বিষয়শ্রেণী:প্রধান বিষয়শ্রেণী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Tapanbagchi (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
Tapanbagchi (আলাপ) এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে Zaheen এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ�
১ নং লাইন:
[[Category:বিষয়শ্রেণীসমূহ]]
 
 
'''== বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মণি সিংহের অবদান =='''<br />
'''ড. তপন বাগচী'''<br />
উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব কমরেড মণি সিংহ। মণি সিংহ এখন আর কেবল ব্যক্তি বা নাম নয়, রীতিমতো এক প্রতিষ্ঠান। মণি সিংহ এখন জীবনদর্শন আর জীবনাদর্শের প্রতিশব্দ। মণি সিংহ এখন সংগঠন ও সংগ্রামের প্রতীকী প্রতিরূপ। গোটা জীবনই তিনি বিনিয়োগ করেছেন মেহনতী মানুষের মুক্তির জন্য। তাঁর জীবনসংগ্রাম মানেই মানুষের মুক্তির সংগ্রাম। তাঁর প্রতিটি জীবনযুদ্ধ আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পৃথক কোনো কর্মসূচি নয়। তবে কেবল স্বাধীনতা নয়, স্বাধীনতার সঙ্গেসঙ্গে মানুষের সার্বিক মুক্তি ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি শোষণের অবসান ঘটিয়ে একটি সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করেছিলেন। সেই লক্ষ্যে তিনি বিশ শতকের শুরু থেকেই নিজেকে আন্দোলনে যুক্ত রেখেছেন একজন কর্মী হিসেবে। শতাব্দী জুড়েই তিনি ছিলেন আন্দোলন-সংগ্রামের প্রথম কাতারে। নেত্রকোণার সুসং-দুর্গাপুরের নিভৃত গ্রাম থেকে উঠে-আসা রাজনৈতিক মাঠের কর্মী সেই মনীন্দ্রকুমার সিংহ আজকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কমেরড মণি সিংহ নামে একজন সাম্যবাদী নেতা হিসেবে সম্মানিত।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মণি সিংহ (১৯০১-১৯৯০) নেত্রকোণা [তৎকালীন ময়মনসিংহ] জেলার সুসং-দুর্গাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য কলকাতায় যান। কলকাতায় ১৯১৪ সালে তিনি সশস্ত্র বিপ্লবী গোষ্ঠী ‘অনুশীলন’ দলে যোগ দেন। এক দশক পরে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন ত্যাগ করে ১৯২৫ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।
১৯২৮ সালে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে কেশোরাম কটন মিলে শ্রমিকদের ১৩ দিন ব্যাপী ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিয়ে দাবি আদায়ের মাধ্যমে মণি সিংহ রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করেন। ১৯৩০ সালে তিনি গ্রেফতার হন। ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এবং ১৯৩৭ সালের নভেম্বর মাসে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি সুসং-দুর্গাপুরে আসেন। বামপন্থী নেতা বদরুদ্দীন উমরের গবেষণা থেকে জানা যে, ‘১৯৩৭ সালে শেষদিকে সুসং দুর্গাপুরের জমিদারদের ভাগ্নে মণি সিংহকে জেল থেকে মুক্তিলাভের পর তাঁকে দুর্গাপুরের অন্তরীণ রাখা হয়।’ তবে এক্ষেত্রে বিস্তৃত তথ্য উদ্ধার করেছেন ‘নেত্রকোণার ইতিহাস’ গ্রন্থের লেখক, বিশিষ্ট গবেষক আলী আহাম্মদ খান আইয়োবের রচনায়। তিনি জানিয়েছেন যে, ১৯৩০ সালে ১৮ই এপ্রিলের চট্টগ্রামে অস্ত্রলুণ্ঠনের পর সারাদেশের রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। কমরেড মণি সিংহকে গ্রেফতার করা হয় ৯ মে। বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরিয়ে ১৯৩৫ সালে তাঁকে সুসং-দুর্গাপুরের অন্তরীণ রাখা হয়। অন্তরীণ অবস্থায় তিনি নেত্রকোণার এসডিও আহূত সভায় পাটচাষ সংক্রান্ত কৃষকদের দাবির পক্ষে বক্তৃতা করেন। সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বলার অভিযোগে তাঁর নামে মামলা হয় এবং গ্রেফতার করা হয়। দেড় বছর কারাভোগের পরে তাঁকে নদীয়া জেলার কাসিমপুর থানার এক অখ্যাত গ্রামে অন্তরীণ রাখা হয়। ১৯৩৭ সালে মাঝামাঝি সময়ে সেখান থেকে মুক্ত হয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন।
তিনি এখানকার মুসলিম কৃষকদের অনুরোধে সকল কৃষকদের সংগঠিত করে টংক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। মণি সিংহ তাঁর পারিবারিক টঙ্কচাষী গুল মামুদের ৬০ মণ টঙ্কের ধান মওকুফ করে দেন। এতে সকল আত্মীয় জমিদার মণি সিংহের উপর ক্ষিপ্ত হন। তাঁকে সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানাদি থেকেও বাদ রাখা হয়। এটি একধরনের সামজিক শাস্তি। কিন্তু নিজ পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনদের প্রতিপক্ষ হয়ে তিনি সাধারণ কৃষকদের স্বার্থে আন্দোলন অব্যাহত রাখলেন এবং এক পর্যায়ে বিজয়ী হলেন।
১৯৪২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে তিনি প্রকাশ্য রাজনৈতিক কাজও চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৪৫ সালে নেত্রকোণায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কিষাণ সভার মহাসম্মেলনের তিনি অন্যতম সংগঠক ও অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৪৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে সুসং দুর্গাপুর হাই স্কুলে টঙ্কপ্রথাবিরোধী সভায় হাজং সম্প্রদায়ের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণ করেন। হাজং সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে টঙ্ক আন্দোলন নতুন গতি লাভ করে। এই আন্দোলনে হাজংদের অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার যোগ্য। নেত্রকোণার গবেষক আলী আহম্মদ খান আইয়োব ব্যক্তিগত চেষ্টায় কিছু দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘বাংলাদেশের হাজং সম্প্রদায়’ নামের একটি গ্রন্থে তিনি হাজংদের সমাজ-সংস্কৃতি-আন্দোলন-বীরত্বের কথা তুলে ধরেছেন। ‘হাজং মাতা’ বিপ্লবী রাশিমণির অবদানের কথা তিনি তুলে ধরেছেন। গবেষক আইয়োব জানিয়েছে যে, টঙ্ক আন্দোলনে শতাধিক হাজং নেতাকর্মী শহিদ হয়েছেন।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর মণি সিংহ পূর্ববাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি নেত্রকোণার হাজং কৃষকদের নিয়ে টংকপ্রথা উচ্ছেদের আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলন সশস্ত্র রূপ নিলে পাকিস্তান সরকার ১৯৫১ সালে টংকপ্রথা বাতিল করে এবং মণি সিংহের উপর হুলিয়া জারি করে তাঁর স্থাবরÑঅস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে নেয়। এব্যাপারে প্রখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ তাঁর ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ কলাম-গ্রন্থে লিখেছেনÑ
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের পর টঙ্কপ্রথা উচ্ছেদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে টঙ্ক আন্দোলন বন্ধ করা হয়। কিন্তু আন্দোলন বন্ধ করার পর পুনরায় এমন ব্যাপক নির্যাতন শুরু হয় যে, ক্রমেক্রমে হাজং উপজাতির পরিবারগুলো ভারতে চলে যেতে থাকে। তবুও শাসকদের আক্রোশ শেষ হয়নি, তারা পরবর্তী বছর একান্ন সালে পুলিশ পাঠিয়ে মণি সিংহের দুর্গাপুরস্থ বাড়ি ভেঙে গাছ কেটে ভিটের উপর মই চালিয়েছে।
তাঁর টঙ্ক আন্দোলন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন প্রফেসর এবং এশিয়াটিক সোসাইটি’র বাংলাপিডিয়ার প্রধান সম্পাদক ডক্টর সিরাজুল ইসলামের গবেষণা থেকে টঙ্ক আন্দোলন সম্পর্কে জানা যায়Ñ
বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভা তেভাগা, নানকার, নাচোল কৃষক আন্দোলনসহ অনেগুলি কৃষক আন্দোলন পরিচালনা পণ্ঠদান কএরছিল (১৯৪৬)। কৃষক সভার ময়মনসিংহ জেলার এক সাম্যবাদী নেতা মণি সিংহ টঙ্ক আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেলন। উত্তরর ময়মনসিংহ জেলায় বিশেষ করে কলমাকান্দদা, দুর্গাপুর, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ি ও শ্রীবর্দি থানাগুলিতে টঙ্ক ভোগদখল সবচেয়ে বেশি ছিল। এই জায়গাগুলিতে প্রধানত গারো ও হাজং গোষ্ঠীর রায়তরা চাষবাস করত। সুসং দুর্গাপুরের জমিদার কমএরড মণি সিংহের নেতৃত্বে টঙ্ক কৃষকরা ছয়দফা দাবিনামা প্রস্তুত করে। তাদের দাবিগুলি ছিল টঙ্ক প্রথার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি, টঙ্ক কৃষকদের ভূম্যধিকারে স্বীকৃতি, পরগনায় নগদ টাকায় দেয় হারের যথানুপাতে খাজনা নির্ধারণ, টঙ্ক খাজনার বকেয়া দাবি না করা, জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি এবং সাম্রাজ্যবাদের ধ্বংসসাধন। আন্দোলনকারীদের সকল গ্রামে পুলিশরা চড়াও হলে গ্রামের মানুষ ও কমিউনিস্ট স্বেচ্ছাসেবীরা একজোট হয়ে তাদের প্রতিরোধ করে। পুলিশ অনেককে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। ১৯৪৭-এ বাংলা ভাগের পরে খুবই অল্পসময়ের জন্য কৃষকদের আন্দোলন স্তিমিত থাকে কিন্তু ১৯৪৮-এ টঙ্ক আক্টেদালন আবার শুরু হয় এবং ১৯৫০-এ জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। পূর্ববঙ্গ জামদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ বলে সকল টঙ্ক কৃষককে তাদের দখলীকৃত জমির স্বাভাবিক মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
আমরা জানি যে, এলাকার কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে কমরেড মণি সিংহ এই টঙ্ক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এলাকার সাধারণ মানুষই তাঁকে ‘টঙ্করাজা’, ‘হাজং প্রিন্স’ প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করে। কৃষকদের মুক্তির আন্দোলন করতে গিয়ে নিজের বাড়িঘর হারিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধু সরকার তা ফিরিয়ে দিতে চাইলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি, বর্তমানে যাদের অধিকারে আছে, তাদের অধিকার ক্ষুণœ হবে এবং উচ্ছেদের শিকার হবে বলে। মণি সিংহের রাজনৈতিক চিন্তা, দর্শন ও কর্মের প্রতিটি স্তরে মানবমুক্তির আকাক্সক্ষা এবং অধিকার আদায়ের প্রচেষ্টা ছিল। তাই তাঁর রাজনীতি মানেই ছিল সার্বক্ষণিক চলমান মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তরের নয়মাসের মুক্তিযুদ্ধ কমরেড মণি সিংহের জীবনবৃক্ষে কোনো পৃথক শাখা নয়। এটি তাঁর সামগ্রিক জীবনসংগ্রামেরই ফসল মাত্র।
১৯৫১ সালে মণি সিংহ পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫৬ সালে গোপনে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে তিনি আবারও সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৬৮ সালে গোপনে অনুষ্ঠিত পার্টির কংগ্রেসে তিনি তৃতীয়বার পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনের চাপে সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মুক্তিলাভের কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় তিনি গ্রেফতার হন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৭ এপ্রিল সাধারণ কয়েদিদের সহায়তায় তিনি রাজশাহী কারাগার ভেঙে বের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ চলাকালে তিনি মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে মণি সিংহ পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। আমৃত্যু তিনি এই পদে সমাসীন ছিল। তাঁর রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য ও রোমাঞ্চকর। বিশ শতকের শুরুর বছরে জন্ম নেয়া এই রাজনৈকি ঋষি উপমহাদেশের মানুষের সার্বিক মুক্তির লড়াইয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। কেবল উপমহাদেশ নয়, বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের লড়াই-সংগ্রামেও তাঁর এবং তাঁর পার্টির সমর্থন ও কর্মসূচি ছিল। একথা অত্যুক্তি নয় যে, আন্তর্জাতিকতায় বিশ্বাসী এই রাজনীতিবিদ বিশ্বের প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামের অকুতোভয় যোদ্ধা ছিলেন। এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বর্হিবিশ্বে সম্মানিত হয়েছেন। ‘শান্তি, গণতন্ত্র ও সমাজপ্রগতির সংগ্রামে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে মৈত্রী সুদৃঢ়করণে’ অবদানের জন্য মণি সিংহকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারে ‘অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ অব পিপলস’ পদকে ভূষিত করা হয়। কেবল সোভিয়েত ইউনিয়ন নয় বুলগেরিয়া (ডিমিট্রভ পদক) এবং চেকোশ্লোভাকিয়া সরকারও তাঁকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করে। আমরা লক্ষ করি যে, শতাব্দী জুড়ে বেঁচে থাকা এই মনীষী জনগণের পক্ষে যতগুলো আন্দোলন হয়েছে, তাঁর প্রতিটি আন্দোলনের যুক্ত থেকেছেন এবং বেশকিছু আন্দোলনের তিনি দরদী স্রষ্টা। ময়মনসিংহ এলাকার টঙ্ক আন্দোলন তার প্রথম উদাহরণ। কিশোর বয়সে ‘অনুশীলন’ দলে যোগদান, মেটিয়া বুরুজে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী অন্দোলন, আন্তর্জাতিক ফ্যাসিবাদবিরোধ আন্দোলন, ৫২-র ভাষা আন্দোলন এবং ৬৯-এর গণআন্দোলনÑ এগুলো ব্যাপক অর্থে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি-আন্দোলনেরই বিভিন্ন পর্যায়। একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে এই সকল যুদ্ধ ও আন্দোলনের ধারাবাহিক প্রেরণা রয়েছে। তাই মুক্তিযদ্ধে কমরেড মণি সিংহের অবদানকে মূল্যায়ন করতে গেলে পূর্ববর্তী আন্দোলন-সংগ্রামকেও আমলে নিতে হয়। এই পটভূমি বিস্তৃত হলেও তা নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে।
দেশভাগের পরে এই বাংলায় জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে নেতৃত্ব দেন হোসেন শহীদ সোহওরাওয়ার্দি, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, কমরেড মণি সিংহ, কমরেড মোজাফফর রহমান প্রমুখ নেতা। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান জুড়ে যে আন্দোলন দানা বাঁধে তাতেও সামনের সারিতে আমরা অন্যান্য নেতার মতো কমরেড মণি সিংহকে দেখতে পাই। তাঁর অবদানে ভীত হয়ে গণআন্দোলনের আগেই পািকস্তান সরকার ১৯৬৭ তাঁকে গ্রেফতার করে। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় জনতার দাবির কাছে নত হয়ে সরকার তাঁকে মুক্তি দেয়। কিন্তু জুলাই মাসে আবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জেলে বসেই তাঁর নির্দেশ মতো পার্টির আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হতে থাকে। ১৯৭১ সালে আন্দোলন ফুঁসে উঠলে রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিও জোরালো হয়। কিন্তু দেশে কোনো রাজবন্দী রয়েছে এই কথা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্বীকার করতে চাননি। ১৯৭১ সালে তিনি ঢাকায় এলে তেজগাঁও বিমানবন্দরে সাংবাদিকরা তাঁকে ঘিরে ধরে রাজবন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, ‘আমার কোনো রাজিৈনতক মত নেই এবং তাই আমার ক্ষেত্রে কোনো রাজবন্দী নেই।’ এসময় একজন সাংবাদিক বিনাবিচারে আটক থাকা কমরেড মণি সিংহের কথা জানতে চাইলে তিনি জবাব দেনÑ ‘মণি সিংহ কে তা আমি জানি না। তাঁর রাজনৈতিক অভিমত কী তাও আমার জানা নেই।’ কমরেড মণি সিংহকে যে ইয়াহিয়া খান ভালো করেই জানতেন, তাঁকে বারবার আটকে রাখা এবং মুক্তির প্রশ্নটি এড়িয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়েই তার প্রমাণ মেলে।
রাজশাহী কারাগারে বসেই তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের (১৯৭১) ভাষণ শোনেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণার আভাস পেয়ে বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানিয়ে টেলিগ্রাফ করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু রাজবন্দীর টেলিগ্রাফ পাঠাতে পুলিশেস স্পেশাল ব্রাঞ্চের অনুমতি পাওয়া যায়নি। এতে বোঝা যায় যে, ৭ই মার্চ থেকে কমরেড মণি সিংহ স্বাধীনতাযুদ্ধের দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করেন এবং এই আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার প্রয়াস পান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসে বন্দিরা রাজশাহীর কারাগার ভেঙে তাঁকে মুক্ত করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কয়েকজন সহকর্মীর সহায়তায় তিনি রাজশাহীর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ শুরু করেন। তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) এবং রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের চলমান মুক্তিযদ্ধের পক্ষে এই দুটি দেশের সমর্থন আদায়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই উপদেষ্টা পরিষদে আরো ছিলেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, মনোরঞ্জন ধর, মাওলোনা ভাসানী, তাজউদ্দিন আহমদ প্রমুখ নেতা। প্রখ্যাত কমিউিনিস্ট নেতা, সাবেক সাংসদ কমরেড প্রসূনকান্তি রায় (বরুণ রায়) এক স্মৃতিকথায় জানিয়েছেন যে, ‘ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমানের মতো নেতাও তাঁর উপর নির্ভর করতেন এবং ভরসা করতেন’। এরকম ভরসার জায়গায় ছিলেন বলেই মুক্তি আন্দোলনে কমরেড মণি সিংহ অবদান রাখতে পেরেছেন। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কমরেড মণি সিংহকে ‘তরুণ বিপ্লবীদের আদর্শ ও অনুপ্রেরণার উৎস’ হিসেবে অভিষিক্ত করে তাঁর ১৯৭১ সালে ‘অগ্রণী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’র কথা স্মরণ করেছেন।
কমরেড মণি সিংহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন আদায় করেছেন। এপ্রিল মাসে বিশ্ব শান্তি পরিষদের সহযোগিতায় আবদুস সামাদ আজাদ, দেওয়ান মাহবুব আলী এবং ড. সারোয়ার আলীর সমন্বয়ে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে ইয়াহিয়া খানের গণহত্যার বিবরণ তুলে ধরেন। এটিই ছিল বিদেশে বাংলাদেশে প্রথম প্রতিনিধি দল। মে মাসে সিপিআই-এর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তাদের সমর্থন গ্রহণ করেন। সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের কোচিনে অনুষ্ঠিত সিপিআইয়ের কংগ্রেসে কমরেড মণি সিংহ পার্টির প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য তুলে ধরেন। আর ভারতের বিভিন্ন স্থানে শরণার্থী শিবিরের জন্য সহায্য-সহযোগিতা আদায়ে মণি সিংহের ব্যাপক অবদান রয়েছে। শরণাথী শিবিরের সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজেও কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছসেবীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
কেবল বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগই নয়, দেশের অভ্যন্তরে পার্টির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। বাইরের শত্র“ এবং দেশের ভেতরে শত্র“দের মোকাবেলাও তিনি করেন বিচক্ষণতার সঙ্গে। যুদ্ধের বিপক্ষে চীনপন্থীদের অপপ্রচারকেও তিনি দক্ষ হাতে সামাল দেন। কমরেড আহসানউল্লাহ চৌধুরীর ভাষ্য থেকে জানা জায়Ñ
বিভিন্ন মহলের প্রতি তিনি [মণি সিংহ] মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানান। ওই সময় কমরেড মণি সিংহের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। এ-যুদ্ধ জনগণের যুদ্ধ নয় বলে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছিল এবং চীনাপন্থিরা দুই কুকুরের লড়াই বলে যে প্রচারণা চালাচ্ছিল তাকে ভুল ও বিভ্রন্তিকর প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে পার্টি সর্বতোভাবে মাঠে ময়দানে সক্রিয় ছিল। এ-যুদ্ধকে জনগণের লড়াই হিসেবে তুলে ধরে আন্তর্জাতিকভাবে এর পক্ষে সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কমরেড মণি সিংহ।
তিনি ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের সম্বয়ে যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠন করেন। ভারতের আগরতলায় এই গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন কমরেড অনিল মুখার্জি, কমরেড জ্ঞান চক্রবর্তী, কমরেড বারীণ দত্ত প্রমুখ প্রবীণ ও ত্যাগী নেতা। প্রশিক্ষণ ও রিক্রুটমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন কমরেড মোহাম্ম ফরহাদ। যৌথ গেরিলা বাহিনী ৫ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষ দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের জন্য পাঠিয়েছেন। এঁরা দেশে ফিরে বেশ কয়েকটি সফল অপারেশন সম্পন্ন করেন। কুমিল্লার বেতিয়ারায় কমরেড নিজামুদ্দিন আজাদ, কমরেড সিরাজুম মুনির সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হওয়ার মধ্য দিয়ে দিয়ে এই গেরিলাবাহিনীর গৌরবকে বৃদ্ধি করেছেন। পার্টির মূল নেতা কমরেড মণি সিংহের আহ্বানেই এরা রাজনীতিতে এসেছিলেন এবং দেশমুক্তির আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন। যৌথ বাহিনীর ৫ হাজার কর্মী ছাড়াও কমিউনিষ্ট পার্টির ১২ হাজার কর্মী প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিসংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। এছাড়া পার্টির সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীরাও যুদ্ধক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। যৌথ বাহিনীর এই তৎপরতা সারা দেশের প্রতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। বাগেরহাট জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উদ্ধার করতে গিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর স্বরোচিষ সরকার লিখেছেনÑ
কমিউনিস্ট পার্টি, মোজাফ্ফর ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্র“পের কর্মীদের উদ্যোগে মুজিব বাহিনীর আদলে সৃষ্ট আলাদা একটি গেরিলা বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মিত্র বাহিনীর সহযোগী শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল। এই বাহিনীতে বাগেরহাট অঞ্চলের প্রচুর সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলোচনা করে বিশেষ এই গেরিলা বাহিনী সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিলেন কমিউনিষ্ট নেতা মণি সিংহ এবং ন্যাপ নেতা মোজাফ্ফর আহমদ। ঐসব দলের অনুসারী তরুণ ও যুবকদের উক্ত গেরিলা বাহিনীতে নিয়োগ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর, বনগাঁ, টাকি, বালুর ঘাট ও ত্রিপুরার আগরতলায় রিক্রুটিং ক্যাম্প খেলা হয়েছিল। ঐ ক্যাম্পগুলোর পরিচালক হিসেবে তখন দায়িত্ব পালন করেছেন যথাক্রমে নলিনী দাস, সন্তোষ ব্যানার্জি, রতন সেন, জিতেন ঘোষ প্রমুখ।
কলকাতায় কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে বসে মণি সিংহ এই বাহিনী পরিচালনার পরিকল্পনা করতেন। তিনি বাংলাদেশের রণাঙ্গণকে পূর্বাঞ্চলের ৭টি এবং পশ্চিমাঞ্চলের ১১টি জেলাকে নিয়ে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করেন। পূর্বাঞ্চলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক ছিলেন যথাক্রমে ইঞ্জিনিয়ার মর্তুজা খান এবং মাহবুব জামান। পশ্চিমাঞ্চলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক ছিলেন যথাক্রমে এসএম সবুর ও আশীষ দাশগুপ্ত।
গণতন্ত্রী পার্টির নেতা আজিজুল ইসলাম খান এক স্মৃতিচারণায় সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতা কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে মণি সিংহ, খোকা রায়, বারীন দত্ত, অনিল মুখার্জি ও ফরহাদের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ ঘটেছে। কলকাতায় বসে দেশের অভ্যন্তরে গেরিলা বাহিনী পরিচালনা এবং বহির্বিশ্বে যোগাযোগ রক্ষা এবং সমর্থন আদায়ের কাজ বেশ দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন কমরেড মণি সিংহ। ১৯৭১ সালের মে মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে কমরেড খোকা রায়, কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ প্রমুখ নেতা দিল্লি গমন করেন। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানের অনুরোধ করেন এবং অস্ত্র সহযোগিতার প্রত্যাশা করেন। ইন্দিরা গান্ধীর তাঁদের এই অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন। গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা আসামের তেজপুরে ক্যাপ্টেন মুখার্জির তত্ত্বাবধানে ভৈরব মন্দির মঠে প্রশিক্ষণের সুযোগ লাভ বরেন। মুক্তযুদ্ধে কমরেড মণি সিংহের অবদান সম্পর্কে তাঁর জন্মস্থানের এক রাজনৈতিক নেতা, দুর্গাপুরের ন্যাপ সভাপতি দুর্গাপ্রসাদ তেওয়ারীর মূল্যায়ন থেকে জানা যায়Ñ
মণি সিংহ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের জন্য অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সোভিয়েত রাশিয়াসহ সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানে রাজি করান।... কমরেড মণি সিংহ দেশে ফিরে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ যাতে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা পায় সেইরূপ একটি সমাজব্যবস্থা কায়েমের জন্য আন্দোলন শুরু করেন।
মণি সিংহের সেই অন্দোলন-সংগ্রাম এখনো চলছে। যতদিন মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকারগুলো বাস্তবায়িত না হবে, ততদিন এই সংগ্রাম চলবে। আর আমাদের সমানের আদর্শ হয়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন একজন কমরেড মণি সিংহ। তিনি কেবল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সর্বমান্য নেতা নন, বাংলাদেশের খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষের তিনি আদর্শিক নেতা, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষের কাছে তিনি নমস্য পুরুষ। ##