ষড়যন্ত্র তত্ত্ব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
নকীব বট (আলোচনা | অবদান)
বানান সংশোধন
৪ নং লাইন:
 
== পদটির ব্যবহার ==
মানুষ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উদ্ভব ঘটায় সামাজিক কিছু সংগঠন এবং তাদের সাথে চিরপরিচিত অশুভ শক্তির ক্ষমতার সম্পর্ক বোঝাতে। এ তত্ত্বগুলোর পেছনে মূলত মনস্তাত্ত্বিক এবং সামজিক-রাজনৈতিক উৎস থাকে। প্রস্তাবিত মানসিক উৎসের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অভিক্ষেপ, অর্থাৎ "একটি নির্দিষ্ট ঘটনাকে নির্দিষ্ট কারনকারণ দ্বারা ব্যাখা করার মানসিক আকাঙ্ক্ষা।" এবং অনূরুপ কিছু মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার বহিঃপ্রকাশ, যেমন- ভ্রম বাতুলতা, মৃদু থেকে তীব্র মানসিক জটিলতা। কোন কোন বিশ্লেষক আবার সামাজিক-রাজনৈতিক কারনকেকারণকে গুরুত্ব দিয়েছেন, এই ভিত্তিতে যে এলোমেলো, অনির্দেশ্য, ব্যাখাতীত ঘটনা থেকে উদ্ভূত ব্যক্তিগত অনিরপত্তাবোধ থেকেও এর উতপত্তি হতে পারে। কোন কোন দার্শনিক আবার মত প্রকাশ করেছেন যে ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করার পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে।
 
== ইতিহাস ==
অক্সফোর্ড অভিধান অনুযায়ী, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হচ্ছে "কোন ঘটনা ঘটার পেছনে বিদ্যমান জটিল কোন ষড়যন্ত্র, যা নির্দিষ্ট কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের মিলিত চক্রান্তের ফসল, বিশেষতঃ যেথায় ধরে নেয়া হয় যে, কতিপয় গুপ্ত তবে প্রভাবশালী গোষ্ঠী (যাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক এবং শোষণমুলোক) একটি ব্যখাহীন ঘটনার পেছনে দায়ী।" এর সাথে অক্সফোর্ড সর্বপ্রথম এই পদটির ব্যবহারকারি হিসেবে ''দি এমেরিকান হিস্ট্রিকাল রিভিউ''এর ১৯০৯ সালের একটি নিবন্ধের উদ্ধৃতি দেয়।
 
জন আইতোর ''টুয়েনটিথ সেঞ্চুরি ওয়ার্ডস'' এর মতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পদটি শুরুতে নিরপেক্ষ অর্থে ব্যবহৃত হলেও এটি নিন্দাসূচক অর্থে সংজ্ঞায়িত হওয়া শুরু করে ১৯৬০ এর মধ্যের দিকে; এই কারনেকারণে যে, এটি প্রচার এর পেছনে এক প্রকার ভ্রম কাজ করে, যা কোন ঘটনার পেছনে প্রভাবশালী, বিদ্বেষ্পরায়ণ তবে গুপ্ত কোন সংস্থাকে কল্পনা করতে বাধ্য করে। ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি এর অধ্যাপক ল্যান্স ডীহ্যাভেন স্মিথ এর ২০১৩ সালে প্রকাশিত বই ''কন্সপিরেসি থিওরি ইন এমেরিকা'' অনুযায়ী '''কন্সপিরেসি থিওরি''' পদটি ১৯৬০ সালে প্রথম সি আই এ দ্বারা ব্যবহৃত হয় ,জন এফ কেনেডি এর গুপ্তহত্যার সাথে জড়িত যাবতীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কে অসাড় প্রমাণ করতে । তবে স্টকটন ইউনিভার্সিটি এর সহকারি অধ্যাপক রবার্ট ব্লাস্কেউইয এর ভাষ্যানু্যায়ী এমন দাবি নতুন নয়, বরং অন্তত ১৯৯৭ সাল অবধি থেকে চলে এসেছিল এবং ডিহ্যাভেন স্মিথ এর সাম্প্রতিক প্রচার এর কারনেকারণে "ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকগণ তার কথাটিকে প্রমান হিসেবে ধরে নিয়ে একে উদ্ধৃত করেন ।" ব্লাস্কেউইয পরবর্তিতে এ নিয়ে গবেষণা করে দেখেন যে, এই নামকরনটি কখনই নিরপেক্ষ অর্থে ব্যবহৃত হয় নি বরং এটি দীর্ঘসময় ধরেই কোন ঘটনার প্রেক্ষাপট হিসেবে চরম কোন আন্দাজ বা অবোধ্য অনুমান কল্পনা করাকে বোঝাতে নিন্দনীয় অর্থে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে ১৮৭০ সাল অব্দি থেকে।
 
স্যান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর রেবেকা মুর ''জোন্সটাউন ম্যাসাকার'' এর ঘটনা নিয়ে যে ঘোর অনুমানগুলো চলতে থাকে, যেমন- সি আই এ এর বিরুদ্ধে মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রঙ্কারী পরীক্ষা চালনা করার দাবি ইত্যাদিগুলোকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে অভিহিত করেন, যা অনেকের মধ্যে ক্ষোভ এর সঞ্চার করে। এর প্রতিউত্তরে তিনি বলেন," তারা আমার প্রতি ক্ষুব্ধ কেননা আমি তাদের জানা সত্যকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছি...... তাদের ক্ষোভ করা অনেক অংশে ন্যায্য। কেননা, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পদটি নিরপেক্ষ নয়। এর সাথে নিন্দা, হাস্যরস এবং বর্জনীয় ভাব প্রকাশ পায়। এটি অনেকটা "কাল্ট" শব্দটির মত,যা কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ধর্মীয় সংগঠনকে বোঝায়। মুর এছাড়াও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কে "কলঙ্কিত জ্ঞান" বা "দমনকৃত জ্ঞান" আখ্যা দেন যযে জ্ঞানের ভিত্তি হচ্ছে যে " ক্ষমতাধর কিছু গোষ্ঠী মুক্ত জ্ঞান সরবরাহের পথে বাধা সৃষ্টি করছে এবং একে নিয়ন্ত্রণ করছে কোন বিশেষ অসাধু উদ্দেশ্যে।"
৩৫ নং লাইন:
 
=== '''মনস্তত্ত্ব''' ===
ন্যুনতম ১৯৬০ সাল থেকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানীদের নিকট খুব আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় , যখন প্রেসিডেন্ট কেনেডি আততায়ীর হাতে নিহত হন। টার্কে সেলিন নেফেস এ তত্ত্বগুলোর পেছনে রাজনৈতিক কারনগুলোকেকারণগুলোকে গুরুত্বে আনেন। তিনি বলেন যে এর দ্বারা সামাজিক সংগঠনগুলোর বাস্তব তবে গুপ্ত ক্ষমতা উন্মোচন করারা প্রচেষ্টা করা হয়।
 
=== '''অশুভ শক্তি ব্যাখার উদ্দেশ্যে''' ===
৮৯ নং লাইন:
 
=== যুক্তরাষ্ট্র ===
" কিছু ইতিহাসবিদ ধারণা প্রস্তাব করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর জন্য প্রজনন স্থল হিসেবে কাজ করছে। এর পেছনে কারনকারণ হল ১৯৬০ সাল থেকে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু গুরুত্ববাহী উচ্চপর্যায়ের ষড়যন্ত্র।" এমন প্রকৃত কিছু ষড়যন্ত্র অন্যান্য ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের পেছনে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
 
=== মধ্যপ্রাচ্য ===
১০৬ নং লাইন:
সায়েন্টিফিক জার্নালে ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে স্যান্ডার ভ্যান ডার লিন্ডেন আলোচনা করেন যে, প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই উপসংহারে আসা যায়, ১) যারা ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করে তারা অন্যান্য তত্ত্বগুলোকেও সহজেই১ সমর্থন করে। ২) ষড়যন্ত্রের ধারণাগুলো তৈরীর পেছনে সাধারণত সিযোটপি এবং ভ্রমগ্রস্ততা জড়িত। ৩) ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি সুপ্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ওপর অবিশ্বাস সৃষ্টি করে, যেমন- ক্যান্সার এর সাথে ধুমপান এর সম্পর্ক, বৈশ্বিক উষ্ণতার সাথে কার্বন-ডাই -অক্সাইড এর নির্গমনের সম্পর্ক। ৪) ষড়যন্ত্রের কল্পনাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষকে এমন প্যাটার্ন দেখতে সাহায্য করে যার আসলে কোন অস্তিত্বই থাকে না। ভ্যান ডার লিন্ডেন "ষড়যন্ত্র-প্রভাব" পদটির প্রচলন করেন।
 
মানবতাবাদি মনোবৈজ্ঞানিকগণ এর মতে, ষড়যন্ত্রগুলোর পেছনে চক্রান্তকারী গোষ্ঠীদেরকে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিকুল দৃষ্টিতে দেখলেও এই বিশ্বাস এর পেছনে কিছুটা আশ্বাস কাজ করে। এর কারনকারণ হতে পারে যে, মানব সমাজের উত্থান-পতন এবং জটিলতার পেছনে মানুষ এর হাত আছে মনে করা , মানব নিয়ন্ত্রণ এর বাহিরে কোন কিছুকে দায় করা অপেক্ষা বেশি সান্ত্বনাদায়ক। এমন বিশ্বাস মানুষকে ভাবায় যে, কোন ঘটনাই দৈবাৎ নয় বরং মানবনিয়ন্ত্রিত। এতে করে এই ধারণার উৎপত্তি হয় যে চক্রান্তগুলো মানুষের ধরা-ছোঁয়ার মধ্যে এবং নিরাময়যোগ্য। যদি এমন কোন চক্রান্তকারীদের উদ্ভব হয়েও থাকে তাও এদের চক্রান্ত ধূলিসাৎ করে দেয়াও সম্ভব, অথবা বিপরীতভাবে এতে অংশ নেয়াও সম্ভব। পরিশেষে, এরুপ তত্ত্বে বিশ্বাস লোক-মর্যাদার এক অন্তর্নিহিত রুপ, যা অবচেতন মনে তবে প্রয়োজন এর স্বার্থে মানুষকে তার অসহায়বোধ থেকে মুক্তিদান করে এবং তাকে ঘটিত সব ঘটনার পেছনে দায়ী থাকে।
 
=== অভিক্ষেপ ===
১১৫ নং লাইন:
হফস্টাটার আরো উল্লেখ করেন যে, কলঙ্ক হিসেবে " যৌন স্বাধীনতা " দ্বারা প্রতিপক্ষকে প্রায়ই কলঙ্কায়িত করা হয়। তিনি এও বলেন যে," অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরুপ বিশ্বাসীরা স্পষ্টভাবে মর্ষকামি গোছের হয়। যেমন মেসন-বিরোধীরা মেসনিক শাস্তির কথা ভেবে পুলক বোধ করে।
 
২০১১ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে যে, ''মাকিয়াভেলিয়ান'' লোকেরা ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোতে অপেক্ষাকৃত বেশি বিশ্বাসপ্রবণ হয়। কারনকারণ তারা অভিযুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের মত একই অবস্থায় থাকলে হয়ত নিজেরাই ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে বসত।
 
=== এপিস্টেমিক বাইয়াস ===
১২৬ নং লাইন:
 
== সামাজিক-রাজনৈতিক মূল ==
ক্রিস্টোফার হিচেন্স এর মতে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো হচ্ছে গণতন্ত্রের নিষ্কাশিত ধোঁয়া, বৃহৎ জনসমষ্টির মাঝে ব্যাপক পরিমান তথ্য পরিচলনের ফসল। ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো মানসিকভাবে তৃপ্তিদায়ক হতে পারে, যখন নৈতিকতার প্রসঙ্গে তা বোধগম্য হয়। এভাবে, এরুপ মতবাদে বিশ্বাসী লোকেরা অপর কোন এক গোষ্ঠীর ওপর নৈতিক দায় চাপিয়ে দিতে পারে ( এমন গোষ্ঠী যার সে অন্তর্ভুক্ত নয় )। এতে করে সে প্রাতিষ্ঠানিক বা সামজিক যে কারনেকারণে অনৈক্যের সৃষ্টি তা থেকে নিষ্কৃতি অনুভব করতে পারে। রজার কোহেন নিউ ইয়র্ক টাইমস এ লেখেন, " বন্দি মনগুলো ষড়যন্ত্র তত্ত্বে অধিক বিশ্বাসপ্রবণ হয় কেননা এটি ক্ষমতাহীনের শেষ আশ্রয়। তারা নিজেদের জীবনে সুপরিবর্তন আনতে অপারগ হলে এই ভেবে শান্তি পায় যে, পৃথিবী কিছু পরাক্রমশালী নিয়ন্ত্রক দ্বারা চালিত হচ্ছে বিধায় আজ তার এই অবস্থা।
 
যেক্ষেত্রে সামজিক অবস্থার কারনেকারণে বা ক্ষমতা বহির্ভুত হবার কারনেকারণে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না, সেখানে , ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো মানসিক চাহিদাগুলোকে পূর্ণতা দেয়। একারনেএকারণে এরুপ মতবাদগুলো
 
সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন বা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন পরিবেশে বেশি প্রভাব বিস্তার করে।
 
সমাজবিজ্ঞানী হোলগার হেরউইগ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্যুৎপত্তির ইতিহাসের জার্মান সংস্করন গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন যে, যেসব ঘটনাগুলো বেশি গুরুত্বপুর্ণ সেগুলো অতিরিক্ত দূর্বোধ্য, কারনকারণ এ ঘটনাগুলো সবজান্তাদের এবং শ্রুতিলেখকদের বেশি আকৃষ্ট করে থাকে।
 
অপরদিকে, ষড়যন্ত্র মতবাদ্গুলো ঘটনাপরিক্রম এবং সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদির অসামঞ্জস্য থেকেও উৎপত্তি লাভ করতে পারে। এভাবে তারা ঘটনাটির কিছু অনাবিষ্কৃত ক্ষেত্রের ব্যাপারে ইঙ্গিত করতে সক্ষম হয়।