শিন্ডলার্স লিস্ট: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Prodeep Roy (আলোচনা | অবদান)
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৪৩ নং লাইন:
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন অস্কার শিন্ডলার নামের এক জার্মান ব্যবসায়ী যিনি নাৎসি বাহিনীতে যোগ দিয়ে পোল্যান্ডে এসেছেন ‘যুদ্ধের সুবিধা’ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে। নাৎসি এসএস বাহিনীর প্রধানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে এবং তাদের প্রচুর টাকা ঘুষ দিয়ে পোল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর ক্রাকাউয়ে তিনি ডিইএফ নামে একটি কারখানা তৈরি করেন।
 
শিন্ডলার তাঁরতার কারখানায় কাজের জন্য শুধুমাত্র পোল্যান্ডের ইহুদিদের নেন। শিন্ডলার তাঁরতার কারখানায় হিসাবরক্ষক হিসেবে ইৎজহাক স্টার্ন নামের এক ইহুদিকে নিয়োগ দেন, যিনি কালোবাজারী এবং ইহুদিদের ব্যবসায়িক গোষ্ঠির সাথে যোগাযোগ রেখে শিন্ডলারকে নানাভাবে সাহায্য করেন।
 
শিন্ডলার তাঁরতার কারখানায় ইহুদিদের নিয়োগ দেন এই উদ্দেশ্যে যে, ইহুদিরা সস্তা শ্রম দেবে এবং এতে তাঁরতার অনেক টাকা বেঁচে যাবে। একদিন কারখানায় নিয়োগ পাওয়া এক হাতওয়ালা এক বৃদ্ধ ইহুদি এসে শিন্ডলারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কারখানায় নিয়োগ দিয়ে জার্মান বাহিনীর অত্যাচার থেকে তাঁকেতাকে বাঁচানোর জন্য।
 
ইহুদিদের অসহায়ত্ব শিন্ডলারের মনে করুণার জন্ম দেয়। জার্মান বাহিনী ইহুদিদের ট্রেনে করে অনেক দূরে ইহুদি কলোনিতে পাঠাতে শুরু করে পরে যেখান থেকে তাদের পাঠানো হবে মৃত্যু শিবির কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে। ঘটনাচক্রে শিন্ডলারের হিসাবরক্ষক ইৎজহাক স্টার্নকেও একটি ট্রেনে উঠতে হয়। শিন্ডলার নাৎসি বাহিনীর প্রধানদের সাথে তাঁরতার সুসম্পর্ক কাজে লাগিয়ে স্টার্নকে উদ্ধার করেন।
 
এক সময় ক্রাকাউয়ে আগমন ঘটে এসএস ক্যাপ্টেন নরপিশাচ আমোন গ্যোটের। তিনি ক্রাকাউয়ে “ক্রাকাউ-প্লাসজো কনসেনট্রেশন ক্যাম্প” নামে একটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প তৈরি করেন। ক্যাম্পের কাজ শেষ হলে ইহুদিদের ক্যাম্পে ধরে আনার জন্য আমোন তাঁরতার বাহিনী নিয়ে সারা ক্রাকাউয়ে চষে বেড়াতে শুরু করেন এবং তাঁরতার বাহিনী অসংখ্য ইহুদিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শিন্ডলার ও তাঁরতার স্ত্রী এমিলি পাহাড়ের উপর থেকে নাৎসি বাহিনীর এসব নির্মমতা দেখে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।  শিন্ডলার আমোন গ্যোটের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন এবং নানা উপায়ে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে ইহুদি শ্রমিক সংগ্রহ করে তাঁরতার কারখানায় নিয়োগ দিতে শুরু করেন। তিনি বুঝতে পারেন ক্যাম্প থেকে ইহুদিদের এনে তাঁরতার কারখানায় নিয়োগ দিলে তারা প্রাণে বেঁচে যাবে। তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকার পরও ক্যাম্প কতৃপক্ষকে লাইটার, ঘড়ি প্রভৃতি ঘুষ হিসেবে দিয়ে ইহুদি শ্রমিকদের এনে তাঁরতার কারখানায় নিয়োগ দেন। শিন্ডলার ইহুদিদের বাঁচানোর জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যান।
 
ক্রাকাউ-প্লাসজো কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে ইহুদিদের উপর নাৎসি বাহিনীর অবর্ননীয় অত্যাচার এবং শিন্ডলারের ইহুদি শ্রমিক সংগ্রহের ঘটনা নিয়ে সিনেমার গল্প এগিয়ে যায়।
 
একসময় যুদ্ধের গতি বদলাতে শুরু করে। জার্মানরা ইউরোপের নানা জায়গায় মার্কিন, রুশ, ইংরেজ বাহিনীর কাছে দখলকৃত দেশ/অঞ্চলসমূহ হারাতে শুরু করে। পরাজয়ের আশঙ্কা বুঝতে পেরে বার্লিন থেকে অর্ডার আসে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের কাজ বন্ধ করে মৃত ইহুদিদের দেহাবশেষ পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে জীবিতদের আউশভিৎজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিতে। শিন্ডলার জানেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে যাওয়া মানে অবর্ননীয় অত্যাচার এবং তারপর মৃত্যু। শিন্ডলার তাঁরতার কর্মীদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে আমোন গ্যোটকে বলেন, তিনি তাঁরতার কর্মীদের ব্রিনলিতস-এ অবস্থিত পুরনো কারখানায় নিয়ে যেতে চান। আমোন প্রতিটি শ্রমিকের জন্য নির্ধারিত হারে অনেক টাকা দাবী করেন। শিন্ডলার ও তাঁরতার সহকারী স্টার্ন ১১০০ জনের একটি তালিকা তৈরি করেন (যেটি “শিন্ডলার্স লিস্ট” বা শিন্ডলারের তালিকা নামে পরিচিত) যাদের আউশভিৎজ-এ না পাঠিয়ে তিনি তাঁরতার কারখানায় নিয়ে যাবেন। প্রত্যেকের জন্য শিন্ডলার আমোনকে নির্ধারিত হারে টাকা দেন। অধিকাংশ শ্রমিক ট্রেনে নিরাপদে ব্রিনলিতস-এ পৌঁছে যায় কিন্তু ইহুদি নারী এবং শিশুদের বহনকারী ট্রেনটি পেপার ওয়ার্ক মিসটেকের দরুন ভুলক্রমে আউশভিৎজ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে চলে যায়। শিন্ডলার নিজে আউশভিৎজ-এ যান এবং ক্যাম্প কমান্ডার রুডলফ হুসকে এক পটলা হীরা ঘুষ দিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
 
কিন্তু ট্রেনে উঠার সময় এসএস অফিসাররা শিশুদের আটকে দেয়। শিন্ডলার তাদের যুক্তি দেখান এই শিশুদের ছোট আঙ্গুল ৪৫ মিলিমিটারের শেল মেটাল ক্যাসিংয়ের ভিতরের অংশটি পালিশ করতে কাজে লাগে। তাঁরতার কথায় কাজ হয়, শিশুরা প্রাণে বেঁচে যায়। এদের সবাইকে শিন্ডলার ব্রিনলিতস-এর কারখানায় এনে নিরাপদে রাখেন। এসএস সৈন্যদের তিনি এই বলে সতর্ক করে দেন যে কোন সৈন্য যদি কারখানার কোন শ্রমিকের উপর অত্যাচার চালায় কিংবা তাদের গুলি করে তাহলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
 
একসময় বেতারে ইউরোপে জার্মানদের পরাজয় এবং সোভিয়েত রেড আর্মির জার্মানি আক্রমণের খবর প্রচারিত হয়। শিন্ডলার তাঁরতার কারখানার ১১০০ শ্রমিকের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। তিনি নিজে জার্মান নাৎসি দলের সদস্য, তাই মার্কিন ও রুশ বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার এড়িয়ে গা ঢাকা দেয়ার জন্য কারখানার শ্রমিকদের কাছ থেকে বিদায় নেন।
 
বিদায় বেলা কারখানার সমস্ত শ্রমিকের উপস্থিতিতে -সমস্ত শ্রমিকের সাক্ষরসহ একটি চিঠি শিন্ডলারকে দেয়া হয়। ইৎজহাক স্টার্ন কারখানার একজন শ্রমিকের বাঁধানো দাঁত দিয়ে তৈরি একটি সোনার আংটি শিন্ডলারের হাতে তুলে দেন যাতে হিব্রু ভাষায় লেখা "যিনি একজনের জীবন বাঁচান তিনি সমস্ত পৃথিবীকে বাঁচান"।
 
শিন্ডলার বিদায় জানিয়ে স্টার্নের সাথে হাত মেলানোর সময় এই বলে অনুশোচনা করেন যে তিনি আরও কিছু টাকা খরচ করে আরও মানুষকে বাঁচাতে পারতেন কিন্তু বাঁচান নি। স্টার্ন তাঁকেতাকে সান্তনা দেন, “এই ১১০০ শ্রমিকের দিকে তাকিয়ে দেখুন এরা আজ আপনার জন্যই জীবিত রয়েছে।”
 
কিন্তু কোন কথাতেই শিন্ডলার সান্ত্বনা পান না। তিনি যে গাড়িটি ব্যবহার করেন সেটির বিনিময়ে আরও ১০ জন মানুষকে বাঁচাতে পারতেন, তিনি যে সোনার পিনটি ব্যবহার করেন সেটির বিনিময়ে আরও ২ জন মানুষকে বাঁচাতে পারতেন এসব বলে অনুশোচনা করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
৬৭ নং লাইন:
অতপর সকাল হওয়ার আগেই শিন্ডলার কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের বন্দিদের পোশাক পড়ে সবার কাছ থেকে শেষবারের মত বিদায় নিয়ে সস্ত্রীক সে স্থান ত্যাগ করেন। পরদিন সোভিয়েত রেড আর্মির এক সদস্য এসে কারখানার শ্রমিকদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আমোন গ্যোট সোভিয়েত রেড আর্মির হাতে ধরা পড়েন এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
 
ইহুদি না হয়েও যারা [[ইহুদী গণহত্যা]]র সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইহুদিদের জীবন বাঁচিয়েছেন তাঁদেরতাদের ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল "রাইচাস এমং দ্য নেশন" সন্মাননায় ভূষিত করে। অস্কার শিন্ডলারের মৃত্যুর পর ইসরায়েল সরকার তাঁরতার মৃতদেহ জার্মানি থেকে এনে তাঁকেতাকে এই সন্মাননা দিয়ে জেরুজালেমে সমাহিত করে।
 
শেষদিকে শিন্ডলার যেসব ইহুদিদের বাঁচিয়েছেন তাঁদেরতাদের পরবর্তী প্রজন্ম জেরুজালেমে শিন্ডলারের সমাধিতে এসে একে একে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এবং এর মধ্য দিয়ে সিনেমাটির ইতি ঘটে।
 
== অভিনয়শিল্পী ==
৯৩ নং লাইন:
 
==নির্মাণ==
১৯৮৮ সালে সিনেমাটির অন্যতম প্রযোজক এবং পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ প্রথমে এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনার প্রস্তাব নিয়ে যান সিডনি পোলাক ও [[মার্টিন স্কোরসেজি]]র কাছে কিন্তু তাঁরাতারা দু’জনই এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনার প্রস্তাব সবিনয়ে ফিরিয়ে দেন। মার্টিন স্কোরসেজি বলেন, “কোন ইহুদি পরিচালকই এই সিনেমাটি ভালো ভাবে বানাতে পারবেন”। পরে স্পিলবার্গ চলচ্চিত্রটি নিয়ে যান ইহুদি পরিচালক [[রোমান পোলান্‌স্কি]]র কাছে যিনি নিজে একজন ইহুদী গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি এবং তাঁরতার মা আউশভিৎজ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে মারা যান। কিন্তু পোলান্‌স্কিও এই চলচ্চিত্র ফিরিয়ে দেন কারণ তখন তিনি নিজে সেই সময় ''[[দ্য পিয়ানিস্ট (২০০২-এর চলচ্চিত্র)|দ্য পিয়ানিস্ট]]'' নামের এক হলোকাস্ট চলচ্চিত্র তৈরিতে হাত দিয়েছেন। পরে স্পিলবার্গ নিজেই এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন।
 
স্পেশাল ইফেক্ট তো অনেক দূর সিনেমাটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের “ফ্লেভার” দেয়ার জন্য শুধুমাত্র শুরুর এবং শেষের দৃশ্য এবং লাল কোট পরিহিতা ছোট্ট শিশু ও মোমবাতি জ্বালানোর দৃশ্যটি বাদে পুরো সিনেমাটি স্পিলবার্গ সাদা-কালো ফরম্যাটে নির্মাণ করেন। এ সিনেমা তৈরির জন্য তিনি কোন স্টোরিবোর্ড তৈরি করেন নি। চলচ্চিত্রটি তিনি তথ্যচিত্রের মত করে তৈরি করেছেন। চলচ্চিত্রটি তৈরির সময় অনুপ্রেরণা পাওয়ার জন্য তিনি “টুইস্টেড ক্রস” (১৯৫৬) এবং “সোয়া” (১৯৮৫) নামের দুই হলোকাস্ট চলচ্চিত্র বারবার দেখতেন।
 
''শিন্ডলার্স লিস্ট'' চলচ্চিত্রটির সংগীত পরিচালনা করেছেন জন উইলিয়াম। তাঁকেতাকে যখন সিনেমাটির সংগীত পরিচালনার কথা বলা হলো তিনি স্পিলবার্গকে বললেন, “এ সিনেমার জন্য আমার চেয়ে আরও ভালো সংগীত পরিচালক দরকার।” জবাবে স্পিলবার্গ তাঁকেতাকে বলেছিলেন, “আমি জানি কিন্তু তাঁরা সবাই মারা গেছেন”।
 
চলচ্চিত্রটি পরিচালনার জন্য স্পিলবার্গ কোন টাকা নেননি। টাকা দিতে চাইলে তিনি বলেন, “এ জন্য টাকা নিলে সে টাকা হবে রক্তাক্ত টাকা"।