ব্রিটিশদের তিব্বত অভিযান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
তথ্যসূত্র যোগ/সংশোধন
সম্পাদনা সারাংশ নেই
২৯ নং লাইন:
==ছুমিক শেনকোর বিপর্যয়==
[[File:Younghusband-team-1904.jpg|thumb|১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে লাসার পথে ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ডের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্য অফিসার]]
১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে মার্চ [[জেমস রোনাল্ড লেসলি ম্যাকডোনাল্ড]] দ্বারা প্রেরিত অগ্রসর বাহিনী তিন হাজার তিব্বতী সেনার সম্মুখীন হয়। তিব্বতীরা {{রূপান্তর|5|ft|m|adj=mid|-উচ্চ}} একটি পাথরের দেওয়ালের পেছনে পুরোনো যুগের [[ম্যাচলক]] বন্দুক নিয়ে অবস্থান করে রাস্তা অবরোধ করে থাকেন।<ref name=Fleming>Fleming, Peter (1961) [https://archive.org/details/bayonetstolhasat012628mbp ''Bayonets to Lhasa''] London: Rupert Hart-Davis (reprinted by Oxford U.P., Hong Kong, 1984, {{আইএসবিএন|0-19-583862-9}})</ref>{{rp|১৪৬}} তারা ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে না চাইলেও রাস্তা ছেড়ে দিতেও রাজী ছিলেন না। [[ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ড|ইয়ংহাজব্যান্ড]] তার সৈন্যদেরকে তিব্বতীদের নিরস্ত্র করে এগিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন। তিব্বতীদের যুদ্ধ করার জন্য উস্কে দিতে একটি নকল আক্রমণ করা হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=YBonAQAAIAAJ&pg=RA2-PA90|শিরোনাম=Infantry Journal|তারিখ=1905|প্রকাশক=United States Infantry Association.|ভাষা=en}}</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=Z6l92oqqsfMC&pg=PA98|শিরোনাম=Bayonets to Lhasa: The British Invasion of Tibet|শেষাংশ=Fleming|প্রথমাংশ=Peter|তারিখ=2012-07-03|প্রকাশক=Bloomsbury USA|ভাষা=en|আইএসবিএন=978-1-84885-698-1}}</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=JsCDCgAAQBAJ&pg=PT84|শিরোনাম=Duel in the Snows|শেষাংশ=Allen|প্রথমাংশ=Charles|তারিখ=2015-11-19|প্রকাশক=John Murray Press|ভাষা=en|আইএসবিএন=978-1-4736-2754-3}}</ref> এই আক্রমণে তিব্বতী সেনাপতির ছোড়া গুলিতে একজন [[শিখ]] সৈনিক আহত হলে ব্রিটিশ সৈন্যরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। যুদ্ধের সময় উপস্থিত [[রয়টার্স|রয়টার্সের]] সাংবাদিকের বর্ণনানুসারে তিব্বতীরা এরপর ব্রিটিশদের দিকে এগিয়ে গেলে তিন দিক থেকে ব্রিটিশ সেনা তাদের [[ম্যাক্সিম বন্দুক]] দিয়ে গুলি করে হত্যা করে। একটি উচু দেওয়ালের পেছনে থাকায় কোন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হননি।<ref name=Allen/>{{rp|১১১-১২০}} প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ তিব্বতী নিহত হন এবং ১৬৮ জন আহত হন যাদের মধ্যে ১৪৮ জন ব্রিটিশদের ফিল্ড হাসপাতালে বন্দী হিসেবে চিকিৎসালাভ করে বেঁচে যান। এই লড়াইয়ে মাত্র বারো জন ব্রিটিশ সৈন্য আহত হন।<ref name=Powers/>{{rp|৮১}}
 
== গ্যানৎসের যুদ্ধ ==
[[File:British expedition to Tibet map.jpg|thumb|ব্রিটিশদের তিব্বত অভিযানের রুশ ম্যাপ]]
এই প্রথম বাধাকে সহজে পার করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এক সপ্তাহ পরে কাংমা অঞ্চলের পরিত্যক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি অধিকার করে ৯ই এপ্রিল একটি পার্বত্য নদী গর্জ পেরোনোর চেষ্টা করে। [[জেমস রোনাল্ড লেসলি ম্যাকডোনাল্ড|ম্যাকডোনাল্ড]] তার গুর্খা সৈন্যদের গর্জটির খাড়া পাহাড়গুলিতে আরোহণ করে ঐ পাহাড়গুলিতে ঘাটি গেঁড়ে থাকা তিব্বতী সৈন্যদের হঠিয়ে দিতে আদেশ করেন। প্রথমদিকে প্রচণ্ড তুষারঝড়ে তাদের সঙ্গে মূল বাহিনীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও গুর্খারা তিব্বতীদের থেকে উচ্চ স্থানে ঘাটি তৈরী করতে সক্ষম হয়। ওপর থেকে গুর্খা এবং নীচ থেকে শিখ সেনারা আক্রমণ করলে তিব্বতীরা প্রায় দুইশত জন মৃতকে ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। অন্যদিকে ব্রিটিশ শিবির হতাহতের সংখ্যা ছিল নগণ্য। তিব্বতী সেনারা গ্যানৎসে শহর ছেড়ে চলে যাওয়ায় ব্রিটিশরা ১১ই এপ্রিল বাধায় শহর অধিকার করে। শহরের বৌদ্ধবিহারের মূল্যবান মূর্তি ও পুঁথিপত্র ব্রিটিশ সেনা আধিকারিকেরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। ব্রিটিশ আধিকারিকেরা চাংলো নামক এক অভিজাতের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পাঁচ দিন পরে [[জেমস রোনাল্ড লেসলি ম্যাকডোনাল্ড|ম্যাকডোনাল্ডের]] আদেশে মূল বাহিনী সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য চুম্বি অঞ্চলে চলে যায়।<ref name=Allen/>{{rp|১৪৯}} [[ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ড|ইয়ংহাজব্যান্ড]] [[লাসা]] পৌছোনোর জন্য ব্যগ্র ছিলেন এবং এই মর্মে অনুমতি চেয়ে তিনি [[লন্ডন|লন্ডনে]] তারবার্তা পাঠান। কিন্তু ছুমিক শেনকোতে তিব্বতীদের বিপর্যয়ের খবর ইংল্যান্ডের জনগণের মধ্যে ক্রোধের সঞ্চার করেছিল। [[দ্য স্পেক্টেটর]] এবং [[পাঞ্চ (পত্রিকা)|পাঞ্চের]] মতো বিখ্যাত সংবাদপত্রগুলি আধুনিক প্রযুক্তিবিজ্ঞানের দ্বারা নির্মিত অস্ত্র দ্বারা প্রায় নিরস্ত্র তিব্বতীদের হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রতি তীব্র সমালোচনা করে। এই সময় [[ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ড|ইয়ংহাজব্যান্ডের]] নিকট খবর আসে যে, তিব্বতী সেনা গ্যানৎসে শহর থেকে ৪৫ মাইল পূর্বে কারো গিরিবর্ত্মে জড়ো হয়েছে।<ref name=Allen/>{{rp|১৫৬}} লেফট্যানেন্ট কর্ণেল হার্বার্ট ব্র্যান্ডার [[ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ড|ইয়ংহাজব্যান্ডের]] সঙ্গে পরামর্শ করে কারো গিরিবর্ত্মে তিব্বতীদের আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তার এই সিদ্ধান্ত যখন চুম্বিতে অবস্থিত [[জেমস রোনাল্ড লেসলি ম্যাকডোনাল্ড|ম্যাকডোনাল্ডের]] নিকট পৌঁছয় তখন তিনি তা রদ করার চেষ্টা করেন কন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।<ref name=Allen/>{{rp|১৫৭-১৫৯}} ৫-৬ই মের এই যুদ্ধে অষ্টম গুর্খা এবং বত্রিশতম শিখ পায়োনিয়র্সের জওয়ানেরা প্রায় ৫৭০০ মিটার উচ্চতার এই গিরিবর্ত্মে আরোহণ করে জয়লাভ করে।<ref name=Allen/>{{rp|১৭৬}} এই একই সময় প্রায় ৮০০ তিব্বতী সেনারা চাংলোর ভবন আক্রমণ করে ১৬৩ জন ব্রিটিশ সৈন্যকে নিহত করতে সক্ষম হন। কারো গিরিবর্ত্ম থেকে বিজয়ী ব্রিটিশ পদাতিক বাহিনী ফিরে এসে এই আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।<ref name=Allen/>{{rp|১৮৬}} এই আক্রমণের পর ব্রিটিশ সরকার [[লেবং]] থেকে [[রয়্যাল ফিউজিলিয়ার্স|রয়্যাল ফিউজিলিয়ার্সের]] প্রথম ব্যাটালিয়ন, চল্লিশতম পাঠান রেজিমেন্টের ছয়টি কোম্পানি এবং [[রয়্যাল আইরিশ রাইফেলস|রয়্যাল আইরিশ রাইফেলসের]] একটি কোম্পানিকে তিব্বত প্রেরণ করেন। ২৪শে মে যাত্রা শুরু করে তারা চুম্বিতে ১লা জুন পৌঁছে [[জেমস রোনাল্ড লেসলি ম্যাকডোনাল্ড|ম্যাকডোনাল্ডের]] বাহিনীর সাথে মিলিত হয়।<ref name=Allen/>{{rp|১৮৫}} ১৮ ও ১৯ শে মে প্রায় চাংলোর ভবনও বৌদ্ধবিহারের মাঝের বাড়িগুলি দখল করার লড়াইয়ে পঞ্চাশজন তিব্বতী নিহত হন। ২১শে মে ব্র্যান্ডারের যোদ্ধারা নাইনি নামে একটি গ্রামে অবস্থিত একটি ছোট তিব্বতী দুর্গ অধিকার করার জন্য যাত্রা করে। ২৪শে মে ক্যাপ্টেন সিমোর শেফার্ড গ্যানৎসে পৌঁছন এবং ২৮শে মে তার নেতৃত্বে একটি আক্রমণে ৪০০ জন তিব্বতী হতাহত হন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://archive.org/details/frontieroverseas04indi|শিরোনাম=Frontier and overseas expeditions from India|শেষাংশ=India. Army. Intelligence Branch|শেষাংশ২=Paget|প্রথমাংশ২=William Henry Record of the expeditions against the North-west frontier tribes|তারিখ=1907|প্রকাশক=Simla : Govt. Monotype Press|অন্যান্য=University of California Libraries}}</ref> এরপর ব্র্যান্ডার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার দিকে মনোযোগ দেন। [[ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ড|ইয়ংহাজব্যান্ডকে]] [[ত্রয়োদশ দলাই লামা|ত্রয়োদশ দলাই লামার]] সাথে সংযোগ স্থাপনের আদেশ পাঠানো হয়। ২৬শে জুন নাইনি গ্রামের একটি সুরক্ষিত বিহার এবং ২৮শে জুন ৎসেচেন বিহার ও তৎসংলগ্ন দুর্গ অধিকার করে এওয়া হয়। বিহারগুলির প্রাচীন ও বহুমূল্য চিত্রপটগুলি লুঠ করে বিক্রি করে দেওয়া হয়।<ref name=Allen/>{{rp|২০৯}} ৩রা জুলাই [[ফ্রান্সিস ইয়ংহাজব্যান্ড|ইয়ংহাজব্যান্ড]] তিব্বতী প্রতিনিধিদের ছত্রিশ ঘণ্টার মধ্যে তিব্বতীদের মূল ঘাঁটি গ্যানৎসে শহরের বিহারটি খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিব্বতের সেরা যোদ্ধা ও গোলন্দাজ বাহিনী দ্বারা এই বিহারটির সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। ব্রিটিশরা নিকটবর্তী প্রাচীন ৎসেচেন বিহারটিতে অগ্নিসঙ্গোগ করে ধ্বংস করে দেয়। ৬ই জুলাই [[জেমস রোনাল্ড লেসলি ম্যাকডোনাল্ড|ম্যাকডোনাল্ড]] তিনটি ভাগে তার সৈন্যদেরকে বিভক্ত করে গ্যানৎসে বিহারের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ পশ্চিম দিকের দেওয়ালে আক্রমণের নির্দেশ দেন। প্রায় এগারো ঘণ্টা পরে দেওয়াল ভেদ করা সম্ভব হয়। এই লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন গুর্খা সৈন্যের মৃত্যু হয়, কিন্তু তিব্বতীরা একসময় পিছু হঠতে বাধ্য হয়। যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য লেফট্যানেন্ট [[জন ডানকান গ্রান্ট|জন ডানকান গ্রান্টকে]] [[ভিক্টোরিয়া ক্রস]] পদক দেওয়া হয়।
 
== লাসায় প্রবেশ ও চুক্তি স্বাক্ষর==