দ্বারকানাথ ঠাকুর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
→‎পারিবারিক ইতিহাস: বানান সংশোধন ইত্যাদি
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
২৩ নং লাইন:
 
== শিক্ষা ও কর্মজীবন ==
সে যুগের সামাজিক গতিচেতনা ও নবজাগরণে ঠাকুর পরিবার উদ্যোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সমাজে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢসুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়। এ পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটেই কর্মযোগী দ্বারকানাথ ঠাকুরের আবির্ভাব। কয়েক পুরুষ ধরে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদের সঙ্গে শ্লথ সম্পর্ক এবং জ্ঞাতিকলহের কারণে মানসিকভাবে আহত দ্বারকানাথ ঠাকুর নিজের উদ্ভাবনাশক্তি ও আত্মমর্যাদাবোধে স্থিতধী হয়ে স্বাধীন বণিকবৃত্তিতে নিয়োজিত হন। বর্ণগত বৈষম্যের কারণে ঠাকুর পরিবারের কোন সদস্য এমনকি [[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] পর্যন্ত কোন [[কুলীন ব্রাহ্মণ]] পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন নি।
 
[[রবার্ট গুটলার ফারগুসন]] নামক একজন ব্রিটিশ আইনজীবীর অধীনে শিক্ষানবিশ হিসেবে দ্বারকানাথ [[চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত]] সম্পর্কিত আইন এবং [[কলকাতা সুপ্রিম কোর্ট]], সদর ও জেলা আদালতের যাবতীয় আইন ও কার্যপ্রণালী বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৮১৫ সালে তিনি সফলভাবে আইন ব্যবসা শুরু করেন। অচিরেই তিনি পিতা রামলোচনের নিকট থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমিদারির সীমানা প্রসারে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৮৩০ সালে দ্বারকানাথ [[রাজশাহী জেলা|রাজশাহী জেলার]] কালীগ্রামের জমিদারি এবং ১৮৩৪ সালে [[পাবনা|পাবনার]] শাহজাদপুরের জমিদারি নিলামে ক্রয় করেন। তার জমিদারিতে বেশ কিছু অংশীদার ও সহ-অংশীদার ছিলেন। কিন্তু তিনি [[বহরমপুর]], [[পাণ্ডুয়া]], [[কালীগ্রাম]] ও [[শাহজাদপুর|শাহজাদপুরে]] চারটি বড় জমিদারির মালিক ছিলেন এবং এগুলিতে তার কোন অংশীদার ছিল না। ১৮৪০ সালে সেগুলি তিনি তার সন্তান ও তাদের উত্তরাধিকারীদের ট্রাস্ট করে দেন। দ্বারকানাথ ঠাকুরের জমিদারি পরিচালনার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি এটিকে সামন্ততন্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে মূলধনের সৃষ্টিশীল প্রসার হিসেবে বিবেচনা করেন। এক্ষেত্রে তিনি সমকালীন জমিদারদের চেয়ে ব্যতিক্রম ছিলেন। জমিদারি পরিচালনার জন্য তিনি কয়েকজন ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করেছিলেন।
৩১ নং লাইন:
১৮৩৫ সালে সরকারের পক্ষ থেকে দ্বারকানাথকে সম্মানসূচক ‘[[জাস্টিস অব দি পীস]]’ পদ প্রদান করা হয়। তখন থেকেই এ পদটি প্রথমবারের মতো ভারতীয়দের জন্য চালু হয়। ১৮৪০ সালের মধ্যে দ্বারকানাথ তার মূলধনি কারবারের সাফল্যের শিখরে উপনীত হন। তিনি [[জাহাজ ব্যবসা]], [[রপ্তানি বাণিজ্য]], [[বীমা]], [[ব্যাংকিং]], [[কয়লা খনি]], [[নীলচাষ]], শহরের গৃহায়ণ প্রকল্প এবং জমিদারি তালুকে অর্থ বিনিয়োগ করেন। তার ব্যবসার তদারকি করার জন্য তিনি কয়েকজন ইউরোপীয় ম্যানেজার নিযুক্ত করেন।
 
ইউরোপীয় ও স্বদেশী বন্ধুদের উৎসাহে অনুপ্রাণিত হয়ে দ্বারকানাথ ঠাকুর তার বন্ধু ও দার্শনিক [[রামমোহন রায়|রাজা রামমোহন রায়]] এর মতো ব্রিটেন যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৮৪২ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি নিজস্ব স্টিমার ‘দি ইন্ডিয়া’ যোগে সুয়েজের পথে যাত্রা করেন। তার সফরসঙ্গী ছিলেন ইউরোপীয় চিকিৎসক [[ডা. ম্যাকগাওয়ান]], তার ভাগনে [[চন্দ্রমোহন চ্যাটার্জী]], ব্যক্তিগত সহকারী [[পরমানন্দ মৈত্র]], তিন জন হিন্দু ভৃত্য ও একজন মুসলমান বাবুর্চি। বিলেতে তাকে রাজকীয় সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন [[ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী]] [[রবার্ট পীল]], [[বোর্ড অব কন্ট্রোল|বোর্ড অব কন্ট্রোলের]] এর প্রেসিডেন্ট [[লর্ড ফিটজার্যাল্ড]], [[প্রিন্স এলবার্ট]], কেন্ট-এরকেন্টের রাজকুমারী এবং [[রানী ভিক্টোরিয়া]]। ২৩ জুন তিনি রানীর সঙ্গে রাজকীয় সৈন্যবাহিনী পরিদর্শন করে অতিবাহিত করেন। ৮ জুলাই রানী তাকে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেন। দ্বারকানাথ সম্পর্কে রানী তার ডায়রিতে লেখেন :
{{cquote| “ব্রাহ্মণব্রাহ্মণ ভদ্রলোক বেশ ভাল ইংরেজি বলেন এবং তিনি একজন বুদ্ধিমান ও চমৎকার মানুষ”মানুষ<ref>কুইন ভিক্টোরিয়া’স জার্নাল, জুলাই ৮, ১৮৪২</ref>}}
 
১৫ অক্টোবর দ্বারকানাথ [[ইংল্যান্ড]] থেকে [[প্যারিসে]] যান। ২৮ অক্টোবর ফ্রান্সের রাজা [[লুই ফিলিপ]] তাকে [[সেন্ট ক্লাউডে]] এক সংবর্ধনা দেন। ১৮৪২ সালের ডিসেম্বরে তিনি কলকাতা প্রত্যাবর্তন করেন। উনিশ শতকের চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকের ব্যবসায়িক মন্দা এবং দ্বারকানাথের নবলব্ধ আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন এ দুয়ে মিলে তার ব্যবসাক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে তিনি বহু ব্যক্তি ও কোম্পানির কাছে ঋণী হয়ে পড়েন। এ ঋণের বোঝা তার মৃত্যু পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে বাড়তেই থাকে। পরিণামে তার পুত্র দেবেন্দ্রনাথকে পিতার ঋণের দায় বহন করতে হয় এবং গোটা পরিবারকে দায়মুক্ত করতেই তার সারাজীবন কেটে যায়। মহামন্দায় কেবল দ্বারকানাথই নন, আরও অনেক ব্যবসায়ীর জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসে।
৩৮ নং লাইন:
বস্তুত, ১৮৩০-৩৩-এর মহামন্দায় দ্বারকানাথের উত্থান ঘটে এবং ১৮৪৫-৪৮-এ তিনি এর শিকার হন। অবশ্য তার শ্রেষ্ঠ সাফল্য নিহিত রয়েছে অন্যত্র। ব্যবসা-বাণিজ্যে ইউরোপীয়দের সঙ্গে সহযোগিতা চলে আসছিল দীর্ঘদিন ধরেই। কিন্তু দ্বারকানাথই প্রথম বাঙালি যিনি ইউরোপীয়দের সমকক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। স্বীয় যোগ্যতাবলে ব্রিটিশ বণিকদের বাণিজ্য জগতে একজন সমান অংশীদার রূপে নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করে দ্বারকানাথ প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটান।
 
==মৃত্যু==
১৮৪৬ সালে লন্ডনে কিছুকাল রোগভোগের পর তার জীবনাবসান ঘটে।