বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
২৯ নং লাইন:
== শাহ সুফী ফয়জুদ্দীন (র:) এর প্রতিষ্ঠিত জামে মসজিদ: ==
 
১৮০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বৃটিশ শাসিত ভারত বর্ষের একজন মুসলিম আধ্যাতিক ও মরমী সাধক ছিলেন হযরত আল্লামা শাহসুফী ফয়জুদ্দীন (র:)। অবিভক্ত বাংলায় ইসলাম প্রচারক হিসেবে তার বেশ খ্যাতি ছিলো। ধর্ম প্রচারের অংশ হিসেবে তিনি একাধিক মসজিদ মাদ্রাসা ও খানকা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। তারই হাতে প্রতিষ্ঠিত একটি মসজিদ রয়েছে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী গ্রামে। তার নিজ বাড়ি ছিলো এই গ্রামে। আর সেখনেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই মসজিদ। আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে মসজিদটি। এছাড়াও অত্র এলাকার মানুষের মাঝে প্রচলিত কিছু অলৌকিক বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে এই মসজিদটি ঘিরে। এই মসজিদের নাম শাহ সুফী ফয়জুদ্দীন (র:) মসজিদ কমপ্লেক্স। আজ থেকে ১২০বছর আগে ইংরেজি ১৯০০ সালে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন শাহসুফী ফয়জুদ্দীন (র:)।
বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা অঞ্চলে ইসলামের প্রচার প্রসার এর ইতিহাসের সাথে আমার পূর্ব পুরুষদের অবদান যুক্ত রয়েছে। এক সময় ভুমধ্যে সাগরীয় অঞ্চল বা সাব কন্টিনেন্ট কে ভূতত্ববিদগণ বিভিন্ন নামে উল্ল্যেখ করতেন। আমরা প্রথমে দেখার চেষ্টা করবো ভারত বর্ষের পরিচয় ঐতিহাসিকগণ কিভাবে দিতেন।
 
অবিভক্ত বাংলায় শাহহযরত সুফীআল্লামা শাহসুফী ফয়জুদ্দীন (র:) এর ইসলাম প্রচারপ্রচারের অংশ হিসেবে বঙ্গপ সাগরের কোল ঘেঁষে সবুজে শ্যামলে আবৃত, তদানীন্তন ভারত বর্ষের পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালের বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলনের পূর্বে বৃটিশ অধ্যাশিত এলাকা ছিলো এটি । বঙ্গপের মোহনা নামে পরিচিত বর্তমান বরগুনা জেলার বুক চিরে সুদূর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয় পায়রা নদী। বরগুনা জেলাকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে এই পায়রা নদী। পায়রার পূর্ব পারে অবস্থিত আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী গ্রাম।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নাম কিভাবে:
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বলতে যে ভৌগোলিক এলাকাকে বুঝানো হয় তা হচ্ছে বৃহৎ ভারত, ভারতবর্ষ বহির ভারত পূর্বভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও ইন্দোচীন নামে অভিহিত ছিল।
 
ইংরেজি ১৯০০ সালে তদানীন্তন ভারতবর্ষের দক্ষিণ অঞ্চলে বঙ্গপ সাগরের কোলঘেঁষে বর্তমানে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া উনিয়নের বালিয়াতলী গ্রামে দক্ষিণ অঞ্চলে ইসলামের বাতি ঘর হিসেবে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন পীরে কামেল শাহহযরত আল্লামা সুফীশাহসুফী ফয়জুদ্দীন (র:) । বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (র:) এর বংশধর শাহ সৈয়দ বোগদাদী (র:) নামে প্রসিদ্ধ যিনি সুদূর বাগদাদ শরীফ থেকে ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে ভারতবর্ষের আসামে আসেন এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে) আসেন এবং শাহ সুফী ফয়জুদ্দীন (র:) কে মুরিদ ও একান্ত শিষ্য হিসেবে গণ্য করে এলমে শরীয়াত, মারেফাত ও এলমে তাছাওফের জ্ঞানে জ্ঞানবান করে গড়ে তোলেন।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়া কথাটির প্রথম উল্ল্যেখ পাওয়া যায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে হওয়াড ম্যালকম নামক জনৈক মার্কিন ধর্ম প্রচারকের বিবরণ থেকে। তিনি মূলত আমেরিকান ব্যাপটিস্ট মিশনারির উদ্ধেগে নানা তথ্য সংগ্রহের জন্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন। নিজ দেশে ফিরে তিনি ১৮৩৯ সালে ট্রাভেল ইন সাউথ ইস্টান এশিয়া এমব্রেসিং হিন্দুস্তান, মালয়, শ্যাম, চায়না এন্ড বার্মা এমপাড়ার নামক একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেন। তার এ বিবরণেই প্রথম সাউথইস্ট এশিয়া বা দক্ষিণপূর্ব এশিয়া নামের উল্ল্যেখ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ এলাকায় বৃটিশ নৌশক্তির নাম ছিল দক্ষিণপূর্ব এশিয়। ১৯৪৩ সালে মে মাসে ওয়াশিংটন সম্মেলনে 'ইস্ট এশিয়া' কমান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়াহয়। তবে কেবল সামরিক ভাবনা থেকে এ অঞ্চলের নাম সাউথইস্ট এশিয়া হয়েছে একক ভাবে এ কথা বলা যাবেনা। নৃতাত্বিকগণ বিভিন্ন বিচার বিশ্লেষণ করেই এ অঞ্চলকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া নামে নামকরণ করেন।
 
সুফী ফয়জুদ্দীন (র:) স্বীয় পীরের কাছ থেকে শরীয়াত, মারেফাত ও এলমে তাছাওফের জ্ঞানে জ্ঞানবান হওয়ার পর পীরের একান্ত নির্দেষ ও পরামর্শ অনুযায়ী নিজ বাড়িতে এক খানি মসজিদ প্রতিষ্ঠার মন স্থির করেন। এরপর তিনি তার সন্তানদের সাথে পরামর্শ করেন,তখন তার সংসারের ভার ছিলো তার মেঝ ছেলে মৌলভী নাছের আলী (র:) এর উপর। বড়হযরত ছেলে আব্দুল আজিজ (র:) ছিলেন অতিমাত্রায় সহজ ও সরল । তার সেঝো ছেলে মৌলভী সামছুল হক (র:) তখন ছাত্র ছিলেন। তার ছোট ছেলে আব্দুল কাদের (র:) এর জন্ম তখন হয়নি বলে জানা যায়, যদিও হয়ে থাকে তখন তিনি অনেক ছোট ছিলেন।আল্লামা সুফীশাহসুফী ফয়জুদ্দীন (র:) মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে তার মেঝো ছেলে মৌলভীহযরত আল্লামা শাহসুফী নাছের আলী (র:) এর সাথে পরামর্শ করে কাঠের খুঁটি,ছনের ছাউনি ও বেড়া, হেতাল আর গাইট্টা দিয়ে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন পীরের নির্দেশ ও পরামর্শ মোতাবেক। ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দক্ষিণ বঙ্গে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের বাতি ঘর হিসেবে আজও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমান, ওলি-আওলিয়া, পীর বুজুর্গদের আস্তানা হিসেবে সবার কাছে অতি পরিচিত।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কিভাবে ইসলাম এসেছে:
 
ঐতিহাসিক বিভিন্ন দলিল প্রমাণাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে উরোপীয়দের আগমনের পূর্বে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সমুদ্র বাণিজ্য ক্ষেত্রে মুসলমানদের বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য বা আরবদের দখলে ছিল।পর্তুগিজদের আগমনের পূর্বে গুজরাট মালাবারের বণিকদের করমন্ডল দ্বীপে যাতায়াত ছিল ব্যাপক।অন্য এক বিবরণে দেখা যায়, এ সময় ভারত মহাসাগরের পরচিমাংশে বাণিজ্য ও জাহাজ পরিচালনায় আরব ও গুজরাটি ব্যাবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তোম পিরেস মালাক্কার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গুজরাটি বণিকদের জন্য স্বতন্ত্র শাহ -ই -বন্ধর বা বন্ধরের অফিসার নিয়োগের কথা উল্লেখ করেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যে আরব ও গুজরাটি বণিকদের প্রাধান্য ছিল মূলতঃ ইসলামের আবির্ভাবের মাত্র এক শতাব্দীর মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগর হতে ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত, কাম্পিয়ান সাগর থেকে মিসর পর্যন্ত এমনকি এশিয়া, আফ্রিকা ও উরোপের অধিকাংশ স্থানে আরবদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বাণিজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ উম্মুক্ত হয়। ধীরে ধীরে তাদের নৌবাণিজ্য ও ইসলামী দাওয়াতের কাজ সমানভাবে চলতে থাকায় এক অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত হয় ইসলাম।
 
 
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশে অনেক আগ থেকেই ইলমে দ্বীনের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ছিল ব্যাপক। আরব, ইরাক ও ইরান থেকে আগত পীর-আউলিয়া ও ইসলামী চিন্তাবিদগণের মাধ্যমে এ দেশে ইলমে দ্বীনের প্রবেশ ঘটে এবং তাদের প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে কোরান হাদীসের চর্চার পাশা পাশি এলমে মারেফাত ও এলমে তাসাউফের চর্চা ছিল ব্যাপক পরিসরে , বহুকাল আগ থেকেই এ দেশে অনেক বড় বড় মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকা শরীফ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে প্রতি ক্ষনে ক্ষনে অসংখ্য লোক ইলমে দ্বীনের শিক্ষা লাভ করে দ্বীন ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তির সাথে পরিচিত হয়। এ ধারাবাহিকতা অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে।
 
যুগ যুগ ধরে মহান আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং কুরআন-হাদীসের চর্চা নবী-রাসূল, সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, আওলিয়ায়ে কিরাম এবং হক্কানী পীর-মাশায়েখ ও ওলামায়ে কিরামের মাধ্যমে হয়ে আসছে। আমাদের এই উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারে হক্কানী পীর-মাশায়েখ ও ওলামায়ে কিরামের বিশেষ অবদান রয়েছে। মূলত আলেমরাই হচ্ছেন ইসলামের ধারক-বাহক। তাঁদের উপরই ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার মহান জিম্মাদারী। হাদীস শরীফে এসেছে-
 
“আলেমরাই হচ্ছে নবীগণের উত্তরসুরী” (তিরমিযী, আবু দাঊদ, ইবনে মাজা)।
 
ওলি-আউলিয়া,ওলামায়ে কিরামের মর্যাদা সম্পর্কে হযরত হাসান বসরী (রাঃ) বলেন, “আলেম বলা হয়, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ্কে না দেখে ভয় করে এবং আল্লাহ যা পছন্দ করেন তা সে পছন্দ করে ও আল্লাহ যা অপছন্দ করে তা সে বর্জন করে।” তারপর তিনি প্রথমোক্ত আয়াতখানা তিলাওয়াত করেন।
 
আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ) বলেন :
 
“অনেক হাদীস মুখস্থ করে নেয়া ইলম নয়, বরং ইলম হচ্ছে আল্লাহকে অধিক ভয় করা।”
 
হযরত রবী ইবনে আনাস (রাঃ) বলেন:
 
“যে ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই, সে আলেম নয়”।
 
মুজাহিদ (রাঃ) বলেন :
 
“কেবল সেই আলেম যে আল্লাহকে ভয় করে।”
 
আহলে সুন্নত ওল জামাতের অর্থ:
 
মহান আল্লাহ প্রদত্ত বাণী অন্তরে ও কর্মে ধারণ করা সত্যপন্থী হক্কানী আলেমগণ হচ্ছেন একটি জাতির, একটি দেশের, তথা মুসলিম জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, সর্বোপরি এক একজন পথপ্রদর্শক। আহলে সুন্নত ওল জামাতের অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ প্রদত্ত ও মহানবী (স:) আনীত অমিয় বাণী হুবহু অন্তরে বিশ্বাস এবং কর্ম ও চিন্তার মাধ্যমে তার প্রকাশ।
একজন শিক্ষিত লোক, ধনী লোক, প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন ব্যক্তি, যদি তার মধ্যে আল্লাহ ভীতি না থাকে, তাহলে আল্লাহ্তালার নিকট তার কোন মূল্য নেই। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে-
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা-স্বাস্থ্য ও ধন-সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে তাকান”।
 
প্রকৃত আলেম-সুফী বা পীর-বুজুর্গ কারা:
 
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রকৃত আলেম-সুফী বা পীর-বুজুর্গ ও তাদের মর্যাদার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
“যারা জানে ও যারা জানে না, তারা কি এক সমান হতে পারে ? (সূরা জুমার : ৯)
 
“যদি তোমরা না জান তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর” (সূরা নাহল : ৪৩)
 
আলেমদের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন :
 
“তোমাদের উপর আমার মর্যাদা যেমন, একজন ইবাদতকারীর উপর আলেমের মর্যাদা তেমন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, যাঁরা জনগণকে দ্বীনি ইলম শেখায় তাদের জন্য আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, আসমান ও জমিনের অধিবাসীগণ, এমনকি গর্তের পিঁপড়া ও মাছ পর্যন্ত কল্যান কামনা করতে থাকে”(তিরমিযী)।
 
“আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, একজন বিজ্ঞ আলেম শয়তানের নিকট এক হাজার আবেদের চেয়ে ভয়াবহ” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)।
 
বাংলা ও দক্ষিণ বাংলায় ইসলাম:
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহন করেন খ্রিস্টিয় ৫৭০ সালে। এর মাত্র ৫০ বছর পর ৬২০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে আসে ইসলাম!আর উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে শুরু হয় যাত্রা! বিভিন্ন গবেষণা ও প্রাপ্ত শিলালিপি এমন দাবিই করেছে। এতে আরও দেখা যায়, ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে দেশের প্রথম মসজিদটিও নির্মিত হয় এই জেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ‘মজেদের আড়া’ নামক গ্রামে।
 
১৯৮৭ সালে পঞ্চগ্রামে জঙ্গল খননের সময় প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এর একটি ইটে কালেমা তাইয়্যেবা ও ৬৯ হিজরি লেখা রয়েছে। এ থেকে অনুমান করা হয়, মসজিদটি হিজরি ৬৯ অর্থাৎ ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে স্থাপন কিংবা সংস্কার করা হয়।
 
রংপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.)-এর মামা, মা আমেনার চাচাতো ভাই আবু ওয়াক্কাস (রা.) ৬২০ থেকে ৬২৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করেন (পৃ. ১২৬)। অনেকে অনুমান করেন,পঞ্চগ্রামের মসজিদটিও তিনি নির্মাণ করেন যা ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কার করা হয়।
 
বঙ্গে সাহাবীদের মাধ্যমে ইসলামের আগমন:
 
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাংলায় প্রথম ইসলাম প্রচার করেন ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন খিলজী। এমন একটি ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে ইতিহাস বেত্তাদের কাছে যা ইসলামের ইতিহাসের খাতায় অক্ষরিত রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা তথ্য প্রমান করে যে, বঙ্গ দেশে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন খিলজী এর অনেক আগেই ইসলাম প্রচারিত হয়। ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন খিলজীর বাংলা বিজয়ের প্রায় ৬০০ বছর আগেই সাহাবীদের দ্বারা বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ও ইসলামী দাওয়াতী কাজ পরিচালিত হয়। প্রথম মসজিদও নির্মিত হয় সেই সময়েই।
বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্ব পূর্ণ অঞ্চল বৃহত্তর বরিশালের দক্ষিণ অঞ্চল বলে ইসলামের ইতিহাসে অতি প্রসিদ্ধ। এ অঞ্চলে বাগদাদ, পারস্য ও মধ্যে প্রাচ্য অঞ্চল থেকে অগণিত ওলি,আওলিয়া, সুফী-সাধক,পীর বুজুর্গের আগমন ঘটে। ধারণা করা হয় বাংলাদেশে যেহেতু সাহাবাদের আগমন ঘটেছে সেহেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলেও আল্লাহর নবী (স:) এর সাহাবীর কদম মোবারক পড়েছে।
 
শাহ নেয়ামত উল্লাহ (র:) এর বরগুনায় আগমন ও বিবিচিনি শাহি মসজিদ নির্মাণ:
 
সবুজে ঘেরা চল্লিশ ফুট উঁচু এক টিলা। এর ওপর দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক বিবিচিনি শাহি মসজিদ। বরগুনার এই মসজিদটি বয়স পেরিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন শ বছর। প্রাচীনতার সাক্ষী এই মসজিদটিতে মোগল নির্মাণশৈলী ও স্থাপত্যরীতির ছাপ দেদীপ্যমান।
ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে এ মসজিদটি যা বরগুনার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বিবিচিনি ইউনিয়নে অবস্থিত।
 
ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায় হজরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ (র:) নামের এক সাধক ছিলেন। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি পারস্য থেকে দিল্লিতে আসেন। সে সময়ে মোগল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে বঙ্গ দেশের সুবাদার শাহ সুজা এই মহান সাধকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিন-চার বছর কেটে যায় তার দিল্লিতে। কিন্তু শাহ সুজার আগ্রহে ১৬৫৯ সালে কয়েকজন শিষ্যকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বেতাগীর এই গ্রামে আসেন। শাহ সুজার অনুরোধেই এই গ্রামে তিনি এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
 
১৬৪১ ইংরেজি সালের পর পর্তুগিজদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় স্পেনীয় জাতি ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত অবস্থান করে এ দেশ শাসন করে। তাদের বড় কৃতিত্ব ছিল খিস্টান মিশনারির কাজ এবং ইসলামের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়া।
পরবর্তীতে জেনারেল জ্য পিতের জন কোয়েল ১৬১৯ সালে জাভা দ্বীপের ভ্যাটাভিয়ায় অর্থাৎ বর্তমান জাকার্তা দখল করে এবং পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুন্জে ওলান্দাজগন সর্বশ্রেষ্ঠ নৌশক্তিতে পরিণত করে এ এলাকাকে এবং বিভিন্ন অঞ্চল দাপটের সাথে শাসন করেন।
এরপর ১৭৮৬ সালে মালয়ের পিনাং দখলের মধ্য দিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় তাদের উপনিবেশ শুরু করে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য ঘটে। ১৮২৬ সালে তিনাসেরিম ও আরাকান (বর্তমান রাখাইন) ১৮৫২ সালে পেগু এবং ১৮৮১ সালে উত্তর বার্মা দখল করে। থাইল্যান্ড শাসন না করলেও বৃটিশরা সেখানে তাদের প্রভাব বিস্তার করত। ১৮৬৩-৮৫ সালের মধ্যে ফরাসিরা ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসে উপনিবেশ স্থাপন করে। ১৮৯৮ সালে আমেরিকা ফিলিপাইন থেকে স্পেনকে বিতাড়িত করে তাদের উপনিবেশ শুরু করে।
 
শাহ সুফী ফয়জুদ্দীন (র:) এর প্রতিষ্ঠিত জামে মসজিদ:
 
অবিভক্ত বাংলায় শাহ সুফী ফয়জুদ্দীন (র:) এর ইসলাম প্রচার বঙ্গপ সাগরের কোল ঘেঁষে সবুজে শ্যামলে আবৃত, তদানীন্তন ভারত বর্ষের পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালের বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলনের পূর্বে বৃটিশ অধ্যাশিত এলাকা ছিলো এটি । বঙ্গপের মোহনা নামে পরিচিত বর্তমান বরগুনা জেলার বুক চিরে সুদূর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয় পায়রা নদী। বরগুনা জেলাকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে এই পায়রা নদী। পায়রার পূর্ব পারে অবস্থিত আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী গ্রাম।
 
ইংরেজি ১৯০০ সালে তদানীন্তন ভারতবর্ষের দক্ষিণ অঞ্চলে বঙ্গপ সাগরের কোলঘেঁষে বর্তমানে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া উনিয়নের বালিয়াতলী গ্রামে দক্ষিণ অঞ্চলে ইসলামের বাতি ঘর হিসেবে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন পীরে কামেল শাহ সুফী ফয়জুদ্দীন (র:) । বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (র:) এর বংশধর শাহ বোগদাদী (র:) নামে প্রসিদ্ধ যিনি সুদূর বাগদাদ শরীফ থেকে ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে ভারতবর্ষের আসামে আসেন এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে) আসেন এবং শাহ সুফী ফয়জুদ্দীন (র:) কে মুরিদ ও একান্ত শিষ্য হিসেবে গণ্য করে এলমে শরীয়াত, মারেফাত ও এলমে তাছাওফের জ্ঞানে জ্ঞানবান করে গড়ে তোলেন।
 
সুফী ফয়জুদ্দীন (র:) স্বীয় পীরের কাছ থেকে শরীয়াত, মারেফাত ও এলমে তাছাওফের জ্ঞানে জ্ঞানবান হওয়ার পর পীরের একান্ত নির্দেষ ও পরামর্শ অনুযায়ী নিজ বাড়িতে এক খানি মসজিদ প্রতিষ্ঠার মন স্থির করেন। এরপর তিনি তার সন্তানদের সাথে পরামর্শ করেন,তখন তার সংসারের ভার ছিলো তার মেঝ ছেলে মৌলভী নাছের আলী (র:) এর উপর। বড় ছেলে আব্দুল আজিজ (র:) ছিলেন অতিমাত্রায় সহজ ও সরল । তার সেঝো ছেলে মৌলভী সামছুল হক (র:) তখন ছাত্র ছিলেন। তার ছোট ছেলে আব্দুল কাদের (র:) এর জন্ম তখন হয়নি বলে জানা যায়, যদিও হয়ে থাকে তখন তিনি অনেক ছোট ছিলেন। সুফী ফয়জুদ্দীন (র:) মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে তার মেঝো ছেলে মৌলভী নাছের আলী (র:) এর সাথে পরামর্শ করে কাঠের খুঁটি,ছনের ছাউনি ও বেড়া, হেতাল আর গাইট্টা দিয়ে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন পীরের নির্দেশ ও পরামর্শ মোতাবেক। ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দক্ষিণ বঙ্গে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের বাতি ঘর হিসেবে আজও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমান, ওলি-আওলিয়া, পীর বুজুর্গদের আস্তানা হিসেবে সবার কাছে অতি পরিচিত।
 
মসজিদে যারা কদম রেখেছেন এবং নামাজ পড়েছেন: