ছিয়াত্তরের মন্বন্তর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

[অপরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
InternetArchiveBot (আলোচনা | অবদান)
০টি উৎস উদ্ধার করা হল ও ১টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল।) #IABot (v2.0
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
২৮ নং লাইন:
 
'''ছিয়াত্তরের মন্বন্তর''' বাংলার তথা ভারতের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ [[দুর্ভিক্ষ]] নামে পরিচিত। ১১৭৬ বঙ্গাব্দে ( খ্রি. ১৭৭০) এই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বলে একে 'ছিয়াত্তরের মন্বন্তর' বলা হয়।
 
 
== বর্বরতা ==
১৭৫৭ সালের পলাশী বিপর্যয়ের মাধ্যমে বাংলীদের জীবনে নেমে আসল এক কল্পনাতীত পরিবর্তন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, যে মুসলমানরা কিছু দিন আগেও ছিল শাসকগােষ্ঠী, জমিদার, অভিজাত ও উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণীভুক্ত তখন অন্যধর্মাবলম্বীরাও সুযোগ সুবিধা ভোগ করতো হঠাৎ তাদের(মুসলিমদের) সে স্থান দখল করে নিল হিন্দুরা , মুসলমানরা বঞ্চিত হতে লাগল উচ্চ-নীচু সব ধরনের চাকুরী হতে, জমিদারী চলে গেল হিন্দুদের হাতে অধিকন্তু মানুষের মত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার মত প্রয়ােজনীয় শিক্ষা হতেও বঞ্চিত। এখন কৃষক প্রজা বলতে মুসলিম আর জমিদার, মহাজন এবং রাজা শব্দগুলাে বলতে হিন্দুদের বুঝায়।
 
শুধু এই নয় ১৭৬৫ সালে [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]] [[মুঘল সম্রাট]] হতে দেওয়ানী লাভ করে বাংলাদেশে রাজস্ব ক্ষমতা গ্রহণ করার সাথে শুরু হয়ে যায় মুসলমান তথা কৃষকদের উপর নির্যাতনের স্মরণাতীত কালের ভয়াবহতম অধ্যায়ের।শুরু হয়ে যায় ইংরেজ-হিন্দু মিলে বাঙ্গালী মুসলমানদের (কৃষকের) উৎপাদিত ফসল গুদামজাত করে কৃত্রিম পরিকল্পিত সংকটে ফেলে মুসলমানদের ভিটেমাটি থেকেও তাড়ানাের প্রতিযােগিতা।ফলে দেখা দিল ইতিহাসের ভয়াভহ দুর্ভিক্ষ, যা ১১৭৬ বাংলায় (১৭৬৯খ্রিঃ সন) হয়েছিল বলে ইতিহাসে ''ছিয়াত্তরের মন্বন্তর'' নামে পরিচিত।
 
এ দুর্ভিক্ষ বাংলার মােট জনসাধারণের এক তৃতীয়াংশের মৃত্যু ঘটলেও পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইংরেজরা কৃষকদের নিকট থেকে জোর পূর্বক রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে ছিলনা।দুর্ভিক্ষের পূর্বে ১৭৬৮ খৃষ্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের রাজস্ব ছিলাে ১,৫২০৪৮৫৬ টাকা, কিন্তু দুর্ভিক্ষের পর ১৭৭১ খৃষ্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে প্রদেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ মৃত্যু মুখে পতিত হওয়ার পরও মােট রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১,৫৭২৬৫৭৬ টাকায়। [[William Wilson Hunter]]কৃত The Annals of Rural Bengal<ref name="books.google.com.bd">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শেষাংশ1=Hunter |প্রথমাংশ1=William Wilson |শিরোনাম=The Annals of Rural Bengal |ইউআরএল=https://books.google.com.bd/books/about/The_Annals_of_Rural_Bengal.html?id=AX5CAAAAIAAJ&redir_esc=y |প্রকাশক=Smith, Elder |ভাষা=en |তারিখ=১৮৬৮}}</ref> <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শেষাংশ1=Hunter |প্রথমাংশ1=William Wilson |শিরোনাম=The annals of rural Bengal |ইউআরএল=https://archive.org/details/annalsofruralben01hunt |প্রকাশক=New York : Leypoldt and Holt |তারিখ=১৮৬৮}}</ref> <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=Annals of rural Bengal: Hunter William Wilson: 9785518450332: Amazon.com: Books |ইউআরএল=https://www.amazon.com/Annals-Bengal-Hunter-William-Wilson/dp/5518450338 |ওয়েবসাইট=www.amazon.com}}</ref> এবং [[সুপ্রকাশ রায়]] কৃত, ভারতের কৃষক বিদ্রোহ, প্রথম খণ্ড পৃঃ ১৫)<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=ভারতের কৃষকের-বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম - সুপ্রকাশ রায় |ইউআরএল=https://www.rokomari.com/book/169486/varoter-krishoker-bidryaho-o-gonotantrik-songram |ওয়েবসাইট=www.rokomari.com |ভাষা=en}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=ভারতের কৃষক-বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম |ইউআরএল=http://opac.rbu.net.in/cgi-bin/koha/opac-detail.pl?biblionumber=41520&shelfbrowse_itemnumber=53991#shelfbrowser |প্রকাশক=ডি এন বি এ ব্রাদার্স |ভাষা=Bengali }}{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=অক্টোবর ২০১৯ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref>
 
এরপরও সন্তুষ্ট নয় ইংরেজরা, তাই প্রথমে [[একশালা বন্দোবস্ত]] এরপর [[পাঁচশালা বন্দোবস্ত]], [[দশশালা বন্দোবস্ত]] এবং শেষ পর্যন্ত ১৭৯৩ খৃষ্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে গভর্ণরগভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিশ [[চার্লস কর্নওয়ালিস]] কর্তৃক বাংলার মুসলমানদের শােষণ ও নির্যাতনের স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে [[চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত]] প্রতিষ্ঠা করা হয়।
 
এ বন্দোবস্ত অনুযায়ী জমিদাররা আদায়কৃত রাজস্বের নয়দশমাংশ কোম্পানীর কাছে প্রদানের ব্যবস্থা হয়। যেহেতু কৃষকরা ছিল মুসলমান আর জমীদাররা ছিল হিন্দু।সুতরাং হিন্দু কর্তৃক মুসলমান শােষণ নির্যাতনের স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিল ইংরেজরা।সুতরাং শারীরিক মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে সর্বশক্তি নিয়ােগ করে চলতে লাগলাে জমিদার কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের অমানবিক মহড়া।জমিদার, ইজারাদার, পত্তনিদার, প্রভৃতি রংবেরং এর মধ্যসত্বভােগী (ইংরেজ দালাল হিন্দু অভিজাত শ্রেণী) শােষকরা মুসলিম কৃষকদের ওপর যত প্রকার নির্যাতন চালাতাে তার বর্ণনা নিম্নলিখিত তত্ত্ববােধিনী পত্রিকা ৮৪ সংখ্যার ১১৭ পৃষ্ঠায় সংযােজিত হয়েছে
৪৪ ⟶ ৪৩ নং লাইন:
দণ্ডাঘাত ও বেত্রাঘাত, চর্ম পাদুকা প্রহার, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বক্ষমল দালান।, খাপরা দিয়ে নাসিকা কর্ণ মসৃণ, মাটিতে নাসিকা ঘর্ষণ।, পিঠে হাত বেঁকিয়ে বেঁধে বংশদও দিয়ে মােড়া দেওয়া, গায়ে বিছুটি দেওয়া, হাত পা নিতাও বন্ধ করা, কান ধরে দৌড় করানাে, ফাটা দু’খানা বাধা বাখারি দিয়ে হাত দলন করা, [[গ্রীষ্ম কালে]] খাঁ খা রৌদ্রে পা ফাক করে দাঁড় করিয়ে, পিঠ বাকিয়ে পিঠের উপর ও হাতের উপর ইট চাপিয়ে রাখা, প্রচণ্ড শীতে জলমগ্ন করা ও গায়ে জল নিক্ষেপ করা, গােনী বন্ধ করে জলমগ্ন করা, [[বৃক্ষে]] ও অন্যত্র বেঁধে লম্বা করা, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে ধানের গােলায় পুতে রাখা, চুনের ঘরে বন্ধ করে রাখা, কারারুদ্ধ করে উপােস রাখা, গৃহবন্দী করে লম্বা মরিচের ধােয়া দেয়া ইত্যাদি।
 
এছাড়া চাকুরীর ক্ষেত্রে বৈষম্যে তুলে ধরা হয়েছিল at [[William Wilson Hunter]] এর The Indian Musalmans গ্রন্থের ১৪৮ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ হয়েছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শেষাংশ1name=Hunter |প্রথমাংশ1=William Wilson |শিরোনাম=The Annals of Rural Bengal |ইউআরএল=https://"books.google.com.bd"/books/about/The_Annals_of_Rural_Bengal.html?id=AX5CAAAAIAAJ&redir_esc=y |প্রকাশক=Smith, Elder |ভাষা=en |তারিখ=১৮৬৮}}</ref>
শুধু তাই নয়, গত শতাব্দির মধ্যভাগেও এদেশে [[গরু]] [[কোরবানী]] করলে [[মৃত্যুদণ্ড]] দেওয়া হতাে।দাঁডি রাখলে খাজনা দিতে হতাে।জুমার [[নামাজ]] পড়া নিষিদ্ধ ছিল। এমন কি [[আরবী]] [[ফারসী]] শব্দে মুসলমানদের ভাল [[নাম]] রাখা নিষিদ্ধ ছিল, কালী পূজা এবং [[দুর্গা পূজা]]র কর দেওয়া মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল (ইনকিলাব ১৪০৩, ৩ কার্তিক), পূনার [[জমিদার]] কৃষ্ণদেব রায় তার জমিদারীতে হুকুম জারি করেছিলেন -
 
৫০ ⟶ ৪৯ নং লাইন:
# মসজিদ প্রস্তুত করিলে প্রত্যেক কাঁচা মসজিদের জন্য পাঁচশত টাকা ও প্রত্যেক পাকা মসজিদের জন্য এক সহস্র টাকা জমিদার সরকারে নজর দিতে হইবে।
# পিতাপিতামহ আরবী নাম রাখিলে প্রত্যেক নামের জন্য পঞ্চাশ টাকা জমিদার সরকারে জমা দিতে হইবে।
# গাে হত্যা করিলে হত্যাকারীর দক্ষিণ হস্ত কাটিয়া দেওয়া হইবে, যেন সে ব্যক্তি আর গাে হত্যা করিতে পারে।(বাঙালী বুদ্ধিজীবি ও বিচ্ছিন্নতাবাদঃ [[অমলেন্দু দে]] )।<ref>{{বই উদ্ধৃতি |শিরোনাম=বাঙালী বুদ্ধিজীবি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ - অমলেন্দু দে {{!}} বইবাজার.কম |আইএসবিএন=ISBN : 9847000001481 |ইউআরএল=https://www.boibazar.com/book/bangali-buddijibi-o-bicchinnotabad |ভাষা=bn}}</ref> <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=বাঙালী বুদ্ধিজীবি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ - অমলেন্দু দে {{!}} বইবাজার.কম |ইউআরএল=https://www.boibazar.com/book/bangali-buddijibi-o-bicchinnotabad |ওয়েবসাইট=BoiBazar.com |ভাষা=bn}}</ref>
 
== কারণ ==
 
১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদৌল্লা কলকাতা দখল করে নেবার পরে (২০ জুন) লর্ড ক্লাইভ এবং ওয়াটসন তামিলনাড়ু থেকে জাহাজযোগে সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসেন ও কোলকাতা পুনর্দখল করেন(২জানুয়ারি,১৭৫৭)। চন্দননগর দখল করার পরে সিরাজউদৌল্লাকে উৎখাত করার জন্য সিরাজের পরিবারের কয়েকজন ও মীরজাফর, উমিচাঁদ, জগত শেঠ প্রমুখদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেন। চুক্তি মতো কাজ হয় ও নদীয়ার [[পলাশি]]র প্রান্তরে সিরাজউদৌল্লার সঙ্গে প্রহসন মূলক যুদ্ধ হয়। সিরাজউদৌল্লা পরাজিত হয়ে পালাবার কালে ধরা পড়ে নিহত হন। চুক্তি মতো মীরজাফর নবাব হন এবং ক্লাইভ নগদ ত্রিশ লক্ষ টাকা ও চব্বিশ পরগনার জায়গিরদারি লাভ করেন। জায়গির থেকে ক্লাইভের বছরে তিন লক্ষ টাকা আয় হত। পরে ১৭৬০-এ ক্লাইভ দেশে ফিরে যান। এ দিকে তার অভাবে ইংরেজরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন আবার ক্লাইভের ডাক পড়ে। ক্লাইভ এ দেশে আবার ফিরে আসেন ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের মে মাসে এবং ইংরেজ সরকারের গভর্নর নিযুক্ত হন। তিনি তখন দিল্লির বাদশাহ শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-ওড়িশার দেওয়ানি লাভ করেন(১৭৬৫, আগস্ট ১)।বিহার-ওড়িশার প্রকৃত শাসন ক্ষমতা লাভ করে, নবাবের নামে মাত্র অস্তিত্ব থাকে। ফলে পূর্ব ভারতের এই অঞ্চলে যে শাসন-ব্যবস্থা চালু হয় তা দ্বৈত শাসন নামে পরিচিত। নবাবের হাতে থাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব, আর রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের পূর্ণ কর্তৃত্ব পায় কোম্পানি। এতে বাংলার নবাব আসলে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে আর এই সুযোগে কোম্পানির লোকেরা খাজনা আদায়ের নামে অবাধ লুণ্ঠন ও অত্যাচার শুরু করে দেয়।সে বছর অত্যধিক বৃষ্টিপাত ও বন্যার গ্রাস থেকে কৃষক ফসল ঘরে তুলতে পারে নি। তদুপরি ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা এবং খাদ্যবাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের ফলে অবস্থার চরম অবনতি ঘটে। অথচ ব্রিটিশরাজের কোম্পানি শাসকরা পুরো বিষয়টিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে দাবি করে। কিন্তু ভিন্ন সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, ১৭৬৮ সনে আদায়কৃত রাজস্ব দেড় কোটি রুপির চেয়ে ১৭৭১ সনের আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ ৫,২২,০০০ রুপি বেশি ছিল, অথচ এর আগের বছরেই ঘটে যায় দুর্ভিক্ষ। এভাবে, কোম্পানি শাসনের সহযোগিতায়, খাদ্যশস্যের বাজার থেকে মুনাফা লুট এবং অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার কারণে জনমানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। পরিণতিতে মারাত্মক দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকাগুলি হয়ে পড়ে জনশূন্য। জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, প্রায় ১০ মিলিয়ন(১ কোটি) মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যায়। কৃষি উৎপাদন আর রাজস্ব আদায় অনুরূপহারে কমে যায়। দেশে দেখা দেয় চরম বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ। কয়েক লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যান। এটাই ইতিহাসখ্যাত ছিয়াত্তরের মন্বন্তর।
 
== পাদটীকা ==