উৎসব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Tirtha Debnath (আলোচনা | অবদান)
→‎তথ্যসূত্র: বানান ঠিক করা হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
Tirtha Debnath (আলোচনা | অবদান)
→‎ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা: ব্যাকরণ ঠিক করা হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
৯ নং লাইন:
 
উৎসবের মূল ভিত্তি এবং অধিকাংশ প্রাচীন আচার অনুষ্ঠানই যৌথ কর্ম। মানুষের প্রধান কর্ম কৃষির সঙ্গেও যোগ ছিল অনেক অনুষ্ঠান বা উৎসবের এবং সেসব নিয়ন্ত্রিত হতো চান্দ্রমাস দ্বারা। প্রাচীনকালের আচার অনুষ্ঠানগুলি ছিল অতিপ্রাকৃতিক শক্তিকে বশে আনার এক ঐন্দ্রজালিক প্রক্রিয়া; পরবর্তীকালের সংস্কৃতিতে তার চারিত্রিক উপাদান রয়ে গেছে। প্রাচীনকালের কৃষিভিত্তিক উৎসবগুলি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, যা পরবর্তীকালে অনেক আনুষ্ঠানিক হয়ে ওঠায় তার স্বতঃস্ফূর্ততা হারায়।
 
==ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা==
এখানে যেসব উৎসব আলোচিত হবে সেগুলির সঙ্গে ধর্মের যোগ থাকলেও মূলত সেগুলি ধর্মীয় কারণে উদ্ভূত হয় নি, হয়েছিল স্বতঃস্ফূর্তভাবেই; পরে সেগুলি আনুষ্ঠানিক উৎসবে পরিণত হয়। যেমন মুসলমানদের ঈদে কয়েক বছর আগেও গান-বাজনা ছিল একটি প্রধান উপাদান যা স্বতঃস্ফূর্ততার প্রতীক। কিন্তু বর্তমানে তা লোপ পেয়েছে। তবে বর্তমানে এসব উৎসব অনেকটা ফর্মাল হলেও কখনও কখনও তা কেবল ধর্মীয় মাত্রায় আবদ্ধ থাকে না; হয়ে ওঠে সামাজিক কর্মকান্ড এবং যোগাযোগের মাধ্যম।
 
বাংলাদেশে প্রচলিত ধর্মীয় উৎসবগুলির উৎস প্রাচীনকালের লোকবিশ্বাস, পরে ধর্ম সেগুলিকে ফর্মাল করেছে। এ ক্ষেত্রে মুসলমানদের ঈদ ও মুহররম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য; সে সঙ্গে রমজানের কথাও বলা যেতে পারে। কালে কালে বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি এসবের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং তাতে বদল হয়েছে ধর্মের শুদ্ধ রূপেরও, যে কারণে বাংলাদেশের মুসলমান ও মধ্যপ্রাচ্য বা ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনচর্চা এক নয়।
 
বাংলাদেশের মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিত্‌র ও ঈদুল আযহা। রমজান শেষে ঈদুল ফিত্‌র পালিত হয়। ঈদের সামাজিক অর্থ উৎসব, আর আভিধানিক অর্থ পুনরাগমন বা বারবার ফিরে আসা। অন্যান্য সামাজিক উৎসবের মতো ঈদও বারবার ফিরে আসে। একই কথা প্রযোজ্য ঈদুল আযহা ও হজ্জ সম্পর্কেও।
 
আদি যুগে এ দুটি উৎসব পালনে কৃষিজীবী মানুষের লোকায়ত বিশ্বাসের প্রভাব ছিল, পরে কিছু ধর্মীয় রীতি-নীতি যুক্ত হয়। বর্তমানে উৎসব দুটি যতটা গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হচ্ছে, আগে সেভাবে হতো না; কারণ তখন ঔপনিবেশিক সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ছিল, সে সঙ্গে ছিল জনগণের দারিদ্র্য এবং ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।
 
মুগল যুগে ঈদের দিন যে হৈ চৈ বা আনন্দ হতো তা বহিরাগত উচ্চপদস্থ এবং ধনাঢ্য মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের ছিল ব্যবধান। তবে মুগলরা যে ঈদের গুরুত্ব দিতেন তা বোঝা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় শাহী ঈদগাহর ধ্বংসাবশেষ দেখে।
 
উনিশ শতকের শেষ দিকে ঈদের আনুষঙ্গিক আনন্দ হিসেবে যুক্ত হয় একটি নতুন উপাদান লোকায়ত মেলা। সে ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে এবং বর্তমানে ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কমপক্ষে বারোটি মেলার আয়োজন করা হয়। বিগত একশ বছরে বাঙালি মুসলমানরা যেভাবে ঈদ পালন করতেন তার বিবরণে দেখা যায়, ঈদ উৎসবের একটি প্রধান অঙ্গ ছিল বিশেষ ধরনের খাওয়া-দাওয়া। মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলের খাবারের মধ্যে থাকত কোরমা-পোলাও, ঘরে প্রস্ত্তত নানা রকমের পিঠা, সেমাই ও শিউলি বোটার রঙে মাখানো জরদা। অবিবাহিত মেয়েরা পিঠার ওপর অাঁকতেন প্রজাপতি, যা বহুকাল ধরে বাঙালিদের কাছে বিয়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তবে শহরে এ দেশিয় উপাদানের অভাব ছিল। ঈদের খাওয়ার তালিকায় প্রধান হয়ে উঠত ঘরে তৈরী মিষ্টান্ন। ঢাকায় উনিশ শতকে ঈদের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ঈদ মিছিল। সম্ভবত ঢাকার নায়েব-নাজিমগণ ঢাকার বিখ্যাত জন্মাষ্টমী মিছিলের অনুপ্রেরণায় এ মিছিল চালু করেছিলেন। মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর কয়েক বছর আগে থেকে আবার এ মিছিল চালু হয়েছে।
 
পরবর্তীকালে ঈদের সঙ্গে কিছু স্থানীয় উপাদান যুক্ত হয়েছে, যার অনেকগুলি এসেছে বিভিন্ন লোকাচার থেকে, যেমন ঈদের চাঁদ দেখে সালাম দেওয়া, কদমবুসি করা, মেলা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়।
 
অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় বা শহুরে সংস্কৃতিও প্রভাব ফেলেছে এ উৎসবে। বিশ শতকের ত্রিশ-চল্লিশ দশকে ঢাকায় ঈদের দিন রমনা, আরমানিটোলা বা অন্যান্য মাঠে ‘খটক’ নাচ অনুষ্ঠিত হতো। এ ছাড়া ছিল নৌকা বাইচ, ঘুড়ি ওড়ানো, ঘোড়দৌড়, হিজরা নাচ ইত্যাদি। ঘোড়দৌড় ও হিজরা নাচ ছিল ঢাকার বাবু কালচারের অঙ্গ, যা যুক্ত হয়েছিল ঈদ উৎসবের সঙ্গে। এ শতকের শুরুতে রাজনৈতিকভাবে মুসলিম স্বাতন্ত্র্য আন্দোলন শুরু হলে ঈদ উৎসব নতুন গুরুত্ব লাভ করে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর বাংলাদেশে দ’ুটি ঈদই জাতীয় ধর্মোৎসবে রূপান্তরিত হয় এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছে।
 
বিশ শতকে তিনদিনের ঈদুল আয্হা পালন উপলক্ষে কোরবানি, বিশেষত গরু কোরবানিতে অন্যান্য সম্প্রদায় থেকে বাধা দেওয়া হতো। কিন্তু সম্প্রদায় হিসেবে মুসলমানরা শক্তিশালী হয়ে উঠলে সে বাধা আর থাকে নি। পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে অনেক মধ্যবিত্তের পক্ষে অন্তত একটি খাসি কোরবানি দেওয়া সম্ভব ছিল, কারণ তা পঞ্চাশ থেকে একশো টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। গ্রামে অনেকে পোষা খাসি বা গরু কোরবানি দিতেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরে বিত্তবান ও বিত্তহীনের তফাৎ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানি এখন সামাজিক মর্যাদার সূচক হয়ে উঠেছে। গ্রামে এখন কোরবানি ধনী এবং মাঝারি চাষীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। শহরের পেশাজীবীদের অধিকাংশই ভাগে গরু কোরবানি দিয়ে থাকেন। অনেকের পক্ষে তাও সম্ভব নয়। বিত্তবানরা নিজেরাই গরু, খাসি কিংবা উভয়ই কোরবানি করেন।
 
কোরবানির কয়েকদিন আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গায় পশু বেচা-কেনার হাট বসে। হূষ্টপুষ্ট দামি গরুর গলায় ঝোলানো হয় কাগজের মালা। আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদ উৎসবের এ বৈশিষ্ট্যগুলি এখন দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। নগরায়ণ, মধ্যবিত্তের প্রসার প্রভৃতি উৎসবের আমেজে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। কোরবানিতে প্রাণীর বৈচিত্র্য এসেছে। খাসি এবং গরুর পাশাপাশি এখন উট ও দুম্বাও সীমিত সংখ্যায় কোরবানি দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের ঈদ মানে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়া, নতুন কাপড় কেনা এবং ঈদের দিন যথাসাধ্য উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করা।
 
==মুহররম==
'https://bn.wikipedia.org/wiki/উৎসব' থেকে আনীত