মাতৃভাষা অর্জন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা |
সম্পাদনা সারাংশ নেই ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত |
||
৮ নং লাইন:
শিশুরা কী করে এত সহজে ও দ্রুত ভাষার জটিল সব সূত্র আয়ত্ত করে ফেলে তা নিয়ে গবেষণা হয়েছে। ভাষা আয়ত্ত করার প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেশ কিছু শিখনকৌশল বা শিখনপদ্ধতি প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনও কোনও ভাষাগবেষক বলেছেন যে শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের ভাষা শুনে অনুকরণ (imitation) করে ভাষা আয়ত্ত করে। কিন্তু শিশুরা বেশিরভাগ সময়ই সম্পূর্ণ শুদ্ধ বাক্য অনুকরণ করতে পারে না, বরং আংশিকভাবে অনুকরণ করে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে (spontaneous) ভুলত্রুটিসহ বাক্য সৃষ্টি করে। আবার কিছু কিছু শিশু কম বয়সে স্নায়ুগত বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে কথা বলতে সক্ষম না হলেও ভাষা বুঝতে পারে এবং পরবর্তীতে এই বাকবৈকল্য (speech disorder) কাটিয়ে উঠলে সাথে সাথে কথা বলতে শুরু করে। সেকারণে অনুকরণ শিশুর ভাষা অর্জনের মূল কৌশল হতে পারে না।
অন্য কিছু গবেষক বলেছেন যে প্রাপ্তবয়স্করা শিশুদের ভাষার ব্যাকরণের ভুল শুধরে দিলে বা সঠিকভাবে ভাষা বলার জন্য বাহবা দিলে ধীরে ধীরে শিশুমনে নিয়মগুলির দৃঢ়ীভবন (reinforcement) ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত শিশুরা ভাষা অর্জন করে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে বাবা-মা বা বড়দের এরকম
কারও কারও মতে শিশুরা সাদৃশ্য (analogy) পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন নতুন বাক্য গঠন করে, অর্থাৎ একটি বাক্য শুনে সেই একই আদলের অন্য অনেক বাক্য গঠন করে। কিন্তু দেখা গেছে শিশুরা নতুন নতুন প্রশ্নবোধক বাক্য, জটিল বাক্য, ইত্যাদি জটিল কাঠামোবিশিষ্ট বাক্য সৃষ্টি করার সময় তেমন কোনও ভুল করেনা, যদিও তারা এ ধরনের বাক্য আগে থেকে খুব বেশি শোনেনি। বরং তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এমন সব বাক্য তৈরি করে, যেগুলি জটিল কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছে।
প্রস্তাবিত এই পদ্ধতিগুলির কোনটিই তাই সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারেনা কীভাবে শিশুরা ভাষার সূত্রগুলি কাজে লাগিয়ে সৃষ্টিশীলভাবে নতুন নতুন বাক্য গঠন করতে পারে, কিংবা শিশুরা কেন এক ধরনের
শিশুদের ভাষা আয়ত্তকরণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজে ও দ্রুত ঘটে এবং সমস্ত ভাষার সমস্ত শিশুর ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ার ধাপগুলি একই রকম হয়। এ সব কিছুই ঘটে প্রবিষ্ট ভাষিক উপাত্ত বা উদ্দীপকের দারিদ্র্যকে (poverty of stimulus) অগ্রাহ্য করে। শিশু সবসময় তার চারপাশে শুদ্ধভাবে নির্মিত বাক্য শুনতেও পায় না, বরং অর্ধসমাপ্ত বাক্য, বাক্যের খন্ডাংশ, হঠাৎ বিরতি, অযাচিত ভুলত্রুটিযুক্ত বাক্য – এগুলি সবই তার মনে প্রবেশ করে। শিশুদেরকে কেউ সার্বক্ষণিকভাবে বুঝিয়ে বা দেখিয়েো দেয় না যে কোন্ বাক্যগুলি শুদ্ধ আর কোন্গুলি অশুদ্ধ। অর্থাৎ শিশুর মনে যে ভাষিক উপাত্তগুলি প্রবেশ করে, সেগুলি দরিদ্র, নিম্নমানের (impoverished)। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিশু শেষ পর্যন্ত শুদ্ধ, ভুলত্রুটিহীন পূর্ণ বাক্য বলতে সক্ষম হয়। এ কারণে ধারণা করা হয় যে ভাষা আয়ত্ত করার মানসিক প্রবৃত্তি বা ক্ষমতাটি (mental faculty) শিশুর জন্ম থেকেই থাকে এবং শিশু এই জটিল প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করার আগেই একটি "বিশ্বজনীন ব্যাকরণ" (Universal Grammar)) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বিশ্বজনীন ব্যাকরণ কোন নির্দিষ্ট ভাষা যেমন বাংলা বা ইংরেজি ভাষার ব্যাকরণের মত নয়, বরং এটি এমন কিছু মূলনীতির (principles) সমষ্টি যেগুলি সমস্ত মনুষ্য ভাষা মেনে চলে। ভাষা আয়ত্তকরণ তাই একটি সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়া। শিশুরা তাদের মনে প্রবিষ্ট ভাষিক উপাত্তের উপর ভিত্তি করে মানসিক ব্যাকরণ (mental grammar) সৃষ্টি করে এবং এ কাজে বিশ্বজনীন ব্যাকরণ তাদেরকে নির্দেশনা দেয়।
|