বঙ্গাব্দ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

[অপরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
আরাফাত হাসান (আলোচনা | অবদান)
→‎মাস: তথ্যসূত্র যোগ/সংশোধন
ট্যাগ: ২০১৭ উৎস সম্পাদনা
আরাফাত হাসান (আলোচনা | অবদান)
→‎সংস্কারকৃত বাংলা বর্ষপঞ্জী: সম্প্রসারণ ও হালনাগাদ করা হল
ট্যাগ: ২০১৭ উৎস সম্পাদনা
৩৯ নং লাইন:
যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সূর্য্য ০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে প্রবেশ করে তার পরদিনই ১লা বৈশাখ (পহেলা বৈশাখ) হয়। যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সংক্রান্তি হয় তার পরদিনই মাসের প্রথম দিন। মূলত একটি সংক্রান্তির পরের দিন থেকে অপর সংক্রান্ত পর্যন্ত সময়কে এক সৌর মাস বলা হয়। লক্ষ্য করা যায় সূর্য পরিক্রমণ অনুসারে সূর্য প্রতিটি রাশি অতিক্রম করতে একই সময় নেয় না। এক্ষেত্রে মাসভেদে সূর্যের একেকটি রাশি অতিক্রম করতে সময় লাগতে পারে, ২৯, ৩০, ৩১ বা ৩২ দিন। সেই কারণে প্রতি বছর বিভিন্ন মাসের দিনসংখ্যা সমান হয় না। এই সনাতন বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছর ঋতুভিত্তিক থাকে না। একেকটি মাস ক্রমশঃ মূল ঋতু থেকে পিছিয়ে যেতে থাকে।<ref name="Panjika" />
 
=== সংস্কারকৃত বাংলা বর্ষপঞ্জীবর্ষপঞ্জির সংস্কার ===
[[বাংলা একাডেমী]] কর্তৃক বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ সালে। [[ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ]]'র নেতৃত্বে এ কমিটি বিভিন্ন বাংলা মাস ও [[ঋতু|ঋতুতে]] গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সাংস্কৃতিক জীবনে কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে নির্ণয় করে সেগুলো হতে উত্তরণের প্রস্তাবনা প্রদান করেন। বাংলা সনের ব্যাপ্তি [[গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী]]র মতনই ৩৬৫ দিনের। যদিও সেখানে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের পরিপূর্ণ সময়কেই যথাযথভাবে নেয়া হয়েছে। এই প্রদক্ষিণের মোট সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট এবং ৪৭ সেকেন্ড। এই ব্যবধান ঘোচাতে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর প্রতি চার বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। ব্যতিক্রম হচ্ছে সে শতাব্দীতে যে শতাব্দীকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করা যায় না বা বিভাজ্য। জ্যোতির্বিজ্ঞান নির্ভর হলেও বাংলা সনে এই অতিরিক্ত দিনকে আত্মীকরণ করা হয়নি। বাংলা মাস অন্যান্য সনের মাসের মতনই বিভিন্ন পরিসরের হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলোকে দূর করার জন্য ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কমিটি বাংলা একাডেমীর কাছে কতকগুলো প্রস্তাব পেশ করে। এগুলো হচ্ছেঃ-
 
১৯৫০-এর দশকে প্রখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ড. [[মেঘনাদ সাহা]]কে প্রদান করে [[ভারত]] সরকার ভারতবর্ষের দিনপঞ্জিকা সংস্কারের কমিটি গঠন করে। মেঘনাদ সাহা কমিটি [[১৯৫৪]] খ্রিষ্টাব্দে প্রচলিত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিকার আমূল পরিবর্তন করে [[জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান|জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের]] ভিত্তিতে প্রস্তাব পেশ করেন। এই কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী—
* বছরের প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ বৈশাখ হতে ভাদ্র হবে ৩১ দিনের;
* [[বৈশাখ]] থেকে [[ভাদ্র]]— এই পাঁচ মাস ৩১ দিন গণনা করা হবে।
* বাকী মাসগুলো অর্থাৎ আশ্বিন হতে চৈত্র হবে প্রতিটি ৩০ দিনের মাস;
* [[আশ্বিন]] থেকে [[চৈত্র]]— এই সাত মাস ৩০ দিন গণনা করা হবে।
* প্রতি চতুর্থ বছরের ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করে তা হবে ৩১ দিনের।
* অধিবর্ষে [[চৈত্র]] মাস ৩১ দিন গণনা করা হবে।
সাহা কমিটির প্রস্তাবসমুহ বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভারত সরকার এস পি পান্ডের নেতৃত্বে আশির দশকে আরেকটি কমিটি করে। এই কমিটি মেঘনাদ সাহার প্রস্তাবসমূহকে মূল ধরে ১৪ই এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন হিসাবে নির্ধারণ করে প্রস্তাব পেশ করেন।
 
[[বাংলাদেশ]]ও বেশ কয়েকবার বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। ১৯৬৩ সালে ড. [[মুহম্মদ শহীদুল্লাহ]]র নেতৃত্বে 'বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার' নামে [[বাংলা একাডেমি]] কমিটি গঠন করে যা 'শহীদুল্লাহ কমিটি' নামে পরিচিত হয়। এই কমিটি বিজ্ঞানী [[মেঘনাদ সাহা]]র সুপারিশকে প্রাধান্য দিয়ে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে। এই কমিটি আধুনিক [[গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি]] রীতি অনুসারে রাত ১২টা থেকে দিনের সুচনা করার অর্থাৎ তারিখ পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়। প্রচলিত মাপে সুর্যোদয়ে দিনের শুরু অর্থাৎ তারিখ পরিবর্তিত হতো।
বাংলাদেশে বাংলা একাডেমী সরকারীভাবে এই সংশোধিত বাংলা মাসের হিসাব গ্রহণ করে। যদিও ভারতের পশ্চিম বাংলা, অসম ও ত্রিপুরার বাঙালিরা পুরনো বাংলা সনের ব্যবহার করেন।
 
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে শহীদুল্লাহ কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করে এর ভিত্তিতে বাংলা দিনপঞ্জিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এর পরেও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। বাংলা বর্ষপঞ্জিকাকে আরও বিজ্ঞানভিত্তিক করার জন্য ১৯৯৫ সালের ২৬ জুলাই তৎকালীন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক [[মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ|হারুন-উর-রশিদ]]কে প্রধান করে পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ, ভাষা, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এই কমিটি মেঘনাদ সাহা ও শহীদুল্লাহ কমিটির মূল সুপারিশের নিরিখে ২০টি সুপারিশ পেশ করে। এর উল্লেখযোগ্য ছিল চৈত্র মাসের পরিবর্তে [[ফাল্গুন|ফাল্গুনকে]] অধিবর্ষের মাস হিসেবে নির্ধারণ করা। [[গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি]]তে যে বছর ফেব্রুয়ারি মাস অধিবর্ষ হবে, সেই বছর বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় ফাল্গুন মাস ৩০ দিনের পরিবর্তে হবে ৩১ দিন। <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=আরেক দফা সংস্কার হচ্ছে বাংলা বর্ষপঞ্জি— প্রথম আলো|ইউআরএল=https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1146656}}</ref>
 
তারপরেও জাতীয় দিবসগুলোয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও বাংলা বর্ষপঞ্জি মূলানুগ না হওয়ায় জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো দুটো বর্ষপঞ্জিতে আলাদা দিনে পড়তো। যেমন ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা বর্ষপঞ্জির পাতায় দিনটি ৮ই ফাল্গুন হলেও চলতি বাংলা বর্ষপঞ্জিতে সেটা পড়ে ৯ই ফাল্গুন। বাংলা বর্ষপঞ্জির এহেন বিদ্যমান অসামঞ্জস্য দূর করে পুরোপুরি বিজ্ঞানভিত্তিক এবং জাতীয় দিবসগুলোকে মূলানুগ করতে ২০১৫ সালে [[বাংলা একাডেমি]]র তৎকালীন মহাপরিচালক [[শামসুজ্জামান খান]]কে সভাপতি, [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক [[অজয় রায়]], পদার্থবিজ্ঞানী জামিল চৌধুরী, অধ্যাপক আলী আসগর, একাডেমির পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জি প্রমুখ ব্যক্তিদের নিয়ে তৃতীয়বার বর্ষপঞ্জি সংস্কার কমিটি কমিটি করা হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=বদলে যাচ্ছে বাংলা বর্ষপঞ্জি— প্রথম আলো|ইউআরএল= https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1565143/}}</ref> এই কমিটি প্রধানত বিশেষ দিনগুলোয় গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জিকে ও বাংলা বর্ষপঞ্জিকে মূলানুগ করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের সুপারিশ পেশ করে। এই কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী—
* খ্রিষ্টাব্দের অনুগামী বছরে [[ফাল্গুন]] মাসে বঙ্গাব্দের অধিবর্ষ হবে অর্থাৎ যে খ্রিষ্টাব্দে অধিবর্ষ হবে সেই বাংলা বছরে ফাল্গুন মাস ৩০ দিনে গণনা করা হবে।
* [[বৈশাখ]] থেকে আশ্বিন— এই পাঁচ মাস ৩১ দিন গণনা করা হবে।
* [[কার্তিক]] থেকে মাঘ এবং চৈত্র— এই ছয় মাস ৩০ দিন গণনা করা হবে।
* [[ফাল্গুন]] মাস ২৯ দিনে গণনা করা হবে।
 
বাংলাদেশে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে শামসুজ্জামান খান কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি বর্ষপঞ্জি তৈরি করা হয়। বর্তমানে সরকারিভাবে এই বর্ষপঞ্জিই চালু আছে।
 
== মাস ==