ষড়যন্ত্র তত্ত্ব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১ নং লাইন:
'''ষড়যন্ত্র তত্ত্ব''' ({{lang-en|Conspiracy theory}}) মূলত কোন ঘটনার এমন ব্যাখ্যাকে বোঝায়, যা সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া কোন গভীর ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করে থাকে, যার পেছনে সরকার (রাষ্ট্র) বা ক্ষমতাশীল কোন সংগঠনকে দায়ী করা হয়, এই যুক্তিতে যে তারা এর মাধ্যমে অসৎ উপায়ে এবং ক্ষতিকর পন্থায় নিজেদের ফায়দা লাভ করতে চায়। এরকম তত্ত্বগুলির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এগুলি এমন প্রকল্প বা অবস্থা সৃষ্টি করে যা ইতিহাস এবং ক্ষেত্রবিশেষ সাধারণ বোধের (সরল সত্যতার) সাথে সাংঘর্ষিক। এই পদটি নিন্দাজ্ঞাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।
 
বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাইকেল বার্কুন এর মতে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো যে দর্শন এর উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে তা হল যে মহাবিশ্ব কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী চলমান। এটি তিনটি মুলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত- ১. কোনকিছু দৈবভাবে ঘটে না। ২. যা আপাত প্রতীয়মান তা সত্য নয়। ৩. সবকিছুই আন্তঃসম্পর্কযুক্ত। বার্কুন এর মতে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এ তত্ত্বগুলো সময়ের প্রয়োজনে এদের বিপরীতে আসতে থাকা প্রমানগুলোরপ্রমাণগুলোর সাথে নিজেদের কিছুটা পরিমার্জন করে খাপ খাইয়ে নেয়। এতে করে এমন একটি বদ্ধ ব্যবস্থার সৃষ্টি হয় যা একে যাচাই এর অযোগ্য করে তুলে। তাই বার্কুন এর মতে, এই ব্যপারটি "প্রমান অপেক্ষা বিশ্বাস সাপেক্ষ"।
 
== পদটির ব্যবহার ==
৯ নং লাইন:
অক্সফোর্ড অভিধান অনুযায়ী, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হচ্ছে "কোন ঘটনা ঘটার পেছনে বিদ্যমান জটিল কোন ষড়যন্ত্র, যা নির্দিষ্ট কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের মিলিত চক্রান্তের ফসল, বিশেষতঃ যেথায় ধরে নেয়া হয় যে, কতিপয় গুপ্ত তবে প্রভাবশালী গোষ্ঠী (যাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক এবং শোষণমুলোক) একটি ব্যখাহীন ঘটনার পেছনে দায়ী।" এর সাথে অক্সফোর্ড সর্বপ্রথম এই পদটির ব্যবহারকারি হিসেবে ''দি এমেরিকান হিস্ট্রিকাল রিভিউ''এর ১৯০৯ সালের একটি নিবন্ধের উদ্ধৃতি দেয়।
 
জন আইতোর ''টুয়েনটিথ সেঞ্চুরি ওয়ার্ডস'' এর মতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পদটি শুরুতে নিরপেক্ষ অর্থে ব্যবহৃত হলেও এটি নিন্দাসূচক অর্থে সংজ্ঞায়িত হওয়া শুরু করে ১৯৬০ এর মধ্যের দিকে; এই কারনে যে, এটি প্রচার এর পেছনে এক প্রকার ভ্রম কাজ করে, যা কোন ঘটনার পেছনে প্রভাবশালী, বিদ্বেষ্পরায়ণ তবে গুপ্ত কোন সংস্থাকে কল্পনা করতে বাধ্য করে। ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি এর অধ্যাপক ল্যান্স ডীহ্যাভেন স্মিথ এর ২০১৩ সালে প্রকাশিত বই ''কন্সপিরেসি থিওরি ইন এমেরিকা'' অনুযায়ী '''কন্সপিরেসি থিওরি''' পদটি ১৯৬০ সালে প্রথম সি আই এ দ্বারা ব্যবহৃত হয় ,জন এফ কেনেডি এর গুপ্তহত্যার সাথে জড়িত যাবতীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কে অসাড় প্রমানপ্রমাণ করতে । তবে স্টকটন ইউনিভার্সিটি এর সহকারি অধ্যাপক রবার্ট ব্লাস্কেউইয এর ভাষ্যানু্যায়ী এমন দাবি নতুন নয়, বরং অন্তত ১৯৯৭ সাল অবধি থেকে চলে এসেছিল এবং ডিহ্যাভেন স্মিথ এর সাম্প্রতিক প্রচার এর কারনে "ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকগণ তার কথাটিকে প্রমান হিসেবে ধরে নিয়ে একে উদ্ধৃত করেন ।" ব্লাস্কেউইয পরবর্তিতে এ নিয়ে গবেষণা করে দেখেন যে, এই নামকরনটি কখনই নিরপেক্ষ অর্থে ব্যবহৃত হয় নি বরং এটি দীর্ঘসময় ধরেই কোন ঘটনার প্রেক্ষাপট হিসেবে চরম কোন আন্দাজ বা অবোধ্য অনুমান কল্পনা করাকে বোঝাতে নিন্দনীয় অর্থে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে ১৮৭০ সাল অব্দি থেকে।
 
স্যান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর রেবেকা মুর ''জোন্সটাউন ম্যাসাকার'' এর ঘটনা নিয়ে যে ঘোর অনুমানগুলো চলতে থাকে, যেমন- সি আই এ এর বিরুদ্ধে মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রঙ্কারী পরীক্ষা চালনা করার দাবি ইত্যাদিগুলোকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে অভিহিত করেন, যা অনেকের মধ্যে ক্ষোভ এর সঞ্চার করে। এর প্রতিউত্তরে তিনি বলেন," তারা আমার প্রতি ক্ষুব্ধ কেননা আমি তাদের জানা সত্যকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছি...... তাদের ক্ষোভ করা অনেক অংশে ন্যায্য। কেননা, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পদটি নিরপেক্ষ নয়। এর সাথে নিন্দা, হাস্যরস এবং বর্জনীয় ভাব প্রকাশ পায়। এটি অনেকটা "কাল্ট" শব্দটির মত,যা কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ধর্মীয় সংগঠনকে বোঝায়। মুর এছাড়াও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কে "কলঙ্কিত জ্ঞান" বা "দমনকৃত জ্ঞান" আখ্যা দেন যযে জ্ঞানের ভিত্তি হচ্ছে যে " ক্ষমতাধর কিছু গোষ্ঠী মুক্ত জ্ঞান সরবরাহের পথে বাধা সৃষ্টি করছে এবং একে নিয়ন্ত্রণ করছে কোন বিশেষ অসাধু উদ্দেশ্যে।"
১৯ নং লাইন:
 
== উদাহরণ ==
এযাবৎ প্রচুর পরিমান ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অস্তিত্ত্ব পাওয়া যায় যাদের জনপ্রিয়তার মাত্রা বিভিন্ন। অধিকাংশ সময় এগুলো রাষ্ট্রীয় গুপ্ত চক্রান্ত, গণহত্যার গুপ্ত প্রকল্প, প্রযুক্তির আড়ালকরণ, জ্ঞান অবদমন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বা ঐতিহাসিক ঘটনার পেছনে লুক্কায়িত ষড়যন্ত্র বোঝালেও এর মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকে না। কিছু কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, যেমন- '''হলোকস্ট ডিনায়েল।''' এ তত্ত্বগুলো সাধারণত ঐকমত্যের বিরুদ্ধে যায়,এবং এদের "হিস্ট্রিকাল মেথড" অনুসরণ করে প্রমানপ্রমাণ করা যায় না। এদেরকে প্রমানিতপ্রমাণিত ষড়যন্ত্রের সাথেও এক কাতারে ফেলা হয় না।
 
বর্তমানে সামাজিক-যোগাযোগ সাইট গুলোতে এরা বিপুলভাবে ভাবে বিদ্যমান, ব্লগ বা ভিডিও আকারে। ইন্টারনেট কি এ তত্ত্বগুলোকে প্রতিষ্ঠা পাবার আরো ভাল সুযোগ করে দিচ্ছে কিনা তা গবেষণা সাপেক্ষ। তবে সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে এ বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের ঘাটাঘাটি মনিটর করা হয়েছে, যাতে উঠে এসেছে মানুষ এর বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর বিভিন্ন মাত্রায় আকর্ষণ এবং অনলাইন এ এর উপর মানসম্মত, নির্ভরযোগ্য উৎসের অনুপস্থিতি।
৭৪ নং লাইন:
 
== বৈশ্বিক দর্শন হিসেবে "কন্সপিরেসিসম" ==
"কন্সপিরেসিসম" বলতে বোঝায় বিশেষ একটি বৈশ্বিক দর্শনকে যা বিশ্বের ইতিহাস এর কেন্দ্রে ষড়যন্ত্রকে রেখে একে উন্মোচন করার চেষ্টা করে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং কন্সপিরেসিসম নিয়ে যত প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা হয়েছে তাতে নানা ধরণেরধরনের প্রকল্প ফুটে উঠেছে। বার্লেট এবন লায়ন্স এর মতে, " কন্সপিরেসিসম হল এমন এক আখ্যান যা অশুভ অর্থে ধারণকৃত কোন শত্রু সংগঠনকে জনগনের সার্বিক মঙ্গলের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী হিসেবে বলির পাঠা বানায় এবং শিসদাতাকে বীরের ভূষণে ভূষিত করে।
 
ইতিহাসবিদ রিচার্ড হফসটাটার আমেরিকান ইতিহাসে ভ্রমগ্রস্ততা এবং কন্সপিরেসিসমকে তার রচনা ''আমেরিকান রাজনীতিতে ভ্রমগ্রস্ততার রুপ'' বইটিতে উল্লেখ করেন, যা ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়। বার্নার্ড বেইলিন এর ''আমেরিকান বিপ্লবের আদর্শগত ব্যুৎপত্তি'' (১৯৬৪) বইটিতে তিনি উল্লেখ করেন যে একই ধরণের ঘটনা আমেরিকান বিপ্লবের আগেও লক্ষণীয়। কন্সপিরেসিসম মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উপর আলোকপাত করে যা বৈশ্বিক এবং একই সাথে ইতিহাসকেন্দ্রিক।
১০০ নং লাইন:
কিছু মনবিজ্ঞানীদের মতে, যারা ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করে তাদের অন্যের কথা সহজে বিশ্বাস করার প্রবনতা থাকে।
 
কোন মনবিজ্ঞানী মনে করেন যে, উদ্দেশ্য অনুসন্ধান হচ্ছে কন্সপিরেসিসম এর একটি সাধারণ বিষয় এবং এর বিকাশে সহায়ক। এমনকি এ বিষয়টি এমনই ক্ষমতাবাহী যে, এটি একাই এই ধারণা প্রণয়নে ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রথমে কোন ব্যাপারে অনুমান করা হয়, পরে আগত তথ্য-উপাত্ত সুবিধানুযায়ী বিশ্লেষণ করে এবং সাংঘর্ষিক তথ্য উপেক্ষা করে-অনুমিত প্রকল্পকে আরো দৃঢ় করা হয়। এভাবে কন্সপিরেসিসম এ বিশ্বাস আরো মজবুত হয়। কোন সামাজিক গোষ্ঠীতে যখন কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব জনপ্রিয়তা পায়, তখন তা সামজিক চাপেও অনেকক্ষেত্রে স্থায়ীত্ব লাভ করে। ইউনিভার্সিটি অফ কেন্ট এ সম্পাদিত কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে যে, লোকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বে প্রভাবিত হতে পারে, নিজের ঘটমান আচরণগত পরিবর্তন সম্পর্কে অবগত না থেকেও। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদেরঅংশগ্রহণকারীদের ওয়েলস এর রাজকুমারী প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু নিয়ে প্রচলিত জনপ্রিয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পড়তে দেয়া হয়। পড়ার পর তারা একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সহজে অনুধাবন করতে পারে, তবে নিজেরটি নয়। এটি মূলত তাদের নিজ নিজ বিশ্বাস করা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রতি দুর্বলতা এবং পক্ষপাতিত্ব এর কারণে। তাই , উদ্ভবকগণ ইতি টানেন এই বলে যে,ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো গুপ্ত এক বিশেষ মোহে সকলকে আকৃষ্ট করে।
 
২০১২ সালে প্রকাশিত এক সংখ্যায় উঠে এসেছে যে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী লোকেরা বহুবিধ ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করার প্রবণতা রাখে, এমনকি তারা একে অপরের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও। যেমন, অনেক লোক যারা বিশ্বাস করে যে ওসামা বিন লাদেন আমেরিকানদের দ্বারা জীবিত উদ্ধার হয়েছে তারা সম্ভাব্যভাবে এও বিশ্বাস করে যে, ওসামা বিন লাদেনকে ২০১১ সালের পূর্বে তার বাসস্থান পাকিস্তান এর এবটোবাদে অভীযান চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
১৩৪ নং লাইন:
সমাজবিজ্ঞানী হোলগার হেরউইগ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্যুৎপত্তির ইতিহাসের জার্মান সংস্করন গবেষনা করতে গিয়ে দেখেন যে, যেসব ঘটনাগুলো বেশি গুরুত্বপুর্ণ সেগুলো অতিরিক্ত দূর্বোধ্য, কারন এ ঘটনাগুলো সবজান্তাদের এবং শ্রুতিলেখকদের বেশি আকৃষ্ট করে থাকে।
 
অপরদিকে, ষড়যন্ত্র মতবাদ্গুলো ঘটনাপরিক্রম এবং সংশ্লিষ্ট প্রমানাদিরপ্রমাণাদির অসামঞ্জস্য থেকেও উৎপত্তি লাভ করতে পারে। এভাবে তারা ঘটনাটির কিছু অনাবিষ্কৃত ক্ষেত্রের ব্যাপারে ইঙ্গিত করতে সক্ষম হয়।
 
=== সমালোচনা তত্ত্বের প্রভাব ===