ইসলামি সম্প্রদায় ও শাখা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Moheen (আলোচনা | অবদান)
Moheen ইসলামিক স্কুল এবং শাখা কে ইসলামি সম্প্রদায় ও শাখা শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
১ নং লাইন:
সহি বুখারী ও মুসলিম এর একাধিক হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রা) থেকে বর্ণিত রাসূল( ﷺ )এর ওফাতের পূর্বের ঘটনা নিয়ে শিয়া-ধর্মাবলম্বীরা প্রশ্ন তুলে থাকে ও উমর(রা)এর উপরে অপবাদ দিয়ে থাকে। যেটিকে বৃহস্পতিবারের ঘটনা বা কাগজের ঘটনা/হাদিসে কিরতাস বলা হয়। হাদিসে বর্ণিত ঘটনা নিম্নরূপ-
{{রুক্ষ অনুবাদ|date=আগস্ট ২০১৯}}
“রাসূলুল্লাহ( ﷺ ) এর অফাতের সময় যখন নিকটবর্তী হল এবং ঘরে ছিল লোকের সমাবেশ,তখন নবী( ﷺ )বললেন,তোমরা আস,আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেই, যেন তোমরা পরবর্তীতে পথভ্রষ্ট না হও। তখন ঘরে থাকা লোকেদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। এরপরে কিছু লোক বললেন,নবী( ﷺ ) এর অবস্থা কি? তিনি কি বিচ্ছিন্ন হলেন,জিজ্ঞেস করে নাও তাঁকে।উমর(রা) বললেন,রাসূল( ﷺ )এর রোগ যন্ত্রণা প্রবল হয়েছে। আমাদের কাছে কিতাবুল্লাহ(কুরআন) আছে,তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। রাসূলুল্লাহ( ﷺ )এর কাছে যখন তাদের কথা কাটাকাটী বৃদ্ধি পায় তখন তিনি( ﷺ ) বললেন, তোমরা উঠে যাও,আমার সামনে বাকবিতণ্ডা করো না। বর্ণনাকারী উবায়দুল্লাহ(র) বলেন, এরপর থেকে ইবন আব্বাস(রা)আক্ষেপ করে বলতেন,বিপদ কত বড় বিপদ!রাসূলুল্লাহ( ﷺ ) ও তাদের জন্য সেই কিতাব লিখে দেয়ার মাঝখানে তাদের মতবিরোধ ও ঝগড়া যে অন্তরায় হয়ে পড়ল।”
এই নিবন্ধটি ইসলামের বিভিন্ন শাখার এবং স্কুলের সংক্ষিপ্তসার করে । সুন্নি ইসলাম , শিয়া ইসলাম , এবং খারিজাইটে সর্বাধিক পরিচিত বিভক্ত, প্রধানত প্রধানত রাজনৈতিক ছিল কিন্তু অবশেষে ধর্মীয় এবং বিচারিক দিকনির্দেশনা অর্জন করেছিল। ইসলামে তিনটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল রয়েছে: বিচারশাস্ত্রের স্কুল , সুফি আদেশ এবং ধর্মশাস্ত্রের স্কুল । নিবন্ধটি আধুনিক যুগে উদ্ভূত প্রধান শব্দের এবং আন্দোলনকেও সারসংক্ষেপ করে।
[সহি বুখারী ১১৫,কিতাবুল ইলম;৪০৮৮,৪০৮৯,ক
িতাবুল মাগাযী;সহি মুসলিম- ৪০৮৮,কিতাবুল অসিয়্যাত]
এ নিয়ে শিয়াদের অভিযোগঃ রাসূল( ﷺ )এর লেখা/অসিয়্যাতে বাধা দিল উমর; রাসূল( ﷺ )এর বক্তব্য/ইচ্ছাকে অসুস্থতার প্রলাপ বলল,অথচ কুরআনে সূরা নাজম-৩,৪ নাম্বার আয়াতে বলা আছে নবী( ﷺ ) ওহী ব্যতীত কিছু বলেন না। সূরা নিসা’র ৬৫ নাম্বার আয়াতে- নিজেদের মধ্যে বিরোধ এর ক্ষেত্রে রাসূল( ﷺ )কে বিচারক মেনে তার কথা গ্রহণ না করলে ঈমানদার না হবার কথা বলা আছে!
এছাড়া ইহুদিজাত শিয়াদের এই অভিযোগের পরোক্ষ দিক হল,রাসূল( ﷺ ) নাকি আলী(রা)এর জন্য খেলাফত লিখে দিতে চেয়েছিলেন।কিন্তু উমর(রা)তাতে বাধা দিলেন!
লক্ষণীয়- এই হাদিসে কিরতাসকে যদি শিয়া ধর্মাবলম্বীরা আমলে নেয় তাহলে তাদের বেলায়েত আকিদা বরবাদ হয়,অর্থাৎ তাদের দাবিকৃত আলী(রা)কে খলিফা ঘোষণা/অসিয়্যাত করার ঘটনা আগে আর ঘটেনি! আর কাগজে না লেখায় তা মিস হয়ে যায়!!
এরপরে আসি হাদিসের ঘটনার বিভিন্ন দিক ও শব্দ যা নিয়ে শিয়া-কাফেররা বিভ্রান্তি,অপবাদের চেষ্টা করে থাকে।
.১ ‏( ﺃَﻫَﺠَﺮَ ﺍﺳْﺘَﻔْﻬِﻤُﻮﻩُ ) এর অর্থ এবং তা কে বলেছিল?
শিয়া কাফেররা এই উক্তিকে উমর(রা)এর উক্তি সাব্যস্ত করতে চেষ্টা করে এবং দাবি করে এর ‏( ﺃﻫﺠﺮ ) অর্থ বাজে প্রলাপ-বলে রাসূল ‏( ﷺ ) এর কথাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে!
কোনভাবে কোন হাদিস এর বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত না যেই এই উক্তি উমর(রা)এর!প্রতিটা হাদিসের মতনেই রয়েছে ঘরের অধিবাসী/সাহাবীদের মধ্যে লেখা-না লেখা নিয়ে মতবিরোধের সময়ে এক পক্ষের থেকে এই বক্তব্য আসে।আর সাহাবারা যে কথা বলেছেন এর অর্থ মোটেও প্রলাপোক্তি নয়!
হাদিসে ‏( ﻫﺠﺮ ) এর মানে কাটিয়ে যাওয়া,ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি অনুবাদ হলেও; মূল অর্থ বিচ্ছিন্ন হওয়া। এই উক্তি ছিল বিতর্ককারী দলের মধ্যকার সেই পক্ষের যারা লিখিয়ে নেয়ার পক্ষে ছিলেন। রাসূল ‏( ﷺ ) অসুস্থ ছিলেন এবং তাঁর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল,সুতরাং কথা বিচ্ছিন্ন হওয়া স্বাভাবিক।
সাধারণভাবে হাদিসের অনুবাদে কোথাও প্রলাপোক্তি করা হলেও,তার পরেই আছে তাঁকে জিজ্ঞাসা করে নাও। ‏( ﺍﺳْﺘَﻔْﻬِﻤُﻮﻩُ ) বা জিজ্ঞাসা করে নাও থাকায় বুঝা যায় এতে প্রলাপোক্তি উদ্দেশ্য না, কারণ কেউ ঘোরের মধ্যে আছে বা প্রলাপ বকছে এর পরে আবার তার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করা অর্থহীন,অযৌক্তিক।
কোন ব্যতিক্রমে যদি “অর্থহীন” অনুবাদ করেও,তাও বরং প্রশ্নবোধক থাকে যে “রাসূল ‏( ﷺ ) কি অর্থহীন কথা বলছেন,জিজ্ঞাসা কর”।
সুস্পষ্ট যে, লিখিয়ে নেয়ার পক্ষের সাহাবীদের থেকে জোর দেয়া হচ্ছিল যে রাসূল ‏( ﷺ ) কি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন,তাঁকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়া হোক বা লিখিয়ে নেয়ার হুকুম তামিল হোক।
.২ ‏( ﻗﺪ ﻏﻠﺐ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻮﺟﻊ ) অর্থাৎ রাসূল ‏( ﷺ ) কে রোগযন্ত্রণা আক্রান্ত করেছে। এটি উমর(রা)এর উক্তি,যা তিনি রাসূল ‏( ﷺ ) এর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বিতর্ককারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন।
রাসূল ‏( ﷺ ) এর মৃত্যুকালীন রোগ সম্প্রকে আমরা জানি যে,আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ইহুদিদের বিষের ক্রিয়ায় অফাতের মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠ নবুয়্যাতের সাথে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেছিলেন।
আয়শা(রা) থেকে বর্ণিত-নবী ‏( ﷺ ) ইন্তেকালের সময়ে যে রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন,তিনি বলতেন, “হে আয়শা,আমি খায়বারে যে (ইহুদিদের)বিষযুক্ত খাবার খেয়েছিলাম,সর্বদা তার যন্ত্রণা অনুভব করেছি,আর এখন তা আমার শ্বাসনালী বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছেন”
[বুখারী,৪০৮৬,কিতাবুল মাগাযী]
‘নবীগণ সাধারণের তুলনায় দ্বিগুণ মুসিবত সহ্য করেন’ (বুখারী ৫২৪৫ )
সুতরাং এমতাবস্থায় রাসূল( ﷺ )এর অফাতপূর্ব কষ্টের কথা চিন্তা করে বিতর্ককারীদের থামিয়ে দেয়া তাঁর প্রতি উমর(রা)এর মহব্বতের পরিচয়।স্বয়ং রাসূল( ﷺ )বলে গিয়েছেন-“পূর্বের সকল উম্মতের একজন মুহাদ্দিস(যাদের অন্তরে সত্য আসে) ছিল,আমার উম্মতের জন্য উমর বিন খাত্তাব”
[সহি মুসলিম ৫৯৭৮; বুখারী ৩৪২৪]
৩. রাসূল ‏( ﷺ ) এর অসিয়্যাত লেখা প্রসঙ্গঃ
রাসূল ‏( ﷺ ) আল্লাহ্র অহী দ্বারা পরিচালিত,তিনি নিজে থেকে কিছু বলেন/করেননি,যেমনটা সূরা নাজম-আয়াত ৩,৪ এ আছে। সে হিসাবে দেখলে যদি আল্লাহ্র নির্দেশে লেখার কিছু হত তা অবশ্যই তিনি লিখাতেন,ঘরের লোকদের বাকবিতণ্ডায় বিরক্ত হয়ে তা থেকে ক্ষান্ত হতেন না।
কারণ আল্লাহ্ রাসূল ‏( ﷺ ) কে নির্দেশ দিয়েছেন-“হে রাসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন।” [সূরা মায়েদা_আয়াত ৬৭]
সূরা আহযাব_আয়াত ৩৯ এ নবীদের বৈশিষ্ট্যরূপে বলা আছে { সেই নবীগণ আল্লাহর পয়গাম প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন। তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতেন না। {
সাহাবীদের গোলযোগে/উমর(রা)এর বাঁধায়(শিয়াদের দাবি) যদি দ্বীনের পয়গাম পৌঁছান বন্ধ রাখার বিশ্বাস করা হয় তাহলে তা দ্বীনের হেফাজতের উপরে সংশয় প্রকাশ! সুতরাং মানুষের বাকবিতণ্ডায় রাসূল( ﷺ )কোন গুরুত্বপূর্ণ বানী পৌঁছান বন্ধ রেখেছেন- এমন বিশ্বাস করা কুফরি আকিদা! ঐ ঘরে আরো লোক ছিল,তারা কেউ কেন লিখল না?
ঐ দিনের পরে আরো ৪ দিন নবী( ﷺ ) জীবিত ছিলেন,এর মধ্যে তিনি কেন অসিয়্যাত লেখালেন না- এগুলাই চিন্তার জন্য যথেষ্ট। হয়ত তাঁর মনে কোন চিন্তার উদয় হয়েছিল,পরে তিনি নিজস্ব নবীসুলভ হিকমতে তা বাদ দেন,উম্মাতের ইজমার উপরে ছেড়ে দেন।
রাসূল( ﷺ )বলেছেন-“ আমি তোমাদেরকে এমন কিছু আদেশ করতে বাদ রাখিনি যা তোমাদের জান্নাতের কাছে নিবে এবং এমন কিছু মানা করতে বাদ রাখিনি যা জাহান্নামের আগুন এর অধিবাসী করবে”
[ইবনে খুযাইমাহ,মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ২০১০০,তাবারানী ১৫৬/
২,হায়থামী_জামিউল আহাদিস ২৬৬/৮]
৪. উমর(রা) এর উক্তি ( ﺣَﺴْﺒُﻨَﺎ ﻛِﺘَﺎﺏُ ﺍﻟﻠَّﻪِ )আমাদের জন্য আল্লাহ্র কিতাব যথেষ্ট- স্বয়ং আল্লাহ্ই কুরআনে সূরা আনআম_আয়াত ৩৮ এ বলেছেন “এ কিতাবে কিছুই ছাড়িনি”।বিদায় হজ্জের সময়ে নাযিল হয় সূরা মায়েদার ৩ নাম্বার আয়াত যাতে আল্লাহ্ দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।
সে হিসাবে উমর(রা)এর কথায় কোণ ভুল নেই।রাসূল( ﷺ ) নিজেই বলেছেন আল্লাহ্র কিতাবকে আকড়ে ধরতে! উপরে উল্লিখিত ২নং পয়েন্টে রাসূল( ﷺ )এর অসুস্থ অবস্থা আর ৩নং পয়েন্টে অহীর ব্যাপারে,উম্মতক
ে পয়গাম পৌছানোর ব্যাপারে নবী( ﷺ )এর নীতি জানলে এই বক্তব্যে কোন সমস্যা থাকেনা!
৫. ইবনে আব্বাস(রা)এর কাছে যদি তা সমগ্র উম্মাহর বিপর্যয় হত,তাহলে তিনি পরবর্তী কোন অসঙ্গতির জন্য এই ঘটনাকে দায়ী করতেন।কিন্তু আমরা দেখতে পাই,তিনি উমর(রা)এর দোষ দিয়ে কিছু বলেননি; সাহাবাদের গোলযোগের কারণে লেখা না হবার আফসোস করলেও পরবর্তীতে কোন কিছুতে তিনি আপত্তি করেন নাই এবং এই না লেখাকে দায়ী করেন নাই।
খুলাফায়ের রাশেদীনের সঙ্গে আর সকল সাহাবীর মত তিনিও সহমত ছিলেন।বরং দেখি উমর(রা)এর কাছে তাঁর বিশেষ মর্যাদা ছিল (বুখারী ৪০৮৭)।
আরো লক্ষণীয়,এই হাদিস তাঁর শত-সহস্র ছাত্রের মধ্যে থেকে শুধু পুত্র উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন,আরেকজন সাঈদ ইবনে যুবায়র। তাদের হাদিসগুলাই বুখারী-মুস্লিমের একাধিক জায়গায় বর্ণিত।তাদের দু’জনের জীবনী ঘাটলেও দেখা যায় ইসলামের প্রথম ৭০ বা ১০০ বছরে এই হাদিস অল্প লোকই বর্ণনা করেছেন। অথচ বিপর্যয় এর কারণ হলে তা ব্যাপক প্রচারিত-ব্যবহৃত হবার কথা!
ইবনে আব্বাস(রা)এর “না লেখার বিপর্যয়” বরং বলা যায় আবু বকর(রা) এর খিলাফতের বিষয়ে কিছু লোকের সংশয়ের ব্যাপারে তিনি এমন বলে থাকছেন!
৬. রাসূলুল্লাহ ‏( ﷺ ) ওফাতপূর্ব পীড়ার সময়ে বলেন “আমি তো ইছা করেছিলাম আবু বকর ও তার পুত্রের কাছে লোক পাঠাব এবং তার(আবু বকর) এর ব্যাপারে অসিয়্যাত করে যাব।যাতে এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে না পারে এবং কোন প্রত্যাশী কোনরূপ প্রত্যাশা না করতে পারে।”
[বুখারী ৫২৬৪,৬৭২৪;মুসলিম_ফাযায়েলে আবু বকর]
আমরা এই হাদিসের বক্তব্যকে নিয়ে এই দাবি করিনা যে রাসূল ‏( ﷺ ) এর নিযুক্ত খলিফা আবু বকর(রা),কারণ পরে তিনি তা করেননি আল্লাহ্র উপরে ছেড়ে দিয়ে।তবে তাঁর এই ইচ্ছা প্রকাশ এর থেকে বুঝা যায় তিনি কি অসিয়্যাত করতে চেয়েছিলেন!
অন্য এক হাদিসে দেখি- ওফাতের পূর্বে অসুস্থতার কারণে রাসূলুল্লাহ ‏( ﷺ ) যখন সালাত আদায় করাতে পারছিলেন না , তখন তিনি বললেন- আবু বক্রকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আয়শা(রা) আপত্তি তুলেছিলেন যে আবু বকর(রা) নরম লোক, সালাতে কান্নার কারণে লোকেরা শুনতে পাবে না। কিন্তু রাসূল ‏( ﷺ ) বার বার নির্দেশ দিয়ে আবু বকর(রা) কে দিয়েই সালাতে ইমামতি করান।
[সহি বুখারী ৬৭৮, আযান অধ্যায়]
এটাও ছিল একধরণের পরোক্ষ ইশারা এবং ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু তবুও আমরা মুসলিমরা আবু বকর(রা)-এর খিলাফতের ব্যাপারে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত আনসার ও মুহাজির সাহাবাদের ইজমাকেই প্রধান দলিল হিসেবে নেই।
৭. ইবনে আব্বাস(রা) বর্ণিত বৃহস্পতিবারের বিপর্যয়ের হাদিসে বর্ধিত অংশে আমরা জানি-
“তখন তিনি বললেন, তোমরা আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দাও, তোমরা যে কাজের দিকে আমাকে ডাকছ তার চেয়ে আমি ভাল অবস্থায় অবস্থান আছি। তিনটি নসিহত করলেন-(১)আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরিকদের বহিষ্কার করে দিবে, (২)দূতদের সেরূপে আপ্যায়ন করবে যেমন আমি করতাম। বর্ণনাকারী বলেন তৃতীয়টি তিনি বলেননি অথবা আমি(ইবনে আব্বাস হতে রাবী)ভুলে গেছি।”
[বুখারী ২৯৪৪(জিযিয়া অধ্যায়),৪০৮৮(কি
তাবুল মাগাযী); মুসলিম ৪০৮৬(অসিয়াত অধ্যায়)]
সুতরাং আমরা জানি যে, রাসূল( ﷺ ) লিখিয়ে রাখার ইচ্ছা বদলে লোকেদেরকে তাঁর কাছ থেকে সরে যেতে বলেন। এরপরে তিনি মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন!
৮. ইবনে আব্বাস(রা)থেকে বর্ণিত,রাসূল( ﷺ) যখন মৃত্যুশয্যায়,তখন লক্ষণ দেখে নিশ্চিত হয়ে আব্বাস(রা) আলী(রা)কে বললেন,“চল যাই,রাসূলুল্লাহ( ﷺ)এর কাছে এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করি যে,তিনি (খিলাফতের) দায়িত্ব কার উপরে ন্যস্ত করে যান,যদি আমাদের মধ্যে থাকে তো তা আমরা জানব।আর যদি আমাদের ছাড়া অন্য কারো উপরে ন্যস্ত করে যান তালে তাও আমরা জানব এবং তিনি আমাদেরকে এ ব্যাপারে তখন অসিয়াত করে যাবেন।” তখন আলী(রা) বললেন,“আল্লাহ্র কসম!যদি এসম্পর্কে রাসূলুল্লাহ( ﷺ )কে আমরা জিজ্ঞাসা করি আর তিনি আমাদেরকে নিষেধ করে দেন,তবে এরপরে লোকেরা তা আমদের আর প্রদান করবে না।এজন্য আমি কখনোই এসম্পর্কে রাসূলুল্লাহ( ﷺ )কে জিজ্ঞাসা করব না।”
[বুখারী ৪১০০(মাগাযী অধ্যায়); ৫৮৩২(অনুমতি অধ্যায়)]
সুতরাং,সুস্পষ্ট যে,আগে-পরে কোন অসিয়্যাতের ঘটনা ঘটেনি এবং আলী(রা)ও আগেই খেলাফতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে চাননি!
৯. আলী(রা)নিজেও অসিয়্যাত লিখে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।আলী
(রা) থেকে বর্ণিত-আমরা রাসূলুল্লাহ( ﷺ )এর ওফাতের সময়ে তাঁর নিকট ছিলাম।তিনি আমাকে একটি পাত নিয়ে আসতে বললেন।তাতে তিনি এমন কিছু লিখে দিবেন, তাঁর (ইন্তেকালের) পর স্বীয় উম্মত আর পথ ভ্রষ্ট হবে না।আমি ভয় পেলাম আমি পাত আনতে তিনি মারা যান কিনা।এরপরে বললাম,হে রাসূলুল্লাহ( ﷺ !( আপনি বরং বলুন,আমি সতর্কভাবে শুনি।রাসূল( ﷺ )বললেন,“ আমি তোমাদেরকে জোর তাকিদ দিচ্ছি, নামায,যাকাত এবং অধীনস্ত দাসদাসীদের ব্যাপারে আল্লাহ্কে ভয় কর!”
[ মুসনাদে আহমদ ৫৯৫নং, বায়হাকী ১৭/৫, আবু দাঊদ ৫১৫৬] অর্থাৎ আলী(রা) লিখে না নিয়ে মৌখিক অসিয়্যাত জেনে নেন।
১০. শিয়া ধর্মের কিতাবে দেখি আলী(রা)বলেছেন-(কিতাব)কুরআন দলিল ও সমর্থনকারী {নাহজুল বালাগা,খুতবাতুল গারা,৮১}
তাহলে উমর(রা) এর “কিতাবুল্লাহ যথেষ্ট” বলায় সমস্যা কেন?!হুদাইবিয়া সন্ধি লেখার সময়ে রাসূল( ﷺ ) তাঁকে “রাসূলুল্লাহ” কেটে শুধু মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ লিখতে বলেছিলেন।কিন্তু রাসূল( ﷺ )এর মর্যাদার কথা চিন্তা করে ঐ নির্দেশ না মেনে তিনি “রাসূলুল্লাহ”-লেখাই বহাল রাখলেন!তাহলে রাসূল( ﷺ )এর অসুস্থতার কষ্ট দেখে উমর(রা)যদি ২ পক্ষের বিতর্ককারীদের নিরস্ত করেন সেটায় কি সমস্যা? শিয়া ধর্মের কিতাবে এর রেফারেন্স-{আল ইরশাদ ১২১/১,বিহারুল আনওয়ার ৩৩৩/২০ ও ৩৫৯পৃ,ই’লাম আল ওয়ারি ৯৭পৃ,তাফসিরে কুম্মি ৩১৩/২}।
শিয়া ধর্মগ্রন্থ ঘাটিয়ে দেখা যায় যে,আলী(রা) নিজেও ইমামত,বেলায়েত ইত্যাদির কিছুই ওসিয়্যাত করে যান নাই। আলী(রা)’র নামে চালানো তাঁর চিঠি-বক্তব্যের সঙ্কলনে মৃত্যুপূর্ব অসিয়্যাতে তিনি বলেন- “..আমার অসিয়্যাত হলঃ- আল্লাহ্র ক্ষেত্রে, তোমরা তাঁর সাথে শিরক করবে না; এবং মুহাম্মদ( ﷺ ) এর ব্যাপারে- তোমরা তাঁর সুন্নাহকে ছাড়বে না। এই দুই স্তম্ভ ধরে রাখবে এবং এই দুই বাতি জ্বালিয়ে রাখবে।”
[নাহজুল বালাগা, কালাম ১৪৯(মৃত্যুর পূর্বে)]
এছাড়া আলী(রা)কে নিরাপত্তার দেখভালের জন্য মদিনায় রেখে গেলে মুনাফিকদের কটু কথায়(ভীরু,বোঝা ইত্যাদি) সংবরণ করতে না পেরে তিনি রাসূল( ﷺ )এর নির্দেশ অমান্য করে মদিনা ছেড়ে জিহাদের বাহিনীতে চলে যান।{সিরাতে আমিরুল মুমিনীন,পৃ ১৩৬} সেখানে শিয়া ধর্মের অনুসারীদের কি বক্তব্য থাকে?!
শিয়া ধর্মে ইমামরা মাসুম,তারা নিষ্পাপ,নবী-রাসূলদের ন্যায়।৪র্থ ইমাম আলী বিন হুসাইন যখন মৃত্যুশয্যায় তখন তিনি দিন,তারিখ,মাস ইত্যাদি তাঁর পুত্রকে জিজ্ঞাসা করতে থাকায় লোকেরা তাঁর ব্যাপারে সেই একই কথা বলল-{ ﺇﻧﻪ ﻳﻬﺠﺮ }যা বুখারীর হাদিসে লোকেরা বলেছিল।
রেফারেন্স- ফারজ আল মাহমুম,পৃষ্ঠা ৬৭(অধ্যায় ১০)
যেকোন জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন লোকের জন্য যথেষ্ট! অন্তর তালাবদ্ধ হলে চোখ-কান এর ক্ষমতা কোন কাজে দেয় না, একারণে শিয়া-রাফেজীরা মুসলিমদের কিতাব থেকে এমন জিনিস নিয়ে চাপাবাজি করতে আসে যাতে বরং শিয়া ধর্মেরই বারোটা বেজে যায়!
আল্লাহ আমাদেরকে শিয়া-কাফেরদের ফেতনা থেকে হিফাজত করুন।
আমিন।
 
== ইতিহাস ==