উৎসব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
→পহেলা বৈশাখ: লিংক সংযোজন ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা |
|||
৩৫ নং লাইন:
==মুহররম==
বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কম হলেও উনিশ শতকের ষাটের দশক পর্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে মুহররম পালিত হয়েছে, যার রেশ এখনও বিদ্যমান। সুষক্ষ্ম মতাদর্শী মুগল শাসকদের অনেকেই মুহররমের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। মুর্শিদকুলী খান থেকে মুবারকউদ্দৌলা সবাই ছিলেন শিয়া সমর্থক। সিরাজউদ্দৌলা
বাংলাদেশে যে মুহররম পালিত হয় তাতে বিভিন্ন সময়ে এখানকার হিন্দু ও লোকায়ত অনেক আচার-অনুষ্ঠান যুক্ত হয়। ইরানে মুহররমের মিছিলে একটি শবযান বহন করা হয়, কিন্তু বাংলা তথা ভারতে থাকে দুটি। কারণ ভারতীয়সহ বাঙালি মুসলমানরাও বিশ্বাস করেন যে, হযরত আলীর দুছেলেই কারবালার যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেছিলেন; তাই আশুরার দিন ‘হায় হাসান! হায় হোসেন!’ বলে শোক প্রকাশ করা হয় এবং রোজা রাখা হয় দুজনের সম্মানেই। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তা নয়; হাসানকে বিষপানে হত্যা করা হয়েছিল মদীনায় ৬৭০
ঢাকায় এখন মুহররম পালনের মূল কেন্দ্র শিয়া সম্প্রদায়ের ইমামবারা হোসেনী দালান। তবে ঢাকার সবচেয়ে পুরনো ইমামবারা ফরাশগঞ্জের বিবিকা রওজা মহল্লায় অবস্থিত। জনৈক আমীর খান ১৬০০
মুহররম মোটামুটি ১০ দিনের অনুষ্ঠান। আশুরার বা দশম দিনের অনুষ্ঠানটিই উল্লেখযোগ্য। ওই দিন ঢাকার আজিমপুরে বসত বিরাট মেলা, যা এখনও টিকে আছে। বিভিন্ন ইমামবারা থেকে ওই দিন তাজিয়া নিয়ে মিছিল করে সবাই আসে আজিমপুরের হুসেনাবাদে। সেখানে তাজিয়াগুলি কালো কাপড়ে ঢেকে নিঃশব্দে নিয়ে আসা হয় হুসেনী দালানে।
৬৬ নং লাইন:
বাংলাদেশে দুর্গাপূজা হিন্দুদের সর্বজনীন এবং সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হতে প্রায় তিনশ বছর লেগেছিল। দুর্গাপূজা জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব হিসেবে প্রথম পালিত হয় কলকাতায় উনিশ শতকে। এরপর থেকে আস্তে আস্তে দুর্গাপূজা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং একে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় উৎসবে পরিণত করার পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখেন জমিদাররা।
তৎকালে ফরিদপুরের কোটালিপাড়ায় দুর্গাপূজার একটি চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যায় কৃষ্ণকুমার মিত্রের আত্মজীবনী থেকে।
এভাবে ময়মনসিংহের মুক্তগাছা ও গৌরীপুরের জমিদাররাও ১৯৪০-৪১ সাল পর্যন্ত মহাসমারোহে দুর্গাপূজা করেছেন। পূজা উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হতো যাত্রা, কবিগান, ঢপকীর্তন ইত্যাদি। মুক্তাগাছায় বিজয়ার দিন হাতির মিছিল হতো। প্রজারা পূজা উপলক্ষে একদিন রাজবাড়ির ভোজে আমন্ত্রিত হতেন। রাজবাড়ি ছাড়া সাধারণ গৃহস্থদের ঘরেও পূজা অনুষ্ঠিত হতো। পূজার সময় প্রবাসী সকলে নিজ নিজ বাড়ি এসে আনন্দোৎসবে যোগ দিতেন। দুর্গাপূজায় কোনো বর্ণভেদ নেই; সব সম্প্রদায়ের হিন্দুরাই পূজা করতে এবং পূজায় অংশগ্রহণ করতে পারতেন। তবে বর্ণপ্রথার কিছুটা প্রভাব থাকতই।
উনিশ শতকের ত্রিশের দশকে ঢাকায় দুর্গাপূজা পালনের বিবরণ পাওয়া যায় বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্তের আত্মজীবনীতে। তখন মৈশুন্ডির এক বাড়িতে লাল দুর্গার প্রতিমা তৈরি করা হতো। সূত্রাপুরে ‘ঢাকার বাবু নন্দলালের’ বাড়িতে দোতলার সমান উঁচু প্রতিমা হতো। তবে রামকৃষ্ণ মিশনএর পূজাই ছিল বিখ্যাত। সেখানে দর্শনার্থীদের প্রচন্ড ভিড় হতো; সন্ন্যাসীরা কীর্তন করতেন। এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে ব্রাহ্মণেতর মানুষদের মধ্যে এক ধরনের জাগরণ ঘটে।
১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে বাংলাদেশের অনেক অবস্থাপন্ন হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যায়। এর ফলে গ্রামাঞ্চলে এককভাবে পূজা অনুষ্ঠান করা কষ্টকর হয়ে ওঠে। তাই গ্রামাঞ্চলে বর্ণবিভেদ ভুলে ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ সকলে একত্রিত হয়ে চাঁদা তুলে পূজার অনুষ্ঠান শুরু করেন যা এখন ‘সর্বজনীন পূজা’ হিসেবে পরিচিত। পাকিস্তান আমল থেকেই বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে যত দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তার প্রায়ই সব সর্বজনীন। তবে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক উদ্যোগেও পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিণত হয়েছে দুর্গাপূজা উদ্যাপনের প্রধান কেন্দ্রে। এখানে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় পূজা কমিটির মাধ্যমে প্রতিবছর দুর্গপূজাসহ অন্যান্য পূজাও অনুষ্ঠিত হয়।
৮১ নং লাইন:
জন্মাষ্টমী পালনের প্রধান অঙ্গ ছিল এর মিছিল। তবে কেন এবং কখন এর শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। ১৯১৭ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভুবনমোহন বসাকের একটি পুস্তিকা থেকে এ সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যায়। সে অনুযায়ী ১৫৫৫ সালে (ভাদ্র, ৯৬২ বঙ্গাব্দ) জনৈক সাধুর নেতৃত্বে ‘শ্রীশ্রী রাধাষ্টমী’ উপলক্ষে হলুদ পোশাক পরিহিত বালক ও ভক্তদের এক মিছিল বের হয়। এর দশ বছর পরে তাদেরই নেতৃত্বে ১৫৬৫ সালে (ভাদ্র মাসে) শ্রীকৃষ্ণের জন্ম উপলক্ষে প্রথম জন্মাষ্টমীর মিছিল বের হয়। পরে এর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব অর্পিত হয় নওয়াবপুরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বসাকের পরিবারের ওপর।
কালক্রমে সে মিছিল একটি সাংগঠনিক রূপ লাভ করে এবং প্রতি বছর জন্মাষ্টমী উৎসবের নিয়মিত অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। মুসলমানরা এ মিছিলের নামকরণ করেছিলেন ‘বাল গোপালের মিছিল’ বলে। এরপর নওয়াবপুরের অন্যান্য অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি নিজ নিজ উদ্যোগে মিছিল বের করতে শুরু করেন। প্রায় একশ বছর পরে উর্দু বাজারের গঙ্গারাম ঠাকুর নামে জনৈক বৈষ্ণব ব্রাহ্মণও নওয়াবপুরের বসাকদের অনুকরণে জন্মাষ্টমীর মিছিল বের করা শুরু করেন।
১৭২৫ সালের দিকে গদাধর ও বলাইচাঁদ বসাকের নেতৃত্বে ইসলামপুর থেকেও জন্মাষ্টমীর একটি মিছিল বের হতে থাকে। এর সঙ্গে নওয়াবপুরের মিছিলের একবার সংঘর্ষ হলে বাংলার তৎকালীন লেঃ গভর্নর স্যার সিসিল বিডন একেক দিন একেক দলের মিছিল বের করার বিধান করে দেন। এর পর উনিশ শতকে ঢাকার জন্মাষ্টমীর মিছিল জমকালো হয়ে ওঠে এবং এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়। তখন দূরদূরান্ত থেকে লোক আসত ঢাকায় জন্মাষ্টমীর মিছিল দেখতে। সমগ্র ঢাকা তখন হয়ে উঠত উৎসবের নগরী। জন্মাষ্টমীর মিছিলের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে সুস্পষ্ট যে, আদিতে এটি ছিল একান্তভাবে ধর্মীয়, পরে ধর্মীয় প্রভাব অনেকটাই শিথিল হয় এবং হিন্দু-মুসলিম সকলের অংশগ্রহণে তা সর্বজনীন রূপ লাভ করে।
|