গঙ্গা (দেবী): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
InternetArchiveBot (আলোচনা | অবদান)
1টি উৎস উদ্ধার করা হল ও 0টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল। #IABot (v2.0beta10ehf1)
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১৬ নং লাইন:
}}
 
'''গঙ্গা''' ([[সংস্কৃত ভাষা|সংস্কৃত]]: गंगा ''{{IAST|Gaṅgā}}'', [[থাই ভাষা|থাই]]: คงคา ''Khongkha'') '''[[গঙ্গা নদী|গঙ্গা নদীর]]''' মূর্তিস্বরূপ এক [[হিন্দু]] দেবী। হিন্দুধর্মে এই দেবী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারিণী। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন গঙ্গায় স্নান করলে সমস্ত পাপ মুছে যায় এবং জীব মুক্তিলাভ করে। অনেকে আত্মীয়স্বজনের দেহাবশেষ বহু দূরদূরান্ত থেকে বয়ে এনে গঙ্গায় বিসর্জন দেন; তাঁরাতারা মনে করেন, এর ফলে মৃত ব্যক্তির আত্মা [[স্বর্গ|স্বর্গে]] গমন করেন। গঙ্গার তীরবর্তী বহু স্থান হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী পবিত্র। এর মধ্যে রয়েছে [[হরিদ্বার]], [[এলাহাবাদ]], [[বারাণসী]], [[নবদ্বীপ]], [[গঙ্গাসাগর]] প্রভৃতি। [[থাইল্যান্ড|থাইল্যান্ডের]] [[লয় ক্রাথং]] উৎসবে পূণ্যার্থীরা নদীতে প্রদীপযুক্ত ছোটো ছোটো নৌকা ভাসিয়ে [[গৌতম বুদ্ধ|বুদ্ধ]] ও গঙ্গা দেবীকে শ্রদ্ধা জানান।
 
== পৌরাণিক উপাখ্যান ==
=== জন্ম ===
গঙ্গার জন্মকাহিনি বিষয়ে হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলির মধ্যে মতদ্বৈধ দৃষ্ট হয়। একটি কাহিনি অনুযায়ী [[ব্রহ্মা|ব্রহ্মার]] [[কমণ্ডলু]] এক নারীমূর্তির স্বরূপ প্রাপ্ত হয়। ইনিই গঙ্গা। [[বৈষ্ণব]] মতানুসারে, ব্রহ্মা তাঁরতার কমণ্ডলুর জল নিয়ে সশ্রদ্ধ চিত্তে [[বিষ্ণু|বিষ্ণুর]] পদ ধৌত করেছিলেন। সেই থেকেই গঙ্গার জন্ম। তৃতীয় একটি মত অনুযায়ী, গঙ্গা পর্বতরাজ হিমালয় ও তাঁরতার পত্নী মেনকার কন্যা এবং [[পার্বতী|পার্বতীর]] ভগিনী। তবে প্রতিটি মতেই একথা স্বীকৃত যে ব্রহ্মা গঙ্গাকে পবিত্র করে তাঁকেতাকে স্বর্গে উত্তীর্ণ করেন।
 
=== মর্ত্যাবরোহণ ===
[[চিত্র:Ganga Mahabalipuram.jpg|thumb|left|"[[ভগীরথ|ভগীরথের]] তপস্যা", [[মহাবলীপুরম|মহাবলীপুরমের]] ভাস্কর্য]]
 
মহাভারতের কাহিনি অনুসারে, রাজা সগর ষাট হাজার পুত্রের জনক হয়েছিলেন। তিনি একবার অশ্বমেধ যজ্ঞ করলে দেবরাজ ইন্দ্র তাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে যজ্ঞের পবিত্র ঘোড়া অপহরণ করেন। সগর তাঁরতার ষাট হাজার পুত্রকে অশ্বের অন্বষণে প্রেরণ করেন। তাঁরাতারা [[পাতাল|পাতালে]] ধ্যানমগ্ন মহর্ষি কপিলের ঘোড়াটিকে দেখতে পান। মহর্ষিকে চোর সন্দেহ করে তাঁরাতারা তাঁরতার বহু বছরের ধ্যান ভঙ্গ করলে ক্রুদ্ধ মহর্ষি দৃষ্টিপাত মাত্র তাঁদেরতাদের ভস্ম করে দেন। সগর রাজার ষাট হাজার সন্তানের আত্মা পারলৌকিক ক্রিয়ার অভাবে প্রেতরূপে আবদ্ধ হয়ে থাকেন।
 
পরে সগরের বংশধর, রাজা দিলীপের পুত্র [[ভগীরথ]] তাঁদেরতাদের আত্মার মুক্তিকামনায় গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে আসার মানসে ব্রহ্মার তপস্যা শুরু করেন। তপস্যায় সন্তুষ্ট ব্রহ্মা গঙ্গাকে মর্ত্যে প্রবাহিত হয়ে সগরপুত্রদের আত্মার সদগতিতে সহায়তা করতে নির্দেশ দেন। গঙ্গা এই নির্দেশকে অসম্মানজনক মনে করে মর্ত্যলোক প্লাবিত করার ইচ্ছা পোষণ করেন। তখন ভগীরথ গঙ্গার গতিরোধ করার জন্য [[শিব|শিবের]] আরাধনা করেন।
 
[[চিত্র:Ravi Varma-Descent of Ganga.jpg|thumb|গঙ্গাবতরণ, রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত চিত্র]]
 
ক্রদ্ধ গঙ্গা শিবের মস্তকে পতিত হন। কিন্তু শিব শান্তভাবে নিজ জটাজালে গঙ্গাকে আবদ্ধ করেন এবং ছোটো ছোটো ধারায় তাঁকেতাকে মুক্তি দেন। শিবের স্পর্শে গঙ্গা আরও পবিত্র হন। স্বর্গনদী গঙ্গা পাতালে প্রবাহিত হওয়ার আগে মর্ত্যলোকে সাধারণ জীবের মুক্তির হেতু একটি পৃথক ধারা রেখে যান। এইভাবে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল – তিন লোকে প্রবাহিত হয়ে গঙ্গা "ত্রিপথগা" নামে পরিচিতা হন।
 
যেহেতু ভগীরথ গঙ্গার মর্ত্যাবতরণের প্রধান কারণ, সেই হেতু গঙ্গার অপর নাম ভাগীরথী। সংস্কৃতে ভগীরথের এই দুঃসাধ্য সাফল্যের কথা মাথায় রেখে "ভগীরথ প্রযত্ন" নামে একটি শব্দবন্ধ প্রচলিত আছে।
 
গঙ্গার অপর নাম জাহ্নবী। কথিত আছে, মর্ত্যে ভগীরথকে অনুসরণ করার সময় গঙ্গা [[ঋষি জহ্নু|ঋষি জহ্নুর]] আশ্রম প্লাবিত করেন। উগ্রতপা জহ্নু ক্রুদ্ধ হয়ে গঙ্গার সমস্ত জল পান করে ফেলেন। তখন দেবগণ গঙ্গার মুক্তির জন্য ঋষির কাছে প্রার্থনা করতে থাকলে নিজের জঙ্ঘা বা জানু চিরে গঙ্গাকে মুক্তি দেন। এইরূপে গঙ্গা জহ্নু ঋষির কন্যা রূপে পরিচিতা হন এবং তাঁরতার অপর নাম হয় জাহ্নবী।
 
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী [[কলিযুগ|কলিযুগের]] অন্তে [[সরস্বতী নদী|সরস্বতী নদীর]] মতো গঙ্গাও শুকিয়ে যাবে। তখন আবার [[সত্য যুগ|সত্যযুগের]] সূচনা হবে।
৪৩ নং লাইন:
[[স্কন্দপুরাণ]] অনুসারে, [[শিব]] ও [[পার্বতী|পার্বতীর]] পুত্র [[কার্তিকেয়|কার্তিকেয়ের]] (মুরুগান) পালিকা-মাতা হলেন গঙ্গা।
 
একটি কাহিনি অনুযায়ী, পার্বতী তাঁরতার গাত্রমল হতে [[গণেশ|গণেশের]] মূর্তি নির্মাণ করে তা গঙ্গায় নিমজ্জিত করলে সেই মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কারণে মনে করা হয় গণেশের দুই জননী – পার্বতী ও গঙ্গা। গণেশের অপর নাম তাই ''দ্বৈমাতুর'' বা ''গাঙ্গেয়'' (গঙ্গাপুত্র)।<ref>Y. Krishan ({{IAST|Gaṇeśa}}:Unravelling an Enigma, p.6</ref>
 
[[ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ]] অনুসারে, বিষ্ণুর তিন স্ত্রী ছিলেন – [[লক্ষ্মী]], গঙ্গা ও [[সরস্বতী (দেবী)|সরস্বতী]]। তাঁরাতারা সবসময় পরস্পর কলহ করতেন বলে বিষ্ণু লক্ষ্মীকে নিজের কাছে রেখে শিবকে গঙ্গা ও ব্রহ্মাকে সরস্বতী দান করেন।
 
হিন্দু মহাকাব্য [[মহাভারত]] অনুসারে, [[বশিষ্ট]] কর্তৃক অভিশপ্ত [[বসু|বসুগণ]] গঙ্গাকে তাঁদেরতাদের জননী হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। গঙ্গা রাজা [[শান্তনু|শান্তনুকে]] এই শর্তে পতিত্বে বরণ করেন যে গঙ্গার কোনো কাজে রাজা বাধাস্বরূপ হবেন না। একে একে অষ্টবসুর সাত জন গঙ্গাগর্ভে জন্মগ্রহণ করেন এবং জন্মমাত্রেই গঙ্গা তাঁদেরতাদের জলে নিমজ্জিত করে হত্যা করেন এবং তাঁরাতারা শাপমুক্ত হন। রাজা তাঁকেতাকে বাধা না দিলেও অষ্টম সন্তান জন্মের পর শান্তনু গঙ্গাকে বাধা দিতে বাধ্য হন। এই কারণে গঙ্গার অষ্টম সন্তানটি জীবিত রয়ে যান। এই ব্যক্তিই মহাকাব্যের সর্বজনশ্রদ্ধেয় চরিত্র [[ভীষ্ম]]।
 
[[চিত্র:Shiva Bearing the Descent of the Ganges River, folio from a Hindi manuscript by the saint Narayan LACMA M.86.345.6.jpg|thumb|শিবের জটায় গঙ্গাবতরণ, নন্দী, পার্বতী ও ভগীরথ দর্শক – ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে অঙ্কিত সন্ত নারায়ণের পাণ্ডুলিপিচিত্র]]
৬০ নং লাইন:
[[চিত্র:Ganga National Museum01.jpg|thumb|left|ভারতের জাতীয় সংগ্রহশালায় গঙ্গা ভাস্কর্য]]
 
[[ভারতীয় শিল্পকলা|ভারতীয় শিল্পকলার]] ধর্মীয় অনুশাসন অনুসারে গঙ্গা এক ইন্দ্রিয়পরায়ণা, সুন্দরী নারী। তাঁরতার হাতে একটি উচ্ছলিত জলপাত্র। এই পাত্রটি অফুরন্ত জীবন ও উর্বরাশক্তির প্রতীক, যা মহাবিশ্বের গতিকে পুষ্ট ও সচল রাখে।
 
গঙ্গামূর্তির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল তাঁরতার বাহন [[মকর (হিন্দু পুরাণ)|মকর]]। এটি একটি কুমির (দেহাংশ) ও মাছের (লেজ) সংকর। পশ্চিমা জ্যোতিষশাস্ত্রের [[ক্যাপ্রিকন]] হিন্দু মকরের একটি রূপ। অন্যদিকে মকর [[ঋগ্বৈদিক দেবতা]] [[বরুণ|বরুণেরও]] বাহন। এই কারণে গঙ্গা বৈদিক শিকড়ের ধারণাটি দৃঢ় হয়।
 
== টীকা ==