ইসলামে বহুবিবাহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

[পরীক্ষিত সংশোধন][পরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
পরিষ্কারকরণ
মাহমুদ আহমেদ (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৬৫ নং লাইন:
যদিও অনেক দিন ধরেই এই ধর্মের সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে নারী অধিকার অগ্রভাগেই ছিল, তবুও মুসলিম নারীবাদ একটি সম্পূর্ণ নতুন আন্দোলন। এর সূত্রপাত হয় যখন মুসলিম নারীগণ অনুধাবন করেন, তারা তাদের ধর্মগ্রন্থগুলোকে (যেগুলো মুসলিম সমাজ ও নৈতিকতা নির্ধারণ করে) পুনরায় পাঠ করে (পুনর্ব্যাখ্যা) সমাজে তাদের ভূমিকার পরিবর্তন করতে পারে। এই পুনর্ব্যাখ্যার দিকে যাওয়া ইসলামে নতুন চর্চা নয়। পুরুষ ইসলামিক পণ্ডিতগণ মুহম্মদের মৃত্যুর পর থেকেই এটি করে আসছেন, কিন্তু কখনও কোন নারীকে এমন কিছু করতে দেখা যায় নি। এবারই প্রথম যখন নারীরা কোরান ও হাদিসকে বিশ্লেষণী উপায়ে পড়া যায় তা শেখা শুরু করে। তাদের নতুন ধর্মীয় জ্ঞান তাদেরকে তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে শিখতে এবং ধর্মগ্রন্থের শিক্ষিত ব্যাখ্যাকার হবার দিকে ধাবিত করে। এই [[ইসলামী নারীবাদ|ইসলামী নারীবাদী]] পণ্ডিতদের অনেকেই অনুধাবন করা শুরু করে যে ইসলাম এবং ইসলামী সমাজের পিতৃতান্ত্রিক চর্চাসমূহের মধ্যে কোন বন্ধন নেই। যেমন, এই নারীবাদীরা মুহম্মদের জীবন সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে শুরু করে এবং যুক্তি দেখায় যে তিনি নারীদের সাথে সেই সময় অনেক প্রগতিশীল উপায়ে ব্যবহার করতেন। [[মুহাম্মাদ|মুহম্মদ]] তার ধর্মীয় চর্চায় তার সকল স্ত্রীকেই অন্তর্ভূক্ত করেন এবং তাদেরকে তিনি এতটাই সম্মান করতেন যে তাদের দুঃখ এবং উপদেশ আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করতেন। এমনকি তারা যুদ্ধেও তার সাথে অংশগ্রহণ করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Ahmed|প্রথমাংশ=Leila|শিরোনাম=Women and Gender in Islam|বছর=1992|প্রকাশক=Yale UP|অবস্থান=New Haven|পাতাসমূহ=64–78}}</ref> মুসলিম নারীবাদীদের কথা অনুসারে, ইসলামে বহুবিবাহের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামপূর্ব যুগে যে বহুবিবাহের প্রথা প্রচলিত ছিল তা হ্রাস করা। সেসময় বিজয়ী শাসকগণের অনেক বড় আকারের হারেম থাকত, আর সেখানে নারীকে কোনরকম সম্মান দেয়া হত না, যেখানে ইসলাম সেই স্ত্রীর সংখ্যা কমিয়ে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ে আসে যা একজন স্বামীর জন্য প্রয়োজন হতে পারে ও যেখানে স্বামীকে তার প্রত্যেক স্ত্রীর সাথেই সমানভাবে আচরণ করতে হবে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Ahmed|প্রথমাংশ=Leila|শিরোনাম=Women and Gender in Islam|বছর=1992|প্রকাশক=Yale UP|অবস্থান=New Haven|পাতাসমূহ=11–24}}</ref> এই নারীবাদীগণ সেই ধারণাতেই জোড় দেন যে, কেবল যেসব পুরুষ তাদের স্ত্রীদেরকে সমান ভালোবাসা এবং সমানভাবে ভরন পোষণের সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন কেবল তাদেরকেই একাধিক স্ত্রীর অনুমোদন দেয়া হবে। তারা এও বলেন যে, ইসলামে বহুবিবাহের চর্চা শুরুর কারণ ছিল পিতৃহীন বা অনাথ শিশুর দেখাশোনা ও যত্ন নেবার উদ্দেশ্যে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Wadud|প্রথমাংশ=Amina|শিরোনাম=Qur'an and Women: Rereading the Sacred Text from a Woman's Perspective|বছর=1999|প্রকাশক=Oxford UP|অবস্থান=New York|পাতাসমূহ=83}}</ref> তাই সেসময় বহুবিবাহ পরহিতকারী ও সম্মানজনক উদ্দেশ্যে বহুবিবাহের বিধান দেয়া হয়েছিল। ইসলামী নারীবাদীগণ বলেন, "প্রাচীন দুনিয়ায় লিঙ্গ বৈষম্য বলে কিছু ছিল না, এবং খ্রিষ্ঠীয় ও ইহুদি ধর্মগ্রন্থে নারীদেরকে যেভাবে দেখা হয়েছে ইসলামী ধর্মগ্রন্থে নারীরা তার থেকে খুব একটা ভিন্ন অবস্থানে নেই" - এই কথাগুলোর ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের অভাব থেকে প্রসূত।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Mir-Hosseini|প্রথমাংশ=Ziba|শিরোনাম=Muslim Women's Quest for Equality: Between Islamic Law and Feminism|সাময়িকী=Critical Inquiry|বছর=2006|খণ্ড=32|সংখ্যা নং=4|পাতাসমূহ=641|ডিওআই=10.1086/508085}}</ref>
 
দুজন শীর্ষস্থানীয় মুসলিম পণ্ডিত যারা ধর্মগ্রন্থের পুনর্ব্যাখ্যার মাধ্যমে নারীর অধিকার বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করেছেন তারা হলেন [[আমিনা ওয়াদুদ]] এবং [[আসমা বারলাস]]। এই দুজন নারীর মতেই ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা লৈঙ্গিক সমতা প্রচার করে। তাদের মতে লিঙ্গ বৈষম্যের মূল কারণ সামাজিক চর্চাসমূহ, ইসলাম নয়। ওয়াদুদ বলেন, কুর'আন তিনটি ক্ষেত্রে ববুবিবাহেরবহুবিবাহের অনুমতি দেয়: যদি স্বামী যৌন-সন্তুষ্ট না হন এবং এরজন্য তিনি অন্য সম্পর্ক বা পতিতার কাছে না গিয়ে আরেকজন স্ত্রীর কাছে যেতে পারেন, যদি প্রথম স্ত্রী সন্তান ধারণে অক্ষম হয় বা অন্য কোন মায়ের তার সন্তান সহ দেখভালের প্রয়োজন হয়, এবং/অথবা স্বামী মুসলিম সমাজের অন্য কোন নারীর ভরন পোষণের জন্য অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট সক্ষম হন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Wadud|প্রথমাংশ=Amina|শিরোনাম=Qur'an and Woman: Rereading the Sacred Text from a Woman's Perspective|বছর=1999|প্রকাশক=Oxford UP|অবস্থান=New York|পাতাসমূহ=84}}</ref> ওয়াদুদের মতে, কুর'আন যেরকম বহুবিবাহ সমর্থন করে, তা হচ্ছে "ন্যায়, যেখানে ন্যায় এর সাথে আচরণ করা হয়, ন্যায় এর সাথে অর্থ ব্যবহার করা হয়, অনাথদের সাথে ন্যায় বিচার করা হয়, এবং স্ত্রীদের সাথেও ন্যায় বিচার করা হয়।"<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Wadud|প্রথমাংশ=Amina|শিরোনাম=Qur'an and Woman: Rereading the Sacred Text from a Woman's Perspective|বছর=1999|প্রকাশক=Oxford UP|অবস্থান=New York|পাতাসমূহ=83}}</ref> বারলাস, যিনি এর কয়েক বছর পর তার তাত্ত্বিক গবেষণা প্রকাশ করেন, তিনিও একই যুক্তি দেখান। উভয় নারীবাদী পণ্ডিতই ৪:৩ আয়াতে বহুবিবাহ সম্পর্কিত ইসলামী তত্ত্বের উৎস্য সম্পর্কে বলেন। কুর'আনের এই আয়াতটি নারীকে শোষণ করার জন্য বহুবিবাহের বিধান দেবার জন্য দেয়া হয় নি, বরং নারীর যত্ন নিশ্চিত করতেই এটি দেয়া হয়।
 
ইসলামী দুনিয়ায় আরেকরকম নারীবাদ আছে যা স্বাধীন বা রাষ্ট্রীয় নারীবাদ। এই আন্দোলনের পেছনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে "ইসলামী আইনগত এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কোন সংস্কার সম্ভব নয় যেখানে ক্ষমতা কাঠামো চূড়ান্ত মাত্রায় পুরুষ শাসিত এবং এটি সংবিধান দ্বারা সমর্থিত, যে সংবিধানটি কেবল পুরুষ দ্বারা নির্মিত ধর্মীয় ব্যবস্থা যা রাষ্ট্রকে পরিচালিত করে।"<ref name="Moghadam 2002 1151">{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Moghadam|প্রথমাংশ=Valentine|শিরোনাম=Islamic Feminism and Its Discontents: Toward a Resolution of the Debate|সাময়িকী=Signs|বছর=2002|খণ্ড=27|সংখ্যা নং=4|পাতাসমূহ=1151|ডিওআই=10.1086/339639}}</ref> তারা এও বলেন যে, ইসলাম নারীদের একটি পরিষ্কার ভূমিকাকে সমর্থন করে এবং বাঁচিয়ে রাখে যা নারীকে একটি প্রান্তিক স্তরে মূল্যায়িত করে।<ref name="Moghadam 2002 1151" /> এই মুসলিম নারীবাদীগণ বলেন ধর্মগ্রন্থের পুনর্ব্যাখ্যা দিয়ে নারীর অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন করা যাবে না, আর সম্ভবত নারীর অধিকার বৃদ্ধির একটি মাত্র উপায় হচ্ছে ইসলামের গণ্ডিত বাইরে গিয়ে কাজ করা।<ref name="Moghadam 2002 1151" /> তাই তাদের মতে বর্তমানে প্রচলিত বহুবিবাহ প্রথার পরিবর্তন আনতে চাইলে কেবল কুর'আন-হাদিস আসলেই এই চর্চাকে সমর্থন করে কিনা বা করলে কতখানি করে তা নির্ণয় করে এগুলোর পুনর্ব্যাখ্যা দেয়াই যথেষ্ট হবে না, তার পরিবর্তে এর জন্য রাজনৈতিক ও আইনব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।