লিসবন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
সম্প্রসারণ
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
প্রতিবর্ণীকরণের বানান সংশোধন
১৫২ নং লাইন:
'''লিসবন''' ({{lang-pt|Lisboa}}; [[আ-ধ্বব-ব]]: [liʒˈboɐ]] ''লিঝ‌বোয়া'') দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত [[পর্তুগাল]] রাষ্ট্রের রাজধানী, বৃহত্তর নগরী ও প্রধান সমুদ্র বন্দর। প্রশাসনিকভাবে এটি পর্তুগালের লিসবন জেলাতে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক, বাণিজ্যিক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শিল্পোৎপাদন কেন্দ্র। লিসবন নগরীটি পর্তুগালের পশ্চিমভাগে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে [[তাগুস নদী]]র প্রশস্ত মোহনার কাছে অবস্থিত। [[আটলান্টিক মহাসাগর]] থেকে তাগুস নদীর মোহনা ধরে উজানে প্রায় ১৩ কিলোমিটার গেলে নদীটি প্রশস্ত হয়ে একটি হ্রদের আকার ধারণ করে; এই সুরক্ষিত খাঁড়ির উত্তর-পশ্চিম তীরেই লিসবন শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভৌগোলিকভাবে নগরীটি একটি ক্ষুদ্র নদীতটস্থ সমভূমি ও তার চতুর্দিকে অবস্থিত সাতটি টিলার উপরে অবস্থিত। লিসবনের জলবায়ু ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতল ও আর্দ্র; এর বিপরীতে জুলাই-আগস্ট মাসে তাপমাত্রা অনেক উষ্ণ, তবে রাতে মহাসাগর থেকে আগত বায়ুপ্রবাহের কারণে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। মূল নগরীর জনসংখ্যা ৫৫২,৭০০ জন<ref name=ine>[http://www.ine.pt/ngt_server/attachfileu.jsp?look_parentBoui=165404348&att_display=n&att_download=y Instituto Nacional de Estatística (INE)], Census 2011 results according to the 2013 administrative division of Portugal</ref>; অন্যদিকে তাগুস নদীর উভয় তীর ধরে বিস্তৃত বৃহত্তর লিসবন মহানগর এলাকার আয়তন প্রায় ৩০০০ বর্গকিলোমিটার এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ২৮ লক্ষ।<ref name=law75>{{cite web|title=Law nr. 75/2013|url=http://dre.pt/pdf1s/2013/09/17600/0568805724.pdf |accessdate=14 August 2014|work=[[Diário da República]]|publisher=[[Assembly of the Republic (Portugal)]]|language=Portuguese|format=pdf}}</ref><ref name=":8">{{cite journal|last=Marques da Costa|first=Eduarda|date=2016|title=Socio-Economia |url=http://aml.pt/susProjects/susWebBackOffice/uploadFiles/wt1wwpgf_aml_sus_pt_site/componentText/SUS57FCBBEE58CA4/EATLAS_AML_SOCIOECONOMIA_FORMATADO.PDF|journal=Atlas Digital da Área Metropolitana de Lisboa|volume=|via=}}</ref> লিসবনের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী পর্তুগিজ ভাষাতে কথা বলে এবং খ্রিস্টধর্মের রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলী এখানে আধিপত্য বিস্তার করেছে।
 
কিংবদন্তী অনুযায়ী প্রাচীন গ্রিক নায়ক ইউলিসিস লিসবন শহরটির পত্তন করেন। পুরাতাত্ত্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুযায়ী অনুমান করা হয় যে খ্রিস্টপূর্ব ৫ম সহস্রাব্দেই এখানে লোকবসতি ছিল। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ অব্দের দিকে ভূমধ্যসাগরের ফিনিসীয় জাতির লোকেরা এখানে একটি বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করেছিল, যার নাম ছিল ওলিসিপো। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে এখানে কেল্টীয় জাতির লোকদের আগমন ঘটে এবং তারা স্থানীয় জনগণের সাথে মিশে যায়। ২০৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত লোকালয়টি রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার (ইউলিউস কায়েসার) এটিকে একটি ফেলিকিতাস ইউলিয়া নামের একটি পৌরসভার (মুনিকিপিয়াম) মর্যাদা দেন। রোমানরা এখানে সড়ক, প্রাচীন ও স্নানাগার নির্মাণ করে। ৫ম শতক থেকে উত্তর ইউরোপ থেকে আগত বেশ কিছু জার্মানীয় গোত্র শহরটিকে শাসন করে, যাদের মধ্যে ৬ষ্ঠ শতকের ভিসিগথ জাতির নাম উল্লেখ্য। এর দুই শত বছর পরে ৮ম শতকে উত্তর আফ্রিকা থেকে জিব্রাল্টার প্রণালী অতিক্রম করে আগত মুসলমান মুর জাতির লোকেরা স্পেন ও পর্তুগাল বিজয়ের অংশ হিসেবে ৭১৬ খ্রিস্টাব্দে লিসবন শহরটিও বিজয় করে নেয়। এর প্রায় সাড়ে ৪ শত বছর পরে ১১৪৭ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের খ্রিস্টান রাজা ১ম আফোনসোর (হেনরিকেস) নেতৃত্বে ও ইংরেজি খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধাদের সহায়তায় পর্তুগিজ খ্রিস্টানরা শহরটি পুনরায় তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ১২৫৬ সালে এটিকে পর্তুগালের জাতীয় রাজধানী বানানো হয়।.১২৬০ সাল নাগাদ রাজা ৩য় আফোনসো পর্তুগালের রাজদরবার কোইম্ব্রাকুইঁব্রা থেকে সরিয়ে লিসবনে নিয়ে আসেন। ফলে নগরীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চার হয়। বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে লিসবন নগরী ছিল তৎকালীন জ্ঞাত বিশ্বের সর্বপশ্চিম সীমানায় অবস্থিত একটি প্রত্যন্ত লোকালয়। কিন্তু ১৫শ ও ১৬শ শতকে এই দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যায়। এটি ছিল পর্তুগালের অভিযান ও আবিষ্কারের স্বর্ণযুগ। সেসময় পর্তুগালের অভিযাত্রী ও দিগ্বিজয়ী সেনারা বিশ্বব্যাপী এক বিশাল ও শক্তিশালী সামুদ্রিক ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। লিসবন এই সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। লিসবনের অধিবাসীদের ধনসম্পদ ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ লিসবন ইউরোপের একটি শীর্ষস্থানীয় নগরীতে পরিণত হয়। ১৫৮০ সালে স্পেন পর্তুগাল বিজয় করে নেয়। এরপর প্রায় ৬০ বছরব্যাপী স্পেনীয় শাসনের সময় লিসবনের গুরুত্ব হ্রাস পায়। লিসবনের কিছু অভিজাত ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে পর্তুগিজরা স্পেনীয়দেরকে বিতাড়িত করে এবং ১৬৪০ সালে পর্তুগালের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনে। ১৭শ শতকের শেষ দিকে ব্রাজিল থেকে আগত স্বর্ণ দিয়ে কারুকাজ করে বহু অভিজাত প্রাসাদোপম বাসভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ১৭৫৫ সালের ১লা নভেম্বর স্মরণকালের সবচেয়ে বড় একটি ভূমিকম্প লিসবন নগরীতে আঘাত হানে। একই সাথে আটলান্টিক মহাসাগরে উদ্ভূত সুনামি তথা বিশালাকৃতির সমুদ্রের ঢেউ ও তৎপরবর্তী অগ্নিকাণ্ডের কারণে লিসবন নগরীর দুই-তৃতীয়াংশ (৯ হাজারেরও বেশী ভবন) ধ্বংস হয়ে যায় এবং ৩০ হাজার ব্যক্তির মৃত্যু হয়। কিন্তু পর্তুগালের রাজা ১ম জোসেফের প্রধানমন্ত্রী মার্কিস দি পোঁবালের নেতৃত্বে ভূমিকম্পের পরে নগরীকে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে নতুন করে নির্মাণ করা হয়। এই পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়াটির ব্যাপ্তি ছিল সুবিশাল ও অদ্বিতীয়। বিশেষত বাইশা এলাকাটিকে নগরকেন্দ্রের ধ্বংসপ্রাপ্ত সমত নিম্নভূমি অঞ্চলের উপরে পরিকল্পিতভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ১৮০৭ সালে শহরটি আরেকবার দুর্ভাগ্যের শিকার হয়। সেসময় ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়নের বাহিনী শহরটি দখল করে। এসময় পর্তুগালের রাজপরিবার পালিয়ে ব্রাজিলে চলে যান। ১৮১১ সাল নাগাদ ফরাসিদেরকে বিতাড়িত করা হয় এবং এরপর ব্রিটিশরা প্রায় এক দশক শহরটির নিয়ন্ত্রণে ছিল। শেষ পর্যন্ত ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের রাজা লিসবনে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু এর পরে প্রায় এক শতাব্দী ধরে লিসবন ও পর্তুগালে রাজনৈতিক নৈরাজ্য বিরাজ করে।
 
১৯শ ও ২০শ শতকে লিসবন শহরের কলেবর বৃদ্ধি পায়। ১৯০৮ সালে পর্তুগালের রাজা ও রাজপুত্র উভয়কেই হত্যা করা হয় এবং এর দুই বছর পরে ১৯১০ সালে পর্তুগালকে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়, যার রাজধানী হিসেবে লিসবনকে নির্বাচন করা হয়। ১৯৩২ সালে আন্তোনিও সালাজারের স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পরে রাজনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসলেও সামাজিক ও রাজনৈতিক নিষ্পেষণের মাধ্যমে এর মূল্য দিতে হয়। ১৯৪০ সালে পর্তুগালে একটি বিশ্বমেলা অনুষ্ঠিত হয় এবং এই উপলক্ষে বহু পুরনো ঘিঞ্জি বসতিগুলি ভেঙে ফেলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে পর্তুগালের নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে লিসবন নগরী দেশ থেকে পালানো অন্যান্য সমস্ত ইউরোপীয় শরণার্থীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়। লিসবন বন্দর থেকে বহু ইউরোপীয় উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকা মহাদেশে পাড়ি জমায়। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে নতুন নতুন নির্মাণকাজের ফলে শহরের চেহারা পাল্টাতে শুরু করে। ১৯৭৪ সালে একটি বিপ্লবের মাধ্যমে পর্তুগালে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ঘটে। ঐ সময় পর্তুগালের আফ্রিকান উপনিবেশগুলি স্বাধীনতা অর্জন করে, যার রেশ ধরে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বহু শরণার্থী ও অভিবাসীর আগমন ঘটে। এর ফলে শহরের কোষাগারের উপরে চাপ পড়লেও এটির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদি রূপ ইউরোপীয় সম্প্রদায়ে ১৯৮৬ সালে পর্তুগালের অন্তর্ভুক্তির সুবাদে লিসবনের বেশ উপকার হয়। এসময় ইউরোপীয় পুনরুন্নয়ন তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে লিসবনের অবকাঠামো মেরামত ও হালনাগাদ করা হয় এবং এর অর্থনীতিকেও আবার চাঙ্গা করা হয়। ১৯৮৮ সালে একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে যাতে চিয়াদো নামের ঐতিহাসিক ও অভিজাত পদচারী বিপণী এলাকাটি ধ্বংস হয়ে যায়, ফলে প্রায় ২০০০ লোক চাকুরি হারায় ও শত শত লোক গৃহহীন হয়ে পড়ে। এলাকাটিকে পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং নগরীর বাকি অংশগুলিতেও, বিশেষ করে জাহাজের মাল খালাসের এলাকাগুলি তথা ডকগুলিতে উন্নয়ন অব্যাহত থাকে। ফলে শীঘ্রই নগরীটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটক গন্তব্যস্থলে পরিণত হয়। ১৯৯৮ সালে লিসবন নগরীতে বিশ্বমেলার আয়োজন করা হয়। পর্তুগাল সরকার প্রায় ১৬৭ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করে নতুন একটি রেলস্টেশন, পাতালরেলের নতুন একটি রেলপথ ও তাগুস নদীর উপরে ইউরোপের দীর্ঘতম সেতু (১২ কিলোমিটার) ভাস্কো দা গামা নির্মাণ করায়। এই কর্মকাণ্ডগুলি নগরীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি ইউরোপীয় পর্যায়ে পর্তুগালের অর্থনীতির শক্তিরও পরিচায়ক।