প্রাচ্যতত্ত্ব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
নকীব বট (আলোচনা | অবদান)
বানান সংশোধন
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৯ নং লাইন:
===শিল্প===
শিল্প ইতিহাসে প্রাচ্যতত্ত্ব শব্দটি দ্বারা পশ্চিমা শিল্পীদের শিল্পকর্মকে বোঝায় যারা উনিশ শতকে পশ্চিম এশিয়ায় ভ্রমন করে প্রাচ্যকেন্দ্রিক বিষয়গুলোতে স্বল্প কিছু জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। সেই সময়টাতে এইসব শিল্পী এবং পণ্ডিতদের ‘প্রাচ্যবিদ’ হিসাবে বর্ণনা করা শুরু হয়। এই রীতি বিশেষভাবে চালু হয় ফ্রান্সে যেখানে বর্জনার্থে "প্রাচ্যবিদ" শব্দটির ব্যবহার শিল্প সমালোচক জুল-এন্টো কাস্টাগনারির হাত ধরে জনপ্রিয় হয়েছিল। প্রতিনিধিত্বমূলক শিল্পশৈলীর ক্ষেত্রে এ জাতীয় সামাজিক অবজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ১৮৯৩ সালে ফ্রেঞ্চ সোসাইটি অব ওরিয়েন্টালিস্ট পেইন্টার্স প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জ্যান-লোন গুরমে এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।<ref>Harding, 74</ref> ব্রিটেনে অবশ্য ‘প্রাচ্যবিদ’ শব্দটি দ্বারা একজন ‘শিল্পী’কেই বোঝানো হচ্ছিল।<ref>Tromans, 19</ref>
ফরাসী ওরিয়েন্টালিস্ট পেইন্টারস সোসাইটি গঠনের ফলে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে শিল্পচর্চাকারীদের চেতনায় একটা পরিবর্তন সূচিত হয়, যেহেতু শিল্পীরা এখন নিজেদের একটা পৃথক শিল্প আন্দোলনের অংশ হিসাবে দেখতে পাচ্ছিলেন। একটা শিল্প আন্দোলন হিসাবে প্রাচ্য চিত্রকলাকে সাধারণত ঊনিশ শতকের একাডেমিক শিল্পের অনেকগুলি শাখার একটা বলে বিবেচনা করা হয়; তবে প্রাচ্যকেন্দ্রিক শিল্পকর্মের বিভিন্ন শৈলীর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। শিল্প ইতিহাসবিদরা এমন দুটি বড় ধরণের প্রাচ্যশিল্পকে শনাক্ত করেন: এর মধ্যে আছেন বাস্তববাদীরা যারা তাদের পর্যবেক্ষণগুলি সাবধানতার সাথে চিত্রায়ন করেছেন এবং আরেক দল যারা স্টুডিওর বাইরে না গিয়েই প্রাচ্যের নানা দৃশ্যের কল্পনা চিত্রায়ন করেছেন।<ref>{{Citeবই bookউদ্ধৃতি |doiডিওআই = 10.1163/9789004282537_019|chapterঅধ্যায় = Middle Eastern Collections of Orientalist Painting at the Turn of the 21st Century: Paradoxical Reversal or Persistent Misunderstanding?|titleশিরোনাম = After Orientalism: Critical perspectives on Western Agency and Eastern Reappropriations|yearবছর = 2014|last1শেষাংশ১ = Volait|first1প্রথমাংশ১ = Mercedes|isbnআইএসবিএন = 9789004282520|chapterঅধ্যায়ের-urlইউআরএল = https://halshs.archives-ouvertes.fr/halshs-01094882/file/AO_Volait%202011_author-version.pdf|editor-last1 = Pouillon|editor-first1 = François|editor-last2 = Vatin|editor-first2 = Jean-Claude|ppপাতাসমূহ =251–271|seriesধারাবাহিক=Leiden Studies in Islam and Society|volumeখণ্ড=2}}</ref> ফরাসি চিত্রশিল্পীদের যেমন ইউগেন ডেলাক্রিক্স (১৭৯৮-১৮৬৩) এবং জ্যান-লিয়ন গারমেকে (১৮২৪-১৯৯৪) প্রাচ্যতাত্ত্বিক আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।<ref>Encyclopedia.com, https://www.encyclopedia.com/literature-and-arts/art-and-architecture/art-general/orientalism</ref>
 
===প্রাচ্য অধ্যয়ন===
আঠারো এবং উনিশ শতকে প্রাচ্যবিদ বলতে এমন এক পণ্ডিতকে বোঝানো হতো যিনি পূর্ব বিশ্বের ভাষা ও সাহিত্য বিশেষভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন। এ ধরণের পণ্ডিতদের মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্রিটিশ আধিকারিকরা ছিলেন যারা আরব বিশ্ব ও ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ইসলামী সংস্কৃতিকে ইউরোপের সংস্কৃতির সমান হিসাবে অধ্যয়ন করা উচিত বলে মত দিয়েছিলেন।<ref>{{citeবই bookউদ্ধৃতি |lastশেষাংশ = Macfie |firstপ্রথমাংশ = A. L.|yearবছর = 2002 |titleশিরোনাম = Orientalism |publisherপ্রকাশক = Longman| locationঅবস্থান = London|urlইউআরএল=https://books.google.com/books?id=0FrJAwAAQBAJ&printsec=frontcover#v=onepage&q&f=false |isbnআইএসবিএন = 978-0582423862|refসূত্র = none| pপাতা = Ch One}}</ref> এমন মত দেওয়া পণ্ডিতদের মধ্যে ছিলেন ভাষাতাত্ত্বিক উইলিয়াম জোনস যার ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার উপর গবেষণা আধুনিক ভাষাতত্ত্বের জন্ম দিয়েছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা ১৮২০ সাল অবধি ভারতীয়দের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কৌশল হিসাবে প্রাচ্যতত্ত্বের এই রূপটি সমর্থন করেছিল, যখন থমাস ব্যাবিংটন ম্যাকুলের এবং জন স্টুয়ার্ট মিলের মতো "ইংরেজরা" ইংরেজি মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার বিস্তারের দিকে মনোযোগ দেওয়া শুরু করে।<ref>Holloway (2006), pp. 1–2. "The Orientalism espoused by Warren Hastings, William Jones and the early East India Company sought to maintain British domination over the Indian subcontinent through patronage of Hindu and Muslim languages and institutions, rather than through their eclipse by English speech and aggressive European acculturation."</ref>
অধিকন্তু, ঊনিশ ও বিশ শতকে ব্রিটিশ এবং জার্মান পণ্ডিতদের মধ্যে ইহুদি ও ইহুদি ধর্মকেন্দ্রিক অধ্যয়ন জনপ্রিয়তা অর্জন করে।<ref>{{citeওয়েব webউদ্ধৃতি|urlইউআরএল=https://www.jewishvirtuallibrary.org/jsource/judaica/ejud_0002_0008_0_08624.html|titleশিরোনাম=Hebraists, Christian|websiteওয়েবসাইট=www.jewishvirtuallibrary.org|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=22 October 2017}}</ref> একাডেমিক ক্ষেত্রে প্রাচ্যতাত্ত্বিক অধ্যয়ন যা নিকট ও দূর প্রাচ্যের সংস্কৃতিগুলিকে উপলব্ধি করেছিল পরবর্তীতে এশীয় গবেষণা এবং মধ্য প্রাচ্য অধ্যয়নের ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।
 
===সমালোচনামূলক অধ্যয়ন===
‘ওরিয়েন্টালিজম’ (১৯৭৮) নামক বইটিতে সংস্কৃতি সমালোচক এডওয়ার্ড সাঈদ পরিভাষাটিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তার মতে, প্রাচ্যতত্ত্ব হল প্রাচ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পশ্চিমা ঐতিহ্যের এমন এক কুসংস্কারযুক্ত একাডেমিক ও শৈল্পিক কিন্তু বহিরাগত-ব্যাখ্যা-যা আঠারো ও ঊনিশ শতকের ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ থেকে উদ্ভূত সাংস্কৃতিক মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত।<ref>Tromans, 24</ref> প্রাচ্যতত্ত্বের প্রতিপাদ্যটি আন্তোনিও গ্রামসির সাংস্কৃতিক আধিপত্যের তত্ত্ব এবং মিশেল ফুকোর জ্ঞান/শক্তি সম্পর্কের তত্ত্বায়নকে পশ্চিমা জ্ঞানবাদী ঐতিহ্যের সমালোচনা করার জন্য এগিয়ে নিয়ে যায়। সাঈদ সেইসব সমকালীন পণ্ডিতদের সমালোচনা করেছেন যারা আরব-ইসলামী সংস্কৃতিকে বোঝার জন্য বাইরের লোকের ব্যাখ্যাকে স্থিরীকৃত করে ফেলেছেন। এর মধ্যে বার্নার্ড লুইস এবং ফুয়াদ আজামির মতো পণ্ডিতের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।<ref>''Orientalism'' (1978) Preface, 2003 ed. p. xv.</ref><ref name= Xypolia2011>{{citeসাময়িকী journalউদ্ধৃতি|lastশেষাংশ=Xypolia|firstপ্রথমাংশ=Ilia|titleশিরোনাম=Orientations and Orientalism: The Governor Sir Ronald Storrs|journalসাময়িকী=Journal of IslamicJerusalem Studies|yearবছর=2011|volumeখণ্ড=11|pagesপাতাসমূহ=25–43|urlইউআরএল=https://dergipark.org.tr/en/download/article-file/294256}}</ref>
তার বিশ্লেষণগুলি অবশ্য ইউরোপীয় সাহিত্যে বিশেষত ফরাসী সাহিত্যে প্রাচ্যতত্ত্ব সম্পর্কিত ধারনাগুলোর উপর আলোকপাত করে। দৃশ্যশিল্প কিংবা প্রাচ্যকেন্দ্রিক চিত্রকর্মগুলো তার সমালোচনার আওতাভুক্ত নয়। এই বিষয়ে শিল্প ইতিহাসবিদ লিন্ডা নোচলিন সাইদের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলি "অসম ফলাফল সহ" প্রয়োগ করেছিলেন। ২০১০ সালে ইবনে ওয়ারাক জিন-লিয়ন গারুমের ‘সাপুড়ে’ চিত্রকর্মটি নিয়ে নোচলিনের সমালোচনাকে খণ্ডন করার এবং সাধারণভাবে প্রাচ্যকেন্দ্রিক চিত্রকর্মের সাফাই গেয়ে ‘লিন্ডা নোচলিন এবং কাল্পনিক প্রাচ্য’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন।
 
একাডেমিক জগতে ওরিয়েন্টালিজম (১৯৭৮) বইটি শীঘ্রই উত্তর-ঔপনিবেশিক সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের ক্ষেত্রে একটা মূল পাঠ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। তদুপরি, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাগরিকত্ব ধারণাটির বিশ্লেষণে প্রাচ্যতত্ত্ব নাগরিকত্বের ধারণাটিকে জ্ঞানতত্ত্বের একটি সমস্যা হিসাবে উপস্থাপন করেছে। কারণ নাগরিকত্ব ধারণাটির উদ্ভব পশ্চিমা বিশ্বের একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে। এ কারণে নাগরিকত্বকে সংজ্ঞায়িত করার সমস্যাটি সঙ্কটকালীন ইউরোপের ধারণাটিকে নতুন রূপ প্রদান করে।<ref>Mura, Andrea, (2015) "[https://www.academia.edu/21512966/Dis-orienting_Austerity_The_Indebted_Citizen_as_the_New_Soul_of_Europe Disorienting Austerity: The Indebted Citizen as the New Soul of Europe]" In Engin Isin (ed.), ''Citizenship After Orientalism: Transforming Political Theory''. Basingstoke: Palgrave Macmillan.</ref>
এ ছাড়াও, সাঈদের মতে, প্রাচ্যতত্ত্ব, ‘প্রতিনিধিত্বের ধারণা হিসাবে একটি তাত্ত্বিক ধারণা: যা প্রাচ্যের এমন একটি পর্যায়কে ইঙ্গিত করে যেখানে পুরো প্রাচ্য একটা ধারণার জগতে সীমাবদ্ধ। এই ধারণাটি পশ্চিমাদের কাছে প্রাচ্যকে ‘কম ভীতিকর’ হিসেবে উপস্থাপন করতে সহায়তা করে বলে সাঈদ মত দিয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্বের এ ধরণেরধরনের চিন্তাভাবনাই উপনিবেশবাদের মূল কারণ বলে তিনি মনে করতেন। অধিকন্তু, ‘সাম্রাজ্য: সংক্ষিপ্ত পরিচিতি’ (২০০০), নামক বইয়ে স্টিফেন হো বলেছেন যে পশ্চিমা দেশগুলি এবং তাদের সাম্রাজ্য অনুন্নত দেশগুলির শোষণ এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশে অবৈধভাবে সম্পদ ও শ্রম আহরণের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।<ref>{{citeবই bookউদ্ধৃতি|last1শেষাংশ১=Howe|first1প্রথমাংশ১=Stephen|titleশিরোনাম=Empire:A Very Short Introduction|publisherপ্রকাশক=Oxford University press|pagesপাতাসমূহ=73–77}}</ref>
ইসলামী বিশ্বেও প্রাচ্যতত্ত্ব বিষয়ে এক ধরণেরধরনের সমালোচনামূলক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। অনুমান করা হয় যে ২০০২ সালে একমাত্র সৌদি আরবেই প্রাচ্যতত্ত্বের সমালোচনায় স্থানীয় বা বিদেশী পণ্ডিতদের দ্বারা প্রায় ২০০ টি বই এবং ২০০০ এরও বেশি নিবন্ধ লেখা হয়।<ref>{{Citeবই bookউদ্ধৃতি |doiডিওআই = 10.1163/9789004379183_018|chapterঅধ্যায় = Discussions on Orientalism in Present-Day Saudi Arabia|titleশিরোনাম = Modern Societies & the Science of Religions: Studies in Honour of Lammert Leertouwer|yearবছর = 2002|last1শেষাংশ১ = Al-Samarrai|first1প্রথমাংশ১ = Qasim|isbnআইএসবিএন = 9789004379183|editor-last1 = Wiegers|editor-first1 = Gerard|seriesধারাবাহিক=Numen Book Series|volumeখণ্ড=95|ppপাতাসমূহ=283–301}} Page 284.</ref>
 
==আরো দেখুন==