বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
তথ্য সংযোজন
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
→‎করোনা: নতুন অনুচ্ছেদ
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৬১৭ নং লাইন:
এদিকে শহরের কোথাও কোথাও সিস্টেমের গোলযোগে পাইপ ফুটো হয়ে গিয়ে জল, দিনের পর দিন ড্রেনে মিশে যায়। রাস্তার ধারের 'চাপাকল' খোলাই থাকে। কলা খুলে দেদার জল নিয়ে, ধুলো চাপা দিতে রাস্তা ভেজানো হয়। প্রতিটি সকালে ঘর ধোয়া, ঘরের বাইরের দরজায় জল দিতেও কম পানীয় জল লাগে না। পানীয় জল খেয়ে বাড়িতে লাগানো শখের বাগানের শখের গাছের বেঁচে থাকে। অথচ বাড়ির ছাদে বৃষ্টির জল ধরে, জল ভরো প্রকল্প বানিয়ে আমরা সেই গাছের চাহিদা অনেকটাই মেটাতে পারতাম । পারতাম বাথরুমে শৌচ কাজের জলের কিছুটা সাপ্লাই দিতে। হাফ লিটার জল শরীর থেকে ত্যাগ করে, জমে থাকা পাঁচ লিটার জলের ট্যাংকের ফ্লাশটা টিপে দি। হরহর করে জল গড়িয়ে বাথরুমের গন্ধ দূর করে। ময়লা ধুয়ে নিয়ে যায়।
অকারণে আমরা জল নষ্ট করে চলেছি দীর্ঘদিন ধরেই। এখন আবার গ্রামগুলিতে জলধারা প্রকল্পের নামে পাম্প চলছে তো চলছেই এবং কলের মুখ খোলা , কোথাও কলের মুখ খোলা রেখে পুকুরে জল ভরানো হচ্ছে,। মানসিকতায় বদ্ধমূল, সেটা সরকারি জল। অপচয়ে কষ্ট লাগে এই জন্যই, সেটা পানীয় জল। [[ব্যবহারকারী:ড. সেখ রমজান আলি|ড. সেখ রমজান আলি]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:ড. সেখ রমজান আলি|আলাপ]]) ০০:৪৮, ২৪ মার্চ ২০২০ (ইউটিসি)
 
== করোনা ==
 
করোনা-ফোবিয়া
--- রমজান আলি
 
করোনার সাত সকালে কলিংবেল বেজে উঠতেই , বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে দেখি ঝন্টুদা। নিচে গিয়ে চাবি খুলবো না, খুলবো , এই ভাবতে ভাবতে দোতলার বারান্দায় এসে দুটো খুকখুকে কাশি ঝেড়ে দিলাম। ঝণ্টুদার মুখের হাসিটা গেলো শুকিয়ে। বাড়ির সামনে থেকে একটু পিছিয়ে রাস্তার ওপারে গিয়ে বললো, 'আর ঢুকবো না।' এই ঝুজকি বেলায় তাঁর গন্তব্যস্থল জানতে চাইলে বললেন , 'শালির বাড়ি গেসলাম, করোনার ওষুধ দিতে।'
 
তাঁর মুখেই শুনেছি, প্যারাসুট বাহিনীতে তিনি প্যারাট্রুপার ছিলেন। পরে স্টেট ব্যাঙ্কের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তখনই তাঁর সঙ্গে আলাপ সালাপ। তারপর বেশ কয়েবছর দেখা হয়নি ঝণ্টুদার সঙ্গে । ভাবছিলাম হয়তো মরেই গেছেন। কিন্তু এ তো দেখি চিক্কন বেড়ে গেছে। সাদা শেরওয়ানি পাঞ্জাবিতে বেশ ভালোই লাগছে। এ সবই তাঁর আবিষ্কৃত ওষুধের ফল। অথর্ব বেদ, চরকসংহিতা মুখস্ত। আরও কী সব আয়ুর্বেদিক পুঁথিটুথি তাঁর বাড়িতে আছে। সেসব গ্রন্থের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। তিনি ক্যান্সার , হার্ট ব্লক, এমন কী করোনা ইত্যাদির মতো জটিল রোগ নিরাময় করতে পারেন। জ্বর, সর্দি, গাঁট ব্যথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদির জন্য পাঁচমিনিটেই মোক্ষম দাওয়াই দিতে পারেন। পথে-ঘাটে , জলে-জঙ্গলে অসুস্থ মানুষ দেখলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেবা করতে এগিয়ে যান। এই নিয়ে ডেলি প্যাসেঞ্জার মহলে একবার তো ঢিঢি পড়ে গেয়েছিল।
 
বাথরুমে পা হোড়কে অনিন্দিতা ম্যাডামের মালাই চাকিতে ব্যথা। বর্ধমান স্টেশনের ২-৩ নং প্লাটফর্মের সিঁড়িটা কোনো ক্রমে নেমে আটটা ছেচল্লিশের ট্রেনে উঠে বসতেই ঝন্টুদা কুইক রিলিফ শুরু করলেন । দিদিমনি যত বলেন, 'আমার দাওয়াই লাগবে না', ব্যথার ওষুধ খাচ্ছি।' ঝুন্টাদার মালিশের হাত, পায়ের চ্যেটো থেকে ততোই উপরে উঠতে থাকে। কে কার কথা শোনে তখন।
 
জানি দরজা খুললেই তিনি বাড়িতে ঢুকে, কারো না কারো চিকিৎসা শুরু করে দেবেন। হান্ডেলে লালসুতো বাঁধা সেই বাইক । সেখানে ঝুলানো কালো রংয়ের সেই চেনকাটা ব্যাগ। এই ব্যাগেই থাকে জার্মান স্টেথেস্কোপ , জাপান থেকে আনানো প্রেসার মাপক ডিজিটাল যন্ত্র আর তাঁর আবিষ্কৃত যাবতীয় দাওয়াই। একগাদা কাঁচা লতাপাতাও ভরা থাকে ব্যাগে।
 
সোসাল ডিস্টেন্ট মানতে গিয়ে এই সক্কালবেলা তাঁকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু খারাপই লাগছিল। বললাম , 'চাবি খুলি, ভিতরে আসুন। ' বললেন, 'না এখান থেকেই কথা বলি।' বুঝলাম গোটা দুই কাশি ঝেড়ে কাজ হয়েছে। ভিতরে এলেও এই সক্কালে তাঁকে কেউ চা করে দেবে না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ওখান থেকেই হঠাৎ বলে উঠলেন, ' আরে ! কী অবস্থা, দেখি-ই-ই, একটু ডানদিকে ঘোরো তো মাস্টার।' বললাম, আগে তো বাঁদিকে ঘুরতে বলতেন।' ঘুরতেই বললেন, 'হ্যাঁ, ঠিক ধরেছি, রাতে ঘুম কম হচ্ছে। আজ থেকেই শঙ্খপুষ্প খাও। আমারটা নেই, শেষ হয়ে গেছে না হলে দিয়ে যেতাম, পতঞ্জলিরটা খাবে।' বুঝলাম, বালিশ চেপে শোয়ায় গালের ওপর দাগ পড়া দেখেই বলে দিলেন, 'ঘুম কম হচ্ছে।'
 
বললাম, ' শালিকে করোনার কি দাওয়াই দিলেন ?' পচাৎ করে গুটকার পিকটা বাইকের পাশে ফেলে বললেন, 'এটার ওষুধ আমি দু'বছর আগে থেকেই দিচ্ছি, মাস্টার। এই ভাইরাস ছিল লোকে ধরতে পারেনি। ড. মুখার্জী আমার পেসেণ্ট। তাঁকে আগেই বলেছিলাম। ' কোন্ ডাক্তার, শৈলেন মুখার্জী ? মজাটা বুঝে নিয়ে ফিক করে হেসে বললেন, 'আরে ! তিনি তো কবে মারা গেছেন।' জিজ্ঞাসা করলাম, 'বৌদি কেমন আছেন ? আমগাছটায় মুকুল এসেছে কিনা ? সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে বললেন, 'ঠিক আছে।' বললাম , 'আর সব খবর বলুন। ' বললেন, 'আরে ,খবর তো এখন করোনা। চিপ মিনিস্টারকে মেইল করলাম, ভয়ের কিছু নয় সব ওষুধ রেডি আছে। "
পাশের বাড়ির বিকাশদা দোতলার বারান্দায় কখনএসে দাঁড়িয়েছেন , দেখিনি। তিনি থ হয়ে আমাদের বাক্যবিনিময় শুনছেন।
ঝন্টুদা কথায় কথায় বলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী হাঁটু চিকিৎসার কথা, তাঁর পরামর্শেই নাকি
সেই চিকিৎসা হয়েছিল। তিনি চিকিৎসা করেছিলেন ত্রিপুরার রানীর , এখনো ত্রিপুরার রাজবংশে যারা বাতি দিতে আছেন, তিনি তাঁদের কুল-কবিরাজ -- আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুধীর রঞ্জন তাঁরই পেসেণ্ট ছিলেন। ত্রিপুরায় তাঁর এক কাকা ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ,আর তাঁদের বাড়িতেই খেয়ে পড়ে মানিক সরকার মানুষ হয়েছেন। সেগুলো তিনি এদিনও কথায় কথায় মনে করিয়ে দিলেন। হঠাৎ হাতের ঘড়িটা দেখে নিয়ে বললেন, ' ও মাস্টার! আটটা বেজে গেছে। আর দাঁড়ালে চলবে না, ড. মুখার্জি হসপিটালে যাওয়ার আগে আমার আবিষ্কৃত করোনার ওষুধ খেয়ে যাবেন । চলি আবার দেখা হবে।' নাটকের শেষ-সংলাপ বলে মঞ্চ থেকে যেমন অভিনেতা প্রস্থান করেন, তেমনি করেই বাইকে পটাম করে স্টার্ট দিয়ে চলে গেলেন ঝন্টুদা । [[ব্যবহারকারী:ড. সেখ রমজান আলি|ড. সেখ রমজান আলি]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:ড. সেখ রমজান আলি|আলাপ]]) ১৭:৪৪, ৮ এপ্রিল ২০২০ (ইউটিসি)