বাংলাদেশের ইতিহাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Shahadathossen (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১৫ নং লাইন:
বাংলাদেশে সংগঠিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজগুলি ভারতীয় উপমহাদেশের NBPW যুগের (৭০০-২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) নিদর্শন প্রকাশ করে। [[ভারতীয় উপমহাদেশ|ভারতীয় উপমহাদেশে]] লৌহ যুগের সংস্কৃতি প্রায় ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয় এবং ৫০০-৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। উত্তর ভারতের ১৬টি মহা রাজ্য বা মহাজনপদের উত্থান এবং [[মৌর্য সাম্রাজ্য|মৌর্য সাম্রাজ্যের]] পরবর্তী উত্থানের মধ্যবর্তী সময়ে এই যুগ বিরাজমান ছিল।<ref name=shaffer>Shaffer, Jim. 1993, "Reurbanization: The eastern Punjab and beyond." In ''Urban Form and Meaning in South Asia: The Shaping of Cities from Prehistoric to Precolonial Times'', ed. [https://en.wikipedia.org/wiki/Howard_Spodek Howard Spodek] and D.M. Srinivasan.</ref> প্রাচীণ ভারতের পূর্বাঞ্চল, বর্তমান সময়ের বাংলাদেশ বা প্রাচীণ [[বঙ্গ (প্রাচীন রাজ্য)|বঙ্গ রাজ্য]] এই মহাজনপদগুলির অংশ ছিল, যা ষষ্ঠ শতকে সমৃদ্ধ হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।<ref name=singh>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Singh|প্রথমাংশ=Upinder|শিরোনাম=A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=H3lUIIYxWkEC&pg=PA260&dq=Great+States+Upinder+singh&hl=en&ei=tu6ITPDYMoG6vQO9uannCg&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=1&ved=0CC4Q6AEwAA#v=onepage&q&f=false|বছর=2008|প্রকাশক=Pearson Education|অবস্থান=Delhi|আইএসবিএন=978-81-317-1120-0|পাতাসমূহ=260–4}}</ref>
 
ভাষাগতভাবে, এই ভূখণ্ডের প্রাচীনতম জনগোষ্ঠী হয়তো [[দ্রাবিড় ভাষাসমূহ|দ্রাবিড় ভাষায়]] কথা বলত যেমন কুরুক্স, বা সম্ভবত [[অস্ট্রো-এশীয় ভাষাসমূহ|অস্ট্রো-এশীয় ভাষায়]] কথা বলত যেমন সাঁওতাল। পরবর্তীকালে, তিব্বতী-বার্মানের মতো অন্যান্য ভাষা পরিবারের লোকেরা বাংলায় বসতি স্থাপন করে। সপ্তম খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল [[মগধ|মগধের]] অংশ হিসেবে ইন্দো-আর্য সভ্যতার অংশ হয়ে উঠেছিল। নন্দ রাজবংশ হচ্ছে প্রথম ঐতিহাসিক রাষ্ট্র যা ইন্দো-অার্যআর্য শাসনের অধীনে বাংলাদেশকে একত্রিত করেছিল। পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্মের উত্থানের পর অনেক পুরোহিত ধর্ম বিস্তারের জন্য এখানে বসতি স্থাপন করেছিল এবং [[মহাস্থানগড়|মহাস্থানগড়ের]] মতো অনেক স্তম্ভ স্থাপন করেছিল।
 
===বিদেশী উপনিবেশকরণ===
 
বাঙ্গালী জাতি প্রাচীন ভারতের একটি পরাক্রমশালী সমুদ্র অভিযাত্রী জাতি ছিল। শুধু বাঙ্গালী জাতিই নয়, প্রাচীনকালে ভারতের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জাতি, যেমন বাঙ্গালী, [[কলিঙ্গ|কলিঙ্গী]], [[তামিল জাতি|তামিল]] প্রভৃতি জাতি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় নানা উপনিবেশ গড়ে তুলতেন। তারা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এরকম একটি বিরাট সভ্যতাও গড়ে তুলেছিলেন। এটি শ্রীবিজয়া সভ্যতা নামে পরিচিত। [[ভিয়েতনাম|ভিয়েতনামের]] ইতিহাসে উল্লেখ অাছেআছে ভারতবর্ষের বন-লাং (বাংলা) নামক দেশ থেকে [[লাক লোং]] (লক্ষণ?) নামক এক ব্যক্তি ভিয়েতনামে গিয়ে "বন-লাং" নামে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এই বন-লাং যে ভারতবর্ষের বাংলা সে ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এই বাঙালীদের রাজ্য খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Bandyopadhyay |প্রথমাংশ=Rakhaldas |লেখক-সংযোগ=রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় | তারিখ=1914 |শিরোনাম=History of Bengal, Part-1 |ইউআরএল=https://archive.org/details/Banglar-Itihas-Part1-Rakhaldas-Bandyopadhyay | প্রকাশক=Manomohan Projashoni | পাতা=20}}</ref> অপরদিকে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে উল্লেখ অাছেআছে [[বঙ্গ (প্রাচীন রাজ্য)|বঙ্গ দেশ]] থেকে অাগতআগত [[বিজয় সিংহ]] নামে এক ব্যক্তি স্থানীয় দ্রাবিড় রাজাদের পতন ঘটিয়ে সিংহল (সিংহ বংশীয়) নামে একটি নতুন রাজ্যের পত্তন করেন। বিজয় সিংহকে সিংহলী জাতির পিতা হিসেবে পরিগণিত করা হয়। বিজয় সিংহকে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় একটি মহাকাব্যও রয়েছে যা "মহাবংশ" নামে পরিচিত।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Bandyopadhyay |প্রথমাংশ=Rakhaldas |লেখক-সংযোগ=রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় | তারিখ=1914 |শিরোনাম=History of Bengal, Part-1 |ইউআরএল=https://archive.org/details/Banglar-Itihas-Part1-Rakhaldas-Bandyopadhyay | প্রকাশক=Manomohan Projashoni | পাতা=19}}</ref>
 
===নন্দ সাম্রাজ্য===
{{মূল নিবন্ধ|নন্দ সাম্রাজ্য}}
 
[[নন্দ সাম্রাজ্য]] ছিল বাংলার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় যুগ। এই যুগে বাংলার শক্তিমত্তা ও প্রাচুর্য শীর্ষে অারোহনআরোহন করে। এই যুগে বাংলা সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। নন্দ রাজাদের জন্ম হয়েছিল বাংলায়। তারা বাংলা থেকে [[মগধ]] (বিহার) দখল করে এবং উভয় রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গ-মগধ নামে একটি নতুন সাম্রাজ্যের পত্তন করে। প্রাচীণ গ্রীক ইতিহাসে বাংলাকে [[গঙ্গাঋদ্ধি|গঙ্গারিডাই]] এবং মগধকে প্রাসি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রীক ইতিহাসে এই সংযুক্ত রাজ্যকে গঙ্গারিডাই ও প্রাসি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নন্দ রাজাগণ ছিলেন [[জৈন ধর্ম|জৈন ধর্মের]] অনুসারী। এবং তারা ছিলেন জৈন ধর্মের অাজীবিকআজীবিক শাখার অনুসারী।
 
[[মহাপদ্ম নন্দ]] ছিলেন নন্দ বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। তিনি সমগ্র ভারতবর্ষ ব্যাপী ব্যাপক সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি কোশল ([[উত্তরপ্রদেশ|উত্তর প্রদেশ]]), কুরু ([[পাঞ্জাব, ভারত|পূর্ব পাঞ্জাব]]), মৎস্য ([[রাজস্থান|রাজপুতানা]]), চেদী (মধ্য প্রদেশ ও বিহারের মধ্যস্থিত জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চল),অবন্তী (মধ্য প্রদেশ) প্রভৃতি অঞ্চল জয় করেন। দিগ্বিজয়ার্থে মহাপদ্ম এক বিশাল সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করেন। তৎকালীন ইতিহাস অনুসারে মহাপদ্মের অধীনে ২,০০,০০০ পদাতিক, ২০,০০০ অশ্বারোহী, ৪,০০০ যুদ্ধরথ ও ২,০০০ হস্তীবাহিনী ছিল। মতান্তরে তার নিকট ২,০০,০০০ পদাতিক, ৮০,০০০ অশ্বারোহী, ৮,০০০ যুদ্ধরথ ও ৬,০০০ হস্তীবাহিনী ছিল।
 
"কথাসরিৎ সাগর" থেকে জানা যায় তিনি [[দক্ষিণ ভারত|দক্ষিণ ভারতেরও]] বিরাট অংশ জয় করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ ভারতের কলিঙ্গ ও অশ্মক এ রাজ্য দুটো জয় করেছিলেন। অশ্মক হচ্ছে [[মহারাষ্ট্র|মহারাষ্ট্রের]] পূর্ব অংশে একটি প্রাচীণ রাজ্যের নাম। এটি দক্ষিণ ভারতে অার্যদেরআর্যদের একটি বিখ্যাত উপনিবেশ ছিল। কলিঙ্গ হচ্ছে [[উড়িষ্যা|উড়িষ্যার]] প্রাচীণ নাম। কলিঙ্গের হস্তিগুম্ফা শিলালিপি থেকে জানা যায় মহাপদ্ম কলিঙ্গে জল সেচের জন্য একটি বিরাট জল প্রণালী নির্মাণ করেছিলেন। তিনি কলিঙ্গ থেকে একটি জৈন [[তীর্থঙ্কর|তীর্থঙ্করের]] মূর্তিও রাজধানীতে নিয়ে যান। মহাপদ্ম ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথমবারের মত একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হন। সমগ্র ভারতবর্ষ জয় করে তিনি একরাট উপাধি গ্রহণ করেন। পরে তাকে অনুসরণ করে পশ্চিম ভারতের রাজারা বিরাট ও দক্ষিণ ভারতের রাজারা সম্রাট উপাধি গ্রহণ করে।
 
মহাপদ্ম নন্দের পর ক্ষমতায় অাসীনআসীন হন তার পুত্র [[ধননন্দ|উগ্রনন্দ]]। উগ্রনন্দের সময় রাজ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেখা দেয়। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ৯৯০ মিলিয়ন স্বর্ণখণ্ডের অধিকারী ছিলেন। উগ্রনন্দের সময়ে পাটালিপুত্রে পাঁচটি ধর্মস্তূপ নির্মিত হয়েছিল। প্রাচীণ ভারতের বিভিন্ন ইতিহাসে উগ্রনন্দকে অর্থপিপাসু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাকে ধননন্দ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে উগ্রনন্দ এবং তার পিতা মহাপদ্ম বিপুল পরিমাণ রাজ্য দখল করেছিলেন এবং তারা উক্ত রাজ্যের পরাজিত রাজন্যবর্গের ওপর কর অারোপআরোপ করেছিলেন। কাজেই এইসব অভিযোগ উক্ত পরাজিত রাজন্যবর্গের বিষোদ্গার হতে পারে।
 
উগ্রনন্দের সময় গ্রীক সম্রাট [[মহান আলেকজান্ডার|অালেকজাণ্ডারআলেকজাণ্ডার]] ভারতবর্ষ অাক্রমণআক্রমণ করেন। কিন্তু উগ্রনন্দ একটি বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে অালেকজাণ্ডারেরআলেকজাণ্ডারের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হন। [[প্লুটার্ক]] বলেছেন, [[রাজা পুরুষোত্তম|পোরাসের]] সাথে যুদ্ধের পর [[মেসিডেনীয় সভ্যতা|মেসিডোনিয়ার]] সৈন্যরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, এবং ভারতবর্ষের অভ্যন্তরে অারওআরও প্রবেশের জন্য অনিচ্ছুক হয়ে পড়ে। তারা জানতে পারে গঙ্গা নদী যা ২৩০ স্টেডিয়া বিস্তৃত ছিল এবং ১০০০ ফুট গভীর ছিল, তার পাশের সমস্ত তীর সমস্ত তীর সশস্ত্র যোদ্ধা, ঘোড়া এবং হাতি দ্বারা সম্পূর্ণভাবে আবৃত ছিল। গঙ্গারিডাই ও প্রাসি এর রাজা তার (আলেকজান্ডার) জন্য ২,০০,০০০ পদাতিক, ৮০,০০০ অশ্বারোহী বাহিনী, ৮,০০০ যুদ্ধরথ ও ৬,০০০ হস্তিবাহিনী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।<ref>{{citation |last=Majumdar |first=R.C. |title=The Classical Accounts of India |date=1960 |publisher=FIRMA K.L.M |p=198 |url=http://www.worldcat.org/title/classical-accounts-of-india/oclc/467176 }}</ref>
 
==প্রাথমিক মধ্যযুগ==
৩৯ নং লাইন:
{{মূল নিবন্ধ|গৌড়}}
 
ষষ্ঠ শতকের মধ্যে উত্তর ভারত শাসনকারী বিশাল [[গুপ্ত সাম্রাজ্য]] বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এগুলোর মধ্যে মগধ (বিহার) ও মালব (মধ্য প্রদেশ) এ রাজ্য দুটি গুপ্ত বংশের দুটি শাখা দ্বারা শাসিত ছিল। অপর দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ছিল উত্তর প্রদেশের মৌখরী রাজ্য এবং পাঞ্জাবের পুষ্যভূতি রাজ্য। [[শশাঙ্ক]] ছিলেন মগধের গুপ্ত সম্রাট মহাসেন গুপ্তের একজন সীমান্তবর্তী মহাসামন্ত। মহাসেন গুপ্তের পর তিনি বাংলার ক্ষমতা দখল করেন এবং গৌড়ের কর্ণসূবর্ণে তার রাজধানী স্থাপন করেন। শশাঙ্ক ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে উড়িষ্যা অাক্রমণআক্রমণ করেন এবং সেখানকার শৈলোদ্ভব বংশীয় রাজাকে পরাজিত করে উড়িষ্যা দখল করেন । এ সময় উত্তর ভারত দখলের জন্য বিভিন্ন সাম্রাজ্যের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা শুরু হয়। মালবের রাজা দেবগুপ্ত মৌখরী রাজা গ্রহবর্মণকে পরাজিত করে কনৌজ দখল করেন। কিন্তু একই সময় পুষ্যভূতির রাজা রাজ্যবর্ধন দেবগুপ্তকে অাক্রমণআক্রমণ করে তাকে পরাজিত করেন। এ সময় শশাঙ্ক কনৌজ অাক্রমণআক্রমণ করেন। তিনি কনৌজের অধিকারী রাজ্যবর্ধনকে পরাজিত ও নিহত করে ক্ষমতা দখল করেন। রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তার ভাই ও উত্তরাধিকারী [[হর্ষবর্ধন]] এক বিপুল বাহিনী গঠন করেন। শশাঙ্ক হর্ষবর্ধনের সাথে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করেন। কিন্তু হর্ষবর্ধন ছিলেন অত্যধিক শক্তিশালী যোদ্ধা। ছয় বৎসর ধরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করার পর শশাঙ্ক শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন। হর্ষবর্ধন বাংলার রাজধানী গৌড় দখল করে নেন। এভাবে বাংলার ক্ষণস্থায়ী গৌড় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
 
===পাল রাজবংশ===
৪৬ নং লাইন:
[[পাল সাম্রাজ্য|পাল সাম্রাজ্যের]] যুগ ছিল বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল যুগ। এ সময় বাংলার ইতিহাসে আবার দিগ্বিজয়ের সূচনা হয়। পাল রাজাগণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন উত্তরবঙ্গের [[বরেন্দ্র]] অঞ্চলে। একারণে পাল শিলালিপিতে বরেন্দ্রকে জনকভূ বা রাজ্যাম পিত্রাম বলা হয়েছে। পাল সাম্রাজ্যের রাজাগণ ছিলেন [[বৌদ্ধ ধর্ম|বৌদ্ধ ধর্মের]] অনুসারী। পাল রাজাগণ ছিলেন প্রথমত বৌদ্ধধর্মের [[মহাযান]] ও পরবর্তীতে [[তন্ত্র|তান্ত্রিক শাখার]] অনুসারী। পাল বংশীয় রাজাগণ উত্তর ভারতের রাজনৈতিক কেন্দ্রভূমি [[কনৌজ]] দখলের জন্য রাজপুতানার [[গুর্জর]] এবং দক্ষিণ ভারতের [[রাষ্ট্রকূট রাজবংশ|রাষ্ট্রকূটদের]] সাথে এক প্রচণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হন। এই ভয়ঙ্কর ও [[ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ]] পরবর্তী দুই শত বৎসর অব্যাহত থাকে।
 
পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা [[প্রথম গোপাল|গোপাল]]। তিনি ৭৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৭৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা দেশ শাসন করেন। গোপালের অাগমনেরআগমনের পূর্বে বাংলাদেশ পাচটি খণ্ডে বিভক্ত ছিল যথা- [[অঙ্গ]], [[বঙ্গ (প্রাচীন রাজ্য)|বঙ্গ]], [[গৌড়]], [[সুহ্ম]] ও [[সমতট]]। গোপাল এই সমস্ত খণ্ডকে ঐক্যবদ্ধ করেন ও বাংলাদেশে শান্তি শৃঙ্খলা অানয়নআনয়ন করেন।<ref name="Nitish2011">{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Sengupta |প্রথমাংশ=Nitish K. |তারিখ=2011 | শিরোনাম=Land of Two Rivers: A History of Bengal from the Mahabharata to Mujib | ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=kVSh_TyJ0YoC&pg=PA40 | প্রকাশক=Penguin Books India | পাতা=40 | আইএসবিএন=978-0-14-341678-4}}</ref> গোপাল বিহার, উড়িষ্যা ও কামরূপও দখল করেন। এরপর গোপাল উত্তর ভারতের রাজধানী [[কনৌজ]] অক্রমণ করেন। তিনি কনৌজের অায়ুধআয়ুধ বংশীয় রাজা বজ্রায়ুধকে পরাজিত করে কনৌজ দখল করেন।
কিন্তু গুর্জর রাজা বৎসরাজের নিকট তিনি পরাজিত হন। বৎসরাজ পরবর্তীতে [[রাষ্ট্রকূট রাজবংশ|রাষ্ট্রকূট]] রাজা ধ্রুব ধারাবর্ষের নিকট পরাজিত হন। ফলে গোপাল তার সাম্রাজ্য রক্ষা করতে সক্ষম হন।
 
গোপালের পুত্র [[ধর্মপাল]] (৭৯০-৮১০) ছিলেন একজন সুদক্ষ ও পরাক্রমশালী সম্রাট। তিনি উত্তর ভারতে অাক্রমণআক্রমণ করেন এবং [[গুর্জর]] রাজা নাগভট্টকে পরাজিত করে কনৌজ দখল করেন। তিনি সমগ্র উত্তর ভারতব্যাপী বিশাল সামরিক অভিযান প্রেরণ করেছিলেন। খালিমপুর তাম্রশাসন থেকে জানা যায় তিনি মদ্র ([[পাঞ্জাব]]), গান্ধার ([[খাইবার গিরিপথ|খাইবার প্রদেশ]]), মৎস্য ([[রাজস্থান|রাজপুতানা), যদু([[গুজরাট]]), অবন্তী ([[মধ্যপ্রদেশ|মধ্য প্রদেশ]]) প্রভৃতি অঞ্চল বিজয় করেছিলেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=George E. Somers | তারিখ=1977 | শিরোনাম=Dynastic History of Magadha | ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=gYO25eaDrqUC&pg=PA185 | প্রকাশক=Abhinav Publications | পাতাসমূহ=185 | আইএসবিএন=978-81-7017-059-4}}</ref> কিন্তু এ অঞ্চলগুলো তিনি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেন নি। ধর্মপাল সেনাপতি লাউসেনের নেতৃত্বে [[রাষ্ট্রকূট রাজবংশ|রাষ্ট্রকূট]] রাজাকে পরাজিত করে উড়িষ্যা পুনর্দখল করতে সক্ষম হন। এই ঘটনাটি তৎকালীন বিখ্যাত মহাকাব্য [[ধর্ম মঙ্গল|ধর্ম মঙ্গলে]] উল্লেখ অাছে।আছে।
 
ধর্মপালের সুযোগ্য পুত্র [[দেবপাল]] (৮১০-৮৫০) পুনরায় সমগ্র ভারতব্যাপী তার অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতে কম্বোজ (কাশ্মীর) পর্যন্ত তার সমরাভিযান পরিচালনা করেন। দেবপাল গুর্জর রাজা রামভদ্রকে পরাজিত করে তাকে করদ রাজ্যে পরিণত করেন। বিন্ধ্যা পার্বত্য অঞ্চল বিজয় করে তিনি মালব ও গুজরাট দখল করেন।<ref name="Sailendra1999">{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Sailendra Nath Sen | তারিখ=1999 | শিরোনাম=Ancient Indian History and Civilization | ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=Wk4_ICH_g1EC&pg=PA278 | প্রকাশক=New Age International | পাতাসমূহ=277–287 | আইএসবিএন=978-81-224-1198-0}}</ref> কিন্তু এ অঞ্চলগুলো পরবর্তীতে তিনি মিহির ভোজ|মিহির ভোজের কাছে হারিয়ে ফেলেন। দেবপালের দাক্ষিণাত্য অভিযান সফল হয়েছিল। তার নির্দেশে ভ্রাতা জয়পাল [[রাষ্ট্রকূট রাজবংশ|রাষ্ট্রকূট]] রাজা অমোঘবর্ষকে পরাজিত করে উড়িষ্যা পুনর্দখল করেন। এরপর উড়িষ্যা চিরস্থায়ীভাবে পাল সাম্রাজ্যের শাসনাধীনে ছিল।
 
পাল সম্রাটগণ বহু বৌদ্ধবিহার ও ধর্মীয় পীঠস্থান নির্মাণ করেছিলেন। বিক্রমশীল, ওদন্তপুরী ও জগদ্দল প্রভৃতি বৃহদায়তন মহাবিহার পাল স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। পাল সম্রাটগণ প্রথমত "[[মহাযান]]" বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। পরবর্তীতে পালগণ হিন্দুদের বৌদ্ধধর্মে অাকৃষ্টআকৃষ্ট করার জন্য [[তন্ত্র|তান্ত্রিক]] বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তন করেন। বহু হিন্দু দেবদেবীকে এই ধর্মে স্থান দেওয়া হয়। পাল সম্রাটগণ [[সংস্কৃত]] বা [[পালি]] ভাষার পরিবর্তে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। পাল রাজাদের সময়ই বাংলা সাহিত্যের প্রাচীণতম নিদর্শন [[চর্যাপদ|চর্যাপদসমূহ]] রচিত হয়। তাই পাল রাজবংশকে অনেক সময় বাংলা সাহিত্যের জনক মনে করা হয়।
 
===সেন রাজবংশ===
{{মূল নিবন্ধ|সেন রাজবংশ}}
 
[[সেন রাজবংশ|সেন রাজবংশের]] প্রতিষ্ঠাতা বিজয়সেন প্রাথমিক জীবনে পাল রাজাদের অধীনে দক্ষিণবঙ্গের এক সামন্তপ্রভু ছিলেন। পরে তিনি নিজ বাহুবলে সাম্রাজ্য বিস্তার করে পূর্ববঙ্গের [[বর্মণ রাজবংশ|বর্মণ রাজাদের]] পরাজিত করেন। তিনি উত্তরবঙ্গের এক যুদ্ধে পাল সম্রাট মদনপালকে পরাজিত করে রাজধানী [[গৌড়]] দখল করেন। তিনি ত্রিহুত (উত্তর বিহার) ও কামরূপও (পশ্চিম অাসামআসাম) জয় করে নেন। তবে তিনি দক্ষিণ বিহার জয় করতে ব্যর্থ হন। পাল রাজাগণ এখানে গাহড়বাল সাম্রাজ্যের সহায়তায় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। বিজয়সেন [[শৈব ধর্ম|শৈব ধর্মের]] ধর্মের অনুসারী ছিলেন। তার সময় কনৌজ, অযোধ্যা ও হরিদ্বার থেকে যেসমস্ত কায়স্থ এদেশে অাসেনআসেন তারাই মূলত বাঙালী কায়স্থদের অাদিপুরুষ।আদিপুরুষ।
 
[[বল্লাল সেন]] বিজয়সেনের পর বাংলার সিংহাসনে অাসীনআসীন হন। বল্লাল সেন তার রাজ্যের প্রায় ১,০০০ [[ব্রাহ্মণ|ব্রাহ্মণকে]] চিহ্নিত করেন। এদেরকে রাজ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে সংবদ্ধ করা হয় এবং এদের উচ্চ পদ মর্যাদা প্রদান করা হয়। এই মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ রাজ্যে কুলীন নামে পরিচিত হয়। বল্লাল সেন একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি দানসাগর ও অদ্ভূতসাগর নামে দুইটি গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থ দুটো থেকে তার অভূতপূর্ব প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। বল্লাল সেনের সময় বঙ্গদেশে [[শৈব]], [[বৈষ্ণব]], [[তন্ত্র|তান্ত্রিক]] প্রভৃতি বিভিন্ন মতবাদ দেখা দেয়। বল্লালসেন ব্যক্তিগতভাবে তান্ত্রিক মতের পৃষ্ঠপোষকতা করেন, যদিও তার পিতা বিজয়সেন শৈব মতের অনুসারী ছিলেন।
 
বল্লাল সেনের পর তার পুত্র [[লক্ষ্মণসেন|লক্ষণ সেন]] সিংহাসনে অাসীনআসীন হন। পিতার মত লক্ষণ সেনও সাহিত্য ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। তার সময়ে রাজ্যে বহু প্রতিভাবান কবির অাবির্ভাবআবির্ভাব হয়। যেমন শরণ, হলায়ুধ, উমাপতিধর প্রমুখ। ধর্মীয় মতের দিক থেকে লক্ষণ সেন ছিলেন বৈষ্ণব। অানুলিয়ায়আনুলিয়ায় প্রাপ্ত তাম্র শাসনে লক্ষণ সেনকে পরমবৈষ্ণব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। লক্ষণ সেনের সময় [[ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী|বখতিয়ার খিলজী]] বাংলা অাক্রমণআক্রমণ করেন। এসময় লক্ষণ সেন [[নদীয়া|নদীয়ার]] একটি তীর্থকেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। ১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজী অতর্কিতে নদীয়া অাক্রমণআক্রমণ করেন যার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। লক্ষণ সেন [[পূর্ব বঙ্গ|পূর্ব বঙ্গে]] অাশ্রয়আশ্রয় গ্রহণ করেন, মুসলমানরা পূর্ববঙ্গ জয় করতে ব্যর্থ হয়।
 
===দেব রাজত্ব===
{{মূল নিবন্ধ|দেব রাজবংশ}}
 
[[দেব রাজবংশ|দেব রাজ্য]] ছিল বাংলার দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অারাকানেরআরাকানের দান্যবতী বংশের একটি রাজ্য। এই রাজ্যটি বিস্তৃত ছিল অারাকানআরাকান হতে [[চট্টগ্রাম]] পর্যন্ত এবং এর রাজধানী ছিল চট্টগ্রামে। কিন্তু স্থানীয় বাঙালী প্রভাবে দেব রাজাগণ বাঙ্গালী ও হিন্দু হয়ে পড়ে। এই রাজবংশের প্রথম শাসক ছিলেন পুরুষোত্তম দেব, যিনি প্রথম জীবনে একজন সাধারণ গ্রামিক (গ্রাম প্রধান) ছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি সেন সম্রাটদের অধীনে দক্ষিণাঞ্চলের প্রাদেশিক শাসনকর্তার পদে উন্নীত হন। তার পুত্র মধুসূদন দেব প্রথম সেন সাম্রাজ্যের হাত থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং অানুষ্ঠানিকভাবেআনুষ্ঠানিকভাবে নৃপতি উপাধি ধারণ করেন। দামোদর দেব এই রাজবংশের একজন শক্তিশালী শাসক ছিলেন। তার রাজত্ব বর্তমান কুমিল্লা-নোয়াখালী-চট্টগ্রাম অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Roy |প্রথমাংশ=Niharranjan |তারিখ=1993 |শিরোনাম=Bangalir Itihas: Adiparba |অবস্থান=Calcutta |প্রকাশক=Dey's Publishing |পাতাসমূহ=408–9 |আইএসবিএন=81-7079-270-3}}</ref>
 
এই রাজবংশের পরবর্তী শাসক দশরথ দেব এই বংশের সবচেয়ে পরাক্রমশালী শাসক ছিলেন। তিনি সেন সাম্রাজ্যের অবসান ঘটান এবং সমগ্র পূর্ববঙ্গ ( ঢাকা-ময়মনসিংহ-খুলনা) অঞ্চল দখল করে নেন। তিনি দিল্লীর সুলতান [[গিয়াসউদ্দিন বলবন|গিয়াসউদ্দীন বলবনের]] সাথে মিত্রতা করে অাগ্রাসনকারীআগ্রাসনকারী মুঘীসউদ্দীন তুঘরলকে পরাজিত করেন এবং বাংলার হিন্দু সাম্রাজ্যের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেন। এ উপলক্ষে তিনি দনুজ মর্দন দেব উপাধি গ্রহণ করেন। গিয়াসউদ্দীন বলবনের ইতিহাসে তাকে দনুজ রায় বলে অভিহিত করা হয়েছে। দেব বংশ অারওআরও কিছুকাল তার স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। যদিও এই সময়কার রাজাদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। অবশেষে বাংলার মাহমুদ শাহী সুলতান ফিরোজ শাহের অাক্রমণেআক্রমণে দেব রাজবংশের পতন হয়।
 
==মধ্যযুগ এবং ইসলামের আগমন==
 
সপ্তম শতাব্দীতে আরব মুসলিম ব্যবসায়ী ও সুফি ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে বাংলায় প্রথম ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছিল। দ্বাদশ শতকে মুসলিমরা বাংলায় বিজয় লাভ করে এবং তারা ঐ অঞ্চলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১২০২ সালের শুরুর দিকে দিল্লী সালতানাত থেকে একজন সামরিক অধিনায়ক বখতিয়ার খিলজী বাংলা ও বিহারকে পরাজিত করেছিলেন। প্রথমদিকে বাংলা তুর্কী জাতির বিভিন্ন গোত্র দ্বারা শাসিত হয়েছিল। পরবর্তীতে অারবআরব, পারসীয়, অাফগানআফগান, মুঘল প্রভৃতি অভিযানকারী জাতি দ্বারা বাংলা শাসিত হয়। মুসলিম শাসকদের অধীনে বাংলা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছিল। কারণ শহরগুলো উন্নত হয়েছিল; প্রাসাদ, দুর্গ, মসজিদ, সমাধিসৌধ এবং বাগান; রাস্তা এবং সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল; এবং নতুন বাণিজ্য পথগুলো সমৃদ্ধি ও নতুন সাংস্কৃতিক জীবন বয়ে নিয়ে এসেছিল।
 
==তুর্কি শাসন==
৮০ নং লাইন:
{{মূল নিবন্ধ|খিলজী শাসন}}
 
[[ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী|বখতিয়ার খিলজী]] ১১৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বিহার অাক্রমণআক্রমণ করেন। তিনি বিহারের [[পাল সাম্রাজ্য|পাল রাজবংশের]] অবশিষ্টাংশের পতন ঘটিয়ে বিহার দখল করেন। বখতিয়ার খিলজী এরপর বাংলা অাক্রমণেরআক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি ১২০৪ সালে ১৭ সৈন্যের এক দুর্ধর্ষ অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তীর্থকেন্দ্র [[নদীয়া|নদীয়ায়]] অাক্রমণআক্রমণ করেন। লক্ষণ সেন পলায়ন করেন এবং তিনি [[পূর্ব বঙ্গ|পূর্ব বঙ্গে]] অাশ্রয়আশ্রয় গ্রহণ করেন। মুসলমানদের কোন নৌবাহিনী না থাকায় তারা পূর্ববঙ্গ দখল করতে পারেনি। উচ্চাভিলাষী বখতিয়ার এরপর [[তিব্বত]] অাক্রমণেরআক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১২০৬ সালে এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি তিব্বতে অাক্রমণআক্রমণ করেন। এবং তিব্বতের কারামাত্তান নগর পর্যন্ত অগ্রসর হন। কিন্তু প্রচণ্ড শীত ও রসদপত্রের অভাবে বখতিয়ার খিলজীর এ অভিযান শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।<ref name="cie">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://projects.cie.org.uk/banglao/textbook/historyandculture/premughal/muslimrule |শিরোনাম=Bangladesh Studies O Level (7094) Pilot Textbook |প্রকাশক=University of Cambridge Local Examinations Syndicate |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://archive.is/20130125053321/http://projects.cie.org.uk/banglao/textbook/historyandculture/premughal/muslimrule |আর্কাইভের-তারিখ=২৫ জানুয়ারি ২০১৩ |সংগ্রহের-তারিখ=25 January 2014 |অকার্যকর-ইউআরএল=না }}</ref>
 
বখতিয়ার খিলজীর মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলার উদ্ভব হয়। বখতিয়ারের অন্যতম সহকারী [[মুহাম্মদ শিরান খিলজি|শিরণ খিলজী]] নিজেকে বাংলার সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু সিংহাসনের অপর দাবীদার [[আলি মর্দান খিলজি|মর্দান খিলজী]] শিরণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। শিরণ মর্দানকে পরাজিত ও বন্দী করেন। মর্দান খিলজী দিল্লীর সম্রাট [[কুতুবুদ্দিন আইবেক|কুতুবুউদ্দিন অাইবেককেআইবেককে]] বাংলা অাক্রমণেরআক্রমণের জন্য অাহ্বানআহ্বান জানান। অাইবেকেরআইবেকের সেনাপতি কায়েমাজ রূমী শিরণকে পরাজিত করে বাংলা দখল করেন, এবং মর্দান খিলজীকে বাংলার গভর্নর নিয়োগ করা হয়।<ref name="ReferenceA">{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=162|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> মর্দান প্রথমত দিল্লীর অধীনস্ত থাকেন, কিন্তু কুতুবউদ্দীন অাইবেকেরআইবেকের মৃত্যুর পর তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মর্দান ক্রমশ অত্যাচারী হয়ে উঠলে খিলজী অমাত্যগণ তাকে হত্যা করেন এবং ইওয়াজ খিলজীকে বাংলার সুলতান মনোনীত করেন।
 
[[গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ শাহ|ইওয়াজ খিলজী]] একজন সুদক্ষ ও রণকুশলী সম্রাট ছিলেন। তিনি একটি নৌবাহিনী গঠন করেন এবং এই নৌবাহিনীর সাহায্যে তিনি বঙ্গ দখল করেন। তিনি বিহার, উড়িষ্যা ও কামরূপও (পশ্চিম অাসামআসাম) দখল করেন। কিন্তু ইওয়াজ এইসমস্ত রাজ্য সরাসরি রাজ্যভুক্ত করেননি, তিনি এই রাজ্যগুলোকে সামন্ত রাজ্যের মর্যাদা প্রদান করেন।<ref name="ReferenceA"/> ইওয়াজের এই রাজ্য বিস্তারের ফলে ১২২৫ সালে দিল্লীর সুলতান [[শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ|শামসউদ্দীন ইলতুতমিশ]] তার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। যুদ্ধে ইওয়াজ পরাজিত হন। কিন্তু ইলতুতমিশ দিল্লী প্রত্যাবর্তন করলে ইওয়াজ পুনরায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এবার যুদ্ধে ইলতুতমিশের পুত্র মাহমুদ নেতৃত্ব দেন, এবং যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ইওয়াজের পরাজয় ও মৃত্যু ঘটে।
 
===মামলুক শাসন===
{{মূল নিবন্ধ|মামলুক শাসন (বাংলা)}}
 
মামলুকগণ ছিলেন তুর্কী জাতির একটি বিশেষ ধরনের ভাড়াটে সেনাবাহিনী। দিল্লীতে এই সময় [[মামলুক সালতানাত (দিল্লি)|মামলুকগণই]] অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং দিল্লী কর্তৃক নিয়োগকৃত বাংলার সকল গভর্নরগণও ছিলেন মামলুক। বাংলার মামলুক সুলতান [[তুঘরল তুঘান খান]] ১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লীর বিরুেদ্ধ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনি শধু বাংলার উপরই অাধিপত্যআধিপত্য বিস্তার করলেন না এক বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে পশ্চিমাঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করেন এবং [[বিহার]] ও [[উত্তরপ্রদেশ|বদায়ুন]] অঞ্চল নিজের শাসনাধীনে অানেন।আনেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=171|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> যাই হোক দিল্লীর শাসনকর্তা তমর খানের নির্দেশে এক সেনাবাহিনী বাংলার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। তুঘান খান পরাজিত হন এবং শেষ পর্যন্ত দিল্লীর শাসন মেনে নেন।
 
১২৫১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার গভর্নর [[মুঘীসউদ্দীন ইউজবাক]] স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ইউজবাক বাংলার দক্ষিণ দিক হতে অাগতআগত [[উড়িষ্যা|উড়িষ্যার]] একটি অাক্রমণআক্রমণ প্রতিহত করেন। তিনি উড়িষ্যার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এর রাজধানী লুন্ঠন করেন এবং একটি শ্বেত হস্তীও লাভ করেন। তুঘানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইউজবাক [[বিহার]] ও [[উত্তরপ্রদেশ|অাউয়াধআউয়াধ]] দখল করেন।<ref name="ReferenceB">{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=173|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> এর ফলে তিনি পূর্ব ভারত ব্যাপী এক বিরাট সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হয়ে পড়েন। ইউজবাক যতদিন জীবিত ছিলেন দিল্লীর সম্রাট ততদিন পর্যন্ত তাকে পরাজিত করতে পারেননি। ইউজবাক উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অাসামওআসামও দখল করেন। কিন্তু অাসামেরআসামের একটি বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে তিনি নিহত হন।
 
দিল্লীর সুলতান [[গিয়াসউদ্দিন বলবন|গিয়াসউদ্দীন বলবনের]] সময় বাংলার গভর্নর [[মুঘীসউদ্দীন তুঘরল]] বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনি সমগ্র [[বাংলা]] ও [[বিহার|বিহারের]] ওপর অাধিপত্যআধিপত্য স্থাপন করে [[উড়িষ্যা]] অাক্রমণআক্রমণ করেন এবং তা তার সাম্রাজ্যভূক্ত করেন। সম্রাট বলবন মালিক তুরমতীকে এক বিরাট বাহিনী দিয়ে বাংলার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। কিন্তু তিনি মুঘিসউদ্দীন তুঘরলের হাতে পরাস্ত হন। বলবন এবার দ্বিতীয় অভিযান প্রেরণ করেন সেনাপতি শিহাবুদ্দীনের নেতৃত্বে। কিন্তু তিনিও তুঘরলের হাতে পরাজিত হন।<ref name="ReferenceB"/> এর ফলে বলবন ১২৮০ সালে এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে স্বয়ং বাংলা অভিযান করেন। তুঘরল প্রবল পরাক্রমের সাথে যুদ্ধ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন।
 
===মাহমুদ শাহী রাজবংশ===
{{মূল নিবন্ধ|মাহমুদ শাহী রাজবংশ}}
 
সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবনের মৃত্যুর পর তার পুত্র বুঘরা খান বাংলা দেশে একটি স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন। তিনি মাহমুদ শাহ উপাধী গ্রহণ করেন, এজন্য তার বংশ মাহমুদ শাহী বংশ নামে পরিচিত হয়ে থাকে। দিল্লীর সম্রাট ছিলেন [[মাহমুদ শাহ|মাহমুদ শাহের]] পুত্র কায়কোবাদ। কিন্তু তিনি দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী নিজামউদ্দীনের হাতের ক্রীড়ানক হয়ে পড়েন। মাহমুদ শাহ তার পুত্রকে উদ্ধারের জন্য এক বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। [[দিল্লি সালতানাত|দিল্লীর]] উজির নিজামউদ্দীন এক বিরাট বাহিনী নিয়ে সরযু নদীর তীরে তার গতিরোধ করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=175|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> যাই হোক বাংলা ও দিল্লীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ না হয়ে উভয়পক্ষের মধ্য সমঝোতা হয়। মাহমুদ শাহ তার বাহিনী নিয়ে [[শাহী বাংলা|লখনৌতিতে]] ফিরে অাসেনআসেন ও সগৌরবে রাজত্ব করতে থাকেন। অপরদিকে দিল্লীতে তার নির্দেশে সুলতান কায়কোবাদ মন্ত্রী নিজামউদ্দীনকে পদচ্যুত করে রাষ্ট্রকে নিষ্কণ্টক করেন।
 
মাহমুদ শাহের পর তার পুত্র রুকুনউদ্দীন কায়কাউস বাংলার সিংহাসনে অাসীনআসীন হন। রুকুনউদ্দীন কায়কাউসের সময় দিল্লীর সুলতান ছিলেন [[আলাউদ্দিন খিলজি|অালাউদ্দীনআলাউদ্দীন খিলজী]]। ১৩০১ সালে অালাউদ্দীনআলাউদ্দীন খিলজী বাংলা অাক্রমণআক্রমণ করেন। যুদ্ধে কায়কাউস পরাজিত ও নিহত হন। খিলজী কায়কাউসের ভাই ফিরোজ শাহকে তার গভর্নর হিসেবে বাংলার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেন। [[ফিরোজ শাহ]] একজান খ্যাতিমান বিজেতা ছিলেন। তিনি খিলজীর নির্দেশে [[পূর্ব বঙ্গ|পূর্ববঙ্গ]] অাক্রমণআক্রমণ করেন এবং [[দেব রাজবংশ|দেব বংশকে]] সমূলে উৎখাত করেন। এর ফলে পূর্ববঙ্গ চিরস্থায়ী ভাবে মুসলিন শাসনাধীনে চলে অাসে।আসে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=179|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> তার সময়েই বিখ্যাত অাউলিয়াআউলিয়া [[শাহ জালাল]] বঙ্গদেশে অাগমনআগমন করেছিলেন এবং সিলেট জয় করেছিলেন। অালাউদ্দীনআলাউদ্দীন খিলজীর মৃত্যুর পরে তিনি স্বাধীনতা অর্জন করেন এবং কিছুদিন স্বাধীনভাবে রাজকার্য করার পর মৃত্যুবরণ করেন।
 
ফিরোজ শাহের পর তার পুত্র ও উত্তরাধিকারী [[গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ|বাহাদুর শাহ]] সমগ্র বাংলার অধিপতি হন। কিন্তু এ সময় দিল্লীর তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা [[গিয়াসউদ্দিন তুগলক|গিয়াসউদ্দীন তুঘলক]] বাংলাদেশে সমরাভিযান করেন। ষড়যন্ত্রকারী ভ্রাতা নাসিরউদ্দীন ইব্রাহীমের সহায়তায় রাজধানী লখনৌতি অাক্রমণআক্রমণ করেন এবং বাহাদুর শাহ পরাজিত হন। গিয়াসউদ্দীন তুঘলক বাংলাকে সাতগাও, লখনৌতি ও [[সোনারগাঁও]] এই তিন ভাগে ভাগ করেন এবং এই তিন ভাগকে তিনজন পৃথক শাসকের হাতে নিযুক্ত করেন। কিন্তু গিয়াসউদ্দীন তুঘলক প্রত্যাবর্তন করলে বাহাদুর শাহ পুনরায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সাতগাওয়ের শাসনকর্তা বাহরাম খান তার বিরুদ্ধে সমরাভিযান করেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন।
 
==ইলিয়াস শাহী রাজবংশ==
{{মূল নিবন্ধ|ইলিয়াস শাহী রাজবংশ}}
 
[[শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ|ইলিয়াস শাহ]] বাংলাদেশে [[ইরান|ইরানের]] সিজিস্তান হতে অাগতআগত এক উদ্বাস্তু ছিলেন। তিনি প্রাথমিক জীবনে বাংলায় নিযুক্ত দিল্লীর গভর্নর অালীআলী শাহের সিলাহদার ছিলেন। কিন্তু পরবরতীতে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে বাংলার সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। ইলিয়াস শাহ [[বাংলা]], [[বিহার]] ও [[উড়িষ্যা]] দখল করে ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলে এক বিশাল সাম্রাজ্য কায়েম করেন । তিনি [[উত্তরপ্রদেশ|উত্তর প্রদেশ]] ও [[নেপাল|নেপালেরও]] বিরাট অংশ দখল করে নেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=189|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> এর ফলে দিল্লীর সুলতান [[ফিরোজ শাহ তুঘলক]] অাতঙ্কিতআতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। ১৫৫৩ সালে তিনি বাংলা অক্রমণ করেন। ইলিয়াস শাহ বিহার ও উড়িষ্যা অঞ্চল দুটো হারিয়ে ফেলেন কিন্তু তিনি বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে সক্ষম হন।
 
ইলিয়াস শাহের পরে [[সিকান্দার শাহ]] বাংলার সিংহাসনে অাসীনআসীন হন। ইতোপূর্বে ফিরোজ শাহ তুঘলক বাংলা অক্রমণ করে বাংলা প্রদেশটি দখল করতে ব্যর্থ হন। ফলে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তিনি পুনরায় বাংলা অক্রমণ করেন। সুদীর্ঘ দুই বৎসর ফিরোজ শাহ বাংলা অবরোধ করে রাখেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিকান্দার শাহের হাতে পরাজিত হন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=192|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> সিকান্দার শাহ সাহিত্য ও স্থাপত্যের একজন একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার সময়ে বিশেষ করে স্থাপত্য ও ইমারত শিল্প ব্যাপক উন্নতি লাভ করে। তার অমর কীর্তি হচ্ছে বিখ্যাত [[অাদিনা মসজিদ|আদিনা মসজিদ]] নির্মাণ করা। এই মসজিদটি তৎকালীন ভারতবর্ষের বৃহত্তম মসজিদ (দিল্লীর চেয়েও বৃহৎ) ছিল।
 
সিকান্দার শাহের পর [[গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ|অাজমআজম শাহ]] সিংহাসনে অসীন হন। তার শাসনকাল ছিল শান্তিপূর্ণ এবং এ সময় তেমন যুদ্ধ বিগ্রহের ঘটনা ঘটেনি। তার সময়ে চীনের রাষ্ট্রদূত মা হুয়ান বাংলাদেশে অাগমণআগমণ করেন। তিনি ইরানের বিখ্যাত কবি [[হাফিজ|হাফিজকে]] বাংলায় অাগমনেরআগমনের জন্য অাহ্বানআহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি রওয়ানাও হয়েছিলেন কিন্তু পথিমধ্যে মারা যান। ইলিয়াস শাহী সুলতানগণ বাংলার [[হিন্দু|হিন্দুদের]] ক্ষমতায়িত করতে চেয়েছিলেন। বিপুল সংখ্যক হিন্দুকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। এবং হিন্দুদের বিভিন্ন অঞ্চলে সামন্তপ্রভু হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এতে হিন্দুরা অত্যন্ত ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা দখল করে বাংলার ইলিয়াস শাহী বংশের অবসান ঘটান।
 
==গণেশীয় রাজবংশ==
{{মূল নিবন্ধ|গনেশীয় রাজবংশ}}
 
রাজা [[রাজা গণেশ|গণেশ]] প্রাথমিক জীবনে [[দিনাজপুর|দিনাজপুরের]] ভাতুরিয়া অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। তিনি বাংলার এক অামীরআমীর বায়েজীদ শাহকে ইলিয়াস শাহী বংশের শেষ সুলতানকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করতে উৎসাহিত করেন। পরে বায়েজীদ শাহকে সরিয়ে তিনি নিজেই ক্ষমতা দখল করেন। গণেশ বাংলাদেশে সত্যপীর নামক এক নতুন পূজার উদ্ভাবন করেন। সত্যপীর একইসঙ্গে মুসলিম পীর ও হিন্দু দেবতার প্রতিভূ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গণেশের পূর্বে বাংলার হিন্দুগণ মুসলমান শাসকদের প্রভাবে ব্যাপক মাত্রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছিলেন। এই ধর্মান্তর রোধ করার জন্য তিনি এই নতুন সত্যপীর প্রথার প্রচলন করেন।
 
রাজা গণেশ নিজ পুত্র জিতেন্দ্রদেবের পরিবর্তে মহেন্দ্রদেবকে পরবর্তী রাজা হিসেবে নিয়োগ করেন। এতে জিতেন্দ্রদেব অত্যন্ত বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মুসলিম অামীরদেরআমীরদের সহায়তায়, [[জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ|জালালউদ্দীন মুহাম্মাদ শাহ]] নাম নিয়ে সিংহাসনে আরোহন করেন। মুহাম্মাদ শাহ একজন বিখ্যাত বিজেতা ছিলেন। তিনি পার্শ্ববর্তী [[জাউনপুর]] রাজ্য অাক্রমণআক্রমণ করেন। এবং তাদের কাছ থেকে বিহার প্রদেশটি ছিনিয়ে নেন। মুহাম্মাদ শাহের সময় [[অারাকান|আরাকান]] রাজ মেং তি মুন [[বার্মা|বার্মার]] হাত থেকে রক্ষার জন্য মুহাম্মাদ শাহের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং মুহাম্মাদ শাহ তাকে উদ্ধার করেন। এরপর থেকে অারাকানআরাকান বাংলার একটি সামন্ত রাজ্যে পরিণত হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=209|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref>
 
মুহাম্মাদ শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র ও উত্তরাধিকারী [[শামসউদ্দিন আহমাদ শাহ|আহমাদ শাহ]] বাংলার সিংহাসনে বসেন। তার ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মতামত বিভ্রান্তিকর। ফেরেশতার মতে, তিনি তার মহান পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন এবং ন্যায়পরায়ণতার অাদর্শআদর্শ প্রাণপনে রক্ষা করেন। অপরপক্ষে [[গোলাম হোসেন সেলিম|গোলাম হোসেন]] বলেন, তিনি অত্যাচারী ও রক্তপিপাসু ছিলেন। তিনি বিনা কারণে রক্তপাত করতেন এবং অসহায় নারী-পুরুষদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতেন। যাই হোক তিনি জাউনপুরের কাছে পরাজিত হন। এবং বিহার প্রদেশটি হারিয়ে ফেলেন। সাদী খান ও নাসির খান নামক দুইজন ক্রীতদাস, যারা তার অমাত্য পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তাকে হত্যা করেন এবং বাংলার সিংহাসন দখল করেন।
 
==পরবর্তী ইলিয়াস শাহী রাজবংশ==
 
সাদী খান ও নাসির খান নামক ক্ষমতা দখলকারী অামীরদেরআমীরদের সরিয়ে [[নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ|মাহমুদ শাহ]] নামক ইলিয়াস শাহী বংশের একজন বংশধর বাংলার ক্ষমতা দখল করেন। এর ফলে বাংলায় ইলিয়াস শাহী রাজবংশ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। সুলতান মাহমুদ শাহের সময় বাংলার ইমারত ও স্থাপত্য শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের ইমারত নির্মাণ করে একে সুসজ্জিত করেন। এসব ইমারতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাগেরহাটের [[ষাট গম্বুজ মসজিদ]], ঢাকার বিনত বিবির মসজিদ, গৌড়ের বাইশগজী প্রাচীর প্রভৃতি।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=214|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> এজন্য অনেক ঐতিহাসিক তার যুগকে অগাস্টান যুগ বলে অভিহিত করে থাকেন।
 
মাহমুদ শাহের মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য পুত্র [[রুকনউদ্দিন বারবাক শাহ|বরবক শাহ]] বাংলার সিংহাসনে অারোহনআরোহন করেন। বরবক শাহ [[জাউনপুর|জাউনপুরকে]] পরাজিত করে বিহার দখল করে নেন এবং কেদার রায় নামক তার একজন হিন্দু সেনাপতিকে এই অঞ্চলের গভর্নর নিয়োগ করেন। বরবক শাহের একজন সেনাপতি [[ইসমাইল গাজী]] অাসামেরআসামের রাজাকে পরাজিত করে [[কামরূপ রাজ্য|কামরূপ]] (পশ্চিম অাসামআসাম) দখল করে নেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=215|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> বরবক শাহের শাসনামলে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক হাবশী ক্রীতদাসের অাগমনআগমন ঘটে। বরবক শাহ এদের অনেককে সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদে নিয়োগ করেন। এই হাবশীরা পরে সাম্রাজ্যের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাড়ায়।
 
সুলতান [[শামসউদ্দিন ইউসুফ শাহ|ইউসুফ শাহ]] একজন দানশীল, ন্যায়পরায়ণ ও ধার্মিক শাসক ছিলেন। তিনি ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি দরবারে জ্ঞানী-গুণী, অালেমআলেম ও বিচারকদের অাহ্বানআহ্বান করতেন। পরবর্তী সুলতান [[জালালউদ্দিন ফাতেহ শাহ|ফতেহ শাহও]] একজন দয়ালু, কর্মঠ ও ক্ষমতাশালী সম্রাট ছিলেন। তিনি সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে রাজ্য শাসন করতেন। তার সময়ে হাবশী ক্রীতদাসগণ অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তিনি এই হাবশী সেনাবাহিনী ভেঙ্গে দিতে উদ্যত হন। ফলে হাবশী সেনাবাহিনী বিদ্রোহ করে এবং তাকে হত্যা করে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে। এর ফলে বংলার ইলিয়াস শাহী রাজবংশের পতন ঘটে।
 
==হোসেন শাহী রাজবংশ==
{{মূল নিবন্ধ|হোসেন শাহী রাজবংশ}}
 
সুলতান [[আলাউদ্দিন হোসেন শাহ|অালাউদ্দিন হোসেন শাহ]] জোরদখলকারী হাবশী শাসকদের সরিয়ে বাংলার ক্ষমতা দখল করেন। তিনি প্রাথমিক জীবনে অারবআরব দেশের [[ইয়েমেন]] থেকে বাংলাদেশে অাগতআগত এক উদ্বাস্তু ছিলেন। হোসেন শাহ বাংলার সীমান্তবর্তী রাজ্যসমূহ যেমন [[কামরূপ রাজ্য|কামরূপ]] (পশ্চিম অাসামআসাম), ত্রিহুত (উত্তর [[বিহার]]) ও [[চট্টগ্রাম]] (অারাকানেরআরাকানের হাত থেকে) জয় করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=228|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> তবে তিনি দক্ষিণ বিহার জয় করতে ব্যর্থ হন কারণ দিল্লীর সম্রাট [[সিকান্দার লোদি|সিকান্দার লোদী]] তার পূর্বেই উক্ত অঞ্চল দখল করে নেন। হোসেন শাহের শাসন অামলেআমলে সাহিত্য ও স্থাপত্য কলার ব্যাপক বিকাশ ঘটে। তিনি ছিলেন হিন্দু মুসলিম সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক। অনেক ঐতিহাসিক তার যুগকে বাংলার স্বর্ণযুগ হিসেবে অাখ্যায়িতআখ্যায়িত করে থাকেন।
 
হোসেন শাহের পর তার পুত্র [[নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহ|নুসরাত শাহ]] বাংলার সিংহাসনে অাসীনআসীন হন। পিতার মত তিনিও জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পিতার অামলেআমলে সাহিত্যকলা ও স্থাপত্য শিল্পের যে বিকাশ ঘটে তা তার সময়ও অব্যাহত থাকে। নসরত শাহের সময় ভারতবর্ষে [[লোদি রাজবংশ|অাফগানআফগান]] শাসনের অবসান হয় ও [[মুঘল সাম্রাজ্য|মুঘল শাসনের]] পত্তন ঘটে। বিপুল সংখ্যক অাফগানআফগান অামীরআমীর পলায়ন করে বাংলাদেশে অাসেন।আসেন। নসরত শাহ সম্রাট মাহমুদ লোদী ও জালাল খানের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুঘল অাক্রমণআক্রমণ প্রতিরোধের জন্য অগ্রসর হন। কিন্তু [[ঘাগরার যুদ্ধ|ঘাগরার যুদ্ধে]] মিত্রবাহিনী পরাজিত হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=238|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> নসরত শাহ বাবরের সাথে একটি সন্ধিচুক্তি করে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করেন।
 
নসরত শাহের পর তার পুত্র ফিরোজ শাহ বাংলার সিংহাসনে অাসীনআসীন হন। কিন্তু তার খুল্লতাত [[গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ|মাহমুদ শাহ]] তাকে হত্যা করে ক্ষমতায় বসেন। এর ফলে রাজপরিবারে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। ত্রিহুতের শাসনকর্তা মখদুম অালমআলম স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসেন। কিন্তু মাহমুদ শাহ তাকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। এসময় [[বিহার|বিহারের]] শাসনকর্তা জালাল খান তার অভিভাবক [[শের শাহ|শের খানের]] শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে মাহমুদ শাহকে বিহার অাক্রমণেরআক্রমণের জন্য অাহ্বানআহ্বান জানান। মাহমুদ শাহ বিহার অাক্রমণআক্রমণ করেন কিন্তু তিনি পরাজিত হন। অতঃপর ১৫৩৮ সালে শেরশাহ বাংলার রাজধানী [[গৌড়]] দখল করে নেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=243|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> ফলে বাংলার হোসেন শাহী রাজবংশের পতন ঘটে।
 
==পাখতুন শাসন==
 
পাখতুনগণ ছিলেন অাফগানিস্তানআফগানিস্তান থেকে অাগতআগত উদ্বাস্তু এবং তারা পাঠান নামেও পরিচিত ছিলেন। পাখতুনগণ ছিলেন ভারতবর্ষের অধিশ্বর এবং তারা ভারতে লোদী বংশ নামে একটি শক্তিধর রাজবংশ স্থাপন করেন। পরবর্তীতে পানিপথের যুদ্ধে মুঘলদের হাতে তাদের পরাজয় হয় এবং তারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
 
===সূরী রাজবংশ===
{{মূল নিবন্ধ|সুরি সাম্রাজ্য}}
 
[[সুরি সাম্রাজ্য|সূরী বংশের]] প্রতিষ্ঠাতা [[শের শাহ সুরি|শের শাহ সূরী]] প্রাথমিক জীবনে [[বিহার|বিহারের]] সাসারাম অঞ্চলের এক ক্ষুদ্র জায়গীরদার ছিলেন। পরে নিজ প্রতিভাবলে তিনি বিহারের শাসনকর্তা বিহার খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন এবং বিহারের উপ প্রশাসকের পদে নিযুক্ত হন। ১৫৩৬ সালে শের শাহ বাংলার শাসনকর্তা [[গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ|মাহমুদ শাহের]] বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে মাহমুদ শাহ কিউল থেকে সিকরিগলি পর্যন্ত অঞ্চলটি শের শাহকে সমর্পণ করেন। ১৫৩৭ সালে শের শাহ দ্বিতীয়বার বাংলা অাক্রমণআক্রমণ করেন এবং এবার সম্রাট মাহমুদ শাহকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে বাংলা দখল করেন। শের শাহ নিজেকে বাংলার সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন এবং ফরিদউদ্দীন শের শাহ উপাধি ধারণ করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Singh |প্রথমাংশ=Surinder |শেষাংশ২=Gaur |প্রথমাংশ২=I. D. |তারিখ=2008 |শিরোনাম=Popular Literature and Pre-modern Societies in South Asia|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=QVA0JAzQJkYC |প্রকাশক=Pearson Education India |আইএসবিএন=978-8131713587}}</ref>
 
শেরশাহ বাংলা ও বিহারের বিরাট ভূখণ্ডের অধিকারী হয়ে বসলে মুঘল সম্রাট [[হুমায়ুন]] চুনার দখল করে বাংলা অাক্রমণআক্রমণ করেন। সুচতুর শেরশাহ সম্মুখ সমরে লিপ্ত না হয়ে বাংলাদেশ পরিত্যাগ করেন এবং পরোক্ষভাবে [[বারাণসী|বারানসী]], রোটাস ও [[জাউনপুর]] দখল করে [[কনৌজ|কনৌজের]] দিকে অগ্রসর হন। হুমায়ুন অাগ্রারআগ্রার পথে যাত্রা করলে [[বক্সার|বক্সারের]] নিকট [[চৌসার যুদ্ধ|চৌসা]] নামক স্থানে শের শাহ তাকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। ১৫৪০ সালের ১৭ই মে কনৌজ এর [[বিলগ্রামের যুদ্ধে]] শের শাহ হুমায়ুনকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন। এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে সূরী বংশের সার্বভৌমত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।<ref name="Wolseley Haig">{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ১=Haig|প্রথমাংশ১=Wolseley|সম্পাদক১-শেষাংশ=Burn|সম্পাদক১-প্রথমাংশ=Richard|শিরোনাম=The Cambridge History of India: The indus civilization|তারিখ=1962|প্রকাশক=Cambridge University Press|পাতা=51|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=yoI8AAAAIAAJ&pg=PA51|সংগ্রহের-তারিখ=16 November 2016|ভাষা=en|অধ্যায়=Sher Shah and the Sur Dynasty}}</ref>
শের শাহ হচ্ছেন বাংলার একমাত্র মুসলিম সম্রাট যিনি উত্তর ভারত জুড়ে সাম্রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
 
শেরশাহের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রের সেনাধ্যক্ষগণ জ্যেষ্ঠ্যপুত্র আদিল খানের পরিবর্তে [[ইসলাম শাহ সুরি|ইসলাম শাহকে]] উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন, কারণ ইসলাম শাহ রাজপুত্র অবস্থায় অধিকতর সামরিক প্রতিভা প্রদর্শন করেছিলেন। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অাদিলআদিল খান ইসলাম শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। অাদিলআদিল খান তার বাহিনী নিয়ে [[অাগ্রা|অাগ্রারআগ্রার]] দিকে অগ্রসর হন, কিন্তু ইসলাম শাহের হাতে পরাজিত হন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Biography of Islam Shah the Successor of Sher Shah|ইউআরএল=http://www.preservearticles.com/2012031025991/biography-of-islam-shah-the-successor-of-sher-shah.html}}</ref> ইসলাম শাহের সময় মুঘল সম্রাট হুমায়ুন রাজনৈতিক অাশ্রয়েরআশ্রয়ের জন্য তার নিকট প্রার্থনা জানান। কিন্তু তিনি এ অাবেদনআবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। ইসলাম শাহের শাসনকাল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল এবং এ সময় তেমন কোন যুদ্ধবিগ্রহের ঘটনা ঘটেনি।
 
ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর সূরী সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলার উদ্ভব হয়। ইসলাম শাহের পর তার পুত্র ফিরোজ শাহ সিংহাসনে অারোহনআরোহন করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি [[মুহাম্মদ শাহ আদিল|অাদিলআদিল শাহ সূরী]] (এই আদিল শাহ পূর্ববর্তী অাদিলআদিল শাহ হতে পৃথক) কর্তৃক পদচ্যূত হন। অদিল শাহ পরবর্তীতে [[ইব্রাহিম শাহ শুরি|ইব্রাহীম শাহ সূরী]] নামক সূরী বংশীয় অপর একজন দাবীদারের কছে পরাজিত হন এবং তিনি দিল্লী ও অাগ্রাআগ্রা দখল করে বসেন। ইব্রাহীম শাহ অবার [[সিকান্দার শাহ শুরি|সিকান্দার শাহ সূরী]] কর্তৃক পরাজিত হন এবং সিকান্দার শাহ নিজেকে ভারতবর্ষের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। এভাবে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে সূরী সাম্রাজ্য বিপর্যস্ত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের পথে ধাবিত হয়।
 
===কররানী রাজবংশ===
{{মূল নিবন্ধ|কররানী রাজবংশ}}
 
১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দে [[তাজ খান কররানী]] বাংলার দুর্বল সুলতান গিয়াসউদ্দীনকে পরাজিত করে সিংহাসন দখল করেন। তাজ খান দিল্লীর সূরী বংশীয় সম্রাট [[ইসলাম শাহ সুরি|ইসলাম শাহের]] একজন বিশ্বস্ত অনুচর ছিলেন। কিন্তু তার পরে [[মুহাম্মদ শাহ আদিল|অাদিলআদিল শাহ]] অনৈতিকভাবে সিংহাসন দখল করলে তাজ খান বাংলায় পলায়ন করেন এবং এখান থেকেই তিনি আদিল শাহের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। এখানে তিনি বাহাদুর শাহের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন এবং তার নেতৃত্বে অাদিলআদিল শাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=252|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> তাজ খান বাংলার মাটিতে তার ক্ষমতার বীজ শক্তভাবে প্রোথিত করেন। পরবর্তীতে সুলতান গিয়াসউদ্দীনকে পরাজিত করে তিনি বাংলার সিংহাসন দখল করেন।
 
তাজ খানের পর তার ভাই [[সুলায়মান খান কররানী]] বাংলার মসনদে অসীন হন। দিল্লীতে [[হুমায়ুন]] কর্তৃক মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবার পর দলে দলে [[লোদি রাজবংশ|অাফগানআফগান]] অভিবাসীগণ বাংলায় এসে বসবাস শুরু করে। ফলে সুলায়মানের অাধিপত্যআধিপত্য ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। সুলায়মানের সাথে [[উড়িষ্যা|উড়িষ্যার]] সম্রাট মুকুন্দ হরিচন্দনের বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। বিরোধের কারণ বাংলার সিংহাসনের অন্যতম দাবীদার [[ইব্রাহিম শাহ শুরি|ইব্রাহীম সূরীকে]] অাশ্রয়আশ্রয় প্রদান করা। ১৫৬৭ খ্রিষ্টাব্দে সুলায়মান তার পুত্র বায়েজীদ খান ও সেনাপতি [[কালাপাহাড়|কালাপাহাড়কে]] এক বিশাল সেনাবাহিনী সহ উড়িষ্যায় প্রেরণ করেন। রাজা হরিচন্দন মুসলিম বাহিনীর নিকট পরাজয় বরণ করেন। [[পুরী|পুরীসহ]] সমস্ত উড়িষ্যা কররানী রাজ্যের অধীনস্ত হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=253|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref>
 
সুলতান [[দাউদ খান কররানী]] সুলায়মান খান অপেক্ষা অধিকতর স্বাধীনচেতা ও অাগ্রাসীআগ্রাসী মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। মুঘল সম্রাট [[আকবর]] সেনাপতি মুনিম খানকে বাংলা অাক্রমণেরআক্রমণের জন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু মুঘল সেনাপতি পরাজিত হন। ১৫৭৪ সালে সম্রাট আকবর স্বয়ং [[পাটনা]] অবরোধ করেন। ফলে দাউদ খান পরাজিত হন। ১৫৭৬ সালে [[মুঘল]] ও [[বাঙ্গালী]] সেনাবাহিনী [[রাজমহলের যুদ্ধ|রাজমহলের প্রান্তরে]] একটি চূড়ান্ত যদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধের প্রথমদিকে বাঙ্গালী বাহিনী বিজয় অর্জন করে। কিন্তু পরবর্তীতে সেনাপতি কতলু খান ও বিক্রমাদিত্য বিশ্বাসঘাতকতা করলে তারা পরাজিত হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=256|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> ফলে [[বাংলা]], [[বিহার]] ও [[উড়িষ্যা|উড়িষ্যাসহ]] সমগ্র পূর্ব ভারত মুঘল সাম্রাজ্যের পদানত হয়।
 
==মুঘল যুগ==
[[চিত্র:Share of Global GDP.gif|থাম্ব|300x300পিক্সেল|এংগাস মেডিসনের হিসাব অনুযায়ী অর্থনীতির দিক দিয়ে প্রধান অঞ্চলগুলোর ১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিশ্বের জিডিপি এর ক্ষেত্রে অবদান।<ref>Data table in Maddison A (2007), Contours of the World Economy I-2030AD, Oxford University Press, {{ISBN|978-0199227204}}</ref> অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত জিডিপির ক্ষেত্রে ভারত ছিল এক বৃহত্তম অর্থনীতি, যার অর্ধেক মান [[মুঘল বাংলা]] থেকে এসেছিলো।]]
বাংলা সম্রাট [[আকবর|অাকবরেরআকবরের]] সময় মুঘল সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত হয় এবং ঢাকা বাংলার মুঘল প্রদেশের রাজধানী হয়ে ওঠে। এ সময় বাংলা [[সুবাহ বাংলা]] নামে অভিহিত হয়। বাংলার বিভিন্ন সুবাদারগণ বাংলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং বাংলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হন। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সুবাদার ছিলেন ইসলাম খান, মীর জুমলা, শায়েস্তা খান প্রমুখ।
 
===ইসলাম খান===
{{মূল নিবন্ধ|ইসলাম খাঁ}}
 
মুঘল সম্রাট [[জাহাঙ্গীর|জাহাঙ্গীরের]] সময় ১৬০৮ সালে [[ইসলাম খাঁ|ইসলাম খান]] বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি রাজধানী [[ঢাকা]] থেকে বাংলার শাসন কাজ পরিচালনা করতেন, যার নামকরণ করা হয়েছিল জাহাঙ্গীর নগর। বিদ্রোহী রাজা, [[বারো ভুঁইয়া|বারো-ভূঁইয়া]], জমিদার ও আফগান নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল তার প্রধান কাজ। তিনি বারো ভূঁইয়াদের নেতা মুসা খানের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন এবং ১৬১১ সালের শেষের দিকে মুসা খান পরাজিত হন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=265|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> ইসলাম খান যশোরের [[প্রতাপাদিত্য]], বাকলার রামচন্দ্র এবং ভুলুয়া রাজ্যের অনন্ত মানিক্যকে পরাজিত করেছিলেন। এরপর তিনি [[কোচবিহার]], কোচ হাজো এবং [[কাছাড় জেলা|কাছাড়]] রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন, এইভাবে চট্টগ্রাম ব্যতীত সমগ্র বাংলায় অাধিপত্যআধিপত্য স্থাপন করেছিলেন।
 
===মীর জুমলা===
{{মূল নিবন্ধ|মীর জুমলা}}
 
[[মীর জুমলা]] বাংলার একজন বিখ্যাত সুবাদার ছিলেন। তিনি প্রাথমিক জীবনে গোলকুণ্ডায় একজন হীরক ব্যবসায়ী হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন। এ সময়ই তিনি [[কোহিনূর হীরা|কোহীনুর]] নামে বিখ্যাত হীরক খণ্ডের অধিকারী হন। এ হীরক খণ্ডটি পরে তিনি সম্রাট [[শাহজাহান|শাহজাহানকে]] উপহার দেন। তার সময়ে [[কোচবিহার]] (পশ্চিম অাসামআসাম) ও অাসামেআসামে (পূর্ব অাসামআসাম) মুঘল অভিযান প্রেরিত হয়। গহীন জঙ্গল পার হয়ে কোচবিহারে মুঘল বাহিনী প্রবেশ করলে প্রাণভয়ে রাজা প্রাণনাথ রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে যান। কোচবিহার দখলের পর মীর জুমলা অাসামেআসামে অভিযান পরিচালিত করেন। মুঘল বাহিনী অনায়াসে কামতা, [[গোয়ালপাড়া জেলা|গোয়ালপাড়া]], গোহাটী প্রভৃতি সীমান্তবর্তী শহর দখল করে নেয়। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত যুদ্ধে রাজধানী ঝাড়গাও দখলকৃত হয় এবং রাজা জয়ধ্বজ নারায়ণ অাত্মসমর্পণআত্মসমর্পণ করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=278|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref>
 
===শায়েস্তা খান===
{{মূল নিবন্ধ|শায়েস্তা খাঁ}}
 
১৬৬৩ সালে [[শায়েস্তা খাঁ|শায়েস্তা খান]] বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি বাংলার দীর্ঘতম গভর্নর ছিলেন। তার সময়ে বাংলার সুখ ও শান্তি চরমে ওঠে। কথিত রয়েছে তার সময় টাকায় অাটআট মণ চাল পাওয়া যেত। শায়েস্তা খানের বিখ্যাত কীর্তি [[অারাকান|অারাকানেরআরাকানের]] জলদস্যুদের হাত থেকে [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] পুনর্দখল করা। ১৬৬৫ সালে শায়েস্তা খান নিজ পুত্র বুজুর্গ উমেদ খানকে অধিনায়ক মনোনীত করে অারাকানেআরাকানে সৈন্য প্রেরণ করেন। ১৬৬৬ সালের ২৩ ও ২৪ জানুয়ারী সংঘটিত কাঠালিয়ার যুদ্ধে মগ বাহিনী সম্পূর্ণ রূপে বিধ্বস্ত হয়। পরে তারা [[কর্ণফুলী নদী|কর্ণফুলী নদীতে]] প্রতিরোধ গড়ে তুললে মুঘল নৌবহরের কামানের সামনে পরাস্ত হয়। চট্টগ্রামে পুনরায় মুঘল অাধিপত্যআধিপত্য স্থাপিত হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=280|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> শায়েস্তা খান এর নতুন নামকরণ করেন ইসলামাবাদ। চট্টগ্রাম দখল করে মগদের হাতে বন্দী অসংখ্য নর নারীকে মুক্তি দেওয়া হয়।
 
==বাংলার নবাব==
{{মূল নিবন্ধ|বাংলা ও মুর্শিদাবাদের নবাবগণ}}
 
[[মুর্শিদকুলী খান]] ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে [[মুঘল সাম্রাজ্য|মুঘল সাম্রাজ্যের]] পতনের পর সুবাহ বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি রাজধানী মাখসুদাবাদে স্থানান্তর করেন যা তার নাম থেকে [[মুর্শিদাবাদ|মুর্শীদাবাদে]] নামকরণ হয়। তিনি একজন ধর্মনিষ্ঠ, ন্যয়পরায়ণ ও প্রজাদরদী শাসক ছিলেন। তিনি [[শরিয়াহ|ইসলামী শরীয়ত]] অনুসারে কঠোরভাবে দেশ শাসন করতেন। তিনি সপ্তাহে দুবার স্বয়ং বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। তার সময়ে দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে। বাংলা তুর্কী, পারসী, মাজাপাহী, ইংরেজ, ফরাসী প্রভৃতি জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=293|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> তার সময়ে বাংলার [[হুগলী]] একটি বিখ্যাত অান্তর্জাতিকআন্তর্জাতিক বন্দরে পরিণত হয়।
 
মুর্শিদকুলী খানের পর তার জামাতা [[সুজাউদ্দিন খান]] বাংলার নবাব হন। তিনি [[ত্রিপুরা]] অাক্রমণআক্রমণ করেন এবং ত্রিপুরা বাংলার একটি করদ রাজ্যে পরিণত হয়। তিনি [[বীরভূম|বীরভূমের]] শাসক বদিউজ্জামানের বিদ্রোহ দমন করেন। তিনি কঠোরভাবে ইউরোপীয় বণিকদের দস্তক প্রথা ও শুল্ক ফাকি বন্ধ করেন। তার সময়ে [[ব্রিটিশ সাম্রাজ্য|ইংরেজ]], [[ফরাসি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য|ফরাসী]] ও [[পর্তুগীজ সাম্রাজ্য|পর্তুগীজ]] বণিকগণ কোনরূপ শুল্ক ফাকি দিতে পারতেন না। উপবন্তু নবাবকে ইউরোপীয় বণিকদের নজরানা দিয়ে সবসময় সন্তুষ্ট রাখতে হত। [[কাশিমবাজার|কাশিমবাজারের]] ইংরেজ কুঠির অধ্যক্ষ নবাবকে তুষ্ট করার জন্য তিন লক্ষ টাকা নজরানা দেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=295|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref>
 
নবাব [[আলীবর্দী খান|অালীবর্দীআলীবর্দী খানের]] সময় বাংলায় রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তার সময়ে [[মারাঠা|মারাঠাগণ]] বাংলা অাক্রমণআক্রমণ করে। তবে অালীবর্দীআলীবর্দী খান একজন বিখ্যাত মহাবীর ছিলেন। তিনি সুদীর্ঘ দশ বছর মারাঠাদের সাথে সংগ্রামে লিপ্ত থাকেন। এবং বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে সক্ষম হন। তবে তিনি [[উড়িষ্যা]] প্রদেশটি মারাঠাদের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | লেখক=Mahmudul Hasan |তারিখ=2003 | শিরোনাম=History of Bengal |প্রকাশক=Ononna prokashoni | পাতাসমূহ=300|আইএসবিএন=984-477-034-3}}</ref> নবাব অালীবর্দীআলীবর্দী খানের পরে [[সিরাজউদ্দৌলা|সিরাজ-উদ-দৌলা]] বাংলার নবাব হন। তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবীতর্ন হন। প্রথমদিকে [[কলকাতাট যুদ্ধ|কলকাতার যুদ্ধে]] ইংরেজদের পরাজিত করলেও শেষ পর্যন্ত [[পলাশীর যুদ্ধ|পলাশীর যুদ্ধে]] ইংরেজদের হাতে পরাজিত হন। ফলে
বাংলার নবাবী সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
 
২৩২ নং লাইন:
পাকিস্তানী প্রভাব ও স্বৈর দৃষ্টিভঙ্গীর বিরূদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ ছিল [[মাওলানা ভাসানী|মাওলানা ভাসানীর]] নেতৃত্বে [[আওয়ামী মুসলিম লীগ|আওয়ামী মুসলিম লীগের]] প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের যুক্তফ্রন্ট নিবার্চনে বিজয় এবং ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে [[সম্মিলিত বিরোধী দল]] বা 'কপ'-প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দলোনের মাইলফলক। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকারের প্রশ্ন ১৯৫০-এর মধ্যভাগ থেকে উচ্চারিত হতে থাকে।
 
==স্বাধীনতা অান্দোলনআন্দোলন==
 
=== ভাষা আন্দোলন ===
{{মূল নিবন্ধ | বাংলা ভাষা আন্দোলন}}
 
ভাষা আন্দোলন ছিল পূর্ব বাংলার ইতিহাসে একটি সাংস্কৃতিক অান্দোলনআন্দোলন যার উদ্দেশ্য ছিল [[পাকিস্তান]] রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে [[বাংলা ভাষা|বাংলা ভাষার]] স্বীকৃতি অাদায়।আদায়। পাকিস্তানের সরকারী কর্মকাণ্ডে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য এ অান্দোলনআন্দোলন পরিচালিত হয়। মুফতি নাদিমুল কামার আহমেদ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেন। <ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | ইউআরএল=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=288 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের বিভাজনের মাধ্যমে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র সংগঠিত হয়; তার দুটি অঞ্চল [[পূর্ব পাকিস্তান]] এবং [[পশ্চিম পাকিস্তান]] এর মধ্যে ব্যাপক সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক এবং ভাষাগত পার্থক্য বজায় ছিল। এ পার্থক্য পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব বিস্তার করে।
 
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রের একমাত্র জাতীয় ভাষা হিসেবে [[উর্দু|উর্দুকে]] ঘোষণা করে, এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নতুন আইন প্রনয়ণের সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং গণ বিরোধিতার সম্মুখীন হয়ে, সরকার সকল ধরনের গণ সমাবেশ ও প্রতিবাদ অান্দোলনআন্দোলন বেআইনী ঘোষণা করে। [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] ছাত্ররা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মীরা এই আইন অমান্য করে এবং ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে একটি বিরাট অান্দোলনআন্দোলন সংগঠিত করে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | ইউআরএল=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=289 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> ঐদিনে বহু ছাত্র বিক্ষোভকারীদের পুলিশ হত্যা করে এবং এই আন্দোলন তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে।
 
এই হত্যাকাণ্ডের পরে সারা দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ ও অান্দোলনআন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এই অান্দোলনেরআন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল [[বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ|আওয়ামী মুসলিম লীগ]] যার পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় [[আওয়ামী লীগ]]। কয়েক বৎসর ব্যাপী সংঘর্ষ চলার পর, কেন্দ্রীয় সরকার অবশেষে পরাজয় স্বীকার করে এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর, ইউনেস্কো, ২১ ফেব্রুয়ারিকে অানুষ্ঠানিকভাবেআনুষ্ঠানিকভাবে [[আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস]] হিসেবে ঘোষণা করে।<ref>Glassie, Henry and Mahmud, Feroz.2008.Living Traditions. Cultural Survey of Bangladesh Series-II. Asiatic Society of Bangladesh. Dhaka. p.578</ref> বাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারী [[ভাষা আন্দোলন দিবস]], একটি জাতীয় দিবস হিসাবে পরিগণিত হয়। [[কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার|শহীদ মিনার]] স্মৃতিস্তম্ভটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আন্দোলন ও তার শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়।
 
=== রাজনীতিঃ ১৯৫৪-১৯৭০ ===
২৪৭ নং লাইন:
পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ধীরে ধীরে বিরাট পার্থক্য গড়ে ওঠে। পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার একটি সংখ্যালঘু অংশ ছিল, কিন্তু রাজস্ব বরাদ্দ, শিল্প উন্নয়ন, কৃষি সংস্কার ও নাগরিক প্রকল্পসমূহের বৃহত্তম অংশের ভাগীদার ছিল তারাই । পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক পরিষেবাগুলো মূলত [[পাঞ্জাবি জাতি]] দ্বারা অধিকৃত ছিল।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | ইউআরএল=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=292 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref>[[পাকিস্তান সেনাবাহিনী|পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে]] শুধুমাত্র একটি রেজিমেন্ট ছিল বাঙ্গালীদের। অনেক বাঙ্গালী পাকিস্তানীদের [[কাশ্মীর]] ইস্যুতে স্বভাবজাত উৎসাহ বোধ করেনি , কারণ তারা মনে করত এটি পূর্ব পাকিস্তানকে আরও বেশি ঝুঁকির মুখে ফেলবে এবং এটি শেষ পর্যন্ত তার অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দেবে।
 
১৯৬৮ সালের গোড়ার দিকে শেখ মুজিব ও অন্যান্য ৩৪ জন নেতার বিরুদ্ধে [[আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা]] দায়ের করা হয়। অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ ভারতবর্ষের সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা করছিল। যাইহোক এই বিচারের ফলে একটি গণ আন্দোলন সংগঠিত হয় এবং সকল বন্দীদের মুক্ত করার অাহ্বানআহ্বান জানানো হয়। ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে একজন বিদ্রোহী, জহুরুল হককে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর ফলে অান্দোলনআন্দোলন অারওআরও বেগবান হয় এবং পরবর্তীতে ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। গণআন্দোলন পরবর্তীকালে [[ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান|'৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে]] রূপ লাভ করে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | ইউআরএল=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=293 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref>
 
১৯৬৯ সালের ২৫শে মার্চ [[আইয়ুব খান]] জেনারেল [[ইয়াহিয়া খান]] কে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। পরবর্তীকালে নতুন রাষ্ট্রপতি দেশের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্থগিত করে দেন। যাইহোক কিছু সংখ্যক ছাত্র গোপনীয়তার সাথে আন্দোলন বজায় রাখে। সিরাজুল আলম খান এবং কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বাধীন '১৫ ফেব্রুয়ারি বাহিনী' নামে একটি নতুন দল গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে, ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ৫ই অক্টোবরের জন্য একটি নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=293 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> পশ্চিমের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে সাফল্যজনক নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানে অাওয়ামীআওয়ামী লীগকে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত করে।
 
=== স্বাধীনতার প্রস্তুতি ===
 
অাওয়ামীআওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের বেশিরভাগ অংশে [[পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০|১৯৭০-৭১ সালের নির্বাচনে]] জয়লাভ করে এবং পাকিস্তান সরকার সাংবিধানিক প্রশ্নে অাওয়ামীআওয়ামী লীগের সাথে অালোচনাআলোচনা শুরু করে। কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রদেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন হয়, সেইসাথে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হয়। তবে ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ পাকিস্তানী রাষ্ট্রপতি [[ইয়াহিয়া খান]] পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দেন, যা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভের সূচনা করে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=298 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের এক ছাত্র নেতা [[আ.স.ম. আবদুর রব|অা স ম আবদুর রবের]] নির্দেশে বাংলাদেশের নতুন ([[বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা|জাতীয় পতাকা]] উত্থাপিত হয়।
 
অান্দোলনকারীআন্দোলনকারী ছাত্রনেতারা দাবী করে যে [[শেখ মুজিবুর রহমান]] অবিলম্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করুন, কিন্তু মুজিবুর রহমান এই দাবীতে সম্মত হতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। বরং তিনি ৭ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য একটি জনসভায় তার পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ৩রা মার্চ ছাত্রনেতা শাহজাহান সিরাজ স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের নির্দেশে [[পল্টন ময়দান|পল্টন ময়দানে]] এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সামনে স্বাধীনতার ইস্তেহার পাঠ করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh| প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=302 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> ৭ মার্চ তারিখে [[সোহরাওয়ার্দী উদ্যান|সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে]] একটি জনসাধারণের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর চলমান স্বাধীনতা অান্দোলনেরআন্দোলনের অগ্রসরতা সম্পর্কে জন সাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেন।
 
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরবর্তীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৭ই মার্চ এর ভাষণে, পাকিস্তানী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি অাসন্নআসন্ন যুদ্ধের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানান।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=302 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> যদিও তিনি সরাসরি স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করেননি, কারণ তখনও অালোচনাআলোচনা চলছিল, তিনি তার শ্রোতাদেরকে কোনও এক সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত থাকার জন্য অাহ্বানআহ্বান জানান। শেখ মুজিবুর রহমানের [[সাতই মার্চের ভাষণ|৭ মার্চের ভাষণকে]] স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চাবিকাঠি বলে মনে করা হয়, এবং এ ভাষণের বিখ্যাত উক্তি ছিল:
 
:: '' এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম অামাদেরআমাদের মুক্তির সংগ্রাম। ''
 
=== স্বাধীনতার যুদ্ধ ===
২৬৬ নং লাইন:
২৬ মার্চের প্রথমার্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সামরিক অভিযান শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং রাজনৈতিক নেতারা বহুবিভক্ত হয়ে যান। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার আগে, শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বাক্ষরিত নোট প্রেরণ করেন যা [[বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র]] হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। এই নোটটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস এর বেতার ট্রান্সমিটার দ্বারা প্রচারিত হয়। বাংলাদেশী আর্মি অফিসার মেজর [[জিয়াউর রহমান]] কালুরঘাট রেডিও স্টেশন দখল করেন এবং ২৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন। <ref name="bdnews24">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://arts.bdnews24.com/?p=2769|প্রকাশক=arts.bdnews24.com|শিরোনাম=arts.bdnews24.com » সংযোজনস্বাধীনতার ঘোষণা: বেলাল মোহাম্মদের সাক্ষাৎকার|সংগ্রহের-তারিখ=6 January 2017}}</ref>
 
সামরিক উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে ১১ জন কমান্ডারের অধীনে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=316 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> এই অাঞ্চলিকআঞ্চলিক বাহিনীগুলোর সাথে সাথে যুদ্ধের জন্য অারওআরও তিনটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়ঃ [[জেড ফোর্স (বাংলাদেশ)|জেড ফোর্স]], [[এস ফোর্স (বাংলাদেশ)|এস ফোর্স]] এবং [[কে ফোর্স (বাংলাদেশ)|কে ফোর্স]]। এই তিনটি বাহিনীর নাম উক্ত বাহিনীর কমান্ডারদের নামের প্রথম অক্ষর থেকে উদ্ভূত হয়েছে। মেহেরপুর সরকার কর্তৃক প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ বেশিরভাগ অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল, যা ভারত কর্তৃক সমর্থিত ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং বাংলার [[মুক্তি বাহিনী]] এর মধ্যে যুদ্ধের সময় আনুমানিক এক কোটি বাঙালী, প্রধানত হিন্দু, ভারতের অাসামআসাম, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আশ্রয় নেয়।
 
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি ভারতের সহানুভূতি ছিল এবং ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর [[ভারত]] বাংলাদেশীদের পক্ষে যুদ্ধ অংশগ্রহণ করে। এর ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুই সপ্তাহের একটি সংক্ষিপ্ত এবং ব্যাপক বিধ্বংসী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট জেনারেল [[আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী|এ.এ.কে. নিয়াজী]] এবং পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাধ্যক্ষগণ ভারত ও বাংলাদেশের মিত্রবাহিনীর নিকট অাত্মসমর্পণআত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকালে শুধুমাত্র কয়েকটি দেশ নতুন রাষ্ট্রকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের]] পর পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৯০ হাজারেরও বেশি পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পন করে।<ref name="dailytimes1912005">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=54 Indian PoWs of 1971 war still in Pakistan |ইউআরএল=http://www.dailytimes.com.pk/default.asp?page=story_19-1-2005_pg7_28 |সংবাদপত্র=DailyTimes |তারিখ=19 January 2005 |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://archive.is/20121221143602/http://www.dailytimes.com.pk/default.asp?page=story_19-1-2005_pg7_28 |আর্কাইভের-তারিখ=21 December 2012 |সংগ্রহের-তারিখ=11 October 2011 |অকার্যকর-ইউআরএল=yes |df=dmy-all }}</ref><ref name=BBC1971>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|শিরোনাম=The 1971 war|ইউআরএল=http://news.bbc.co.uk/hi/english/static/in_depth/south_asia/2002/india_pakistan/timeline/1971.stm |কর্ম=BBC News |সংগ্রহের-তারিখ=11 October 2011}}</ref>
 
==গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ==
২৭৫ নং লাইন:
 
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সরকার। এই সরকার দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা জারি করে, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে সংবিধান প্রণয়ন করে এবং মৌলিক নীতিমালা হিসাবে সমতা, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতি প্রতিষ্ঠা করে। এর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ এবং সামরিক সর্বাধিনায়ক ছিলেন এম এ জি ওসমানী। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং মুহাম্মদ মনসুর আলী। নবনির্মিত [[বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস]] এর সদস্যগণ এবং পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসের স্বপক্ষত্যাগী সদস্যদের সমন্বয়ে এই সরকার গঠিত হয়। এই সরকারে আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী এবং রেহমান সোবহান এর নেতৃত্বে এটি একটি সুদক্ষ কূটনৈতিক সংগঠনও ছিল। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এগারোটি সেক্টর কমান্ডারের মধ্যে বিভক্ত ছিল; যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশারফ,কে.এম. শফিউল্লাহ প্রমুখ।<ref name="thedailystar">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.thedailystar.net/op-ed/genesis-bangladeshs-constitution-1209718|প্রকাশক=web.archive.org|শিরোনাম=Genesis of Bangladesh's Constitution &#124; The Daily Star|সংগ্রহের-তারিখ=6 January 2017|অকার্যকর-ইউআরএল=yes|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20161226094413/http://www.thedailystar.net/op-ed/genesis-bangladeshs-constitution-1209718|আর্কাইভের-তারিখ=26 December 2016|df=dmy-all}}</ref><ref name="banglapedia">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://en.banglapedia.org/index.php?title=Mujibnagar_Government|প্রকাশক=en.banglapedia.org|শিরোনাম=Mujibnagar Government – Banglapedia|সংগ্রহের-তারিখ=6 January 2017}}</ref>
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য ভারত অান্তরিকভাবেআন্তরিকভাবে সকল ধরনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা প্রদান করে। নির্বাসিত এই সরকারের রাজধানী ছিল [[কলকাতা]]। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত চূড়ান্ত যুদ্ধের দুই সপ্তাহের মধ্যে হস্তক্ষেপ করে পাক সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করে।
 
====শেখ মুজিব প্রশাসন====
২৮১ নং লাইন:
বামপন্থী দল [[আওয়ামী লীগ]] যারা ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জিতেছিল, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর প্রথম সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ নেতা [[শেখ মুজিবুর রহমান]] ১৯৭২ সালের ১লা জানুয়ারী বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধাণমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত হন এবং ব্যাপকভাবে দেশটির স্বাধীনতার নায়ক এবং জাতির পিতা হিসেবে গণ্য হন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=324 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> তার শাসনামলে বাঙালী জাতীয়তার গঠন ছিল মূলত ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে। ১৯৭২ সালে [[কামাল হোসেন]] এর রচিত [[বাংলাদেশের সংবিধান|সংবিধানটি]] মূলত একটি উদার গণতান্ত্রিক [[সংসদীয় প্রজাতন্ত্র]] গঠন করে, যার ওপর সমাজতন্ত্রের কিছুটা প্রভাব ছিল।
 
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, মুজিব এবং ভারতীয় প্রধাণমন্ত্রী [[ইন্দিরা গান্ধী]] ২৫-বছর মেয়াদী ইন্দো-বাংলাদেশী বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও শান্তি চুক্তির স্বাক্ষর করেন। আমেরিকান ও [[সোভিয়েত ইউনিয়ন|সোভিয়েত]] নেতাদের সাথে আলোচনা করার জন্য ওয়াশিংটন ডিসি ও মস্কোতে মুজিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের দিল্লী চুক্তিতে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং শান্তির জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করে।<ref name="ReferenceC">{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=325 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> এই চুক্তিটি পাকিস্তানে অাটকেআটকে পড়া বাঙালী কর্মকর্তাদের এবং তাদের পরিবারদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত করে। তার পাশাপাশি ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পথ প্রশস্ত করে।
 
স্থানীয়ভাবে, মুজিবের শাসনামলে [[একনায়কতন্ত্র|কর্তৃত্ববাদী]] শাসন ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান হয়ে ওঠে। প্রতিক্রিয়াশীল সমাজতান্ত্রিক দল [[জাসদ]] এর একটি বিদ্রোহ ছিল, পাশাপাশি বাণিজ্যগোষ্ঠী এবং রক্ষণশীল শক্তিবর্গের একটি আন্দোলন ছিল, যারা মনে করত আওয়ামী লীগ সমগ্র মুক্তি অান্দোলনেরআন্দোলনের মুনাফা একচেটিয়াভাবে গ্রহণ করে। বিক্ষোভ দমনের জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে তিন মাসের জরুরী অবস্থা জারি করেন। তিনি [[জাতীয় রক্ষীবাহিনী|জাতীয় রক্ষী বাহিনী]] গঠন করেন, যা [[মানবাধিকার|মানবাধিকার অপব্যবহারের]] ব্যাপারে অভিযুক্ত হয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনেকেও জাতীয় রক্ষী বাহিনী দ্বারা অসন্তুষ্ট হয়েছিল। <ref name="ReferenceC"/>
 
===সামরিক অভ্যুত্থান ও প্রেসিডেন্সিয়াল শাসন===
২৯০ নং লাইন:
জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল বিচারপতি সায়েমের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি এবং [[প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক|সিএমএলএ]] এর পদ গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরে জিয়া তার রাষ্ট্রপতিত্ব ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষকে গণতান্ত্রিক রূপ প্রদানের জন্য একটি রাজনৈতিক দল, [[বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল]] (বিএনপি) গঠন করেন। দেশীয় মুসলিম ঐতিহ্যের উপর জোর দিয়ে জিয়া একটি [[বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ]] ধারণার প্রথাকে তুলে ধরেন।<ref name="ReferenceD">{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=332 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> ১৯৭৯ সালে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিএনপি ভূমিধ্বসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পরিণত হয়।
 
রাষ্ট্রপতি জিয়া সংবিধানে [[মুক্ত বাজার|মুক্ত বাজার অর্থনীতি]] পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন, সমাজতন্ত্রকে "অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার" হিসেবে পুনঃসংজ্ঞায়িত করেন এবং একটি বৈদেশিক নীতিমালা প্রণয়ন করেন যা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং [[সার্ক|দক্ষিণ এশীয় অাঞ্চলিকআঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার]] সাথে সহযোগিতার ওপর জোর প্রদান করে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার অধীনে দেশে দ্রুত অর্থনীতি ও শিল্পায়নের উদ্যোগ বৃদ্ধি পায়। সরকার দেশের প্রথম [[মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল|রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল]] গুলো তৈরি করে, একটি জনপ্রিয় খাদ্য-কর্মসূচী পরিচালনা করে, খামারগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় এবং বেসরকারী খাতের উন্নয়নকে উৎসাহিত করা হয়। <ref name="ReferenceD"/>
 
জিয়া তার সরকারের বিরুদ্ধে একুশটি অভ্যুত্থানের মোকাবিলা করেছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল বিমানবাহিনী দ্বারা। তার এক সময়কার সহকারী কর্নেল [[আবু তাহের|আবু তাহেরকে]] দেশদ্রোহের চেষ্টায় গ্রেফতার করা হয় এবং মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীতে তার অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে অনেকেরই এই রকম পরিণতি দেখা যায়। তবে চূড়ান্ত অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টায় ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড ঘটে। মেজর জেনারেল [[আবুল মঞ্জুর]] -এর প্রতি বিশ্বস্ত সৈন্যদের হাতে জিয়া নিহত হন, যখন ১৯৮১ সালের ৩০ মে তারা চট্টগ্রামে তার সরকারী বাসভবনে হানা দেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=333 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল [[হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ]] এই বিদ্রোহকে দমন করেন।
২৯৬ নং লাইন:
==== সাত্তার প্রশাসন ====
 
জিয়াউর রহমানের পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন উপরাষ্ট্রপতি [[আবদুস সাত্তার (রাষ্ট্রপতি)|আব্দুস সাত্তার]]। অাবদুসআবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত হন, যদিও তার প্রতিদ্বন্দ্বী [[কামাল হোসেন]] তাকে কারচুপির জন্য অভিযুক্ত করেন। ক্ষমতাসীন বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে সাত্তারের প্রেসিডেন্সী মন্ত্রিসভার পুনর্বিন্যাসন করে ও উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন [[মির্জা নূরুল হুদা]]।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=334 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> উত্তরপূর্ব ভারতে বিদ্রোহ এবং বার্মায় মুসলিম সহিংসতাগুলোর প্রেক্ষাপটে একটি [[সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ|জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ]] গঠন করা হয়। অাবদুসআবদুস সাত্তার বয়স্কতার কারণে স্বাস্থ্য সমস্যার ভোগেন। ১৯৮২ সালের সামরিক অভ্যুত্থান রাষ্ট্রপতি সাত্তার এবং তার বেসামরিক সরকারকে বহিষ্কার করে। বাংলাদেশের সামরিক অভ্যুত্থানের পিছনে কারণ হিসাবে খাদ্য সংকট, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক অপব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
 
==== দ্বিতীয় সামরিক আইন এবং এরশাদ প্রশাসন ====
৩০২ নং লাইন:
সাত্তারকে প্রধান বিচারপতি [[আফম আহসানউদ্দিন চৌধুরী|এ এফ এম আহসানউদ্দিন চৌধুরী]] পদচ্যুত করেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল [[হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ]] সামরিক আইন ঘোষণা করেন এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। তিনি মন্ত্রিপরিষদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ডেপুটি মার্শাল ল' অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধানদের নিয়োগ করেন। এরশাদের মার্শাল ল' শাসনের অধীনে রাজনৈতিক নিপীড়ন ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। যাইহোক, সরকার প্রশাসনিক সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি সুসংঘবদ্ধ কাঠামো প্রণয়ন করে। দেশের আঠার জেলাকে ৬০ টি জেলায় বিভক্ত করা হয়। দেশে উপজেলা ব্যবস্থাও প্রবর্তন করা হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh |প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=336 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref>
 
এরশাদ [[সোভিয়েত ইউনিয়ন|সোভিয়েত]] বিরোধী জোটের পক্ষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি আরও জোরদার করেন। ১৯৮৩ সালে এরশাদ অানুষ্ঠানিকভাবেআনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। তার প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে ছিল মূলত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অর্থনীতি (৭০% পর্যন্ত শিল্প রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছিল) এবং হালকা উৎপাদন, কাঁচামাল এবং সংবাদপত্র সহ ভারী শিল্পে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা। বিদেশী কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের শিল্পে বিনিয়োগ করতে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং উৎপাদন রক্ষা করার জন্য কঠোর ও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh |প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=337 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অান্দোলনেরআন্দোলনের জন্য জন্য মৃত্যুদণ্ডের অাইনআইন জারি করা হয় এবং সমস্ত রাজনৈতিক দল ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়।
 
এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন এবং ১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন।
সব প্রধান বিরোধী দল এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে এবং দাবী করে যে সরকার স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন অায়োজনআয়োজন করতে অসমর্থ হয়েছে। ক্ষমতাসীন [[জাতীয় পার্টি (এরশাদ)|জাতীয় পার্টি]] ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৫১ টি আসন লাভ করে। ১৯৮৮ সালের জুন মাসে সংসদ সহস্রাধিক বিল পাস করে, একটি বিতর্কিত সংশোধনীতে ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ধর্ম এবং ঢাকার বাইরের শহরগুলিতে উচ্চ আদালতের বেঞ্চ গঠন করতে বিধান জারি হয়। যদিও ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে বজায় থাকে, তবে ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণের বিধান সুপ্রীম কোর্টের রায় কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। <ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=337 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref>
 
===গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও বর্তমান যুগ===
৩১১ নং লাইন:
==== প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার (১৯৯০-১৯৯১) ====
 
এরশাদ সামরিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত [[গণতন্ত্র|গণতন্ত্রপন্থী]] আন্দোলন সমগ্র দেশকে অাচ্ছাদিতআচ্ছাদিত করে এবং এতে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত উভয় শ্রেণীর জনগণ অংশগ্রহণ করে। প্রধান বিচারপতি [[শাহাবুদ্দিন আহমেদ]] ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন এবং দেশে প্রথম [[তত্ত্বাবধায়ক সরকার]] গঠন করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=338 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> শাহাবুদ্দিন এরশাদকে গ্রেফতার করেন এবং ১৯৯১ সালে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হন।
 
==== খালেদা প্রশাসন (১৯৯১-১৯৯৬) ====
 
মধ্য ডানপন্থী দল [[বিএনপি]] বহুসংখ্যক অাসনেআসনে জয়লাভ করে এবং ইসলামী দল [[বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী|জামায়াত-ই-ইসলামির]] সমর্থনে সরকার গঠন করে, জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী [[খালেদা জিয়া|খালেদা জিয়াকে]] প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। জাতীয় পার্টি-এর প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে বন্দী ছিলেন। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=339 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> সংবিধানে আরও বেশি পরিবর্তন এনে সাংসদরা সম্মিলিতভাবে একটি সংসদীয় পদ্ধতি পুনর্নির্মাণ করেন এবং বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের মৌলিক সংবিধান অনুযায়ী অাবারআবার প্রধানমন্ত্রী শাসিত শাসন ব্যবস্থায় ফিরে আসে।
 
অর্থমন্ত্রী [[সাইফুর রহমান]] একটি উদার অর্থনৈতিক সংস্কারের ধারাবাহিকতা শুরু করেন, যা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এবং [[ভারত]], [[পাকিস্তান]] ও [[শ্রীলঙ্কা|শ্রীলঙ্কায়]] একটি মডেল হিসেবে দেখা হয়। <ref name="dhakatribune">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.dhakatribune.com/opinion/op-ed/2016/09/06/remembering-budget-wizard/|প্রকাশক=dhakatribune.com|শিরোনাম=Remembering the budget wizard &#124; Dhaka Tribune|সংগ্রহের-তারিখ=6 January 2017}}</ref> মার্চ ১৯৯৪ সালে একটি সংসদীয় উপনির্বাচনে বিতর্ক দেখা দেয়, যাতে বিরোধী দল দাবী করে যে সরকার অবৈধ উপায়ে ক্ষমতায় এসেছে। সমগ্র বিরোধী দল অনির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সংসদ বয়কট করে। বিরোধীদল এও দাবী করে যে খালেদা জিয়ার সরকার পদত্যাগ করুক এবং তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য, বার বার সাধারণ হরতালের একটি কর্মসূচি প্রনয়ণ করে।
৩২৩ নং লাইন:
==== দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার (১৯৯৬) ====
 
প্রধান বিচারপতি [[মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান]] দেশের সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অভিষিক্ত হন। এই সময়ে, রাষ্ট্রপতি [[আবদুর রহমান বিশ্বাস]] সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল [[আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম|অাবুআবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমকে]] রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বরখাস্ত করেন, যার ফলে সেনাবাহিনীর মধ্যে অাকস্মিকআকস্মিক অভ্যুত্থান দেখা দেয়।<ref name="ReferenceE"/> বরখাস্ত সেনা প্রধান নাসিম বগুড়া, ময়মনসিংহ ও যশোরের সৈন্যদলসহ ঢাকায় যাওয়ার জন্য তার অনুগত বাহিনীকে নির্দেশ দেন।
 
তবে সাভারের সামরিক কমান্ডার দেশের রাষ্ট্রপতির পক্ষে যোগদান করেন এবং রাজধানী ও তার আশেপাশের মহাসড়কে ট্যাংক মোতায়েন করেন, এবং অভ্যুত্থান বাহিনীকে দমন করার জন্য অপারেশনের অংশ হিসেবে ফেরী চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে লেঃ জেনারেল নাসিমকে ঢাকা সেনানিবাসে গ্রেপ্তার করা হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh| প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=342 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> প্রধান উপদেষ্টা সফলভাবে ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন তারিখে একটি স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন। আওয়ামী লীগ সংসদে ১৪৬ টি আসনে জয়লাভ করে এবং একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিএনপি ১১৬ টি আসন এবং জাতীয় পার্টি ৩২ টি আসন লাভ করে।
৩৩১ নং লাইন:
[[শেখ হাসিনা]] ১৯৯৬ সালের জুন মাসে "জাতীয় ঐকমত্যের সরকার" নামক একটি সরকার গঠন করেন, যার মধ্যে ছিল জাতীয় পার্টির একজন মন্ত্রী এবং জাতীয় সামাজতান্ত্রিক দল ([[জাসদ]]) এর একজন মন্ত্রী।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=343 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> জাতীয় পার্টি কোনও আনুষ্ঠানিক জোটে প্রবেশ করেনি এবং পার্টির প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে লীগ সরকারের কাছ থেকে তার সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে কেবল তিনটি দলেরই ১০ জনের অধিক সদস্য নির্বাচিত হয়: এই তিনটি দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে ১৯৯৭ সালের জানুয়ারীতে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।
 
আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীন নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে, ১৯৯৬ সালের জুন নির্বাচন মুক্ত এবং ন্যায্য ছিল এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপি এই নতুন সংসদে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়। হাসিনা প্রশাসন পরিবেশগত ও আন্তঃজাতিগত চুক্তির ক্ষেত্রে মাইলফলক কৃতিত্ব অর্জন করে। এগুলো হল ভারতের সাথে গঙ্গার পানি ভাগ চুক্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত বিদ্রোহীদের সাথে [[পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি|শান্তি চুক্তি]]। <ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh| প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=344 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় এক বিরল ও অভূতপূর্ব ত্রিপক্ষীয় সম্মেলনের আয়োজন করেন, যাতে অংশগ্রহণ করেন- ১. পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী [[নওয়াজ শরীফ]], ২. ভারতের প্রধানমন্ত্রী [[আই. কে. গুজরাল]] এবং ৩.অামেরিকারআমেরিকার রাষ্ট্রপতি [[বিল ক্লিনটন]]।
 
১৯৯৯ সালের জুন মাসে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো আবার সংসদে উপস্থিত হতে বিরত থাকে। ১৯৯৭ সালে "ছয় দিনের" [[হরতাল]] থেকে শুরু করে ১৯৯৯ সালে "২৭ দিনের" হরতাল পর্যন্ত; বিরোধীদলের পক্ষ থেকে ব্যাপক সংখ্যক হরতালের সৃষ্টি হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=346 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> ১৯৯৯ সালের শুরুতে গঠিত চার-দলীয় বিরোধী জোট ঘোষণা করে যে, নির্বাচনী বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারী নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ না পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এবং এর ফলে বিএনপি পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯ সালে পৌর পরিষদের নির্বাচন, বেশ কয়েকটি সংসদীয় উপনির্বাচন এবং ২০০০ সালের [[চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন]] নির্বাচন বর্জন করে।
৩৪৫ নং লাইন:
খালেদা জিয়ার প্রশাসন উন্নত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সেই সাথে দুর্নীতির অভিযোগ এবং দেশের [[ধর্মনিরপেক্ষতা|ধর্মনিরপেক্ষ]] ও রক্ষণশীল শক্তির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষের দ্বারা চিহ্নিত হয়। [[উইকিলিকস]] কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত আমেরিকান কূটনৈতিক মিডিয়াগুলোতে তার ছেলে [[তারেক রহমান|তারেক রহমানকে]] "গোপনীয়তার জন্য বিখ্যাত এবং বারংবার সরকারি ক্রয়কর্ম ও রাজনৈতিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষের জন্য" বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। <ref name="wikileaks">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://wikileaks.org/plusd/cables/08DHAKA1143_a.html|প্রকাশক=wikileaks.org|শিরোনাম=Cable: 08DHAKA1143_a|সংগ্রহের-তারিখ=6 January 2017}}</ref> আফগানিস্তানে [[তালেবান|তালেবানদের]] উৎখাত হওয়ার পর বাংলাদেশ ত্রাণ তৎপরতার ক্ষেত্রে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়, যার মধ্যে "ব্র্যাক" যুদ্ধবিমুখ দেশটির বৃহত্তম উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়।
 
হাই প্রোফাইলের একটি সিরিজ গুপ্তঘাতক গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় নেতাদের হত্যার হুমকি প্রদান করে। ২০০৪ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামান্যর জন্য ঢাকায় গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষা পান। ২০০৫ সালে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা চালায়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh| পাতা=351 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> লীগ বিএনপি ও জামায়াতকে [[বাংলাদেশে ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণ|জঙ্গীবাদের]] উত্থানের সাথে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চচলীয় বিদ্রোহীদের বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে, এমন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভারতের সাথে সম্পর্ক প্রকট অাকারআকার ধারণ করে। খালেদা জিয়া [[চীন|চীনের]] সাথে কৌশলগত অংশীদারত্ব প্রকাশ করেন এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
 
==== চতুর্থ তত্ত্বাবধায়ক সরকার (২০০৬-২০০৮) ====
৩৫২ নং লাইন:
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ডঃ [[ফখরুদ্দীন আহমদ]] তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। <ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh| প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=354 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref>
 
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করে, যার মধ্যে ১৬০ জন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং আমলাকে গ্রেফতার করা হয়। এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাসহ খালেদা জিয়ার দুই ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=355 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিক্ষোভকারীগণ ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবী জানায়, কিন্তু কারফিউ দ্বারা অান্দোলনআন্দোলন দমন করা হয়। ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা মুক্তি পান। জরুরী অবস্থা দুই বছর ধরে অব্যাহত থাকে। ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে, যার মধ্যে জাতীয় পার্টি
 
==== হাসিনা প্রশাসন (২০০৯-বর্তমান) ====
 
কার্যনির্বাহী সভার দুই মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারকে [[২০০৯-এর বিডিআর বিদ্রোহ|বিডিঅারবিডিআর বিদ্রোহের]] মোকাবেলা করতে হয়, যা সেনা বিভাগের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহীদের হিংস্রতা ও ক্রুদ্ধ ব্যক্তিদের মোকাবেলা করে শেখ হাসিনার ব্যাপক সফলতার পরিচয় দেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh| প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=356| আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> ১৯৭১ সালে গণহত্যার অন্যতম কারিগর পাকিস্তানপন্থী নেতাদের বিচারের জন্য তিনি বিতর্কিত [[আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল]] গঠন করেন। ট্রাইব্যুনাল তার সুুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতার ব্যাপারে সমালোচনার সম্মুখীন হয়। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতা, বাংলাদেশ দলের স্বাধীনতার বিরোধিতা ও গণহত্যার সময় পাকিস্তানকে সহায়তার অভিযোগে অভিযুক্ত।
 
২০১০ সালে সংবিধানের মৌলিক নীতি হিসেবে বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। অান্তর্জাতিকআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে জনমত পরিচালিত করে, যা প্রকাশিত হয় মার্চ [[২০১৩-র শাহবাগ আন্দোলন|২০১৩ শাহবাগ প্রতিবাদের]] মাধ্যমে। মে ২০১৩ সালে [[হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ|হেফাজত-ই-ইসলামের]] নেতৃত্বে একটি ইসলামপন্থী সংগঠনও পাল্টা বিরাট সমাবেশ পরিচালনা করে। ২০১৩ সালে এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর এবং পাশ্চাত্যবাসী, [[ব্লগ|ব্লগার]], [[প্রকাশনা|প্রকাশক]] ও [[নাস্তিক্যবাদ|নাস্তিকদের]] ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। [[ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট]] অনেক গুলো হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে, যদিও হাসিনা সরকার স্থানীয়দের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দায়ী করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh| প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=358 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref>
 
অাওয়ামীআওয়ামী লীগ ও বিনপির মধ্যে সংঘাতকে প্রায়ই বেগমদের যুদ্ধ নামে অভিহিত করা হয়। হাসিনা সরকার বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অাইনআইন বিলুপ্ত করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে একে নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে অাওয়ামীআওয়ামী লীগের পক্ষে দুর্নীতিযুক্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়। লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ জীবনে সহিংসতা বেড়ে যায়। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে হিংস্রতম নির্বাচন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Van Schendel |প্রথমাংশ=Willem |তারিখ=2009 | শিরোনাম=A History of Bangladesh | প্রকাশক=Cambridge University Press | পাতা=359 | আইএসবিএন=9780521861748}}</ref> ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে বিএনপি বয়কট করে ; যেখানে জামায়াতকে নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক মিডিয়ায় নির্বাচনের সমালোচনা করা হয়। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেন।
 
== তথ্যসূত্র ==