== শিক্ষাজীবন ==
মক্তবে কাইয়ুম চৌধুরীর শিক্ষার হাতেখড়ি, তারপর ভর্তি হন [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] নর্মাল স্কুলে। এরপর কিছুকাল [[কুমিল্লা|কুমিল্লায়]] কাটিয়ে চলে যান [[নড়াইল|নড়াইলে]]। [[চিত্রা]] পাড়ের এই শহরে কাটে তার তিনটি বছর। সেখান থেকে [[সন্দ্বীপ]] এসে ভর্তি হন প্রথমে সন্দ্বীপ হাই স্কুল ও পরে কারগিল হাই স্কুলে। <ref name="Kaium Chowdury"/>
এরপর নোয়াখালী জেলা সদরে কিছুকাল কাটিয়ে পিতার সঙ্গে তার ঠাঁই বদল হয় [[ফেনী|ফেনীতে]]। ভর্তি হলেন ফেনী হাই স্কুলে, সেখান থেকে যান [[ফরিদপুর|ফরিদপুরে]]। [[ফরিদপুর]] থেকে [[ময়মনসিংহ]] এসে [[১৯৪৯]] সালে সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে যখন ম্যাট্রিক পাশ করেন। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক দেখা গিয়েছিল কাইয়ুম চৌধুরীর।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://bd.toonsmag.com/2014/12/4.html|শিরোনাম=রূপময় বাংলার মুগ্ধ চিত্রকর বন্ধু কাইয়ুম চৌধুরী|ওয়েবসাইট=টুনস ম্যাগ|সংগ্রহের-তারিখ=2019-09-14}}</ref> ১৯৪৯ সালে আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে কাইয়ুম চৌধুরী কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষা সমাপন করেন [[১৯৫৪]] সালে। তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন শিল্পাচার্য [[জয়নুল আবেদিন|জয়নুল আবেদিনকে]]। সদ্য-প্রতিষ্ঠিত আর্টস ইনস্টিটিউটের নবীন শিক্ষার্থীরা [[১৯৫২]] সালের [[ভাষা আন্দোলন|ভাষা আন্দোলনে]] বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ইমদাদ হোসেন, [[মুর্তজা বশীর]], [[আমিনুল ইসলাম]], দেবদাস চক্রবর্তী প্রমুখ ছিলেন প্রতিবাদী আয়োজনের নিরলস কর্মী এবং সকল মিছিলের পুরোভাগে। অন্তর্মুখী স্বভাবের কাইয়ুম চৌধুরীরও সম্পৃক্ত ছিলেন।<ref name="Kaium Chowdury"/> শিক্ষাজীবন প্রসঙ্গে পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে কাইয়ুম চৌধুরী বলেন: "আমি আমার শিল্পীজীবন যখন শুরু করি আমার সঙ্গে যাঁরা ছিলেন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, গায়ক এদের সবার মধ্যে একটা যোগযোগ ছিল। যেমন, আমার বন্ধুস্থানীয়দের মধ্যে আমার খুব ঘনিষ্টতম বন্ধু--যার সঙ্গে আমি একই সঙ্গে রাতও কাটিয়েছি, তিনি [[সৈয়দ শামসুল হক]]। তারপর [[শামসুর রাহমান]], [[আলাউদ্দিন আল আজাদ]], [[হাসান হাফিজুর রহমান]], [[বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর]]। আমরা এক সময় একই সঙ্গে কাজ করতাম। সেই সময় গায়কদের মধ্যে যেমন [[আবদুল আলীম]] সাহেবকে দেখেছি যে, কবি [[জসীম উদ্ দীন|জসীম উদ্ দীন]] তাঁকে গান শেখাচ্ছেন। জসীম উদ্ দীন সাহেব তাঁর ভাঙা গলায় সুর তুলে দিচ্ছেন আবদুল আলীমের গলায়, [[নীনা হামিদ|নীনা হামিদের]] গলায়, এগুলো তো আমাদের চোখের সামনে দেখা। মিউজিশিয়ানদের মধ্যে, আজকে যেমন [[সমর দাস]], আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু।"<ref>সাপ্তাহিক ২০০০, ২২ অক্টোবর ১৯৯৯, পৃ. ৪৭</ref>
== কর্মজীবন ==
[[১৯৫৫]] থেকে [[১৯৫৬]] সাল পর্যন্ত কাইয়ুম চৌধুরী নানা ধরনের ব্যবহারিক কাজ করেছেন, বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আর বইয়ের প্রচ্ছদ ও সচিত্রকরণের কাজ করেছেন । সিগনেটের বই কাইয়ুম চৌধুরীর জন্য ছিল এক অনুপম নির্দশন। সাময়িক পত্রিকা বিষয়ে আগ্রহী কাইয়ুম চৌধুরী, ছায়াছবি নামে একটি চলচ্চিত্র সাময়িকী যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছিলেন কিছুকাল। সুযোগমতো টুকটাক প্রচ্ছদ আঁকছিলেন এবং এই কাজের সূত্রেই পরিচয় [[সৈয়দ শামসুল হক|সৈয়দ শামসুল হকের]] সঙ্গে। ১৯৫৫ সালে তার দুই বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন, কিন্তু প্রকাশক অপারগ হওয়ায় সে-বই আর আলোর মুখ দেখে নি। প্রচ্ছদে একটি পালাবদল তিনি ঘটালেন ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত জহুরুল হকের সাত-সাঁতার গ্রন্থে। গ্রন্থের বক্তব্যের বা সারসত্যের প্রতিফলন ঘটালেন প্রচ্ছদে, একই সঙ্গে গ্রাফিক ডিজাইনে কুশলতা ও নতুন ভাবনার ছাপ মেলে ধরলেন। এমনি দক্ষতার যুগল মিলনে আঁকলেন [[ফজলে লোহানী]] রচিত 'কথাসরিৎসাগর-এর প্রচ্ছদ যা প্রকাশিত হয় নি। গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদের [[সচিত্র সন্ধানী]] পত্রিকার আত্মপ্রকাশ তার অঙ্কন, টাইপোগ্রাফিবোধ ও রসসিঞ্চিত তির্যক রচনা প্রকাশের মাধ্যমে হয়ে উঠেছিল অনবদ্য। ১৯৫৭ সালে কাইয়ুম চৌধুরী আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন।
== শিল্প ভাবনা ==
[[১৯৫৭]] সালে সতীর্থ [[আমিনুল ইসলাম]] ও [[সৈয়দ জাহাঙ্গীর]]কে নিয়ে কাইয়ুম চৌধুরী গিয়েছিলেন [[কলকাতা|কলকাতায়]]। ব্রিটিশ কাউন্সিলের তরুণ কর্মকর্তা জিওফ্রে হেডলির আহ্বানে এই সফর। কলকাতায় দেখা করেছিলেন [[সত্যজিৎ রায়]] ও [[খালেদ চৌধুরী]]র সঙ্গে। [[১৯৫৯]] সালে বন্ধুবর গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদের [[সন্ধানী প্রকাশনী]] যাত্রা শুরু করে [[জহির রায়হান|জহির রায়হানের]] 'শেষ বিকেলের মেয়ে' গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে। [[১৯৬১]] সালে [[মাওলা ব্রাদার্স]] সৃজনশীল প্রকাশনার অধ্যায় উন্মোচন শুরু করে [[আবদুশ শাকুর|আবদুশ শাকুরের]] 'ক্ষীয়মাণ' এবং [[সৈয়দ শামসুল হক|সৈয়দ শামসুল হকের]] কাব্যগ্রন্থ 'একদা এক রাজ্যে' প্রকাশ দ্বারা। এই দুই প্রকাশনা সংস্থার কাজের পেছনে বরাবরই কাইয়ুম চৌধুরী সক্রিয় থেকেছেন। তিনি আরও প্রচ্ছদ আঁকেন ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত [[শামসুর রাহমান|শামসুর রাহমানের]] প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে।
১৯৫৯ এবং ১৯৬১ সালে [[বাংলাদেশ রেলওয়ে|রেলওয়ে]]র টাইমটেবিলের প্রচ্ছদ এঁকে সেরা পুরস্কারটি লাভ করেন কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি [[১৯৬০]] সালে তাহেরা খানমের সঙ্গে পরিণয়-বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি ছিলেন আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়া প্রথম চারজন ছাত্রীর একজন। মনের সাযুজ্য তার শৈল্পিক প্রয়াসের জন্য অনুকূল ছিল এবং স্ত্রীর ভূমিকা প্রেরণাদায়ক ছিল। ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজাভার হাউজে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগদান করেন।অবজারভার পত্রিকার রবিবারের সাময়িকীতে ডিজাইন নিয়ে যেসব নিরীক্ষা করতেন তার শিক্ষক [[জয়নুল আবেদীন|জয়নুলের]] দৃষ্টি আকর্ষণ করে। <ref name="Kaium Chowdury">[http://gunijan.org.bd/GjProfDetails_action.php?GjProfId=57]</ref>
== শিল্পরীতি ==
|