ঝিনাইদহ জেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
আফতাবুজ্জামান (আলোচনা | অবদান) অ 203.76.108.140-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে 103.25.248.234-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত ট্যাগ: পুনর্বহাল |
→ইতিহাস: সংশোধন, সম্প্রসারণ, তথ্যসূত্র যোগ/সংশোধন, পরিষ্কারকরণ, অনুবাদ, রচনাশৈলী, বিষয়শ্রেণী, বিষয়বস্তু যোগ, বানান সংশোধন |
||
৫৪ নং লাইন:
এই জেলার নামকরণ সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। কথিত আছে যে, ক্যালসিয়াম উৎপাদনের জন্য ''‘নবগঙ্গা’'' নদী এবং ''‘দহা’'' নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহের জন্য এই এলাকা বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। এই জেলার নাম ঝিনাইদহ ''“ঝিনুক”'' এবং ''“দাহ”'' শব্দদ্বয় থেকে নেয়া হয়েছে বলে মনে করা হয়। {{তথ্যসূত্র প্রয়োজন}}
আদিকাল হতে অস্তিত্ব রক্ষার্থে [[মানুষ]] দলবদ্ধভাবে বসবাস শুরু করে, আগুনের ব্যবহার শেখার পর মানুষের জীবনাচারণে আসে আমূল পরিবর্তন। সময়ের দাবীতে মানুষের জীবন ও কর্মে আসে বৈচিত্র্যতা, খাদ্যের সাথে অন্যান্য চাহিদাও প্রাধান্য পায়। বসতি গড়ার তাগিদে মিঠা জলের সহজ প্রাপ্তি, জীবন-জীবিকা ও চলাচলের সুবিধার্থে গাঙের পাড়ে (নদীর ধারে) সৃষ্টি হয় নগর, তারই ধারাবাহিকতায় কালের বিবর্তনে একদা [[সুন্দরবন|সুন্দরবনে]]<nowiki/>র বর্ধিত অংশ হয়েও আজ শহরে রূপান্তরিত হয়েছে ‘আমাগের [[ঝিনাইদহ জেলা|ঝিনেদা]]’।
ঝিনুক এর জন্য বিখ্যাত ছিল [[নবগঙ্গা নদী]] তার মধ্যে শহর সংলগ্ন ‘দোয়া’ (দোহা অথবা দহ) গুলিতে [[ঝিনুক]] সহজলভ্য ছিল। ঝিনুক হতে বোতাম তৈরি, মুক্তা সংগ্রহ ও পুড়িয়ে চুন করে অনেকের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হতো বিধায় জঙ্গলে ভরা এলাকাটি বসবাসের জন্য প্রাধান্য পায়। জনগণের মুখে মুখে প্রচলিতঃ ঝিনুকদহ, ঝিনেইদহ, ঝেনিদা, ঝিনেদা, [http://www.jhenaidah.gov.bd/ ঝিনাইদহ] নামকরণের রয়েছে নানা কিংবদন্তী। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, এক ইংরেজ সাহেব ঝিনুক কুড়ানীদের কাছে জায়গাটির নাম জানতে চাইলে তারা ইংরেজি ভাষা না বোঝার কারণে অনুমানে বুঝেছিল তিনি ঘাটে স্তুুপ করে রাখা বস্তুুর নাম জানতে চাচ্ছেন, তাই তারা বলে ‘ঝিনেই’ (ঝিনুক এর আঞ্চলিক শব্দ), তিনি জায়গাটির নাম ধরে নেন ‘ঝেনি’। কালের বিবর্তনে আজ ‘ঝিনাইদহ’ নামটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলেও প্রচলিত আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে ‘ঝিনেদা’ বহুল ব্যবহৃত। নবগঙ্গা নদী ও দোয়ার উপর নির্ভরশীল ঝিনুক কুড়ানী, মৎস্যজীবী, মাঝি-মল্লা ও বণিকেরা খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের দিকে এ এলাকাতে বসতি স্থাপন করে বিধায় ঝিনাইদহের আদি বাসিন্দা হিসেবে তাদের জীবন-জীবিকার প্রধান উপাদান ঝিনুক ও দোহা যুক্ত হয়ে এলাকার নামকরণের সূত্রপাত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
তেমনিভাবে জেলার গৌরবময় প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সবচেয়ে পুরাতন নগর ([[কোটচাঁদপুর পৌরসভা|পৌরসভা]]) ‘[[মহেশপুর উপজেলা|মহেশপুর]]’ নামকরণ হয় যোগীবাবা মহেশ্বরের নাম অনুসারে। মোগল [[জাহাঙ্গীর|সম্রাট জাহাঙ্গীর]] ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে সাহসী যোদ্ধা ইসলাম খান চিশতিকে বাংলার [[সুবেদার]] করলে তিনি উক্ত এলাকাকে [[বারো ভূঁইয়া|বার ভূঁইয়া]]<nowiki/>দের হাত হতে রক্ষার্থে কোট (ফারসি শব্দ যার অর্থ প্রাচীর বেষ্টিত স্থান) নির্মাণ করেন, পরবর্তীকালে এখানে একটি কোর্ট (আদালত) প্রতিষ্ঠিত হয়, এখান থেকে ‘কোট’ ও সুফি দরবেশ চাঁদ খাঁর নামের প্রথম অংশ ‘চাঁদ’ যুক্ত হয়ে ‘[[কোটচাঁদপুর উপজেলা|কোটচাঁদপুর]]’ নামধারণ করে। নলডাঙ্গার রাজা সপ্তদশ শতকে চিত্রা নদীর উত্তর পাড়ে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, উক্ত কালী মন্দির এর নাম অনুসারে ‘[[কালীগঞ্জ উপজেলা, ঝিনাইদহ|কালীগঞ্জ’]] নামকরণ হয়। জমিদার হরিনারায়ণ কুন্ডুর নাম অনুসারে প্রগতি-ভাস্বর খ্যাত ‘[[হরিণাকুণ্ডু উপজেলা|হরিণাকুন্ডু]]’ নামকরণ হয়, প্রচলিত আঞ্চলিক ভাষায় অনেকে ‘হন্যে কুড়ো’ বলে থাকে।
[[শৈলকুপা উপজেলা|শৈলকুপা]] নাম নিয়ে নানা জনশ্রুতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, রাজা হরিশচন্দ্রের কন্যা শৈলবালা ও প্রধান সেনাপতির প্রেমের পরিণতিতে রাজার নির্দেশে পলায়নরত প্রেমিকদ্বয়কে [[কুমার নদ|কুমার নদে]]<nowiki/>র পাড়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে ‘শৈলকুপা’, মতান্তরে পাঠানরাজ এর প্রধান সেনাপতি এনায়েত খাঁ রাজা হরিহরকে পরাজিত করলে সৈন্যরা তার মেয়ে শৈলবালাকেও কুপিয়ে হত্যা করে সে কারণে ‘শৈলকুপা’, মতান্তরে কুমার নদ শৈলমাছের জন্য বিখ্যাত ছিল বলে শৈলের কুপ হতে ‘শৈলকুপা’, মতান্তরে উক্ত এলাকার জলাশয় গুলিতে প্রচুর শৈলগুল্ম হতো বলে শৈলের কুপ হতে ‘শৈলকুপা’, কেউ বলেন কুমার নদের বিখ্যাত শোল মাছ ‘টোটা’ দিয়ে কুপিয়ে শিকার করা হতো বলে ‘শৈলকুপা’, তবে আঞ্চলিক নাম হিসেবে ‘শৈলকুপো’ বহুল প্রচলিত।
[[গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ|গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে]]<nowiki/>র দক্ষিণ দিকে [[ভাগীরথী নদী|ভাগীরথী]] ও [[পদ্মা নদী|পদ্মার]] সংযোগে [[কপোতাক্ষ নদ|কপোতাক্ষ]], [[নবগঙ্গা নদী|নবগঙ্গা]], [[গড়াই নদী|গড়াই]], [[কুমার নদ|কুমার]], ডাকুয়া, [[বেতনা নদী|বেতনা]], [[চিত্রা নদী|চিত্রা]], [[ভৈরব নদ|ভৈরব]], [[বেগবতী নদী|বেগবতী]], [[ফটকি নদী|ফটকী]], [[কালিগঙ্গা নদী|কালিগঙ্গা]], [[ইছামতি নদী|ইছামতি]] নদী সহ অসংখ্য দোহা, বাওড়, খাল-বিলে অঞ্চলটি জালের মত পরিবেষ্টিত বিধায় পলিমাটিতে ঊর্বর এর ভূ-প্রকৃতি। তুলনামূলক ভাবে [[প্রাকৃতিক দুর্যোগ]] কম হবার কারণে দিনে দিনে এটি সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত হয়। অঞ্চলটি [[কৃষিকার্য|কৃষি]], কুটির শিল্প, শিক্ষা, কৃষ্টি, [[লোকশিল্প|লোকজ শিল্প]], সভ্যতা ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে ফলে ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে সকল শাসকগণ এ অঞ্চলকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতো, তাদের প্রভাবে মানুষের ধর্ম, ভাগ্য, কৃষ্টি, কালচার, ভাষা, শিক্ষা ও খাদ্যাভাসের কিছুটা পরিবর্তন হয়ে শংকর জাতিতে রূপান্তরিত হলেও মূল শিকড় হতে কখনো বিছিন্ন হয়নি এ অঞ্চলের মানুষ, ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে গেলে বারবার অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আঁকড়ে ধরেছে তাদের ঐতিহ্য। [[ভারতবর্ষ|ভারতবর্ষে]]<nowiki/>র রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে এ অঞ্চলে তার প্রভাব পড়ে, শাসনের ক্ষেত্রেও আসে পরিবর্তন। বঙ্গ রাজ্য, [[গুপ্ত সাম্রাজ্য]], [[সমতট]], [[গৌড়]], [[হর্ষবর্ধন]], ভদ্র, [[প্রথম যশোবর্মণ|যশোবর্মণ]], [[পাল সাম্রাজ্য|পাল]], [[বর্মণ রাজবংশ|বর্মণ]], সেন বংশ পর্যায়ক্রমে রাজত্ব করেছে এ অঞ্চলে। সপ্তম শতকের কিছু সময় খড়গ রাজবংশের [[বৌদ্ধ ধর্ম|বৌদ্ধ]] শাসক ছাড়া ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন [[ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজী|বখতিয়ার খিলজির]] [[বঙ্গ]] বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত [[হিন্দুধর্ম|সনাতনী]] ধর্মের রাজবংশ শাসিত ছিল এ অঞ্চলটি। [[মুসলমান|মুসলিম]] শাসন প্রতিষ্ঠার পর [[তুরস্ক]] ও [[আফগানিস্তান]] হতে মহাত্মা [[সুফিবাদ|সুফি]]-দরবেশগণ এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সর্দার চাঁদ খাঁন। পরবর্তীসময়ে এ অঞ্চলটি দিল্লী [[সালতানাত|সালতানাতে]]<nowiki/>র অধীনে আসে। [[হোসেন শাহী রাজবংশ|হোসেন শাহী]] আমলের অনেক স্থাপনা নিদর্শন বিদ্যমান বিধায় ধরে নেওয়া হয় তাঁর আমলে উক্ত অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পরবর্তীকালে [[শের শাহ সুরি|শের শাহ]], পাঠান, [[কররানী রাজবংশ|কররানী]], [[মুঘল সাম্রাজ্য|মুঘল]] প্রশাসন দ্বারা অঞ্চলটি পরিচালিত হয়। স্বাধীন [[সুলতান|সুলতানী আমলে]]<nowiki/>ও এ অঞ্চলের [[রাজা]] বা [[জমিদার]] ছিলেন মুুকুট রায় মতান্তরে রামচন্দ্র রায়। এক সময় অঞ্চলটি একই সাথে [[নলডাঙ্গা জমিদার বাড়ি|নলডাঙ্গা]] ও [[মাহমুদ শাহ দুররানি|মাহমুদশাহী]] জমিদারীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ক্ষমতার অদল-বদলের মাধ্যমে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (দ্ব্যর্থতা নিরসন)|ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি]] কর্তৃক [[সিরাজউদ্দৌলা|নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা]]’র পতনের পর অঞ্চলটি ইংরেজদের হস্তগত হয় এবং ঝিনাইদহে [[ফাড়িঁ|ফাঁড়ি]] প্রতিষ্ঠা করে, পর্যায়ক্রম ১৭৯৭ সালে [[থানা]], ১৮৬২ সালে [[মহকুমা]], ১৯৮৪ সালে বর্তমান [[জেলা]]<nowiki/>তে রূপান্তরিত হয়েছে।
আদিকাল হতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলটি গুরুত্ব বহন করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘[[বারবাজার ইউনিয়ন|বারোবাজার]]’ (তৎকালীন নাম [[গঙ্গাঋদ্ধি]]) ভারত মহাদেশের উল্লেখযোগ্য [[বন্দর]] এবং [[সমতট|সমতটের রাজধানী]] ছিল, উক্ত এলাকা হয়ে [[বাগেরহাট জেলা|বাগেরহাটে]] গিয়েছিলেন [[খান জাহান আলী|খাঁন জাহান আলী]] (রঃ), এটি গাজী-কালু-চম্পাবতীর চারণভূমি ছিল এখানে তাদের মাজারও রয়েছে, বারো আউলিয়াগণ ইসলাম প্রচারের জন্য আগমন ক’রে বারোটি মসজিদ নির্মাণ করেন বলে এলাকাটির নামকরণ ‘বারোবাজার’ হয়। মরমী কবি [[লালন|লালনশাহ]]-[[পাগলা কানাই|পাগলাকানাই]]-[[পাঞ্জু শাহ|পাঞ্জুশাহ্]], বিপ্লবী [[বাঘা যতীন|বাঘাযতীন]]- [[ইলা মিত্র|ইলামিত্র]], জগৎ বিখ্যাত গণিতবিদ কে,পি বসু, কবি গোলাম মোস্তফা, চিত্র শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার, প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান[[হামিদুর রহমান|, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান]], বীর প্রতীক নায়েক সিরাজুল ইসলামসহ বহু মনীষীর জ্যোতির্ময়তায় সমুজ্জ্বল ঝিনাইদহ। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বটবৃক্ষ, শাহী মসজিদ, রাজবাড়ির মন্দির, ঢোল সমুদ্র দিঘি, সেলিম চৌধুরীর বাড়ি, [[দত্তনগর কৃষি ফার্ম]], [[ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ|ক্যাডেট কলেজ]], [[ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ|ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়]]<nowiki/>সহ অনেক দীপ্তমান নিদর্শন ঝিনাইদহকে করেছে সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যমন্ডিত।
একদা নবগঙ্গা নদীতে বড় বড় [[নৌকা]] চলাচল করতো, এ অঞ্চল হতে উৎপাদিত সামগ্রী বিশেষ করে প্রবাল ও [[মসলিন]] পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানী হতো। চট্টগ্রাম হতে এ অঞ্চলের উপর দিয়ে মহাসড়ক [[কাবুল]] অর্থাৎ আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, পরবর্তীসময়ে সড়কটির নামকরণ হয় ‘গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড’, উক্ত জনপথের ধার দিয়ে রোপিত সেইগুলি কালের সাক্ষী হিসেবে এখনও দন্ডয়মান। ১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দে জে. জে. নামে একটি রেল কোম্পানির মাধ্যমে আপ-ডাউন মিলে আটটি [[রেলগাড়ি|রেল]] চলাচল করতো। ১৯৩৫-৩৬ খ্রিস্টাব্দে [[কালীগঞ্জ উপজেলা, ঝিনাইদহ|কালীগঞ্জ]] এর কয়েকজন ব্যবসায়ী পরবর্তীতে দত্ত, পাল ও কুরী কোম্পানি নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান সহ ঝিনাইদহ-[[যশোর]] [[বাস]] সার্ভিস চালু করেন। ধীরগতি ও পছন্দমত সেবা না পাবার কারণে রেল জনপ্রিয়তা হারিয়ে ঝিনাইদহ সদর হতে বিলুপ্ত হয়। ১৯৪৭ এর পর অঞ্চলটি [[পাকিস্তান|পাকিস্তানে]]<nowiki/>র অন্তর্ভুক্ত হলে [[কলকাতা|কলকাতার]] সাথে স্বাচ্ছন্দ্য যোগাযোগে ছেদ পড়ে, দীর্ঘ ২৫ বছর পাকি শাসন-শোষণের ফলে অঞ্চলটিতে সাময়িক স্থবিরতা নেমে আসে, তখন [[ঢাকা]]<nowiki/>তে যাবার সুব্যবস্থা ছিলনা। পরবর্তীতে ঝিনাইদহ সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বলে খ্যাত হয়।
সচেতনতা ও দূরদর্শিতার অভাবে রাস্তার ধারের কালের সাক্ষী প্রাচীন কড়ই গাছগুলি অবহেলিত ও অনাদরে বিলুপ্ত হতে বসেছে, তা রক্ষার্থে পরিবেশ সচেতন মানুষ সোচ্চার হচ্ছে। [[রেলপথ]] পুনঃস্থাপনের দাবীতে সর্বস্তরের জনগণ জোর দাবী তুলছে। যুগে যুগে এ অঞ্চলের মানুষ সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে, সে গৌরব ও সংগ্রামের কথা উল্লেখ না করলে অবিচার করা হবে ঝিনাইদহ নামের প্রতি...
[[সুন্দরবন|সুন্দরবনে]]<nowiki/>র অংশ ছিল বিধায় এ অঞ্চলে নানা ধরনের লতা-পাতা ও বনজ বৃক্ষের সমারোহ থাকায় এটি হেকিম [[কবিরাজ]]<nowiki/>দেরও বিচরণ ভূমি হয়ে ওঠে। [[মাছ|মাছে]] ভাতে [[বাঙালি জাতি|বাঙালি]]<nowiki/>র মতো সুখী ও সমৃদ্ধ ছিল অঞ্চলটি, নানা ধরনের মাছে ভরপুর ছিল জলাশয়গুলি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুটিয়া বিলের কৈ ও [[ফটকি নদী|ফটকী নদী]]<nowiki/>র [[সরপুঁটি|সরপুটি]], তখনকার মৎস্যজীবীরা শনি ও মঙ্গলবার মাছ ধরতেন না এবং ডিমওয়ালা মাছ শিকার ভ্রুণ হত্যার ন্যায় পাপ মনে করতেন।
[[প্লাবনভূমি|প্লাবন ভূমি]]<nowiki/>তে [[আমন ধান|আমন ধানে]]<nowiki/>র চাষ হতো, অন্য ভূমিতে নানা জাতের ধান, [[পাট]], বিভিন্ন ধরনের [[ডাল]], [[সরিষা]], মসনে, [[রাই (শস্য)|রাই]], [[তিল]] চাষ হতো বলে এ অঞ্চলে [[ঢেঁকি]], [[ঘানি]] ও কুঁটির শিল্প গড়ে ওঠে। [[আখ]] ও [[গুড়]] উৎপাদনের জন্য ক্ষুদ্র শিল্প এ অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে বিস্তার লাভ করে তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৪ সালে [[মোবারকগঞ্জ চিনি কল লিমিটেড|মোবারকগঞ্জ চিনি কল]] স্থাপিত হয়। [[খেজুরের গুড়]] হতে ‘খান্দেশ্বরী’ [[চিনি]] উৎপাদনের জন্য এ অঞ্চল জগৎ বিখ্যাত ছিল, এমনকি এ শিল্পের বিকাশের জন্য কালীগঞ্জকে রেল জংশন করে কোটচাঁদপুর পর্যন্ত আট মাইল রেল লাইন সম্প্রসারিত করা হয়। মুঘল আমলে [[গণচীন|চীন]] হতে ভারতের উত্তরাংশ হয়ে এ অঞ্চলে [[রেশম চাষ|রেশম]] চাষের আগমন ঘটে এবং কাঁচা রেশম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানী হতো। সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে শাসক গোষ্ঠী এ এলাকার উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তৎপর থাকতো বিধায় সুফল-কুফল দুটিই মিলতো এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে।
পৃথিবীর নানা জাতি গোষ্ঠী দ্বারা এ অঞ্চল শাসিত হবার ফলে ভোজন বিলাসী বাঙালিদের খাদ্যাভাসেও আসে পরিবর্তন। নানা ধরনের ভাষা, কৃষ্টি-কালচার, রপ্ত করে এ অঞ্চল যেমন সমৃদ্ধ হয় তেমনিভাবে দুষ্ট প্রকৃতির খলনায়কসুলভ রাজা, জমিদার, ভূস্বামী ও শাসকদের অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যুগে যুগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এ অঞ্চলের সহজ-সরল, উদার-কমল, শান্ত-শিষ্ট, আবেগী মানুষ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষকদের জোর করে নীল চাষে বাধ্য করায় ‘[[নীল বিদ্রোহ|নীল বিদ্রোহে]]’র সূচনা হয়। কৃষকদের ঘেরাও এর মুখে মি. গ্রান্ট দাবী মেনে নেন, বাধ্য হয়ে [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ]] সরকার ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ‘নীল কমিশন’ গঠন করে, ফলে অত্যাচারের মাত্রা কমলেও নীলকরেরা কৌশল পরিবর্তন ক’রে স্বরূপে ফিরে আসে। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে শৈলকূপার বিজুলিয়া কুঠির অন্তর্গত ৪৮ গ্রামের সাধারণ কৃষক নীল চাষ বন্ধ করে দেয়, অনেক ভূস্বামী, ছোট জমিদার ও জোতদার সাধারণ কৃষকের যৌক্তিক দাবীর পক্ষে সমর্থন দেন। কৃষকেরা দেশীয় প্রযুক্তিতে ‘চেঙ্গা’ ও তার মাথায় আগুন ধরিয়ে ছুড়ে মারতো শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে। এমনকি আত্মরক্ষা ও নীল বিদ্রোহ দমন করতে নীলকরেরা মির্জাপুরের উত্তর হতে বেনীপুরের মাঝ দিয়ে একটি খাল খনন ক’রে কালিগঙ্গা নদীর সাথে যুক্ত করে। নীলকুঠি আক্রমণকারী সাধারণ কৃষকদের নীলকরেরা ডাকাত বলে মনে করতো বিধায় খালটির নামকরণ হয় ‘ডাকুয়ার খাল’। তেমনিভাবে [[প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম]] ও [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ]], ব্রিটিশ বিরোধী [[স্বদেশী আন্দোলন]], [[তেভাগা আন্দোলন|তেভাগা]] আন্দোলন, দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠন, [[বাংলা ভাষা আন্দোলন|৫২’র রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন]], [[যুক্তফ্রন্ট|৫৪’র যুক্তফ্রন্ট]], ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র [[ছয় দফা আন্দোলন|ছয় দফা আন্দোল]]<nowiki/>ন, [[ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান|৬৯’ এর গণ অভ্যুত্থানে]] সক্রিয় অংশগ্রহণ করে এ অঞ্চলের মানুষ। ৭১’ এর [[স্বাধীনতা সংগ্রাম (ভাস্কর্য)|স্বাধীনতা সংগ্রামে]] দেশের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ ও সম্মুখ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়খালিতে সংগঠিত হয়। মহান [[বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ|মুক্তিযুদ্ধে]] এ অঞ্চলের ১৭৬ জন সূর্য সন্তান বীর শহীদদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্বাধীন ঝিনেদাবাসী স্মরণ করে। [[স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস|৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন]] সহ উক্ত অঞ্চলের সচেতন মানুষ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশ বিষয়ক আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে।
অনেক পূর্ব হতে এ অঞ্চলটি সমাজ পরিবর্তনের আকাক্সক্ষায় মেহনতী, শ্রমজীবী জনতার মুক্তির সংগ্রামের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী বাম প্রগতিশীলদের একটি ঊর্বর বিচরণ ক্ষেত্র ও ঘাঁটি ছিল কিন্তু কিছু পথভ্রষ্ট ও নীতিহীন বিপ্লবীদের অপতৎপরতার কারণে এলাকাটি সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়। ফলে অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও সাধারণ নিরীহ পরিবার দেশ-গ্রাম ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। যার কারণে আমাদের এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যতাতে বহুলাংশে ভাটা পড়ে। আদিকাল হতে মানুষ দলবদ্ধভাবে বাস করে তার প্রধান কারণ, মানুষই একমাত্র প্রাণি যাকে ঘুম হতে উঠে ঘুমাতে যাবার পূর্ব পর্যন্ত, জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত একে অপরের উপর নির্ভর করে চলতে হয়। তাই পরস্পরকে বাদ দিয়ে সমৃদ্ধ জীবন ও বসতি অলিক স্বপ্ন।
তেমনিভাবে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে হুজুগে বাঙালি কুকথা শুনে সকলক্ষেত্রে ছুটছে নেতিবাচক খবরের পিছে। তাই সন্ত্রাসী জনপদ[[বাল্যবিবাহ|, বাল্যবিবাহ]], [[আত্মহত্যা]] প্রবণ এলাকা পরিগণিত করে ভয়ে অনেকে বাধ্য নাহলে সহজে এ অঞ্চলে আসতে চায় না। পাকেচক্রে এদিকে এসে পড়লে আমাগের আতিথেয়তা, ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে ভালোবেসে অধিকাংশ মানুষ যাবার সময় চোখের জলে বুক ভাসায়, অনেকে মুগ্ধ হয়ে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে। এভাবেই হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ঝিনাইদহ অঞ্চলের মননশীল মানুষ তাদের প্রাণ প্রিয় সৌকর্যময় সমৃদ্ধ ‘ঝিনেদা’কে আধুনিক সভ্যতার উন্নত শিখরে নিয়ে যাবে এ বিশ্বাস আমাগের আছে...।
== ভৌগোলিক সীমানা ==
|