বাংলাদেশের ইতিহাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৮১ নং লাইন:
এই রাজবংশের পরবর্তী শাসক দশরথ দেব এই বংশের সবচেয়ে পরাক্রমশালী শাসক ছিলেন। তিনি সেন সাম্রাজ্যের অবসান ঘটান এবং সমগ্র পূর্ববঙ্গ ( ঢাকা-ময়মনসিংহ-খুলনা) অঞ্চল দখল করে নেন। তিনি দিল্লীর সুলতান [[গিয়াসউদ্দিন বলবন|গিয়াসউদ্দীন বলবনের]] সাথে মিত্রতা করে আগ্রাসনকারী মুঘীসউদ্দীন তুঘরলকে পরাজিত করেন এবং বাংলার হিন্দু সাম্রাজ্যের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেন। এ উপলক্ষে তিনি দনুজ মর্দন দেব উপাধি গ্রহণ করেন। গিয়াসউদ্দীন বলবনের ইতিহাসে তাকে দনুজ রায় বলে অভিহিত করা হয়েছে। দেব বংশ আরও কিছুকাল তার স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। যদিও এই সময়কার রাজাদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। অবশেষে বাংলার মাহমুদ শাহী সুলতান ফিরোজ শাহের আক্রমণে দেব রাজবংশের পতন হয়।
 
==মধ্যযুগ এবং ইসলামেরইসলামী আগমনশাসন==
{{multiple image
| align = right
৯৪ নং লাইন:
}}
সপ্তম শতাব্দীতে আরব মুসলিম ব্যবসায়ী ও সুফি ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে বাংলায় প্রথম ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছিল। দ্বাদশ শতকে মুসলিমরা বাংলায় বিজয় লাভ করে এবং তারা ঐ অঞ্চলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১২০২ সালের শুরুর দিকে দিল্লী সালতানাত থেকে একজন সামরিক অধিনায়ক বখতিয়ার খিলজী বাংলা ও বিহারকে পরাজিত করেছিলেন। প্রথমদিকে বাংলা তুর্কী জাতির বিভিন্ন গোত্র দ্বারা শাসিত হয়েছিল। পরবর্তীতে আরব, পারসীয়, আফগান, মুঘল প্রভৃতি অভিযানকারী জাতি দ্বারা বাংলা শাসিত হয়। মুসলিম শাসকদের অধীনে বাংলা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছিল। কারণ শহরগুলো উন্নত হয়েছিল; প্রাসাদ, দুর্গ, মসজিদ, সমাধিসৌধ এবং বাগান; রাস্তা এবং সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল; এবং নতুন বাণিজ্য পথগুলো সমৃদ্ধি ও নতুন সাংস্কৃতিক জীবন বয়ে নিয়ে এসেছিল।
 
==তুর্কি শাসন==
 
===খিলজী শাসন===
১২৪ ⟶ ১২২ নং লাইন:
ফিরোজ শাহের পর তার পুত্র ও উত্তরাধিকারী [[গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ|বাহাদুর শাহ]] সমগ্র বাংলার অধিপতি হন। কিন্তু এ সময় দিল্লীর তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা [[গিয়াসউদ্দিন তুগলক|গিয়াসউদ্দীন তুঘলক]] বাংলাদেশে সমরাভিযান করেন। ষড়যন্ত্রকারী ভ্রাতা নাসিরউদ্দীন ইব্রাহীমের সহায়তায় রাজধানী লখনৌতি আক্রমণ করেন এবং বাহাদুর শাহ পরাজিত হন। গিয়াসউদ্দীন তুঘলক বাংলাকে সাতগাও, লখনৌতি ও [[সোনারগাঁও]] এই তিন ভাগে ভাগ করেন এবং এই তিন ভাগকে তিনজন পৃথক শাসকের হাতে নিযুক্ত করেন। কিন্তু গিয়াসউদ্দীন তুঘলক প্রত্যাবর্তন করলে বাহাদুর শাহ পুনরায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সাতগাওয়ের শাসনকর্তা বাহরাম খান তার বিরুদ্ধে সমরাভিযান করেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন।
 
===ইলিয়াস শাহী রাজবংশ===
{{মূল নিবন্ধ|ইলিয়াস শাহী রাজবংশ}}
 
১৩৩ ⟶ ১৩১ নং লাইন:
সিকান্দার শাহের পর [[গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ|আজম শাহ]] সিংহাসনে অসীন হন। তার শাসনকাল ছিল শান্তিপূর্ণ এবং এ সময় তেমন যুদ্ধ বিগ্রহের ঘটনা ঘটেনি। তার সময়ে চীনের রাষ্ট্রদূত মা হুয়ান বাংলাদেশে আগমণ করেন। তিনি ইরানের বিখ্যাত কবি [[হাফিজ|হাফিজকে]] বাংলায় আগমনের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি রওয়ানাও হয়েছিলেন কিন্তু পথিমধ্যে মারা যান। ইলিয়াস শাহী সুলতানগণ বাংলার [[হিন্দু|হিন্দুদের]] ক্ষমতায়িত করতে চেয়েছিলেন। বিপুল সংখ্যক হিন্দুকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। এবং হিন্দুদের বিভিন্ন অঞ্চলে সামন্তপ্রভু হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এতে হিন্দুরা অত্যন্ত ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা দখল করে বাংলার ইলিয়াস শাহী বংশের অবসান ঘটান।
 
===গণেশীয় রাজবংশ===
{{মূল নিবন্ধ|গনেশীয় রাজবংশ}}
 
১৪২ ⟶ ১৪০ নং লাইন:
মুহাম্মাদ শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র ও উত্তরাধিকারী [[শামসউদ্দিন আহমাদ শাহ|আহমাদ শাহ]] বাংলার সিংহাসনে বসেন। তার ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মতামত বিভ্রান্তিকর। ফেরেশতার মতে, তিনি তার মহান পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন এবং ন্যায়পরায়ণতার আদর্শ প্রাণপনে রক্ষা করেন। অপরপক্ষে [[গোলাম হোসেন সেলিম|গোলাম হোসেন]] বলেন, তিনি অত্যাচারী ও রক্তপিপাসু ছিলেন। তিনি বিনা কারণে রক্তপাত করতেন এবং অসহায় নারী-পুরুষদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতেন। যাই হোক তিনি জাউনপুরের কাছে পরাজিত হন। এবং বিহার প্রদেশটি হারিয়ে ফেলেন। সাদী খান ও নাসির খান নামক দুইজন ক্রীতদাস, যারা তার অমাত্য পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তাকে হত্যা করেন এবং বাংলার সিংহাসন দখল করেন।
 
===পরবর্তী ইলিয়াস শাহী রাজবংশ===
 
সাদী খান ও নাসির খান নামক ক্ষমতা দখলকারী আমীরদের সরিয়ে [[নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ|মাহমুদ শাহ]] নামক ইলিয়াস শাহী বংশের একজন বংশধর বাংলার ক্ষমতা দখল করেন। এর ফলে বাংলায় ইলিয়াস শাহী রাজবংশ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। সুলতান মাহমুদ শাহের সময় বাংলার ইমারত ও স্থাপত্য শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের ইমারত নির্মাণ করে একে সুসজ্জিত করেন। এসব ইমারতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাগেরহাটের [[ষাট গম্বুজ মসজিদ]], ঢাকার বিনত বিবির মসজিদ, গৌড়ের বাইশগজী প্রাচীর প্রভৃতি।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=214|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> এজন্য অনেক ঐতিহাসিক তার যুগকে অগাস্টান যুগ বলে অভিহিত করে থাকেন।
১৫০ ⟶ ১৪৮ নং লাইন:
সুলতান [[শামসউদ্দিন ইউসুফ শাহ|ইউসুফ শাহ]] একজন দানশীল, ন্যায়পরায়ণ ও ধার্মিক শাসক ছিলেন। তিনি ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি দরবারে জ্ঞানী-গুণী, আলেম ও বিচারকদের আহ্বান করতেন। পরবর্তী সুলতান [[জালালউদ্দিন ফাতেহ শাহ|ফতেহ শাহও]] একজন দয়ালু, কর্মঠ ও ক্ষমতাশালী সম্রাট ছিলেন। তিনি সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে রাজ্য শাসন করতেন। তার সময়ে হাবশী ক্রীতদাসগণ অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তিনি এই হাবশী সেনাবাহিনী ভেঙ্গে দিতে উদ্যত হন। ফলে হাবশী সেনাবাহিনী বিদ্রোহ করে এবং তাকে হত্যা করে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে। এর ফলে বংলার ইলিয়াস শাহী রাজবংশের পতন ঘটে।
 
===হোসেন শাহী রাজবংশ===
{{মূল নিবন্ধ|হোসেন শাহী রাজবংশ}}
 
১৫৯ ⟶ ১৫৭ নং লাইন:
নসরত শাহের পর তার পুত্র ফিরোজ শাহ বাংলার সিংহাসনে আসীন হন। কিন্তু তার খুল্লতাত [[গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ|মাহমুদ শাহ]] তাকে হত্যা করে ক্ষমতায় বসেন। এর ফলে রাজপরিবারে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। ত্রিহুতের শাসনকর্তা মখদুম আলম স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসেন। কিন্তু মাহমুদ শাহ তাকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। এসময় [[বিহার|বিহারের]] শাসনকর্তা জালাল খান তার অভিভাবক [[শের শাহ|শের খানের]] শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে মাহমুদ শাহকে বিহার আক্রমণের জন্য আহ্বান জানান। মাহমুদ শাহ বিহার আক্রমণ করেন কিন্তু তিনি পরাজিত হন। অতঃপর ১৫৩৮ সালে শেরশাহ বাংলার রাজধানী [[গৌড়]] দখল করে নেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=243|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> ফলে বাংলার হোসেন শাহী রাজবংশের পতন ঘটে।
 
===পাখতুন শাসন===
 
পাখতুনগণ ছিলেন আফগানিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তু এবং তারা পাঠান নামেও পরিচিত ছিলেন। পাখতুনগণ ছিলেন ভারতবর্ষের অধিশ্বর এবং তারা ভারতে লোদী বংশ নামে একটি শক্তিধর রাজবংশ স্থাপন করেন। পরবর্তীতে পানিপথের যুদ্ধে মুঘলদের হাতে তাদের পরাজয় হয় এবং তারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।