প্রাচীন মিশরীয় পরকালতত্ত্ব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
নতুন পৃষ্ঠা: thumb|right|[[উজির (প্রাচীন মিশর)|উজির মেরেরুকা|মেরেরুকা...
(কোনও পার্থক্য নেই)

১৬:২১, ১৭ মার্চ ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

প্রাচীন মিশরীয় পরকালতত্ত্ব কেন্দ্রীভূত হয়েছিল মিশরীয় সংস্কৃতির বিবিধ বৈশিষ্ট্যের দ্বারা প্রভাবিত বিভিন্ন ধরনের জটিল আচার-অনুষ্ঠানকে ঘিরে। এই ক্ষেত্রে ধর্ম ছিল একটি প্রধান উপাদান। কারণ, ধর্ম ছিল এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রথা যা সকল মিশরবাসীকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অনেক মিশরীয় দেবতার উপরই মৃতের আত্মাকে পরলোকে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা আরোপ করা হয়েছিল। লিখনপদ্ধতির বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় ধ্যানধারণা নথিবদ্ধ হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র মিশরীয় সমাজে। এই মতবাদগুলির উৎপত্তি ও দৃঢ়ীভবন ঘটেছিল পরকালতত্ত্ব-সংক্রান্ত রচনাবলি সৃষ্টির মাধ্যমে। এই জাতীয় রচনায় পরলোকযাত্রা নিরাপদ করতে মৃতকে কী কী জানতে হয় তা বিবৃত এবং দৃষ্টান্ত সহযোগে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।

উজির মেরেরুকার সমাধিসৌধের নকল দরজা, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্বিংশ শতাব্দী। এই দরজায় তাঁর প্রাচীন মিশরীয় আত্মা-সংক্রান্ত ধারণা#কা-র সমাধিসৌধে প্রত্যাবর্তন চিত্রিত হয়েছে।

মিশরীয় ধর্মীয় আদর্শে পরকাল-সংক্রান্ত তিনটি আদর্শের উল্লেখ পাওয়া যায়: প্রেতলোক, চিরন্তন জীবন ও আত্মার পুনর্জন্মে বিশ্বাস। প্রাচীন মিশরে প্রেতলোককে বলা হত দুয়াত। মিশরীয়রা বিশ্বাস করত, দুয়াতের প্রবেশপথ মাত্র একটি এবং শুধুমাত্র মৃতের সমাধিসৌধের মধ্যে দিয়ে যাত্রা করেই সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। কথিত আছে, এই জগতে প্রবেশের পর মৃতের আত্মার সামনে প্রথম যে ছবিটি ফুটে ওঠে সেটি একটি বারান্দার। এই বারান্দার দুই পাশে সারে সারে সাজানো থাকে চিত্তাকর্ষক সব মূর্তি। এই মূর্তিগুলির মধ্যে থাকে বাজপাখির মুণ্ডবিশিষ্ট বিখ্যাত দেবতা হোরাসের মূর্তির রূপভেদও। প্রেতলোকে আত্মাকে নিয়ে যাওয়ার পথ রাজা ও সাধারণ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সেখানে প্রবেশের পর আত্মাদের উপস্থিত করা হয় অপর এক বিশিষ্ট দেবতা ওসাইরিসের সামনে। তিনি মৃতের আত্মার গুণাবলি নিরূপণ করেন এবং যোগ্যদের শান্তিপূর্ণ পরকাল প্রদান করেন। চিরন্তন জীবন-সংক্রান্ত মিশরীয় ধারণাটিকে প্রায়শই বর্ণনা করা হয় অনির্দিষ্টভাবে পুনর্জন্ম লাভ হিসাবে। সেই জন্য যে সকল আত্মা মার্জিতভাবে জীবনযাপন করেছিলেন, তাঁদের ওসাইরিসের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় পুনর্জন্ম প্রাপ্তির জন্য।[১]

প্রেতলোকে পৌঁছানোর পথ মসৃণ করতে মিশরীয়দের জীবদ্দশায় সঠিক আচরণবিধি অনুসরণ ও মিশরীয় ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন ইত্যাদি কয়েকটি আচার পালন করতে হত। সেই সঙ্গে তারা বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করত মৃত্যু-পরবর্তী আচার-অনুষ্ঠানগুলির উপরেও। মৃত ব্যক্তি যাতে নির্বিঘ্নে তাঁর ভবিতব্যের সম্মুখীন হতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় আচার পালনের দায়িত্বভার অর্পিত ছিল জীবিতদের উপরেই। মিশরীয়রা মনে করত, জীবিত ও মৃত প্রত্যেকেই ধর্মীয় সদাচারের অনুশীলন এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান পালন করলে তবেই মৃত ব্যক্তি সহজে প্রেতলোকে প্রবেশ করতে পারবেন।

অন্ত্যেষ্টি প্রথা

মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল, প্রেতলোকের চূড়ান্ত স্তরে প্রবেশ করতে মৃতকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয় এবং সেই লোকে পুনর্জন্ম গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও জ্ঞান মৃত ব্যক্তিকে অর্জন করতে হয় জীবিতদের সাহায্যেই।

সমাধিসৌধ

মিশরীয় সমাধিসৌধগুলির নকশা ও আকার-পরিমাণ যুগে যুগে পরিবর্তিত হলেও সেগুলির ব্যবহারিক উদ্দেশ্য একই থেকে যায়। অধিকাংশ সমাধিসৌধই নির্মিত হয়েছিল উদ্দিষ্ট ব্যক্তির জীবদ্দশায়। এগুলি নির্মাণের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র শবাধার সংরক্ষণই ছিল না। মিশরীয়রা বিশ্বাস করত, সমাধিসৌধ মৃতের আত্মাকে প্রেতলোকের পথপ্রদর্শনের কাজও করে। [২] সমাহিত ব্যক্তির পদমর্যাদার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সমাধিসৌধে বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যসামগ্রী রাখা হত। মৃতের আত্মার সুবিধার্থে অধিকাংশ সমাধিসৌধই অলংকৃত হত পরকাল-সংক্রান্ত সাহিত্যের খোদাইকরা চিত্রলিপি দ্বারা।[৩]

পরকাল-সংক্রান্ত সাহিত্য

বহু শতাব্দী ধরে মিশরীয়রা তাদের সমাধিসৌধ ও শবাধারগুলি অলংকৃত করে এসেছিল ধর্মীয় মন্ত্র ও সাহিত্যের খোদাইচিত্রলিপি দ্বারা। উদ্দেশ্য ছিল, মৃত ব্যক্তির আত্মাকে প্রেতলোকে প্রবেশ করতে সাহায্য করা। মিশরীয় সংস্কৃতির বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই সাহিত্যও বিবর্তিত হয়ে অধিকতর জটিল ও বিস্তারিত আকার ধারণ করে।

পিরামিড লিপি

 
প্রথম তেতির পিরামিডের অভ্যন্তরস্থ লিপি

পিরামিড লিপি হল মিশরের রাজকীয় পিরামিডগুলির দেওয়ালে খোদিত প্রথম মন্ত্রাবলি। পুরনো রাজ্যের যুগ থেকে মিশরের ফ্যারাওরা তাঁদের সমাধিসৌধের দেওয়াল সজ্জিত করতে এই লিপিগুলি ব্যবহার করতে। প্রথম দিকে এই লিপিগুলি শুধু ফ্যারাওদের সমাধির বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকলেও, কিছুকাল পরে মিশরীয় রানি ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীরাও তাঁদের সমাধিগাত্রে এই সব লিপির ব্যবহার শুরু করেন। লিপিগুলির উদ্দেশ্য ছিল ফ্যারাওর প্রেতলোক যাত্রা সফলভাবে সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করা। মৃত ব্যক্তিকে কোন পথ দিয়ে যেতে হবে এবং কী কী বিপদের সম্মুখীন হতে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ থাকত এই লিপিগুলিতে।[৪]

শবাধার লিপি

  1. Mojsov, Bojana (২০০১)। "The Ancient Egyptian Underworld in the Tomb of Sety I: Sacred Books of Eternal Life"। The Massachusetts Review42 (4): 489–506। জেস্টোর 25091798 
  2. Morenz, Siegfried (১৯৬০)। Egyptian Religion। Ithaca, New York: Cornell University Press। পৃষ্ঠা 194–201। 
  3. Amenta, Alessia (২০০২)। "The Egyptian Tomb as a House of Life for the Afterlife"Egyptological Essays on State and Society: 18–26। 
  4. Hornung, Erik (১৯৯৯)। The Ancient Egyptian Books of the Afterlife। Ithaca, New York: Cornell University Press। পৃষ্ঠা 1–6।