ব্যবহারকারী আলাপ:ড.রমজান আলি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
বিষয়বস্তু যোগ ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা |
→গল্প : জোছনার শাড়ি: নতুন অনুচ্ছেদ ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা |
||
৪৪১ নং লাইন:
সরস্বতী পূজার আগে শিক্ষক-শিক্ষিকারা এবং কয়েক জন ছাত্র-ছাত্রী মিলেই আমরা ঠাকুরের অর্ডার দিতে যেতাম। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে আমরা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হলাম।
আমাদের এক ছাত্র তখন ভাল ঠাকুর গড়ছে। ২৫-৩০ টা অর্ডার আছে। সেবার সে স্কুলে কোন একটা কাজে আশায় যখন নিজেই প্রস্তাব দিল তখন অল্প পয়সায় কেনার ইচ্ছা এবং তাকে উৎসাহ দেওয়ার ইচ্ছায় বললাম, ঠিক আছে তোর কাছ থেকেই এবার আমরা ঠাকুর নেব। ঠাকুর দেখতে গিয়ে বাদ সাধলেন একজন। ছাত্রের তৈরি ঠাকুরের হাত নাকি বাঁকা। সে কিছুতেই নেওয়া হবে না। যেখান থেকে নেয়া হতো সেখানেই আবার নতুন করে অর্ডার দেয়া হয়েছে। বুঝলাম গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের শিকার হচ্ছি। সামান্য অর্থকরী দিয়ে ছিলাম কিনা মনে নেই। তবে ছাত্রের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। একটা বিষণ্নতা গ্রাস করল বাগ্দেবীর পূজাকে কেন্দ্র করে। ছাত্র-ছাত্রীদের খাওয়ানোর দিন, প্রভূত আনন্দ। সেই আনন্দের ভান্ডারটা কেমন করে যেন শুকিয়ে এলো। [[ব্যবহারকারী:ড. সেখ রমজান আলি|ড. সেখ রমজান আলি]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:ড. সেখ রমজান আলি|আলাপ]]) ১২:২২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ (ইউটিসি)
== গল্প : জোছনার শাড়ি ==
জোছনা-শাড়ি
---- রমজান আলি
হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরছি। দামুড়হুদা ব্রিজের কাছে এসে বাস গেল থেমে। কাজকাম করে যারা ফিরছে তাদের বিরক্তির শেষ নেই। খোঁজখবর নিয়ে এসে কন্টাকটার জানালো, কৃষক সেঁতুতে কোথায় ফাটল ধরেছে। সারানোর কাজ চলছে যতক্ষণ না সারানো হবে ততক্ষণ বাস ছাড়বে না। তখন বাবার কথাটা বারবার মনে পড়ছে। বাবা বলতেন," কখনো বিকালে বা সন্ধ্যেবেলায় কোথায় বেরোবি না। দূরে কোথাও যেতে হলে সকাল সকাল যাত্রা শুরু করতে হয়।"
বাড়ি ফিরতে যে রাত হবে সেটা নিশ্চিত। এত রাত্রে ওই পথ দিয়ে কখনো হাঁটিনি। মাথাটা চিনচিন করে উঠলো।
খেজুরহাটি চটিতে এসে যখন নামলাম, তখন চটিতে গোলদারী, মনোহারী, মিষ্টির দোকান সব বন্ধ। চায়ের দোকানগুলিতে তালা পড়ছে। শুধু খোলা আছে খোকনদার পানের দোকান। চারিদিক অন্ধকার কুপকাপ। তবে অন্ধকার অমাবস্যার মতো ঘোরতর নয়, রাস্তাঘাট কিছুটা দেখা যায়। তবে বর্ষাকালের রাস্তা নয় , এই বাঁচোয়া। বর্ষায় কোথাও কোথাও কাঁদার দোঁক । মাঠের আলগুলো ভাঙ্গা। জলের উপর দিয়ে হেটে যেতে হয়। ফাগুনের মাঠে পরা। গুজ্ঝাড়গুলো জেগে থাকে। মেপে মেপে তার উপর পা রেখেও অনেকে হেঁটে যায় জমির উপর দিয়ে এখন যে কোনো ভাবেই যাওয়া যায় । পায়ে যদি ঘোঁড়-তোলা জুতো থাকে তাহলে তো কোন ব্যাপারই নেই। চষা-আচষা জমির উপর দিয়েই যেমন খুশি হঠহঠ করে হেঁটে যাওয়া যায়।
সামনে ওঁয়াড়ি পর্যন্ত যেতে কোনো অসুবিধা নেই । কারণ এই গ্রামের কিছু লোক চটিতে বিকাল বেলায় চা খেতে আসে। গল্পগুজব করে ফিরতে ফিরতে তাদের অনেক রাত হয়ে যায়। মানুষের বিশ্বাস আর কাউকে পাওয়া না গেলেও লাস্ট টিপে খুনকার সাহেবকে পাওয়া যায়। নেমেই খুঁজছি এমন কেউ আছে নাকি ? তাদের একজনকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে গেলাম। খোকনদার পানের দোকান থেকে বেরুলো একজন। মুখে পাকা দাড়ি । খোকন দার কুপির আলোতে যেটুকু দেখেছি। তার সঙ্গ নিয়ে বাড়তি পাওনা হলো। চাচার হাতে আছে একটা চার-সেল ব্যাটারি টর্চ। অন্ধকারে মারলেই গপগপ করে আলো জ্বলে উঠে। তার রেঞ্জ অনেক দূর। আকাশের দিকে মারলে কেমন গোল হয়ে গিয়ে দূরে কোথায় মিলিয়ে যায় । আর সমতলের টর্চ মারলে এই আলো দু কিলোমিটার পর্যন্ত ছাড়িয়ে অনেক কিছু দেখা যায়। এরকম একটা টর্চ নিয়েই জেঠতুতো দাদা বাঁদীপুকুরে রাত্রে বেলায় মাছ শিকার করে। পুকুরে জলের ধারে এসে চ্যাং, ল্যাঠা, শোল মাছ পচা পাতার ধারে আশ্রয় নেয় । রাত্রের বেলায় তাদের উপর আলো ফেললেও সরে না। তখন উপর থেকে বল্লম দিয়ে গেঁথে দেওয়া । ব্যাস কুপোকাত। সেই রকম একটা আলোর পিছু পিছু হেঁটে চলেছি।
খেজুরহাটির চটি থেকে আমাদের গ্রাম সব মিলে চার - সাড়ে চার ক্রোশ হবে। এখনকার মতো তখন গ্রামেগঞ্জে এত বাঁধানো কংক্রিটের রাস্তা ছিল না। শ্রাবণে চাষের সময় গ্রামের মাঝ পথের রাস্তাগুলো দোঁকে পরিণত হতো। কাদায় হাঁটু পর্যন্ত ডুবিয়ে বাজ্য বসতে যেত হতো অনেক মানুষকে । বসন্ত গ্রীষ্মে অবশ্য শুকনো মাটির পথ। এখনকার মতো রাস্তার উপর সার দিয়ে টোটো চলতো না। তখন ফাগুনের সেই মাটির পথ আমাকে পায়ে হেঁটেই যেতে হবে। ওজোলপুকুর পেরিয়ে কবরডাঙ্গার কাছে যখন এলাম রাত্রি তখন সাড়ে দশটার কাছাকাছি। চাচা বলল কার ছেলে তুমি ? কোথায় পড়ো ? কোথায় থাকো ? প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতেই চাচা বলল, "তোমার বাপ কে আমি চিনি ,আমাকেও তোমার বাপ চেনে। আমি তাসের। আমার নাম করো , তাহলেই চিনতে পারবে। এই অঞ্চলের সবাই আমাকে চেনে।" বললাম, আচ্ছা।
বললেন, তোমাকে বরং একটা যুক্তি দিই ,বাবা ! এই রাত্রে এতটা পথ হেঁটে গিয়ে কাজ নেই। আমাদের গ্রামে তো তোমার ছোট পিসির বাড়ি। নিজামদের বাড়ি আমি চিনি। বরং তুমি তোমার পিসির বাড়িতে চলে যাও।
বললাম, এতরাত্রে পিসির বাড়ি ?
বললে, যদি যাও, আমি পৌঁছে দিতে পারি।
আমি বললাম , না চাচা আমি একাই চলে যেতে পারবো । তাছাড়া একটু পরেই তো অন্ধকার কেটে জ্যোৎস্না উঠবে।
তাসের চাচা বলল, তোমাকে কিন্তু এঁটোর উপর দিয়ে যেতে হবে । জায়গাটা ভালো লয়।
আমি বললাম, না এত রাত্রে পিসির বাড়ি গেলে পিসি বকুনি দেবে। এইতো দুটো গ্রামের মাঝে মোটা আলপথ, ঠিক চলে যাব। তাছাড়া আমার কাছে তো কিছু নেই। চোর ডাকাতে কি আর নেবে?
বললো, না পেলে মারে হাড় ভাঙবে । ডাকাতদের রাগ তো তুমি জানো না।
ছোটবেলা থেকে আনসার ,গদাই, শিবু কত চোর-ডাকাতের গল্প শুনেছি কিন্তু দেখিনি । একবার দেখাও তো হবে।
ভয় কাটাতে একটু রসিকতা করার চেষ্টা করলাম।
চাচা বললে, --- আরে বাপু চোর-ডাকাত আবার দেখার কি আছে ? সে সবের অভাব নেই এই গ্রামে । এই আমাকেই দেখো না যৌবন বয়সে আমি কি আর কম ডাকাতি করেছি?
অন্ধকারে একবার তাসের চাচার ফিগারের দিকে তাকালাম ,আন্দাজ করে নিলাম তার যৌবনকালের ফিগারটা। চারিদিকে অন্ধকার কুপকাপ তখনো ওঁয়াড়ি গ্রামে ঢুকিনি। ফাঁকা মাঠ। আগুপিছু কেউ নেই।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, এখন করো না ?
বললে, না ছেড়ে দিয়েছি?
বললাম, এখন পুলিশে খুব ধরাধরি না !
বললে, না না পুলিশের ধরাধরি কোন কালেই ছিল না। তাদের যোগসাজশে ই তো এক একটা দল চলে। আমি সেজন্য ছাড়িনি।
কৌতূহল বাড়লো। বললাম, তবে ?
শ্বাসটা টেনে নিয়ে তাসের চাচা বলল, সে একটা ঘটনা বাবা।
বললাম, কী ঘটনা ?
শুনতে খুব কৌতূহল আরও বাড়লো হলো।
তাসের চাচা গলাখাকারি দিয়ে বলল, তখন বয়েস দু'কুড়ি বছর পার করেছি। ছক্রোশ দূরে বোঁয়াইচন্ডী পেরিয়ে ডাকাতি করতে গেছি।
গেরস্থ ঘর শুনেছিলাম ধান বিক্রি করে কয়েক হাজার টাকা পেয়েছে। আমাদের লোকাল টিকটিকিটা খবর দিয়েছিল ঘরে গুলিতে রাখা খাস চালের ভিতরে টাকাটা কাপড়ে মুড়ে গুঁজে রেখেছে। খবর নিশ্চিত। খালি হাতে ফিরতে হবেনা। আট জনের দল সবাই পাট্টা জুয়ান। আমি প্রথম বার-দরজায় গিয়ে লাথি মারলাম। বাড়িটা গ্রামের একটু বাইরের দিকে। আওয়াজ পেল ভয়ে কেউ আসবে না জানি। আমাদের লাঠির সামনে দাঁড়াবার মত মরদ কোথা ? মাঠ হুঁড়কো দেওয়া আছে দরজায়। কপাট ভাঙে না । একসঙ্গে জয় মা কালী বলে আটখানা ডান পায়ের ধাক্কা পাল্লা কবজা ছেড়ে বেরিয়ে গেল। পরিবারের মেজ ছেলে বাইরে থাকে। জেনেছিলাম মেজ বউ-এর ঘরে এই টাকা লুকানো আছে। সদর দরজা পেরিয়ে প্রথমেই মেজ বউয়ের ঘর। ভেতর দরজায় মাসের হুঁড়কো দেওয়া থাকে। লাত্ মেরে ভাঙ্গা মুশকিল। মাগি, দরজা কিছুতেই খুলবে না। প্রথমে বললাম , দরজা খোল। কিছুই করবো না। টাকাটা দিয়ে দে , চলে যাব। গুরু বলেছিল টাকা দিয়ে দিলে মেয়েদের গায়ে কখনো হাত দিবি না। কিন্তু সে যখন দরজা খুলতে চাইল না। তখন নেতাই শুরু করল সিঁদ কাটা। মোটা চওড়া মাটির দেওয়াল সিঁদ কাটা কি চাট্টিখানি ব্যাপার। শেষে জানলার বাখারি ভেঙ্গে পিরু বাগদি ঢুকে গেল। ভিতর থেকে দিল দরজা খুলে। রাগ তখন মাথায় উঠেছে। ঘরে ঢুকেই ভ্যাক ভ্যাক করে মাগির পেটে দুটো গোড়াল মারতেই , বাবারে করে লুটিয়ে পরল। বুঝতে পারিনি । ন'মাসের পোয়াতি ছিল। গুলিতে রাখা চালের ভিতরে টাকা বের করতে না করতেই তার পেট থেকে হড়হড় করে বেরিয়ে এলো বাচ্চা। নাজেম বললো , কী করলি ভাই গুরুর আদেশ মানতে পারলি না ? দুবার কঁকিয়ে উঠে চোখের সামনেই মেয়েটা গেল মরে। এক মাস ধরে খেতে উঠতে বসতে সেই দৃশ্যই চোখে চোখে ঘুরেছিল। রাতের পর রাত ঘুমোতে পারিনি। নিজের কান মলে শপথ করলাম আর চুরি ডাকাতি করব না। গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে পুরনো বই-খাতা, লোহা লক্কর কিনে , চটিতে গিয়ে মাধবের আরতে বিক্রি করে খাবো। মন আর কিছুতেই শান্ত হয় না। গাঁয়ের মৌলভীর কথায় নামাজ পড়া ধরলাম। তাতে সুখ নেই । সেই ঘটনাটা ফিরে ফিরে আসে। শেষে বউকে ঘটনাটা বললাম।
ককিয়ে উঠে বউ বললে, এবার যদি শুনি চুরি করিস্ , তো সেদিনই আমি গলায় দড়ি দেবো। তোর মায়ের কিরে রইলো । এরপর যদি চুরি করিস তো মা-মাগ করিস্। ছেড়ে দিয়েছি বাপ ! আর ও পথে যায়নি।
গল্প শুনতে শুনতে ওঁয়াড়ির কাজীপাড়া পেরিয়ে বাগদী পাড়া পর্যন্ত এসে গেলাম। এবার ধূ ধূ মাঠ ।
চাচা বললো, চল বাপ ! আর একটুকু পার করে দিই।
আমি বললাম, না না চাচা, আর লাগবে না। ওই দেখো চাঁদ উঠেছে মাঠ আলোয় বকবক করছে।
তাসের চাচা সেইখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই অনেকক্ষণ পর্যন্ত টর্চ দেখালো।
এবার একা আল পথে সেই পুরনো বটগাছটার পার হলাম। রোদের সময় এখানে অনেকে বিশ্রাম নেয়। দু একটা পাখি ডাকছে চারিদিকে কেমন চুপচাপ। গোটা মাঠজুড়ে জোছনা নেমে এসেছে। সরু দুটো গাড়ির নিঙ্ এগিয়ে গেছে। তার ধুলোর উপর চাঁদের আলো পড়ে। জোছনা আলোর মধ্যেই একটু কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া। এঁটোর কাছাকাছি আসতেই মনে পড়ছে জেঠতুতো দাদার কাছে শোনা সেই সব গল্প। রাত্রে একবার নাকি আমাদের গাঁয়ের ইরফান গাড়ি নিয়ে এই পথে ফিরছিল। তার গাড়ির লপকা ধরে পেত্নীরা পিছু নেয়। তাকে ইনিয়ে-বিনিয়ে কি সব বলেছিল। ইরফানের 'বাবা গো, মা গো' চিৎকারে গ্রামের লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। মাথায় কলসির উপর কলসি জল ঢালা হলেও সেদিন সারারাত ইরফান শুধু ঘোঁ ঘোঁ করেছিল। কথাটা মনে পড়তেই গাটা ছমছম করে ওঠলো। এই এঁটো পুকুরে দুলে বউ একটা শোল মাছ এনে হাড়িতে জিঁয়ে রেখেছিল। রাত্রে বেলায় সেই শোলমাছটা কেমন আওয়াজ করে ওঠে। পরদিন সকালে পুকুর ঘাটে গিয়ে দোলে গো কথাটা ফাঁস করে দেয়। লোক জানাজানি হতে তা শুনে পাড়ার লোকজন তাকে অভিযোগ করে বলে, তুই পেত্নী ধরে এনেছিস। ওদের জিঁয়ে রাখতে নেই । যেখান থেকে ধরেছিস্ সেখানে ছেড়ে দিয়ে আয়। দুলে বউ মাথায় কাপড় দিয়ে তাই করেছিল। গভীর রাতে এই এঁটো পুকুর থেকে নাকি মাঝেমধ্যে বাচ্চা মেয়ের কান্না শোনা যায়।
সামনেই এঁটোপুকুর । তার পাড়ের উপর একটা প্রাচীন অশ্বত্থ গাছ।
জোছনার রাত্রে অশ্বত্থ গাছের পাতাগুলো দুলছে। পরস্পর লেগে কেমন একটা ঝিরঝির আওয়াজ হচ্ছে। ভয়টা আরো জাঁকিয়ে উঠলো। এখন যদি সে রকম ঘটনা ঘটে ?
দাদি একদিন বলেছিল, বিপদে পড়লে পশ্চিম দিকে মুখ করে আল্লার নাম নিবি। পশ্চিম দিকে যেই মুখ করেছি অমনি দেখি সাদা ধবধবে কাপড় পড়ে জমির আলের উপর কে যেন বসে আছে। আমার ডান দিকে আশি-একশো ফুট দূরে। ভাবলাম ঘাঁটিয়ে লাভ নেই ,যে বসে আছে থাক। সামনের রাস্তা তো আটকে দাঁড়ায়নি। এগিয়ে গেলাম। গা'টা ঘেমে উঠেছে। একটু এগিয়ে আবার পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি, কেউ নেই। সাদা কাপড় পড়ে বসে থাকা বুড়ি গেল কোথায় ? জ্যোৎস্নারাত্রে এই মাঠের মধ্যে কে আর বসে থাকবে ? চোখের ভ্রম নয় তো ? কি করি এখন ?
মা বলে, একটা জিনিসের শেষ দেখা দেখে ছাড়বি। মনটাকে শক্ত করে বললাম, এর শেষ দেখা দেখেই ছাড়বো ?
আবার পিছিয়ে পিছিয়ে গেলাম। যে জায়গা থেকে ধবধবে সাদা কাপড় পরা বুড়িকে দেখেছি সেখানে গিয়ে দেখি হ্যাঁ আবার এসে বসে আছে। এই দেখে এলাম নেই আবার দেখি আছে। নিশ্চয়ই পেত্নী টেত্নী হবে। চষা জমি থেকে ডান হাত দিয়ে একটা বড় মাটির চ্যালা হাতে তুলে নিলাম। একটু মিনমিনে গলায় বললাম, কে ? কথা বলো, নাহলে ঢিল মারবো। ঢিল মারলাম না। না জানি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া কোন বুড়ি মানুষও হতে পারে। ছোটো একটা চ্যালা তুলে নিয়ে ছুঁড়লাম। চ্যালা মারার পরও সে নিরুত্তর ।
দূরে গ্রাম থেকে কুকুরের একটানা ভো ভো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। শুনেছি কোনো অশরীরী আত্মার সন্ধান পেলে কুকুরেরা এরকম আওয়াজ করে। যা হয় হবে। ভয়ে ভয়ে একপা, একপা করে তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ডান হাতের বড় চ্যালাটা বাঁ হাতে নিয়ে একটা ছোট সাইজের চ্যালা সেই জায়গায় সাদা কাপড় পড়া বুড়িটির উপর টিক্ করে ছুঁড়লাম। দীর্ঘদিন মার্বেল খেলার অভ্যাস ব্যর্থ হয়নি। গায়ে লাগার সত্ত্বেও কোন কথা নেই ! শুনেছি ভূত-পেত্নীদের গায়ে কিছুই লাগেনা। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে আবার একটা ঢিল মারতেই টিক্ করে একটা শব্দ পেলাম। এ শব্দ তো মাটিতে ঢিল পড়ার শব্দ। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে আরও একটা ঢিল মারতেই একটু জোরে আবার সেই আওয়াজ। সাহস গেল বেড়ে । আরও কাছে এগিয়ে এসে বাঁ হাতে রাখা বড় চ্যালাটা সেখানে ছুড়ে ফেলতেই টকাস্ করে পড়ে ভেঙে চারিদিকে ছড়িয়ে গেল। এ বাবা, সাদা কাপড় পরে এখানে কেউ তো আর বসে নেই ? যে পথে এগিয়েছে ছিলাম সেই পথেই আবার একটু পিছিয়ে পিছিয়ে গেলাম । কুড়ি-পঁচিশ ফুট পিছিয়ে এসেই দেখি আবার সেই সাদা কাপড় পরা বুড়ি আগের মতোনই বসে আছে। আবার এগিয়ে গিয়ে দেখি, নেই। সাহস করে এবার তার বসে থাকার জায়গাটা গিয়ে দেখি একটা বেড়াকলমির ছোট্ট ঝোপ , আর তার আগে বসার জায়গাটিতে আলের উপর মাটি দেওয়া হয়েছিল। বৃষ্টিতে ধুয়ে সেই মাটি শানের মত হয়ে গিয়ে সাদা চকচক করছে। সেই মাটির উপর জ্যোৎস্না পড়ায় মনে হচ্ছে যেন সাদা কাপড় পড়ে কেউ বসে আছে। আসলে সে পেত্নী নয় জোছনা। [[ব্যবহারকারী:ড. সেখ রমজান আলি|ড. সেখ রমজান আলি]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:ড. সেখ রমজান আলি|আলাপ]]) ১২:৫১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ (ইউটিসি)
|