পূর্ব রণাঙ্গন (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৩১৪ নং লাইন:
 
[[File:RIAN archive 137811 Children during air raid.jpg|thumb|১৯৪১ সালের জুন মাসে, যুদ্ধের প্রথম দিনগুলোতে জার্মান বিমান হামলার সময় সোভিয়েত শিশুরা, রুশ সংবাদ মাধ্যমের (RIA Novosti) আর্কাইভ থেকে।]]
সোভিয়েত লাল ফৌজ নীপার ও দ্‌ভিনা নদীদ্বয়ের অপর পাড়ে পিছিয়ে গেলে, সোভিয়েত কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ স্তাভ্‌কা পশ্চিম অঞ্চলের সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ যতটা সম্ভব অন্যত্র অপসারণের প্রচেষ্টা চালায়। যুদ্ধক্ষেত্রের সম্মুখ সারির নিকটবর্তী সমস্ত কলকারখানার যন্ত্রাংশসমূহ সরিয়ে নেয়া হয় এবং মালবাহী রেলগাড়িতে করে দূরবর্তী অঞ্চলসমূহে স্থানান্তর করা হয়, মূলতঃ ইউরাল পর্বত, ককেশাস, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব সাইবেরিয়ার দূর্গমদুর্গম অঞ্চলে এসব শিল্প-কারখানা পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করা হয়। বেসামরিক নাগরিকদের অধিকাংশকেই পেছনে ফেলে আসা হয়, শুধুমাত্র কলকারখানা শ্রমিকদেরকে তাদের যন্ত্রপাতি সমেত রেলগাড়িতে পরিবহন করা হয়, অন্যান্যদেরকে শত্রুদের করুণার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়।
 
স্টালিন লাল ফৌজকে নির্দেশ দেন "পোড়ামাটির নীতি" পালন করতে, যাতে তাদের পিছু ধাওয়া করে আসা পূর্বগামী জার্মানরা সকল রসদ সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়। এই আদেশ পালনের জন্যে সোভিয়েত বাহিনী কতিপয় "বিধ্বংসী" ব্যাটালিয়ন গঠন করে, তারা সন্দেহভাজন যেকোন ব্যক্তিকে হত্যা করে। এই বিধ্বংসী ব্যাটালিয়নসমূহ গ্রাম, বিদ্যালয় এবং সকল সরকারি দালানকোঠা পুড়িয়ে দেয়।<ref name=paavle>{{বই উদ্ধৃতি|লেখক=[[:et:Indrek Paavle|Indrek Paavle]], Peeter Kaasik|বছর=2006|পাতাসমূহ=469–493|অধ্যায়=Destruction battalions in Estonia in 1941|সম্পাদক=[[:et:Toomas Hiio|Toomas Hiio]] |editor2=Meelis Maripuu |editor3=Indrek Paavle |শিরোনাম=Estonia 1940–1945: Reports of the [[Estonian International Commission for the Investigation of Crimes Against Humanity]]|অবস্থান=Tallinn}}</ref> এই নীতি অনুসরণ করে সোভিয়েত এন.কে.ভি.ডি. বাহিনী হাজার হাজার সোভিয়েত-বিরোধী বন্দীদের ওপর গণহত্যা চালায়।<ref name="Social Catastrophe">{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Gellately|প্রথমাংশ=Robert|লেখক-সংযোগ=Robert Gellately|শিরোনাম=Lenin, Stalin, and Hitler: The Age of Social Catastrophe|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=Z42C6L-fxjUC&pg=PA391|বছর=2007|প্রকাশক=Alfred A. Knopf|আইএসবিএন=978-1-4000-4005-6|পাতা=391}}</ref>
৪২২ নং লাইন:
ওরেল ঘাঁটি আক্রমণের মাধ্যমে আরম্ভ হয় সোভিয়েতদের গ্রীষ্মকালীন অভিযান, যা কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। অপেক্ষাকৃত উন্নত যুদ্ধ-সরঞ্জামে সজ্জিত "গ্রসডইচল্যান্ড ডিভিশন"কে বেলগোরোড থেকে কারাচেভ নগরীর দিকে গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় এবং এর কৌশলগত ক্ষতি তারা সামাল দিতে পারে নি। এর ফলে জার্মান সেনাবাহিনী ওরেল ঘাঁটি ছেড়ে পিছু হটতে থাকে, ১৯৪৩ সালের ৫ আগস্ট লাল ফৌজ ওরেল ঘাঁটির কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়। জার্মান বাহিনী ব্রিয়ানস্ক নগরীর সম্মুখে হেগেন রেখার পর্যন্ত তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। দক্ষিণে লাল ফৌজ "জার্মান দক্ষিণ বাহিনীর" বেলগোরোড অবস্থান আক্রমণ করে তাদের প্রতিরোধ ভেঙে দিতে সক্ষম হয় এবং খার্কোভ নগরী অভিমুখে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। যদিও জুলাই মাসজুড়ে তুমুল ট্যাংক লড়াইয়ে জার্মান টাইগার-১ ট্যাংক বাহিনী সোভিয়েত ট্যাংক আক্রমণসমূহকে থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়, কিন্তু পেসেল ঘাঁটি থেকে আগত সোভিয়েত বাহিনীও আক্রমণ শুরু করলে জার্মানরা তাদের উভয়পাশ থেকে আক্রমণের শিকার হয়। অবশেষে ২২ আগস্ট জার্মান বাহিনী খার্কোভ নগরী শেষবারের মত ত্যাগ করে পিছু হটে যায়।
 
মিউস নদীর তীরে অবস্থিত জার্মান বাহিনী, যাতে ছিল ১ম প্যানজার বাহিনী ও পুনর্গঠিত ৬ষ্ঠ সেনাবাহিনী, নিজেদের অবস্থানে সোভিয়েত আক্রমণ ঠেকানোর মত শক্তি তাদের ছিল না। লাল ফৌজ তাদের উপর হামলা চালালে তারা পিছু হটে ডনবাস শিল্প অঞ্চল হয়ে নীপার নদী পর্যন্ত চলে যায়, এতে তারা অধিকৃত কৃষিভূমির অর্ধেকের কর্তৃত্বই হারায়, যে কারণে তারা সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেছিল। এ পর্যায়ে হিটলার নীপার নদী পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহার করে নিতে রাজি হন, যেখানে "ওস্টওয়াল" নির্মানের পরিকল্পনা ছিল, যা ছিল জার্মান-ফরাসি সীমান্তে নির্মিত "সিগফ্রেড লাইন" বা "ওয়েস্ট-ওয়াল"-এর অনুরূপ সারিবদ্ধ দূর্গদুর্গ ও অপরাপর প্রতিরক্ষামূলক স্থাপনা।
 
"ওয়েরমাক্‌ট"-এর প্রধান সমস্যা ছিল যে, এই প্রতিরক্ষা স্থাপনাসমূহ তখনও নির্মিত হয়নি; সেপ্টেম্বর মাসে যখন দক্ষিণ যুগ্ম বাহিনী পূর্ব ইউক্রেন ত্যাগ করে নীপার নদী পারাপার হচ্ছিল, ততদিনে সোভিয়েত বাহিনী তাদের নাগাল পেয়ে যায়। বহুকষ্টে সৈন্যরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে দাঁড়-টানা নৌকায় চড়ে ৩ কি.মি. প্রশস্ত এই নদী পার হয় এবং নদীর অপর পাড়ে একটি ঘাঁটি স্থাপন করে। লাল ফৌজ তাদের কাছ থেকে এই ভূমির দখল নিতে দ্বিতীয়বার আক্রমণ চালায়, কানিভ শহরে ২৪ সেপ্টেম্বর প্যারাস্যুটে করে সোভিয়েত সৈন্যেরা অবতরণ করার চেষ্টা চালায়, তবে তাদের এ আক্রমণ ব্যর্থ হয়। তবে প্যারাস্যুট হামলা ঠেকাতে জার্মানদের কিছুটা সময় ব্যয় হয়, এ সুযোগে লাল ফৌজের অন্যান্য সৈন্যেরা নির্বিঘ্নে অগ্রসর হবার সুযোগ পায়, তারা নীপার নদী পাড়ি দিয়ে অপর পাড়ে ঘাঁটি গড়তে সক্ষম হয়।
৫০১ নং লাইন:
 
===প্রাচ্যে সোভিয়েত বাহিনীর লড়াই: আগস্ট, ১৯৪৫===
১৯৪৫ সালের ৮ আগস্ট শুরু হয় সোভিয়েত বাহিনীর মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ, যাতে তারা জাপান নিয়ন্ত্রিত পুতুল রাষ্ট্র মাঞ্চুকো এবং এর পার্শ্ববর্তী মেংজিগাং আক্রমণ করে; এই আক্রমণ বৃহত্তর পরিসরে কোরিয়ার উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ সাখালিন এবং কুরিল দ্বীপপুঞ্জও অন্তর্ভুক্ত হয়। খালখিন-গোলের যুদ্ধ বাদে এটিই ছিল জাপান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সোভিয়েতদের একমাত্র সামরিক অভিযান। ইউরোপ যুদ্ধের তিন মাস পর, ইয়াল্টা সম্মেলনে মিত্রদের অনুরোধে, জাপান ও সোভিয়েতের মধ্যকার নিরপেক্ষতা চুক্তি ভঙ্গ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রশান্ত-মহাসাগরীয় রণাঙ্গনে প্রবেশ করে। যদিও এই যুদ্ধ পূর্ব রণাঙ্গনের অংশ হিসেবে গণ্য হয় না তবুও পূর্ব রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করা সোভিয়েত জেনারেলগণই এই আক্রমণ পরিচালনা করেন এবং পূর্ব রণাঙ্গনে তাঁদেরতাদের অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান বলে এই যুদ্ধটি অনুচ্ছেদে যুক্ত হল। এই অভিযানটি অনেকাংশেই 'নিখুঁত' অভিযান বলা চলে, যাতে জার্মান "ওয়েরমাক্‌ট" ও "লুফ্‌টওয়াফ"-এর বিরুদ্ধে সুদীর্ঘ চারটি বছরব্যপী পরিচালিত যুদ্ধের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হয়।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি |প্রথমাংশ=Raymond L. |শেষাংশ=Garthoff |শিরোনাম=The Soviet Manchurian Campaign, August 1945 |কর্ম=Military Affairs |খণ্ড=33 |সংখ্যা নং=2 |তারিখ=October 1969 |পাতাসমূহ=312–336 |jstor=1983926 |ডিওআই=10.2307/1983926}}</ref>
 
==যুদ্ধের ফলাফল==
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বৃহত্তম ও সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী রণাঙ্গন ছিল পূর্ব রণাঙ্গন। একে মানব ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা প্রাণঘাতী সংঘাত হিসেবে গণ্য করা হয়, এ যুদ্ধে ৩ কোটিরও অধিক মানুষ নিহত হয়।<ref name=30m>According to G. I. Krivosheev. (''Soviet Casualties and Combat Losses.'' Greenhill 1997 {{ISBN|1-85367-280-7}}), in the Eastern Front, Axis countries and German co-belligerents sustained 1,468,145 irrecoverable losses (668,163 KIA/MIA), Germany itself– 7,181,100 (3,604,800 KIA/MIA), and 579,900 PoWs died in Soviet captivity. So the Axis KIA/MIA amounted to 4.8 million in the East during the period of 1941–1945. This is more than a half of all Axis losses (including the Asia/Pacific theatre). The USSR sustained 10.5 million military losses (including PoWs who died in German captivity, according to Vadim Erlikman. ''Poteri narodonaseleniia v XX veke : spravochnik.'' Moscow 2004. {{ISBN|5-93165-107-1}}), so the number of military deaths (the USSR and the Axis) amounted to 15 million, far greater than in all other World War II theatres. According to the same source, total Soviet civilian deaths within post-war borders amounted to 15.7 million. The numbers for other Central European and German civilian casualties are not included here.</ref> জার্মান বাহিনীর মোট হতাহতের শতকরা ৮০ ভাগই সংঘটিত হয় পূর্ব রণাঙ্গনে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Duiker|প্রথমাংশ=William J.|শিরোনাম=Contemporary World History|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=Gd0bCgAAQBAJ&lpg=PP1&pg=PT159#v=onepage&q&f=false|সংস্করণ=sixth|বছর=2015|প্রকাশক=Cengage Learning|আইএসবিএন=978-1-285-44790-2|পাতা=138|অধ্যায়=The Crisis Deepens: The Outbreak of World War II}}</ref> ২য় বিশ্বযুদ্ধের অন্যান্য সকল রনাঙ্গনের সম্মিলিত স্থলযুদ্ধের চাইতে এই রণাঙ্গনে অধিক সংখ্যক স্থলযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ রণাঙ্গনের উভয় পক্ষেরই মানুষের প্রাণের প্রতি কোন পরোয়া না থাকায় এর যুদ্ধসমূহের প্রকৃতি ছিল নৃশংস ও ভয়াবহ। এস্থানে যুদ্ধের আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গীও এই নৃশংসতাকে তুলে ধরে, সংঘর্ষে লিপ্ত দুই পক্ষের আদর্শগত অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী।
 
আদর্শগত যুদ্ধ ছাড়াও, নাৎসি জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃদ্বয়, যথাক্রমে অ্যাডলফ হিটলার ও জোসেফ স্টালিনের মনমানসিকতার কারণে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও এর প্রাণনাশী প্রকৃতি এক অভূতপূর্ব আকার ধারণ করে। হিটলার ও স্টালিন উভয়েই তাঁদেরতাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করতে মানব প্রাণের তোয়াক্কা করতেন না। এমনকি তাঁদেরতাদের নিজেদের সৈন্য ও জনগণের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করতেও তারা পিছপা হতেন না। নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে মানুষের এক একটি জনগোষ্ঠীকেও তারা ঘরছাড়া ও নির্বাসিত করে থাকতেন। এসব কারণে পূর্ব রণাঙ্গনের সামরিক ও বেসামরিক সকল নাগরিকের মধ্যেই যে এক নিষ্ঠুর প্রকৃতি পরিলক্ষিত হয়, তা অতুলনীয়। ''[[টাইম ম্যাগাজিন]]'' এর বর্ণনায়: "লোকবল, স্থায়িত্বকাল, আঞ্চলিক প্রসার এবং ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে পূর্ব রণাঙ্গনের সংঘাতের আকার ছিল নরম্যান্ডি অভিযান থেকে শুরু হওয়া পশ্চিম রণাঙ্গনের প্রায় চার গুণ"।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি| ইউআরএল=http://www.time.com/time/world/article/0,8599,1809018,00.html | কর্ম=[[Time (magazine)|Time]] | শিরোনাম=Remembering a Red Flag Day | তারিখ=23 May 2008 | প্রথমাংশ=Jordan | শেষাংশ=Bonfante}}</ref> অপরদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রধান জেনারেল জর্জ মার্শালের হিসেব অনুযায়ী, পূর্ব রণাঙ্গনের যুদ্ধে জার্মানি ব্যস্ত না থাকলে, যুক্তরাষ্ট্রকে পশ্চিম রণাঙ্গনে দ্বিগুণ সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করতে হত।<ref name="gunther1950">{{বই উদ্ধৃতি | ইউআরএল=https://archive.org/details/rooseveltinretro00gunt | শিরোনাম=Roosevelt in Retrospect | প্রকাশক=Harper & Brothers | শেষাংশ=Gunther |প্রথমাংশ=John | বছর=1950 | পাতাসমূহ=356}}</ref>
 
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সহকারি হ্যারি হপকিন্সের স্মারকলিপি থেকে উদ্ধৃত, ওয়াশিংটন ডি.সি., ১০ আগস্ট, ১৯৪৩:
৫১৮ নং লাইন:
১৯৪৪ সালে যখন লাল ফৌজ জার্মানি আক্রমণ করে, তখন জার্মান বেসামরিক জনগণ লাল ফৌজ সৈন্যদের প্রতিহিংসার শিকার হয়। মিত্রশক্তির মধ্যকার "ইয়াল্টা সম্মেলন" অনুষ্ঠিত হবার পরে, পূর্ব প্রুশিয়া ও সাইলেসিয়া প্রদেশের জনগণকে বিতাড়িত করে পশ্চিমে ওডার-নাইস অববাহিকার অপর পার্শ্বে যেতে বাধ্য করা হয়, যা ছিল মানব ইতিহাসের বৃহত্তম জোরপূর্বক গণ-নির্বাসনসমূহের অন্যতম।
 
সোভিয়েত ইউনিয়ন ২য় বিশ্বযুদ্ধে সামরিকভাবে জয়লাভ করলেও তাদের অর্থনীতি ও অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। অধিকাংশ যুদ্ধ সংঘটিত হয় জনবহুল অঞ্চলসমূহের নিকটে, এবং উভয় পক্ষের কার্যকলাপে বিশাল অংকেঅঙ্কে বেসমারিক নাগরিক প্রাণ হারায় এবং সম্পদ ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়। যুদ্ধের পর জার্মানি নুরেমবার্গে সংঘটিত "আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালে" জেনারেল রোমান রুডেংকো যে উদ্ধৃতি দেন, তার হিসাব মতে, সোভিয়েত ইউনিয়নে অক্ষশক্তির আক্রমণে সম্পদের মোট ক্ষয়ক্ষতির অর্থমূল্য দাঁড়ায় ৬৭,৯০০ কোটি রুবল। লেনিনগ্রাড অবরোধের সময় এ নগরীর ১২ লক্ষ নাগরিক প্রাণ হারান, যুদ্ধে আক্রান্ত সকল নগরীর মধ্যে লেনিনগ্রাডেই সর্বাধিক জনগণ হতাহত হয়।<ref name="ReferenceB">''[[The New York Times]]'', 9 February 1946, Volume 95, Number 32158.</ref>
 
মোট ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল- ১,৭১০টি শহর ও নগরীর পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্তি, এছাড়াও ধ্বংস হয় ৭০,০০০ গ্রাম-গঞ্জ, ২,৫০৮টি গীর্জা, ৩১,৮৫০টি শিল্প-কারখানা, ৪০,০০০ মাইল রেলপথ, ৪,১০০টি রেলস্টেশন, ৪০,০০০ হাসপাতাল, ৮৪,০০০ বিদ্যালয় এবং ৪৩,০০০ লাইব্রেরি। যুদ্ধে বাস্তুহারা হয় ২কোটি ৫০লক্ষ মানুষ। ৭০ লক্ষ ঘোড়া, ১ কোটি ৭০ লক্ষ গরু, ২ কোটি শুকর, ২ কোটি ৭০ লক্ষ ভেড়া মারা পড়ে কিংবা হারানো যায়।<ref name="ReferenceB"/> বন্য জীবজন্তুও ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হয়। ১৯৪৩ সাল থেকে ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত বাহিনীর আক্রমণের সময় যুদ্ধক্ষেত্রসমূহ থেকে বন্য নেকড়ে ও শিয়াল পালিয়ে পশ্চিম দিকে গমন করে, এর ফলে পশ্চিমাঞ্চল সমূহে জলাতঙ্ক রোগ ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৯৬৮ সালে এই জলাতঙ্ক ইংলিশ প্রণালী পর্যন্ত পৌঁছায়।<ref>{{Harvnb|Bellamy|2007|pp=1–2}}</ref>
 
==নেতৃত্ব==
সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং নাৎসি জার্মানি উভয়ই ছিল মতাদর্শ-ভিত্তিক রাষ্ট্র, যথাক্রমে সোভিয়েত সাম্যবাদ ও নাৎসিবাদের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রদ্বয়। এবং উভয় রাষ্ট্রেই প্রায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিপতি ছিলেন এর নেতাগণ। পূর্ব রণাঙ্গনে যুদ্ধের প্রকৃতি তাই নির্ণিত হয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও তাঁদেরতাদের মতাদর্শের দ্বারা, যা ২য় বিশ্বযুদ্ধের অপরাপর রণাঙ্গনে অতটা দেখা যায় না।{{citation needed|date=May 2018}}
 
===অ্যাডলফ হিটলার===
৫২৯ নং লাইন:
অ্যাডলফ হিটলার জার্মানদের যুদ্ধ পরিচালনাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন, তিনি তার অধিকাংশ সময় কাটাতেন তার সামরিক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রের বাংকারে (সম্ভবত এসমস্ত কেন্দ্রের অবস্থান ছিল পূর্ব প্রুশিয়ার রাস্টেনবার্গে, ইউক্রেনের ভিনিট্‌সাতে এবং বার্লিনের রাইখ্-প্রধানের বাসভবনের বাগানের নীচে)। যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়সমূহে তিনি নিয়মিত পরিস্থিতি-পর্যালোচনা সম্মেলন করতেন, যেখানে তিনি তার নিপুণ বাগ্মিতা ও যু্ক্তিতর্কের সাহায্যে তার জেনারেল ও উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের যেকোন মতবিরোধকে পরাভূত করতেন।
 
পেশাদার সামরিক নেতৃবৃন্দের বারংবার সতর্কবাণী সত্ত্বেও ফ্রান্সের যুদ্ধে জার্মান বাহিনীর অভূতপূর্ব সাফল্যে হিটলারের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে উঠে যায়, এবং তিনি নিজেকে একজন প্রতিভাবান সামরিক কৌশলবিদ মনে করতে থাকেন, এবং মনে করেন তার জেনারেলদের তুলনায় চলমান যুদ্ধ-পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি অধিক ওয়াকিবহাল। ১৯৪১ সালের আগস্টে জার্মান স্থলবাহিনী "ওয়েরমাক্‌ট"-এর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওয়াল্টার ফন ব্রকিচ এবং জেনারেল ফেডোর ফন বক অনুরোধ করেন মস্কো আক্রমণ করতে, কিন্তু হিটলার তাঁদেরতাদের সকল পরামর্শ নাকট করে দেন এবং এর পরিবর্তে ইউক্রেন দখলের আদেশ দেন, যাতে এখানকার বিস্তর কৃষিভূমি, শিল্প-স্থাপনা ও প্রাকৃতিক সম্পদ জার্মানদের হস্তগত হয়। কতিপয় ইতিহাসবিদ, যেমন বেভিন আলেক্সান্ডার তার "হিটলার কীভাবে জয়লাভ করতে পারতেন" শীর্ষক গ্রন্থে বলেন যে, হিটলারের এই সিদ্ধান্তে জার্মানরা যুদ্ধে জয়লাভের একটি সুবর্ণ সুযোগ হারায়।
 
১৯৪১-৪২ সালের শীতকালে হিটলারের বিশ্বাস ছিল তার জার্মান বাহিনী প্রত্যাহার না করার একগুঁয়ে সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় যুগ্ম বাহিনী ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়। পরবর্তীতে তিনি ফিল্ড মার্শাল এরহার্ড মিল্‌চকে বলেন:
৫৩৯ নং লাইন:
</blockquote>
 
মস্কোর বাইরে তার "সজারু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার" (hedgehog defence) সাফল্যের কারণে তিনি কখনো কখনো কোন অঞ্চলের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর থাকতেন, যদিও ঐ অঞ্চল ধরে রাখার কৌশলগত কোন কারণই ছিল না। এবং কোন জেনারেল তার হুকুম ব্যতীত সৈন্য প্রত্যাহার করলে তাকে তিনি বরখাস্ত করে দিতেন। প্রতিভাবান ও উদ্যোগী অফিসারদের সরিয়ে হুকুম-তামিলকারি ও গোঁড়া-নাৎসি অফিসারদের দায়িত্ব দেয়া হত। যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে স্টালিনগ্রাডের অবরোধ ও চেরকাসিতে জার্মানরা বিপর্যস্ত হয় হিটলারের সরাসরি আদেশ পালন করতে গিয়ে। অঞ্চলের কর্তৃত্ব ধরে রাখার এই অপ্রয়োজনীয় কৌশলের কারণে জার্মানদের আরেকটি ব্যর্থ পরিকল্পনার উৎপত্তি ঘটে, যার নাম দেয়া হয়, "''স্বর্গ-অভিমুখে অভিযান''", যা অনুসারে জার্মানরা নেহায়েৎ গুরুত্বহীন এমন অঞ্চলেও দুর্ভেদ্য দূর্গদুর্গ নির্মাণ করে এবং এসমস্ত দূর্গদুর্গ যেকোন মূল্যে প্রতিরক্ষা করে। এসমস্ত "দূর্গ-নগরীতে" অনেক জার্মান সৈন্য ডিভিশন আটকা পড়ে এবং কোন কারণ ছাড়াই লড়াই করে হতাহত হয়, কারণ হিটলার কোনপ্রকার পশ্চাদপসরণ কিংবা
অভিযান বাতিলের অনুমতি দিতেন না।
 
৫৫৩ নং লাইন:
যুদ্ধের শুরুর ভাগে সোভিয়েত ইউনিয়নে ঘটিত বিপর্যয়সমূহের কতিপয়ের জন্যে দায়ী জোসেফ স্টালিন (যেমন, ১৯৪১ সালের কিয়েভের যুদ্ধ), তবে একই সাথে পরবর্তী যুদ্ধসমূহে লাল ফৌজের সাফল্যের জন্যে তিনি প্রশংসার দাবিদারও বটে, তার বাহিনীর এ সাফল্যের পেছনে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্রুত শিল্পায়ন, যা স্টালিন কর্তৃক ১৯৩০ এর দশকে গৃহিত আভ্যন্তরীণ কর্মসূচির কারণে সম্ভব হয়েছিল। ১৯৩০ এর দশকের শেষভাগে লাল ফৌজ থেকে স্টালিন বহু নেতাকর্মীকে বহিস্কার করেন, এবং বহু উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করান, যাদের অনেককে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় ও অপরদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়।
 
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মিখাইল তুখাচেভস্কি, যিনি ট্যাংকবাহিনীর "ব্লিট্‌জক্রীগ" (ঝটিকা আক্রমণ) পদ্ধতির পক্ষপাতী ছিলেন। গ্রিগরি কুলিকের ন্যায় কতিপয় স্বার্থান্বেষীদেরকে স্টালিন পদোন্নতি দেন, যারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে তথ্য লুকোছাপা করত। এরা সেনাবাহিনীতে ট্যাংকসহ অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিরোধিতা করে। অপরদিকে অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রবীণ সামরিক কর্মকর্তাদেরকে স্টালিন ছাঁটাই করে দেন, এঁদের অনেকে রুশ গৃহযুদ্ধের (১৯১৭-১৯২২) সময় থেকে সেনাবাহিনীতে কাজ করে আসছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাঁদেরকেতাদেরকে অপসারণ করা হয়। তাঁদেরতাদের বদলে বাহিনীতে স্থান পায় নবীন অফিসারেরা, যারা স্টালিন ও এন.কে.ভি.ডি. কর্মকর্তাদের মতে ছিল "স্টালিন-পন্থী" রাজনীতির অনুগত। এসব নতুন পদোন্নতি প্রাপ্ত কমান্ডারদের অনেকে অনভিজ্ঞ বলে প্রমাণিত হয়, যদিও এদের মধ্যে কয়েকজন যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে সাফল্যের দেখা পায়। এতকিছুর পরও সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর বৃহত্তম ট্যাংক বাহিনী গঠন করতে সক্ষম হয়।
 
১৯১৮ সালে সর্বপ্রথম লাল ফৌজ প্রতিষ্ঠিত হবার পর, রাজনৈতিক আস্থাহীনতার কারণে সামরিক বাহিনীতে "দ্বৈত শাসন" দেখা দেয়, প্রতি কমান্ডারের সাথে নিযুক্ত করা হয় একজন "রাজনৈতিক কমিসার", এই কমিসার থাকতেন সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্য। সেনাবাহিনীর বড় পরিসরের যেকোন বিভাগে একটি সামরিক পরিষদ থাকত, যার সদস্য থাকতেন কমান্ডার, কমিসার এবং প্রধান সামরিক কর্মকর্তা। কমিসারগণের দায়িত্ব থাকত পার্টির প্রতি সামরিক বাহিনীর আনুগত্য নিশ্চিত করা।
৮৭৬ নং লাইন:
বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা ধারণা করা হয় ১.৪০ কোটি থেকে ১.৭০ কোটির মধ্যে। ১৯৩৯-পূর্ব সোভিয়েত সীমান্তে বসবাসরত বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ১ কোটি ১৪ লক্ষ মানুষ নিহত হয় এবং দখলকৃত অঞ্চলসমূহে আরো ৩৫ লক্ষ নিহত হয়।<ref name="krivosheev">Krivosheev, G. I. ''Soviet Casualties and Combat Losses''. Greenhill 1997 {{ISBN|1-85367-280-7}}</ref> নাৎসি বাহিনী ১০ থেকে ২০ লক্ষ সোভিয়েত ইহুদিকে হত্যা করে (দখলকৃত অঞ্চলসহ) তাদের ইহুদি গণহত্যার অংশ হিসেবে।<ref name=gilbert>[[Martin Gilbert]]. ''Atlas of the Holocaust'' 1988 {{ISBN|0-688-12364-3}}</ref> সোভিয়েত ও রুশ ঐতিহাসিক গবেষণায় প্রায়ই এই কথাটির উল্লেখ দেখা যায় "গণনার বাইরের হতাহত"। সোভিয়েত সরকারের প্রতিরক্ষা আদেশ নং ০২৩, (৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৪)-এর মতে, এই অগণিত হতাহতের মধ্যে রয়েছে নিহত, নিখোঁজ, যুদ্ধের ক্ষত থেকে পরবর্তীতে মৃত, রোগবালাই ও শৈত্যের কারণে মৃত এবং যুদ্ধবন্দী।
 
এই বিশাল অংকেঅঙ্কে মৃতের কয়েকটি প্রধান কারণ হল- যুদ্ধবন্দীদের প্রতি ব্যপক জুলুম, অনাহার, সোভিয়েত অঞ্চলসমূহে চিকিত্সা-সামগ্রীর অভাব এবং বেসামরিক নাগরিকগণের ওপর জুলুম-হত্যা যার অধিকাংশ দায় জার্মান বাহিনীর। কয়েকটি যুদ্ধে "পোড়ামাটির নীতি" গৃহিত হয়, যাতে কৃষিভূমি, অবকাঠামো, শহর-নগর-বন্দর সমস্তকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়, এবং বিস্তর জনগোষ্ঠী বাস্তুহারা হয়ে পড়ে ও খাদ্যের ব্যপক সংকট দেখা দেয়।
 
{| class="wikitable"