পীর বড়খাঁ গাজী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সংশোধন
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১ নং লাইন:
[[File:Pir Gazi and his tiger in Sundarbans.jpg|thumb|পীর গাজী ও তার বাঘ, [[সুন্দরবন]], [[বঙ্গ]], [[ভারত]], ১৮০০ শতাব্দী]]
{{বাংলার সংস্কৃতি}}
'''পীর বড়খাঁ গাজী''' (গাজীবাবা, গাজী সাহেব, মোবারক শাহ গাজী, বরখান গাজী ইত্যাদি নামেও পরিচিত) ভারতের [[পশ্চিমবঙ্গ]]ের [[দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা]] অঞ্চলের তথা দক্ষিণ [[বঙ্গ|বাংলার]] মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের অন্যতম প্রধান পীর। তাঁকেতাকে সুন্দরবনের ভাটি অঞ্চলের ব্যাঘ্রকুলের অধিষ্ঠাতা হিসাবে মান্য করা হয়।<ref name=b>বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ, ড. বরুণকুমার চক্রবর্তী, প্রথম প্রকাশ:১৯৯৫, পৃষ্ঠা: ২৫৫-২৫৬, ISBN 81-86036-13-X</ref> এখানকার ক্যানিং থানার অন্তর্গত ঘুটিয়ারি শরীফে (মতান্তরে, বাংলাদেশের [[সিলেট জেলা]]র শিবগাঁও গ্রামে বা গাজীপুরে<ref name=a/>) গাজী সাহেবের কবরস্থান বর্তমান। এটি হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকল মানুষের তীর্থস্থান। উত্তর ও দক্ষিণ [[চব্বিশ পরগনা]] তথা দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে বড়খাঁ গাজীর একাধিক দরগাহ-নজরগাহ আছে। বিভিন্ন লোককাহিনীতে তাঁকেতাকে একজন অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন [[ইসলাম]]ধর্ম-প্রচারক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।<ref name=Ghosh>ঘোষ, বিনয়, "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি", তৃতীয় খন্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশ ভবন, পৃষ্ঠা: ২৪৫-২৫০</ref>
 
==পরিচয়==
লোককথা অনুযায়ী, বর্তমান দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বেলে-আদমপুর (মতান্তরে, বৈরাটনগর) গ্রামে তাঁরতার জন্ম হয়। তিনি প্রথম যৌবনে পিতার অতুল ঐশ্বর্য ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য ফকিরি গ্রহণ করেন এবং ভাটি অঞ্চল সুন্দরবনে আসেন।<ref name=b/> বন্ধু কালুর সহায়তায় বড়খাঁ গাজীর বিবাহ হয় বৃহত্তর [[যশোর জেলা]]র ব্রাহ্মণনগরের হিন্দু রাজা মুকুট রায়ের কন্যা চম্পাবতীর সাথে। তাঁরতার দুই পুত্র দুঃখী গাজী ও মেহের গাজী। অধুনা বাংলাদেশের [[ঝিনাইদহ জেলা]]র [[কালীগঞ্জ উপজেলা]]র বারবাজারে আজও ''গাজী কালু ও চম্পাবতী''র মাজার বর্তমান।
 
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার [[সোনারপুর]]ে জঙ্গল কেটে বসতিও নির্মাণ করেছিলেন বড়খাঁ গাজী। নদী-জঙ্গল অধ্যুষিত এই অঞ্চলে বাঘ, কুমীর, সাপ ইত্যাদিকে যখন ইচ্ছা বশ করতে ও যুদ্ধের সৈনিক করতে পারতেন। রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র সকলের উপর তাঁরতার সমান প্রভুত্ব বর্তমান। কুমীর-দেবতা কালুরায় তাঁরতার বিশেষ বন্ধু।<ref>যশোর খুলনার ইতিহাস-২য় খণ্ড, সতীশচন্দ্র মিত্র, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশ: ২০১১, পৃষ্ঠা: ৪৪, ISBN 984715143</ref>
 
অনেকের মতে, বড়খাঁ গাজী কারও ব্যক্তিগত নাম নয়, মধ্যযুগীয় বাংলায় ইসলাম প্রচারকদের শীর্ষস্থানীয়রাই ''বড়খাঁ গাজী'' নামে পরিচিত। একটি মতে, [[পাণ্ডুয়া]]র প্রসিদ্ধ পীর জাফর খাঁ গাজীর পুত্রই বড়খাঁ গাজী। [[সুকুমার সেন]]ের মতে, চতুর্দশ শতকের পীর সুফি খানই ষোড়শ শতকে বড়খাঁ গাজী নামে পরিগণিত হন। তৃতীয় মতে, পঞ্চদশ শতকের পীর ইসমাইল গাজীই হলেন আলোচ্য বড়খাঁ গাজী।<ref name=b/>
১৪ নং লাইন:
==গাজী পীরের বিভিন্ন উপাখ্যান==
 
লোককাহিনী অনুসারে, স্থানীয় [[হিন্দু ধর্ম|হিন্দুদের]] ইসলামে ধর্মান্তরিত করতে গিয়ে বহুবার হিন্দু দেবদেবীদের সঙ্গে তাঁরতার বিরোধ ও সংঘর্ষ ঘটেছে। আঞ্চলিক প্রভুত্বের অধিকার নিয়ে [[সুন্দরবন]]ের হিন্দু ব্যাঘ্রদেবতা [[দক্ষিণ রায়]]ের সঙ্গে তাঁরতার প্রবল যুদ্ধ হয়। লোককবি [[কৃষ্ণরাম দাস]]ের 'রায়মঙ্গল'(১৬৮৬-৮৭ খ্রীষ্টাব্দ) কাব্যের কাহিনী অনুসারে, জগদীশ্বর হিন্দু-মুসলিমের মিলিত দেবতা অর্ধ-শ্রীকৃষ্ণ-পয়গম্বরের ('''কৃষ্ণপয়গম্বর''') বেশধারণ করে গাজী ও দক্ষিণরায়কে শান্ত করেন। ফলে যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, দক্ষিণরায় সুন্দরবনের সমস্ত ভাটি অঞ্চলের, কুমীর-দেবতা কালুরায় হিজলীর এবং গাজীসাহেব সর্বত্র শ্রদ্ধা-সম্মানের অধিকার লাভ করেন।<ref name=b/>
<poem>
সর্বত্র সাহেব পীর সবে নোয়াইবে শির
২৯ নং লাইন:
ঘুটিয়ারি শরীফে গাজী সাহেবের কবরস্থান বর্তমান। এটি হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকল মানুষের তীর্থস্থান। পুরুষ, নারী এমনকি [[হিজড়া]] সম্প্রদায়ের মানুষেরা এখানে মানতের জন্য আসেন; তবে মহিলা ও হিজড়ারা মাজারে প্রবেশ করে না, পাশের জানালায় ধূপ-বাতি দেয়। গাজীকে ''জিন্দা পীর'' হিসাবে মানা হয়। ৭ই আষাঢ় পীরের মৃত্যুর দিন স্মরণ করে প্রতি বছর একসপ্তাহ ধরে বিশেষ উৎসব ও মেলা হয়। এছাড়া, ১৭ই শ্রাবণ থেকে উদযাপিত বিশেষ উৎসবে অনেক লোকসমাগম হয়। এইসময় নানা ইসলামিক গজল, কাওয়ালি, সুফি তারানা গাজীপীরের উদ্দেশ্যে গাওয়া হয়ে থাকে।
 
গাজীবাবার অলৌকিক ক্ষমতা সম্বন্ধে এখানে নানা প্রবাদ প্রচলিত আছে। একটি জনশ্রুতি অনুসারে, একবার এই অঞ্চলে খরা হওয়ায় লোকেরা গাজীবাবাকে বৃষ্টি আনিয়ে দিতে বলেন। গাজীবাবা সেই অনুরোধে সমাধিস্থ হন। তারপর একজন পাঠান মুসলমান গাজীবাবার সঙ্গে দেখা করতে এসে তাঁকেতাকে মৃত ভেবে ছুঁয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ দৈববাণী হয় যে, তিনি মৃত ছিলেন না, সমাধিস্থ ছিলেন। কিন্তু স্পর্শদোষ ঘটায় তার আত্মা পর্দানশীন হয় এবং যে কেউ ভাসাপুকুরে শিরনি দিয়ে মানত করলে তা পূরণ হবে। সেই দিনটি ছিল [[বাংলা বর্ষপঞ্জী]]র ৭ই আষাঢ়, অম্বুবাচী। সেই থেকে ঐ তারিখে এখানে তিনদিনের গাজীবাবার জাত বা মেলা, এবং ৪১ দিনের দিন ১৭ই শ্রাবণ উরস
অনুষ্ঠান পালিত হয়।<ref name=a/>