পোলোনিয়াম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৫০ নং লাইন:
 
== আবিষ্কারের ইতিহাস ==
[[১৮৭০]] খ্রিস্টাব্দে [[দিমিত্রি মেন্ডেলেয়েভ]] সর্বপ্রথম পোলোনিয়ামের প্রধান ধর্ম সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি একটি নিবন্ধে এ বিষয়ে লিখেছিলেন,
{{cquote|
<i>ভারী ধাতুগুলোর মধ্যে [[টেলুরিয়াম|টেলুরিয়ামের]] সদৃশ একটি মৌলকে আমরা আশা করতে পারি, যেটির পারমাণবিক গুরুত্ব [[বিসমাথ|বিসমাথের]] থেকে বেশি। এটির ধাতব ধর্ম থাকা উচিত এবং সালফিউরিক এসিডের ন্যায় ধর্ম ও গঠন বিশিষ্ট এসিড মৌলটি থেকে পাওয়া যাবে এবং যে এসিডটির [[জারণ]] ক্ষমতা টেলুরিক এসিড থেকে বেশি হবে....। RO<sub>2</sub> নামক [[অক্সাইড|অক্সাইডটির]] অম্লীয় ধর্ম আশা করা যায় না, যদিও টেলুরাস এসিডের অম্লীয় ধর্ম আছে। মৌলটি জৈব-ধাতব যৌগ উৎপন্ন করবে, কিন্তু কোন [[হাইড্রোজেন]] যৌগ উৎপন্ন করবে না....।}}
মেন্ডেলেয়েভ অজ্ঞাত এই মৌলটির নাম দিয়েছিলেন ''দ্বি-টেলুরিয়াম''। এরপর উনিশ বছর পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে মেন্ডেলেয়েভ এই পদার্থের আরও কয়েকটি ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণী সংযোজন করেন। তার এ সকল ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে ছিল: আপেক্ষিক [[পারমানবিক ভর]] ২১২, DtO<sub>3</sub> বিশিষ্ট অক্সাইড গঠন করবে, মুক্ত অবস্থায় মৌলটি হল স্বল্প গলনাঙ্কবিশিষ্ট অনুদ্বায়ী ও ধূসর বর্ণের কেলাসিত ধাতব পদার্থ যার ঘনত্ব ৯.৮, ধাতুটি সহজেই DtO<sub>3</sub>-তে জারিত হয়, অক্সাইডটির মৃদু অম্লীয় ও ক্ষারকীয় ধর্ম থাকবে তবে তা হবে অবশ্যই অস্থায়ী যৌগ, ধাতুটি অন্যান্য ধাতুর সাথে মিলে সঙ্কর ধাতু উৎপন্ন করবে।
 
মেন্ডেলেয়েভের এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো অনেকাংশেই নিখুঁত ছিল। এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো অবশ্য মৌলটি আবিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ কোন ভূমিকা পালন করে নি, কেবল একটি পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছিল। [[১৮৯৭]] সালের [[ডিসেম্বর ১৬]] তারিখ থেকে [[মেরি কুরি]] এবং [[পিয়েরে কুরি]] [[বেকেরেল রশ্মি]] তথা [[ইউরেনিয়াম]] রশ্মি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাদের গবেষণাকর্মের লগবই থেকে এটি জানা গেছে। গবেষণাটি অবশ্য মেরি কুরি নিজেই শুরু করেছিলেন, [[১৮৯৮]] সালের [[৫ ফেব্রুয়ারি]] পিয়েরে তার সাথে যোগ দেন। পিয়েরে মাপজোখের কাজ এবং ফলাফল গণনা করতেন। তারা দুজনে মিলে ইউরেনিয়াম খনিজ, লবণ এবং ধাতব ইউরেনিয়াম থেকে প্রাপ্ত তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিয়ে গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইউরেনিয়াম যৌগের তেজস্ক্রিয়তা ধর্ম সবচেয়ে কম। যৌগের চেয়ে ধাতব ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা বেশি বলে প্রতীয়মান হয়। ধাতবগুলোর মধ্যে আবার [[পিচব্লেন্ড]] নামক ইউরেনিয়াম আকরিকের তেজস্ক্রিয়তা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ থেকে তারা স্পষ্টতই বুঝতে পারেন, পিচব্লেন্ডে এমন একটি মৌল উপাদান আছে যার তেজস্ক্রিয়তা ইউরেনিয়ামের থেকে অনেক বেশি। এখান থেকেই সন্দেহের সূত্রপাত। [[১৮৯৮]] সালের ১২ এপ্রিল কুরি দম্পতি তাদের গবেষণা প্রকল্পটির বিবরণ [[প্যারিস আকাদেমি অফ সাইন্স|প্যারিস আকাদেমি অফ সাইন্সে]] পেশ করেন। ১৪ এপ্রিল [[জি বেমন্ট|জি বেমন্টের]] সাহায্য নিয়ে তারা নতুন এই মৌলটির সন্ধানে কাজে নেমে পড়েন।
 
কুরি দম্পতি ও [[জি বেমন্ট]] [[১৮৯৮]] সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে পিচব্লেন্ড আকরিকের বিশ্লেষণ সম্পন্ন করেন এবং আকরিক থেকে পাওয়া প্রতিটি পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ করতে থাকেন। [[বিসমাথ]] লবণে অবস্থিত একটি অংশটির উপর তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। কারণ এই অংশের তীব্রতা ইউরেনিয়াম থেকে ৪০০ গুণ বেশি। অজ্ঞাত মৌলটি থাকলে সেখানেই থেকে থাকবে। ঐ বছরের ১৮ জুলাই তারা আকাদেমিতের বিজ্ঞান সভায় "''পিচব্লেন্ডে অবস্থিত একটি নতুন তেজস্ক্রিয় পদার্থ সম্বন্ধে''" শীর্ষক একটি বিবৃতি পেশ করেন। তারা বলেছিলেন, পিচব্লেন্ড থেকে অজ্ঞাত এই নতুন মৌলটির সালফার যৌগ নিষ্কাশনে তারা সক্ষম হয়েছেন। ধর্ম অনুযায়ী নতুন মৌলটি ছিল বিসমাথের প্রতিবেশী। উল্লেখ্য এই বিবৃতিতেই প্রথবারের মত [[তেজস্ক্রিয়তা]] নামটি ব্যবহৃত হয়। এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে মৌল আবিষ্কার সম্ভব বলে সবাই খানিকটা আম্বস্ত হন। তেজস্ক্রিয়ামিতি প্রকৌশলের সাহায্যে তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ করে নতুন মৌলের বৈশিষ্ট্য বলে দেয়ার এই পদ্ধতিটি ছিল নতুন। এর আগে যে মৌলকে দেখা যায় না, অনুভব বা ওজন করা যায় না, প্রাকৃতিক বস্তুতে তার উপস্থিতি প্রমাণের জন্য বর্ণালি বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হত। এবার বর্ণালির স্থানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ যুক্ত হল।
৬১ নং লাইন:
কুরিদের দলের এই ফলাফল নির্ভুল ছিল না। তারা বলেছিলেন বিসমাথের সাথে নতুন এই মৌলের রাসায়নিক সাদৃশ্য রয়েছে যা সঠিক নয়। অবশ্য বিশুদ্ধ ধাতুটি নিষ্কাশন করতে পারেন নি বিধায় তাদের এ ধরনের ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। এমনকি তারা পোলোনিয়ামের পারমাণবিক ভর এবং বিসমাথের সাথে এর বর্ণালির পার্থক্যও নির্ণয় করতে পারেন নি। আসলে পোলোনিয়ামের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে টেলুরিয়ামের যা তারা ধরতে পারেননি। এ হিসেবে [[১৮৯৮]] সালের [[১৮ জুলাই]] তারিখটিকে পোলোনিয়ামের প্রাথমিক আবিষ্কারের দিন বলা যেতে পারে এর বেশি নয়, পূর্ণ আবিষ্কার সম্পন্ন করতে আরও অনেক সময় লেগেছিল। কারণ পোলোনিয়াম গবেষণার বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ অত্যধিক যাতে কেবল [[আলফা রশ্মি]] থাকে, [[বিটা রশ্মি|বিটা]] ও [[গামা রশ্মি|গামা]] থাকে না। সময়ের সাথে এর তেজস্ক্রিয়তা কমতে থাকাটা অবশ্য বেশ আশ্চর্যজনক। থোরিয়াম বা ইউরেনিয়ামের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায় না। এসব কারণে পোলোনিয়াম আসলেই আছে কি-না তানিয়ে অনেক বিজ্ঞানীই সন্দেহ পোষণ করতেন। তারা বলতেন, এটি হল সামান্য পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ মিশ্রিত সাধারণ [[বিসমাথ]]।
 
[[১৯০২]] সালে জার্মান রসায়নবিদ [[ডব্লিউ মার্কওয়াল্ড]] দুই টন ইউরেনিয়াম [[আকরিক]] থেকে বিসমাথের উল্লেখিত অংশটি নিষ্কাশন করেন। সেখানকার [[বিসমাথ ক্লোরাইড]] দ্রবণের মধ্যে একটি বিসমাথ দণ্ড প্রবেশ করান এবং দেখেন, অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় গুণ সম্পন্ন একটি পদার্থ এই দণ্ডের উপর অধঃক্ষিপ্ত হচ্ছে। এটিকে একটি নতুন মৌল ধরে তিনি এর নাম দেন ''রেডিওটেলুরিয়াম'' তথা তেজস্ক্রিয় [[টেলুরিয়াম]]। অবশ্য তিনি বলেছেন, তার মূল অভিপ্রায় ছিল পোলোনিয়াম নিষ্কাশন করা। এ সম্বন্ধে এক স্মৃতিচারণে তিনি উল্লেখ করেছেন,
{{cquote|
<i>সাময়িকভাবে কেবলমাত্র আমি এই মৌলটির নামকরণ করি রেডিওটেলুরিয়াম, কারণ ষষ্ঠ শ্রেণীতে তখনও ফাঁকা ঘরে এই মৌলটি রাখার জন্য, এর সমস্ত রাসায়নিক ধর্ম নির্দেশ করে। ঐ মৌলটির পারমাণবিক ভর বিসমাথের চেয়ে কিছু বেশি....। মৌলটি বিসমাথের চেয়ে বেশি [[তড়িৎ ঋণাত্মকতা|তড়িৎ ঋণাত্মক]]; কিন্তু টেলুরিয়ামের চেয়ে বেশি তড়িৎ ধনাত্মক; এর অক্সাইডটির অম্লীয় ধর্মের চেয়ে ক্ষারকীয় ধর্ম বেশি হওয়া উচিত। এগুলো সবই হল তেজস্ক্রিয় টেলুরিয়ামের বিষয়....। এই বস্তুটির প্রত্যাশিত পারমানিবক ভর ছিল ২১০।}}
নতুন রেডিওটেলুরিয়ামের পক্ষে যুক্তি দেখানোর জন্য মার্কওয়াল্ড তৎক্ষনাৎ পূর্বে আবিষ্কৃত পোলোনিয়ামকে একাধিক তেজস্ক্রিয় পদার্থের মিশ্রণ বলে ঘোষণা করেন। ফলে পোলোনিয়াম ও রেডিওটেলুরিয়াম নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। অধিকাংশ বিজ্ঞানীই অবশ্য কুরিদেরকে সমর্থন করেন। এ দুটোর মধ্য তুলনার মাধ্যমে প্রকৃত বিষয়টি উদ্‌ঘাটিত হলে পরে বিজ্ঞানীদের মত কুরিদের পক্ষেই যায়। পূর্বতন পোলোনিয়াম নামটিই থেকে যায়। এটি ছিল নতুন প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌলদের মধ্যে প্রথম। কিন্তু এটি তখন [[পর্যায় সারণী|পর্যায় সারণীর]] সঠিক ঘরে স্থান পায় নি। কারণ এর পারমাণবিক ভর নির্ণয় করা ছিল বেশ কঠিন। [[১৯১০]] সালে এর বর্ণালি রেখাগুলো সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়। এরপরই [[১৯১২]] সালে পোলোনিয়ামের প্রতীক তথা ''Po''-কে পর্যায় সারণীতে সঠিক স্থানে দেখা যায়।
 
তখনও কিন্তু বিশুদ্ধ পোলোনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন সম্ভব হয়নি। এর যৌগ অবস্থা নিয়েই বিজ্ঞানীরা সন্তুষ্ট ছিলেন। অনেক পরে [[১৯৪৬]] সালে বিশুদ্ধ ধাতুটি প্রস্তুত করা হয়। নির্বাত [[উর্ধ্বপাতন]] প্রক্রিয়ার দ্বারা উৎপাদিত সেই ধাতুর অধিক ঘনত্ববিশিষ্ট স্তরটির বর্ণ ছিল [[রুপা|রুপার]] মত সাদা। পরবর্তীতে পোলোনিয়ামের বৈশিষ্ট্যগুলো আবিষ্কৃত হওয়ার পর দেথা গেছে সেগুলো মেন্ডেলেয়েভের ভবিষ্যদ্বাণীর অনেকটাই কাছাকাছি। অর্থাৎ এ সম্পর্কে মেন্ডেলেয়েভের ভবিষ্যদ্বাণী অনেকটাই সত্য ছিল।
 
== রাসায়নিক ও ভৌত ধর্ম ==