দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
সংশোধন
২৯ নং লাইন:
}}
 
'''দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়''' (জন্ম: [[এপ্রিল ২০|২০ এপ্রিল]] [[১৮৪৪]] - মৃত্যু: [[জুন ২৭|২৭ জুন]] [[১৮৯৮]]) ([[ইংরেজি]]: Dwarkanath Ganguly) বাংলার [[নবজাগরণ|নবজাগরণের]] একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি। স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে এবং শ্রমিক আন্দোলনেরর বিকাশে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
 
== ব্যক্তিগত জীবন ==
দ্বারকানাথ বর্তমান [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[ঢাকা|ঢাকার]] [[বিক্রমপুর|বিক্রমপুরের]] মাগুরখণ্ডের নিবাসী ছিলেন। তার বাবার নাম কৃষ্ণপান গঙ্গোপাধ্যায়। দ্বারকানাথ প্রবেশিকা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবার পরে গ্রাম ছেড়ে [[ফরিদপুর|ফরিদপুরের]] লোনসিং গ্রামে শিক্ষকতা করতে আরম্ভ করেন। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে তিনি [[১৮৮৩]] খ্রিষ্টাব্দে [[কাদম্বিনী গাঙ্গুলী|কাদম্বিনী বসুকে]] বিয়ে করেন। <ref name=ss>সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান - প্রথম খণ্ড - সাহিত্য সংসদ {{আইএসবিএন|81-85626-65-0}}</ref> কাদম্বিনী ([[১৮৬১]] - [[১৯২৩]]) ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের প্রথম ২ জন মহিলা স্নাতকের একজন এবং ইউরোপীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক।
 
== সমাজসেবা ==
তিনি ছাত্র অবস্থা থেকেই সমাজসংস্কারমূলক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। [[১৮৬৯]] খ্রিষ্টাব্দে তিনি [[অবলাবান্ধব]] নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি তিনি সমাজের কুনিয়মের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ করে সমাজসংস্কারের চেষ্টা করেন। এই পাত্রিকার মাধ্যমে দ্বারকানাথ প্রধানত আক্রমণ শানান ব্রাহ্মণ ও কুলীনদিগের বহুবিবাহও প্রথার বিরুদ্ধে।<ref name="ReferenceA">ছন্দক সেনগুপ্ত, দ্য রে'স বিফোর সত্যজিৎ (নিউ দিল্লীঃ অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৬), ৩।</ref> [[১৮৭০]] খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রাহ্ম সংস্কারকদের আমন্ত্রনে কলকাতায় আসেন। এবং মেয়েদের শিক্ষা বিস্তার এবং অসহায় মহিলাদের রক্ষাকার্যে আত্মনিয়োগ করেন। [[১৮ সেপ্টেম্বর]] [[১৮৭৩]] খ্রিষ্টাব্দে [[হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়]] স্থাপিত হয়। তিনি এই বিদ্যালয় স্থাপন এবং ছাত্রীনিবাস প্রতিষ্ঠায় প্রধান উদ্যোগী ছিলেন। তিনি এই বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও ছিলেন। এই বিদ্যালয়টি আড়াই বছর পরে উঠে গেলে [[১ জুন]] [[১৮৭৬]] খ্রিষ্টাব্দে [[বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়]] প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিদ্যালয়ের সূত্রেই তিনি ছাত্রীদের প্রবেশিকা পরীক্ষা এবং ও মহিলাদের মেডিকেল কলেজে প্রবেশাধিকার বিষয়ের আন্দোলনে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেন। [[১ আগস্ট]] [[১৮৭৮]] খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয় বেথুন স্কুলের সাথে মিশে যায়। তার এইসমস্ত কাজে সহযোগী ছিলেন [[শিবনাথ শাস্ত্রী]], [[দুর্গামোহন দাস]], [[আনন্দমোহন বসু]], [[অন্নদাচরণ খাস্তগীর]] প্রমুখ নেতারা। দ্বারকানাথ ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়কে অনেক অর্থ সাহায্য করেছিলেন। <ref name=ss/> তৎকালীন সমাজে মহিলাদের প্রাথমিক পর্যায়ের ঊর্ধ্বে বিদ্যাচর্চার প্রচলন সেভাবে ছিল না। দ্বারকানাথ এই মনোভাবের তীব্রতর বিরুদ্ধাচরণ করেন। নিজের ছাত্রীদের তিনি সর্বদা উচ্চশিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতেন। ফলস্বরূপ তার ছাত্রী, ও পরবর্তী কালে তার বিবাহিতা স্ত্রী, [[কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়]] কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক উপাধি লাভ করেন। মহিলাদের মধ্যে ইনই সম্ভবত ছিলেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতক। বিবাহের সময় দ্বারকানাথ ছিলেন কাদম্বিনীর চেয়ে প্রায় ২০ বছরের অগ্রজ। <ref name="ReferenceA"/> তা ছাড়া দ্বারকানাথ ছিলেন বিপত্নীক, এবং ২ সন্তানের পিতা। বলা বাহুল্য তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজে তাদের এহ্যান পদক্ষেপ সহজে গৃহীত হয়নি। গোঁড়া হিন্দু ছাড়াও তথাকথিত আধুনিক ব্রাহ্মদের মধ্যে অনেকেই এ'বিবাহ মেনে নিতে পারেনি। পরবর্তীকালে ইতিহাসবিদ'দের মধ্যে অনেকেই যদিও এ'বিবাহকে আদর্শ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার অন্যতম কারণ দ্বারকানাথ আগাগোড়া ছিলেন কাদম্বিনীর বিদ্যাচর্চার অন্যতম সমর্থক। এমনকি উচ্চশিক্ষা সুত্রে কাদম্বিনীর বিলেত যাত্রার ক্ষেত্রে দ্বারকানাথের সম্পূর্ণ সহযোগিতা ছিল।
 
কলকাতায় তিনি ব্রাহ্মনেতা [[কেশবচন্দ্র সেন|কেশবচন্দ্র সেনের]] দলে ছিলেন। কিন্তু যখন কেশবচন্দ্র সেন নিজের মেয়ে সুনীতির তাদের ধর্মের নিয়ম না মেনে কুচবিহার রাজবাড়িতে অল্প বয়সে বিবাহ দেন তখন দ্বারকানাথ [[সমালোচক (পত্রিকা)|সমালোচক]] পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে তার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এই ঘটনার ফলে কিছু ব্রাহ্মনেতা আলাদা হয়ে গিয়ে [[সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ]] গঠন করেছিলেন। দ্বারকানাথ ছিলেন সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার একজন অগ্রণী ব্যক্তি। তিনি মেয়েদের উন্নতির জন্য অনেক কাজ করেছিলেন বলে তাকে ''অবলাবান্ধব'' বলা হত। <ref name=ss/>
৪২ নং লাইন:
 
== রাজনীতি ==
রাজনীতিতে তিনি ছাত্রসমাজ, ভারত-সভা এবং [[ভারতের জাতীয় কংগ্রেস|ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের]] সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কংগ্রেসে তিনি মহিলাদের প্রতিনিধিত্বের দাবি তোলেন। এর ফলস্বরূপ [[কাদম্বিনী গাঙ্গুলী|কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর]] নেতৃত্বে [[১৮৮৯]] খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মহিলারা কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে যোগ দেন। তিনি [[আসাম|আসামের]] চা-বাগানের শ্রমিকদের অবস্থা নিজে দেখেন এবং ইউরোপীয় মালিকদের অত্যাচারের খবর তার প্রতিষ্ঠিত এবং সম্পাদিত সাপ্তাহিক পত্রিকা [[সঞ্জীবনী (পত্রিকা)|সঞ্জীবনীতে]] প্রকাশ করেন। এবং এর ফলে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। <ref name=ss/> রামকুমার বিদ্যারত্নের অসমে কুলীদের শোষণ নিয়ে নানা লেখার মধ্যে অন্যতম ছিল সুকুরমনি নামক এক কুলী রমণীর চার্লস ওয়েব নামক এক ব্রিটিশ সাহেবের হাতে খুন হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি লেখা। এক্ষেত্রে চার্লস ওয়েবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে সে সুকুরমনির অসহায় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে হত্যা করে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে করা মামলা স্থানীয় আদালত থেকে কলকাতা হাই কোর্ট পর্যন্ত গড়ালেও পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে সে প্রত্যেক বার ছাড়া পেয়ে যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে দ্বারকানাথ ভারত সভার পক্ষ থেকে একটি ইশতেহার প্রকাশ করে 'Justice Murdered in India' শিরোনামে।<ref>Justice Murdered in India: The Papers of the Webb Case (Calcutta: Sa 1884). পুনঃপ্রকাশিত: কানাইলাল চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী'র 'Slavery in British Dominion' (কলকাতা: জিজ্ঞাসা, ১৯৫৯), ৫৯- ৬৫।</ref> এখানে ঘটনাটিকে আখ্যায়িত করা একপ্রকার জাতীয়তাবাদী ধাঁচে। লেখা হয় "the sacrifice of a daughter of India to the lust of an Anglo- Indian"। এই ইশতেহার তৎকালীন ঔপনিবেশিক বিচারব্যাবস্থাকে প্রশ্ন চিহ্নের মুখে ফেলে দেয় ও সর্বোপরি শাসন কাঠামোর বিরুদ্ধে পরোক্ষ ভাবে বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগ আনে। ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে এই ঘটনার গুরুত্ব অসীম।
 
১৮৮৭ সালে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে দ্বারকানাথ কুলীদের প্রতি অত্যাচারের বিষয়টি উত্থাপন করতে গেলে সেটিকে প্রাদেশিক আখ্যা দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া হয়।<ref>প্রভাত চন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়, ভারতের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের খসড়া (কলকাতাঃ সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ, ১৯৪২), ৫৩।</ref> আগামী বছর প্রথম বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মিলনীর অধিবেশনে [[বিপিনচন্দ্র পাল]] বিষয়টি উত্থাপন করলে দ্বারকানাথকে এবিষয়ে আলোকপাত করতে অনুরোধ করা হয়। দ্বারকানাথ কুলীদের শোষণের বিষয়ে বিস্তারিত বক্তৃতা প্রদান করেন ও সেখানে উপস্থিত সকলকে বোঝাতে সক্ষম হন যে এই সমস্যাকে প্রাদেশিক আখ্যা দেওয়া আদপে ভ্রান্ত ধারণা। সভায় ১৮৮৭ সালের কংগ্রেস অধিবেশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয় ও কুলীদের বিষয়টিকে জাতীয় স্তরের সমস্যা হিসেবে গণ্য হয়।<ref>প্রভাত চন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়, ভারতের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের খসড়া (কলকাতাঃ সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ, ১৯৪২), ৫৪।</ref> এর পর যদিও জাতীয় স্তরে স্বীকৃতি পেতে আরও বছর কয়েক সময় লাগে। অবশেষে ১৮৯৬ সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে কুলী সমস্যাকে জাতীয় স্তরের সমস্যার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।