ত্বিক গবেষণা মতে, ওহাইও নদীটি বেশ তরুণ। নদীটি সৃষ্টি হওয়ার আগে উত্তর আমেরিকার একটি বিশাল অংশ নোনা পানির হ্রদ দিয়ে বেষ্টিত ছিল যার দৈর্ঘ্য ছিল ৪০০ মাইল এবং প্রস্থ ছিল ২০০ মাইল। ওহাইও উপত্যকার পাথুরে তলদেশটি মূলত এই সময়ে সৃষ্টি হয়। আড়াই থেকে তিন মিলিয়ন বছর আগে ওহাইও নদীর একটি খন্ডিত কাঠামো সৃষ্টি হতে শুরু করে। এ অঞ্চলের বরফ যুগে (Ice age) সৃষ্ট হিমবাহগুলো হতে বর্তমানের কানওহা, স্যান্ডি, কেনটাকি, গ্রিন, কাম্বারল্যান্ড ও টেনেসির সরু শাখা নদীগুলো তৈরী হয়েছিল এবং এগুলো থেকেই উত্তরপ্রান্তে ওহাইও নদীর মূল নদীপথটি এর শাখা নদী মোনঙ্গাহেলা এবং অ্যালেগহেনিসহ গঠিত হয়। এই সরু শাখা নদীগুলোর মধ্যে টিইজ নদী ছিল বৃহত্তম এবং বর্তমান যুগে এ প্রাচীন টিইজ নদীর ভগ্নাংশের উপর দিয়েই ওহাইও নদী প্রবাহিত হচ্ছে। প্রাচীন এসব নদীর বেশিরভাগই বিভিন্নভাবে অন্য নদীর মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ওহাইও নদীর যে অংশটি দক্ষিণ-পশ্চিমে পিটসবার্গ থেকে ইলিনইসের কায়রো পর্যন্ত প্রবাহিত হয়, সেটি প্রায় দশ হাজার বছরের মতো পুরনো।
 
==== '''উচ্চ ওহাইও নদী-'''====
ওহাইও নদীর উঁচু অঞ্চলটি সৃষ্টি হয় যখন বরফ যুগের একটি হিমবাহের পানি বন্যার মতো টিইজ নদীর দক্ষিণ-মুখী একটি শাখা নদীতে উপচে পড়ে যায়। এ ঘটনাটির ফলে স্টিউবেনভাইল ও মারিয়েটা নামের দু'টি নদীও সৃষ্টি হয়েছিল বর্তমান যুগে যাদের কোন অস্তিত্ব আর নেই। ওহাইও নদীর উচ্চভূমিটি সৃষ্টি হওয়ার পর অনেক ছোট নদী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, তবে কিছু নদী পরিবর্তিত অববাহিকায় প্রবাহিত হতে শুরু করে। এই পরিত্যাক্ত নদীগুলোর অনেক উপত্যকা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এখনো দেয়া যায় যেমন, মারিয়েটা শহরের মাঝখানে অবস্থিত ওহাইও ও পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় বিদ্যমান পর্বতসমূহ, ওহাইও-পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আরো কিছু উপত্যকা এবং হানিংটন শহরের কয়েকটি উপত্যকা।
 
==== '''মধ্য ওহাইও নদী-'''====
১২২ নং লাইন:
ওহাইও নদীর তীরে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশের বিভিন্ন শহর ও নগর বিদ্যমান। এর তীরে অবস্থিত বৃহত্তম শহর পিটসবার্গ যা পেন্সিলভেনিয়ার ২য় বৃহত্তম শহর। এছাড়াও রয়েছে ওহাইও প্রদেশের ৩য় বৃহত্তর শহর সিনসিনাটি, কেনটাকির বৃহত্তম শহর লুইভাইল, ইন্ডিয়ানার ৩য় বৃহত্তম শহর এভান্সভাইল, কেনটাকির ৪র্থ বৃহত্তম শহর উয়েন্সবোরো, পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ৫টি বৃহত্তম শহরের মধ্যে ৩টিই এখানে অবস্থিত যথাক্রমে ২য় বৃহত্তম শহর হান্টিংটন, ৪র্থ বৃহত্তম শহর পার্কারসবার্গ ও ৫ম বৃহত্তম শহর হুইলিং। ওহাইও নদীর সীমান্ত প্রদেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ইলিনইসের কোন উল্লেখযোগ্য বড় শহর এ নদীর তীরে অবস্থিত নয়। এগুলো ছাড়াও এখানে প্রায় কয়েকশো নগর, গ্রাম এবং সমন্বয়হীন জনবহুল এলাকা রয়েছে যাদের বেশিরভাগই আকারে অনেক ছোট।
 
ওহাইও নদীর তীরে অবস্থিত অনেক নগর ও শহর এদের নিজস্ব রাজ্যের প্রাচীনতম নগর ও শহরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবং আমেরিকার আপালিশিয়ান পর্বতমালার পশ্চিমে অবস্থিত এ প্রাচীন শহরও নগরীগুলোর মধ্যে রয়েছে-
 
১৭৪৮ সালে আবিষ্কৃত ইলিনইসের পুরাতন শনিটাউন,