বাউল সঙ্গীত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
|||
৩ নং লাইন:
==বৈশিষ্ট==
বৈষ্ণব রসশাস্ত্রের মতো বাউল গানে ‘রাগ’ শব্দটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে ‘রাগ’ অর্থে অভিমান এবং প্রেমের নিবিড়তা বোঝায়। কাঙ্ক্ষিতজনের প্রতি নিবেদিত প্রেমের প্রগাঢ় অবস্থার নামই রাগ। রাগ দৈন্যে এমন ভাবই লক্ষণীয়। বাউলরা তাদের সাধনপন্থাকে রাগের কারণ বলে অভিহিত করে (আমার হয় না রে সে মনের মত মন/ আগে জানব কি সে রাগের কারণ)। বাউল গান সাধারণত দুটি ধারায় পরিবেশিত হয় আখড়া আশ্রিত সাধনসঙ্গীত এবং আখড়াবহির্ভূত অনুষ্ঠানভিত্তিক। আখড়া আশ্রিত গানের ঢং ও সুর শান্ত এবং মৃদু তালের। অনেকটা হাম্দ, [[গজল]] কিংবা নাত সদৃশ্য। লালন শাহ্-এর আখড়ায় বসে ফকিররা এ শ্রেণির গান করে থাকে। অপর ধারার চর্চা হয় আখড়ার বাইরে অনুষ্ঠানাদিতে, জনসমক্ষে। এ গান চড়া সুরে গীত হয়। সঙ্গে [[একতারা]], ডুগডুগি, [[খমক (বাদ্যযন্ত্র)|খমক]], [[ঢোল|ঢোলক]], সারিন্দা, [[দোতারা]] ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। তাল দাদরা, কাহারবা, কখনও ঝুমুর, একতালা কিংবা ঝাঁপতাল। শিল্পীরা নেচে নেচে গান করে। কখনও গ্রাম এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে বাউল গানের মাধ্যমে তা নিরাময়ের জন্য প্রার্থনা করা হয়। বাউলরা কখনও একক আবার কখনও দলবদ্ধভাবে সঙ্গীত পরিবেশন করে। এ গানের একজন মুল প্রবক্তা থাকে। তার সঙ্গে অন্যরা ধুয়া বা ‘পাছ দোয়ার’ ধরে। বাউল গানে কেউ কেউ শাস্ত্রীয় রাগসঙ্গীতের প্রভাবের কথা বলেছেন। কিন্তু এ গান মূলত ধর্মীয় লোকসঙ্গীতের পর্যায়ভুক্ত। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উন্মেষ ও বিকাশ লোকসঙ্গীতের অনেক পরে। আধুনিক শিল্পীদের কণ্ঠে কখনও কখনও রাগের ব্যবহার হলেও তা সর্বক্ষেত্রে অপরিহার্য নয়। বাউল গানে সাধারণত দুধরনের সুর লক্ষ করা যায় প্রথম কলি অর্থাৎ অস্থায়ীতে এক সুর এবং অন্য সব কলিতে কিছুটা ভিন্ন সুর। সবশেষে দ্রুতগতিতে দ্বিতীয় কলির অংশবিশেষ পুনরায় গীত হয়। এ গানে অস্থায়ী এবং অন্তরাই প্রধান। অস্থায়ীকে কখনও ধুয়া, মুখ বা মহড়া বলা হয়। দ্রুত লয়ের এ গানে প্রতি অন্তরার পর অস্থায়ী গাইতে হয়। কোনো কোনো গানে সঞ্চারী থাকে; আবার কোনো কোনো গানে নাচেরও প্রচলন রয়েছে, যার উৎস গ্রামীণ পাঁচালি গান বলে মনে করা হয়। তবে আখড়া আশ্রিত বাউল গানে নাচের প্রচলন নেই। কিছু কিছু বাউল গান কীর্তন আশ্রিত। বৈষ্ণবধর্মের প্রভাবে এমনটি হয়েছে। তবে বাউল গানে সুফিভাবনাই প্রবল। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, [[পশ্চিমবঙ্গ]] ও [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] বাউল গানে সুরের পার্থক্য রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সহজিয়া বৈষ্ণব সুরের আধিক্য, আর বাংলাদেশে সুফি গজলের প্রভাব, যার একটি দেশজরূপ ভাবগান ও শব্দগান। বাউল গানের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এতে একটা উদাসী ভাব লক্ষ করা যায়; এর সুরে যেন মিশে থাকে না-পাওয়ার এক বেদনা। বাউল গানের একটি বড় সম্পদ তার গায়কী বা গায়নশৈলী। উল্লেখ্য যে, বাউল গান একটি বিশেষ অঞ্চলে রচিত হলেও সঙ্গীতশিল্পীদের কারণে এর ওপর বিভিন্ন অঞ্চলের প্রভাব পড়ে। ফলে সুর ও গায়কিতে আসে পরিবর্তন। কখনও কখনও শব্দেও পরিবর্তন ঘটে। লক্ষ করা গেছে, [[কুষ্টিয়া]] অঞ্চলের বাউল গান যখন [[সিলেট]], [[চট্টগ্রাম]], [[ঢাকা]], [[ফরিদপুর জেলা|ফরিদপুর]], [[রাজশাহী]], [[
==প্রসার==
১১ নং লাইন:
'''বাউল গানের কিংবদন্তি [[শাহ আবদুল করিম|শাহ আবদুল করিমের]]''' গান কথা বলে ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তিনি তার গানের অনুপ্রেরনা পেয়েছেন প্রখ্যাত '''বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, [[পাঞ্জু শাহ|পুঞ্জু শাহ]] এবং দুদ্দু শাহ''' এর দর্শন থেকে। তিনি আধ্যাত্নিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন '''[[কামাল উদ্দিন]], সাধক [[রশিদ উদ্দিন]], শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ''' এর কাছ থেকে। তিনি শরীয়তী, মারফতি, নবুয়ত, বেলায়া সহ সবধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন।<ref>দৈনিক সমকাল, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০০৯।</ref>
'''বাউল গানের শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার [[শাহ আলম সরকার]]''' পারিবারিকভাবেই বাউল গানের সাথে যুক্ত তিনি। গান করতে গিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিলেও গান নিয়েই
'''[[পবন দাস বাউল]] এবং বাউল গানের প্রসারে তার ভূমিকা-''' বাউল গানের একনিষ্ঠ সাধক, যার নামেই রয়েছে বাউলের ছোয়া। এক নামেই গোটা বিশ্বে পরিচিতি ধারন করেছে তার নিরলস চেষ্টায়, হয়ে উঠেছে বাউল গানের একনিষ্ঠ উপাসক। ভক্তি থেকেই সাধনা আর সাধনা থেকেই ধ্যান-জ্ঞান। বাউল গানের কথা আসলেই যে ক জনের মুখ চোখে ভাসে তাদের মধ্যে পবন দাস উন্নতম একজন। যাকে বাউল গানের মডেল বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। বাউল গানের সাধনা আরো অনেকেই করেছে, করছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ভাবে তার মতো খ্যাতি আর কেউ অর্জন করেছেন বলে জানা নেই। আশির দশক থেকেই নিজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব ব্রমান্ডে বেড়িয়ে পরে বাউল গানের প্রচারনায়। [[ইউরোপ|ইউরোপের]] বিভিন্ন দেশে ব্যাপক সাড়া জাগাতে শুরু করে তার গায়কি। বাউল গানের ভক্ত হয়ে উঠে ইউরোপের লক্ষ লক্ষ সংগীত প্রেমি। আর তাদের তাগিদেই মাঝে মাঝেই পাড়ি দিতে হতো [[ফ্রান্স|ফ্রান্সে]]। শুধু শ্রতাকুলই না, অনেক নামী-দামী সংগীত শিল্পীও তার গায়কীর ভক্ত হয়ে যায়। আর সেই সুবাদের বিশ্বখ্যাত অনেক শিল্পীদের সাথে গান করে। ১৯৯৭ সালের আগ পর্যন্ত ফ্রান্সে মাঝে মাঝেই যেতে হতো। কনসার্ট বা বিভিন্ন সংগীত বিষয়ক অনুস্ঠানে অংশ নিতে। হয়তো বাংলার চাইতে সেখানেই তার ভক্তকূলের পরিধি বেড়ে গিয়েছিল। [[ফরাসী|ফরাসীরাও]] তাকে কম দেইনি, ১৯৭৯ সালে তার জীবন/বাউলদের জীবন নিয়ে পুরো একটা সিনেমা/ডকুমেন্টারী বানিয়ে ফেলেন ফরাসী সরকার। ১৯৭৭ সালের শুরু করেন সেই সিনেমার
===বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ বাউল গান===
১৯ নং লাইন:
==অনন্য ধারা==
বাউল গান বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত সংগীতের একটি অনন্য ধারা। এটি বাউল সম্প্রদায়ের নিজস্ব সাধনগীত। আবহমান বাংলার প্রকৃতি, মাটি আর মানুষের জীবন জিজ্ঞাসা একাত্ম হয়ে ফুটে ওঠে বাউল গানে। আরো ফুটে ওঠে সাম্য ও মানবতার বাণী। এ ধারাটি পুষ্ট হয়েছে পঞ্চদশ শতাব্দীর তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের ভাব, রাধাকৃষ্ণবাদ, বৈষ্ণব সহজিয়া তত্ত্ব ও সুফি দর্শনের প্রভাবে। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, বাংলাদেশে বাউল মতের উদ্ভব সতের শতকে। এ মতের প্রবর্তক হলেন আউল চাঁদ ও মাধব বিবি। গবেষকদের মতে, নিজ দেহের মধ্যে ঈশ্বরকে পাওয়ার তীব্র ব্যাকুলতা থেকে বাউল ধারার সৃষ্টি। বাউল সাধকদের সাধনার মাধ্যম হচ্ছে গান। সাধকের কাছে সাধন-ভজনের গূঢ়তত্ত্ব প্রকাশ পায় গানের মাধ্যমেই। প্রত্যেক মানুষের অন্তরে যে পরম সুন্দর ঈশ্বরের উপস্থিতি, সেই অদেখাকে দেখা আর অধরাকে ধরাই বাউল সাধন-ভজনের উদ্দেশ্য। বাউলের ভূখণ্ড
==লালনের বাউল গান==
==জনপ্রিয়তা==
শহরে, গ্রামে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে বাউলসংগীত। সব ধরনের শ্রোতাই মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করে বাউল গান। এ গানের অসম্ভব জনপ্রিয়তার পেছনে আছে এর সর্বজনীনতা, গভীর মানবিকতা বোধ। [[জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা|ইউনেসকো]] যে স্বীকৃতি বাউল গানকে দিয়েছে, তার অধিকাংশ কৃতিত্বই লালন সাঁইয়ের। মানুষ লালনের গান শুনেই বাউল গান নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বেশি। ইউনেসকোর স্বীকৃতির সুফল কী জানতে চাইলে তরুণ গবেষক সাইমন জাকারিয়া জানান, এই স্বীকৃতির ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলার বাউল গানের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এর ফলে বাউল গানের সংরক্ষণ ও প্রসারেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিয়ে এ ব্যাপারে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তিনি আরো জানান, ওই ঘোষণার পর ইউনেসকো বাউল গানের বাণী ও সুর সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে [[
নব্বই দশকের মাঝামাঝি যখন বিশ্বায়নের হাওয়া লাগল বাংলাদেশে, তার পরের কয়েক বছর বাউল গানের অন্ধকার যুগ। হিন্দী ধুমধাড়াক্কা আর এমটিভির অশ্লীল বন্যায় বাংলা গানের তখন হাসফাস অবস্থা। দু’একটা উল্লেখ করার মত ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে। [[ফীডব্যাক (ব্যান্ড)|ফিড্ ব্যাকের]] সঙ্গে [[আবদুর রহমান বয়াতী|আবদুর রহমান বয়াতীর]] যুগলবন্দীতে ‘মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি / কোন মিস্তরী বানাইয়াছে’ – তারুণ্যের একনম্বর পছন্দের তালিকায় ছিল বেশ ক’ মাস। বাউল গানের সুন্দরীতমা চাঁদ ঢাকা পড়ে রইল অপসংস্কৃতির কালো মেঘে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লেগেছে বেশ ক’বছর। তবে যে নতুন রূপে বাউল গানের প্রকাশ ঘটল একবিংশ শতাব্দীতে তার সঙ্গে তুলনা চলেনা আগেকার কোন সময়েরই।<ref>পড়শী,৯ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা আশ্বিন ১৪১৬।</ref>
[[ইউনেস্কো]] ২০০৫ সালে বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে
== তথ্যসূত্র ==
|