উৎসব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Tirtha Debnath (আলোচনা | অবদান)
→‎ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা: ব্যাকরণ ঠিক করা হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
Tirtha Debnath (আলোচনা | অবদান)
→‎মুহররম: ব্যাকরণ ঠিক করা হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
৯ নং লাইন:
 
উৎসবের মূল ভিত্তি এবং অধিকাংশ প্রাচীন আচার অনুষ্ঠানই যৌথ কর্ম। মানুষের প্রধান কর্ম কৃষির সঙ্গেও যোগ ছিল অনেক অনুষ্ঠান বা উৎসবের এবং সেসব নিয়ন্ত্রিত হতো চান্দ্রমাস দ্বারা। প্রাচীনকালের আচার অনুষ্ঠানগুলি ছিল অতিপ্রাকৃতিক শক্তিকে বশে আনার এক ঐন্দ্রজালিক প্রক্রিয়া; পরবর্তীকালের সংস্কৃতিতে তার চারিত্রিক উপাদান রয়ে গেছে। প্রাচীনকালের কৃষিভিত্তিক উৎসবগুলি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, যা পরবর্তীকালে অনেক আনুষ্ঠানিক হয়ে ওঠায় তার স্বতঃস্ফূর্ততা হারায়।
 
==মুহররম==
বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কম হলেও উনিশ শতকের ষাটের দশক পর্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে মুহররম পালিত হয়েছে, যার রেশ এখনও বিদ্যমান। সুষক্ষ্ম মতাদর্শী মুগল শাসকদের অনেকেই মুহররমের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। মুর্শিদকুলী খান থেকে মুবারকউদ্দৌলা সবাই ছিলেন শিয়া সমর্থক। সিরাজউদ্দৌলা তাদের জন্য নির্মাণ করে দিয়েছিলেন ইমামবারা। শুধু তাই নয়, নওয়াবগণ মুহররম শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণও করতেন এবং মুহররমের ব্যয় নির্বাহ হতো সরকারি কোষাগার থেকে। ইংরেজ আমলে তা রহিত করা হয়। ঢাকার নায়েব-নাজিমরা ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ের, সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই আঠারো ও উনিশ শতকে ঢাকায় শিয়া আধিপত্য প্রবল হয়। বাংলাদেশে তখন ঢাকা ছিল মুহররম পালনের প্রধান কেন্দ্র। গ্রামাঞ্চলে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে উনিশ শতকে। মুহররম নিয়ে গ্রামাঞ্চলে অনেক পুঁথি রচিত হয়েছে। সেগুলি মুহররম ছাড়া অন্যান্য সময়েও সুর করে পড়া হয়। মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ-সিন্ধু প্রকাশের (১৮৮৫-৯১) পর বাংলাদেশে মুহররম নতুন মাত্রা লাভ করে।
 
বাংলাদেশে যে মুহররম পালিত হয় তাতে বিভিন্ন সময়ে এখানকার হিন্দু ও লোকায়ত অনেক আচার-অনুষ্ঠান যুক্ত হয়। ইরানে মুহররমের মিছিলে একটি শবযান বহন করা হয়, কিন্তু বাংলা তথা ভারতে থাকে দুটি। কারণ ভারতীয়সহ বাঙালি মুসলমানরাও বিশ্বাস করেন যে, হযরত আলীর দুছেলেই কারবালার যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেছিলেন; তাই আশুরার দিন ‘হায় হাসান! হায় হোসেন!’ বলে শোক প্রকাশ করা হয় এবং রোজা রাখা হয় দুজনের সম্মানেই। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তা নয়; হাসানকে বিষপানে হত্যা করা হয়েছিল মদীনায় ৬৭০ খ্রিষ্টাব্দে, আর হোসেন শাহাদত বরণ করেন কারবালায় ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে।ঢাকা ব্যতীত বাংলাদেশে অন্যান্য অঞ্চলের মুহররম পালন সম্পর্কে তেমন প্রাচীন তথ্য পাওয়া যায় না। উনিশ শতকের শেষার্ধে বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলমান গ্রামে খুব জাঁকজমকের সঙ্গে তাজিয়া মিছিল বের করা হতো।
 
ঢাকায় এখন মুহররম পালনের মূল কেন্দ্র শিয়া সম্প্রদায়ের ইমামবারা হোসেনী দালান। তবে ঢাকার সবচেয়ে পুরনো ইমামবারা ফরাশগঞ্জের বিবিকা রওজা মহল্লায় অবস্থিত। জনৈক আমীর খান ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন। ১৮৬৯ সালের ঢাকার মানচিত্রে একটি পুরনো হুসেনী দালানের উল্লেখ আছে; ফুলবাড়িয়ার কাছে ছিল মীর ইয়াকুবের হুসেনী দালান। আরও দুটি পুরনো হুসেনী দালান ছিল ছোট কাটরা এবং মুকিম কাটরায়।
 
মুহররম মোটামুটি ১০ দিনের অনুষ্ঠান। আশুরার বা দশম দিনের অনুষ্ঠানটিই উল্লেখযোগ্য। ওই দিন ঢাকার আজিমপুরে বসত বিরাট মেলা, যা এখনও টিকে আছে। বিভিন্ন ইমামবারা থেকে ওই দিন তাজিয়া নিয়ে মিছিল করে সবাই আসে আজিমপুরের হুসেনাবাদে। সেখানে তাজিয়াগুলি কালো কাপড়ে ঢেকে নিঃশব্দে নিয়ে আসা হয় হুসেনী দালানে।
 
মুহররমের প্রধান অঙ্গ তার মিছিল। মিছিলে থাকে সাজানো তাজিয়া, দুলদুল ঘোড়া, নানা রঙের হাজারো নিশান, ‘হায় হাসান, হায় হুসেন’ ধ্বনি আর তাজিয়ার ওপর থাকে হাজার জালালী কবুতর। কিন্তু জন্মাষ্টমীর মিছিল যেমন হিন্দু-মুসলমান, নারী-পুরুষ সকলের নিকটই প্রিয় ছিল, মুহরমের মিছিল তেমনটি ছিল না। তখন মুহররমের মিছিলের অগ্রভাবে চলত লাঠি ঘোরানো, তলোয়ার খেলা আর পেছনে থাকত জ্বলন্ত ইটের মিছিল। অতীতে ঢাকায় শিয়া মুসলমানদের সংখ্যা কম হলেও শান-শত্তকতের সঙ্গে মিছিল বের করা হতো।
 
ষাটের দশক পর্যন্ত মুহররম মিছিলে জাঁকজমক ছিল, ক্রমে তা কমতে থাকে। এখন মূল যে মিছিল বের হয় তা সকালে শুরু হয় হুসেনী দালান থেকে। সেখান থেকে বখশীবাজার, আজিমপুর, পুরানা পল্টন হয়ে বিকেলে ধানমন্ডির লেকে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তাজিয়া বির্সজন দেওয়া হয়। আগে করা হতো আজিমপুরের কারবালার ঝিলে, এখন সে ঝিল আর নেই।
 
ঢাকার মুহররমের একটি প্রধান আকর্ষণ মেলা। মুহররম উপলক্ষে মেলা বসে হুসেনী দালান, বখশীবাজার, ফরাশগঞ্জ ও আজিমপুরে। এর মধ্যে আজিমপুরের মেলাটিই সবচেয়ে বড়। এ ছাড়া বাংলাদেশের যে কোনো অঞ্চলেই মুহররম পালিত হোক না কেন, এর আনুষঙ্গিক উপাদান হিসেবে মেলা থাকবেই।
 
বর্তমানে ঢাকা, মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছুটা ভিন্ন মাত্রায় মুহররম পালিত হয়। কোনো কোনো এলাকায় নির্ধারিত বাড়িতে বংশ-পরম্পরায় বিভিন্ন লৌকিক পীর-ফকিরের অনুষ্ঠান ও শির্নী মানতের তারিখ অনুযায়ী মুহররম উদযাপিত হয়ে থাকে। উল্লিখিত বাড়িগুলিতে মুহররম মাসের প্রথম তারিখেই বাড়ির প্রাঙ্গণ বা বাড়ি সংলগ্ন একটি স্থানে মাটি দিয়ে চতুষ্কোণ বিশিষ্ট তিনতাকের একটি বেদি তৈরি করা হয়। বেদিটির সামনেই খনন করা হয় ছোট একটি পুকুর। বেদির চারকোণায় চার রঙের চারটি পতাকা গেঁথে তার মাঝে মাঝে কাঁচা মাটির ওপর পেতল বা রুপার তৈরী ছোট ছোট চাঁদ, তারা, চোখ ইত্যাদি লাগান হয় এবং সামনের পুকুরটি সাধ্যানুযায়ী দুধ বা পানিতে পূর্ণ করার পর বেদির একপাশে একটি ধারালো ছুরি বা তীর বিদ্ধ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ এ বেদিটিকে বলা হয় ‘বরকত মা’র থল। বেদির চারপাশে রঙ্গিন কাগজের ঝালর ও ছোট ছোট নিশান পুতে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। তারপর একে কেন্দ্র করেই শুরু হয় অনুষ্ঠান। এখানে সবাই এসে মানত করে এবং জিনিসপত্র দিয়ে যায়। যিনি ‘থল’ পরিচালনা করেন তিনি দশদিন শুধু নিরামিষ খেয়ে রোজা রাখেন। এ ছাড়া মুহররমের বাকি অনুষ্ঠান যেমন, মর্সিয়া, জারি গাওয়া, লাঠি খেলা এসব অন্যান্য অঞ্চলের মতোই। তবে এসব গ্রামে মুহররমের সব অনুষ্ঠানের কেন্দ্রই ‘থল’ এবং দশই মুহররম মাটির বেদিটিকেই বিসর্জন দেওয়া হয়।
 
মুহররমে শুধু মুসলমানরাই নয়, এক সময় হিন্দুরাও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করতেন। ১৮৩১ সালের একটি প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, বাংলায় বছরে ১৪ হাজার তাজিয়া নির্মিত ও প্রদর্শিত হতো, তার মধ্যে ৬০০টিই হিন্দুদের তৈরি। আসলে উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত ধর্মীয় উৎসবগুলি ছিল সর্বসাধারণের জন্য এক ধরনের আনন্দোৎসব বা মিলনোৎসব, যে কারণে দুর্গাপূজা সহ হিন্দুদের উৎসবেও মুসলমানদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
 
মুহররমের অনুষ্ঠানের একটি প্রধান উপাদান মর্সিয়া,ভাটিয়ালি এবং জারি গাওয়া। এর একটি কারণ হলো হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাংলার লোকসমাজের সঙ্গীতপ্রিয়তা। মুহররম উপলক্ষে মর্সিয়া ও জারি গান তাই সাধারণ মানুষকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে।
 
==দুর্গাপূজা==
'https://bn.wikipedia.org/wiki/উৎসব' থেকে আনীত