জমিদার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Jayantanth (আলোচনা | অবদান)
Jayantanth (আলোচনা | অবদান)
১২ নং লাইন:
[[চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত]] (১৭৯৩) প্রবর্তনের আগে পর্যন্ত জমিদারদের মৌলিক অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্য অপরিবর্তিত থাকলেও শাসক অভিজাত মহলের চাহিদার উপযোগী করার জন্য ভূমি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কাঠামোতে মাঝে মাঝে কিছু রদবদল করা হয়। এভাবেই তোডর মলের বন্দোবস্ত (১৫৮২) যা দূরবর্তী বাংলা সুবায় একদিন জমিদারি পদ্ধতির সূচনা করেছিল, তা ১৬৫৮ সন পর্যন্ত বজায় থাকে। এই সময়ে [[বাংলার সুবাহদার]] [[শাহ সুজার]] (১৬৫৭) রাজস্ব বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদারি ব্যবস্থায় কিছুটা বল সঞ্চার হয়। এরপর ১৭২২ সনে সুবাহদার মুর্শিদ কুলির মালজমিনি (ভূমি রাজস্ব) পদ্ধতি প্রচলিত হয়। সরকারি রাজস্ব সর্বাধিক করা ও রাজস্বের নিয়মিত পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য মুর্শিদ কুলি বাংলা প্রদেশকে পূর্ববর্তী চৌত্রিশটি সরকারের পরিবর্তে তেরটি চাকলায় (প্রশাসনিক বিভাগ) ভাগ করেন। আর সেসঙ্গে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র জমিদারদের চাকলাদারের এখতিয়ারাধীন করেন। এই চাকলাদারগণ মনোনীত হন বৃহৎ জমিদারবর্গ থেকে আর তারা জমির মালিক হিসেবে নয় অধস্তনদের তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। তাদের কাজ ছিল দক্ষতার সঙ্গে রাজস্বের আদায় ও সংগ্রহ নিশ্চিত করা। তবে প্রধান জমিদারগণকে রাজস্বের রাজকীয় অংশের জন্য খালসা বা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কাছে জবাবদিহি করার ফলে তাদের সনাতন ক্ষমতা ও মর্যাদাগত অবস্থান আরও বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও প্রতিভাবান জমিদারগণকে বিভিন্ন সরকারি পদে নিযুক্তির যে প্রস্তাব দেওয়া হয় তার ফলে রাজদরবারে তাদের অবস্থানগত মর্যাদা বৃদ্ধি ও সেসঙ্গে তাদের নিজ স্বার্থকে আরও এগিয়ে নেবার সম্ভাবনা অনেক দূর প্রসারিত হয়। রাজস্ব ব্যবস্থাপকের ভূমিকা থেকে জমিদারে রূপান্তরিত হওয়ার এই প্রক্রিয়াটি আঠারো শতকের মাঝামাঝি নাগাদ সম্পূর্ণ হয়।
 
==রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ===
সর্বাগ্রে জমিদারের কর্তব্য ছিল রাজস্ব সংগ্রহ ও সেই রাজস্ব নিয়মিতভাবে রাজকোষে পরিশোধ করা। প্রায় সকলক্ষেত্রেই এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নির্ধারণ করত। রাজকীয় সনদে জমিদারিতে প্রদত্ত অধিকারগুলির কারণে জমিদারগণ রায়ত বা চাষিদের সঙ্গে একটি রফায় আসতে ও তাদেরকে উৎসাহিত করে আবাদের উন্নতি সাধনে দায়িত্বশীল থাকতেন। এর ফলে গোটা দেশের শ্রীবৃদ্ধি ঘটত এবং দেশের উৎপাদনও বেড়ে যেত। জমিদারদের প্রদেয় রাজস্ব ছিল তিন ধরনের। প্রথম ধরনের রাজস্ব হলো মাল যা আবাদযোগ্য জমি এবং বনভূমি, বাগান, জলা ও পুষ্পরিণী থেকে প্রাপ্ত খাজনা বিশেষ। দ্বিতীয় শ্রেণীর রাজস্ব ছিল [[সায়ের]] । রাজস্বের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসের আওতায় ছিল [[টোল]][[আবগারি শুল্ক]] যা আদায় হতো নৌচলাচল ও বাজার থেকে এবং বিভিন্ন সেবাকর্মে নিয়োজিত শ্রেণীর লোকজন প্রদত্ত ফিস থেকে। তৃতীয় শ্রেণীর রাজস্ব ছিল [[জরিমানা]], বাজেয়াপ্তি ও বিবাহ ফি বাবদ আয় যা [[বাজিজমা]] নামে অভিহিত ছিল। যে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ জমিদারকে পরিশোধ করতে হবে সেটি জমির যথার্থ পরিমাপ দ্বারা নির্ধারিত হতো না এবং ঐ জমিতে উৎপন্ন ফসল বা সম্পদের মূল্য নিরূপণের ভিত্তিতেও স্থির হতো না। বরং এটি নির্ধারিত হতো এক ধরনের সংক্ষিপ্ত মূল্যায়নের মাধ্যমে যার নাম ছিল নসাক। জমিদারগণ একটি নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতেন, তবে নবাব তা নিজ ইচ্ছানুযায়ী বৃদ্ধিও করতে পারতেন। অবশ্য এই ক্ষমতা Ûচিৎঊচিৎ প্রয়োগ করা হতো। [[মালওয়াজিবি]] জমিদারদের কাছ থেকে রাজস্বের দাবি আবাদযোগ্য জমির ভিত্তিতে নির্ধারিত হতো। জমিদারদেরকে পতিত ও বনজঙ্গল থেকে জমি উদ্ধারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়ে থাকলে তাদেরকে সেসবের নিÓ·ত্তিরনিস্পত্তির ক্ষমতাও দেওয়া হতো। দাতব্য ও ধর্মীয় [[ওয়াক্‌ফ]] বা দেবোত্তর কাজে এই পতিত জমি ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো হতো। এ ধরনের দাতব্য তালুক গড়ে তোলা হতো বিভিন্ন ধরনের বন্দোবস্তধারীদের আওতায়। পুনরুদ্ধারকৃত জমিকে সাধারণত খামার নামে অভিহিত করা হতো। এই খামারের উৎপন্ন দ্রব্য ভাগাভাগি করে নিত জমির চাষি ও জমিদার। এভাবে এই তালুক জমিদারদের জন্য বাড়তি আয়ের স্থায়ী উৎস হয়ে ওঠে। বড় আকারের জমিদারিগুলিতে জমির খাজনা ঐ জমির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে সাধারণত অনেক কম হতো। সরকার এই তথ্য অবগতির ভিত্তিতে মাঝে মাঝেই জমিদারদের ওপর আবওয়াব অথবা সেস ধার্য করতেন।
 
==জমিদার-রায়ত==