ভিক্ষাটন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Suvray (আলোচনা | অবদান)
Suvray (আলোচনা | অবদান)
সংশোধন
১৪ নং লাইন:
'''ভিক্ষাটন''' ({{lang-sa|भिक्षाटन}}; {{IAST|Bhikṣāṭana}}; আক্ষরিক অর্থে, ‘‘ভিক্ষার্থে পরিব্রাজন বা তীর্থপর্যটন’’<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.sanskrit-lexicon.uni-koeln.de/cgi-bin/monier/serveimg.pl?file=/scans/MWScan/MWScanjpg/mw0756-bhAs.jpg|শিরোনাম=Monier Williams Sanskrit-English Dictionary|শেষাংশ=Monier-Williams|বছর=2008|পাতা=756|সংগ্রহের-তারিখ=|প্রকাশক=[[University of Cologne|Universität zu Köln]]|প্রকৃত-বছর = 1899}}</ref>) বা '''ভিক্ষাটনমূর্তি''' ({{IAST|Bhikṣāṭanamūrti}}) হলেন "পরম পরিব্রাজক (ভিক্ষাজীবী সন্ন্যাসী)"<ref name="Kramrisch155"/> বা "পরম ভিক্ষুক"<ref>Kramrisch p. 287</ref>রূপে [[হিন্দুধর্ম|হিন্দু]] [[হিন্দু দেবদেবী|দেবতা]] [[শিব|শিবের]] এক বিশেষ মূর্তি। এই মূর্তিতে শিব নগ্ন, চতুর্ভূজ, নানা অলংকারে ভূষিত ও ভিক্ষাপাত্রধারী; অনুগত ভূতপ্রেত ও কামার্ত নারীগণকে এই মূর্তিতে তাঁর অনুচররূপে দেখা যায়।
 
হিন্দুশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, ভিক্ষাটন হলেন শিবের ভয়ংকর রূপ [[ভৈরব (অবতার)|ভৈরবের]] একটি শান্ত মূর্তি। ভৈরবের দু’টি ভয়ংকর রূপের উল্লেখ পাওয়া যায়। একটি রূপে তিনি [[ব্রহ্মা|ব্রহ্মার]] শিরোশ্ছেদশিরশ্ছেদ করেছিলেন এবং [[কঙ্কালমূর্তি|অপর রূপে]] তিনি [[বিষ্ণু|বিষ্ণুর]] দ্বাররক্ষক [[বিশ্বকসেন|বিশ্বকসেনকে]] হত্যা করেন। ভিক্ষাটন রূপটি হল ভৈরবের এই দুই ভয়ংকর রূপের মধ্যবর্তী পর্যায়।<ref>von Stietencron p. 105</ref> হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তক ছেদনের পাপস্খালনপাপ স্খালন করতে ভৈরব ভিক্ষাটন রূপ ধারণ করেছিলেন। তারপর নগ্ন [[কাপালিক|কপালী]] বা কাপালিকের বেশ ধারণপূর্বক তিনি ব্রহ্মাণ্ড পরিভ্রমণ শুরু করেন এবং ব্রহ্মার করোটিকে (মাথার খুলি) ভিক্ষাপাত্র হিসাবে ব্যবহার করে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করেন। শেষে পবিত্র [[বারাণসী]] নগরীতে উপনীত হয়ে তিনি কৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে ভিক্ষাটন রূপ পরিত্যাগ করেন।
 
অপর এক কিংবদন্তি অনুসারে, ভিক্ষাটন ঋষিদের অজ্ঞতা দূর করতে এবং তাঁদের সত্য জ্ঞানের পথে পরিচালিত করতে দারুকবনে গমন করেন। সেখানে তাঁকে ভিক্ষা দিতে উপস্থিত হওয়া ঋষিপত্নীদেরকে তিনি প্রলুব্ধ করেন। ভিক্ষাটনের সেই ‘‘পাষণ্ডোচিত’’ মূর্তি ও কার্যে ভীত হয়ে ঋষিগণ তাঁর সঙ্গে এক দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত ভিক্ষাটনই জয়লাভ করেন এবং তাঁর বিমূর্ত প্রতীক [[শিবলিঙ্গ|লিঙ্গের]] পূজা প্রবর্তন করেন। এই কিংবদন্তিরই একটি পাঠান্তরে পাওয়া যায়, ভিক্ষাটন নৃত্যাধিশ্বররূপে [[নটরাজ]] রূপ ধারণ করেছিলেন।
২৫ নং লাইন:
[[কূর্মপুরাণ]] অনুযায়ী, [[ঋষি|ঋষিদের]] এক সমাবেশে সৃষ্টিকর্তা দেবতা [[ব্রহ্মা]] সদম্ভে নিজেকে ব্রহ্মাণ্ডের পরম স্রষ্টা বলে ঘোষণা করেন। তখন শিব সেই সমাবেশে এক অনন্ত আলোকস্তম্ভরূপে উপস্থিত হয়ে তাঁর কথার বিরোধিতা করেন। বিচারবিবেচনার পর ঋষিগণ শিবকেই পরম স্রষ্টারূপে স্বীকার করে নেন। কিন্তু ব্রহ্মা নিজের মতে অনড় থাকেন। ব্রহ্মার অহংকারে ক্রুদ্ধ শিব ভয়ংকর [[ভৈরব (অবতার)|ভৈরবের]] রূপ ধারণ করে পঞ্চমস্তক ব্রহ্মার একটি মস্তক শুধুমাত্র অঙ্গুলিচালনায় ছেদন করেন (এই মূর্তিটি মূর্তিতত্ত্বে বিবৃত হয়েছে "ব্রহ্মাশিরশ্ছেদমূর্তি" নামে)। ফলে ব্রহ্মার মৃত্যু ঘটে। কিন্তু কঠোর তপস্যাবলে সারা জীবনে তিনি যে আধ্যাত্মিক পূণ্য অর্জন করেছিলেন, তার বলে তৎক্ষণাৎ তিনি মৃত্যুপুরি থেকে ফিরেও আসেন। পুনর্জীবনলাভের পর ব্রহ্মা অবশ্য শিবের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নেন।<ref name = "Peterson345"/><ref name = "Rao295ff"/> [[শিবপুরাণ]] ও [[মৎস্যপুরাণ|মৎস্যপুরাণেও]] শিব কর্তৃক ব্রহ্মার শিরশ্ছেদের এই কারণই বর্ণিত হয়েছে। [[স্কন্দপুরাণ|স্কন্দপুরাণে]] অবশ্য বলা হয়েছে, অহংকার নয়, বরং নিজ কন্যার সঙ্গে অজাচারের শাস্তিস্বরূপ শিব ব্রহ্মার শিরশ্ছেদ করেছিলেন। [[শিবপুরাণ|শিবপুরাণের]] বঙ্গীয় পাঠে অবশ্য অন্য একটি উপাখ্যানের সন্ধান পাওয়া যায়। এই কাহিনি অনুসারে, একবার শিব অতিথিরূপে ব্রহ্মলোকে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই সময় ব্রহ্মার চারটি মস্তক শিবের স্তবগান করলেও পঞ্চম মস্তকটি তাঁকে অপমান করেছিল। তাই ক্রুদ্ধ শিব সেই মস্তকটি ছেদন করেন। শিবপুরাণে ব্রহ্মার আরও একটি অপরাধের কথা উল্লেখ রয়েছে। একবার ব্রহ্মা ও [[বিষ্ণু|বিষ্ণুর]] মধ্যে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিবাদ বাধে। তখন শিব তাঁদের সামনে এক অনন্ত [[জ্যোতির্লিঙ্গ]]রূপে আবির্ভূত হন। স্থির হয়, যিনি সেই লিঙ্গের অন্ত খুঁজে পাবেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হবেন। ব্রহ্মা সেই লিঙ্গের শীর্ষভাগ খুঁজে পাওয়ার মিথ্যা দাবি করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করেন। [[বরাহপুরাণ]] মতে, ব্রহ্মার ললাট থেকে শিবের জন্ম। তাই ব্রহ্মা তাঁকে "কপালী" সম্বোধন করলে শিব ক্রুদ্ধ হন। শিরশ্ছেদ-উপাখ্যানের সকল পাঠেই দেখে যায় যে, ক্রুদ্ধ শিব বা ভৈরব শাস্তি হিসাবে ব্রহ্মার শিরশ্ছেদন করেছেন।<ref>Kramrisch p. 259</ref><ref>von Stietencron pp. 106–8</ref> যদিও সকল পুরাণেই (কূর্ম, বরাহ, শিব, স্কন্দ ও [[বামনপুরাণ|বামন]]) বলা হয়েছে যে, ব্রহ্মা হলেন [[ব্রাহ্মণ (বর্ণ)|ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ]]। তাই ব্রহ্মহত্যার পাপে ব্রহ্মার মস্তকটি ভৈরব-শিবের বাম করতলে আটকে যায়। সেই পাপ স্খালনের জন্য শিব কাপালিকের ব্রত গ্রহণ করেন এবং ব্রহ্মার করোটিকে ভিক্ষাপাত্র করে নগ্ন ভিক্ষুকের বেশে ব্রহ্মাণ্ড পরিব্রাজন শুরু করেন।<ref name = "Peterson345">Peterson p. 345</ref><ref name = "Rao295ff">Rao pp. 295–7</ref> কূর্ম ও বামনপুরাণে আরও বলা হয়েছে যে, শিবের পাপটি শারীরিকরূপ ধারণ করে এবং ব্রহ্মহত্যা নামে এক পিশাচিনী সর্বত্র ভিক্ষাটনকে অনুসরণ করতে থাকে।<ref name = "Donaldson51"/>
 
কূর্মপুরাণের বিবরণ অনুযায়ী, ভিক্ষাটন [[গণ|ভূতগণকে]] সঙ্গে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে ত্রিলোক (স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল) পর্যটন করেন। গৃহবধূরা অন্ন ভিক্ষা দিতে এসে তাঁর রূপে মোহিত হয়ে নৃত্যগীত করতে করতে তাঁকে অনুসরণ করতেন।<ref name = "Rao295ff"/> ভ্রমণ করতে করতে ভিক্ষাটন উপস্থিত হলেন দারুকবনে বা দারুবনে (দেবদারু বন)। সেখানে ঋষিগণ তাঁর "লাম্পট্য ও নগ্নতা" দেখে হতবাক হয়ে গেলেন এবং তাঁদের পত্নীগণ ভিক্ষাটনকে দেখে প্রলুব্ধ হলেন। ঋষিগণের সঙ্গে সংঘাতের পর ভিক্ষাটন-শিব তাঁদের উপলব্ধি করালেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব।<ref name = "Peterson345"/><ref name = "Rao295ff"/> যদিও অন্য কয়েকটি পুরাণে দেখা যায়, এই সংঘাতের ঘটনাটি অন্য সময়ে ঘটেছিল এবং এটির সঙ্গে ভিক্ষাটনের পাপস্খালনপাপ স্খালন যাত্রার কোনও সম্পর্ক নেই।
 
কূর্মপুরাণ মতে, দারুকবনে ঋষিদের সঙ্গে সংঘাতের পরে ভিক্ষাটন পুনরায় ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। দেব ও দৈত্যদের নানা রাজ্য পর্যটনের পর শেষ পর্যন্ত তিনি [[বিষ্ণু|বিষ্ণুলোকে]] উপস্থিত হন। বিষ্ণুর দ্বাররক্ষী বিশ্বকসেন তাকে সেখানে প্রবেশে বাধা দেন। ক্রুদ্ধ হয়ে ভিক্ষাটন বিশ্বকসেনকে হত্যা করেন এবং তাঁর মৃতদেহ নিজের ত্রিশূলে গেঁথে নেন। এর ফলে তাঁর পাপের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। ত্রিশূলে মৃতদেহ গাঁথা অবস্থায় শিবের যে রূপ, তাকে বলে "কঙ্কালমূর্তি" ("কঙ্কালধারী")। এই কঙ্কালমূর্তি বেশে ভিক্ষাটন বিষ্ণুলোকে প্রবেশ করে অন্ন ভিক্ষা করেন। একটি পাঠে পাওয়া যায়, বিষ্ণু নিজের রক্ত খাদ্য হিসাবে তাঁকে প্রদান করেছিলেন। অপর একটি পাঠ থেকে জানা যায়, বিষ্ণু ভিক্ষাটনের কপালের একটি ধমনী কেটে দেন এবং সেখান থেকে রক্তধারা নিঃসৃত হয়ে তাঁর ভিক্ষাপাত্রে খাদ্য হিসাবে সঞ্চিত হয়। তারপর বিষ্ণুর নির্দেশেই নিজের পাপ স্খালনে ভিক্ষাটন পবিত্র নগরী [[বারাণসী|বারাণসীতে]] উপস্থিত হন।<ref name = "Peterson345"/><ref name = "Rao295ff"/><ref name = "Kramrisch">Kramrisch pp. 293–4</ref> বামনপুরাণ এবং মৎস্যপুরাণেও বিষ্ণুর দ্বাররক্ষীর সঙ্গে ভিক্ষাটনের সংঘাতের ঘটনাটি একটু পৃথকভাবে পুনর্কথিত হয়েছে।<ref>Kramrisch pp. 297–8</ref>