জললেখবিজ্ঞান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
InternetArchiveBot (আলোচনা | অবদান)
১টি উৎস উদ্ধার করা হল ও ০টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল।) #IABot (v2.0
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
সম্প্রসারণ, চিত্র
১ নং লাইন:
[[File:Alexander Dalrymple AGE V07 1801.jpg|thumb|[[আলেকজান্ডার ডালরিম্পল]] (Alexander Dalrymple), ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সর্বপ্রথম জললেখচিত্রবিদজললেখবিজ্ঞানী; ১৭৯৫ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।]]
'''জললেখচিত্রবিদ্যা''' বা '''জলমানচিত্রবিদ্যা''' ({{lang-en|Hydrography}}) বলতে [[ভূ-পৃষ্ঠ|ভূ-পৃষ্ঠের]] জলনিমজ্জিত অঞ্চলসমূহের [[লেখচিত্র]] বা [[মানচিত্র]] সংকলন বা প্রস্তুতকরণের শিল্প ও বিজ্ঞানকে বোঝায়। এটি একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান যেখানে [[মহাসমুদ্র]], [[সমুদ্র]], উপকূলীয় অঞ্চল, [[হ্রদ]] ও [[নদী]]সমূহের পরিমাপন ও তাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের বিজ্ঞানসম্মত বর্ণনা ছাড়াও সময়ের সাথে সাথে এগুলির পরিবর্তনের পূর্বাভাস আলোচনা করা হয়। এই বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হল নৌচালনায় নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সকল প্রকার সামুদ্রিক কর্মকান্ডকে (যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং পরিবেশের সংরক্ষণ) সহায়তা করা।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল= http://www.iho.int/srv1/index.php?option=com_content&view=article&id=299&Itemid=289|শিরোনাম= International Hydrographic Organization|সংগ্রহের-তারিখ= ২৫ নভেম্বর ২০১৭|আর্কাইভের-ইউআরএল= https://web.archive.org/web/20140724100423/http://www.iho.int/srv1/index.php?option=com_content&view=article&id=299&Itemid=289|আর্কাইভের-তারিখ= ২৪ জুলাই ২০১৪|অকার্যকর-ইউআরএল= হ্যাঁ}}</ref>
[[File:Echo Sounding USN.jpg|thumb|right|একটি বহুতরঙ্গ প্রতিধ্বনি শব্দক যন্ত্রের সাহায্যে জলের গভীরতা পরিমাপের চিত্র]]
'''জললেখচিত্রবিদ্যা''' বা '''জলমানচিত্রবিদ্যাজললেখবিজ্ঞান''' ({{lang-en|Hydrography}}) বলতে [[ভূ-পৃষ্ঠ|ভূ-পৃষ্ঠের]] জলনিমজ্জিত ও নাব্য অঞ্চলসমূহের [[লেখচিত্র]] বা [[মানচিত্র]] সংকলন বা প্রস্তুতকরণের শিল্প ও বিজ্ঞানকে বোঝায়। এটি একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান যেখানে [[মহাসমুদ্র]], [[সমুদ্র]], উপকূলীয় অঞ্চল, [[হ্রদ]], [[নদী]]সমূহের এবং এগুলির সংলগ্ন উপকূলীয় স্থলভাগগুলির পরিমাপন ও তাদের প্রাকৃতিক ভৌত বৈশিষ্ট্যের বিজ্ঞানসম্মত বর্ণনা ছাড়াও সময়ের সাথে সাথে এগুলির পরিবর্তনের পূর্বাভাস আলোচনা করা হয়। এই বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হল নৌচালনায় নিরাপত্তা বিধানে সহায়তা করা এবং অন্যান্য সকল প্রকার সামুদ্রিক কর্মকান্ডকেকর্মকাণ্ডে (যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং পরিবেশের সংরক্ষণ) সহায়তা করা।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল= http://www.iho.int/srv1/index.php?option=com_content&view=article&id=299&Itemid=289|শিরোনাম= International Hydrographic Organization|সংগ্রহের-তারিখ= ২৫ নভেম্বর ২০১৭|আর্কাইভের-ইউআরএল= https://web.archive.org/web/20140724100423/http://www.iho.int/srv1/index.php?option=com_content&view=article&id=299&Itemid=289|আর্কাইভের-তারিখ= ২৪ জুলাই ২০১৪|অকার্যকর-ইউআরএল= হ্যাঁ}}</ref> জললেখবৈজ্ঞানিক জরিপকারীরা এইসব জলরাশি অধ্যয়ন করেন এবং এগুলির তলদেশ বা "মেঝে" কীরকম দেখতে তা অধ্যয়ন করেন। তারা বহুতরঙ্গ প্রতিধ্বনি শব্দক (multibeam echo sounders) নামক পদ্ধতি ব্যবহার করে জললেখবৈজ্ঞানিক তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করেন।<ref name="NOAA">https://oceanservice.noaa.gov/facts/hydrography.html</ref>
জললেখবিজ্ঞানে জলের গভীরতা, সমুদ্র তলদেশ ও উপকূলীয় তটরেখার আকৃতি, সম্ভাব্য বাধাবিপত্তির ভৌগোলিক অবস্থান এবং জলরাশিসমূহের ভৌত ধর্মাবলি, ইত্যাদির মানচিত্র বা লেখচিত্র অঙ্কন করা হয়। এর ফলে সামুদ্রিক পরিবহন ব্যবস্থা নিরাপদে ও দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে। বহুতরঙ্গবিশিষ্ট প্রতিধ্বনি শব্দকের তরঙ্গগুলি সমুদ্র তলদেশ থেকে প্রতিফলিত হয়ে জাহাজে ফেরত আসলে সেখানে গভীরতা ধারণ করা হয়।<ref name="NOAA" />
 
জললেখবিজ্ঞানীরা জলের গভীরতা পরিমাপ করেন এবং সাগরের মগ্ন চড়া বা বালুচর, শিলা ও অতীতের নৌযানের ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান করেন যা নৌপরিবহনের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এছাড়া তারা পানির স্তর ও জোয়ার, জলস্রোত, তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, ইত্যাদির উপরেও তথ্য সংগ্রহ করেন। জললেখবৈজ্ঞানিক জরিপ থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত দিয়ে নৌ-মানচিত্র অঙ্কন করা হয়। নৌ-মানচিত্রগুলি নিরাপদে সামুদ্রিক নৌচালনার জন্য অপরিহার্য। এছাড়া এই উপাত্তগুলি দিয়ে জললেখবৈজ্ঞানিক প্রতিমান (মডেল) তৈরি করা হয়, যা ভবিষ্যৎ গবেষণা ও সামুদ্রিক ভূ-স্থানিক পণ্য ও সেবার জন্য ভিত্তি হিসেবে কাজে লাগে।<ref name="NOAA" />
[[File:Alexander Dalrymple AGE V07 1801.jpg|thumb|[[আলেকজান্ডার ডালরিম্পল]] (Alexander Dalrymple), ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সর্বপ্রথম জললেখচিত্রবিদ; ১৭৯৫ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।]]
[[ব্রিটিশ নৌবাহিনী]] ১৭৯৫ সালে সর্বপ্রথম একজন জললেখচিত্রবিদকে (Hydrographer) কর্মে নিয়োগ দান করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.ukho.gov.uk/AboutUs/Documents/timeline.pdf |শিরোনাম=The United Kingdom Hydrographic Office timeline |প্রকাশক=UKHO |সংগ্রহের-তারিখ=2011-01-23 |অকার্যকর-ইউআরএল=yes |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20110721202405/http://www.ukho.gov.uk/AboutUs/Documents/timeline.pdf |আর্কাইভের-তারিখ=2011-07-21 |df= }}</ref> ১৮৫৪ সালে [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র]] একটি নৌপর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এবং [[মার্কিন জললেখচিত্রণ কার্যালয়|জললেখচিত্রণ কার্যালয়]] প্রতিষ্ঠা করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.archives.gov/research/guide-fed-records/groups/037.html |শিরোনাম=Records of the Hydrographic office |প্রকাশক= মার্কিন জাতীয় সংগ্রহশালা |সংগ্রহের-তারিখ=2017-11-25 |df= }}</ref> তখন থেকে অনেক সমুদ্রচারী রাষ্ট্র জললেখচিত্রণ কার্যালয় স্থাপন করে যেগুলির কাজ ছিল নাবিকদেরকে নৌমানচিত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রকাশনা সরবরাহ করে তাদের নিজস্ব অধিকৃত সমুদ্রাঞ্চল এবং বিশ্বের মহাসাগরগুলিতে নৌচালনায় সহায়তা করা।
 
অতীতে যখন জাহাজগুলি মানচিত্রে অচিহ্নিত জলরাশিতে চলাচল করত, তখন তারা প্রায়শই অদৃশ্য শিলাতে আঘাত পেয়ে ডুবে যেত কিংবা অগভীর তলদেশে আটকা পড়ে যেত ও ধ্বংসের সম্মুখীন হত। নৌ-মানচিত্র নাবিকদেরকে নিরাপদে নৌযান চালনার সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে। এইসব মানচিত্রে নির্দিষ্ট বিন্দুতে সমুদ্রের গভীরতা কতটুকু, তা সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করা থাকে। যদি কোনও জাহাজের জলে নিমজ্জিত অংশের গভীরতা (ড্রাফ্‌ট) ৭ মিটার হয়, তাহলে এটিকে মানচিত্রে নির্দেশিত ৭ মিটারের চেয়ে বেশী গভীর অঞ্চল দিয়ে চলাচল করতে হয়।
১৯৭০ সালে [[জাতিসংঘ|জাতিসঙ্ঘের]] অধীনে [[আন্তর্জাতিক জললেখচিত্রণ সংস্থা]] (International Hydrographic Organization) প্রতিষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে জললেখচিত্র জরিপে (Hydographic survey) লব্ধ তথ্যাদি আদান-প্রদান হয়।
 
অতীতে গভীরতার মাপের দাগকাটা দড়ি এবং এর এক প্রান্তে লাগানো সীসার ওলন (ভার) ব্যবহার করে ওলন-দড়িটিকে পানিতে নিমজ্জিত করা হত। দড়িটিকে সীসারেখাও বলা হত। সীসারেখার যে অংশ পর্যন্ত নিমজ্জিত হত, সেটিকে সাগরের ঐ অংশের গভীরতা হিসেবে গণ্য করা হত।
 
বর্তমানে জলের গভীরতা পরিমাপের জন্য "সোনার" (Sonar) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। জাহাজের তলদেশে স্থাপিত প্রেরকযন্ত্র বা ট্রান্সমিটার থেকে শব্দের তরঙ্গ সমুদ্র তলদেশের দিকে প্রেরণ করা হয়। প্রেরিত শব্দতরঙ্গ সমুদ্র তলদেশে প্রতিফলিত হয়ে আবার জাহাজের গ্রাহকযন্ত্র বা রিসিভারে ফেরত আসার সময়কাল গণনা করা হয়। প্রতিধ্বনি শব্দক যন্ত্র (Echo sounder) একটিমাত্র শব্দের তরঙ্গ (বিম) বা বহুসংখ্যক শব্দের তরঙ্গ প্রেরণ করতে পারে। এই তরঙ্গগুলি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা বহু লক্ষ লক্ষ উপাত্তসংখ্যা অর্জন করতে পারেন, যার মাধ্যমে অত্যন্ত সঠিকভাবে সমুদ্রতলদেশের মানচিত্র অঙ্কন করা সম্ভব হয়। অগভীর তলদেশ, শিলা বা অন্যান্য বিপজ্জনক পরিবেশের কারণে যখন জরিপকারী নৌযানগুলি দক্ষভাবে বা নিরাপদভাবে কাজ করতে অসমর্থ হয়, এবং পানি বা জল যদি পরিস্কার থাকে, তাহলে বিমানে সংস্থাপিত বিশেষ যান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে "লাইডার" (LIDAR বা Light Detection and Ranging, "আলো শনাক্তকরণ ও পরিসর নির্ণয়") প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যেখানে বিমান থেকে লেসার (LASER, Light Amplification by Stimulated Emission of Radiation, "বিকিরণের উত্তেজিত নিঃসরণের মাধ্যমে আলোক বিবর্ধন") রশ্মির স্পন্দন প্রেরণ করা হয় এবং জলরাশির পৃষ্ঠতল ও তলদেশ থেকে প্রতিফলিত লেসার রশ্মি শনাক্ত করা হয়। সমুদ্র তলদেশের অবস্থিত বস্তু সম্পর্কে অধিকতর তথ্য সংগ্রহের জন্য দূর-নিয়ন্ত্রিত বিশেষ নিমজ্জিত নৌযান ব্যবহার করা হতে পারে। এই যানগুলির সাথে ভিডিও ক্যামেরা তথা চলমান চিত্রগ্রহণ যন্ত্র লাগানো থাকে। কখনও কখনও এই যানগুলিতে একটি সন্ধিবাহুর (Articulated arm) সুবিধাও থাকে, যার মাধ্যমে তলদেশ থেকে ছোট ছোট বস্তু সংগ্রহ করে পৃষ্ঠতলে নিয়ে আসা সম্ভব হয়।
 
[[ব্রিটিশ নৌবাহিনী]] ১৭৯৫ সালে সর্বপ্রথম একজন জললেখচিত্রবিদকেজললেখবিজ্ঞানীকে (Hydrographer) কর্মে নিয়োগ দান করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.ukho.gov.uk/AboutUs/Documents/timeline.pdf |শিরোনাম=The United Kingdom Hydrographic Office timeline |প্রকাশক=UKHO |সংগ্রহের-তারিখ=2011-01-23 |অকার্যকর-ইউআরএল=yes |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20110721202405/http://www.ukho.gov.uk/AboutUs/Documents/timeline.pdf |আর্কাইভের-তারিখ=2011-07-21 |df= }}</ref> ১৮৫৪ সালে [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র]] একটি নৌপর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এবং [[মার্কিন জললেখচিত্রণজললেখবিজ্ঞান কার্যালয়|জললেখচিত্রণজললেখবিজ্ঞান কার্যালয়]] প্রতিষ্ঠা করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.archives.gov/research/guide-fed-records/groups/037.html |শিরোনাম=Records of the Hydrographic office |প্রকাশক= মার্কিন জাতীয় সংগ্রহশালা |সংগ্রহের-তারিখ=2017-11-25 |df= }}</ref> তখন থেকে অনেক সমুদ্রচারী রাষ্ট্র জললেখচিত্রণজললেখবিজ্ঞান কার্যালয় স্থাপন করে যেগুলির কাজ ছিল নাবিকদেরকে নৌমানচিত্রনৌ-মানচিত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রকাশনা সরবরাহ করে তাদের নিজস্ব অধিকৃত সমুদ্রাঞ্চল এবং বিশ্বের মহাসাগরগুলিতে নৌচালনায় সহায়তা করা।
 
১৯৭০ সালে [[জাতিসংঘ|জাতিসঙ্ঘেরজাতিসংঘের]] অধীনে [[আন্তর্জাতিক জললেখচিত্রণজললেখবিজ্ঞান সংস্থা]] (International Hydrographic Organization) প্রতিষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে জললেখচিত্রজললেখবৈজ্ঞানিক জরিপে (Hydographic survey) লব্ধ তথ্যাদি আদান-প্রদান হয়।
 
==তথ্যসূত্র==