রবীন্দ্রসঙ্গীত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
২৬ নং লাইন:
'''রবীন্দ্রসংগীত''' হল [[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] কর্তৃক রচিত ও সুরারোপিত গান। [[বাংলা সংগীত|বাংলা সংগীতের]] জগতে এই গানগুলি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী। রবীন্দ্রনাথের ''[[জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে]]'' ও ''[[আমার সোনার বাংলা]]'' গানদুটি যথাক্রমে [[ভারত]] ও [[বাংলাদেশ]] রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত। এছাড়া ভারতের জাতীয় স্তোত্র [[বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]] রচিত ''[[বন্দে মাতরম্‌]]'' গানটিতে রবীন্দ্রনাথই সুরারোপ করেছিলেন।
 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত মোট গানের সংখ্যা ২২৩২।<ref>''গীতবিতানের জগৎ'', সুভাষ চৌধুরী, প্যাপিরাস, কলকাতা, ২০০৬ সং, পৃ. ১৭১</ref> তাঁরতার গানের কথায় [[উপনিষদ্‌]], [[সংস্কৃত সাহিত্য]], [[বৈষ্ণবধর্ম|বৈষ্ণব সাহিত্য]] ও [[বাউল]] দর্শনের প্রভাব সুস্পষ্ট। অন্যদিকে তাঁরতার গানের সুরে [[ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত|ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের]] (হিন্দুস্তানি ও কর্ণাটকি উভয় প্রকার) [[ধ্রুপদ]], [[খেয়াল]], [[ঠুমরি]], [[টপ্পা]], [[তরানা]], [[ভজন]] ইত্যাদি ধারার সুর এবং সেই সঙ্গে বাংলার লোকসংগীত, [[কীর্তন]], [[রামপ্রসাদী]], পাশ্চাত্য ধ্রুপদি সংগীত ও পাশ্চাত্য লোকগীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।<ref>''রবীন্দ্রসংগীতের ত্রিবেণীসংগম'', ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, ১৪০৫ মুদ্রণ, পৃ. ২১, ৩৭-৩৮</ref> রবীন্দ্রনাথের সকল গান ''[[গীতবিতান]]'' নামক সংকলন গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। উক্ত গ্রন্থের ১ম ও ২য় খণ্ডে রবীন্দ্রনাথ নিজেই তাঁরতার গানগুলিকে ‘পূজা’, ‘স্বদেশ’, ‘প্রেম’, ‘প্রকৃতি’, ‘বিচিত্র’ও ‘আনুষ্ঠানিক’ – এই ছয়টি পর্যায়ে বিন্যস্ত করেছিলেন।<ref>''গীতবিতানের জগৎ'', সুভাষ চৌধুরী, প্যাপিরাস, কলকাতা, ২০০৬ সং, পৃ. ১২২</ref> তাঁরতার মৃত্যুর পর ''গীতবিতান'' গ্রন্থের প্রথম দুই খণ্ডে অসংকলিত গানগুলি নিয়ে ১৯৫০ সালে উক্ত গ্রন্থের ৩য় খণ্ড প্রকাশিত হয়। এই খণ্ডে প্রকাশিত গানগুলি ‘গীতিনাট্য’, ‘নৃত্যনাট্য’, ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’, ‘নাট্যগীতি’, ‘জাতীয় সংগীত’, ‘পূজা ও প্রার্থনা’, ‘আনুষ্ঠানিক সংগীত, ‘প্রেম ও প্রকৃতি’ ইত্যাদি পর্যায়ে বিন্যস্ত।<ref>''গীতবিতানের জগৎ'', সুভাষ চৌধুরী, প্যাপিরাস, কলকাতা, ২০০৬ সং, পৃ. ১২৪</ref> ৬৪ খণ্ডে প্রকাশিত ''স্বরবিতান'' গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় গানের স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছে।
 
[[জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি|জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে]] সংগীতচর্চার ব্যাপক প্রচলন ছিল। রবীন্দ্রনাথের বাবা [[দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ও রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য দাদারা নিয়মিত সংগীতচর্চা করতেন। কিশোর বয়সে রবীন্দ্রনাথের সংগীতশিক্ষায় সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন তাঁরতার নতুনদাদা [[জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]]।<ref>''রবীন্দ্রজীবনকথা'', প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৪১৪ মুদ্রণ, পৃ. ২০-২৩</ref> এগারো বছর বয়সে লেখা ‘[[গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে]]’ গানটি সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক রচিত প্রথম গান।<ref>''গীতবিতানের জগৎ'' সুভাষ চৌধুরী, প্যাপিরাস, কলকাতা, ২০০৬ সং, পৃ. ৫৮০</ref> এরপর প্রায় ৭০ বছর ধরে তিনি নিয়মিত গান রচনা করে গিয়েছিলেন। স্বরচিত গীতিকবিতা ছাড়াও কয়েকটি [[বেদ|বৈদিক]] স্তোত্র ও [[বৌদ্ধধর্ম|বৌদ্ধ]] মন্ত্র এবং [[বিদ্যাপতি]], [[গোবিন্দদাস]], [[বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]], [[সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর]], [[অক্ষয়কুমার বড়াল]], [[সুকুমার রায়]] ও [[হেমলতা দেবী]] কর্তৃক রচিত কয়েকটি গানে সুরারোপ করেছিলেন।<ref>''গীতবিতান'', ৩য় খণ্ড, ‘গ্রন্থপরিচয়’, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, ১৪০৭ সং, পৃ. ১০২৮-২৯</ref> তাঁরতার লেখা শেষ গানটি হল ‘[[হে নূতন দেখা দিক আর বার]]’। ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় তাঁরতার শেষ জন্মদিনে এটি পরিবেশিত হয়েছিল।<ref>''রবীন্দ্র-সঙ্গীত-কোষ'', সুরেন মুখোপাধ্যায়, সাহিত্য প্রকাশ, কলকাতা, ১৪১৬ সং, পৃ. ৩৫০</ref>
 
রবীন্দ্রনাথ নিজেও সুগায়ক ছিলেন। বিভিন্ন সভাসমিতিতে তিনি স্বরচিত গান পরিবেশন করতেন। কয়েকটি গান তিনি গ্রামোফোন ডিস্কেও প্রকাশ করেছিলেন। সংগীত প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রবন্ধও তিনি রচনা করেন। এছাড়া স্বরচিত নাটকেও তিনি নিজের গান ব্যবহার করতেন। সংগীতকে তিনি বিদ্যালয়-শিক্ষার পরিপূরক এক বিদ্যা মনে করতেন।<ref>''রবীন্দ্রনাথের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাদর্শে সঙ্গীত ও নৃত্য'', শান্তিদেব ঘোষ, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৮৭, পৃ. ৯</ref> রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তাঁরতার রচিত গানগুলি বাঙালি সমাজে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
 
==সংজ্ঞা==
‘রবীন্দ্রসংগীত’ বলতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত এবং রবীন্দ্রনাথ বা তাঁরতার নতুনদাদা [[জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] কর্তৃক সুরারোপিত গানগুলিকেই বোঝায়। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় অন্যের সুরারোপিত গানগুলিকে ‘রবীন্দ্রসংগীত’ বর্গভুক্ত করা হয় না। এই কারণে জনপ্রিয় ‘[[দিনের শেষে ঘুমের দেশে]]’ (সুরকার: [[পঙ্কজকুমার মল্লিক]]) গানটিকে রবীন্দ্রসংগীত পর্যায়ভুক্ত করা হয়নি।<ref>''গীতবিতান'', তৃতীয় খণ্ড, ‘গ্রন্থপরিচয়’, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, ১৪০৭ সং, পৃ. ১০২৬-২৭</ref>
 
==ইতিহাস==
===প্রথম গান রচনা===
রবীন্দ্রনাথ রচিত প্রথম গানটি হল ‘[[গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে]]’। এই গানটি [[গুরু নানক]] রচিত ‘গগন মে থাল রবি চন্দ্র দীপক বনে’ ভজনটির প্রথমাংশের প্রায় আক্ষরিক অনুবাদ। ''তত্ত্ববোধিনী'' পত্রিকার ফাল্গুন ১২৮১ (জানুয়ারি, ১৯৭৫) সংখ্যায় এটি প্রকাশিত হয়।<ref>''রবীন্দ্র-সঙ্গীত-কোষ'', সুরেন মুখোপাধ্যায়, সাহিত্য প্রকাশ, কলকাতা, ১৪১৬ সং, পৃ. ১৩৯</ref> [[আদি ব্রাহ্মমাজ]] প্রকাশিত ''ব্রহ্মসংগীত স্বরলিপি'' গ্রন্থে এটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, এটি তাঁরইতারই রচনা।<ref>''গীতবিতানের জগৎ'' সুভাষ চৌধুরী, প্যাপিরাস, কলকাতা, ২০০৬ সং, পৃ. ৫৭৯-৫৮০</ref> রবীন্দ্রজীবনীকার প্রশান্তকুমার পাল এই গান রচনা ও প্রকাশের ইতিহাস সম্পর্কে লিখেছেন:<ref>''রবিজীবনী'', ১ম খণ্ড, প্রশান্তকুমার পাল, ভূর্জপত্র, কলকাতা, ১৩৮৯ সং, পৃ. ১৮৬</ref>
{{Quote|...ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের পাক্ষিক মুখপত্র ''ধর্মতত্ত্ব'' পত্রিকার ১ ভাদ্র ১৭৯৪ শক [১২৭৯; 1872] সংখ্যার [৪ । ১৪] ৭৩৮ পৃষ্ঠায় নানকের ভজনটি প্রথম বঙ্গাক্ষরে প্রকাশিত হয়। এর পরই ''তত্ত্ববোধিনী''-র ফাল্গুন সংখ্যার ১৯১-৯২ পৃষ্ঠায় ‘সংবাদ’ শিরোনানায় ২৪ ভাদ্র লাহোর সৎসভার দ্বিতীয় সাংবাৎসরিক প্রসঙ্গে গদ্যানুবাদ-সহ গানটি মুদ্রিত হয়। পদ্যানুবাদটি সুর-সংযোজিত [‘রাগিণী জয় জয়ন্তী – তাল ঝাঁপতাল] হয়ে ১১ মাঘ ১২৮১ [শনি 23 Jan 1875] তারিখে আদি ব্রাহ্মসমাজের পঞ্চচত্বারিংশ সাংবাৎসরিক সায়ংকালীন উপাসনায় গীত হয় ও পরবর্তী ফাল্গুন সংখ্যায় ''তত্ত্ববোধিনী''-র ২০৯ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত হয়। ...আমাদের অনুমান পদ্যানুবাদটি রবীন্দ্রনাথেরই কৃত। ফাল্গুন সংখ্যায় অনুবাদ-সহ মূল অংশটি প্রকাশিত হবার কয়েকদিন পরেই রবীন্দ্রনাথ পিতার সঙ্গে [[বোলপুর]] হয়ে [[অমৃতসর|অমৃতসরে]] আসেন। খুবই সম্ভব যে, তিনি ''তত্ত্ববোধিনী'' মারফত রচনাটির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। অমৃতসরে পিতার সঙ্গে যখন গুরু-দরবারে উপস্থিত থাকতেন, তখন অন্যান্য [[শিখ]] ভজনের সঙ্গে এই গানটিও তিনি শুনেছিলেন, এমন সম্ভাবনার কথা সহজেই ভাবা যেতে পারে। আর এই যোগাযোগের অভিঘাতে রবীন্দ্রনাথ ভজনটির বঙ্গানুবাদ করেন। ...আমাদের এই আনুমানিক সিদ্ধান্ত যদি বিদগ্ধজনের সমর্থনযোগ্য হয়, তবে এটি-ই রবীন্দ্রনাথ-রচিত প্রথম [[ব্রহ্মসংগীত]] বলে গণ্য হবে। ...তবে আমাদের মত গ্রাহ্য হলে সেখানে বয়স ও সালটি সংশোধনের প্রয়োজন হবে, লিখতে হবে – ‘বয়স ১১। ১২৭৯। ১৮৭৩’।}}
 
== বৈশিষ্ট্য ==
তিনি কেবল গীতিকার বা সুরকার নন, তিনি সংগীতস্রষ্টা। রবীন্দ্রসংগীত কাব্য ও সুরের মধুর মিলনের অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বরচিত অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেছেন রবীন্দ্রনাথ নিজেই। "স্থায়ী", "অন্তরা", "সঞ্চারী" এবং "আভোগ" - এই চারটি রূপবন্ধের ক্রমিক সমন্বয়ে যে একটি গান সম্পূর্ণ হয়ে উঠে তা তিনি সম্যক উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁরতার এই উপলব্ধি সর্বভারতীয় সঙ্গীত ঐতিহ্যেরই প্রতিফলন। তবে তিনি গানে "তান-বিস্তারের" অপরিহার্যতা অস্বীকার করে সংগীত রচনা করেছেন। তাঁরতার গানে বিস্তার ব্যতিরেকেই সুর শব্দকে ছাড়িয়ে বিশেষ ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে। সুরের বৈশিষ্ট্যেই তাঁরতার গান রবীন্দ্রসংগীত হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে প্রচলিত [[তাল (সঙ্গীত)|তালে]] সুর বাঁধার সঙ্গে সঙ্গে অপ্রচলিত নানা তাল তিনি ব্যবহার করেছেন। তাঁরতার কাছে আমরা পেয়েছি ১৫ মাত্রা, ১৭ মাত্রা, ১৮ মাত্রা, ১৯ মাত্রা ইত্যাদির বাংলা গান। "সঙ্গীতের মুক্তি" নামীয় প্রবন্ধটি তাঁরতার সংগীত চিন্তার দলিল।
 
== চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসংগীতের প্রয়োগ ==
[[বাংলা]] চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসংগীতের প্রয়োগ শুরু হয় ১৯৩৭ সালে। ওই বছর [[নিউ থিয়েটার্স প্রাইভেট লিমিটেড]] প্রযোজিত ও [[প্রমথেশ বড়ুয়া]] পরিচালিত ''মুক্তি'' চলচ্চিত্রে প্রথম রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহার করা হয়। এরপর [[সত্যজিৎ রায়]], [[ঋত্বিক ঘটক]], [[গৌতম ঘোষ]],[[অপর্ণা সেন]], [[ঋতুপর্ণ ঘোষ]] প্রমুখ আন্তর্জাতিক-খ্যাতিসম্পন্ন পরিচালকগণ তাঁদেরতাদের ছবিতে সার্থকভাবে রবীন্দ্রসংগীত প্রয়োগ করেছেন। মূলধারার বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রেও জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীতগুলি ব্যবহার করা হয়।
=== ''মুক্তি'' ===
[[নিউ থিয়েটার্স প্রাইভেট লিমিটেড]] প্রযোজিত ও [[প্রমথেশ বড়ুয়া]] পরিচালিত ''মুক্তি'' (১৯৩৭) চলচ্চিত্রে প্রথম রবীন্দ্রসংগীত প্রয়োগ করা হয়েছিল। এই ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী [[পঙ্কজ কুমার মল্লিক]]। পঙ্কজকুমার মল্লিক রবীন্দ্রনাথের অনুমতি নিয়ে কবির ''খেয়া'' কাব্যগ্রন্থের "শেষ খেয়া" কবিতাটিতে সুরারোপ করেন এবং এই চলচ্চিত্রে প্রয়োগ করেন।<ref>''বেতার ও চলচ্চিত্রের জগতে প্রবাদপ্রতিম সংগীত সাধক পঙ্কজ কুমার মল্লিক'', রাজীব গুপ্ত, পঙ্কজ মল্লিক মিউজিক অ্যান্ড আর্ট ফাউন্ডেশন, কলকাতা, পৃ. ৮৩-৮৫</ref> গানটি "দিনের শেষে ঘুমের দেশে" শিরোনামে রেকর্ডে প্রকাশিত হয় ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ''মুক্তি'' চলচ্চিত্রে পঙ্কজকুমার মল্লিক রবীন্দ্রনাথের "আজ সবার রঙে রঙ মেশাতে হবে", "তার বিদায়বেলার মালাখানি" ও "আমি কান পেতে রই" গান তিনটিও ব্যবহার করেছিলেন।<ref>''বেতার ও চলচ্চিত্রের জগতে প্রবাদপ্রতিম সংগীত সাধক পঙ্কজ কুমার মল্লিক'', রাজীব গুপ্ত, পঙ্কজ মল্লিক মিউজিক অ্যান্ড আর্ট ফাউন্ডেশন, কলকাতা, পৃ. .১২৯</ref>
 
== বিশিষ্ট শিল্পীবর্গ ==
বাংলা সংগীতের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রসংগীত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় ধারা। [[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] নিজেই ছিলেন সমসাময়িক যুগের একজন বিশিষ্ট গায়ক। [[স্বামী বিবেকানন্দ]] নিয়মিত [[জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি|জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে]] যাতায়াত করতেন এবং সেখানে একাধিক রবীন্দ্রসংগীত শিখে নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানে, [[ব্রাহ্মসমাজ|ব্রাহ্মসমাজের]] উৎসবে, এমনকি [[দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি|দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে]] [[রামকৃষ্ণ পরমহংস|রামকৃষ্ণ পরমহংসের]] সামনেও পরিবেশন করেছিলেন।<ref>"যুগ-আচার্য ও যুগ-কবি : বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ", স্বামী সুবীরানন্দ, ''স্বামীজী সার্ধশতবর্ষপূর্তি সংখ্যা", ২০১৪, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, পৃ. ৪১৮-১৯</ref><ref>"প্রাসঙ্গিক তথ্য ও আলোচনা", ড. সর্বানন্দ চৌধুরী, ''সঙ্গীতকল্পতরু'', নরেন্দ্রনাথ দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দ) ও বৈষ্ণবচরণ বসাক, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার, কলকাতা, পৃ. ৬-৭</ref> ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়ার প্রথাও তাঁরতার সমসাময়িক কালেই শুরু হয়। [[দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর]], [[সাহানা দেবী]], [[ইন্দিরা দেবী চৌধুরানি]], [[শান্তিদেব ঘোষ]] প্রমুখ রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ শিষ্যেরা ছাড়াও, [[পঙ্কজকুমার মল্লিক]], [[কুন্দনলাল সায়গল]], [[কানন দেবী]] প্রমুখ শিল্পীরা রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই রবীন্দ্রসংগীতকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরবর্তী কালে [[কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়]], [[সুচিত্রা মিত্র]], [[হেমন্ত মুখোপাধ্যায়]], [[দেবব্রত বিশ্বাস]], [[সুবিনয় রায়]], [[চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়]], [[সাগর সেন]], [[ঋতু গুহ]], [[গীতা ঘটক]] প্রমুখ শিল্পীরা রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাঁদেরতাদের অনুপ্রেরণায় [[লতা মঙ্গেশকর]], [[আশা ভোঁসলে]], [[কিশোর কুমার]] প্রমুখ বিশিষ্ট [[বলিউড]]-শিল্পীরাও রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছিলেন। বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গান সহ অন্যান্য ধারার সংগীত শিল্পীরাও রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছেন। [[পূর্ব পাকিস্তান|পূর্ব পাকিস্তানের]] স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে এবং [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ|স্বাধীনতা যুদ্ধের]] সময় [[ওয়াহিদুল হক]], [[কলিম শরাফি]], [[সনজীদা খাতুন]] প্রমুখ শিল্পীরা বাংলাদেশে রবীন্দ্রসংগীতকে বিশেষ জনপ্রিয় করে তোলেন। আধুনিক যুগে [[মনোজ মুরলী নায়ার]], [[মণীষা মুরলী নায়ার]], [[মোহন সিং]], [[বিক্রম সিং]], [[স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত]], [[লোপামুদ্রা মিত্র]], [[শ্রাবণী সেন]], [[শ্রীকান্ত আচার্য]], [[সুস্মিতা পাত্র]], [[পীযূষকান্তি সরকার]] প্রমুখ ভারতীয় এবং [[রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা]], [[অদিতি মহসিন]], [[মিতা হক]], [[পাপিয়া সারোয়ার]] প্রমুখ বাংলাদেশী শিল্পীরা রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছেন। [[বাবুল সুপ্রিয়]], [[শান]], [[কুমার শানু]], [[অলকা ইয়াগনিক]], [[সাধনা সরগম]], [[কবিতা কৃষ্ণমূর্তি]] প্রমুখ বলিউড-শিল্পীরাও এখন নিয়মিত রবীন্দ্রসংগীতের সংকলন প্রকাশ করে থাকেন।
 
কয়েকজন বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়কের নাম নিচে দেয়া হল।
১১৯ নং লাইন:
==বিতর্ক==
===দেবব্রত বিশ্বাস—বিশ্বভারতী সংগীত সমিতি বিরোধ===
১৯৫১ সালের ভারতের কপিরাইট আইন অনুসারে, ২০০১ সাল পর্যন্ত ভারতে রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড প্রকাশ করতে হলে বিশ্বভারতী সংগীত সমিতির অনুমোদন প্রয়োজন হত। ১৯৫৭ সালে বিশ্বভারতী সংগীত সমিতি [[দেবব্রত বিশ্বাস|দেবব্রত বিশ্বাসের]] "তুমি রবে নীরবে" গানটি প্রকাশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করলে, দেবব্রত বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় প্রকাশিত স্বরলিপি দেখিয়ে ''গীতবিতান''-এ গানের পাঠের ভুল নির্দেশ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ শিষ্য [[শান্তিদেব ঘোষ]] এই ব্যাপারে দেবব্রত বিশ্বাসের দেওয়া তথ্য সমর্থন করলে বিশ্বভারতী সংগীত সমিতি গানটি প্রকাশের অনুমতি দেয়।<ref>"আমায় ডাকলে কেন গো, এমন করে", বাসব দাশগুপ্ত, ''অন্য প্রমা'', দেবব্রত বিশ্বাস জন্মশতবার্ষিকী সংখ্যা, ২০১০, পৃ. ৪৮-৪৯</ref> ১৯৬৪ সালে দেবব্রত বিশ্বাসের গাওয়া "মেঘ বলেছে, যাব যাব" ও "এসেছিলে তবু আস নাই" গানদুটি প্রকাশের অনুমতি দিতে বিশ্বভারতী সংগীত সমিতি অস্বীকার করে। ১৯৬৯ সালে তাঁরতার "পুষ্প দিয়ে মারো যারে" ও "তোমার শেষের গানের" গানদু-টির প্রকাশের অনুমতি বিশ্বভারতী সংগীত সমিতি দেয়নি। বিশ্বভারতী সংগীত সমিতি দেবব্রত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গানে অতিনাটকীয়তা, অতিরিক্ত বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদির অভিযোগ এনেছিল। <ref>বিশ্বভারতী সংগীত সমিতি-কর্তৃক প্রেরিত অনুমতি পত্রের প্রতিলিপি, ''ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত'', দেবব্রত বিশ্বাস, করুণা প্রকাশনী, কলকাতা, পৃ. ৭৮-৮০</ref> ১৯৭০-৭১ সালে দেবব্রত বিশ্বাস বেশ কিছু গান রেকর্ড করেন। কিন্তু তার কয়েকটিকে বিশ্বভারতী অনুমোদন দিতে অসম্মত হন। বিরক্ত হয়ে দেবব্রত বিশ্বাস স্থির করেন তিনি আর রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড করবেন না।<ref>''ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত'', দেবব্রত বিশ্বাস, করুণা প্রকাশনী, কলকাতা, পৃ. ৯১</ref> বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী [[সুচিত্রা মিত্র]] অবশ্য লিখেছেন যে, দেবব্রত বিশ্বাসের কোনো গান বিশ্বভারতী সংগীত সমিতি বাতিল করেনি।<ref>''মনে রেখো'', সুচিত্রা মিত্র, আজকাল, কলকাতা, পৃ. ৫৩</ref>
 
== আরও দেখুন ==