সিলেটের ইতিহাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Walimahmud (আলোচনা | অবদান)
→‎আর্য যুগ: অচ্যুত চরণ চৌধুরী, দেওয়ান এম মনসুর আলী, সম্প্রসারণ
৮৪ নং লাইন:
১৭৮১ ও ১৭৮৪ সালে পরপর দুটি বিষম বন্যায় সমৃদ্ধপূর্ণ সিলেট ভূমী দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হয়। একদিকে ইংরেজদের লুটরাজ ও উল্লেখিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ বিষম অন্য অভাব দেখা দেয়। সিলেটের তদানিন্তন কালেক্টর লিন্ডসে তার আত্মজীবনিতে লিখেছেন; উল্লেখিত করাল দুর্ভিক্ষ হতে মুক্তি পেতে এ অঞ্চল হতে যে ধান বিক্রয়ের জন্য কলিকাতায় পাঠানো হয়েছিল, তা পুনরায়ন করিতে নৌকা পাঠিয়ে ছিলেন। তাতে কিয়দাংশ ধানই আনতে পেড়েছেন। ইংরেজ দুশ্যাসন ও দুর্যোগে পতিত সিলেটবাসী ধীরে ধীরে ক্ষুব্ধ হয়ে ইংরেজদের বিরোদ্ধে বিদ্রোহে ঘোষণা করে। ১৭৮২ তে সংঘটিত হয় খাসিয়া বিদ্রোহ, ১৭৮৬ সালে চরগোল্লায় বিদ্রোহ, ১৭৯০ সালে জমিদারদের সাথে বিদ্রোহ । উল্লেখ্য যে, তাজুল মোহাম্মদ সহ অনেক ঐতিহাসিকদের মতে উভয় বাংলার ফকির সন্ন্যাসী সংঘটিত হয়ে ১৭৬৩ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সুচনা করছিলো, তারই ধারাবাহিকতায় জনশক্তি বাড়ানোর নিমিত্তে অলিদের মাজার সহ বিভিন্ন মন্দির ও আখরায় ফকির সন্ন্যাসীরা দল বেঁধে ঘুরা-ফেরা করতেন। তারা বিশেষ ধরনের পোশাক পরিধান করতেন এবং হাতে লাঠি ও ত্রিশুল বহন করতেন । ব্রিটিশ কোম্পানীর শাসকরা ফকির সন্ন্যাসীদের এধরনের চলা-ফেরা সংন্দেহের চোখে দেখত। তাই ১৭৭৩ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের বড়লাট ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস ফকির সন্ন্যাসীর লাঠি ত্রিশুলসহ ভ্রমণ এবং চাঁদা ও বিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যার ফলে ফকির সন্ন্যাসীরা একপর্যায়ে বিদ্রোহে মেতেউঠেন। অনেক হতাহতির পর ১৮০০ সালের দিগে ভারত বর্ষের ঐতিহাসিক ফকির সন্ন্যাসীর এ আন্দোলন প্রায় স্তিমিত হয়ে আসে। তখন সিলেটে [[আগা মোহাম্মদ বেগ]] এর নেতৃত্বে ফকির সন্যাসীরা উত্তপ্ত হয়ে উঠেন। [[আগা মোহাম্মদ বেগ]] ১৭৯৯ সালে কাছার হতে ১২'শ ফকির সন্যাসীসৈন্য সহ সিলেটে প্রবেশ করেন। সাথে সাথে এখানকার জমিন্দারগণ তাকে সমর্থন জানিয়ে ইংরেজকে খাজানা প্রদান বন্ধ করে দেন । ফলশ্রুতিতে ইংরেজরা ''বিন্দাশায়'' [[আগা মোহাম্মদ বেগ]] এর আস্তানা আক্রন করে প্রথমে পারাজিত হয় । পরবর্তিতে ব্রিটিশ ভারতের রাজকীয় বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য পাঠানো হলে, ওদের সাথে যুদ্ধে আগা মোহাম্মদের বাহিনী পেরে ওঠেনি । ফলে প্রাণ দিতে হয় হাজারও সৈন্যকে। এদিকে [[আগা মোহাম্মদ বেগ]] উপায়ন্তর না দেখে ত্রিপুরার দিকে পালিয়ে যাওয়ার পথে ইংরেজদের হাতে বন্দি হন এবং ধরা পড়েন তার অনুসারী খাকীশাহ, রামপুর শাহ, নাজির শাহ ও রহিম শাহ সহ অনেক । ইংরেজরা [[আগা মোহাম্মদ বেগ]] বিচার ঢাকায় না করে কলিকাতায় নিয়ে যায় এবং যাবতজীবনের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
 
১৭৮৬ সালে নভেম্বর মাসে প্রতাপগড়ের জমিদার রাধারাম ব্রিটিশ কোম্পানিকে রাজস্ব দিতে অস্বীকার করে নিজেকে স্বাধীন নবাব ঘোষণা করে চরগোল্লায় বিদ্রোহ করেন। রাধারামের কুকি সৈন্যবাহিনীর বিরোদ্ধে রবার্ট নিন্ডসে ডেভিডসনের নেতৃত্বে সৈন্য প্রেরিত হয় । খবর পেয়ে রাধরাম তার বাহিনী নিয়ে ঐতিহাসিক শন বিলের পাড়ে ঘাটি স্থাপন করেন। ঐতিহাসিক সৈয়দ মুর্তাজা আলী শনবিল সম্পর্কে লিখেছেন; তখনকার সময়ে শনবিল ছিল অপ্রসর, সুর্দীঘ ও গভীর তরঙ্গসংকুল। এই শনবিল সম্পর্কে প্রবাদ ছিল, '''শনবিলে নড়ে চড়ে, রাতায় পরান মারে'''। শন বিলের উত্তরাংশকে রাতা বিল বলা হয়। ইংরেজ সৈন্যরা শন বিল দিয়ে রাধারামকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে এবং নৌকা যোগে সৈন্য বাহিনী নিয়ে শন বিল দিয়ে যাত্রা শুরু করে। ইংরেজরা গোলা-বারুদ ও কামান দিয়ে নৌকা থেকেই শন বিলের তীরে অবস্থানরত রাধারামের সৈন্যবাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। একদিকে শন বিলের তরঙ্গময় স্রোত আর অন্যদিকে রাধারামবাহিনীর তীর-ধনুকের আঘাতে ইংরেজ বাহিনী আর তীরে ভিড়তে না পেরে প্রাণ হারায়। পরবর্তিতে ইংরেজরা রাধারামের বন্ধু কানুরামের সহযোগিতায় চরগোলার গোপন স্থল পথের সন্ধায় পেয়ে সে পথ ধরে আবার চরগোল্লায় আক্রমণ করে রাধারামকে বন্দী করে এবং বাড়ি ঘর পুড়িয়ে ভস্ম করে চরগোল্লা জয় করে <ref name="সিলেটের দুইশত" />। এছাড়া ১৮২৬ সালে কুকিদের সরদার বুন্তাই'র নেতৃত্বে কুকিরা এবং ১৮২৭ সালে সিলেটের পাণ্ডুয়ায় খাসিয়ারা বিদ্রোহ করে ।
 
===সিপাহি বিদ্রোহ===
১৮২৬ সালে কুকিদের সরদার বুন্তাই'র নেতৃত্বে কুকিরা এবং ১৮২৭ সালে সিলেটের পাণ্ডুয়ায় খাসিয়ারা বিদ্রোহ করে । ১৮৫৭ সালে সিপাই বিদ্রোহ নামের ভারত ব্যাপী বিষম বিদ্রোহ ঘটিত হয়। এ বিদ্রোহের একটি স্ফুলিঙ্গ সিলেটে ইংরেজদের বিদগ্ধ করতে ধাবিত হলে সিলেটে সংঘটিত হয় সিপাই যুদ্ধ। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে দেশীয় সৈন্য বাহিনী যখন বিদ্রোহ ঘোষণা কর, এ সময় চট্টগ্রামের ৩৩৩৪ নং সীমান্তবেঙ্গল রক্ষীপদাতক রেজিমেন্টের ২,৩,পদাতক বাহিনীনম্বর কোম্পানী [[রজব আলী|হাবিলদার রজব আলীর]] নেতৃত্বে চট্টগ্রামের অস্ত্রগার ও ট্রেজারীট্রেজারীতে লুটহামলা করে এবং জেলখানার বন্ধি মুক্তি করে তারা পালিয়ে আসে সিলেটের দিকে। ত্রিপুরা পার হয়ে সিলেট প্রবেশ করলে সিলেটের মৌলভীবাজার অঞ্চলের পৃথিমপাশার জমিদার গউছ আলী খান তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে পাহাড়ি অঞ্চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অন্যদিকে ইংরেজ প্রেরিত এক বিরাট বাহিনী বিদ্রোহী সিপাইদের গতিরোধ করতে প্রতাপগরের দিকে অগ্রসর হয় । চট্টগ্রাম হতে আগত সৈন্য সহ তিনশ'র ও বেশি স্বদেশী বাহিনী ইংরেজদের মোকাবেলা করতে বড়লেখা থানার পাশে লাতু নামক স্থানে অবস্থান নেয় এবং এ লাতু অঞ্চলে বিদ্রোহী সিপাইদের সাথে ইংরেজ বাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ হয় । তখন বিদ্রোহী সিপাইদের গুলিতে ইংরেজ সেনাপতি মিষ্টারমেজর বিংব্যাং সহ আরো অনেক ইংরেজ সৈন্য নিহত হয় । এ যুদ্ধ ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল । শহীদ হন অনেক দেশীয় সিপাই । অবশেষে ইংরেজ বাহিনী সুবেদার অযোধ্যা নামক যোদ্ধার রণ কৌশলে বিদ্রোহী সিপাইদের অনেক জন আহত হলে বাকিরা পালয়ন করেন । এরপর ইংরেজরা বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া করে পলাতক সিপাইদের নিহত ও বন্দি করে সিপাই বিদ্রোহ দমন করে।
 
১৮৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে [[অসম|আসাম]] প্রদেশ গঠিত হয়। তখন আসামের ব্যয়ের তুলনায় আয় ছিল নগণ্য। স্থায়ী প্রশাসন পরিচালনায় শিক্ষিত লোকও অভাব ছিল । সিলেট জেলায় লোক বসতি অপেক্ষাকৃত ঘন ছিল। এখানকার লোক শিক্ষাদীক্ষায়ও অগ্রসর ছিল। সিলেটের নিম্নাঞ্চলে ধান ফসলে ভাণ্ডার ছিল । এছাড়া এ অঞ্চলে কয়লা, পাথর ও চুনা প্রভৃতি হতে আয় ছিল প্রচুর । তাই সিলেটের লোকবল ও সম্পদের আয়কে কাজে লাগিয়ে আসামকে উন্নত করতে এ জেলাকে আসামের সাথে সংযুক্ত করতে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা জারি করে। সিলেট বাংলার অংশ, তাই সিলেটবাসী বাংলার সাথেই থাকতে চায়। তাই তারা সরকারের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন । প্রশাসন সিলেটবাসীর তিব্র প্রতিবাদে সিলেটকে আসামের সাথে সংযুক্ত করতে ব্যর্থ হয় । তখন ব্রিটিশ ভারতের বড় লাট নর্থব্রুক সিলেটে আসেন । সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বড় লাটের সাথে সাক্ষাত করে আসামে যুক্ত করার প্রতিবাদলিপি পেশ করেন। বড় লাট নর্থব্রুক সিলেটে ডিপুটি প্রশাসন সৃষ্টি করে সিলেটের উন্নয়ন গতিশীল রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে নতুন প্রস্তাবের ভিত্তিতে সিলেটকে আসামে যুক্ত করেন। <ref name="sylhet bibhag" /><ref name="Srihotto" /><ref name="সিলেটের দুইশত" />।