বুধ গ্রহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
বানান সংশোধন
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১৩১ নং লাইন:
[[চিত্র:Mercury inside Lmb.png|thumb|left|200px|বুধের বৃহৎ কেন্দ্র]]
 
বুধের অভ্যন্তরীন গঠন বোঝার ক্ষেত্রে এর ঘনত্ব ভাল ভূমিকা রাখতে পারে। পৃথিবীর উচ্চ ঘনত্বের মূল কারণ হচ্ছে মহাকর্ষীয় সংকোচন যার পরিমাণ কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশী।বেশি। বুধ অনেক ছোট এবং এর কেন্দ্র পৃথিবীর মত অতটা দৃঢ় ও সংকুচিত নয়। তাহলে বুধের এত উচ্চ ঘনত্বের মূল কারণ হতে পারে, এর কেন্দ্র অনেক বড় এবং লৌহসমৃদ্ধ।<ref>Lyttleton, R. A.; ''On the Internal Structures of Mercury and Venus'', Astrophysics and Space Science, Vol. 5 (1969), p. 18</ref> আধুনিককালে ভূতত্ত্ববিদরা [[আবিষ্কার]] করেছেন যে বুধের সমগ্র আয়তনের ৪২% ই হচ্ছে এর কেন্দ্র। যেখানে পৃথিবীর কেন্দ্র মাত্র ১৭%।
 
কেন্দ্রের চারপাশে ৬০০ কিমি অঞ্চল জুড়ে রয়েছে [[ম্যানটেল]]। বুধের ইতিহাস ঘেটে যে তথ্য পাওয়া গেছে সে অনুসারে এখন সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, অনেক আগে বুধের সাথে কয়েক কিলোমিটার ব্যাসবিশিষ্ট একটি বস্তুর সংঘর্ষ ঘটেছিল। এই সংঘর্ষে বুধের ম্যানটেলের বেশ কিছু অংশ খসে পড়ে। এ কারণেই বর্তমানে কেন্দ্রের তুলনায় ম্যানটেলের পুরুত্ব এত কম।<ref name="Benz">Benz, W.; Slattery, W. L.; Cameron, A. G. W.; ''Collisional stripping of Mercury’s mantle'', Icarus, Vol. 74 (1988), pp. 516-528</ref> অবশ্য এ বিষয়ে অন্যান্য মতও রয়েছে। ধারণামতে বুধের [[ভূ-ত্বক|ভূ-ত্বকের]] পুরুত্ব ১০০ - ২০০ কিমি-এর মধ্যে। এর পৃষ্ঠতরের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে প্রচুর সরু ridge রয়েছে যার কয়েকটি প্রায় কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত প্রলম্বিত। বিশ্বাস করা হয় এগুলো বুধের কেন্দ্র এবং ম্যানটেল হিসেবে গঠিত হয়েছিলো, কিন্তু এগুলো শীতল ও সংকুচিত হওয়ার আগেই বুধের ভূ-ত্বক কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে এগুলো ridge হিসেবে রয়ে যায়।<ref>Schenk, P.; Melosh, H. J.; ''Lobate Thrust Scarps and the Thickness of Mercury’s Lithosphere'', Abstracts of the 25th Lunar and Planetary Science Conference (1994), 1994LPI....25.1203S</ref>
 
আমাদের সৌর জগতের অন্যান্য বৃহৎ গ্রহগুলোর যে কোনটির তুলনায় বুধে লৌহের পরিমাণ বেশী।বেশি। বুধে ধাতুর এই উচ্চ পরিমাণের কারণ ব্যাখ্যার জন্য বেশ কয়েকটি তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশীবেশি গৃহীত তত্ত্বটি হচ্ছে: বুধে ধাতু-সিলিকেটের অনুপাত সাধারণ [[কনড্রাইট]] উল্কায় এই অনুপাতের সমান ছিল এবং একসময় এর ভর বর্তমান ভরের ২.২৫ গুণ ছিল। সৌর জগতের ইতিহাস থেকে জানা যায় এক পর্যায়ে একটি বৃহৎ planetesimal বুধে আঘাত হানে যার ভর এর ছয় ভাগের এক ভাগ ছিল। এই সংঘর্ষের ফলে এর মূল ভূ-ত্বক ও ম্যানটেলের অনেকাংশ ক্ষয়ে যায়, কিন্তু অভ্যন্তরীন কেন্দ্রটি আগের মতই রয়ে যায়। ফলে কেন্দ্র এতো বড় এবং লৌহসমৃদ্ধ।<ref name="Benz" /> পৃথিবীর একমাত্র কৃত্রিম উপগ্রহ [[চন্দ্র|চন্দ্রের]] উৎপত্তি ব্যাখ্যার জন্যও অনুরুপ একটি তত্ত্ব প্রস্তাবিত হয়েছে। একে giant impact theory বলা হয়। অন্য একটি মতে বলা হয়, বুধ গ্রহ সূর্যের শক্তি উৎপাদনের পরিমাণ সুস্থিত হওয়ার পূর্বে [[সৌর নীহারিকা]] থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। সৃষ্টি আদিতে এর ভর সম্ভবত বর্তমান ভরের দ্বিগুণ ছিল। কিন্তু [[ভ্রূণতারা|ভ্রূণ সূর্য]] সংকুচিত হওয়ার কারণে বুধের নিকটে তাপমাত্রা ২৫০০ থেকে ৩৫০০ কেলভিনে পৌঁছায়। অনেকের মতে এই তাপমাত্রা ১০,০০০ কেলভিনেরও উপর হতে পারে। এই উচ্চ তাপমাত্রায় বুধ পৃষ্ঠের অনেক শিলা জাতীয় বস্তুই হয়তো বাষ্পীভূত হয়ে গিয়েছিল এবং একটি ''শিলা বাষ্প'' বিশিষ্ট বায়ুমণ্ডল সৃষ্টি করেছিল। [[সৌর বায়ু]] এই শিলা বাষ্প সরিয়ে নিয়ে যায়।<ref>Cameron, A. G. W.; ''The partial volatilization of Mercury'', Icarus, Vol. 64 (1985), pp. 285-294.</ref> তৃতীয় অন্য একটি তত্ত্বে প্রস্তাব করা হয়েছে, যে কণাগুলো থেকে বুধ গ্রহের [[বিবৃদ্ধি]] ঘটছিলো সেগুলোর উপর সৌর নীহারিকা এক ধরনের [[গতিরোধক]] (drag) আরোপ করেছিল। এতে হালকা বস্তুগুলো আর বিবৃদ্ধি সাধনে অংশ নিতে পারেনি।<ref>Weidenschilling, S. J.; ''Iron/silicate fractionation and the origin of Mercury'', Icarus, Vol. 35 (1987), pp. 99-111</ref> এই তত্ত্বগুলোর প্রত্যেকটি বুধ পৃষ্ঠের গঠন সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন মত দেয়। এই তত্ত্বগুলো পরীক্ষা করে দেখার জন্য বুধ অভিযানে একটি মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে: [[মেসেঞ্জার (নভোযান)|মেসেঞ্জার]]। এছাড়া ভবিষ্যতে আরেকটি যান পাঠানো হচ্ছে যার নাম [[বেপিকলম্বো]]।
 
== পৃষ্ঠতলের ভূ-তত্ত্ব ==
১৫১ নং লাইন:
সৃষ্টির পরপরই বুধ গ্রহে বিপুল পরিমাণ [[ধূমকেতু]] এবং [[গ্রহাণু]] আঘাত হানে। আঘাতের এই সময়টি [[লেট হেভি বম্বার্ডমেন্ট]] (late heavy bombardment) নামে পরিচিত। আজ থেকে প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে এই যুগের সমাপ্তি ঘটে। আঘাতের এই সময়টিতে বুধের সমগ্র ভূ-তল আক্রান্ত হয়। উপরন্তু এর কোন বায়ুমণ্ডল না থাকায় আঘাতের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। তখন গ্রহটি আগ্নেয়ভাবে সক্রিয় ছিল। বুধের অনেকগুলো অববাহিকা যেমন [[ক্যালরিস অববাহিকা]] তখন গ্রহের ভিতর থেকে বের হয়ে আসা [[ম্যাগমা]] দ্বারা পূর্ণ ছিল। এর ফলে গ্রহে সুষম তলের সৃষ্টি হয় যা অনেকটা [[চাঁদের সাগর|চাঁদের সাগরের]] মত।
 
বুধের খাদসমূহ কয়েক কিলোমিটার থেকে কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হয়। এখন পর্যন্ত জানা মতে সর্ববৃহৎ খাদের মধ্যে রয়েছে [[ক্যালরিস অববাহিকা]]গুলো (caloris basin)। এদের ব্যাস প্রায় ১৩০০ কিমি। তবে [[স্কিনাকাস অববাহিকা|স্কিনাকাস অববাহিকার]] ব্যাস আরও বেশীবেশি, প্রায় ১৬০০ কিমি। অবশ্য মেরিনারের মাধ্যমে এগুলোর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। পৃথিবী থেকে তোলা ছবির ভিত্তিতে এই পরিমাপ করা হয়েছে। যে সংঘর্ষের কারণে ক্যালরিস অববাহিকাগুলো সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলো এতটাই শক্তিশালী যে, এদের কারণে প্রচুর [[লাভা]] উদ্‌গীরণ ঘটে এবং প্রায় ২ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত একটি ঘনকেন্দ্রিক বলয়ের সৃষ্টি হয়। [[সংঘর্ষ খাদ|সংঘর্ষ খাদগুলোকে]] কেন্দ্র করে এই বলয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। ক্যালরিস অববাহিকার [[প্রতিপাদস্থান|প্রতিপাদস্থানসমূহে]] একটি বৃহৎ অঞ্চলের সৃষ্টি হয় যা স্বাভাবিকের চেয়ে আলাদা। এই পর্বতসমৃদ্ধ ভূমিখণ্ডটি এ কারণে "অলৌকিক ভূমিখণ্ড" নামে সুপরিচিত। এ ধরনের ভূমিরুপ সৃষ্টির কারণ হিসেবে একটি প্রকল্পে বলা হয়েছে, সংঘর্ষের সময় সৃষ্ট [[অভিঘাত তরঙ্গ]] সমগ্র গ্রহে ছড়িয়ে পড়ে এবং যখন তারা ক্যালরিস অববাহিকার প্রতিপাদস্থানসমূহে অভিমুখে মিলিত হয় (একে অন্যের সাথে ১৮০ ডিগ্রী কোণে, যেহেতু দুটি প্রতিপাদস্থান দুই বিপরীত বিন্দুতে থাকে), তখন এত উচ্চ চাপ প্রয়োগ করে যে গ্রহের পৃষ্ঠতলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।<ref>Schultz, P. H.; Gault, D. E.; ''Seismic effects from major basin formations on the moon and Mercury'', The Moon, Vol. 12 (February 1975), pp. 159-177</ref> অন্য একটি প্রকল্পে প্রস্তাব করা হয়েছে, ইজেক্‌টাগুলো এই অববাহিকার প্রতিপাদস্থানসমূহে মিলিত হওয়ার ফলে এ ধরনের ভূমিরুপ সৃষ্টি হয়েছে।
 
[[চিত্র:Mercury's 'Weird Terrain'.jpg|thumb|left|200px|নিজের প্রতিপাদস্থানমূহে সংঘর্ষজনিত প্রভাবের মাধ্যমে ক্যালরিস অববাহিকাগুলো একটি তথাকথিত ''অলৌকিক ভূমিখণ্ডের'' সৃষ্টি করেছে।]]
বুধ গ্রহের সমতল ভূমির দুইটি ভিন্ন ভিন্ন বয়স সীমা রয়েছে: অপেক্ষাকৃত কম বয়স্ক সমভূমিটিতে খাদের সংখ্যা কম। কারণ সম্ভবত এই ভূমি সৃষ্টি হয়েছে লাভা দ্বারা পূর্ববর্তী ভূমিখণ্ডগুলো আবৃত হয়ে যাওয়ার পর। সমতল ভূমিসমূহের একটি অস্বাভাবিক বিষয় হচ্ছে এদের মধ্যে আড়াআড়িভাবে বিপুল সংখ্যক সংকোচনজনিত ভাজ রয়েছে। ধারণা করা হয়, যখন গ্রহের অভ্যন্তরভাগ শীতল হচ্ছিল তখন তা সংকৃচিত হতে শুরু করে এবং এর ফলে এর পৃষ্ঠতল পুনরায় ভিন্নভাবে গঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে ভাজগুলোর সৃষ্টি হয়। এই ভাজগুলো উপর থেকে খাদ বা সমভূমির চেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এ থেকে বোঝা যায় ভাজগুলো অপেক্ষাকৃত নবীন।<ref>Dzurisin, D.; ''The tectonic and volcanic history of Mercury as inferred from studies of scarps, ridges, troughs, and other lineaments'', Journal of Geophysical Research, Vol. 83 (1978), pp. 4883-4906</ref> সূর্য দ্বারা উত্থিত জোয়ার-ভাটার কারণে সৃষ্ট বিস্ফোটের পরিণতি হিসেবে বুধ গ্রহের পৃষ্ঠতল বিভিন্ন বাঁক নেয়। চাঁদের প্রভাবে পৃথিবীতেও এ ধরনের বিস্ফোট ঘটে। তবে বুধের স্ফীতি পৃথিবীর চেয়ে ১৭% বেশী।বেশি।<ref>Van Hoolst, T.; Jacobs, C.; ''Mercury’s tides and interior structure'', Journal of Geophysical Research, Vol. 108 (2003), p. 7.</ref> চাঁদের মত বুধের পৃষ্ঠতল [[মহাশূন্য ওয়েদারিং]] প্রক্রিয়ার প্রভাবগুলো দ্বারা সম্পূর্ণভাবে আক্রান্ত হয়েছে। [[সৌর বায়ু]] এবং [[ক্ষুদ্র উল্কা]] দ্বারা বারংবার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় এর [[প্রতিফলন অনুপাত]] অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছে এবং পৃষ্ঠের প্রতিফলন ধর্ম হ্রাস পেয়েছে।
 
বুধ গ্রহের পৃষ্ঠতলের গড় তাপমাত্রা হচ্ছে ৪৫২ [[কেলভিন]] (৩৫৩.৯°ফারেনহাইট, ১৭৮.৯°সেলসিয়াস)। তবে এই মান স্থানভেদে ৯০ কেলভিন থেকে ৭০০ কেলভিনের মধ্যে উঠানামা করে। দেখা যাচ্ছে বুধ পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৬১০ কেলভিন পর্যন্ত উঠানামা করে যেখানে পৃথিবীতে পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৮০ কে পর্যন্ত উঠানামা করতে পারে। এর মূল কারণ বুধের কোন বায়ুমণ্ডল নেই। পৃথিবীর তুলনায় বুধ পৃষ্ঠে সূর্য রশ্মির তীব্রতা ৬.৫ গুণ বেশী।বেশি। তবে এই সমানুপাতিক সম্পর্কের মধ্যে একটি [[সৌর ধ্রুবক]] রয়েছে যার মান ৯.১৩ কিলোওয়াট/বর্গমি.।
 
[[চিত্র:Merc fig2sm.jpg|thumb|right|বুধ গ্রহের উত্তর মেরুর রাডার চিত্র]]
বুধ পৃষ্ঠের এত উচ্চ তাপমাত্রা দেখে মনে হতে পারে এতে বরফ থাকার কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও হলেও এটি সত্যি যে, বৃধ গ্রহে [[বরফ]] থাকতে পারে। [[মেরু]]র নিকটে অবস্থিত কিছু গভীর খাদের সমতলে সূর্য রশ্মি কখনও সরাসরি পৌঁছায় না। এতে সেখানকার তাপমাত্রা সবসময়ই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে। এতে বরফের সৃষ্টি হয়। পানি থেকে সৃষ্ট বরফ রাডারের সঙ্কেতগুলোকে তীব্রভাবে প্রতিফলিত করে। এ কারণে বুধে বরফের অস্তিত্ব [[রাডার]] সঙ্কেতের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যায়। বুধ গ্রহের মেরুর সন্নিকটে অবস্থিত বরফ খণ্ড পৃথিবী থেকে প্রেরিত রাডার সংকেতকে প্রতিফলিত করেছে।<ref>Slade, M. A.; Butler, B. J.; Muhleman, D. O.; ''Mercury radar imaging — Evidence for polar ice'', Science, Vol. 258 (1992), pp. 635-640.</ref> এই প্রতিফলনের কারণ বরফ ছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে এটি বরফ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।বেশি। বিশ্বাস করা হয় বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলগুলোতে আবরণের পুরুত্ব মাত্র কয়েক মিটার এবং এই আচ্ছাদনে ১০<sup>১৪</sup> – ১০<sup>১৫</sup> কেজির মত বরফ রয়েছে। পৃথিবীর ও মঙ্গলের সাথে এর তুলনা করা যেতে পারে। পৃথিবীর [[এন্টার্কটিকা|এন্টার্কটিকায়]] বরফের পরিমাণ ৪{{e|১৮}} কেজি এবং মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে বরফের পরিমাণ প্রায় ১০<sup>১৬</sup> কেজি। বুধ গ্রহে বরফের উৎপত্তির কারণ সম্বন্ধে নির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি, তবে দুইটি সম্ভাবনা সবচেয়ে প্রকট: প্রথমত, গ্রহের অভ্যন্তরভাগ থেকে পানির [[outgassing]] এবং দ্বিতীয়ত, [[ধূমকেতু]]র সাথে সংঘর্ষের ফলে জমা হওয়া বস্তু।<ref>Rawlins, K.; Moses, J. I.; Zahnle, K. J.; ''Exogenic Sources of Water for Mercury’s Polar Ice'', DPS, Vol. 27 (1995), p. 2112</ref>
 
== বায়ুমণ্ডল ==
১৭৫ নং লাইন:
|}
প্রধান গ্রহগুলোর মধ্যে বুধের কক্ষপথ সবচেয়ে [[উৎকেন্দ্রিকতা|উৎকেন্দ্রিক]]। সূর্য থেকে এর দূরত্ব ৪৬,০০০,০০০ থেকে ৭০,০০০,০০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে। নিজের কক্ষপথে চারদিকে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ৮৮ দিন।
বামে উল্লেখিত চিত্রটিতে বুধের কক্ষপথের উপর উৎকেন্দ্রিকতার প্রভাব দেখানো হয়েছে। এতে বুধের কক্ষপথ একটি বৃত্তাকার কক্ষপথের উপরে স্থাপন করা হয়েছে যার [[অর্ধ-মুখ্য অক্ষ]] বুধের সমান। দেখা যাচ্ছে প্রতি পাঁচ দিন অন্তর বুধ গ্রহ বিস্তর দূরত্ব অতিক্রম করে। এ থেকে বোঝা যায় গ্রহটি যখন অনুসূরের নিকটবর্তী হয় তখন এর বেগ সবচেয়ে বেশীবেশি থাকে।গোলকের আকৃতি সূর্য থেকে এর দূরত্বের ব্যাস্তানুপাতিক। সূর্য থেকে এর দূরত্বের তারতম্যের কারণ হিসেবে এটিকে উল্লেখ করা যায়। সূর্য থেকে দূরত্বের এই তারতম্যের সাথে গ্রহটির নিজ অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট '''স্পিন-কক্ষপথ রেজোন্যান্স''' একত্রিত হয়ে এর কক্ষপথে তাপমাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে।
 
বুধের কক্ষপথ পৃথিবীর সমতলের ([[ভূ-কক্ষ]]) সাথে ৭° কোণে আনত। বামের চিত্রে এটি দেখানো হয়েছে। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে অবস্থানকালীন সময়ে সূর্যের সম্মুখ বরাবর [[বুধ গ্রহের অতিক্রম]] কেবল তখনই ঘটতে পারে, যখন গ্রহটি ভূ-কক্ষের সমতলেকে অতিক্রম করে। গড়ে প্রতি ৭ বছরে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। বুধের [[এক্সিয়াল টিল্ট]] মাত্র ০.০১°, যা বৃহস্পতির চেয়ে ৩০০ গুণ কম। ৩.১ ডিগ্রীতে অবস্থিত সকল গ্রহের মধ্যে বুধের এক্সিয়াল টিল্টের মান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এর দ্বারা বোঝা যায়, বুধের বিষুব রেখার সন্নিকটে দণ্ডায়মান একজন পর্যবেক্ষক ভর দুপুড় বেলায় সূর্যকে [[জেনিথ|জেনিথের]] এক ডিগ্রীর ১০০ ভাগের এক ভাগ দক্ষিণ বা উত্তরেও দেখতে পাবে না। একইভাবে মেরু অঞ্চলে সূর্য দিগন্তের ০.০১° উপরে কখনও উদিত হয় না। বুধের কিছু নির্দিষ্ট বিন্দুতে, পর্যবেক্ষক দেখতে সমর্থ হবেন যে, সূর্য তার সম্পূর্ণ গতিপথের অর্ধেক পর্যন্ত এসে আবার উল্টো দিকে চলতে শুরু করেছে এবং এক পর্যায়ে পরবর্তী উদয়ের পূর্বেই অস্ত গিয়েছে। এই ঘটনাটি বুধ গ্রহের একই দিনে ঘটে। এটি ঘটার নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। অনুসূরের ঠিক চার দিন পূর্বে বুধ গ্রহের [[কৌণিক বেগ]] [[ঘূর্ণন বেগ|ঘূর্ণন বেগের]] ঠিক সমান হয়। এর ফলে সূর্যের আর কোন আপাত গতি থাকে না। অনুসূরের পর বুধের কৌণিক বেগ ঘূর্ণন বেগের চেয়ে বাড়তে থাকে। এতে মনে হয় সূর্য স্বাভাবিক গতির উল্টো দিকে চলছে। অনুসূরের চার দিন পর এই বিন্দুগুলোতে সূর্যের গতি আবার আগের মত হয়ে যায়।
১৯২ নং লাইন:
 
== পর্যবেক্ষণ ==
বুধ গ্রহের [[আপাত মান]] ২.০ ([[লুব্ধক]]-এর চেয়ে বেশীবেশি) থেকে ৫.৫ এর মধ্যে থাকে।<ref>Espenak, F.; [http://sunearth.gsfc.nasa.gov/eclipse/TYPE/mercury2.html#me2006 ''Twelve Year Planetary Ephemeris: 1995–2006''] {{ওয়েব আর্কাইভ|ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20080307153346/http://sunearth.gsfc.nasa.gov/eclipse/TYPE/mercury2.html#me2006 |তারিখ=৭ মার্চ ২০০৮ }}, NASA Reference Publication 1349</ref> সূর্যের অতি নিকঠে অবস্থিত বলে একে পর্যবেক্ষণ করা বেশ দুঃসাধ্য। কারণ সূর্যের অত্যুজ্জ্বল আলোর কারণে অনেকটা সময় বুধকে দেখাই যায় না। ভোর বা সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোতেই কেবল বুধকে দেখা যায়। [[হাবল স্পেস টেলিস্কোপ|হাবল মহাশূন্য দূরবীন]] বুধ গ্রহকে কখনই পর্যবেক্ষন করতে পারে না। নিরাপত্তার কারণেই হাবল দূরবীনকে সূর্যের নিকটে নেয়া হয় না।
 
পৃথিবী থেকে যেমন চাঁদের [[চন্দ্রকলা|কলা]] দেখা যায়, তেমনি বুধেরও কলা রয়েছে। [[অন্তঃসংযোগ|অন্তঃসংযোগে]] এটি একেবারে নতুন এবং [[বহিঃসংযোগ|বহিঃসংযোগে]] পূর্ণ থাকে। কিন্তু নবীন এবং পূর্ণ থাকা অবস্থায় বুধকে দেখা যায় না। কারণ এ সময় এই গ্রহটি সূর্যের সাথেই উদিত হয় এবং অস্ত যায়। কলার প্রথম এবং শেষ চতুর্থাংশ পূর্ব ও পশ্চিম দিকে সর্বোচ্চ [[দ্রাঘন|দ্রাঘনে]] (elongation) ঘটে থাকে। বুধ থেকে সূর্যের দূরত্ব যখন [[অনুসূর]] থেকে ১৮.৫° দূরে থাকে তখন কলার প্রথম চতুর্থাংশে সর্বোচ্চ দ্রাঘন ঘটে। আর শেষ চতুর্থাংশের ক্ষেত্রে এটি ঘটে [[অপসূর]] বিন্দু থেকে ২৮.৩° দূরত্বে। পশ্চিম দিকে যখন সর্বোচ্চ দ্রাঘন ঘটে তখন বুধ সূর্য থেকে সবচেয়ে আগে উদিত হয়। আর পূর্বে সর্বোচ্চ দ্রাঘনের ক্ষেত্রে এটি সূর্য অস্ত যাবার সবচেয়ে পরে অস্ত যায়।
১৯৯ নং লাইন:
প্রতি ১১৬ দিনে বুধ গ্রহে অন্তঃসংযোগ ঘটে। অবশ্য গ্রহটির উৎকেন্দ্রিক কক্ষপথের কারণে এই সময় ১১১ থেকে ১২১ দিন পর্যন্ত যে কোন দিন হতে পারে। অন্তঃসংযোগের প্রতি পার্শ্বে এর [[প্রতীপ গতি]] ৮ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে উঠানামা করতে পারে। এই পর্যবেক্ষণটি অবশ্যই পৃথিবীর সাপেক্ষে হতে হবে। এই উচ্চ পার্থক্যের কারণও গ্রহটির উৎকেন্দ্রিক কক্ষপথ। পৃথিবীর [[উত্তর গোলার্ধ|উত্তর গোলার্ধের]] তুলনায় [[দক্ষিণ গোলার্ধ|দক্ষিণ গোলার্ধে]] বুধ গ্রহকে ভালভাবে দেখা যায়। কারণ সূর্যের পশ্চিম দিকে বুধের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দ্রাঘন তখনই ঘটে যখন দক্ষিণ গোলার্ধে early autumn থাকে। আবার পূর্বদিকে সর্বোচ্চ দ্রাঘনের সময় দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে late winter ঋতু। এই উভয় ক্ষেত্রেই বুধ ভূ-কক্ষের সাথে সর্বোচ্চ মানের কোণ উৎপন্ন করে এবং এর ফলে প্রতিক্ষেত্রে সূর্য উদিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পূর্বে বুধ পৃথিবীর আকাশে উদিত হয় এবং সূর্য অস্ত যাবার কয়েক ঘণ্টা পর বুধ অস্ত যায়। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ গোলার্ধের যে দেশগুলো দক্ষিণ তাপমাত্রা অঞ্চলের অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত সে দেশগুলো থেকে বুধ গ্রহকে স্পষ্ট দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে [[আর্জেন্টিনা]] এবং [[নিউজিল্যান্ড|নিউজিল্যান্ডের]] মত দেশগুলো। কিন্তু উত্তর তাপমাত্রা অঞ্চলের অক্ষরেখা বিশিষ্ট স্থানসমূহে রাতের আকাশে বুধ কখনই দিগন্তের উপরে উঠে না। একটি পূর্ণ [[সূর্যগ্রহণ|সূর্যগ্রহণের]] সময় অন্যান্য কয়েকটি গ্রহ এবং উজ্জ্বল তারার মত বুধ গ্রহকেও স্পষ্ট দেখা যায়।
 
বুধ যখন [[গিবাস কলা|গিবাস কলায়]] অবস্থান করে তখন পৃথিবীর সাপেক্ষে এর উজ্জ্বলতা সবচেয়ে বেশীবেশি হয়। অন্য কোন কলায় এই উজ্জ্বলতা পাওয়া যায় না। বুধ যখন অর্ধ-চন্দ্র আকৃতির থাকে তখন পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব গিবাস কলায় দূরত্বের চেয়ে কম হয়। কিন্তু এই অধিক দূরত্ব থেকেই বুধের সবচেয়ে বেশীবেশি অঞ্চল আলোকিত দেখা যায়। শুক্র গ্রহের ক্ষেত্রে ঠিক এর বিপরীতটি সত্য। শুক্র গ্রহকে যখন পৃথিবী থেকে অর্ধচন্দ্র আকৃতির দেখায় তখনই এর উজ্জ্বলতা সবচেয়ে বেশীবেশি হয়। কারণ গিবাস কলার তুলনায় এই কলাতেই শুক্র পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটে আসে।
 
== গবেষণা ==